রাগ পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
4199

#রাগ
#লেখকঃরনি হাসান
#পর্বঃশেষ

সন্ধ্যার আগেই রাকিবের জ্ঞান ফিরলো। চোখে মেলে আমাদেরকে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলো ” আল্লাহ তায়ালা কেনো যে আমাকে বাচিয়ে রাখলো। মরলে তো খুশি হতাম। এই এতিম ময় জীবনে বেচে থাকার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুই ভালো ছিলো

ছোট ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম বড্ড ক্ষেপে আছে। তারপর ও বললাম ”

–“রাকিব কি বলছিস এগুলা হ্যা আমি তো…
বাকি কথাটুকু উচ্চারণ করারই আগেই রাকিব রাগান্বিত হয়ে বলে ” খবরদার কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে আসবা না। আমার কেউ নেই।

রাকিবের এ কথা শুনে রোদেলা আমাকে ইশারা দিয়ে কথা বলতে নিষেধ করলো। বুঝতে পারলাম এখন কথা বললে ছোট রাগের ঘোরের কিছু একটা করে ফেলতে পারে। তার থেকে চুপ থাকাই ভালো। ২ টা দিন হসপিটালে থাকার পর রাকিবকে বাড়িতে নিয়ে যায়। রাকিবের আমাদের প্রতি রাগ অভিমান থাকায় রোদেলা আর আমার সঙ্গে কথা বলে না। মুখ ফিরিয়ে থাকে। যে ভাই এক সময় ফাজলামো দুষ্টমিতে সেরা ছিলো সে হঠাৎ করে নিশ্চুপ মেরে যাওয়ায় খুব খারাপ লাগতে শুরু করছিলো তখন। একদিন তো রোদেলা আমাকে বলেই ফেললো”

তোমার ভাই আগের মতো আমার সঙ্গে কথা বলে না। কেমন জানি মুখ ফিরিয়ে থাকে।এমন কি তার শরীর স্বাস্থ্যের কথা জিজ্ঞেস করলে ও নিশ্চুপ হয়ে থাকে। ও আমার সঙ্গে কি আর কথা বলবে না

–“রোদেলার কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলি” ছোট মানুষ অভিমান হইত বেশি। তাই আমাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে আছে। অভিমান কেটে গেলে নিশ্চয়ই সে আগের মতো হয়ে যাবে চিন্তা করো নাহ-
–“তাই যেনো হই

এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। এরমধ্যে রোদেলা রাকিবের সমস্ত সেবা যত্নে নিজেকে নিয়োজিত রাখলো তবুও রোদেলার সঙ্গে কথা বলে না। ৩ – ৪ মাস যাওয়ার পর সে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠলো ঠিকই। কিন্তু আগের হাসি উজ্জ্বল রাকিব নেই বরং গম্ভীর টাইপে। সবসময় কেমন জানি নিরব হয়ে থাকে। খেতে বসলে ওর খাবার রুমে চলে যায় তবুও আমাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাই না। কারো সঙ্গে কথা বলে না, পাশ কাটিয়ে চলে। আগে রোজই নিজের হাত খরচ টাকা নিত । এখন সে টাকাও নেই নাহ।

আগে যদি আমার কাছে টাকা নিতে আসত তখন অনেক অধিকার খাটিয়ে বলত” ভাইয়া আমার এখন টাকা লাগবে কোনো প্রকার না শুনছি নাহ

আর এখন স্কুলের ফি কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনের সময় আমার কাছে এসে মুখ ফিরিয়ে বলে “প্রাইভেট স্যার কাল বেতন চেয়েছে। টাকা টা একটু আগে দিলে ভালো হই।আর সমস্যা থাকলে টাকা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই

ছোট ভাইটার এত পরিবর্তন দেখে শুধু অবাকই হতাম। কিছু বলার থাকত না। বাড়িতে থাকিই মাত্র তিনজন এরমধ্যে একজন মুখ ফিরিয়ে থাকলে বাকি দুইজনের কেমন খারাপ লাগে তা নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছেন। চলুন এবার বর্তমানে ফিরা যাক

শুক্রবার দিনে সাধারণত বাড়িতে সময় কাটাই। তো সোফায় বসে রোদেলার সঙ্গে গল্প সল্প করছিলাম হঠাৎ রাকিব আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। দরজা পাড় হবার আগেই ডেকে উঠি”

–” রাকিব কই যাস _?

রাকিব আমার কথা শুনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আবার কি যেনো ভেবে কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। রোদেলা এ দেখে বলে উঠে

–“আজ একটা কথা না বলে আর পারছি না। তোমার ছোট ভাইটা সত্যিই অনেক জেদি। এত সেবা যত্ন করে তাকে সুস্থ সবল করে তুললাম। এখন পযন্ত আমার সঙ্গে একটা কথাও বলল না। আর এখন দেখছি তোমার সঙ্গেও কথা বলে নাহ –

–“নিশ্চুপ (আমি)

–“ও আমাদের সঙ্গে আর কতদিন কথা না বলে থাকবে বলো তো (রোদেলা)
–“তা আমিও জানি না। তবে আজ নিজের কাছেই অনেক খারাপ লাগছে যে ভাই টাকে এক ডাক দেওয়া মাত্র চলে আসত এবং যা বলতাম তা যথাযথ ভাবে শুনত। কিন্তু আজ ও একদম ভিন্ন, তা অবশ্য আমার কারনেই হয়েছে। (এই বলে আমি ও বাহিরে চলে যায়)

রাগ মাত্রই খারাপ একটা ব্যাপার যা তুফানে মতো এসে সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে, তখন ঠিক টের পাওয়া যায় না। যখন তুফান চলে যায় তখন চারদিকে চোখ বলিয়ে দেখলে বুঝা যায় তুফানের প্রবল বাতাসের তীব্র গতিতে কতকিছু লণ্ডভণ্ড করে ফেলছে। তেমনি রাগ নামক শব্দটি তুফানের চেয়েও কম না।

রাগ যখন উঠে তখন একটা মানুষ কি থেকে কি করে ফেলে তা সে নিজেই জানি না।রাগের ঘোর কাটার পর সে বুঝতে পারে সে কতটা মিস বিহেব তার আপনজন দের সঙ্গে করে ফেলছে। এ রাগের জন্যেই বাবা-মা, স্বামী -স্ত্রী, ভাই বোন, বন্ধুবান্ধব, গার্লফ্রেন্ড -বয়ফেন্ড এই সম্পর্ক গুলা বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সেদিন যদি ছোট ভাইটাকে অত না মেরে সাধারণভাবে দুই একটা থাপ্পড় দিতাম তাহলে হইত আজ এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

রাতে বিছানায় গা এলিয়ে আনমনে এসব ভেবে যাচ্ছি। হঠাৎ রোদেলা আমার বুকে মুখে গুজে বলে উঠে ” কখন থেকে ভাবছো একাই একাই হুম –

হঠাৎ রোদেলার কন্ঠ সুর শুনে ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বলি ”

–“রাগের কারনে সম্পর্ক গুলো অতি সহজে ভেঙে যায় তাই না (আমি)
–“হুম (রোদেলা)
–“সেদিন যদি ছোটকে রাগের ঘোরে না মারতাম তাহলে হইত আগের মতো আজও আমাদের সঙ্গে হাসি খেলে কথা বলত তাই না (মন খারাপ নিয়ে)

–“এখন তো আমাকেও সহ্য করতে পারে না । কেমন জানি সবসময় রাগী লুক নিয়ে থাকে। আগে অই চেহারায় হাসি উজ্জ্বল একটা ভাব ছিল কিন্তু বর্তমানে এখন তা নেই। তাছাড়া রাকিব কি শুধু তোমার একার ভাই নাকি। ওকে তো আমার নিজের ছোট ভাই মনে করে আদর যত্ন করি। তারপর ও আমাকে এখন দেখতে পারে না (রোদেলা)

রোদেলার অভিযোগ শুনে বললাম” এসব কিছুই আমার কারনে হয়েছে। আচ্ছা তারপর ও ছোটর রাগটা কীভাবে ভাঙানো যায় বলো তো (আমি)

–“রোদেলা কিছুক্ষন ভেবে বলে ” রাকিবকে ভালো কিছু একটা গিফট করলে হইত ওর রাগ ভাংতে পারে ” এই যেমন ফোন অথবা ল্যাপটপ-

–“ফোন তো ওর আছেই তবে এই সময় ল্যাপটপ গিফট করলেই কেমন হই (জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে)

–“আমার মন বলছে ল্যাপটপ গিফট করলে ও আর রাগ অভিমান করে থাকতে পারবে না। তুমি বরং কালকেই ল্যাপটপ কিনে নাও (রোদেলা)

রোদেলার সঙ্গে বুদ্ধি পরামর্শ করে পরিশেষে ল্যাপটপ কিনার সিদ্ধান্তই উপনীত হলাম। হাতে টাকা থাকায় কিনতে বেশি দেরি করলাম নাহ। ২ দিন পর অফিস শেষে রাতে ল্যাপটপ কিনে বাড়িতে এসে রোদলাকে জিজ্ঞেস করলাম ”

–“রাকির কই_?

রোদেলা আমার হাতে ল্যাপটপ দেখে খুশি হয়ে বলে ” ওর রুমে আছে

তারপর রোদেলাকে নিয়ে রাকিবের রুমে গিয়ে লক্ষ্য করি ” সুয়ে আছে। আমাদেরকে দেখে কম্বল মুড়িয়ে চোখ মুখ ঢেকে ফেললো। ছোট ভাই টার অভিমান দেখে আনমনে হেসে ফেললাম। এবং কম্বল টা ওর গায়ে থেকে সরিয়ে বলে উঠলাম

–“রাকিব দেখতো এটা কি (ল্যাপটপ এগিয়ে)
–“তো এটা দিয়ে আমি কি করবো (রাকিব রেগে)
–“আরে কি করবি মানে এটা তোর জন্য নে ধর (হেসে)
–“আমার এসব চাই নাহ। যখন নিজে রোজগার করতে শিখবো তখন আমার নিজের টাকায় কিনবো। লাগবে না আমার ল্যাপটপ, নিয়ে যাও (মুখ ফিরিয়ে)

–“রাকিব শুধু শুধু রাগ করছো কেনো বলতো। তোমার ভাইয়া তো অনেক খুশি মনে গিফট করছে আর তুমি ল্যাপটপ টা ফিরিয়ে দিয়ে। তোমার ভাইয়ার মন খারাপ করে দিচ্ছো (রোদেলা)

–“নিশ্চুপ (রাকিব)

সেদিন তোমাকে আঘাত করে, ও নিজেও অনেক কান্নাকাটি করেছে। আজ তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য ল্যাপটপ গিফট করছে। এখন যদি গিফটটা নাহ Accept করো তো। তোমার ভাইয়া অনেক মন খারাপ করবে। এখন তুমি কি চাও তোমার ভাইয়া মন খারাপ কিংবা কষ্ট পেয়ে ল্যাপটপ টা ফিরত নিয়ে যাক (রোদেলা)

রোদেলার কথা শুনে রাকিব আমতা আমতা করে বলে ” ভাইয়া কষ্ট পাক এমনটা আমি চাই না (রাকিব)

–“তাহলে গিফটটা Accept করছো না কেনো (রোদেলা)

রাকিব কিছুক্ষন ভেবে বলে ” আচ্ছা ঠিক আছে রেখে যান

–“এখন তোমার ভাইয়ার প্রতি রাগ অভিমান আছে (রোদেলা হেসে)
–” একটু একটু তো আছেই (রাকিব ও হেসে)
–“কি এখনো আমার উপর অভিমান করে আছিস (হেসে)
–“না না ভাইয়া এমনি বললাম আর কি (হেসে)

ছোট ভাইয়ের মুখে হাসি রেখা দেখে বুঝতে পারলাম তার রাগ অভিমান সব জল হয়েছে। আজ আমিও খুব খুশি ছোট ভাইটার হাসি উজ্জ্বল চেহারা দেখে। এতদিন এতিম ভাইটার অভিমানে আমার অনেক খারাপ লাগত। কোনো কিছুতে ভালো লাগত নাহ। আজ সেই খারাপ লাগা নেই।মনে কেমন জানি এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করছে 😁

____________ সমাপ্ত _______________

(গল্পটা কেমন হয়েছে কমেন্ট বক্সে জলদি জানিয়ে দিন। আবারও নতুন গল্পে দেখা হবে আল্লাহ হাফেজ )