মেঘবিলাসী পর্ব-৩+৪

0
933

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#Part_3

সকালের তীক্ষ্ণ রোদের আলোতে তিন্নির ঘুম ভেঙে গেলো। এই মুহূর্তে তিন্নির খুব ভালো লাগছে। ঘুমটাও খুব ভালো হয়েছে আজ।
সকালের নাস্তায় খাবারের চাইতে মায়ের বকুনি বেশি খেতে হয়েছে। জামাইয়ের জন্য মনে হচ্ছে তার প্রাণটা জ্বলে যাচ্ছে। অবনী রহমার তার স্বামী আনিসুর রহমানের দিকে চোখ গরম করে তাকালেন। এর মানে হলো তিনি যেন মেয়েকে কিছু বলেন।তিন্নির বাবা ধীরেসুস্থে চা খাচ্ছেন। এতে তিন্নির মা প্রচন্ড বিরক্ত হলেন আর মেয়েকে বললেন

“তোর কি মিনিমাম কমনসেন্স টুকুও নেই তিন্নি? কয়েকদিন ধরে কি শুরু করেছিস তুই? ছেলেটা বারবার এসে ফিরে যায়। আর কালও তুই একি কাজ করলি। ছেলেটা কালও না খেয়ে চলে গেল।”
তিন্নি আজ বিরক্ত হবে না বলেই ডিসাইড করেছে। তাই হাসিমুখে মাকে বলল”কেন মা তোমাদের জামাই কি ফিডার খায় যে তাকে হাতে তুলে খাইয়ে দিতে হবে। এক কাজ করতে তুমি হাতে তুলে না হয় খাইয়ে দিতে। বেচারা হাতে তুলে খেতে পারে না।”

তিন্নির মা এবার রেগে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলেন। কিন্তু তিন্নির তাতে কিছুই আসে যায়না। সে কিছুতেই আজকে মন খারাপ করবেনা। নাস্তা শেষ করে তিন্নি চলে গেল রেডি হতে, আজকে তার কলেজ আছে।

জিসানকে আজ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হলো। কারণ তার অফিসে আজ খুব ইমপর্ট্যান্ট কাজ আছে। গতকাল সে তিন্নির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল। তিন্নি আসলে ঠিক কি চায় সেটা জিসান বুঝতে পারছে না। তিন্নি যে অল্পতে রেগে যায়, আর মানুষের সাথে খুব কম মিশতে পারে সেটা জিসান জানে। তিন্নির ফুপার কাছ থেকে সে তিন্নি সম্পর্কে অনেকটাই জেনেছে।

বিয়ের দিন তিন্নিকে দেখে জিসান বেশ অবাক হয়েছিল। বিয়ের সাজে কাউকে এতটা অপরূপ লাগতে পারে সেটা হয়তো বা তার জানা ছিলনা। বিয়ের পর্ব শেষ হওয়ার পর জিসান তিন্নির সাথে কিছুটা সময় একা কথা বলতে পেরেছিলো। মূলত কথা সেই বলেছে। তিন্নির কাছ থেকে তেমন কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তিন্নির পরিবারকে জিসান অনেক ভালবেসে ফেলেছে।তিন্নির মা বাবার মাঝে জিসান তার মা বাবাকে খুজে পায়। আর তামিম তো তাকে ভাইয়া বলে বলে কতো কিছু আবদার করে।ওই বাড়িতে সময় কাটাতে তার খুব ভালো লাগে। শুধুমাত্র তিন্নি তার সাথে এখনো সহজ হতে পারেনি।
মৌমিতা বরাবরই কথা একটু বেশি বলে। যেমন আজ সে তিন্নির সামনে তার কথার ঝুলি খুলে বসেছে।

“আচ্ছা তিন্নি ভাইয়া তোকে বিয়ের রাতে কি গিফট্ দিয়েছে? শামীম বললো “হে বল তো কি দিলো? আমাকে ওতো রিমিকে দিতে হবে। একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে।” তিন্নি মুচকি হেসে বললো “আমাকে একটা সুন্দর আর মজবুত লাঠি গিফট করেছে। আর বলেছে তোদের মতো ফাজিলদের এইটা দিয়ে পিটিয়ে সোজা করতে। মানহা বললো
“বলবি না তো! ঠিক আছে আমরা ভাইয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করে নেব।”তিন্নি বললো”তুই চাইলে ওই ব্যাটাকে বলে লাঠি থেরাপি শিখাতে পারবো। ওই লোক তো লাঠি নিয়ে চোর-ডাকাতদের পিটায়। এই বিষয়ে তার এক্সপেরিয়েন্স ভালো আছে।
মৌমিতা বলল”দেখিস তোকে না আবার এই থেরাপি দেওয়া শুরু করে।” তিন্নি হেসে বলল”ওই লোক থেরাপি দিবে কি, সেতো আমাকে দেখেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। সবাই একসাথে হেসে উঠলো।

জিসানের মনটা আজ অনেক অস্থির হয়ে আছে। তিন্নিকে একবার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে ভাবছে যাবে নাকি যাবে না। পরে আবার ভাবলো তিন্নি তো তার বিয়ে করা বউ। সে যখন খুশি তার কাছে যেতে পারে।

সন্ধ্যে নাগাদ জিসান তিন্নিদের বাড়িতে পৌছালো। তিন্নি তখন ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছে। জিসানকে দেখেও তার মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসলো না। সে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখায় ব্যস্ত। যেন এখন টিভি না দেখলে সাইক্লোন চলে আসবে।

তামিমও জিসানের পাশে এসে বসলো। আর বললো”আচ্ছা ভাইয়া ঘাড়তেড়্যা পাবলিকদের আপনারা কিভাবে সোজা করেন আমাকে একটু বলবেন? আমার পরিচিত কিছু ঘাড়তেড়্যা পাবলিক আছে তো তাদেরকে সোজা করতে চাই।”
জিসান আড়চোখে একবার তিন্নিকে দেখলো। তিন্নি রক্তচক্ষু নিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে আছে। তামিম বললো”তুমি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন আপু, আমি তো আর তোমার কথা বলিনি। তোমার ঘাড় তো একদম সোজা।”

জিসান হেসে বললো”আমার কাছে অনেক রকমের পদ্ধতি আছে, তুমি যেকোনোটা এপ্লাই করে দেখতে পারো তামিম। আমি 100% সিওর একদম রডের মত সোজা হয়ে যাবে। তিন্নি জিসান এর দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন জিসানকে এক্ষুনি খেয়ে ফেলবে। তিন্নিকে রাগাতে পেরে জিসান এর খুব ভালো লাগছে।

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#Part_4

তামিম জিসান এর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তিন্নির মা আজ জামাই আদরে ব্যস্ত। জিসান বেচারা পড়েছে বিপদে। তিন্নির মা জিসানকে একের পর এক খাবার খাওয়াচ্ছে। একমাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা।
জিসান না পারছি গিলতে না পারছি ফেলতে। তিন্নির এবার অবশ্য অনেকটা হাসি পাচ্ছে জিসানের অবস্থা দেখে। কিন্তু সে হাসিটা দমিয়ে রাখলো।

বসে বসে জিসান তিন্নির রুমটা পর্যবেক্ষণ করছে। তিন্নির রুমের পাশে একটা বারান্দা আছে। বারান্দায় বিভিন্ন ধরনের গাছ দিয়ে ভরপুর। কিছুক্ষণ পর তিন্নি রুমে আসলো।হঠাৎ তিন্নি বলে উঠলো
“আপনার আইডি কার্ড টা দিন তো দেখি।” জিসান বেশ অবাক হলো। তিন্নি আজ প্রথম তার সাথে কথা বলছে। কিন্তু তার প্রথম কথাই হলো আইডি কার্ড দেখবে? তিন্নি আবার বললো”কি হলো দিন? জিসান তার পকেট থেকে তার আইডি কার্ডটি বের করে তিন্নিকে দিলো।

আইডি কার্ডটি হাতে নিয়ে তিন্নি সবার আগে জিসানের পুরো নামটি দেখে নিল। আসলে সে জিসান এর পুরো নাম কি মনে করতে পারছিল না। তাই কৌশলে তার নামটি জেনে নিল।”আবরার জাওয়াদ জিসান।”পাশে তার ডিপার্টমেন্টের নাম। কার্ডটা সে জিসানকে ফেরত দিলো।

তিন্নি বললো”পাপা আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছে। আপনি চাইলে পাপার সাথে দেখা করে আসতে পারেন।”
আনিসুর রহমান আর জিসান পাশাপাশি সোফায় বসে আছে। আনিসুর রহমান প্রথমে শুরু করলেন”তোমার কাজ কেমন চলছে বাবা?”তিন্নির বাবার এই “বাবা” ডাকটা জিসানের খুব পছন্দ। মনেহয় যেন নিজের বাবাই ডাকছে তাকে। জিসান জবাব দিলো”জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো চলছে।

“আনিসুর রহমান বললেন”দেখো বাবা, আমার মেয়েটা অনেক জেদি। আর অনেক ছেলেমানুষি আছে তার মধ্যে। তুমি তার কথা বা ব্যবহারে মন খারাপ করো না। আমার মেয়ের মনটা অনেক নরম। তুমি প্লিজ ওকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। সম্পর্কটাকে একটু সময় দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

জিসান বললো “আপনি কোন চিন্তা করবেন না বাবা। সে তো আমার স্ত্রীর, তাই তাকে বোঝায় দায়িত্ব টাও আমার। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন বাবা।”
তিন্নির রুমে ঢুকেই জিসান একটু থমকে দাঁড়ালো। তিন্নি একটা প্লাজো আর টি-শার্ট পড়ে টেবিলে বসে খুব মনোযোগ সহকারে বই পরছে। জিসান চুপচাপ খাটে বসে পড়ল, আর ভাবতে থাকলো”এই মেয়েটাকে যেই রূপেই দেখি না কেন সব রূপেই আমাকে মুগ্ধ করে। মানতেই হবে আমার বউটা আসলেই অনেক কিউট।”

তিন্নি জিসানের দিকে আড়চোখে একবার তাকালো আর সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। আর ভাবতে থাকলো” এই লোক এভাবে তাকায় কেনো, বিয়ে করেছে বলেই চোখ দিয়ে এভাবে গিলে খেতে হবে নাকি। এই লোকের চরিত্র নিয়ে তো আমার বেস্ ডাউট হচ্ছে। আল্লাহ জানে কত মেয়ের দিকে এভাবে তাকায় এই লোক!!

হঠাৎ তিন্নি বলে উঠলো”আমার এখনো অনেক পড়া বাকি তাই লাইট অন থাকবে। আপনি চাইলে তামিমের সাথে থাকতে পারেন।
জিসান বুঝলো তিন্নি ইনডাইরেক্টলি তাকে চলে যেতে বলছে। মানতে হবে তার বউ অনেক বুদ্ধিমতী। জিসান একটু চিন্তা করে বললো “সমস্যা নেই আমি এখনই চলে যাব, খুব সকালে আমার ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ আছে।
জিসান চলে যাওয়ার পর তিন্নি মনে মনে ভাবলেন”আচ্ছা লোকটা কি মাইন্ড করলো? করলেও আমার তাতে কিছু আসে যায় না।”

সকালে চোখ খুলেই তিন্নি সামনে তার বাবাকে বসা পেল। পরম আদরে তিনি তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। বাবাকে দেখেই তিন্নির সকালটা অনেক চমৎকার হয়ে উঠলো। বাবাকে যেহেতু দেখেছে তার মানে আজকের দিনটা অনেক ভালো কাটবে।
তিন্নি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাবার পাশে বসলো। আজকে তার পাপা নিজ হাতে তাকে নাস্তা খাওয়াবে ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।

হঠাৎ তিন্নির বাবা বলে উঠলো”মামনি তোমার কি মনে আছে, ছোটবেলা থেকে পাপা তোমার জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিসটা বাছাই করে এনে দিতাম?
তিন্নি মুচকি হেসে বললো”অবশ্যই পাপা আমার মনে আছে বেস্ট জিনিসটাই তুমি আমাকে এনে দিতে।”তিন্নির বাবা আবার বললো “বর্তমানে ভালো মনের মানুষ পাওয়া অনেক দায় হয়ে গেছে জানিস? মানুষেরা কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে গেছে।”

তিন্নি বুঝতে পারছে তার বাবা আসলে তাকে কি বুঝাতে চাইছে। তিন্নির বাবা আবার বললেন”প্রতিবারের মত এবারও আমি তোকে বেস্ট কিছুই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জিসান ছেলেটা অনেক ভালো। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সে একজন ভাল মানুষ।”

বিষয়টা ঘুরানোর জন্য তিন্নি তার বাবাকে বলে উঠলো”বুঝলে বাবা আজকে তুমি আমার সকালটা অনেক চমৎকার করে দিয়েছো। তাই আজকে আমি তোমাকে একটা আইসক্রিম খাওয়াবো। তিন্নির বাবা মুচকি হেসে বললেন”শোন তোর মায়ের জন্য আলাদা আনবি, আমার থেকে কিন্তু আমি ভাগ দিবো না কাউকে। বাবার কথা শুনে তিন্নি হেসে উঠলো।

মেয়ের হাসি দেখে আনিসুর রহমান মনে মনে ভাবলেন”তার মেয়েটা কি আসলে এত সুন্দরী নাকি তার চোখে এমন মনে হয়।”