মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
386

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 29

🍁🍁🍁

আজ সিমথি-আদির গায়ে হলুদ। বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য সবাই সেন্টার বুক করতে চাইলেও বাধ সাধে সিমথি-আদি দুজনই। তাই অনুষ্ঠান যার যার বাড়িতেই হবে। তবে গায়ে হলুদ বর-কনের একসাথে হবে। এটা ছোটদের দাবি। আর ছোটদের দাবি মানেই সেই দাবি মানতে হবে। ছোটদের এই দাবি আদি হাসিমুখে মেনে নিলেও সিমথি নাকোচ করতে চাইতে সবার ভাষণের কাছে হার মেনে অগত্যা রাজি হতে হয়। গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান করা হবে খান ভিলাতে। সায়নদের বাড়ির পাশে মস্ত বড় মাঠ আছে আর সাথে ওদের বাগান টা বড় হওয়ায় এখানে বেশী মানুষের জায়গা হবে ভালোমতে। প্রায় ছয়টার দিকে আদিদের বাড়ির সবাই সায়নদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। সকাল থেকে আদির মাথা গরম হয়ে আছে। আবার গাড়িতে ও বসতে হয়েছে সব বিচ্ছু বাহিনীর সাথে। আদির অবস্থা দেখে তুহারা মুখ টিপে হাসছে। বেচারা আদি সকাল থেকে ফোন হাতে না পাওয়ায় সিমথির সাথে ও কথা হচ্ছে না।

তুহা : উমমমম কেমন একটা গন্ধ পাচ্ছি।

ইশান : আদি ভাই আমার একটু সবুর কর। আর একটু পর তো বউমণিকে দেখতেই পাবি। এতো অস্থির হলে চলে।

ইশানের কথায় সবাই হেসে দেয়। আদি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সবগুলো চুপ হয়ে যায়।

আয়াশ : আদির অবস্থাই এমন তাহলে সিমথির কি হাল বল।

আদি : ওর কোনো হাল ছাল নাই। বরং ও আমার ফোনের প্যারা থেকে বেঁচে গেছে। নয়তো একটা ফোন দিতো নিজে থেকে।

কথা টা বলে আদি গাল ফুলিয়ে বাইরে তাকায়।

আদিবা : উহুম উহুম। বউমণি কিন্তু একবার ফোন দিয়েছিলো।

আদিবার কথায় আদি ফট করে আদিবার দিকে তাকায়। আদির তাকানো দেখে আদিবারা হেসে দেয়। ওদের হাসি দেখেই আদির বুঝতে বাকি নেই এই ইবলিশ গুলো ফাজলামি করছে।

সায়ন : মিম তুমি সাবধানে হাঁটা চলা করো। সিমথি দেখলে আমার বারোটা বেজে যাবে।

মিম : আহ চুপ করো তো। সিমথিকে তো সাজানো হচ্ছে। আর বিয়ে বাড়িতে কি চুপ করে বসে থাকা যায়।

তন্ময় : সায়ন ভাইয়া স্টেজের দিকটায় একটু আসো তো।

তন্ময়ের কথায় সায়ন মিমকে সাবধান করে বাগানের দিকে যায়।

মেঘা : হায় মে মারজাবা। সিমথি রাণী তোকে তো পুরাই হুরপরী লাগছে।

সিমথি : _________

রোদেলা : এহেম এহেম। আদি ভাইয়া আজ আবার নতুন করে না হার্ট অ্যাটাক করে। বেচারা তোকে কত লুকে দেখলো এখন এই লুকে দেখলে ইশশশশ৷

সিমথি : থামবি তোরা।

মেঘা : আচ্ছা আদি ভাইয়া আজ একবারো ফোন দিলো না যে।

সিমথি : দেখ গিয়ে হয়তো বিজি কিংবা আমার কথা মনেই নেই।

রোদেলা : আহহা রেএএএ। কত কষ্ট

রোদেলার কথায় সিমথির ধ্যান আসে। কিছুক্ষণ আগে নিজের বলা কথা টা মাথায় আসতেই জিভে কামড় দেয়।

তখনই রোজ দৌড়ে আসে।

রোজ : ওএম জি। সিমথি পু ইউ আর লুকিং সো কিউট। আম অলরেডি ক্রাশড।

রোজের কথায় সিমথি আলতো হাসে।

সাতটা পঁচিশ মিনিটে আদিদের গাড়ি এসে সায়নদের বাড়িতে থামে। গাড়ি থেকে একে একে সবাই বেরিয়ে আসে। সায়নরা এগিয়ে এসে সবাইকে ভেতরে নিয়ে যায়। পুরো বাড়ি ফেইরি লাইটে ঝলঝল করছে। আশেপাশে মানুষে গিজগিজ করছে। আদিবারা গাড়ি থেকে বেরিয়ে রোজদের সাথে সিমথির রুমের দিকে যায়। সিমথির রুমে পা রাখতে নিলে মেঘারা এসে দরজা আটকায়।

মেঘা : কি বিয়াইন সাহেবা৷ এখানে কি দরকার আপনাদের।

মেঘার কথায় তুহারা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

তুহা : বউমণিকে দেখতে যাবো। যেতে দাও

রোদেলা : আরে আরে এখন না। সিমথির সাজ এখনো কমপ্লিট হয়নি৷ আর একটু পর তো স্টেজে যাবে তখন তো দেখতেই পাবে।

আদিবা : না আমরা এখন দেখবো।

মেঘা : নো মিনস নো বিয়াইন সাহেবা।

তুহা : মেঘাপি যেতে দাও না ( ইনোসেন্ট ফেস করে)

মেঘা : আহা কাজ হচ্ছে না। এখানে সিমথিকে সিক্রেট রাখা হয়েছে। তোমরা গিয়ে আদি ভাইয়া কে বলে দিলে সেই সিক্রেট আর সিক্রেট থাকবে না।

আদিবা : মেঘাপি

সিমথি : মেঘ রোদ তোরা কি বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছিস। ওদের আসতে দে।

মেঘা : বাহ সিমথি বাহ এখনই ননদদের জন্য দরদ উতলে উঠছে।

সিমথি : সব কয়টা পা’গ’ল আমার আশেপাশেই থাকে।

রোদেলা : বুঝলি মেঘা এখন আমরা পাগল ও হয়ে গেলাম। হায় হায় মারো মুজে মারো। কোলে-পিঠে করে মানুষ করলাম তার এই প্রতিদান। হে খোদা এই দিন দেখার আগে আমাকে তুমি কানে খাটো বানিয়ে দিলে না কেনো।

আচনকা মাথায় চাটি মাথায় মেঘা-রোদেলা দুইজনই ” আহ ” করে উঠে। সিমথি ওদের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে।

সিমথি : মাত্রাতিরিক্ত মেলোড্রামা হয়ে যাচ্ছিলো। তাই থামালাম।

আদিবা : ওরে মাশাল্লাহ। কেউ আমারে ধরো প্লিজ। আমি পড়ে যাচ্ছি।

আদিবার কথায় তুহা আদিবাকে ধরে।

তুহা : ভাই আমার আজ নির্ঘাত হক্কা পাবে। কি লাগছে তোমায় মাইরি।

ওদের কথায় সিমথি হালকা হাসে।

সিমথি : ভেতরে আসো তোমরা।

আদিবা : না না এখন নিচে যাবো। এই চল চল ভাবীর কাছে যাই।

সায়ন : বন্ধু আমার তোর মুখ টা এমন শুকিয়ে আছে কেনো।

সায়নের কথায় আয়াশরা হেসে দেয়।

রিক : বেচারার পেটে চাপ দিছে কিন্তু নতুন বর কইবার পারতাছে না তাই মুখ টা শুকাইয়া রাখছে।

সায়ন : আরে তাহলে ওয়াশরুমে যা। এভসবে চেপে বসে থাকলে তো এখানেই কাজ সেরে দিবি দেখছি।

সায়নের কথায় এবার আয়াশরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। আদি বোকার মতো একবার ওদের দিকে তাকায় তো একবার সায়নের দিকে তাকায়।

আদি : নেহাৎ তুই আমার বউয়ের ভাই নয়তো আজ তোকে সেই লেবেলের কেলানি দিতাম।

আদির কথায় সায়ন বোকার মতো তাকায়।

সায়ন : যাহ বাবা আমি কি করলাম।

নীলয় খান : সায়ন বাবা এবার হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে তো। এদের আবার ফিরতে হবে তো। রাত হয়ে যাচ্ছে।

সায়ন : হ্যাঁ বড় আব্বু। এখন শুরু হবে। এই রোজ তুহিন যা মেঘাদের বল পরীকে নিয়ে আসতে।

তন্ময় : সিনহা তুমি আপুর পাশে বসো আমরা আসছি।

কথাটা বলে তন্ময় গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগায়। তন্ময়ের আগে আগে তুহিন আর রোজ যাচ্ছে।

রোজ : হয়ে গেছে তোমাদের এবার সিমথিপু কে নিয়ে যেতে হবে।

মেঘা : হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি আসছি। ওই রোদ ওড়না নে ওদিক থেকে।

মেঘার কথায় রোদেলা পাশ থেকে একটা লাল বড় ওড়না নেয়। সিমথিকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

মেঘা : বইন সিমথি আজ তোর বিয়ে মুখের গম্ভীরতা আদল বদলে একটু হাসি-হাসি আর লাজুক আদল টা নিয়ে আয় প্লিজ।

মেঘার কথায় সিমথি হেসে উঠে। তখনই পাশ থেকে তন্ময় ক্যামেরায় ক্লিক করে।

তন্ময় : পারফেক্ট। কিন্তু তোরা তো তিনজন হলি। মাথায় ওড়না তো চারকোনা ধরতে হআেু। আরেকজন মেয়ে কোথায় পাবো।

হঠাৎ কোথা থেকে তরী এসে হাজির হয়। হাসি মুখে এসে রোদেলাদের পাশে দাড়ায়।

তরী : বাহ রে আমি বুঝি বাদ গেলাম। আমি ধরবো না।

আচমকা তরীর কথায় রোদেলা ব্যতিত সবাই চমকে যায়। সিমথি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তরীর দিকে তাকায়। তরী ঠোঁটের কোণায় হাসি।

তরী : আরে এভাবে টিভি সিরিয়ালের রিয়াকশন দিও না তো সিমথি আপুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যেতে হবে তো নাকি। চলো চলো

মেঘা : ত তুই ধ ধরবি।

তরী : কি আজব আমার বোনের বিয়ে আর আমি ধরবো না। আমি তো নাচবো ও। রেডরোজ এদিকে বয়। উফফস মেঘাপু রোদেলা আপু এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে ধরে তো।

মেঘারা আর কিছু না বলে সিমথির মাথায় ওড়না মেলে ধরে। সিমথি এখনো পাথরের মতো তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তুহিনরা সবাই স্বাভাবিক হয়ে নিজের কাজে মনযোগ দেয়।

তন্ময় : আরে ওই মাইয়া খা’ম্বা’র লাহান দাঁড়াইয়া আছোস ক্যান। এইহানে বিয়া কইরা বাসর করার প্ল্যান করতাছোস নাকি।

তন্ময়ে ধমকে সিমথির হুশ ফিরে। সিমথি জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে পা চালায়।

সামনে কয়েকজন মেয়ে সিমথিদের দিকে গোলাপ ফুল ছুড়ছে। তুহিন সহ বাকি ছেলেরা উড়াধুড়া নাচছে। ওড়নায় সামনের দিকে এক কোণায় তরী ধরেছে অন্য কোনায় মেঘা। আর পেছনের দিকে রোদেলা-রোজ। সিমথিরা বাড়ির বাইরে এসে বাগানের দিকে পা রাখতে আকাশে আতশবাজি ফুটতে শুরু করে। এতসব আয়োজন দেখে সিমথির ঠোঁটের কোণায় আপনাআপনি হাসির রেখা ফুটে উঠে। ইশান রা সিমথিকে আসতে দেখে আদিকে রেখে ওর দিকে ছুটে আসে। সেই সাথে ফুল ভলিউমে সাউন্ড বক্স বাজতে শুরু করে।

Hai Woh Handsome sona sabse
Mere dil ko gaya lekar
Meri neeed chuRaLi Usne

AUR khwaabGaya Dekha
AB YE Naina Bole Yaaar
Bole YEh Hi Lagataar
Koi Chaane
Kitna Roke
Karungi Pyaar
Mere saiyaan superstar
O mere saiyaan superstar

( সংক্ষিপ্ত)

মেঘারা নাচতে নাচতে সিমথি স্টেজে পাশে এনে দাঁড় করায়। এরই মাঝে ইশান গিয়ে আদিকে টেনে এনে সিমথির পাশে দাড় করিয়ে সবাই মিলে ওদের ঘিরে ঘুরে নাচতে থাকে। আদি সিমথি হেসে একে অপরের দিকে তাকাতেই থমকে যায় দুজনের ভেতরেই একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায়। আদি স্পষ্ট বুঝতে পারছে ওর বুকের হৃদপিণ্ড টা এখন খুলে যাবে। আদি সিমথির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কল্পনায় যতটা ভেবেছিলো তার থেকে পলও দ্বিগুণ সুন্দর লাগছে সিমথিকে। কলাপাতা কালার শাড়ি তার সাথে মেচিং ব্লাউজ। চুলগুলো খোপা করে গোলাপ ফুল গাঁথা। মুখে মেকআপ। গায়ে তাজা রজনীগন্ধার আর গোলাপ ফুলের গয়না। হাতে চুড়ি। গায়ে জলুদের হলুদ পড়া নিষিদ্ধ করেছে সিমথি তাই গায়ে হলুদে কেউই হলুদ পোশাক পড়ে নি। সিমথির সাথে মেচিং করে আদিও কলাপাতা কালা পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়েছে। চুলগুলো সুন্দর করে গোছানো। হাতে ঘড়ি। হঠাৎ ইশান আর মেঘা দুজনকে ধাক্কা দিতেই দুজনের হুশ ফিরে। ধাক্কা খেয়ে দুজনই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। মেঘারা শব্দ করে হেসে দেয়। অতঃপর শুরু হয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। প্রথমে বড়রা একে একে দুজনকে হলুদ ছুঁইয়ে প্রাণভরে দোয়া করে। অতঃপর একে একে বিচ্ছু বাহিনীরা উঠতে শুরু করে। মেঘা আর আয়াশ একসাথে উঠে সিমথি আর আদির দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলায়। ওদের কেলাতে দেখে সিমথি আর আদি একে অপরের দিকে তাকায়। মেঘা এক খাবলা হলুদ নিয়ে সিমথির দিকে তাকায়।

সিমথি : নো নো মেঘা। ডোন্ট ডু দিজ।

কিন্তু কে শুনে কার কথায় মেঘা পুরোটা হলুদ সিমথির মুখে লেপ্টে দেয়। সিমথি নাক ফুলিয়ে মেঘার দিকে তাকায়। সিমথির মুখে অবস্থা দেখে আদিসহ সবাই হেসে দেয়।

আয়াশ : আদি ভাই আমার এতো হাসে না সোনা চাঁদ আমার। এদিকে তাকাও

কথাটা বলে এক সেকেন্ড দেরী না করেই আয়াশ হাতে হলুদ টুকু আদওর গালে মাখিয়ে দেয়। আদি মুখ ফুলিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। সিমথি ঠোঁট কামড়ে হেসে দেয়। কিন্তু বাকিরা আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সিমথিকে হাসতে দেখে আদি সিমথির দিকে হালকা ঝুঁকে যায়।

আদি : খুব হাসি পাচ্ছে তাই না সিয়াজান। হাসো হাসো। এটার জন্য ও তোমার শাস্তি পাবে দেখো।

সিমথি : আপনি যখন হাসলেন তখন হুম বলুন বলুন আমি কি শাস্তি দেবো বলেছি।

আদি : আর কত শাস্তি দিবি। তোমার এই বহুরূপে আমি তো এমনিতেই ঘায়েল। আর আজ তো পুরাই ঘায়েল। এতো কাছে পেয়েও একটু ছুতে পারছি না। এর থেকে বড় শাস্তি একজন প্রেমিকপুরুষের জন্য আর নেই বুঝলে বউ।

আদির মুখে বউ ডাক টা শুনে সিমথি থমকায়। বউ সত্যিই তো আজকের রাত টার পরই সিমথি তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে একান্ত নিজের করে পাবে। যখন ইচ্ছে দেখতে পাবে, ছুঁতে পারবে। বুকের ভেতর অজানা এক সুখের হাওয়া বয়ে যায়। সিমথি চোখ বুঁজে মুচকি হাসে। সিমথিকে হাসতে দেখে আদি ঠোঁট চেপে অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে উঠে। আজ আদির জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার মাঝে এক তৃপ্তির সুখ পাওয়া যায়।

রাত বারোটার দিকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। যদিও ছোটরা মানছিলো না কিন্তু বড়দের জোরাজুরিতে সব গুটাতে বাধ্য হয়। নাহলে কাল কেউই সকাল সকাল উঠতে পারবে না। সিমথি নিজের রুমে এসে কিছুক্ষণ বেডে বসে। এতো এতো শব্দে মাথা ভনভন করছে। প্রায় মিনিট দশেক পর উঠে আয়নার সামনে যায়। গয়না গুলো খুলতে গলায় হাত দেওয়া মাত্র কোনো কিছুর শব্দে সিমথি পেছনে তাকায়। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে চমকে যায়।

সিমথি : ত তু তুমি

চলবে,, ,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 30

🍁🍁🍁🍁

জানালার পাশে আদিকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমথি অবাক হয়ে আদির দিকে তাকায়। হঠাৎ খোলা দরজার দিকে তাকাতেই সিমথির মাথায় হাত। এই ছেলে এক নাম্বারের উন্মাদ। আদি সিমথির দিকে এগিয়ে আসে। সিমথি শাড়ি সামলে দৌড়ে গিয়ে দরজা দিয়ে মাথা বের করে আশপাশ টা দেখে নেই। কাউকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। দরজার সিটকিনি লাগিয়ে পেছনে ফিরতেই চমকে দরজার সাথে লেপ্টে যায়।

সিমথি : হ্যাভ ইউ গন ম্যাড। এতো রাতে এখানে কি করছেন। আর একটু আগে না বেরিয়ে গেলেন আপনারা।

সিমথির কথায় আদি হেসে দরজার দুপাশে হাত রেখে সিমথিকে আবদ্ধ করে। সিমথির এবার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। গোল গোল চোখে দু দুবার আদির দুইহাতের দিকে তাকিয়ে আদির দিকে তাকায়। লজ্জা অস্বস্তি দুটোই ভর করে।

সিমথি : ক কি করছেন। যে-কোন মুহুর্তে যে কেউ চলে আসবে। প্লিজ যান এখন।

আদি : তো আসুক না। আমি কি পরনারীর রুমে এসেছি। নিজের বউয়ের রুমে এসেছি।

সিমথি : এ এখনো বি বিয়ে হয়নি।

সিমথির কথায় আদি ডান ভ্রু উঁচু করে তাকায়৷ অতঃপর ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে সিমথি গালে পড়ে চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়।

আদি : পালিয়ে যাওয়ার ধান্দা করিস না সিয়াজান। একবার দূরত্ব গুছিয়েছি অনেক মেহনত করে তোকে নিজের করে পাচ্ছি। চমার থেকে পালিয়ে বাঁচবি না তুই। তোকে কথাটা আবারো মনে করিয়ে দিলাম আমি কিন্তু কোনো এক সময় রাজনীতি করতে চেয়েছিলাম। তাই কুটনৈতিক বুদ্ধি আমার ব্রেনের শিরায় শিরায়। সো বি কেয়ার ফুল।

আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

সিমথি : আপনার কেনো মনে হলো আমি পালিয়ে যাবো।

আদি : তাহলে বললি কেনো এখনো বিয়ে হয়নি। কথায় রহস্য রাখবি। আমার সাথে কথা বলবি খোলা মনে। রহস্যের বেড়াজাল আমার পছন্দ নয়।

সিমথি : শাট আপ আদি।

আদি : ছিহ সিয়াজান। এখনো বিয়ে হয়নি তুই তার আগেই বাসর করে ফেলতে চাইছো। এই মাসুম ছেলের উপর এতো নির্দয় তুমি।

আদির কথায় সিমথি বিস্মিত নজরে আদির দিকে তাকায়। ও বাসরের কথা কখনো বললো।

সিমথি : আমি বাসরের কথা কখন বললাম।

আদি : বাহ রে একটু আগেই না বললে শাট আপ। মানে তুমি আমাকে পাঞ্জাবি উপরে তুলতে বলছো।

আদির এহেন কথায় সিমথির এবার মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। ইচ্ছে তো করছে নিজের মাথা ফাটাতে। কেনো এমন একটা নির্লজ্জ ছেলেকে ভালোবাসতে গেলো। নাহলে এই সবের সম্মুখীনই হতো না। সিমথি রাগে লজ্জায় আদির বুকে জোরে ধাক্কা দেয়। আদি দুই পা পিছিয়ে যায়।

সিমথি : সরুন বলছি। বের হোন রুম থেকে। আমি আর এক সেকেন্ড ও আপনাকে দেখতে চাইনা। জিলেপীর গোডাউন একটা। বেশরম, ঠোঁট কাটা লোক আমি জন্মে দেখিনি।

কথাগুলো বলে সিমথি আদিকে ক্রস করে যেতে নিলে হাতে হেচকা টানে আদির বুকে এসে পড়ে। আদির সিমথির কোমড় আঁকড়ে কিছুটা উঁচু করে।

সিমথি : আ আদি প প্লিজ ছা ছাড়ো। কেউ দেখে ফেলবে। মেঘারা আন্দাজ করতে পারলে আমি শেষ।

আদি : এতো তাড়াতাড়ি শেষ হলে হবে সিয়াজান। কালকে রাতের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। যাক গে যে কাজটা করতে এসেছি সেটা করতে দাও।

সিমথি : ম ম মানে।

সিমথির অবস্থা দেখে আদি মজার নেওয়ার জন্য দুষ্টু হাসি দেয়।

আদি : এভাবে আমাকে সেজে শাড়ী পড়ে ঘায়েল করলে। তো তার শাস্তি পাবে না। আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার অবচেতন মন বললো তোকে যে ঘায়েল করলো তাকে তো চরম শাস্তি দেওয়া দরকার। আমি ও আমার মনের কথা শুনে গাড়ি মাঝপথে থামিয়ে চলে আসলাম।

সিমথি : ক কি শাস্তি

আদি সিমথির কথার উত্তর না দিয়ে সিমথির ঠোঁটের দিকে দৃষ্টিপাত করে। আদির দৃষ্টি অনুসরণ করতেই সিমথির গলা শুকিয়ে আসে। শরীর সমানে কাঁপতে শুরু করে। কি আশ্চর্য সিমথি জাহান সিয়া লজ্জা পাচ্ছে নাকি ভয় পাচ্ছে। সিমথির কাঁপা-কাঁপি তে আদিও মজা থেকে ঘোরে চলে যায়। ধীরে ধীরে সিমথির ঠোঁটের দিকে ঝুঁকে আসে। বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। শিহরণে আদির পাঞ্জাবির কলার খামচে ধরে।

আদি : এভাবে কাঁপা-কাঁপি শুরু করিস না। আমার নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে কষ্ট হচ্ছে। এসেছিলাম তোকে হলুদ লাগাতে কিন্তু তুই তো দেখছি আমার ইজ্জত হরণ করে ছাড়বি।

কানের কাছে আদির বলা কথাগুলো পৌঁছাতে সিমথি আদিকে আবারো ধাক্কা দেয়। পেছন দিক ঘুরে দাঁড়ায়।

সিমথি : হ হলুদ লা লাগানো শশ শেষ। এবার আসুন।

সিমথির কথায় আদি ঠোঁট কামড়ে হাসে।

আদি : বেশ যাচ্ছি। তবে হুমম বিয়ের পর ফাস্ট চুমু টা আমি তোর গলার ওই তিলটায় দেবো। এটা আমাকে বড্ড জ্বালায়।

আদির কথায় সিমথি কিছু বলেনা। সিমথির অবস্থা বুঝতে পেরে আদি নিঃশব্দে হেসে যেভাবে এসেছিলো। সেভাবে বেরিয়ে যায়। আদি বেরিয়ে যেতেই সিমথি মাথা তুলে তাকায়। রুমে কেবল নিজেকে আটকে রাখা শ্বাস টা ছেড়ে দেয়। হঠাৎ হাতটা কোমড়ে রাখতে এক গাদা হলুদ হাতে লেগে যায়। সিমথি হাতের দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসে উঠে। অতঃপর ঠাস করে বেডে শুইয়ে বালিশে মুখ চেপে ধরে হেসে উঠে। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে,,,

সিমথি : পা’গ’ল একটা।

__________________

বধূবেশে বসে আছে সিমথি। আশেপাশে মেঘারা একের পর এক ইয়ার্কি করছে। তুহিন, তন্ময়রা কাজপ ব্যস্ত থাকায় বসে আড্ডা দিতে না পারলেও একটু পর পর এসে নিজের বিখ্যাত কুখ্যাত জোকস দিয়ে যাচ্ছে। বেচারী সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে এদের সব সহ্য করছে আর মনে মনে আদির গুষ্টি উদ্ধার করছে। কাল রাতে আদি যখন সিমথির রুম থেকে বেরিয়েছিলো তখন এদের সামনে পড়েছিলো আর সেই নিয়েই রাত থেকে শুরু হয়েছে এদের বাঁদরামি। সিমথি মাঝেমধ্যে ভেবে পায়না ওর মতো মেয়ে কিভাবে এই পাঁচ বাঁদর বেস্ট ফ্রেন্ড পেলো। অবশ্য সিমথির রাগ সহ্য করে এরা বলেই বোধহয় এখনো ফ্রেন্ডশিপ টিকে আছে অন্য কেউ হলে হয়তো সহ্য করতো।

মেঘা : ইয়ার সিমথি জান আমার বল না কাল রাতে কি কি করলি।

মেঘার একই কথায় সিমথি এবার বিরক্ত হয়ে হাত উঁচু করে মেঘার পিঠে একটা কি’ল লাগায়। মেঘা পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সিমথির থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। বাকিরা হেসে দেয়। হঠাৎ বাইরে থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসতেই সবাই কৌতুহল নিয়ে দরজার দিকে তাকায়। তখনই তরী আর রোজ লেহেঙ্গা ধরে দৌড়ে ভেতরে আসে।

তরী : বর এসেছে বর এসেছে। মেঘ আপু রোদ আপু চলো গেইট আটকাবো তো চলো চলো।

তরীর কথায় সবাই সায় দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ও তরী থেমে যায়। তরীকে থামতে দেখে বাকিরা ও থেমে যায়। তরী দুষ্টু হেসে সিমথির সামনে এসে দাঁড়ায়।

তরী : একখান মা’ল মাইরি তোমার বর আপু। পুরাই সুপারস্টার লাগতাছে। নিচে গিয়া দেহো মাইয়া গুলা চোখ দিয়া গিল্লা খাইতাছে।

তরীর কথার আর ফেসের ভঙ্গিমায় সিমথি না চাইতে হেসে দেয়। তরী হেসে আবারো নিচে দিকে দৌড় লাগায়।

আয়াশ : বললেই হলো বিশ হাজার টাকা এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি ডাকাত বাড়ি।

তরী : বাহ রে এটা আমাদের শ্যালিকাগত অধিকার। আর কি এমন চেয়েছি কেবল মাত্র বিশ হাজার টাকা।

রিক : আহা কেবল মাত্র বিশ হাজার। বিশের পর কয়টা শূন্য বসলে হাজার হয় এটা জানেন।

মেঘা : কেনো জানবো না। আমাদের কি অশিক্ষিত মনে হয় নাকি।

আয়াশ : শিক্ষিত ও মনে হচ্ছে না।

রোদ : কিহহহ। এতো বড় অফমানস। বিয়ে দেবো না এমন ছেলের কাছে আমরা।

ইশান : হ্যাঁ হ্যাঁ এমন ডাকাত ফ্যামিলির মেয়ে আমরা ও নেবো না। আমাদের ছেলে কি সস্তা নাকি।

রোজ : আমাদের মেয়ে বুঝি সস্তা।

তুহিন : আহা ঝগড়া করতাছেন কেনো বিয়াইনসাব। কথা তো হইতাছে টাহা লইয়া। এরমাঝে বিয়া না করার কি আছে। বেচারা দুলাভাই য়ের মুখটা তো দেহেন। বিয়া দিবেন না হুইনা মুখ শুকিয়ে শুঁটকি মাছ হয়ে গেছে।

তিন্নি : আমি কাকিয়া যাবো।

আয়াশ : নাহ তিন্নি। ভেতরে তোমার কোনো কাকিমা টাকিমা নাই আছে সব ডা’কা’তের বংশ।

মেঘা : এই মিস্টার এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস৷

আয়াশ : আহা সুন্দরী রাগ করে না। রাগলে তোমায় পুরাই টমেটো লাগে।

মেঘা : থার্ডক্লাশ মার্কা ফ্লাটিং।

আয়াশ : এতো বড় অফমানস জানেমান।

মেঘা : ওই চুপ। আগে টাকা দেন।

রিক : দেবো না কি করবেন আপনারা।

তরী : বিয়ে ক্যান্সেল করে দেবো। বাড়িতে যে বাসর খাট সাজিয়েছেন ওখানে গিয়ে আপনারাই বাসর করুন।

রিক : চাইলে আপনি ও জয়েন হতে পারেন। উই ডোন্ট মাইন্ড।

তরী : ছ্যা ছ্যা ছ্যা৷ ছেলের বন্ধুদের তো দেখছি জেন্ডারগত সমস্যা।

রিক : মিস আপনি কি ডাউটে আছেন নাকি।

তরী : ইয়াহ ইয়াহ।

রিক : ভেতরে চলুন প্রুভ দিচ্ছি। ( বাঁকা হেসে)

রোদেলা : আরেহ ধ্যাত ভাই থামেন আগে টাকা দেন।

ইশান : কথাটা কেমন টাকা দেন বঐ নেন হয়ে গেলো না।

ছোটদের কীর্তি দেখে ভেতরে আদির বাবা হাসতে শুরু করে। শেষমেশ মেয়েদের কাছে হার স্বীকার করে টাকা মিটিয়ে ভেতরে আসে। আয়াশরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

ইশান : মেয়ে তো নয় একেকটা জলন্ত অগ্নিপিন্ড।

সায়ন : তোমরা আগে খেয়ে নাও। পরে বিয়ের কাজ শুরু হবে।

আয়াশ : হ ভাই খাওয়া তো লাগবোই তোগোর বাড়ির মাইয়া পাটি একেকটা যেই চিজ মাগো জীবনডা ত্যানয় ত্যানা বানিয়ে ছাড়লো।

আয়াশের কথায় সায়ন মাথা নাড়িয়ে হেসে উঠে।

সায়ন : তুই আর ঠিক হলি না। যা এবার।

সবাই খেতে চলে গেলে সায়ন দুষ্টু হেসে কনে ভাইয়ের লুক চেঞ্জ করে বরের বন্ধুর লুকে আসে।

সায়ন : কি ব্রে ফিল কেমন।

আদি : পুরাই করল্লা মার্কা।

সায়ন : এমা কেনো।

আদি : কি কেনো। এখনো অবধি সিয়াকে একবারো দেখলাম না।

সায়ন : লজ্জা রাখ আমি সম্পর্কে তোর সমুন্দি হয়।

আদি : আমি লজ্জা রাখলে ইহ জনমে আর মামা ডাক শুনতে পাবি না। তুই কি চাস ভিটামিন মামার অভাব বোধ করতে।

আদির কথায় সায়ন আদির দিকে তাকায় আদিও সায়নের দিকে তাকায়। হঠাৎ দুইজনই উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এই মুহুর্ত টা তন্ময় নিজের গলায় ঝুলানো ক্যামেরা ক্যাপচার করে নেই।

__________

পর্দার একপাশে সিমথি একপাশে আদি বসা। দুজনই মাথা নিচু করে বসে আছে। সিমথির পাশে মেয়ে পক্ষের সবাই আর আদির পাশে ছেলেপক্ষের। ওদের পাশেই দাড়িওয়ালা একজন কাজি বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর কাজীসাহেব আদিকে কবুল বলতে বললে আদি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কবুল বলে দেয়। তারপর সিমথি বলতে বললে সিমথি ও কয়েক সেকেন্ড পর কবুল বলে দেয়। দুজন কবুল বলতেই সবাই একত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে।

কাজীসাহেব : আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আপনারা স্বামী – স্ত্রী নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

সিমথির চোখ থেকে একফোঁটা পানি নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে। সায়ন নিজের পরীটার দিকে তাকায়। ছোট্ট বোনটা কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো। আজ অন্য বাড়ির বউ। সায়ন নিজের চোখের পানি লুকাতে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে যায়। অন্যদিকে ইফাজ ও সায়নের উল্টোদিকে চলে যায়। তন্ময় আর তুহিন খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। মেঘাদের ঠোঁটের কোণায় প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। অবশেষে ওদের সবচেয়ে কাছের মানুষটা নিজের প্রিয় মানুষটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে এর চেয়ে বেশী খুশির আর কি হতে পারে। আদি আড়চোখে নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর দিকে তাকায়। এই মেয়েটা একান্তই আজ থেকে আদির ব্যক্তিগত সম্পদ। প্রায় সাড়ে সাত বছরের প্রণয়ের পূর্ণতা পেয়েছে আজ তিন বাক্যের কবুলের মাঝে।

চলবে,,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 31

🍁🍁🍁

চৌধুরী বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সিমথি আর আদি। বাড়ির ভেতরে আদিবারা হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তিন্নি অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর আদির মা এসে সিমথিদের বরণ করে ঘরে তুলে। সিমথি-আদিকে সোফায় বসিয়ে সবাই এদের চারপাশে ঘিরে আড্ডা শুরু করে। সিমথি চুপচাপ নীরবতা পালন করছে। মনটা এখনো খারাপ। আসার সময় সায়ন&ইফাজ কারোর সাথে দেখা হয়নি সিমথির। প্রায় মিনিট বিশেক পর আদির চাচী-কাকিরা এসে সবাই কে জোর করে ফ্রেশ হতে পাঠায়। আয়াশরা চেঞ্জ করে এসে আবারো সোফায় বসে পড়ে।

আদির বাবা : অনেক ধকল গেছে আজ সারাদিন। এবার সবাই ঘুমাতে যা। আবার কাল আড্ডা দিস।

রিক : তোমরা গিয়ে ঘুমাও আঙ্কেল। আমরা এদের রুমে দিয়ে আসি।

রিকের কথায় বড়রা সায় দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়। এখন আর ছোটদের মাঝে থেকে লাভ নেই। মেহের সিমথিকে নিয়ে আগে আগে আদির রুমে চলে যায়। আদি উঠে একটা হাম্মি তুলে। আয়াশ দুষ্টু হেসে বলে উঠে,,,,

আয়াশ : কি ভাই তোকে দেখে অনেক টায়ার্ড লাগছে। তাহলে আজ আর বাসর করে লাভ নেই তুই বরং আমাদের সাথে ঘুমিয়ে পড়।

আয়াশের কথায় সবাই মুখ টিপে হেসে আদির দিকে তাকায়। আদি ভ্রু কুঁচকে আয়াশের দিকে তাকায়।

আদি : বিয়ে করেছি কি বউ রেখে তোদের সাথে ঘুমাতে। আমাকে কি তোদের ‘গে ‘ মনে হয়।

আদির কথায় আয়াশরা অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে।

রিক : না না। তুই গে হলে কি আর আমাদের এতো মিষ্টি বোনটাকে তোর হাতে তুলে দিতাম।

আয়াশ : আমাদের বোনের কথা ভেবেই বলছি আজ আর তোর রুমে গিয়ে কাজ নেই।

আদি : আমি এখন রুমে না গেলে তোদের বোন ভিটামিন আদরের অভাবে শুকিয়ে যাবে। আমি হলাম আবার মহান ব্যক্তি। বিয়ে করা বউকে শুকানোর হাত থেকে বাঁচানো স্বামী ধর্ম।

আয়াশ : তোর কপাল ভালো সিমথি আপাতত কনে সেজে নীরব হয়ে গেছে নয়তো তোর এই লাজ লজ্জাহীন কথা শুনলে তোর খবর করে ছাড়তো।

আদি : আসলেই আমার বাঘিনী হুট করেই কেমন বিড়াল হয়ে গেলো না। বেচারী কষ্ট পাচ্ছে। ওর কষ্ট কমাতে হলেও আমাকে রুমে যেতেই হবে নাহলে তোর বোনটা কেঁদে কেঁদে জ্ঞান হারাবে।

রিক : আমাদের বোনের দোষ না দিয়ে নিজের কথা বল।

ইশান : আসল কথা বল তোর দেরী সহ্য হচ্ছে না।

আদি : তোর বড় হয় আমি হারামি।

শাওন : আরে আদি ভাই আমার তোকে অনেকক্ষণ ধরেই সাপের মতো মোচড়াতে দেখছি আমি। একটু সবুর করো।

শাওনের কথায় সবাই আবারো হেসে উঠে। আদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নেই।

আদি শাওনের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু রুমে সামনে আসতেই চোখ ছানাবড়া। সবগুলো দরজা আটকে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে।

আদি : কি ভাই কোনো এড হচ্ছে নাকি ক্লোজআপের দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। ছবি তুলে কি সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়বি।

আদির কথায় সবগুলোর মুখ ভোঁতা করে আদির দিকে তাকায়।

তুহা : তোর মুখে জীবনে ভালো কথা নেই।

আদি : মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে বউ কে হাত করবো তোদের সাথে এতো মিষ্টি কথা বললে তো ডায়াবেটিস হবে।

আদিবা : ধ্যাতত ভালো লাগে না।

আদি : ভালো না লাগলপ সরে দাঁড়া। এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। ভেতরে যাবো আমি।

শাওন : মেহের বেবী চলো আমরা রুমে যায়। আমার ঘুম পাচ্ছে

মেহের : আহ মরণ আমার। ঘুম পাচ্ছে তো যাও না।

শাওন : তুমি না গেলে আমি কিভাবে যাবো।

মেহের : এমনভাবে বলছো যেনো আমায় ছাড়া তোমার ঘুম আসে না।

শাওন : হক কথা। ওইয়ে একটা গান আছে না, তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না মা। ঠিক তেমনই তোমায় ছাড়া ঘুম আসে না বউ। শাওনের কথায় আদিরা সবাই হেসে উঠে।

মেহের কটমট দৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকায়।

শাওন : আহা সোনা বউ ছোট দের মাঝে আমাদের কি কাজ। তার থেকে চলো আমরা গিয়ে আমাদের কাজ করি চলো চলো।

মেহেরকে কিছু বলার না দিয়েই শাওন মেহের কে টেনে নিয়ে চলে যায়। বাকিরা হাসতে হাসতে দরজা ছেড়ে ওদের যাওয়ার দিকে তাকায়। আদি এই ফাঁকে আদিবাকে টান দরজার পাশ থেকে টান দিয়ে সরিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দেয়। পুরো কাহিনী বুঝতে পেরে বাইরে সবাই চেঁচিয়ে উঠে।

আয়াশ : শা’লা দরজা খোল। হা’রা’ মি দরজা খোল বলছি।

রিক : তুই এতো বড় প্রতারণা করলি। একবার হাতের কাছে পাই তোর একদিন কি আমাদের যতদিন লাগে।

আদি : যাহ বাবা আমার কি দোষ। তোরা জায়গা দিলি আমি চলে আসলাম।

আয়াশ : বাসর করার আগেই কারেন্ট যাইবো গা দেইখা নিস। তুই যতবার সিমথির দিকে এগিয়ে যাবে ততবার তের ইয়ে পাইবো। বজ্জাত পোলা

আয়াশের কথা শুনে আদি দরজা ওপাশে হাসতে শুরু করে।

আদিবা : এ্যাহহহহ ভাইয়া। পাকিস্তানের মতো পেছন থেকে মারলি। তোদের আর বের হতেই দেবো না। থাক আটকে।

ইশান : ছ্যা ছ্যা ছ্যা ভাই তোর বাসর করার এতো তাড়া আগে কইবি তো।

আয়াশ আর রিক রাগে কিড়মিড় করে দরজার দুইটা লাথি লাগায়। অতঃপর সবাই মিলে আদিকে বকতে বকতে চলে যায়। আদি হাসতে হাসতে পেছনে তাকিয়ে চমকে যায়।

আদি : মাগো।

আদির চেঁচানোতে সিমথির কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে যায়। বোকা বোকা গলায় শুধায়,,

সিমথি : কি হলো

আদি : এভাবে ভূতের মতো তাকিয়ে আছো কেনো। ভয় পেয়েছি তো।

সিমথি : বাহ বাহ এখন আমাকে ভূত ও লাগে। কথা নাই আর৷

আদি : কি আজব।

সিমথি : কি আশ্চর্য

আদি : সিয়াজান।

সিমথি : সিয়াজান।

আদি : রাগ তুলবা না।

সিমথি : রাগ তুলবা না।

আদি : মজা করছো আমার সাথে।

সিমথি : মজা করছো আমার সাথে।

আদি থেমে যায়। ঠোঁট কামড়ে সিমথির দিকে তাকায়। আদির দেখাদেখি সিমথিও ঠোঁট কামড়ে আদির দিকে তাকায়। আদি ভ্রু কুঁচকে সিমথির দিকে তাকায় ঠোঁট ছেড়ে। সিমথিও সেইম কাজ করে। আদি এবার ঘাড় বাকিয়ে বাঁকা হাসে।

আদি : আমাকে জ্বালানো হচ্ছে। জ্বালানো কাহাকে বলে ইহা কত প্রকার ও কি কি এখন আপনি বুঝিতে পারিবেন ( মনে মনে)

আদি গিয়ে বেডে বসে পা ঝুলাতে শুরু করে। আদির দেখাদেখি সিমথিও সেইম কাজ করে। আদি মুখ টিপে হাসি আটকে মাথার চুলগুলো নিয়ে খেলতে শুরু করে। সিমথিও নিজের চুল নিয়ে সেইম কাজ করে। এবার আদি উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির বোতম খুলতে শুরু করে। অতঃপর একটানে পাঞ্জাবি খুলে ফেলে। আদির দেখাদেখি সিমথি শাড়ীর আঁচলে হাত দিতেই চমকে যায়। ফট করে আদির দিকে তাকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে হাসছে। সিমথি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকে বকতে শুরু করে। জিভে কামড় লাগিয়ে আড়চোখে আদির দিকে তাকায়।

আদি : কি হলো এবার শাড়ী খুলো।

আদির কথায় সিমথি লজ্জায় মুখ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আদি এবার শব্দ করে হেসে দেয়। সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। সিমথির রিয়াকশন দেখে আদি হাসতে হাসতে বেডে শুইয়ে পড়ে। সিমথি রেগে পাশ থেকে কুশন নিয়ে আদিকে মা’র’তে শুরু করে।

সিমথি : অসভ্য একটা।

আদি : আরে আরে কি করছো। ( হাসতে হাসতে)

সিমথি : তাহলে হাসি থামান।

সিমথির গাল ফুলানো দেখে আদির হাসি আরো বেড়ে যায়।

সিমথি : আদিইইই ( হালকা চেঁচিয়ে)

আদি : আচ্ছা আচ্ছা সরি। এবার তো থামো। ফ্রেশ হবো

সিমথি থেমে যায়। আদি শোয়া থেকে উঠে কাবার্ড থেকে জামা-কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিমথি আগে থেকেই ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিলো তাই এখন আর ফ্রেশ হতে হয়নি। সিমথি আদির রুমের চারপাশ কুটকুট করে দেখতে থাকে। একপর্যায়ে কাবার্ডের দিকে চোখ যেতেই দেখে কাবার্ড খোলা। সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে কাবার্ডের দরজা লাগাতে গিয়ে কি মনে করে খুলে ভেতর টা দেখতে থাকে। কি দেখছে সিমথি নিজেও জানে কাবার্ডে তো জামা-কাপড়ই থাকবে। হঠাৎ একটা ডায়েরির দিকে চোখ যায়। সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এটা কার ডায়েরি। আদির নয়তো। কি মনে করে ডায়েরি টা হাতে নেই। অতঃপর পৃষ্ঠা উল্টায়। পৃষ্ঠা উল্টাতেই চোখের সামনে নিজের হাস্যজ্জ্বল মুখ দেখে থমকায়। নিচে কিছু লেখা আছে দেখে সেটা পড়তে শুরু করে। একে একে প্রতিটা পেজ পড়ে। সিমথির মুখটা থমথমে হয়ে যায়। ডায়েরি আবারও আগের জায়গায় রেখে চুপচাপ বেডে গিয়ে বসে। এতোগুলো বছর শুধু শুধু এতো রাগে-অভিমান পুষে রাখার জন্য কতগুলো দিন চলে গেলো। ভাবতেই সিমথির কান্না পাচ্ছে। আদি এসে সিমথিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে সিমথির পাশে এসে বসে।

আদি : কি হলো সিয়াজান। নামাজ পড়বে তো।

আদির কথায় সিমথি মায়াবী চোখে তাকায়।

সিমথি : হুমম।

অতঃপর দুজনে নামাজ আদায় করে নেয়। সিমথি গিয়ে পুনরায় বেডে বসে পড়ে মুখভার করে। আদি এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে সিমথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আদি : সিয়াজান কি হয়েছে তোর। মুখ ভার কেনো। বাড়ির কথা মনে পড়ছে। কথা বলবে ওদের সাথে।

সিমথি : নাহ রাত হয়েছে। চলুন ঘুমায়

আদি : আগে বলো কি হয়েছে।

আচমকা সিমথি আদির কোমড় জড়িয়ে ধরে। আদি চমকে যায়।

সিমথি : সরি।

আদি : কেনো।

সিমথি : ফর এভ্রিথিং।

আদি : হঠাৎ আজ সরি কেনো৷

সিমথি : এভাবেই।

আদি : বুঝলাম চলো ঘুমায় এখন।

সিমথি : এখন ঘুমাবো।

আদি : তো কি করবো।

সিমথি : ক কিছু না। ঘ ঘুমাবোই তো ঘুমাবো।

সিমথি হামি তুলে শুয়ে পড়ে। আদি হেসে লাইট বন্ধ করে অন্যপাশে শুয়ে পড়ে। সিমথি পাশ ফিরে আদির দিকে তাকায়। আদির দৃষ্টি সিমথির দিকেই। আবছা আলোয় দুজন বেশ অনুভব করছে এদের দৃষ্টি একে অপরের মাঝে নিবদ্ধ। নিস্তব্ধতায় ঘেরা রুমে কেবল দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দই ভেসে আসছে। দুজনই চোখ বুঁজে নেয়। বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথি উঠে বসে। আদি চোখ খুলে তাকায়।

আদি : কি হলো উঠলে কেনো।

সিমথি : আপনি এমন কেনো আদি।

আদি : কেমন

সিমথি : আমি আপনাদের বাড়িতে আজ নতুন আমার ঘুম আসবে না এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি আমাকে রেখেই ঘুমাচ্ছেন কেনো।

আদি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সিমথির হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর ফেলে। সিমথি চমকে আদির দিকে তাকায়। আদি সিমথির কপালে চুলগুলো কানে উল্টোপিঠে গুঁজে সিমথির মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে।

আদি : এবার ঘুমাও।

সিমথি মুচকি হেসে দুহাতে আদিকে জড়িয়ে ধরে।

________________

সকাল সকাল প্রতিবেশীদের সামনে সিমথি মাথা নিচু করে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে নিচে নামতেই সিমথির চাচী এনে ওদের সামনে বসিয়ে দেয়। প্রতিবেশী তিনজন মহিলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথি অস্বস্তি নিয়ে আড়চোখে আদিবাদের দিকে তাকাচ্ছে। আদি এখনো ঘুমাচ্ছে। সিমথি ভেবে পায়না কাল সারারাত ঘুমিয়ে ও কিভাবে এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন মহিলা বলে উঠে,,,,

_ তা মেয়ের গায়ের রঙ টা আরেকটু ফর্সা হওয়া দরকার ছিলো। নাকটা ও কেমন বোঁচা যেনো।

প্রথম জনের কথার সাথে বাকি দুজনও সহমত হয়। দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠে,,,

_ তা মেয়ে কি রান্নাবান্না জানে। নাকি সারাদিন শুধু গুলাগুলিই করবে।

_ দেখে তো মনে হয়না রান্নাবান্নার কাজ বা ঘরের কাজ জানে।

_ চুলগুলোও ছোটই।

_ আর হাইটও আদির থেকে শর্ট।

_ তা আদির মা মেয়ের চরিত্র কেমন জেনে নিয়েছো তো।

_ মনে তো হয় না ছেলের বউয়ের হাতে রান্না খেতে পারবে বলে

চলবে,,,,,,