রণরঙ্গিণী প্রেমরঙ্গা পর্ব-৩৮+৩৯

0
2

#
#রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৩৮|
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের ভেতর পিনপতন নীরবতা বিরাজমান। একাকীত্ব ঘিরে রেখেছে মৃত্তিকাকে। কিছু আর্তনাদ গলায় দলা পাকিয়ে আছে। ক্রমশ ভারাক্রান্ত। প্রলয়ের মুখে তখন বাচ্চার কথাটা শুনে শরীরের শিরা উপশিরায় র’ক্ত ছলকে উঠেছিল৷ আজ প্রলয়ের জন্যই তো তার অনাগত সন্তান ভূমিষ্ট হতে পারল না৷ প্রলয়ের প্রতি কোনো ভালোবাসাই আর অবশিষ্ট নেই। যা আছে সেটা কেবলই ঘৃণা‚ ঘৃণা আর ঘৃণা। ঘৃণা ব্যতীত কিছুই নেই৷ না সে প্রলয়কে কখনো ক্ষমা করবে আর না কখনো তার কাছে ফিরে যাবে৷ জ্বলজ্বল করতে থাকা আবছা চোখে মৃত্তিকা মেঝেই পড়ে থাকা একটা শাড়ির দিকে তাকাল। ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বলছে বিধায় শাড়িটা দেখা যাচ্ছে৷ এই শাড়ি একদিন প্রলয়ই তাকে কিনে দিয়েছিল৷ মৃত্তিকা তার হাতে থাকা লাইটার জ্বলিয়ে শাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। একটু আগুনের শিখা পেতেই জ্বলে উঠল মেঝেতে পড়ে থাকা লাল শিফনের শাড়িটি। এই শাড়িটা সেদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভূমির পড়নে ছিল। শাড়িটি সাক্ষী ছিল সেদিন রাতের প্রতিটা আর্তনাদের। প্রতি ফোঁটা র’ক্তের সাক্ষী ছিল এই শাড়ি৷ আজও সেই র’ক্তের দাগ লেগে রয়েছে৷ মৃত্তিকা ক্রন্দনরত কণ্ঠে আওড়াল‚

“আপনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করব না এমপি মশাই।”

বসে বসে কাঁদতে শুরু করল মৃত্তিকা৷ অসহনীয় যন্ত্রণা গুলো ভেতরে জমা হয়ে রয়েছে। কারো সামনে কান্না করা বারণ। মৃত্তিকার কান্না সহ্য করতে পারেন না তনুজা৷ এমনিতেই তাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় থাকেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্তিকাই উনার শেষ সাহারা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কান্নার বেগ বাড়তে শুরু করল৷ এদিকে ঘুমের ঘোরে কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল তনুজার। উনার ঘুম খুবই পাতলা। অল্প আওয়াজে ঘুম হালকা হয়ে আসে৷ তনুজা আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে অকস্মাৎ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন না তিনি৷ কিছুটা বেগ পেতে হয়। তনুজা উঠেই ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। না! ঘরে মৃত্তিকা কোথাও নেই। বিছানায় শুধু সুদর্শিনী ঘুমিয়ে আছে৷ তনুজা এ ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরটায় গেলেন। অন্ধকার করে ঈষৎ কমলাটে আলো টিমটিম করে জ্বলছে৷ সেই আবছা আলোয় মৃত্তিকার আবছায়া বুঝতে অসুবিধে হলো না উনার। আবছা সেই আলো অনুসরণ করে তনুজা এগিয়ে গেলেন মৃত্তিকার দিকে৷ মেয়েকে শান্ত করতে জড়িয়ে ধরলেন। এই রাতের বেলার তার এভাবে কান্না করার কারণ বুঝতে খুব একটা অসুবিধে হলো না তনুজার। তিনি মৃত্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন‚

“শান্ত হ মা।”

“নিষ্ঠুর মানুষগুলো আমার কাছ থেকে মাতৃত্বের স্বাদ কেড়ে নিয়েছে৷ আমার বাচ্চাটাকে ভূমিষ্ট হবার আগেই মে’রে ফেলেছে। উপহার দিয়েছে এক আকাশসম একাকীত্ব আর বিষণ্ণতা৷ কাউকে ক্ষমা করব না আমি৷ আর মেহরাব শিকদারকে তো আমি নিজ থেকে শাস্তি দেব৷ ওই জঘন্য লোকের শাস্তি সবচেয়ে কঠিনতম শাস্তি হবে৷ সেদিন চাইলেই কিন্তু ওরা আমাকে ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু ওরা তা করেনি। ওই দিনের কথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। ক্রমশ আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়৷ রাতে ঘুমতে পারি না আমি।”

“তোর সকল কষ্ট একদিন দূর হবে৷ তুই অনেক সুখী হবি। একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবার পাবি।”

মৃত্তিকা মুখ তুলে তনুজার দিকে তাকিয়ে বলল‚ “ওসবের আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি মামনি।”

“এভাবে বলতে নেই মা৷ সৃষ্টিকর্তা সবটাই দেখছেন। তোর দুঃখও একদিন ঘুচবে।”

সকাল থেকেই রান্নাঘরে কাজের তোড়জোড় চলছে৷ আজ ইরার বাবা মা আর আরশ আসবে৷ বিয়ের কথা এ বাড়িতেই হবে৷ উনারাই অনিন্দ্যনগর থেকে ঢাকা আসবেন। ভোরের ট্রেনে রওনা দিয়েছিলেন উনারা৷ এখানে পৌঁছাতে হয়তো আরও ঘণ্টা দেঁড়েক সময় লাগবে৷ সেই ফাঁকে বাড়ির মহিলাগন সকলেই কাজে একে অপরকে সাহায্য করছেন। তৃপ্তিও রান্নাঘরে রয়েছে৷ ফিরোজার কাছ থেকে রান্না শিখছিল৷ উনার হাতের একটা রেসিপি তার বেশ ভালো লেগেছে৷ ভাগ্য ভালো বলে সেই খাবারটা আজ রান্না করা হচ্ছে৷ সেই খাবারটা ফিরোজা খুব ভালো রান্না করেন৷ এই সুযোগে সেও রান্না শিখবে। আজ সকাল থেকে মাধুরীকে বেশ অন্যরকম লাগছে৷ বেশ হাসিখুশি। উনাকে খুব একটা হাসিখুশি দেখা যায় না৷ বেশির ভাগ সময়ই কেমন গম্ভীর হয়ে থাকেন। প্রলয়ও হয়েছে ঠিক তার মায়ের মতো। দুজনের স্বভাব একদম এক৷ আজ অর্পণ বা মেহরাব শিকদার কেউই হসপিটালে যাবেন না৷ আর না প্রলয় আর তার বাবা কোথাও যাবেন! আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ বিয়ের দিন তারিখও ঠিক করা হবে আজ৷ অর্পণ চাইছে বিয়েটা এই মাসের মধ্যেই হোক৷ আর এই মাসের আর মাত্র আটদিন সময় রয়েছে৷ বিয়ের কেনাকাটা‚ ডেকোরেশনেরও তো ব্যাপার রয়েছে। সময় তো প্রয়োজন। অর্পণের এই তাড়াহুড়োর ব্যাপারটা কেউই হজম করতে পারছে না৷ বিপরীতে হাসছেও বটে৷ তবে তা কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না অর্পণ। সে তার মতো চলাফেরা করছে৷ রান্নাবান্নার কাজও প্রায় শেষের দিকে। এদিকে বাসন ধুয়ে রাখছে সাবিনা। পূর্ণতা পুষ্পিতা আজ কলেজ যাবে না৷ এতে করে প্রলয় একবার চোখ রাঙিয়েছিল। পড়াশোনা নিয়ে গাফেলতি মোটেও পছন্দ নয় তার৷ কিন্তু ছোটো বোনদের আবদারও ফেলতে লারল না সে৷ পূর্ণতা পুষ্পিতার পড়াশোনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত গুলো প্রলয়ই নেয়৷ আর এই ব্যাপারে প্রলয় ছাড়া আর কেউ হস্তক্ষেপ করতে আসে না৷ মোর্শেদ শিকদারও নিশ্চিন্ত।

এরই মাঝে কলিং বেল বেজে উঠল। মাধুরী কাজের ফাঁকে তৃপ্তিকে বললেন সদর দরজা খুলে দেওয়ার জন্য৷ উনারা দুজন রান্নাঘরের কাজই করছেন। আসলে তাড়াহুড়োর কাজ সবসময় এলোমেলোই হয়৷ যতই এগোনো যায়‚ মনে হয় যেন কোনোটাই সঠিক ভাবে হয়নি বা এগোচ্ছে না। এদিকে মাধুরীর কথানুযায়ী তৃপ্তি গিয়ে সদর দরজা খুলে দিল। দরজার সামনে তিনজন দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা আর একজন ছেলে। তৃপ্তি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল‚

“কাকে চাই?”

শাহাদাৎ মোড়ল আর নাজমা কিছুটা ক্লান্ত৷ রাতে ঘুম হয়নি। ভোরের ট্রেনে করে এসেছেন উনার৷ দেখে মনে হচ্ছে ঝিমচ্ছেন। আরশ একবার তার সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাল। গায়ের রং তার উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের৷ চুলে দুটো বিনুনি গেঁথে রেখেছে৷ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মতো কিছুটা ব্যাপার আছে। মেয়েটা তার কোমড়ে ওড়না সুন্দর করে পেঁচিয়ে রেখেছে৷ মেয়েরা কাজ করতে গেলে যেমন করে কোমরে পেঁচিয়ে রাখে ঠিক তেমনই। আরশ তার মাকে আর ইরাকে এভাবে কাজের সময় ওড়না পেঁচিয়ে রাখতে দেখেছে৷ হাতে থাকা ব্যাগটাকে নিচে রেখে এবার সে বলল‚

“আপনি কে?”

“আপনি বুঝি প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন করেন?”

উনাদের যে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে বলবে এই কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছে তৃপ্তি৷ আরশ যারপরনাই বিরক্ত হলো৷ কিছুক্ষণ আগে তো এই মেয়ের প্রেমেই পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটা শুধু বড়োই হয়ে কিন্তু মাথায় বোধবুদ্ধি নেই বললেই চলে। আরশ বলল‚

“অপ্স স্যরি৷ আমি ফারহান এনায়েত আরশ। এবার কী আপনার পরিচয়টা জানতে পারি?”

“তৃপ্তি জুনাইরাহ।”

এরই মাঝে মাধুরী এসে জিজ্ঞেস করলেন‚ “কে এসেছে তৃপ্তি?”

তৃপ্তিকে কিছুই বলতে হলো না৷ আরশকে দেখে খুশি হলেন মাধুরী। গদগদ হয়ে বললেন‚ “বাহিরে কেন দাঁড়িয়ে আছ বাবা— ভেতরে এসো! তৃপ্তি তুমি এতক্ষণ ধরে উনাদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছ?”

শেষোক্তটি কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বললেন মাধুরী। তৃপ্তি বুঝল এরা হয়তো এ বাড়ির চেনা কেউ হবে৷ সে সদর দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। আরশ সহ তার বাবা মা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই সদর দরজা আটকে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল তৃপ্তি। আরশ তার বাবা মাকে অতিথি শালায় রেখে এসেছে৷ উনাদের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। আর সে ছুটে চলে গেল অর্পণের ঘরে দিকে৷ এখন সময় সাড়ে নয়টায় গড়িয়েছে৷ এতক্ষণ সবাই ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। এখনো পর্যন্ত কেউ নাস্তা করেননি— একসঙ্গে খাবেন বলে। অর্পণের ঘরের দরজা খোলাই ছিল৷ আরশ অনুমতি ব্যাতীত অর্পণের ঘরে ঢুকল। এমনটা সে হরহামেশাই করে এসেছে৷ বন্ধুর ঘরে আসাতে আবার অনুমতি কীসের? তবে বিয়ের পর সেটা অন্য কথা৷

এদিকে…

হাতের সমস্ত কাজ শেষ। সাবিনা সুযোগ বুঝে সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর‍তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রান্না করা খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে৷ শাহাদাৎ মোড়ল আর নাজমা হাতমুখ ধুয়ে এলেই সবাইকে নাস্তা দেওয়া হবে৷ তৃপ্তি ডাইনিং টেবিলের ধারে দাঁড়িয়ে ফিরোজাকে জিজ্ঞেস করল‚ “আন্টি উনারা কে?”

“ইরার কথা তো শুনেছই! ওরা ইরার পরিবার। বাবা‚ মা আর ভাই।”

“আর আমি কি-না উনাদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলাম।”

“ধ্যাৎ তুমি কী আর ইচ্ছে করে করেছ নাকি? এটা নিতান্তই একটা ছোট্টো ভুল। এই নিয়ে মন খারাপ করার কিছু হয়নি।”

“আন্টি একদমই অন্যরকম।”

প্রত্যুত্তরে ক্ষীণ হাসলেন ফিরোজা৷ উনি বরাবরই এমন৷ ছোটো থেকে উনি খুব শান্ত স্বভাবের৷ স্কুল আর কলেজ জীবনে উনার খুব একটা বন্ধু ছিল না৷ কেউ উনার সঙ্গে বন্ধুত্বই করতে চাইত না। বন্ধু মহল থেকে শুনতে হত ‘তুই খুব বোরিং! তোর বরও ঠিক এমনই হবে৷ এত চুপচাপ থাকিস কী করে? কথা পেটে আটকে যায় না? অস্বস্তি হয় না? দম বন্ধ হয়ে আসে না?’ এরকম আর অনেক কথা শুনতে হয়েছে ফিরোজাকে। তবে তিনি আগে যেমনটা ছিলেন আজও ঠিক তেমনটাই আছেন।

সকাল সাড়ে দশটা…

সকালের নাস্তা সবাই একসঙ্গে করেছেন। সবার আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছে অর্পণ আর আরশের৷ উনারা যে ঢাকা পৌঁছে গিয়েছেন এই কথাটা ইরাকে এখনো জানানো হয়নি৷ বিকেলে একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছে অর্পণ এবং ইরার পরিবার৷ আরশ আর অর্পণ বৈঠকখানার সোফায় বসে রয়েছে৷ সর্বপ্রথমে টিপ্পনী কে’টে অর্পণ বলল‚

“কী রে শালা ডাক্তারি করে করে তুই তো নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিস! তোকে তো কল করলেও পাওয়া যায় না। নাকি লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম টেম করছিস?”

“তেমন কিছুই না। ব্যস্ততায় দিন পার হচ্ছে এই আরকি।”

“তা কোনো মেয়েকে পটাতে পেরেছিস? মনে ধরেছে কাউকে?”

“প্রথম দেখায় একজনকে মনে ধরেছে৷ ভাবছি পটাব। যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা।”

“আমাকেও বল— সেই পোড়া কপালি কে?”

“তুই কী আমাকে অপমান করছিস?”

“অপমান কোথায় করলাম?”

“ওই যে পোড়া কপালি বললি? সে তো হবে অনিন্দ্যনগরের বিখ্যাত ডাক্তার ফারহান এনায়েত আরশের একমাত্র বউ হবে।”

“জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে কাজে লেগে পড়। পাগলের বিলাপ পরেও করতে পারবি।”

সোফার উপর থাকা কুশন অর্পণের দিকে ছুড়ে মারল আরশ৷ এরপর দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠল। ইতিমধ্যেই অনেকের খাওয়া হয়ে গিয়েছে৷ এঁটো বাসনগুলোকে রান্নাঘর রেখে এসে ফিরোজা বললেন‚

“তোদের দুটোতে আবার কী হলো? এভাবে হাসছিস কেন?”

অর্পণ ঝটপট বলল‚ “আর বোলো না মা— আমাদের আরশের একজনকে মনে ধরেছে।”

ফিরোজা জিজ্ঞেস করলেন‚ “মেয়েটার নাম কী? কোথায় থাকে? পরিবারে কে কে আছে?”

“আন্টি তোমার এক ছেলের বিয়েটা আগে দাও তারপর আমার জনকে খুঁজে দিয়ো৷”

অর্পণ বলে উঠল‚ “তার আগেই যদি তোর জনকে অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে চলে যায়?”

“সেটা হতে দিচ্ছি না। একদম চোখে চোখে রাখব।”

বড়োদের এই সমস্ত কথাবার্তায় প্রলয় থাকতে চায় না। তাই সে নিজের ঘরে চলে এসেছে৷ মাধুরী অনেকবার বলেছিলেন। যেহেতু সে এ বাড়ির বড়ো ছেলে তার মতামতেরও সমান মূল্যায়ন করা হবে৷ কিন্তু কে শোনের কার কথা! এদিকে বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে তাই লজ্জায় আর বৈঠকখানায় পা মাড়ায়নি অর্পণ৷ তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। লাইক সিরিয়াসলি? যে কি-না নিজের বিয়ের কথা নিজেই ঢোল পিটিয়ে পরিবারকে জানাল‚ সেই কি-না লজ্জা লাচ্ছে! ঘরে বসে একা একা লজ্জা পেতেও বোর হচ্ছিল না অর্পণ। তাই সে সোজা প্রলয়ের ঘরে চলে এলো৷ এ ঘরে এসে দেখল তার ভাই গম্ভীর হয়ে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে৷ কী যে ভেবে যাচ্ছে প্রলয় হয়তো নিজেও জানে না৷ সে গিয়ে বিছানার তার ভাইয়ের পাশে বসে বাহুতে একটা খোঁচা মে‘রে দিল৷ এবার যেন ভাবনার ঘোর কাটল প্রলয়ের৷ অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚

“কী এত ভাবছ ভাই?”

“ভাবছি‚ একজনের হিসাব আমি কড়ায়গণ্ডায় নেব।”

“কার?”

“সেটা পরেই জানতে পারবি।”

জানার আগ্রহ বাড়তে শুরু করল। অতিরিক্ত কৌতূহল দাবিয়ে রাখতে না পেরে অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “ভাই তুমি কী মনে মনে বড়োসড়ো কিছু ভাবছ?”

“সবসময় যেভাবে আঠার মতো লেগে লেগে থাকিস৷ খুব শীগ্রই সেটাও বুঝে যাবি।”

প্রলয়ের কথাগুলো তালগোল পাকিয়ে গেল৷ একদিনের মধ্যেই প্রলয়কে আবারও আগের মতো চনমনে লাগছে। সবকিছুতেই অতি উচ্ছ্বাস। মনে থেকে যেন বিষাদ নীল রঙ ঝরে গিয়ে রঙিন শত ডানার প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে তার মনাকাশে৷ অর্পণ আবারও বলল‚

“ভাই কাল থেকে তোমাকে অন্যরকম লাগছে।”

“লক্ষ্য করেছিস না?”

অর্পণ সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিল‚ “হ্যাঁ!”

“আমিও লক্ষ্য করেছি।”

বোকা বনে গেল অর্পণ। প্রলয় কখনোই তার কোনো প্রশ্নের জবাব সোজাসুজি দিতেই পারে না। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এমন কিছু বলবে যাতে করে তাকে বিড়ম্বনায় পড়তেই হয়। কিছুটা বিরক্ত হয়ে অর্পণ বলল‚

“তোমার সঙ্গে কথা বলাই বৃথা।”

এবার খানিকটা হাসল প্রলয়৷ অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “হুট করে বিয়ের তাড়া কেন?”

থতমত খেয়ে গেল অর্পণ। আমতা আমতা করে বলল‚ “আমার সমবয়সী সবগুলো বিয়ে করে ফেলেছে৷ ভাবলাম আমি কেন পিছিয়ে থাকব! তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

চশমা ঠিক করে ছোটো ছোটো চোখে তাকাল অর্পণের দিকে৷ এই ছেলেটার কথা বিশ্বাস হলো না৷ অর্পণের সব বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই তার পরিচিতি রয়েছে৷ প্রলয় বলল‚

“তাই নাকি?”

প্রলয়কে সুবিধের ঠেকছে না। অর্পণ সঙ্গে সঙ্গেই জবাব দিল‚ “হ্যাঁ!”

“তাহলে আরশ কেন বিয়ে করল না? তোর আরও দুজন বন্ধু এখনো সিঙ্গেল।”

“উফ ভাই! তোমার এমপি না হয়ে গোয়েন্দা হওয়ার প্রয়োজন ছিল।”

“গোয়েন্দার কাজ শুরু করে দিই— কী বলিস?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলল অর্পণ। প্রলয়ের সঙ্গে সে কখনোই কথায় পারবে না৷ যুক্তির উপর যুক্তি দাঁড় করাবে। তার থেকে বরং চুপ করে যাওয়াই শ্রেয়৷ এরপর মুখ দিয়ে কী না কী বেরিয়ে যায়৷ যদি ভুল করে ভূমির সত্যিটা বেরিয়ে আসে! তাহলে তো আরেক কাণ্ড।

বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে অর্পণ। ইরার নাম্বার ডায়াল করছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না৷ বারবার ব্যস্ত দেখাচ্ছে৷ হয়তো তার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলছে৷ শাহাদাৎ মোড়ল‚ নাজমা আর আরশ দুপুরের দিকে গ্রামে ফিরে গিয়েছে৷ বিয়েরও তো একটা জোগাড় রয়েছে। তবে ইরার বিয়েটা গ্রামে হচ্ছে না। ঢাকাতেই একটা কমিউনিটি সেন্টার বুকড করা হয়েছে৷ প্রলয়ই বুকড করেছে সেটা। আর ইরার পরিবার আত্মীয় স্বজনরা এসে থাকবেন হোটেলে। চারদিনের জন্য। কমিউনিটি সেন্টার থেকে হোটেল প্রায় সামনেই। কাল থেকে বিয়ের কেনাকাটা শুদ্রু করে দেওয়া হবে৷ ইরাকে কলে না পেয়ে বিরক্ত হলো অর্পণ। এই নিয়ে সাতবার কল করেছে৷ প্রতিদিন তো এই সময়টাতেই দুজনের প্রেমালাপ হয়৷ তবে আজ কেন এত ব্যস্ততা দেখাচ্ছে ইরা? অর্পণ ফোন ঘেটে মৃত্তিকার জন্য দুটো লেহেঙ্গা অর্ডার করল। এটাই তার বোনকে দেওয়া প্রথম উপহার তার পক্ষ থেকে। বিয়ে আর রিসেপশনের জন্য দুটো লেহেঙ্গা সে মৃত্তিকাকে উপহার দিতে চায় সে৷ ইরাকে তো সে নিজে পছন্দ করে শপিং মল থেকে কিনে দেবে৷ মৃত্তিকাকে তো এখনই কারো সামনে আনা যাবে না। আসল ধামাকা তো শুরু হবে মেহেন্দির অনুষ্ঠান থেকে৷ মিনিট পাঁচেক সময় পর ইরা নিজে থেকে কল করল৷ সঙ্গে সঙ্গেই অর্পণ কল রিসিভ করল। তার বিরক্তি নিমিষেই উবে গেছে। সে তো এই অপেক্ষাতেই ছিল। ফোন কানে নিয়ে জিজ্ঞেস করল‚

“কী করছিলে বউ?”

“আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি মশাই। আর আমি বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম।”

“হতে কতক্ষণ? আর মাত্র এক সপ্তাহ। তারপর থেকে তুমিই আমার একমাত্র বউ।”

“তো এই এক সপ্তাহ অপেক্ষা কর। তারপর থেকে বউ বলে ডাকবে।”

“আমার তো আর তড় সইছে না।”

অর্পণের কথার প্রত্যুত্তরে ক্ষীণ হেসে ইরা বলল‚ “লুচু বদ লোক।”

“ওটা তো শুধু তোমার জন্য।”

সলজ্জে হাসল ইরা। অর্পণ আবারও বলল‚ “আচ্ছা ইরাবতী! বিয়েতে শাড়ি পড়বে নাকি লেহেঙ্গা?”

“শাড়ি আমি সামলাতে পারি না।”

“তাহলে মেহেন্দি‚ হলুদ‚ বিয়ে আর রিসেপশনে লেহেঙ্গা?”

“পাগল নাকি? প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে কেউ লেহেঙ্গা পড়ে?”

সঙ্গে সঙ্গে অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “তাহলে?”

“শাড়ি লেহেঙ্গা মিলিয়েই পড়ব।”

“এই না বললে তুমি সামলাতে পারো না।”

“তাতে কী? বিয়ে কী আমরা বারবার করব নাকি? প্রত্যেকটা রিচ্যুয়ালসে আমার আলাদা আলাদা লুক থাকবে।”

“তুমি কমফোর্ট ফিল করবে তো?”

“হ্যাঁ করব। তোমাকেও পাঞ্জাবি‚ শেরওয়ানি পড়তে হবে৷”

“অবশ্যই। আমি খুব এক্সাইটেড— প্রথম বিয়ে কি-না!”

“আমি মোটেও এক্সাইটেড নই।”

অবাক হয়ে অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “কেন?”

“কারণ এটা আমার পাঁচ নাম্বার বিয়ে।”

শেষোক্তটি রাগান্বিত স্বরেই বলল ইরা। অর্পণ এবার শব্দ করে হেসে উঠল। ইরাকে বলল‚ “এ বাবা! আমার ইরাবতী কী রাগ করেছে?”

“তো সে কী নাচবে?”

“অবশ্যই। বিয়ের প্রত্যেকটা রিচ্যুয়ালস এ আমরা কাপল ডান্স করব।”

“আমার লজ্জা লাগবে।”

“ভাইয়ের বিয়েতে নেচেছিলে কীভাবে?”

ইরা ভেবেছিল অর্পণ হয়তো সে কথা ভুলে গিয়েছে৷ তবে তার ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল তা অর্পণ নিমিষেই প্রমাণ করে দিল! ইরা বলল‚ “তখন তো পিচ্চি ছিলাম!”

ইরাকে আরেকটু রাগানোর জন্য অর্পণ বলল‚ “এক বছরে তুমি বুড়ি হয়ে গেলে?”

“তুমি কী এই রাতের বেলায় আমার ভুল ধরবে?”

বোকা স্বরে প্রশ্ন করল‚ “ভুল কোথায় ধরলাম?”

“জানি না। ঘুম পাচ্ছে আমার। অনেক কথা হয়েছে।”

“আমার ইরাবতী কী আবার রাগ করেছে?”

হাই তুলে ইরা বলল‚ “একদমই না৷ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷”

“আচ্ছা তাহলে তুমি ঘুমোও। আমি রাখছি তাহলে।”

“হুম! তুমি এখন ফোন রেখে সোজা ঘুমবে। বিয়েতে যদি দেখেছি চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল তাহলে তোমার খবর আছে।”

“যথা আজ্ঞা বিবি সাহেবা।”

কল কেটে দিয়ে মৃত্তিকার নাম্বারে কল লাগাল অর্পণ। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ না হলেও মৃত্তিকা পরবর্তীতে কল ব্যাক করল৷ তনুজাকে ঔষধ খাইয়ে সবেই ঘুম পাড়িয়েছে সে৷ সুদর্শিনী তার স্বামী অর্ণবের সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত। কাল তার স্বামী ঢাকা ফিরছে৷ আবারও সংসারে ফিরে যেতে হবে সুদর্শিনীকে৷ এ কদিন খুব ভালো সময় কাটিয়েছে সে৷ মৃত্তিকা তার ফোন নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে এসেছে৷ ফোন কানে নিতেই অর্পণ সোজাসুজি বলে ফেলল‚

“বোন তোকে একটা কথা বলার আছে।”

“কী কথা ভাইয়া?”

“ইরার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

ওদের বিয়ের কথা শুনে খুবই খুশি হলো মৃত্তিকা৷ ওরা একে অপরকে ভালোবাসা এটা তো সেই প্রথম থেকেই জানা৷ অতি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে মৃত্তিকা বলল‚ “ওয়াও! কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া।”

“থ্যাংক ইউ বোন। কিন্তু তোকে আমাকে একটা প্রমিজ করতে হবে। এতদিন যাবৎ তোর সকল প্রমিজ আমি চুপচাপ মেনে এসেছি। এবার তোকেও আমার একটা কথা শুনতে হবে।”

“কোন প্রমিজের কথা বলছ ভাইয়া?”

“আগে বল— আমি যা বলব সেটা তুই শুনবি?”

“আগে তো শুনি।”

“না আগে প্রমিজ কর— আমি যা বলব সেটা তুই শুনবি এবং অক্ষরে অক্ষরে পালনও করবি।”

না পারতেই মৃত্তিকা রাজি হয়ে গেল। মুখে বলল‚ “আচ্ছা প্রমিজ।”

যেমনটা প্ল্যান করেছিল ঠিক তেমনটাই হচ্ছে৷ এই ভেবেই ভীষণ খুশি অর্পণ। সে ঝটপট বলে ফেলল‚ “আমার বিয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে তুই থাকবি। সবকিছুতে অংশগ্রহণও করবি৷ তুই হবি কনে পক্ষ৷ ইরাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“তার মানে ইরা সব জেনে গিয়েছে? তোমাকে তো আমি কাউকে বলতে বারণ করেছিলাম! আরেকটা কথা— এ হয় না ভাইয়া। ও বাড়িতে আমি আর যাব না৷ ”

“তুই আমাকে প্রমিজ করেছিস৷ যেভাবে আমি তোর প্রমিজ রক্ষা করে যাচ্ছি ঠিক সেভাবে তোকেও আমার সব কথা শুনতে হবে। আর ইরা জেনেছে তো কী হয়েছে? ইরাকে তো তুই আমার আগে থেকে চিনিস। আমি যেমন তোর ভালো চাই‚ ঠিক তেমনই ইরাও তোর ভালো চায়।”

আরেক মুসিবতে পড়ে গেল মৃত্তিকা৷ অর্পণ তাকে আচ্ছা ফাঁসান ফাঁসিয়েছে৷ না-ও করতে পারবে না সে৷ অগত্যা যাওয়ার জন্য রাজি হতেই হলো৷ খুশি হলো অর্পণ। সে জানত মৃত্তিকা তার এ কথা ফেলতেই পারবে না— প্রমিজ যে করেছে৷ মৃত্তিকা কল কে’টে দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো৷ পুনর্বার তাকে দেখে ও বাড়ির মানুষগুলো কেমন রিয়েক্ট করবে সেটার দেখার পালা! বিশেষ করে মাধুরী! তিনি তো তাকে মোটেও পছন্দ করতেন না৷ মৃত্তিকা ভেবে নিল ও বাড়িতে থেকেই মেহরাব শিকদারকে চোখে চোখে রাখবে। আর তো মাত্র কিছুদিন। একবার নাজিম চৌধুরী ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরুক তারপর তো বাকি খেলা হবে৷ ফোন হাতে নিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেল মৃত্তিকা৷ তাকে দেখে সুদর্শিনী জিজ্ঞেস করল‚

“কে কল করেছিল?”

“ভাইয়া।”

“ডক্টর তাসরিফ ইফরাদ অর্পণ?”

ফোনটা চার্জে বসিয়ে মৃত্তিকা সায় জানাল‚ “হ্যাঁ!”

সুদর্শিনী সোজা হয়ে বসে বলল‚ আমি এটা ভেবে অবাক হই যে‚ মেহরাব শিকদারের মতো একজন পশুর ছেলে কী করে এতটা ভালো হতে পারে!”

“তুমি তো মামনিকে দেখনি। উনিও খুব ভালো। ভাইয়া একদম মামনির মতো হয়েছে।”

“উনার সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছে আমার।”

“ইনশাআল্লাহ একদিন দেখা করাব তোমাদের সঙ্গে।”

“হুম! অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমতে আয়৷”

অন্যদিকে…

তুমি আমাকে বিষাদে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলেছ ভূমি কন্যা। তোমাকে ভুল বোঝার মতো ভুলটা আমার পুরো জীবনটাকে একাকীত্বে মুড়িয়ে রেখেছে। বড্ড এলোমেলো হয়ে গিয়েছি আমি। সেদিন তো তুমি অভিমান করে আমার অপূর্ণ কথাগুলো না শুনেই চলে গেলে। একটিবার কী আমার জীবনে থেকে যাওয়া যেত না? আমার ভুলটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া উচিত ছিল না? সেদিন তুমি চলে যাওয়ার পরপরই আমি বুঝতে পেরেছিলাম‚ ঘোরের মাঝে কী জঘন্য ভুলটাই না আমি করেছি! সারাটা রাত তোমাকে প্রত্যেকটা জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজে বেরিয়েছি। সেদিন হয়তো ভাগ্য আমার সহায় ছিল না। যার জন্য উপর ওয়ালা আমাকে বিষাদের একটা বছর উপহার দিয়েছিলেন৷ আচ্ছা ভূমি কন্যা আমার শাস্তির পরিমান কী এখনো শেষ হয়নি? আমারও যে ইচ্ছে করে নিজের সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে! জানো ভূমি কন্যা— সেদিন চাচ্চু আমাকে মিথ্যে বলেছিল! ব্যস্ততার কারণে তোমাকে আমার সময় দেওয়াই হচ্ছিল না। কাজের অনেক প্রেসার ছিল আমার উপর। তারপর চাচ্চুর কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। চাচ্চু জানাল আমার ভূমি কন্যা দুই সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট। মায়ের হাহুতাশ বিলাপে মাথা ধরে আসছিল। একপ্রকার ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম। হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে তোমাকে অবিশ্বাস করে বসেছিলাম। আমার উচিত ছিল শান্ত হয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলার। বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম‚ চাঁদের গায়ে দাগ থাকতে পারে তবে আমার ভূমি কন্যার চরিত্রে কোনো দাগ নয়। সে যে তার মায়ের পদ্মিনী আর স্বামীর নির্মলা ভূমি কন্যা। জানো ভূমি কন্যা— আমার বুকে বাঁ পাশটায় না তীব্র যন্ত্রণা হয়! কাউকে বোঝানো যায় না। সবাই শুধু আমার ভুলটা আর আমার রাগটাই দেখল কিন্তু আমার ভেতরের যন্ত্রণাটা কেউই দেখল না। আর না উপলব্ধি করতে পারল। প্রথম দেখায় তোমার প্রতি এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছিল৷ সেটা কখনোই মোহ ছিল না ভূমি কন্যা। মায়ের পর তুমিই আমার জীবনের প্রথম নারী। যাকে আমি আমার সবটা উজার করে ভালোবেসেছিলাম। যখন থেকে তোমাকে জানতে শুরু করলাম তখন ভেবে নিলাম— তোমাকে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দেব। তোমাকে সকল দুঃখ কষ্ট থেকে আগলে রাখব কিন্তু আফসোস তোমার জীবনের সব থেকে বড়ো দুঃখের কারণ এই আমিই। একটু একটু করে তুমি আমার হৃদয়ের সাথে মিশে গিয়েছ। তোমাকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে কল্পনা করাও পাপ৷ তুমি আমার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছ ভূমি কন্যা। এই একটা বছর ঠিক কী করে কেটে সেটা শুধু আমিই উপলব্ধি করেছি! দ্বিতীয়বার তোমাকে ফিরে পেয়ে আমি সত্যিই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। অতি শীগ্রই আমি তোমার মান ভাঙাব৷ তোমাকে আর আমাদের সন্তানকে আবার আমি আমার জীবনে ফিরিয়ে আনব। তার জন্য যদি আমাকে আর দশ বছর তপস্যা করতে হয় তাহলে তাই হবে৷ তোমার সকল দুঃখ কষ্টকে দ্বিতীয়বার নিংড়ে নেওয়ার সুযোগটুকু দিয়ো ভূমি কন্যা!”

নিদহীন তমসাচ্ছন্ন রজনি৷ প্রলয় দাঁড়িয়ে রয়েছে বারান্দায়। ঘুম আসছে না তার৷ তিনটে ঘুমের ঔষধ খাওয়ার পরও ঘুম আসছে না। তাই সে ভেবে নিল সারারাত জেগেই কাভার করে দেবে। আজ ভূমিকে তার একটু বেশিই মনে পড়ছে। রাতের আঁধারে এই একাকীত্বে ভূমির স্মৃতি গুলো তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ এই মুহূর্তে ভূমির কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে তার। একটু জড়িয়ে ধরে নিজের ভেতরে দাবিয়ে রাখা সমস্ত ব্যথা উগলে দিতে ইচ্ছে করছে। এ দূরত্ব যে আর সইছে না। প্রলয় তার হাতে থাকা সিগারেটটা আবার ধরাল। ইতিমধ্যেই দুটো শেষ। ভূমি কাছে থাকলে হয়তো এই সিগারেটকে সে ছুঁয়েও দেখত না। শরীর কেমন নিঃসাড় হয়ে আসছে! হয়তো এবার ঘুমের ঔষধ নিজের প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে দিয়েছে৷ পা দুটো টলছে ক্রমাগত৷ রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঝিমচ্ছে প্রলয়৷

চলবে?…..

#রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৩৯|
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা

কেটে গেছে আরও তিনটে দিন। অর্পণ ইরার বিয়ে দিন একেবারেই এগিয়ে এসেছে৷ কাল মেহেন্দি। ডেকোরেশনের সকল কাজ পুরোপুরি হয়ে এসেছে৷ মালঞ্চ নীড় আজ রঙ বেরঙে সেজে উঠেছে৷ রঙিন মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো বাড়িটা। বাগানে ফুল গাছগুলোর উপর মরিচ বাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বাড়ির সৌন্দর্য যেন আরও অধিক বেড়েছে৷ শিকদার বংশের ছোটো ছেলের বিয়ে বলে কথা৷ চারদিন আগে থেকে সবকিছু মেতে উঠেছে। বিয়ের সকল কেনাকাটাও হয়ে গিয়েছে। ইরার জন্য প্রত্যেকটা রিচ্যুয়ালসের আলাদা আলাদা শাড়ি‚ লেহেঙ্গা অনেক ধরনের অর্নামেন্টস নেওয়া হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ম্যাচিং করে অর্পণের জন্য পাঞ্জাবি‚ শেরওয়ানি নেওয়া হয়েছে৷ বাকি সদস্যরাও প্রচুর শপিং করেছে। অর্পণের খালামণির পরিবার আর মামার পরিবার কালই চলে এসেছেন। আজ মাধুরীর মা আর ভাই পরিবার সমেত এসেছে। গুলবাহার অনেকদিন পর মেয়ের বাড়িতে এসেছেন। আত্মীয়স্বজন আর শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও নিমন্ত্রণ করা হয়েছে৷ আজ হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়েছে অর্পণ। পুরো এক সপ্তাহের ছুটি চেয়েছিল এবার। এমনিতে খুব একটা ছুটির প্রয়োজন হয় না তার৷ ছুটির আবেদন এপ্রুভ হয়েছে আজ সকালেই। এরই মাঝে অর্পণের ফোনে মৃত্তিকার কল এলো। সে এতক্ষণ ইরার কলের জন্য অপেক্ষা করছিল। রাত হয়েছে৷ কিছুক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে নিজের ঘরে শুতে এসেছে অর্পণ। এই মুহূর্তে কোনো কাজের ব্যস্ততা না থাকায় অর্পণ সঙ্গে সঙ্গেই কল রিসিভ করল। সে কিছু বলবে তার আগেই অপরপ্রান্ত হতে মৃত্তিকার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো৷ মৃত্তিকা বলছে‚

“কাজটা কী তুমি ঠিক করেছ ভাইয়া?”

প্রথমত না বুঝেই অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “আমি কী করেছি বোন?”

“আমার জন্য শুধু শুধু টাকা নষ্ট করেছ তুমি। এগুলো কেনার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”

“বিয়ে আর রিসেপশনের দিন ওগুলো তোকে পড়তেই হবে। আমি কোনো বারণ শুনব না। তুই আমাকে প্রমিজ করেছিস— আমি যা বলব সব শুনবি।”

মৃত্তিকা বুঝল তার ভাই কেন এমনটা করছে৷ কিন্তু সে যে অতীত পানে ফিরে চাইবে না। না প্রলয়কে ক্ষমা করবে। অর্পণ এহেন ইচ্ছা বা পরিকল্পনা কিছুতেই যে সফল হবে না। মৃত্তিকা এবার অর্পণকে বলল‚ “এ কোথায় ফাঁসিয়ে দিলে ভাইয়া?”

কথাটা শেষ হতেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেল মৃত্তিকা৷ সে বুঝল তার এমন অবস্থার জন্য মজা লুটছে তার ভাই। হাসি থামিয়ে অর্পণ বলল‚

“ম্যাজেন্টা রঙা লেহেঙ্গাটা বিয়ের দিন পড়বি আর হালকা গোলাপিটা রিসেপশনের দিন পড়বি— কেমন?”

“কাজটা তুমি মোটেও ঠিক করলে না৷”

“চুপ থাক! আমি তোর বড়ো নাকি তুই আমার বড়ো? আমি যেটা ভালো মনে করব সেটাই আমার বোনের জন্য করব। এটা নিয়ে নো মোর ওয়ার্ডস।”

এই নিয়ে আর কথা বাড়াল না মৃত্তিকা৷ অর্পণ জিজ্ঞেস করল‚ “কাল আসছিস তো?”

“না এসে উপায় আছে?”

“আচ্ছা শোন আন্টিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসিস। আর হ্যাঁ— শাড়ি দুটো কী আন্টির পছন্দ হয়েছে?”

“মামনি বলছেন অহেতুক কেন এত খরচা করতে গেলে!”

“কেন আমি কী উনাকে কিছু দিতে পারি না? জানিস বোন— উনাদের কাছে আমি খুব ঋণি। কারণ উনাদের জন্যই তোকে দ্বিতীয়বার পেয়েছি৷ উনার সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দিস৷”

“আচ্ছা।”

“কাল সময়ের আগেই চলে আসবি৷ আমার বিয়ের প্রত্যেকটা রিচ্যুয়ালসে তুমি প্রাণ ভরে নাচবি৷ আমি ভাইয়ের থেকে শুনেছি‚ তুই নাকি আগের থেকেও ভালো নাচিস! আমি চাই আমার বিয়েতে সবাই খুব বেশি আনন্দ করুক৷”

“আচ্ছা! তুমি যা যা ভেবেছ সব হবে৷ আমি সকলের আগেই চলে আসব৷ আমি তো কনে পক্ষ। ইরার বান্ধবী।”

মৃত্তিকার শেষের কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল অর্পণের। সে বলল‚ “কী ভাগ্য আমার!”

অর্পণের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারল না মৃত্তিকা। তাই সে জিজ্ঞেস করল‚ “তোমার আবার কী হলো ভাইয়া?”

“আমার বোনটাকে মিথ্যে পরিচয়ে আমার বিয়েতে অ্যাটেন্ড করতে হচ্ছে। অথচ তারই অধিকার ছিল সবথেকে বেশি আনন্দ করার।”

“ওসব কথা মনে করে মন খারাপ করার কোনো মানেই হয় না। আমি কাল সঠিক সময়ে চলে আসব ভাইয়া।”

“আমার আরেকটা কথা রাখবি বোন?”

“আবার কী কথা”

“তুই আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আয় না। অন্ততপক্ষে বিয়ের এই কটা দিন?”

“এই নিয়ে তুমি আমাকে জোর কোরো না ভাইয়া৷ আমি সত্যিই ক্লান্ত! তবে তুমি চিন্তা কোরো না৷ আমি মালঞ্চ নীড় ফিরব তবে থাকার জন্য নয়৷ শুধুমাত্র তোমার বিয়ে অ্যাটেন্ড করার জন্য।”

“তোর যেভাবে ভালো লাগবে তুই সেটাই কর৷ আমি তোকে আর কোনো কিছুতে জোর করব না।”

এরই মাঝে মৃত্তিকার ফোনে তার কাজের জায়গা থেকে ক্রমাগত কল আসছে৷ তাই সে কিছুটা তাড়া দিয়ে অর্পণকে বলল‚

“আমার কলিগের নাম্বার থেকে কল আসছে৷ তুমি ওখান থেকে কল কেটে দাও ভাইয়া৷ আমাদের পরে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।”

অর্পণ ‘টাটা’ বলে নিজে থেকেই কল কেটে দিল। কাজের জায়গা থেকে আসা কল রিসিভ করল মৃত্তিকা। অর্পণের বিয়ে উপলক্ষে সে-ও চারদিনের ছুটি চেয়েছে৷ সে ছুটি চেয়েছিল সকালে আর এই লোক তাকে রাত দেড়টার কাছাকাছি সময় এসে কল করছে। এমনিতে সে এখানে জয়েন করেছে খুব বেশিদিন হয়নি। এখনই ছুটি চাওয়াতে হয়তো তারা খুবই বিরক্ত তার উপর৷ কিন্তু সে যে তার ভাইকে প্রমিজ করেছে— বিয়ের প্রত্যেকটা রিচ্যুয়ালসে সে থাকবে৷ ফোনের অপরপ্রান্তে হতে লোকটা বলছে‚

“ঠিক কী কারণে আপনার এখন ছুটির প্রয়োজন হলো? আপনি এখানে সবে সপ্তাহ খানেক সময় হলো জয়েন করেছেন‚ পরপরই আবার ছুটি। একদিন হলেও মানা যায়! আর আপনি তো পুরো চারদিনের ছুটি চেয়ে বসে রয়েছেন।”

“একচুয়্যালি স্যার আমার খুবই কাছের একজনের বিয়ে৷”

“বিষয়টাকে আপনাকে এক্সপ্লেইন করতে হবে৷”

লোকটার প্রতি বেজায় বিরক্ত হলো মৃত্তিকা। এই লোককে নাকি আবার সবকিছু এক্সপ্লেইন করতে হবে! মৃত্তিকা বলল‚

“একচুয়্যালি স্যার— এমপি সেহরিশ আরশান প্রলয়ের চাচাতো ভাইয়ের বিয়েতে আমাকে অ্যাটেন্ড করতেই হবে৷”

মৃত্তিক্র মুখে প্রলয়ের কথা শুনে কিছুটা যেন নরম হলেন লোকটা৷ মুখে বললেন‚ “উনারা কী আপনার রিলেটিভস হয়?”

“না স্যার! উনার ভাইয়ের হবু স্ত্রী আমার বান্ধবী হয়।”

“ওহ তাহলে এই কথা! তুমি এক সপ্তাহের মতো ছুটি নিতে পারো।”

এরই মাঝে লোকটার ভোলই যেন পাল্টে গেল। কিছুটা হলেও ভূমির সঙ্গে তো ভালো ব্যবহার করলেন। মৃত্তিকা এবার বলল‚

“আমার শুধুমাত্র চারদিনের ছুটির প্রয়োজন। বেশি দিনের ছুটি আমার কোনো কাজে আসবে না।”

“তাহলে তোমার যেভাবে ভালো মনে হয়।”

এই বলে লোকটা কল কেটে দিলেন৷ তার মানে মৃত্তিকা ছুটি পেয়ে গিয়েছে৷ এখন অন্তত সে কিছুটা নিশ্চিন্ত। আরামসে ভাইয়ের বিয়ে খেতে পারবে। যেহেতু সে অর্পণের বিয়েতে অ্যাটেন্ড করছে। তার মানে প্রলয় এবং তার পরিবারের সঙ্গেও দেখা হতে যাবে৷ এ কথা ভাবতেই মাথায় যেন সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে৷ ওই মানুষগুলোর সামনে তো সে আর কোনো দিনও যেতে চায়নি। সমস্ত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে মৃত্তিকা বারান্দা থেকে ঘরের ভেতরে চলে এলো। অর্পণের দেওয়া উপহার গুলো ঘরের সিঙ্গেল সোফার উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ পার্সেলগুলো বিকেলে এসেছে। সে ব্যস্ত থাকায় কল করে জানানো হয়নি। তার আর তনুজার জন্য গিফট পাঠিয়েছিল অর্পণ। মৃত্তিকা সেগুলোকে গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখল। তার ভাই ভালোবেসে তার জন্য এই প্রথম কিছু কিনে দিয়েছে৷ প্রথমে মনটা খুঁতখুঁত করলেও এখন সে প্রচণ্ড খুশি। মৃত্তিকা গিয়ে বিছানার কোণে বসল। খাবার আর ঔষধ খেয়ে তনুজা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। মৃত্তিকা গিয়ে শুয়ে পরল তনুজার পাশে৷ তার অবশ্য এখন ঘুম আসছে না। তবে রাত তো বাড়ছে৷ ঘুমতে তো হবেই। মৃত্তিকা চোখ বন্ধ করে ঘুমনোর চেষ্টা করল৷ এভাবেই অতিবাহিত হল মিনিট দশেক। না! মৃত্তিকার চোখে এখনো নিদ এসে হানা দেয়নি। এরই মাঝে বেহায়া ফোনটা বেজে উঠল। দৈবাৎ চোখ মেলে তাকাল মৃত্তিকা৷ এই রাতের বেলায় কে তাকে স্মরণ করল সেটাই দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিল! সময় রাত দেড়টা। এত রাতে এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসছে। প্রথম কল রিসিভ করল না সে। পরপরই দুই তিনবার এভাবে কল বেজে কেটে গেল৷ এবার না পারতেই মৃত্তিকা কল রিসিভ করল। কিছু ওপাশ থেকে কারো কণ্ঠস্বর তো দূর আওয়াজ এলো না৷ মৃত্তিকা পরপর কয়েক বার জিজ্ঞেস করল‚

“হ্যালো কে বলছেন?”

তারপরও ওপাশ থেকে কোনো কথারই উত্তর এলো না। মৃত্তিকা অপেক্ষা করল। কিন্তু কোনো স্বরই এলো না অপর প্রান্ত থেকে। সে বিরক্ত হয়ে অত্যন্ত তেজি স্বরে আবারও বলল‚ “অসভ্যের মতো রাতবিরেতে মেয়েদের বিরক্ত করতে লজ্জা করে না? দ্বিতীয়বার কল করলে‚ আপনাকে দেখে নেব।”

এই বলে কল কেটে দিল মৃত্তিকা। মিনিট পাঁচেক সময় পর একই নাম্বার থেকে আবারও কল এলো। রাগ তখন তুঙ্গে চড়ল। কল রিসিভ করেই আরও চারটে কড়া কথা শুনিয়ে দেবার জন্য উদ্যত হলো মৃত্তিকা৷ তবে অপর প্রান্ত থেকে এক শান্ত‚ ভারী কণ্ঠস্বরে থমকাল সে। এ কণ্ঠস্বর যে‚ তার বহু চেনা। চুপটি করে শুনতে লাগল‚

“ভূমি কন্যা… ভূমি কন্যা… ভূমি কন্যা… ভূমি কন্যা…!”

ঘুমের ঘোরে প্রলয়ের পাগলের বিলাপ। মৃত্তিকা শুনল। কথা বাড়াল না। সে শুনতে চায়। কিন্তু আর কোনো কথা কানে এলো না। ফোনটাকে আবারও চোখে সামনে রাখল। না! প্রলয় এখন কল কেটে দেয়নি। ভারি নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ আচ্ছা লোকটা কী ঘুমের ঘোরে তাকে কল করেছে? লোকটা তার নাম্বার পেল কোথায়? তার নাম্বার তো অর্পণ ছাড়া আর কারো কাছে নেই৷ তাহলে কী অর্পণের থেকে নাম্বার জোগাড় করেছে? মৃত্তিকা তাড়াহুড়ো করে কল কেটে দিল৷ দ্বিতীয়বার মনে প্রলয়ের প্রতি সফট কর্ণার তৈরি হতে দেবে না সে৷ এবার সে মালঞ্চ নীড় যাবে শুধুমাত্র মহুয়া আর তার অনাগত মৃ’ত সন্তানের মৃ’ত্যুর প্রতিশোধ নিতে। তার আর কোনো পিছুটান নেই। সমস্ত পিছুটান এক বছর আগেই চুকিয়েছে সে।

ঘরোয়া ভাবে ইরার মেহেন্দির আয়োজন করা হয়েছে। হোটেলের ছাদটাকে মেহেন্দির জন্য বুকড করা হয়েছে৷ ছাদের আপাতত গান বাজনা চলছে। ছোটো স্টেজে ইরাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে৷ হেনা আর্টিস্টও চলে এসছে৷ ইরার বান্ধবীরাও ইতিমধ্যেই চলে এসেছে৷ তারা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচছে। ইরাকে জলপাই রঙা শাড়ি পড়ানো হয়েছে। চুলে শুধুমাত্র একটা বেলীফুলের মালা পেঁচিয়ে রাখা। হালকা করে সাজানো হয়েছে তাকে। গায়ে আর কোনো অর্নামেন্টস নেই। একদম সাদামাটা লুক তার৷ এরই মাঝে তনুজাকে নিয়ে চলে এসেছে মৃত্তিকা৷ এই হোটেলের লোকেশন অর্পণ তাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল৷ আজ মা মেয়েতে একই রঙা শাড়ি পড়েছে। মৃত্তিকার গৌরাঙ্গে যে জলপাই রঙটা ফুটে উঠেছে৷ লম্বা চুলে বিনুনি গাঁথা। গায়ে কোনো সাজসজ্জা নেই৷ একদম সাদামাটা হয়েই এসেছে মৃত্তিকা। এভাবেই যেন তাকে আরও বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। আজকের এই মেহেন্দি অনুষ্ঠানে জলপাই রঙটাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে৷ মৃত্তিকাকে দেখা মাত্রই ইরা স্টেজ ছেড়ে নিচে নেমে এলো৷ শুরু থেকেই ভূমিকে সে নিজের একজন বন্ধু হিসেবে দেখে এসেছে। ভূমি বেঁচে আছে— কথাটা শোনার পর থেকেই ভাবছে‚ কখন তার সঙ্গে ভূমির দেখে হবে! কখন সে ভূমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে! সেই আজ দেখা হলোই৷ ইরা দৌঁড়ে গিয়ে মৃত্তিকাকে জাপ্টে ধরল৷ ক্রমাগত হাঁপাচ্ছে মেয়েটা৷ মৃত্তিকা আগলে নিল৷ কান্না পাচ্ছে তার। কিন্তু এই একটা সময়ে এসে সে কিছুতেই নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করবে না। কারো প্রতি সে দূর্বল হবে না। অর্পণ এবং ইরার বিয়েতে এমন অনেকেই থাকবে যাদের দেখলে সে হয়তো নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না কিন্তু মহুয়া মৃ’ত্যু আর তার অনাগত বাচ্চাটার মৃ’ত্যুর প্রতিশোধ তো তাকে নিতেই হবে৷ মেহরাব শিকদারকে তো সে নিজের হাতে শাস্তি দেবে কিন্তু প্রলয়কে সে কোনো দিন ক্ষমা করবে না৷ প্রলয় যেটা করেছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য। তার জন্যই নিষ্পাপ বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখতে পেল না৷ আজ আর পুরোনো কথা মনে করতে চায় না মৃত্তিকা৷ সেও জড়িয়ে ধরল ইরাকে৷ কিছু একটা ফিসফিসিয়ে বলল যেন! ইরা সোজা হয়ে দাঁড়াল। মৃত্তিকা আর তনুজার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতে লাগল। এরই মাঝে অর্পণের সব কাজিন ভাই বোনরা চলে এসেছে। ওরা প্রথমে ইরার সঙ্গে কথা বললেও পরবর্তী ওদের নজর পড়ল মৃত্তিকার উপর। পুষ্পিতা তো বলেই ফেলল‚

“তুমি কেমন আছ ভাবিমণি।”

থম মে’রে গেল মৃত্তিকা। এবার কী জবাব দেবে সে? এমন পরিস্থিতিতে যে পড়তে হবে এটা সে আগে থেকেই জানত। এমন পরিস্থিতি সামনে আরও আসবে। ইরা বিষয়টাকে সামল দিয়ে বলল‚

“পুষ্প তোমার ভুল হচ্ছে৷ ও তোমার ভাবিমণি নয়। ও আমার ফ্রেন্ড।”

এবার পূর্ণতা বলল‚ “আমাদের ভুল হতেই পারে না। ছোটো ভাবি তুমি আমাদের সঙ্গে মজা করছ তাইনা?”

ইরা জানত এমনই একটা কিছু হবে৷ তাই সে মনে মনে নিজের উত্তর সাজিয়ে শান্ত স্বরে বলল‚

“আমি কোন মজা করছি না পাখি। যেটা সত্যি সেটাই বলছি। ও আমার ফ্রেন্ড মৃত্তিকা রায়চৌধুরী। এডভোকেট মাহেন্দ্র রায়চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে।”

ইরার কথা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হলো পূর্ণতা পুষ্পিতার৷ মৃত্তিকাকে দেখে মনে একটা আশা জেগেছিল যে‚ তাদের ভাবিমণি হয়তো আবারও ফিরে এসেছে৷ কিন্তু ইরার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হলো দুজনের। এদিকে পূর্ণতা পুষ্পিতার কথায় বিভ্রান্ত তৃপ্তি৷ হা করে তাকিয়ে আছে মৃত্তিকার দিকে। একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে। বিশেষ মৃত্তিকার আঁখিদ্বয় নজর কেড়েছে ভীষণ ভাবে। তার দেখা সুন্দরী মেয়েদের তালিকায় সে মৃত্তিকাকেই শীর্ষে স্থান দেবে। মেয়েটার চোখ ধাঁধানো তাকে আকর্ষিত করছে। মেয়ে হয়েও কোনো হিংসাবোধ কাজ করছে না৷ মুগ্ধ নেত্রে চেয়ে রয়েছে মৃত্তিকার মুখ পানে৷ তার খুব ইচ্ছে হলো মৃত্তিকার সঙ্গে কথা বলার। এইতো চোখের সামনেই ইরার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। চাইলেই সে দূরত্ব ঘুচিয়ে ছুটে গিয়ে মৃত্তিকার সঙ্গে কথা বলতে পারে৷ তৃপ্তি আর নিজের ইচ্ছেকে আর দাবিয়ে রাখতে পারল না যেন। পূর্ণতা পুষ্পিতার পাশ কাটিয়ে মৃত্তিকার সামনে গিয়ে দাঁড়াল৷ অন্যদিকে তৃপ্তিকে এভাবে মৃত্তিকার কাছে চলে যেতে দেখে যারপরনাই অবাক হলো পূর্ণতা পুষ্পিতা। তৃপ্তির এসব কৌতূহল ঠিক বুঝে এলো না ওদের৷ বিষয়টাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওরা মেহেন্দি লাগাতে বসে পড়ল৷ আজ দু হাত ভরতি করে মেহেন্দি লাগাবে৷ ভূমি আর মৃত্তিকা যা-ই হোক সেসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে দুবোনই৷ নয়তো ছোটো ভাইয়ার বিয়েতে কিছুতেই মজা করতে পারবে না। অন্যদিকে মৃত্তিকার কাছে এসে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে তৃপ্তি হাসি মুখে বলল‚

“হাই! আমি তৃপ্তি জুনাইরাহ।”

মৃত্তিকাও হাসি মুখে নিজের ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল‚ “হ্যালো! আমি মৃত্তিকা রায়চৌধুরী। ডটার অফ এডভোকেট মাহেন্দ্র রায়চৌধুরী।”

মৃত্তিকার কথা শুনে সৌজন্যপূর্ণ হাসল তৃপ্তি৷ মৃত্তিকাকে জানার আগ্রহ যেন তড়তড় করে বাড়ছে৷ তখনকার পূর্ণতা পুষ্পিতার কথাটা তো ফেলে দেওয়ার মতো নয়৷ একেবারে হুবহু দেখতে মানুষ আদতে হয়? তা-ও আবার একই দেশে একই জেলায়? মনের খটকা মেটাতে তৃপ্তি জিজ্ঞেস করল‚

“তখন যে পূর্ণ পুষ্প বলল‚ আপনি নাকি ওদের ভাবিমণি?”

“আমি জানি না ওরা ঠিক কার কথা বলছে! আই থিংক ওরা কারো সঙ্গে আমাকে গুলিয়ে ফেলছে।”

এই নিয়ে তৃপ্তি আর কথা বাড়াল না৷ বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। একই দেখতে মানুষ হতেও পারে হয়তো সে এই প্রথম দেখছে বলেই তার কিছুটা অদ্ভুত লাগছে বিষয়টাকে৷ তৃপ্তি গিয়ে বসে পড়ল পূর্ণতার পাশে৷ মৃত্তিকা দাঁড়িয়ে রইল ইরার কাছেই। এক হাত পুরো ভরতি করে দেওয়া হয়েছে৷ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে৷ আরেক হাতে মেহেন্দি দেওয়ার অভিযান চলছে৷ অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে নাজমার সঙ্গে কথা বলছেন তনুজা৷ উনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না৷ হাঁটুতে ব্যথা হয় ভীষণ৷ মৃত্তিকা খেয়াল করল। সে ইরার পাশ থেকে সরে গিয়ে দাঁড়াল তনুজার সামনে৷ একটা চেয়ার টেনে তনুজাকে বসিয়ে কিছুটা অভিযোগের স্বরে বলল‚

“তোমাকে কতবার বলেছি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকতে। তোমার যে হাঁটুতে ব্যথা হয় সেটা কী ভুলে গিয়েছ?”

তার এহেন কথা গাল এলিয়ে হাসলেন তনুজা৷ এভাবে হাসির মানে খুঁজে পেল না মৃত্তিকা। সে জিজ্ঞেস করল‚

“দোষ করে এখন হাসছ? তুমি এত অবুঝ কেন মামনি?”

দু হাঁটু ধরে তনুজা বললেন‚ “কারণ তুই আমার মা।”

“অন্তত নিজের খেয়াল টুকু তো রাখবে।”

“আমার খেয়াল রাখার জন্য তো আমার মা আছে।”

“তোমার এসব কথায় আমার মন ভিজবে না মামনি।”

আবারও হেসে উঠলেন তনুজা৷ মৃত্তিকা আর কিছু বলল না৷ তনুজার ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে৷ যেহেতু এটা হোটেল তাই সে নিজেই গিয়ে তনুজার জন্য খাবার নিয়ে আসতে পারবে৷ অর্পণ বলেছিল এখানে নিরামিষভোজীদের জন্যও আলাদা করে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে৷ এ কথা মৃত্তিকাকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল সে৷ তনুজাকে নিয়ে কর্ণারের একটা টেবিলে গিয়ে বসাল মৃত্তিকা৷ এরপর খাবার আনতে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তনুজার জন্য খাবার নিয়ে চলেও এলো৷ পানির জন্য আলাদা গ্লাস আনা হয়েছে। তনুজার খাওয়া শেষ হবার আগ অবধি মৃত্তিকা সঙ্গেই বসে ছিল। এক চুল পরিমাণ স্থানচ্যুত হয়নি সে৷ তনুজার খাওয়া শেষ হতেই নিজের পার্স থেকে ঔষধ বের করে খাইয়ে দিল৷ ঔষধ খেয়ে তনুজা বললেন‚

“আগের জন্মে হয়তো কোন পূণ্য করেছিলাম তাইতো তোকে মেয়ে রূপে পেয়েছি।”

বিনিময়ের ক্ষীণ হাসল মৃত্তিকা৷ তনুজার পাশেই বসে রইল সে৷ কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না তার! হেনা আর্টিস্ট সুন্দর করে ইরার দু হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে দিয়েছে। ইরার সকল বান্ধবী শুভাকাঙ্ক্ষীরাও এখানেই রয়েছে। শিকদার বাড়ি থেকেও পূর্ণতা পুষ্পিতা‚ তৃপ্তি‚ লাম আর লামিয়া এসেছে৷ ওরা সকলে একসঙ্গেই এসেছে৷ মেয়ে গুলোও বসে বসে মেহেন্দি দিচ্ছে অন্য হেনা আর্টিস্টের কাছ থেকে৷ পূর্ণতা সচরাচর হাতে মেহেন্দি লাগায় না। তবে আজ তার লাগাতে ইচ্ছে হলো৷ মেহেন্দির অনুষ্ঠান জমে উঠেছে৷ সফট টোনে মিউজিক বাজছে। একটা মেয়ে এসে জোর করে মৃত্তিকাকে নিজের সঙ্গে করে নিয়ে গেল ইরার কাছে৷ ইরাই মূলত এমনটা করতে বলেছে। এরপর একজন হেনা আর্টিস্টকে দিয়ে মৃত্তিকার হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে দেওয়ার কথা বলল ইরা৷ তবে মৃত্তিকা কিছুতেই রাজি হলো না৷ সে হাতে মেহেন্দি লাগাতে চায় না। তার মতে‚ ❝মেহেদীর অপর নাম র’ক্তাক্ত ক্ষ’তবি’ক্ষত!❞

রাত সাড়ে দশটা…

মেহেন্দি অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়েই বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে পূর্ণতা পুষ্পিতা সহ বাকিদেরকে৷ এটাই প্রলয়ের নির্দেশ। বেশি রাত করে বাড়ির বাহিরে থাকা যাবে না৷ বোনদের ব্যাপারে সে সবসময়ই সচেতন৷ এমনিতেই কিছুদিন আগে তার উপর শত্রুপক্ষরা আক্রমণ চালিয়েছে৷ এমনও হতে পারে তার উপর থাকা রাগ‚ হিংসা-বিদ্বেষ গিয়ে চড়াও হলো তার ছোটো বোন দুটোর উপর বা তার পরিবারের বাকি সদস্যদের উপর। ইদানীং হারিয়ে ফেলার শোকে কাতড়াচ্ছে প্রলয়৷ শুধু মনে হয় তার জীবন থেকে সুখ গুলো একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। ডাইনিং টেবিলে সকলে একসঙ্গে খেতে বসেছে। ছোটোরা খেয়ে এসেছে বিধায় রাতে আর কিছু খাবে না তারা। মেহেন্দির অনুষ্ঠান থেকে ভরপেট খেয়ে এসেছে ওরা৷ প্রলয় তখন খাচ্ছিল। এরই মাঝে পুষ্পিতা বলে উঠল‚

“বড়ো ভাইয়া জানো আজ আমরা হুবহু ভাবিমণির মতো দেখতে একজনকে দেখেছি।”

পুষ্পিতার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানাল না প্রলয়৷ এ আর নতুন কী! সত্যিটা তো সে আগে থেকে জেনে ফেলেছে৷ এই নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই তার। সে নিজের মতো করে খাবার খেতে লাগল। কিন্তু সহ্য হলো না মেহরাব শিকদারের৷ খাবার মুখে নিয়ে বিষম খেলেন তিনি। তার মানে গ্রামের বাড়িতে সেদিন তিনি ঠিকই দেখেছিলেন৷ ভূমির মতো দেখতে অন্য কেউ আসলেই রয়েছে৷ ফিরোজা তাড়াহুড়ো করে মেহরাব শিকদারকে পানি এগিয়ে দিলেন। বাড়ি ভরতি মেহমান। মাথায় নতুন করে দুশ্চিন্তা গুলো আবারও ঘুরপাক খেতে শুরু করল। কাল অর্পণের গায়ে হলুদ। বিয়ের বাড়ির আমেজে নতুন করে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছেন না মেহরাব শিকদার। কাল থেকে কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদ‚ বিয়ে আর রিসেপশন অনুষ্ঠিত হবে৷

চলবে?…..