#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৮
কারো মিঠা ওষ্ঠের ছোঁয়া পেয়ে জোড়ালো ঘুমে ভাঙন ধরলো মৃত্তিকা’র। বেশ ঠান্ডা লাগছে তার। তাই তো সায় দিলো না উঠার জন্য বরং বুকে ঢুকার চেষ্টা করলো তার প্রিয় পুরুষের। পূর্ণ ওর আচরণে হাসলো। আগের মতো গম্ভীর মুখ তার এখন মৃত্তিকা’র সামনে খুব কমই থাকে। পূর্ণ হঠাৎ ওর কানে চুমু খেয়ে বললো,
— হ্যাপি ওয়ান মান্থ অব এনিভারসিরি মৃত্ত।
ফট করে চোখ মেললো মৃত্তিকা। ওদের বিয়ে’র একমাস পূর্ণ হলো আজ। ঘড়িতে রাত ১২ টা। মৃত্তিকা’কে চমকে দিয়ে ওর কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো পূর্ণ। মৃত্তিকা নিজেও এর উপহার সরুপ পূর্ণ’র চওড়া কপালে চুমু খেতে চাইলো কিন্তু সুযোগ মিললো না। পূর্ণ দুইহাতে নিজের পূর্ণ্যময়ী’র চেহারাটা ধরে নাকে, মুখে সমানে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজে নিলো মৃত্তিকা। সিনিয়র পূর্ণ ভাই এখন থামার নয়। একমাসে যথেষ্ট চিনিছে ওকে মৃত্তিকা। বেশ রয়েসয়ে থামলো পূর্ণ। গাঢ় এক দৃঢ় চুম্বন করে বললো,
— চোখ খুলুন মৃত্ত।
মৃত্তিকা চোখ খুলে নজর দিলো পূর্ণ’র দিকে। যার গাঢ় দৃষ্টি মৃত্তিকা’র দিকে। পূর্ণ’কে অবাক করে দিয়ে এই প্রথম মৃত্তিকা ও তার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আমি সারাজীবন আপনার পূর্ণ্যময়ী হয়ে থাকতে চাই।
— চাইলেও এ জীবনে আপনার মুক্তি নেই মৃত্ত।
— আপনার মৃত্ত মুক্তি চায় না।
পূর্ণ হঠাৎ নিজের দুই বাহুর মাঝে স্থান দিলো মৃত্তিকা’র। চুলের ভাজে হাত বুলিয়ে আবার ছেড়ে ও দিলো। একটা প্যাকেট মৃত্তিকা’র হাতে দিয়ে বললো,
— আপনার গিফট মৃত্ত। আই নো আপনি আরো বেশি কিছু ডিডার্ভ করেন বাট আপাতত আপনার স্বামী’র ততটা তৌফিক নেই।
মৃত্তিকা ছোঁ মেরে পূর্ণ’র হাত থেকে প্যাকেট টা নিলো। খুলতেই দেখা মিললো সুন্দর একটা শাড়ী। মোটেও কম দামী নয় সেটা। মৃত্তিকা’র মুখ জুড়ে তখন হাসি। পূর্ণ থেকে পাওয়া সকল কিছু তার নিকট মূল্যবান। শাড়ীটা বসা অবস্থাতেই নিজের কাঁধে তুলে ফোনটা হাতে নিতেই তা পূর্ণ নিয়ে নিলো। ভোঁতা মুখে মৃত্তিকা জিজ্ঞেস করলো,
— কেন নিলেন?
— এত রাতে আব্বু’কে কল দিতে হবে না।
— কিভাবে বুঝলেন?
— আপনার আগা গোড়া মুখস্থ আমার মৃত্ত। আগামী কাল নাহয় আব্বু’কে সরাসরি দেখাবেন।
— আচ্ছা। আপনি দেখুন আমাকে মানিয়েছে না এটা?
পূর্ণ অল্পস্বল্প হাসে। যার দেখা মিলা যায় না সচারাচর। এই নারী অল্পতেই তুষ্ট। তার বড্ড সখের এই মৃত্ত। মৃত্তিকা’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— আপনাকে আমি ততটা সুখে রাখতে পারছি না মৃত্ত। কিছুটা সময়….
— ভালোলাগে না আমার। বারবার এসব কেন বলেন?
কন্ঠে তার অভিমান। মাঝেমধ্যে রাগ হয় মৃত্তিকা’র। পূর্ণ যখন নিজেকে ছোট করে কথা বলে তখন কেন জানি মৃত্তিকা’র নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়। পূর্ণ দুই হাতে আগলে কোলে তুলে নিলো মৃত্তিকা’কে। নিজের মুখ বরাবর সামনে বসিয়ে বললো,
— এই বাড়ী, গাড়ি কিছুই আমার নয় মৃত্ত। শুধু বাইক আর যেই গাড়ীটা ব্যবহার করি ঐ দুটো আমার নিজের। বাকিসব আব্বু’র করা।
যদিও কোচিং দুটো ভালো চলছে। ইনকাম হচ্ছে ভালো কিন্তু সব খরচ তুলার পর প্রায় লাখ খানিক আমার থাকে। তাতেই নিজের সহ আপাতত আপনার খরচ চালাই মৃত্ত। দল থেকে আসা সকল টাকা আপাতত নির্বাচনের কাজে লাগাচ্ছি সাথে এনজিও র ফান্ডিং চলে তাতে।
একটু থেমে পূর্ণ আবারও নরম গলায় বললো,
— আমি আপনাকে আমার মন মতো সুখ দিতে চাই মৃত্ত। আমাদের সুখের সংসার দিতে চাই। আপনাকে আপনার প্রাপ্তটা দিতে চাই। আব্বু’র টাকায় আমার বউ’কে পালতে চাই না আমি।
মৃত্তিকা ধীরে সুস্থে নিজের মাথাটা পূর্ণ’র বুকে রাখলো। মৃদু শব্দে জানালো,
— আমি সুখী।
পূর্ণ ওর মাথায় হাত বুলালো। মৃত্তিকা তখন আবারও বললো,
— আপনি আর এসব বলবেন না। ভালোলাগে না আমার।
— বলব না।
মৃত্তিকা উঠার চেষ্টা করতেই পূর্ণ আটকে বললো,
— কোথায় যাচ্ছেন?
— একা যাচ্ছি না আপনিও চলুন।
পূর্ণ বুঝলো না। মৃত্তিকা ওর হাত ধরে টেনে বললো,
— উঠুন। এখন যেহেতু জেগে আছি তাই তাহাজ্জুদ পড়ে ঘুমাব একেবারে।
পূর্ণ একটু চোরা চোখে তাকালো। মৃত্তিকা পাত্তা দিলো না। টেনেটুনে দাঁড় করালো। আগ বাড়িয়ে ওযু করে এসে পূর্ণ’র জন্য ও জায়নামাজটা বিছালো নিজের বরাবর সামনে। পূর্ণ আসতেই ওকে টুপি এগিয়ে দিলো। দুইজনই দাঁড়িয়ে গেলো নামাজে।
মৃত্তিকা শুরুর দিকেই খেয়াল করেছিলো পূর্ণ রেগুলার নামাজি নয়। জুম্মা’র দিনে দলের সাথে নামাজ সহ টুকটাক মাঝেমধ্যে পড়া। মৃত্তিকা’র ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ ছিলো না। তাকে ঢেকে ঢুকে রাখতে চায় অথচ নিজের নামাজের ঠিক নেই। পূর্ণ’কে তখন থেকেই তাড়া দেয় মৃত্তিকা। সেই সাথে অবাকও হয় যখন জানতে পারে পূর্ণ বেশ কয়েকটা বড়বড় সূরা ও পাড়ে অথচ লোকটা আমল করে না। কারণ জানা নেই মৃত্তিকা’র কিন্তু এটা জানে পূর্ণ ভীতু। প্রচন্ড ভীতু এই সিনিয়র ভাই। মৃত্যু’কে সে ভয় পায় জোড়ালোভাবে। এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করে তেমন উত্তর মেলে নি। মৃত্তিকা ও ঘাটে নি।
___________________
সকালের মিষ্টি রোদটা তখন উঁকি দিচ্ছে এক সুখী দম্পত্যির ঘরে। দুইজন দু’জনের মাঝে ডুবে তখনও ঘুমে’র ঘোরে বিচরণ করছে। ধীরে ধীরে যখন আলো ফুটতে শুরু করলো তখন চোখ পিটপিট করলো পূর্ণ। পাশে থাকা তুলতুলে শরীরটাকে নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরলো। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা সকাল। মৃত্তিকা গরম গরম উষ্ণ বুকটাতে গুটিয়ে গেলো। চাইলো আরো ঘুমাতে কিন্তু হলো না। পূর্ণ জ্বালানো শুরু করেছে তাকে। মৃত্তিকা নড়েচড়ে পুণরায় ঘুমানোর চেষ্টা করলো লাভ হলো না পূর্ণ’র জ্বালাতনে হার মানলো সে। চোখ মেলে আবারও বুজে নিলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে আবেদন করলো,
— আরেকটু ঘুমাই?
মৃত্তিকা’র এহেন কন্ঠ কানে ঢুকতেই যেন পূর্ণ’র র*ক্ত ছলৎ করে উঠলো। এই সাত সকালে মন চাইলো করতে অনেক কিছু। তার নিজের গুরুত্বপূর্ণ একটা সাক্ষাৎ আছে। সেটাকে উনুনে দিয়ে হলেও তার আকাঙ্খা’কে প্রাধান্য দিতে চাইলো সে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। আজকে মৃত্তিকা’র পরিক্ষা আছে। এখন পূর্ণ’র আদর সামলে পরিক্ষা দিতে যাওয়ার মতো শক্ত নারী আবার মৃত্তিকা নয়। সে তো আদুরে ছানা যাকে অল্প স্পর্শেই কাবু করে ফেলা সম্ভব। মনকে ধমকে ধামকে শান্ত করতে চাইলো পূর্ণ। উঠে বসে চুল খাঁমচে ধরে বিরবির করে বললো,
— বউ থাকতেও ব্যাচেলরের মতো নিজেকে কন্ট্রোল করতে হয়। সবই কপাল।
ফ্রেশ হয়ে এসে পূর্ণ দেখলো ইতিমধ্যে মৃত্তিকা উঠে পড়েছে। নোট খাতা হাতে বসে আছে খাটে। পূর্ণ এগিয়ে এসে খাতাটা নিতে নিতে শুধালো,
— এখন পড়ার সময়? যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
মৃত্তিকা ভোঁতা মুখে বিছানা ত্যাগ করলো। পূর্ণ ততক্ষণে রুম গুছিয়ে রুম ত্যাগ করলো। কিচেনে ঢুকে টুংটাং শব্দ পেতেই দেখলো ওর মা রান্না করছে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পূর্ণ বললো,
— গুড মর্নিং আম্মু।
— গুড মর্নিং আব্বু।
— কি করছো? তোমার জামাই কোথায়? রাতে ঝগড়া মিটলো?
ওর মা ওকে সরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
— দুই তিনবার মাফ চেয়েছে। ভেবেছিলাম কথা বলব না। পরে মায়া হলো।
পূর্ণ বাঁকা হাসে। মায়ের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
— হেল্প লাগবে?
— না। হয়ে এলো। মৃত্তিকা কোথায়? ওর না পরিক্ষা?
— হু। উঠেছে। আসছে।
— যাও টেবিলে বস।
পূর্ণ গেলো না। ওপাশে থাকা চায়ের কাপগুলো নিয়ে টেবিলে গেলো। মা’কে প্রায় সময়ই সাহায্য করা হয় তার। ইদানীং ব্যাস্ততার কারণে ততটা হয়ে উঠে না।
ওর বাবা টেবিলে আসতেই পূর্ণ কিছুটা তাচ্ছিল্য করে বললো,
— রাত ভর নাকি বউয়ের রাগ ভাঙালা? একদম ঠিক হয়েছে আব্বু। আমার বউ নিয়ে বেশি ভুজুংভাজুং করলে তোমার বউ’কে কালা পট্টি পড়াব তোমার নামের তখন বুঝবা কেমন লাগে বউ ছাড়া? কখনো তো বউ ছাড়া থাকো নি,থাকলে আমার বউ’কে তার বাপের বাড়ী পাঠাতা না।
পূর্ণ’র বাবা কিছু বললেন না। ভদ্রলোক রাতে অনেক কষ্ট করে বউ’য়ের মান ভাঙিয়েছে। মৃত্তিকা একটু পরই এগিয়ে এসে হাসি মুখে পূর্ণ’র বাবা’কে বললো,
— আব্বু আজকে পরিক্ষা’র পর বাবা’র কাছে নিয়ে যাবেন?
পূর্ণ’র বাবা ফেঁসে গেলেন। ছেলের বউকে না করতেও পারছেন না আবার হ্যাঁ করতেও পারছেন না। হ্যাঁ করলেই পূর্ণ ওনাকে বাজে ভাবে ফাঁসিয়ে দিবে যেই ত্যাড়া এই ছেলে ওনার থেকে ভালো কে ই বা জানে?
_______________
ডিভানে পায়ের উপর পা তুলে রাজকীয় ভাঙ্গিতে বসে আছে পূর্ণ। শোয়েব মির্জা’র চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দুই দিনের ছেলে ওনার সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। নিজেকে কোনমতে শান্ত রাখার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলেন,
— গরম নাকি ঠান্ডা কোনটা নিবে পূর্ণ?
— কারো উষ্ণ র*ক্তের তৃষ্ণা পেয়েছে।
মাহিন মিয়া ভরকে উঠলেন। দাঁত চেপে ধরলেন শোয়েব মির্জা। কটমট করে বললেন,
— কথা ঠিক ভাবে বলা শিখ।
গা ছাড়া ভাব পূর্ণ’র। যেন কিছুই শুনে নি। পাশেই সাফারাত বসা। বাবা’র দিকে একপলক তাকিয়ে বললো,
— যার জন্য ডেকেছো তা বলো আব্বু।
শোয়েব মির্জা নিজেকে দমালেন। পূর্ণ আনমনে হাসে। শোয়েব মির্জা যেন ঐ হাসিতে খেই হারান। গুছানো কথাগুলো তার পাঁক বেঁধে যায়। এতটুকু ছেলে অথচ তার অঙ্গভঙ্গি বুঝা দায়। প্রচুর চতুর এই পূর্ণ। নিজেকে সামলে বললেন,
— নমিনেশন থেকে সরে দাঁড়াও। যা লাগে দিব। গাড়ী,বাড়ী,নারী…
কথাটা শেষ হলো না। পূর্ণ দিলো না। উঠে দাঁড়িয়ে কাঁচের টেবিলে থাকা ড্রিংকের দামী বোতলটা আঁছড়ে দিয়ে বললো,
— মুখ সামলে শোয়েব মির্জা। নিজের ছেলের মতো সবাই’কে ভাবা বন্ধ করুন। নারী তাকে এনে দিন। শ্যালা ***।
ভয়ংকর গালিটা কানে আসতেই সাফারাতের কানটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। পূর্ণ পুণরায় বলে উঠলো,
— এমপি পদ এবার পূর্ণ’র। পারলে থামিয়ে দেখা। কাপুরুষ তো তুই আর তোর ছেলে। ছুড়ি মারলে তো পিছন থেকেই মারবি।
শোয়েব মির্জা শান্ত মেজাজ রাখলেন। বুঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,
— শান্ত হও। তুই তুকারি করো না পূর্ণ। তোমার অনেক বড় সাফারাত এমনকি আমিও। শান্ত মেজাজে ভেবে দেখো।
— দেখাদেখির প্রশ্নই উঠে না। চুল তো আপনি রোদে সাদা করেন নি তাই না। রাজনীতি আমাকে দেখাতে আসবেন না।
কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে চলে গেল পূর্ণ। সাফারাত নির্বিকার। ও জানতো এমনটাই হওয়ার ছিলো। শোয়েব মির্জা হাতে ড্রিংকটা নিলেন। বিরবির করে বললেন,
— বড্ড বার বেড়েছে তোমার পূর্ণ। তোমার টগবগে র*ক্ত চুষে নিতে জানে এই শোয়েব মির্জা।
#চলবে….