মেঘ বলেছে তুমি আমার পর্ব-১২

0
313

#মেঘ_বলেছে_তুমি_আমার❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২
_______________

‘ ঘাবড়ানো শেষ হলে এখন চোখ খুলতে পারো মিস অহনা?’

প্রচন্ড গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে কথাটা বললো নীলয় অহনাকে। আর নীলয়ের কথা শুনে অহনাও চমকে উঠে ধীরে ধীরে তার চোখ খুললো। তার হাতের আঙুলটা রুমালের কিছু অংশ ছিঁড়ে বেঁধে দিয়েছে নীলয়। অহনা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো নীলয়ের মুখের দিকে। যা দেখে নীলয় বললো,

‘ এভাবে তাকিয়ে থাকার মতো কিছু হয় নি আর সকাল সকাল এমন উদঘাট সেজেছো কেন?’

অহনা খানিকটা ভড়কালো নীলয়ের কথা শুনে। বাড়ির সবাই তো বললো তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে তাহলে নীলয় কেন এভাবে বললো। তাহলে কি নীলয়ের কাছে তাকে ভালো লাগে নি। অহনার ভাবনার মাঝেই নীলয় বললো,

‘ কি হলো কথা বলছো না কোন?’

অহনা নীরব স্বরে বললো,

‘ আমাকে কি ভালো দেখাচ্ছে না?’

নীলয় জবাব দেয় না। এমন সময় সেখানে দৌড়ে আসলো নীলা। চেঁচিয়ে বললো,

‘ আপু আহিয়ান দুলাভাই এসে পড়েছে তোমায় নিচে ডাকছে।’

আহিয়ান নামটা তো অহনার হবু বরের নাম। তার মানে তার জন্যই অহনা এভাবে সেজেছে। নীলয় নীলার কথা শুনে আঘাত পেল কি না বোঝা গেল না। তবে নীরবে বললো,

‘ ওহ এবার বুঝেছি। তাড়াতাড়ি নিচে যাও অহনা তোমার হবু বর নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

অহনা আহত হলো ছল ছল চোখে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। নীলয় তখন অন্যদিকে চাওয়া। অহনা নিজেকে সামলালো। নীলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ তুই যা আমি আসছি।’

‘ ঠিক আছে আপু (নীলা)

নীলা চলে গেল। অহনাও উঠে দাঁড়ালো বাহিরে যেতে যেতে বললো,

‘ কাঁচের টুকরো গুলো ধরবেন না যেন নীলয় সাহেব আপনার আঘাত লাগতে পারে।’

উত্তরে নীলয় কিছু বলে না চুপ করে থাকে তখনও। অহনা আর কিছু বলে না চলে যায় নীরবে।

অহনা দরজা থেকে বের হতেই নীলয় তাকায় সেদিকেই দীর্ঘ শ্বাস আসে আপনাআপনি। মনে মনে ভাবে,

‘ তার তো অহনার ওপর কোনো অধিকার নেই তাহলে এত খারাপ লাগা কিসের?’
___

বাড়ির কর্নারে টেবিলের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে আহিয়ান। মুলত বাবার জোরাজুরিতে আর অহনার সাথে সামান্য কিছু কথা বলার দৌলতেই এখানে এসেছে সে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো অহনার আঙুলের মাপ। দেখে যাওয়ার দিন যে আংটিটা তারা দিয়েছিল সেটা একটু বড় হয়েছিল তাই সঠিক মাপ জানার অজুহাতেই এখানে আসা তার। আহিয়ান চুপচাপ বসে আছে তার পাশেই বসে আছে অহনার বাবা, নীলয়ের বাবা, চাচারাও আছে সঙ্গে বড় চাচি। অহনা হাঁটতে হাঁটতে ছুটে গেল রান্নাঘরের দিকে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমাকে ডেকেছিলে মা?’

চায়ের কাপে চা ঢালছিল অহনার মা অহনার কথা শুনেই বললো,

‘ হা এই চাটা গিয়ে আহিয়ানকে দিয়ে আয়।’

অহনা মুখে হা বা না কিছুই বলে না শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।’

অতিআগ্রহে অহনাকে দেখার জন্য বসে আছে আহিয়ান। কিন্তু অহনা নামক মেয়েটা এখনও আসছে না। হঠাৎই কেমন শীতল হাওয়া বয়ে গেল আহিয়ানের মাঝ দিয়ে তবে কি অহনা আসছে। আহিয়ান ধীরে ধীরে সামনে তাকালো এরই মাঝে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে, মাথা ঘোমটা টেনে হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে এগিয়ে আসছে অহনা। আহিয়ান অনেকক্ষণ চেয়ে দেখলো তাকে। মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই প্রচন্ড ভালো লাগে আহিয়ানের। এ কদিনে হয়তো ভালোও বেসে ফেলেছে অহনা নামক মেয়েটাকে।’

অহনা এগিয়ে এসে ট্রে টাকে টেবিলের উপর রাখলো তারপর একে একে চা এগিয়ে দিল সবাইকে। সবাই নিলো সাথে আহিয়ানও অহনার দিকে কয়েক ঝলক তাকিয়ে গরম চা ফু না দিয়েই খেতে নিলো। ঠোঁটে গরম চা লাগতেই চমকে উঠলো আহিয়ান। আহিয়ানের কান্ডটা দেখলো অহনা কি ভেবে যেন হেঁসেও ফেললো।’

আহিয়ান নিজেও হাসলো অহনার হাসি দেখে।’

অন্যদিকে দোতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে এদের দুজনের কাহিনিটা খেয়াল করলো নীলয়। আহিয়ান ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ নয় যথেষ্ট সুন্দর। অহনার সাথেও বেশ মানাবে বোধহয়।’
___

খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে অহনার সাথে অহনার রুমটার দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে অহনা আর আহিয়ান। হঠাৎই আহিয়ান বললো,

‘ আজ তোমায় ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তবে আজও তুমি লাল রঙের শাড়ি পড়েছো সেদিনও লাল পড়েছিলে।’

উত্তরে অহনা বলে,

‘ মা বলেছিল আপনার নাকি লাল রঙ ভীষণ পছন্দ তাই আমি যেন আজ লাল রঙটাই পড়ি কিন্তু আমি অন্য আরেকটা রঙের শাড়ি পড়তে চেয়েছিলাম।’

অহনার কথাটা মন দিয়েই শুনেছে আহিয়ান। কিছুক্ষণ ভেবে খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বললো,

‘ শোনো অহনা জীবনে সবসময় যে অন্যের পছন্দ মতো তোমাকে কাজ করতে হবে এমনটা কিন্তু নয় হা আমার লাল রঙ পছন্দ তাই বলে তুমি সবসময় তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার সামনে লাল রঙ পড়ে ঘুরবে এমনটা তো হয় না। লাল রঙ তুমি তখনই পড়বে যখন তোমার মন চাইবে ঠিক আছে। আর সবসময় যদি অন্যের কথায় অন্যের জন্য বাঁচো তবে নিজের জন্য নিজে বাঁচবে কবে বলো।’

অহনা অবাক হলো, চরম অবাক হলো আহিয়ানের কথা শুনে। সে ভাবে নি তার কথা শুনে আহিয়ান এমন কিছু বলবে। অহনা হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ আপনি মানুষটা খুব ভালো।’

অহনার কথা শুনে আহিয়ান হাসে এমন সময় তাদের দিকেই শার্টের হাতা বোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসছিল নীলয়। চুলগুলো সাজানো গোছালো, গায়ে বিস্কুট কালার শার্ট, সাদা কালার জিন্স সব মিলিয়ে দারুণ দেখাচ্ছে নীলয়কে। অহনা কিছুক্ষণ তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো নীলয়ের থেকে। ততক্ষণে নীলয়ও হাঁটতে হাঁটতে মুখোমুখি হলো দুজনের। চোখাচোখিও হলো তবে কারো সাথে কোনো কথা না বলেই নীলয় ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। নীলয় যেতেই আহিয়ান জিজ্ঞেস করলো অহনাকে,

‘ ছেলেটা কে ছিল আগের বার তো দেখি নি তাকে?’

উত্তরে একবার পিছন ফিরেই বললো অহনা,

‘ উনি আমার বাবা ছোট বেলার বন্ধুর ছেলে আমেরিকায় থাকেন বিয়ে উপলক্ষে এসেছেন।’

অহনার কথা শুনে শুধু এতটুকুই বলে আহিয়ান,

‘ ওহ।’

‘ জি।’

___

সময়ের চাকা ঘুরলো। অহনার সাথে অল্প কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সাথে ওর আঙুলের মাপ নিয়ে বাড়ির ফেরার উপলক্ষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল সে। অহনা শুধু সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে গেল। আহিয়ান ছেলেটা মটেও খারাপ নয়। যথেষ্ট ভালো মনের একজন মানুষ। কিন্তু তাও এই বিয়াটায় মটেও মন টানছে না অহনার কিন্তু কি করার সে তো কখনোই তার বাবার মুখের ওপর কিছু বলতে পারবে না। আর বলবে টাই বা কি যে বাবা আমি এই বিয়ে করবো না? যদি কারণ জিজ্ঞেস করে তখন। আর এখন এমন একটা সময় যে অহনা চাইলেও কিছু করতে পারবে না। অহনার বড্ড অভিমান হলো তার বাবা মায়ের ওপর। তারা একটি বারও কেন জানতে চাইলো না সে বিয়েতে রাজি কিনা’– খুব আফসোসের স্বরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অহনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আসলে কিছু কিছু মেয়ে মানুষের জন্মই হয় অন্যের হুকুম পালন বা আদেশ পালন করার জন্য। যেখানে নিজের ইচ্ছে বলে কিছু নেই। অহনার ভাবনার মাঝেই বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে বলে উঠল নীলয়,

‘ তোমার হবু বরকে কিন্তু দারুণ দেখতে আইথিংক তোমার সাথে বেশ যাবে।’

আচমকাই নীলয়ের কথা শুনে অহনা তাকালো নীলয়ের দিকে নিরদ্বিধায় বললো,

‘ এতই যখন যাবে তাহলে এতক্ষণ দূরে দূরে ছিলেন কেন?’

অহনার কথাটার অর্থটা যেন বেশ বুঝলো নীলয় কিন্তু তাও না বোঝার ভান করে বললো,

‘ মানে?’

‘ কিছু কিছু মানের উত্তর জানতে নেই নীলয় সাহেব এদের সময়ের ওপর ছেড়ে দিতে হয়। কারণ কিছু কিছু মানের উত্তর যে বড্ড বেমানান।’

নীলয় যেন চরম অবাক হলো অহনার কথা শুনে অহনা কি তার বলা কথাই তাকে ঘুরিয়ে ফেরত দিলো। নীলয় কি ভেবে যেন ফট করে বলে ফেললো,

‘ তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নও অহনা?’

অহনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

‘ মেয়েদের কি আর সব বিষয়ের মতামত দেওয়ার অধিকার আছে নীলয় সাহেব?’

অহনাতার উত্তর শুনে নীলয় বুঝতে পেরেছে অহনার আজ মন খারাপ, একটু বেশি বোধহয় খারাপ না হলে এভাবে কখনোই তার সাথে কথা বলতো না অহনা।’

‘ তবে কি সত্যি সত্যি অহনা এই বিয়েতে রাজি নয়?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️