যদি তুমি চাও পর্ব-১৬+১৭

0
326

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৬.
ছায়া আজও একই পথে যাচ্ছিল তবে আজ সে আর হেঁটে যাচ্ছে না। অটো নিয়েছে সে। মনটা ঘুম ভাঙার পর থেকেই ফুরফুরে তার। একেবারে চিন্তা মুক্ত এক মেয়ে ভার্সিটি যাচ্ছে নিজের পড়াশোনা, নিজের ভবিষ্যতের খাতিরে। সে যখন অটো থেকে নেমে ভার্সিটি গেইটে নামে তখন এক বাচ্চা ছেলে এসে তার হাতে একটি শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে সাথে সাথে পালিয়ে যায়। ছায়া যে তাকে প্রশ্ন করবে বা কিছু জানতে চাইবে তার আগেই সে পালিয়ে যায়। ছায়া কিছুটা অবাক হয়। এমন সময় তারই সামনে এসে থামে এক বাইক সেইটার পেছন সীট থেকে নামে এক মেয়ে। ছায়া বোঝার চেষ্টা করছিল আসলে মেয়েটি কে? আর তখনই মেয়েটি হেলমেট খুলে সামনে বসে থাকা ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিলো। এরপর ছেলেটি স্থান ত্যাগ করলো। মেয়েটিকে দেখে অবাক হয় ছায়া কারণ এ আর কেউ নয় বরং অন্তি। অন্তি আজ শাড়ী পরে এসেছে আর সাথে মাথায় হেলমেট থাকায় তাকে চিনতে পারেনি ছায়া।

অন্তি ছায়াকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,
-এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস?
ছায়া নিজের চেহারায় অবাক হওয়ার ছাপ বজায় রেখেই বলে,
-আমি এখানে কী করছি সেটা রাখ আগে বল তুই আজ হঠাৎ শাড়ীতে!
-আবির জোর করলো।
-জোর করলো বলে পরে ফেলবি! এনিহাও তুই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়িসনি তো!
ছায়ার এমন কথায় অন্তি কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
-জানি না।
ছায়া অন্তির কাছে সঠিক কোনো উত্তর না পেয়ে আর ঘাটাতে চাইলো না তাকে। সে বললো,
-চল ভেতরে যাই।
অন্তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় এরপর দু’জনেই এগিয়ে যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে। একটা ক্লাস শেষ করে এসে দু’জনে বসে আছে ক্যাম্পাসের একটা নিরিবিলি জায়গায়। কথা বলছে দু’জনেই তবে পার্সনাল নয়, পড়াশোনা বিষয়ক কথা। অন্তি ও ছায়া তারা যে যার সমস্যা খুলে বসেছে একে অপরের সামনে আর সলভ করার চেষ্টা করছে।

অন্তি নিজের বইয়ের মার্ক করা একটা জায়গায় আঙুল রেখে বইয়ের নিচে আরেক হাত দিয়ে সেটা ছায়ার সামনে নিয়ে তাকে প্রশ্ন করতে যাবে তখনই তার কাছে থাকা শপিং ব্যাগটা চোখে পড়ে। ভ্র কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-ছায়া।
ছায়া ওর দিকে তাকায়।
-ওই ব্যাগে কী?
ছায়ারও তখন মনে পড়ে ও এতক্ষণ ধরে এই ব্যাগটা সাথে নিয়ে ঘুরছে অথচ ওর জানা নেই এর মধ্যে কী আছে বা কে দিয়েছে। ছায়া অন্তির প্রশ্ন শুনে চট করে ব্যাগটা হাতে নিয়ে সেটার ভেতরে আরেক হাত ঢুকিয়ে যা ছিল তা বের করে আনে। একটা চারকোনা গিফট। ভেতরে কী আছে দেখতে হলে আগে উপরের এই আবরণ খুলতে হবে। ছায়া চিন্তায় পড়ে যায় খুলে দেখবে কি-না। একবার মন বলছে খুলে দেখতে হাজার হোক গিফটই তো তাও আবার তারই জন্য। সে খুলে দেখলে নিশ্চয়ই খারাপ দেখাবে না বিষয়টা। উপহার পেতে কারই না ভালো লাগে! ছায়ারও ভালো লাগলো এমন কিছু দেখে। সে যখন প্যাকেটটা খুলতে যায় তখন তার বিবেক বলে অচেনা কারো কাছে থেকে আসা এই জিনিসটা নেওয়া কী ঠিক হবে! তার অন্তরআত্মা বাধা দিচ্ছে তাকে।

অন্তি ছায়াকে কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু ছায়া নিজ ভাবনায় এতোটা মশগুল যে সে শুনতে পায়নি। অন্তি এবার না পেরে ছায়াকে আলতো করে ধাক্কা দেয় আর বলে,
-কীরে কোথায় হারিয়ে গেলি?
ছায়া নিজের হাতে থাকা উপহারটা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে অন্তি’কে বলে,
-জানি না।
তারপর সম্মতি ফিরে পেতেই বলে,
-আসলে আজ আমি যখন ভার্সিটি গেইটের সামনে এসে নামলাম তখন একটা পিচ্চি এসে আমার হাতে এই ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে গেল। এর আগে আমি কিছু জিজ্ঞেস করতাম ছেলেটা পালিয়ে যায়। এরপর তুই এসে পড়লি আর খেয়াল ছিল না এইটার।
অন্তি ঠাট্টা করে বলে,
-এই ছায়া, তোর কোনো সিক্রেট লাভার নয় তো যে এইভাবে তোকে সারপ্রাইজ গিফট পাঠাচ্ছে!
ছায়া অন্তির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে,
-ওসব আজেবাজে না বকে আগে বল কী করা যায়?
-খুলে দেখ।
-তুই সিওর?
-কোনো সমস্যা?
-কে দিয়েছে আমি জানি না। পরিচিত কেউ দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না তাই…
ছায়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অন্তি বলে,
-রাখ তোর গভীর চিন্তা। দেখ খুলে, হয়তো ভেতরে কিছু পেয়ে যাবি যার থেকে বোঝা যাবে এটা কার কাজ।
ছায়া তখনও খুললো না দেখে অন্তি সেটা ওর হাত থেকে নিজের হাতে নিয়ে নেয় এরপর নিজেই উপরের আবরণটা সরিয়ে ফেলে।

ভেতরে একটা ছোট্ট বক্স আছে দেখে ছায়ার চোখ কপালে। একটা মোবাইলের বক্স তবে নতুন মনে হলেও প্যাকেটটা খোলাই মনে হচ্ছে। ছায়া ভাবে হয়তো কেউ ওর সাথে প্র‍্যাঙ্ক করেছে তাই খুব গুরুত্বের সাথে না খুলে বক্সটা একটু জোরে টেনে খুলে এতে ভেতরে থাকা ফোনটা নিচে পড়ে যায়। ভাগ্যিস দেখানে ওদের ব্যাগ রাখা ছিল নয়তো এই ব্র‍্যান্ড নিউ গিফট আসা মোবাইলটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো। অন্তি মোবাইলটা নিজের হাতে তুলে নেয় আর ছায়া তুলে নেয় তার নিচে পড়ে থাকা চিরকুট টা। সেখানে লিখা,
“এই যে ম্যাডাম ছায়া,
কেমন আছেন? আশা করা যায় ভালোই আছেন। অবাক হচ্ছেন বুঝি এই গিফট দেখে। আমার জন্মদিনে আপনার দেওয়া উপহারটা আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে। কেনো জানেন? আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি সেটা আপনার প্রথম টিউশনির প্রথম আয় ছিল। ইউজ্যুয়ালি একজনের প্রথম আর্নিং তার বাবা-মায়ের কাছে দেয় বা তাদের কিছু কিনে দেয়। ছোটোখাটো হোক তবুও তার মাঝে যে ভালোবাসাটা মেশানো থাকে সেটার কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে সেটা আমি পেয়েছি। আমার কাছে বিষয়টা খুব ভালো লেগেছে। মন ছুঁয়েছেন আপনি আমার।
এই মুহুর্তে আপনার কাছে যেই উপহারটা পৌঁছেছে সেটা আমার তরফ থেকে আপনার জন্য রিটার্ন গিফট। আমি জানি আমার সামর্থ অনুযায়ী কম দামী হয়ে গেছে তবে এর চেয়ে বেশী দামী হলে আপনি যে নেবেন না সেটাও আমি জানি। আমার কেনো জানি না মনে হলো এই জিনিসটা এখন আপনার খুব কাজে লাগবে তাই দেরি করলাম না পাঠাতে। খুশি মনে গ্রহণ করলে আমার ভালো লাগবে। ভালো থাকবেন।

আপনার অপরাধী, উহু আমরা তো সমান অপরাধী ছিলাম তাই না ছায়া? হা হা হা। এখন কী লেখা যায় বলুন তো? উমমম….
ইওর পার্টনার ইন ক্রাইম,
মেঘ”

ছোট্ট সেই চিঠিখানা পড়ার পরে ছায়া ফোনটা নিজের হাতে নিলো। মেঘের সাথে তার প্রথমবার দেখা হওয়ার আড়াই মাস পেরিয়েছে এর মাঝে কয়েকবার পথে দেখা হয়েছে তাদের। তিন দিন আগের কথা, ছায়ার প্রথম টিউশনির প্রথম বেতন হাতে এসেছিল তারই আগের দিন। ভেবেছিল এটা লুকিয়ে রাখবে সে। মায়ের চোখে পড়তে দেওয়া যাবে না নয়তো প্রয়োজনের সময় তার হাতে কিছুই থাকবে না। এরপর ব্যাগের একটা কোণায় সিক্রেট পকেট বানিয়ে সেখানেই রেখেছিল সে। হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায় মেঘের সাথে। ছায়া তখনও জানতো না দিনটা মেঘের জন্মদিন ছিল। ওদের কথা হচ্ছিল এর মাঝে মেঘের ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেঘ মেসেজটা ওপেন করলে ছায়াও সেটা আড়চোখে দেখে ফেলে আর সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
-আজ আপনার জন্মদিন?
মেঘ ফোন থেকে চোখ তুলে ছায়ার দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘের খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া ওর জন্মদিনটা কারো জানা নেই যে। আর আজ এখন এই মুহুর্তে ছায়াও জেনে গেল। ছায়া বলে,
-বলুন না, আজ আপনার জন্মদিন?
মেঘ না বলতে চাইলো কিন্তু তার মাথা ডানে বাঁয়ে না বাকিয়ে উপর নিচে ঝুললো। ছায়া সেটা দেখে বললো,
-শুভ জন্মদিন, মেঘ।

চলবে…………?

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৭.
যদিও মেঘ কখনো কারো সামনে নিজের জন্মদিন নিয়ে কথা বলে না কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে তার জীবনে যারা নিজেরা মিলেই তারিখটা খুঁজে বের করে এনেছে। আজ অফিসে যেতে দেরি হয়েছে মেঘের তারপর ছায়ার সাথে দেখা হয়ে গেল। মেঘের আর ইচ্ছে করলো না অফিসে যেতে। সে নিজের মাঝে কেমন একটা অলস অলস ভাব অনুভব করতে পারলো তারপর অফিসে জানিয়ে দিলো তার না যাওয়ার কথা। এরপরই একজন কর্মচারী একটা মেসেজ পাঠায় তাকে। যাতে জন্মদিনের শুভেচ্ছার সাথে সাথে তাদের অপেক্ষার কথাটাও উল্লেখ ছিল। মেঘ ছায়ার কাছে ‘শুভ জন্মদিন’ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর ছোট্ট করে বললো,
-থ্যাংকস।
ছায়া হঠাৎ করেই কিছু একটা ভেবে বললো,
-জন্মদিনের ট্রিট দেবেন না আমায়?
মেঘ কিছুক্ষণের জন্য ওর কথা শুনে অবাক চোখে চেয়ে রয় তারপর বলে,
-ইয়েস অফকোর্স। সামনের রেস্টুরেন্টে চলো বসি যা যা ইচ্ছে অর্ডার করো।
ছায়া মাথা নাড়িয়ে না করে দিয়ে বললো,
-উহহু, আমার এখন ওসব খাওয়ার সময় নেই আপনি বরং ওই যে সামনের শপ থেকে আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে আসুন।
মেঘ একবার দেখলো ছায়ার দেখানো সেই শপের দিকে তারপর বললো,
-সিরিয়াসলি? আমার জন্মদিনে আমায় মেরে ফেলার প্ল্যান করে এসেছো বুঝি?
-বলুন দেবেন না। এসব বলার প্রয়োজন কী?
মেঘ শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে রয় তারপর আবার বলে,
-অনেক ভীড় ছায়া। এতো মানুষের মাঝে আমি চ্যাপ্টা হয়ে যাব।
-তাহলে তো আরও ভালো আমি সেই চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া মেঘের হাতে পায়ে সুতো বেঁধে ঘুড়ি বানিয়ে ওড়াবো। এতে একটা সুবিধা আছে। কী জানেন?
-কী?
-আমার নিজের ঘুড়ি কাটার ভয় থাকবে না আপনি অন্য হাত দিয়ে বাকি ঘুড়ি গুলো ধরে দাঁত দিয়ে কেটে ফেলবেন। ব্যস। আমি জিতে যাব।
মেঘ ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর এগোতে এগোতে বলে,
-তুমি পারো বটে। যাই হোক ওয়েট করো এইখানটাতেই আমি আসছি তোমার আইসক্রিম নিয়ে। বাই দ্য ওয়ে কোন ফ্লেভার?
-চকলেট।
-ওকে।
মেঘ গেল ভীড় ঠেলে তারপর ছায়ার জন্য আইসক্রিম নিলো সে। আবারও সেই একই ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসতে হলো। আইসক্রিমের দিকে চেয়ে থেকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এলো যেখানে সে ছায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল সেখানে এরপর বললো,
-রেস্টুরেন্টে বসেও কিন্তু আইসক্রিম খাওয়া যেতো ছায়া। তুমি যে কেনো……
এইটুকু বলেই সামনে তাকায় সে। ছায়া নেই সেখানে। চিন্তায় পড়ে যায় মেঘ। গেল কোথায় মেয়েটা? এইখানেই তো থাকতে বলে গিয়েছিল তাকে। মেঘ তাকে আশেপাশে খুঁজতে থাকে কিন্তু দূর দূর অবধি ছায়ার কোনো চিহ্ন তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না।

আইসক্রিম গলতে শুরু করেছে কিন্তু তখনও ছায়ার কোনো দেখা নেই। মেঘ খোঁজা চালু রেখেছে এরই মাঝে কেউ খপ করে মেঘের হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে নেয়। মেঘ ফিরে দেখে ছায়া। কোমরে হাত দিয়ে প্রশ্ন করে,
-কোথায় ছিলে?
ছায়া আইসক্রিম খেতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে। গলে যাওয়া আইসক্রিম সে চুমুক দিয়ে খেতে ব্যস্ত। মেঘ বললো,
-ওটা গলে জল হয়ে গেছে ছায়া। ওটা খেও না। আমি আরেকটা এনে দিচ্ছি।
মেঘ যাচ্ছিলো তখনই ছায়া ওর হাত ধরে নিয়ে আটকে বলে,
-উমমম ইয়াম্মি। আমি গলা আইসক্রিমই খেতে পছন্দ করি। আর আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
-সিওর?
-হ্যা হ্যা। একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর। শুনুন ধন্যবাদ এই আইসক্রিম ট্রিটের জন্য।
-ইউ আর ওয়েলকাম।
-আচ্ছা আমি এখন আসি?
মেঘ বলে,
-যাবে তবে আগে বলে তো যাও কোথায় ছিলে?
ছায়া নিজের হাত তুলে সামনে দেখায়। তার হাতে দু’টো কলম ছিল। সেগুলো দেখিয়ে বলে,
-এটা নিতে।
-আমায় বলতে পারতে নিয়ে আসতাম।
-উহু, প্রয়োজন ছিল না সেটার।
-ওহ।
-আজ আসি।
-আচ্ছা।
-ভালো থাকবেন। আপনার জীবনের প্রত্যেকটা দিন সুখের হোক।
-দোয়া রাখবে।
-অবশ্যই।
ছায়া দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর মেঘ পেছন থেকে তাকে দেখছে। ততক্ষণ পর্যন্ত দেখলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ছায়া তার দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। তারপর ফিরে গিয়ে গাড়িতে বসে তবে স্টার্ট দিয়েও থেমে যায় কারণ পাশের সীটেই একটা গিফট রাখা ছিল। মেঘের বুঝতে অসুবিধে হয় না আসলে এটা কে রেখেছে। খুলে দেখলো সে এবং সেটা হাতে নিয়েই চিঠিটা খুলে দেখলো। ছোট্ট করে লিখা আছে,
“লুকিয়ে উপহার দেওয়ার জন্য দুঃখিত তবে এটা শুধু লিখার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকলো। কারণ আমি মোটেও দুঃখিত বোধ করছি না। আপনি আমায় ট্রিট দিলেন উপহার তো দিতেই হতো আপনাকে। আশাকরি পছন্দ হবে আপনার। হ্যাপি বার্থডে এগেইন, মেঘ।

ছায়া।”

মেঘ ছায়ার লিখা চিঠি পড়ে কপালে হাত দিয়ে বাইরে তাকিয়ে হাসে তারপর আবার বক্সে রাখা গিফটটা হাতে নিয়ে দেখে। দৃশ্যটা ছায়া দূর থেকে দেখলো, ওর ভালো লাগলো বিষয়টা। মেঘের হাসিটাই বলে দিচ্ছে ও খুশি হয়েছে উপহার পেয়ে। মেঘের জন্মদিন কথাটা জানার পরেই ওর ইচ্ছে করছিল ওকে কিছু একটা দিতে ভাগ্যক্রমে পাশেই একটা ঘড়ির দোকান চোখে পড়ে তার। আর সেটা দেখেই মেঘকে বানানা বানিয়ে পাঠিয়েছিল ভীড় জমা সেই শপে। হাসে ছায়া। এমনটা করে তার একটুও খারাপ লাগছে না বরং মনের মাঝে ভালো লাগা ছেয়ে আছে। এর কারণ হয়তো মেঘের ওই হাসিটা। ভালো লাগে ছায়ার কাছে খুব ভালো লাগে।

বর্তমান,
অন্তি ছায়াকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-মাঝে মাঝে হুটহাট কোথায় হারিয়ে যাস বলতো?
ছায়া অন্তির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মেঘের লিখা চিঠি আবারও পড়ে। তার এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে একবার কথা বলতে। আসলে কেনো এমন ইচ্ছে করছে তার জানা নেই। অন্তি নিজের কথার উত্তর না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-থাক তুই তোর কল্পনা নিয়ে আমি চললাম।
সে উঠে কিছুদূর হেঁটে এগোলো। ভাবলো হয়তো ছায়া ডাকবে তাকে বা নিজেই ছুঁটে এসে তার পাশে হাঁটবে কিন্তু না ছায়া তখনও কল্পনায় হারিয়ে রয়েছে। অন্তি একবার পেছন ফিরে সেটা দেখলো তারপর আর দাঁড়ালো না চলে গেল সেখান থেকে।

অন্তি আসলে ছায়ার উপর রাগ করে এসেছে নাকি অন্য কারণে সে নিজেও জানে না তবে সে আর ক্যাম্পাসে থাকেনি। চলে এসেছে বাড়িতে। আবিরকেও জানায়নি সে। তার ফ্ল্যাটেও যায়নি। নিজের বাড়িতে তার মায়ের কাছে চলে এসেছে সে। এখন তার এসবে কোনো পরোয়া নেই। নিহাল সুস্থ, সে হয়তো মুক্তও। কারণ তার সুস্থ হওয়ার পরে আর কোনো ভিডিওই দেখানো হয়নি অন্তিকে। আবিরকে একদিন বলতে শুনেছিল, ‘পাখি খাঁচা ভেঙে পালিয়েছে।’ তখন বুঝতে না পারলেও পরে যখন আবিরের কাছে নিহাল সম্পর্কে প্রশ্ন করতো ও তখন কোনো উত্তর পেতো না। এইভাবেই কয়েকদিন যাওয়ার পরে বুঝেছিল সেই কথার মানেটা আসলে কী ছিল। কিন্তু অন্তির মনে বিশ্বাস ছিল নিহাল মুক্ত হয়ে তার কাছেই আসবে এতোগুলো দিন পেরোলো একটা বারের জন্যও এলো না। অন্তির মনে অভিমান জমে ছিল অনেক যা আজ ছায়ার সেই মিষ্টি হাসি মাখা মুখখানা দেখে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল।

আবির বার বার ফোন করে যাচ্ছে অন্তিকে কিন্তু অন্তি নিজের ভাবনায় ডুবে আছে। আসলে সে যে আবিরের কথা বাইরে তাকে না জানিয়ে মা’য়ের বাড়িতে চলে এসেছে সেটা আবিরের উপর রাগ করে, নিহালের উপর রাগ, ছায়ার উপর রাগ করে নাকি নিজের উপর রাগ করে এসেছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত এর মাঝে কী করে তার অন্যদিকে মন যাবে? কী করেই বা বুঝবে কেউ তাকে হন্নে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে!

চলবে……….