#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৪৭
সবার ব্যস্ততা, হাসি-আনন্দের মাঝে আরো বিশ দিন কেটে গেলো। পাঁচদিন পরে রায়হান, মিশুর বিয়ে। দুই বাড়িতে তোরজোড় চলছে। সবাই ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছে। রুহিকে নিয়েও দুই বাড়িতে ঝগড়া চলছে। মিশু বলেছে রুহি মিশুর কাছে থাকবে আর রায়হান বলেছে রুহি এই বাড়িতেই থাকবে। দুজনের ঝগড়া শুনে রুহি কোন বাড়িতে থাকবে বুঝতে পারছিলো না তাই পরে ঠিক করলো দুই বাড়িতেই থাকবে রুহি। সকালে মিশুর বাড়িতে বিকেলে নিজের বাড়িতে।
রুহি, অভিদ, অনি, তুষার সবাই কাজে ব্যস্ত। অভিদের বাড়িতে কোনো গেস্ট নেই বললেই চলে। শুধু ফুপি, ফুপা তার তার শশুরবাড়ির কিছু লোক আর বিয়েতে সব ক্লাইন্ট, ম্যানেজার, অভিসের লোকরা আসবে। তাই এখন মেহমান নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই তবে বাকি সব কাজ অভিদ আগে আগে করিয়ে নিচ্ছে যাতে পরে কম সময়ে কোনো কাজ খারাপ না হয়ে যায়।
রুহি তার কাজ গুলো শেষ করে রুমে এসে পরলো। ক্লান্ত লাগায় ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। অভিদ রুমে এসে ধপ করে শুয়ে পরলো বিছানায়। এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। রুহি ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে অভিদকে রুমে দেখতে পেয়ে হাসলো। ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করে এগোতেই তেলে পা পিছলে গেলো রুহি ভয়ে “আআ” করে চিৎকার দিয়ে উঠে। অভিদ চিৎকার শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে দেখে রুহি ওয়াসরুমের সামনে পরে গিয়েছে। রুহি পায়ে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কান্না করছে। অভিদ ভয় পেয়ে দৌড়ে রুহির কাছে গিয়ে রুহিকে ধরে অস্থির বলে
” কি হয়েছে ?? পরলে কি করে ??” রুহি চোখ খুলে অভিদের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে কাতর গলায় বলে
” জানি না কিসে যেন পিছলে পরে গেলাম । পাহ ব্যাথা করছে।” অভিদ রুহির পায়ে দিতেই রুহি চিৎকার করে বলে
” আহ, ব্যাথা অনেক পাচ্ছি ধরবেন না প্লিজ।” অভিদ শুকনো ঢোক গিলে রুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলো। রুহি ব্যাথায় কান্না করে যাচ্ছে। অভিদ ঠোট ভিজিয়ে অস্থির হয়ে বলে
” বেশি ব্যাথা করছে ?? ডক্টর ডাকবো ??” রুহি অভিদের হাত খামছে ধরে অশ্রুসিক্ত নয়নে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” প্লিজ তাড়াতাড়ি আসতে বলুন। আমার অনেক ব্যাথা করছে।” অভিদ তাড়াতাড়ি করে ডক্টরকে ফোন করে আসতে বললো আর রায়হান, অনিকে ডাকতে থাকে। অভিদ রুহির এক হাত শক্ত করে ধরে বলে
” একটু সহ্য করো ডক্টর এখনি চলে আসবে। আমি একটু দেখি পায়ে কি হয়েছে ??” বলে উঠেতে নিলেই রুহি অভিদকে আটকে বলে
” প্লিজ পায়ে ধরবেন না আমার সত্যি অনেক ব্যাথা করছে।” অভিদ মাথা নেড়ে রুহির মাথা হাত রেখে বলে
” আচ্ছা তুমি শান্ত হও আমি পায়ে ধরবো না।” রুহি বড় বড় শ্বাস নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যাথায় তাও করতে পারলো না। এরমাঝে রায়হান, অনি, তুষার, ফুপি সবাই দৌড়ে রুমে আসলো। রুহিকে কাঁদতে দেখে ফুপি বলে।
” কি হয়েছে রুহি কাঁদছিস কেনো ??” অভিদ অস্থির গলায় বলে
” ওয়াসরুমের সামনে পা পিছলে পরে গিয়েছে। পায়ে অনেক ব্যাথা করছে।” সবাই অবাক হয়ে গেলো। অনি রুহির অন্যপাশে এসে বসে। রায়হান আর তুষার ওয়াসরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওয়াসরুমের দরজার সামনে সবুজ রঙের তরল জাতীয় কিছু পরে রয়েছে। রায়হান বসে ফ্লোরে হাত দিয়ে দেখে সেখানে তেল পরে আছে। রায়হান অবাক হয়ে গেলো। রায়হান অভিদের কাছে গিয়ে বিস্ময় নিয়ে বলে
” ফ্লোরে তেল আসলো কোথা থেকে !! তাও ওয়াসরুমের সামনেই” অভিদ ভ্রু কুচকে রায়হানের দিকে তাকালো। রায়হান ওয়াসরুমের দিকে ইশারা করে বলে
” অভিদ কেউ মনে হয় ইচ্ছে করে তেল ফেলেছে নাহলে শুধু ওয়াসরুমের সামনে পরে থাকতো নাকি ??” অভিদ ওয়াসরুমের সামনে তাকিয়ে দেখে রায়হান ঠিক বলেছে। দরজার সামনেই শুধু তেল পরে আছে। অভিদ রেগে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই তাদের ডক্টর এসে রুমে ঢুকলো। ডক্টর চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে
” জি হয়েছে অভিদ ??” অভিদ অস্থির হয়ে বলে
” তেলে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে। পায়ে হাত দিতে পারছি না। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠছে।” ডক্টর মাথা নেড়ে রুহির পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পায়ের মোড়ালি তে ধরতেই রুহি চিৎকার দিয়ে কান্না করে উঠে। ডক্টর পা ছেড়ে আবার চেয়ারে বসে বলে
” পায়ে তো আগেই ব্যাথা ছিলো সেখানে আবার ব্যাথা পেয়েছে তাই বেশি ব্যাথা করছে। আমি দুটো ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি ” ইনজেকশনের কথা শুনে রুহি শুকনো ঢোক গিলে অভিদের শার্ট খামছে ধরলো। ডক্টর রুহির হাতে দুইটা ইনজেকশন দিয়ে দিলো। অভিদ চিন্তিত হয়ে বলে
“ব্যাথা কমে যাবে তো ??” ডক্টর গম্ভীর গলায় বলে
” নাহ, ব্যাথা কিছুটা কমবে। বিকেলে রুহিকে হসপিটালে নিয়ে এসো পায়ের চেকাপ করতে হবে। আর দুই, তিনদিন হাটাহাটি না করাই ভালো। আর প্লিজ সাবধানে থেকো। তোমার এমনি পায়ে বড় চোট আছে এখন বারবার চোট লাগলে অনেক কিছুই হতে পারে। আমি আসছি।” বলে বেড়িয়ে গেলো তুষারও পেছন পেছন গেলো।
ফুপি রুহির মাথা হাত বুলিয়ে বলে
” তোর কিছু দরকার হলে আমাকে, অনিকে বা সার্ভেন্টদের ডাকবি। তুই উঠতে যাবি না। রেস্ট কর আমি নিচে যাচ্ছি।” বলে বেড়িয়ে গেলো। রুহি মন খারাপ করে বসে আছে। রায়হান রুহির মন খারাপের কারণ বুঝতে পেরে বলে
” আরে আমাদের বিয়ে এখনও পাঁচদিন বাকি আছে। এতোদিনে তোমার ব্যাথা কমে যাবে তুমি তখন সবার সাথে বিয়েতে মজা করবে। ওকে ??” রুহি হেসে মাথা নাড়ায়। অভিদ রুহির গায়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে বলে
” তুমি ঘুমাও বা অনির সাথে গল্প করো। আমি একটু আসছি। অনি আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাস না।” অনি মাথা নাড়াতেই অভিদ রায়হানকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ রেগে একাকার হয়ে গেলো। নিচে গিয়ে চিৎকার করে সব সার্ভেন্টকে ডাকলো। সব সার্ভেন্ট এক সাথে জড়ো হতেই অভিদ চেঁচিয়ে বলে উঠে
” আমার রুমে তেল ফেলেছে কে ?? কে সকালে রুম ক্লিন করেছে ?? আন্সার মি ড্যাম !!” একজন ছেলে আর একজন নেয়ে সার্ভেন্ট মাথা নিচু করে কাঁপতে কাঁপতে একটু এগিয়ে দাঁড়ায়। অভিদ রেগে টেবিলের উপর থেকে গান নিয়ে দুজনের দিকে তেড়ে যায়। ফুপি রায়হানকে ইশারা কররেই রায়হান অভিদকে আটকিয়ে বলে
” আরে একটু শান্ত হয়ে নে তারপর ওদের মারবি।” রায়হানের কথা শেষ হতেই সেই ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বলে উঠে
” স্যার আমরা তো খুব ভালো ভাবে রুম পরিষ্কার করেছি। একটা সুতোও পরেছিলো না। আমরা কিছু করেনি স্যার ” অভিদ হুংকার দিয়ে বলে
” তোরা না ফেললে ওয়াসরুমের সামনে কি তেল উড়ে উড়ে এসে পরেছে ??” মেয়েটা ঢোক গিলে বলে
” স্যার আমরা সত্যি তেল ফালাইনি। তেল কি করে এসেছে আমরা জানি না। আমরা প্রতিদিনের মতো খুব ভালো করেই পরিষ্কার করেছি।” অভিদ রেগে আবার তেরে যেতে নিলেই রায়হান আটকে বলে
” আরে অভিদ দাড়া। শোন রুহি যখন ওয়াসরুমে ঢুকেছে তখন তো তেল ছিলো না থাকলে ঢোকার সময়ই রুহি পা পিছলে পরে যেতো। আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে রুহি ওয়াসরুমে যাওয়ার পর তেল ফেলেছে। তুই এক কাজ কর তোর রুমের সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে দেখ।” অভিদ শান্ত হয়ে গেলো রায়হানের কথায়। ভেবে দেখলো রায়হানের কথায় ঠিক কথা বলছে। অভিদ রেকডিং রুমের দিকে যেতে নিলেই তুষার অভিদের ল্যাপটপ নিয়ে বের হয়। অভিদের হাতে ল্যাপটপ দিয়ে বলে
” ভাইয়া আমি এখানে রেকড ট্রান্সফার করে দিয়েছি। তুমি ভালো করে দেখো।” অভিদ দ্রুত সোফায় বসে ল্যাপটপ খুলে ভিডিও চালু করে। রুহি রুমে এসে ওয়াসরুমে ঢোকার পরে একটা বড় বড় দাড়ি ওয়ালা একজন সার্ভেন্টের পোশাক পরা কেউ ওয়াসরুমের সামনে তেল ফেলে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আর সাথে সাথে অভিদ রুমে ঢোকে বিছানায় শুয়ে পরে। আর কিছুক্ষণ পরে রুহি ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে পা পিছলে পরে গেলো। অভিদ ভিডিও টা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে ঠাস করে ল্যাপটপ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠে
” সিহাব এসেছিলো !! উহহ, এতো কাছে পেয়েও আমি ধরতেও পারলাম না।” ফুপি শান্ত গলায় বলে
” বিয়ের এতো ঝামেলার মাঝেই সিহাব বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করবে। তোমাকে চোখ, কান সব খোলা রাখতে হবে। নাহলে সবার ক্ষতি হবে। সিকিউরিটি গার্ড বাড়িয়ে দাও।” অভিদ শান্ত হয়ে মাথা নাড়ালো। ফুপি তার কাজে চলে গেলো। অভিদ, রায়হান গার্ড বাড়ানোর ব্যবস্থা করে নিলো।
অভিদ কথা শেষ করে রুমে এসে দেখে রুহি ঘুমিয়ে গিয়েছে আর অনি পাশে বসে আছে। অভিদ অনিকে বলে
” অনি রুমে যা। আমি এখন এখানেই আছি।” অনি মাথা মেড়ে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো। অভিদ রুহির পাশে এসে বসে পরলো। বিকেলে অভিদ রুহিকে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। ডক্টর রুহির পায়ের টেস্ট করাচ্ছে তাই অভিদ ডক্টরের কেবিনে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে ডক্টর আসলো। চেয়ারে বসে বলা শুরু করে
” রুহির পায়ের হাড় ভাঙতে ভাঙতে বেচে গিয়েছে। তোমাদের কেয়ারফুল থাকা উচিত ছিলো। রুহির পায়ের অবস্থা আগেই ভালো ছিলো না এখন আরো খারাপ হয়েছে। কম হলেও আরো পাঁচমাস সময় লাগবে রুহির পা ঠিক হতে।” অভিদ চিন্তিত হয়ে বলে
” রুহির পায়ের কি কোনো ট্রিটমেন্ট করানো যাবে না !! যাতে পা তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যায় ??” ডক্টর মাথা নেড়ে বলে
” নাহ, এটা পায়ের অবস্থার উপর নির্ভর করে। পায়ের এক্সারসাইজ করতে হবে, হাটার চেষ্টা কররে হবে, মেডিসিন ঠিক মতো নিতে হবে কেয়ারফুল ভাবে চলাফেরা করতে হবে।এতোদিন তো এক্সারসাইজ করেছে তবে আজকে ব্যাথা পেয়ে আবার সমস্যা হয়েছে। সো কেয়ারফুল থাকতে হবে। ” অভিদ সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো কেবিন থেকে। রুহিকে রাখা কেবিনে ঢুকে দেখে রুহি চুপ করে বসে আছে পায়ে প্লাস্টার ব্যান্ডেজ করা। অভিদ রুহির পাশে গিয়ে বলে
” চলো তাহলে বাড়িতে যাবো !!” রুহি মুখ ছোট করে অভিদের হাত ধরে কোলের উপর রেখে হাত দেখতে দেখতে বলে
” বিয়ে বাড়িতে আমি ভাঙা পা নিয়ে বসে থাকবো।আমার ভালো লাগছে না।” অভিদ এক হাতে জড়িয়ে রুহির মাথায় চুমু দিয়ে বলে
” মন খারাপ করার কিছু নেই। যা হয় ভালোর জন্য হয় এটা ভেবে অন্তত মন খারাপ করো না। বিয়েই তো !! সেটা বসে বসে সব মজা মাস্তি করতে পারবে। চলো আমরা কোথাও ঘুরতে যাই।” রুহি খুশি হয়ে বলে
” কোথায় যাবো !!” অভিদ কিছুক্ষণ ভেবে বলে
” আব্বু – আম্মু তো যেতে বলছিলো চলো আজকে সেখানেই ঘুরব আসি।” রুহি খুশিতে নেচে উঠলো। অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে রুহিকে কোলে তুলে নিলো। রুহিকে নিয়ে রুহির বাবার বাড়িতে চলে গেলো। রাতের আগে রুহিকে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসলো।
আজকে রায়হান,মিশুর গায়ের হলুদ। সবাই তৈরি হচ্ছে। রায়হান আর মিশুর হলুদ আলাদা ভাবে হচ্ছে। আগে রায়হানের হবে তারপর মিশুর হলুদ হবে। রুহি আর অভিদ, অনি, আখিল, তুষার রায়হানের হলুদ শেষ করে মিশুদের বাড়িতে যাবে
রায়হান যেতে চাইলেও ফুপি যেতে দেবে না তাকে। রুহির বাড়ির লোকেরাও মিশুদের বাড়িতে
চলবে…wait for next part….
[ ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দেবেন। ]