শ্যামারণ্য পর্ব-১৬+১৭

0
704

#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ১৬
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন

দড়জা খুলে শ্যামাকে দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে উঠে মা।
তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চেচামেচি করে সবাইকে জানিয়ে দেয় তার মেয়ে এসেছেন। তার গলার আওয়াজ পেয়ে সকলেই বসার ঘরে এসে উপস্থিত হয়। বাবাও হেনার সাহায্যে রুমের বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন।
শ্যামা এতোদিন পর বাবাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে,
ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বাবাকে। বাবাও তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।

“এসেছিস মা?এতোদিন পর এই বুড়ো বাপটার কাছে এলি তবে,তোকে দেখার জন্য মন কতটা আনচান করে তুই জানিস?”

শ্যামা আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠে,”এমন করে কেনো বলছো বাবা,দেখো আমি ঠিক চলে এসেছি তোমাকে দেখতে। তোমাকে দেখার ইচ্ছা আমারও অনেক বাবা,শুধু ব্যস্ততার কারণে আসতে পারিনি।”

নীলা আর দিব্যও এক পাশে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে,হয়তো তাদের অস্তিত্ব জানানোর জন্যই নীলা হঠাৎ মিষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,
“বাহ শ্যামা আপু কতোদিন পর দেখলাম তোমাকে,তুমি তো দেখছি আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছো”

মুহুর্তেই আনন্দমুখর পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে যায়,
মা এদিকে ইতস্তত করছেন তিনি কিভাবে শ্যামাকে বলবেন যে দিব্য আর নীলাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন।
তিনি তো জানেন না সে সব জেনেই এসেছে আজকে এখানে।
শ্যামা এক পলক নীলার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতামূলক একটি হাসি দেয়।
কিন্তু বাবা গম্ভীর গলায় বলে উঠেন,
“আমার মেয়ে জন্ম থেকেই সবচেয়ে সুন্দর ছিলো,যাদের মন কালো শুধু তারাই বুঝতে পারেনি সেটা।”

মুহুর্তেই নীলার মুখটা কেমন চুপসে যায়,তার মুখ দেখে শ্যামা আর হেনা কোনোমতে তাদের হাসি চেপে রাখে।
নীলা এদিকে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাইনি বাবা”

মা পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য তাগাদা দেয়,
“আহ কিসব কথা শুরু করলে তোমরা বলো তো,মেয়েটা এতো দূর থেকে এসেছে,ওকে একটু বসতে তো দাও”

মা শ্যামাকে কাছে টেনে নিয়ে তার পাশে সোফায় বসায়,বাবা মুখ বেজার করে অপর পাশে বসে থাকে,উনাকে দেখলেই বোঝা যায় দিব্য আর নীলার আচমকা ফিরে আসা তিনিও ভালোভাবে নেন নি। কিন্তু বাবার এই এক স্বভাব,তিনি মায়ের খুশির জন্য সবকিছু মেনে নিতে পারেন। তিনি জানেন দিব্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর মা কতটা কষ্টে ছিলেন। তাই তার মুখের হাসির জন্য দিব্য আর নীলাকে নিয়ে কোনো দ্বিরুক্তি করেননি তিনি।

মা শ্যামার হাতে হাত রেখে মাথা নীচু করে নতস্বরে বলে,
“রাগ করিসনা মা আমার উপর,ওরা কালই ফিরেছে। ওরা ওদের ব্যবহারের জন্য অনেক অনুতপ্ত। তাছাড়া নীলার আট মাস চলছে এখন,সামনে আমার নাতি-নাতনি আসবে,এই সময়ে রাগ করে তাদের দূরে সরিয়ে রাখলে,পরে ওর কিছু হলে আমি নিজেই অনুতাপের অনলে পু’ড়বো। তাই..”

“হ্যাঁ রে আপু,আমি সেদিনের ব্যবহারের জন্য তোর কাছে ক্ষমা চাই,আমার মাথা ঠিক ছিলোনা,কি থেকে কি বলে ফেলেছি।” দিব্য বলে উঠে।

শ্যামা একবার দিব্যর দিকে তাকিয়ে আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,”মা তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো,আমি তোমাকে সেদিনও বলেছি লোকে আমাকে নিয়ে কি বলে তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। তাই তোমার সিদ্ধান্তের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই”

মা স্বস্তির হেসে শ্যামাকে জড়িয়ে ধরেন। শ্যামা একটুপর মাকে ছেড়ে বলে উঠে,”আরে তোমরা তো কথাবার্তা জুড়ে দিলে,এদিকে আমি এতোকিছু কষ্ট করে এনেছি। একবার খুলে তো দেখো।”
শ্যামা একে একে সবাইকে তাদের উপহার দেয়,উপহার পেয়ে সবাই অনেক খুশি হয়।

এবার অবশেষে দিব্য আর নীলার দিকে ফিরে বলে সে,”তোমরা কিছু মনে করোনা আবার,আসলে ঘরে যে দুজন নতুন অতিথি এসে জুটেছে আমি তা জানতাম না। জানলে তোমাদের জন্যও কিছুনা কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করতাম।”

নীলা মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে,”আপু আপনি আমাদের মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন,এর চেয়ে বড় উপহার কিছু হতে পারেনা আমাদের জন্য।”

দিব্যও হেসে সম্মতিতে মাথা দোলায় নীলার কথায়।
শ্যামা তাদের অভিব্যক্তির মেকি পরিবর্তন গুলো মুখে হাসি ঝুলিয়ে দেখেই যাচ্ছে শুধু।

মা রান্নাঘরে চলে গেলে শ্যামা দিব্যকে ডেকে বেলকনিতে আসতে বলে,দিব্যও শ্যামার পিছুপিছু গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
শ্যামা এবার কোনো প্রকার ভনিতা না করে স্পষ্ট ভাষায় জিজ্ঞেস করে,
“হ্যাঁ এবার এখানে তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই। এবার বল তো কি উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিস তুই?” শ্যামা বুকের কাছে হাত বেধে প্রশ্ন করে।

শ্যামার এমন প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় দিব্য,সে জানতো তার বড় বোনকে বো’কা বানানো এতো সহজ নয়। সে নিজের কন্ঠ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে উঠে,
“আপু আমি জানি তুই আমাকে বিশ্বাস করিসনা,কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি অনুতপ্ত। আমরা কি আবার সব ভুলে আগের মতো একসাথে থাকতে পারিনা?”

“দেখ দিব্য তোর এসব ইমোশনাল কথায় মা গলে গেলেও,আমি মোটেও তোকে বিশ্বাস করিনা। কিছু করার আগে ভেবে নিস,আমার নজর সর্বক্ষণ তোর উপর আছে।”

“আপু তুই দেখে নিস,আমি ঠিক তোর বিশ্বাস অর্জন করে নিবো”

শ্যামা দিব্যর দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ব্যর্থ মনে তার ঘরে চলে যায়। অন্যসময় দিব্য এতো আত্মবিশ্বাসী থাকে নিজের উপর যে সে তার পরিকল্পনা শ্যামার সামনে উগড়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। এবার এমন কি পরিকল্পনা করছে সে,যা তার সামনেও স্বীকার করছেনা? এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে যায় শ্যামা।
————————
দিব্য তার রুমে এসে দড়জা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে,নীলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
“কি হলো এভাবে হাঁপাচ্ছো কেনো?কি এমন বলেছে তোমার বোন?”

“কি আর বলবে,তোমাকে তো বলেছিলাম। ওকে জব্দ করা এতো সহজ নয়।”

নীলা মুখ বেঁকিয়ে বলে,”সেটা তো জানা কথা। তোমার বোনের গাটে গাটে প্যাচ। তুমি চিন্তা করোনা যতই সন্দেহ করুক,এবার যে ছক কষেছি,তার থেকে বেরোতে পারবেনা শত চেষ্টা করেও।
সে তো আর জানেনা,এখানে এসে সে ইতিমধ্যেই আমাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে”
———————
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতেই নীলার কষা ছকের প্রথম গুটি এসে হাজির হয়।
সন্ধ্যাবেলায় দু’হাতে মিষ্টি নিয়ে হাজির হয় নীলার বড় ভাই আবির। এসেই একেবারে বোনের শশুর শাশুড়ির পায়ে ধরে সালাম করে সে।

শ্যামার তা আধিক্যেতার চেয়ে কম কিছু মনে হলোনা। এই নীলা আর তার ভাই তার দেখা ইতিহাসের দুই বিরল ছ্যা’চ’ড়া প্রাণী।
নীলাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা যায়,তারপর তার বাবা করেন দ্বিতীয় বিয়ে। সৎমায়ের দৈনিক অ’ত্যা’চা’রে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বড় হয়েছে এই দুই ভাই বোন। দিব্যর সাথে নীলার পরিচয় হয় কলেজে,সেখানেই হয় দুজনের প্রেম। নীলার সৎ মা যখন নীলাকে যৌতুকের টাকা বাঁচাতে এক বুড়োর সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো,তখন সে আর দিব্য পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেয়। দিব্য আর নীলাকে মেনে নেওয়ার জন্য শ্যামা ই মা বাবাকে রাজি করিয়েছে,তার নীলার অত্যা’চারিত জীবনের কথা শুনে অনেক মায়া হয়েছিলো মেয়েটার উপর।
কিন্তু কে জানতো এই এতটুকু মেয়ের পেটে পেটে এতো শয়তানি।
প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিলো,মেয়েটা ছিলো বেশ শান্ত আর ভীতু ধরনের। মা বাবা তাকে মেয়ের মতো ভালোবাসতেন। হেনা আর শ্যামাও তার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতো।
আর তার এই বড় ভাই আবির দুদিন পর পর বোনকে দেখতে আসার নাম করে দুবেলা পেট পুরে খেয়ে যেতো এই ঘর থেকে।
তবে তারা তা খারাপ চোখে দেখেনি কখনো।
তবে এই মেয়ে পুরোপুরি বদলে যায় কয়েক বছর পর দিব্য যখন চাকরি পায়। সারাদিন তার মুখ ভার থাকতো,কথায় কথায় ঝামেলা করতো,আর তার এই ভাই তো তখন দিনের পর দিন এই বাড়িতে এসে থাকা শুরু করলো।
ঘরে এমন যুবতী দুই মেয়ে আছে,সেখানে একটি জোয়ান ছেলে দিনের পর দিন এই বাড়িতে থাকলে মানুষ তো কানাঘুষো করবেই,তাই কিছু না বলে আর থাকা গেলোনা তখন। কিন্তু কিছু বললেই কথায় কথায় তার স্বামীর টাকার খোটা দেওয়া শুরু করে মেয়েটি,দিন রাত তাদের এই শান্তিপূর্ণ বাড়িতে শুরু হয় কলহ। শেষমেষ সে বাড়ি নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি করে দিব্যকে পুরোপুরি আলাদা করে দেয় তাদের থেকে।

সে যাক পুরোনো কথা,কিন্তু এই আবির এতো বছরে কোনোদিন এই বাড়িতে হাতে করে কিছু নিয়ে আসেনি। আজ হটাৎ দু হাত ভরে মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছে। ব্যাপারটা কেমন ভালো ঠেকলোনা তার কাছে। কথায় আছে না যে অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।

মা সৌজন্যতামূলক হেসে বলে উঠেন,”কি ব্যপার বাবা?আজ হঠাৎ এলে এতোদিন পর। আর এতোকিছু আনার কি দরকার ছিলো?”

“কি যে বলেন আন্টি,আপনারা হলেন আমার বোনের পরিবার,আর আমার কাছেও নিজের পরিবারের মতোনই।
এখানে খালি হাতে আসি কি করে?আমি অনেক খুশি হয়েছি নীলা আবার আপনাদের কাছে ফিরে এসেছে।
আমি কখনোই চাইনি ও আপনাদের ছেড়ে চলে যাক কখনো”
বলতে বলতেই শ্যামার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো সে।
শ্যামার কেনো যেনো গা ঘিনঘিন করে উঠে সে বাঁকা হাসি দেখে।

নীলা এদিকে গদগদ হয়ে বলে উঠে,”আরে মা ওর থেকে কিছু চাইতে সংকোচ করবেন না। অফিসিয়াল চাকরি পেয়েছে ফাক্টরিতে,পুরো ২০হাজার টাকা বেতনের। এখনো বিয়ে শাদি করেনি,টাকা খরচ করার মানুষ নেই এখনো। এই সুযোগে যত খুশি আবদার করবেন,একবার বউ আসলে আর সুযোগ পাবেন না।”
মা নীলার কথা শুনে হেসে ফেলে,আবিরও লাজুক হাসি দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে।

মা খানিকটা সৌজন্যতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করেন,”তা বাবা বিয়ে করছোনা কেনো? চাকরিও করছো,বয়সও হয়েছে। আর একা একা কদিন থাকবে?”

“আজ্ঞে আন্টি ভালো মেয়ে পেলে অবশ্যই করবো বিয়ে।” এই বলে লোকটি আবার তাকায় শ্যামার দিকে,
এই লোকটির মতিগতি একদম ভালো ঠেকছে না তার কাছে। এই লোক ঘুরেফিরে তার দিকে তাকাচ্ছে কেনো বারবার?
সে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো যাতে এই লোকের সাথে বারবার চোখাচোখি না হয়। কিন্তু নীলা এরপর যে কথাটি বললো তা শুনে তার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় যেনো।

নীলা যেনো এই মোক্ষম সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো,কথাটি কিভাবে সবার কানে পাড়া যায় সেই চিন্তা করছিলো এতোক্ষণ। কিন্তু মা তার কাজটা যেনো সহজ করে দিয়েছে,
“আরে ভালো মেয়ে তো আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে।
মা আমাদের শ্যামা আপুকে আবির ভাইয়ার জন্য কেমন মানাবে বলে আপনি মনে করেন? ভেবে দেখুন ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো,আর বিয়েটাও হয়ে গেলো। রূপে গুণে কোনোদিক দিয়ে কমতি নেই শ্যামা আপুর। কিন্তু বয়স তো থেমে থাকেনা। আমার মতে যত জলদি সম্ভব শ্যামা আপুর বিয়েটা দিয়ে দেওয়া ভালো”

নীলার কথাগুলো শেষ হতেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে বসার ঘরে। কেউ আশাও করেনি এমন একটা কথা উঠে আসবে হঠাৎ করে।
শ্যামা বিস্ফো’রিত নয়নে চেয়ে আছে নীলার দিকে,সে তারপর দিব্যর দিকে তাকায়। শ্যামার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নেয় দিব্য।
শ্যামা মনে মনে বলে উঠে,’তো মনে মনে এই গুটি সাজিয়েছিস তোরা?বাহ চমৎকার!”

মায়ের বরাবর ই ইচ্ছে ছিলো শ্যামাকে সুপাত্রে দান করার,হঠাৎ করে এমন একটি প্রস্তাবের কি জবাব দিবে তা নিয়ে ইতস্তত করতে লাগলেন তিনি। এর মধ্যেই বাবা সশব্দে হাতের গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখেন।
কাঁচের গ্লাসের সাথে কাঠের টেবিলের সংঘর্ষে সৃষ্ট আওয়াজ যেনো এই নীরব পরিবেশে সবার পিলে চমকে দেয়।
তারপরেই ভেসে আসে বাবার গম্ভীর স্বরের রাগী কন্ঠ,
“আমার মেয়েকে আমি দশটা পাত্র দেখে সুপাত্রে দান করবো,
সুপাত্র না পেলে আমার মেয়ে আমার ঘরেই থাকবে।
সে আমার বোঝা নয় যে বিয়ে দিতেই হবে বলে তাকে যেকোনো একজন খুঁজে তার গলায় ঝুলিয়ে দিবো।
এমন হলে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্রের অভাব হতোনা।
আর তাছাড়া আমার মেয়ের নিজেরও পছন্দ অপছন্দ আছে। এভাবে যেনো আমার মেয়ের বিয়ের তাড়া দেখিয়ে তার উপর চাপ প্রয়োগ করা না হয়। এই কথা তুমিও বুঝে নাও শ্যামার মা আর তোমার পুত্রবধূকেও বুঝিয়ে দিও।
শ্যামা, চলো আমাকে রুমে নিয়ে যাবে,আমার এখানে বসে মানুষের মেকি দরদ শুনতে ভালো লাগছেনা।”

বাবার বলা প্রত্যেকটা কথা যেনো বজ্রের ন্যায় আ’ঘা’ত করে বসার ঘরের উপস্থিত সবাইকে। নীলা আর আবির দুজনের মুখ অপ’মানে কেমন চুপসে গেছে।
শ্যামা নীরবে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে বাবাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। তার বাবা এমনি চিরকাল। কম কথা বলেন কিন্তু উচিত কথা। তাই এই ঘরে তার কথাই শেষ কথা।

শ্যামা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যেতে যেতে। একবারের জন্য তো ভেবেছিলো সবাই হ্যাঁ বলে দিবে।
তখন অরণ্য তার বউয়ের দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনে কেমন রিয়েক্ট করতো কে জানে।
অরণ্যের কথা ভাবতেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি চলে আসে শ্যামার। অনেক মনে পড়ছে অরণ্যের কথা এই মুহুর্তে।

শ্যামা বাবাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে তার হাত ধরে বলে উঠে,
“তোমাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা। আমি এখন এমনিতেই বিয়ে করতে চাইনা। তুমি না থাকলে যে কি করতাম আমি।”

বাবা মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমি থাকি আর না থাকি,নিজের উপর কখনো কারো জোর চলতে দিবিনা। তুই সঠিক হলে সবসময় নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবি।”

শ্যামা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায় বাবার কথায়।
——————————-
দিব্য,আবির আর নীলা রুমের দড়জা বন্ধ করে একটু আগের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে।
আবির বলে উঠে,”আপু তোর মনে হয় এই প্ল্যানটা কাজ করবে?”

নীলা বিজয়ের হাসি হেসে বলে,”আলবাত কাজ করবে,তুই সব ঠিক মতো করতে পারলে এই বিয়ে কেউ আটকাতে পারবেনা”

দিব্য এবার গম্ভীর গলায় আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“এটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছেনা নীলা?এই ভাবে করাটা কি বেশি জরুরি?”

নীলা মনে মনে ভেংচি কেটে বলে,’ইশশ বোনের জন্য দরদ যেনো উতলে পড়ছে,এতো দরদ থাকলে তখন সায় দিয়েছিলে কেনো’

তবে দিব্যর সামনে সে তার বিরক্তি প্রকাশ করেনা।
মুখে মেকি দুঃখের ভাব ফুটিয়ে তুলে নত কন্ঠে বলে,
“আমিও কি এসব করতে চাই বলো?আজ যদি বাবা এভাবে বিয়েটার জন্য মানা করে না দিতেন তাহলে তো আমাদের এসব করতেই হতোনা তাইনা?
তুমিতো নিজের চোখেই দেখলে আপু আজ সবার জন্য কত দামি দামি উপহার এনেছে,তার মানে উনার অবস্থা এখন তোমার থেকেও ভালো। বাবা তো এমনিতেই তোমাকে বাড়ির হক দিচ্ছিলেন না। তবে এভাবে সব চলতে থাকলে উনি এই বাড়ি পুরোটাই তার প্রিয় মেয়ের নামে করে দিবেন।
কিন্তু একবার ভেবে দেখো আবির ভাইয়ার সাথে যদি আপুর বিয়ে হয় তাহলে আপু তার ঘর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে,তার লাগামও চলে আসবে আমাদের হাতে।
তখন উনার মেয়ে সামান্য কষ্ট পেলেও বাবা সহ্য করতে পারবেন না। বাবা তার মেয়ের সুখের সংসারের জন্য হলেও বাধ্য হয়ে এই বাড়ি তোমার নামে লিখে দিবে।”

“সব বুঝতেছি নীলা,আমি এও জানি তুমি যা করছো আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য করছো। কিন্তু আপুর কোনো ক্ষতি হবেনা তো?এই প্লান অনেক রিস্ক মনে হচ্ছে আমার।”

“আরে কোনো রিস্ক নেই। আবির ভাইয়ার ই এলাকার বন্ধু এগুলো,আমিও চিনি ওদের। ওরা শুধু আমাদের একটু সাহায্য করবে,আপুর কোনো ক্ষতি হবেনা।
আপুকে ওরা জাস্ট সবার সামনে কি’ড’ন্যা’প করে নিয়ে যাবে,এক রাত বেধে রাখবে এক জায়গায়,তারপর সকাল বেলা ঘরের সামনে ফেলে রেখে যাবে।
তখন পুরো এলাকায় কানাঘুষো শুরু হয়ে যাবে আপুর সাথে খারাপ কিছু হয়েছে,তার ব’দ’নাম সৃষ্টি হবে।
এই সময় আবির ভাইয়া এসে রাজকুমারের মতো আপুকে বিয়ে করে ব’দনামের হাত থেকে রক্ষা করবে। তোমার মা বাবাও মেয়ের সম্মান বাঁচাতে বিয়ের জন্য মানা করতে পারবেন না তখন।
আর তুমিই দেখো আপুর শেষমেষ বিয়ে হবে,সংসার হবে এটা কি ভালো নয়?আমার ভাইয়ের মধ্যে কি কোনো কমতি আছে?”

দিব্য ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,”তবু খেয়াল রেখো যেনো সব ঠিক হয়। আপু যেনো ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে এসব আমরা করেছি।”

“আরে দুলাভাই আপনি শুধু শুধু চিন্তা করেন,কিছুই হবেনা।
আপনার বোন আর আমার হবু বউকে দেখে রাখবো আমি।”
—————————-
রাত সাড়ে বারোটা। সবাই ঘুমানোর পর শ্যামা ফোন নিয়ে চুপিচুপি বেলকনিতে চলে এসেছে অরণ্যের সাথে কথা বলার জন্য।
শ্যামা খানিকটা আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠে,”কি হলো?কখন থেকে আমিই বকবক করে চলেছি,কিছু বলছেন না যে?”

“না আমি ভাবছি এদের কার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে তারা অরণ্যের বউ চুরি করার সাহস করে।”

শ্যামা অরণ্যের রাগী কন্ঠ শুনে হেসে ফেলে,তা শুনে অরণ্য বলে উঠে,”তুমি হাসছো?আমি কিন্তু সিরিয়াস। ভাগ্য গুণে একটা শশুর পেয়েছি,নয়তো আজ খু’না’খু’নী হয়ে যেতো তোমার শহরে”

শ্যামা কোনোমতে হাসি চেপে বলে,”অরণ্য প্লিজ হাসাবেন না,দেখুন আমার হাসি শুনে কেউ জেগে গিয়ে যদি আমাকে এভাবে ফোনে কথা বলতে দেখে তখন ঠিক আমাকে নিয়ে বসার ঘরে বৈঠক বসবে,হতে পারে তোমার গুণধর শশুর মেয়ে প্রেম করে শুনে ওই আবিরের সাথে বিয়ে দিবে তোমার বউকে”

“তুমি বারবার ঘুরেফিরে এই আবিরের নাম নিয়ে আমাকে চেতানো বন্ধ করবে?আমি সত্যিই রেগে যাচ্ছি কিন্তু।”

“আচ্ছা বাবা বেশ আর বলছিনা। এখন বলুন খেয়েছেন কিনা?”

“কিভাবে খাবো?আমাকে নিজ হাতে রেধে খাওয়ানোর মানুষটা তো নেই আমার কাছে।”

“একদম এসব বলে পার পাওয়া যাবেনা কিন্তু,আমি সামশের চাচা আর রিমুকে শিখিয়ে দিয়ে এসেছি কি কি বানাতে হবে আপনার জন্য। দুদিন কষ্ট করে খেয়ে নিন বুঝলেন?”

“হুমম খেয়ে নিবো কষ্ট করে,কিন্তু কথাটা যেনো মনে থাকে, ‘দুদিন’ আজকের দিনটা চলে গেছে,আরেকটা দিন আছে তোমার কাছে,তারপর সোজা ফিরে আসবে।”

শ্যামা বেলকনির চেয়ারে বসে গ্রিলের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বলে, “এটা কেমন কথা?কথার প্যাঁচে ফেলে এভাবে ফিরে আসার দিন নির্ধারণ করা মানবোনা আমি। একমাস পর বাপের বাড়ি এসেছি আমি,অন্তত এক সপ্তাহ থাকি প্লিজ?”

“একদম না,তুমি ২৫বছর ছিলে ও বাড়ি,আমার কাছে ছিলে এক মাস মাত্র। তোমার কি আমার কথা মনে পড়েনা?এক মাসেই মন ভরে গেছে?এই ভালোবাসা তোমার স্বামীর প্রতি তাহলে।”

“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ফিরে আসবো জলদি,খুশি?”

“হুমম খুশি”

“আমি আপনাকে অনেক মিস করছি অরণ্য,অনেক বেশি”

“আমিও তোমাকে অনেক বেশি মিস করছি শ্যামাবতী,বলে বোঝাতে পারবোনা কতটা শূন্যতা অনুভব করছি আমি তোমাকে ছাড়া”

শ্যামা লজ্জামিশ্রিত হাসি হেসে বলে,”আমার এখন কেমন ফিল হচ্ছে জানেন? ওইযে ক্লাস নাইন টেনের মেয়েগুলো মায়ের মোবাইল চুরি করে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমিকের সাথে কথা বলে ওইরকম। কে বলবে যে আমি আমার একমাত্র স্বামীর সাথে লুকিয়ে কথা বলছি এখন?”

অরণ্যও সলজ্জ হেসে বলে,”তাই নাকি শ্যামা? তুমিতো দেখছি অনেক কিছু জানো এই ব্যাপারে। আর কি কি করে ওরা ফোনে?”

“বলবো?”

“হুমম বলো”

“সত্যি বলবো?”

“হুমম বলোনা”

“আচ্ছা বলি তাহলে,আপনি গিয়ে খাবারের প্লেট সামনে নিন”

“মাঝখানে আবার খাবার আসলো কোথা থেকে?”

“আহহ আপনাকে যা বলছি করবেন,এতো প্রশ্ন করেন কেনো?”

“আচ্ছা নিয়েছি সামনে,এখন?”

“এখন আপনি খাবেন আর আমি ফোনের লাইনে থেকে আপনার খাওয়ার আওয়াজ শুনবো”

অরণ্য ভ্রু কুঁচকে বলে,”এটা কোন ধরনের কথা আবার?”

“ক্লাস নাইন টেনের প্রেম ভালোবাসা এমনি হয়, আমারও আজকে ট্রাই করতে ইচ্ছে করছে। মেনে নিন না আমার আবদার?আপনার খাওয়াও হয়ে যাবে,আর আমার আবদারও পূরণ হয়ে যাবে।”

অরণ্য হতাশ সুরে নতি স্বীকার করে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি লাইনে থাকো। আমি খেয়ে নিচ্ছি,বেশি সময় লাগবেনা।”

“হুমম আস্তে আস্তে খান,আমি লাইনে আছি।”

অরণ্য দশ মিনিটে খাওয়া সম্পন্ন করে আবার ফোন হাতে নেয়,
“হ্যাঁ শেষ আমার,আছো তুমি?”
অপর প্রান্ত থেকে কোনো উত্তর আসেনা। সে আবার ডেকে উঠে, “শ্যামা?”
অরণ্য একটি দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে রেখে দেয়।
এক মুহুর্তের মধ্যেই শ্যামার সামনে প্রকট হয় অরণ্য।
যথারীতি দেখতে পায় মেয়েটা ফোনটা হাতে নিয়ে গ্রিলের সাথে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
অরণ্য আনমনে হেসে ফেলে এই দৃশ্য দেখে। সে এগিয়ে এসে শ্যামার সামনে হাটু গেড়ে বসে তার কপালে চুমু খায়।
“আমাকে প্রেমের ক্লাস করাতে দিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে গেলে শ্যামাবতী?আমার থেকে এতো দূরে এসেও এতো ঘুম কিভাবে আসে তোমার?”

অরণ্য শ্যামার কপাল হতে অবাধ্য চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে গালে একবার হাত বুলিয়ে দিতে উঠে দাঁড়ায় বসা থেকে। এগিয়ে যায় দিব্য আর নীলার রুমের দিকে। একটু আগের হাসি খুশি মুখটিতে জগতের হিংস্রতা এসে ভর করেছে এখন। এক পা এক পা করে এগিয়ে যায় সে নীলা আর দিব্যর কাছে। দিব্যর ঘুমন্ত চেহারার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে অরণ্য। তার খু’নের নেশাকে অনেক কষ্টে সংবরণ করে চলেছে সে।

অরণ্য সশব্দে একটি চড় মা’রে দিব্যকে,সে আ’ঘা’তের ঝাপটায় খাট থেকে অরণ্যের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে সে,ঘুম পুরোপুরি ছুটে যায় তার। সে মাটি থেকে মাথা তোলার চেষ্টা করলে অরণ্য তার মাথা পা দিয়ে মাটির সাথে চেপে ধরে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠে দিব্য।
দিব্য ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,”কে…কে তুমি?কি চাও আমার কাছে?”

অরণ্য দাঁতের সাথে দাঁত পিষে কঠোর কন্ঠে বলে উঠে,”চুপ….একদম চুপ,বেশি কথা আমি পছন্দ করিনা। আমি যা বলছি চুপচাপ শুনে যাবি তুই শুধু।
আমার জিনিসের দিকে কেউ হাত বাড়ালে সচরাচর তার হাত টাই ছিড়ে ফেলি আমি। কিন্তু তোর সৌভাগ্য যে তার ভাই তুই,তাই তোকে ছিড়ে ফেলার আগে একবার সতর্ক করে দিচ্ছি। জীবনের মায়া থেকে থাকলে শ্যামার সাথে যা করবি ভেবেছিস,ভুলে যা।”

জানালা গলে ভোরের আলো চোখে পড়তেই দিব্য ধরফরিয়ে উঠে বসে বিছানায়। সে কি তাহলে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে কাল রাতে? হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিব্য,ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে একেবারে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে নীলা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে এখনো।
সে বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে চলে যায় চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিতে।
পানির কল ছেড়ে আয়নার দিকে চোখ যেতেই দেখে তার গালের এক পাশে পাঁচ আঙুলের লালচে দাগ ফুটে উঠেছে।
তা দেখে ভয়ে ছিটকে ফ্লোরে পড়ে যায় দিব্য। ভয়ে রীতিমতো কাঁপতে থাকে সে। সে তার চারপাশে ভয়ে ভয়ে তাকাতে লাগলো,
“তাহলে কি সেটা দুঃস্বপ্ন ছিলোনা?তাহলে কি ছিলো সেটা?”

(চলবে)

#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ১৭
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন

“কি বললে তুমি?”, দিব্যর কথা শুনে নিজের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় নীলার।

” যা তুমি শুনেছো,এই প্ল্যান বাদ নীলা। আমার অনেক ভয় করছে।”

“কেমন পুরুষ মানুষ তুমি?!সামান্য একটা দুঃস্বপ্ন নিয়ে এতোদিনের পরিকল্পনা সব বাতিল করে দিচ্ছো!”

“দুঃস্বপ্ন নয় সেটা নীলা,এইযে দেখো আমার গালে থা’প্পড়ের দাগ এর জ্ব’লন্ত প্রমাণ। আমরা আর এগালে অনেক বড় বিপদ হবে।”

“তুমি সত্যি পা’গল হয়ে গেছো দিব্য,সামান্য থা’প্প’ড়ের দাগ আর একটা দুঃস্বপ্নকে কেন্দ্র করে এতো ভীত হয়ে পড়েছো? আরে স্বপ্নের মধ্যে অনেক সময় মানুষ নিজেকে নিজে থা’প্প’ড় মে’রে দেয়,এমনকি এমনও হতে পারে আমিই মে’রেছি ভুলে ঘুমের মধ্যে। তুমি দয়া করে এখন এসব কথা বলা বন্ধ করো।”

“তুমি বুঝবেনা নীলা,স্বপ্ন এতোটা জীবন্ত কি করে হতে পারে?সে কন্ঠস্বর এখনো মনে পড়লে আমার নিজেকে নিজে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।” বলতে বলতে দিব্য কনুইয়ে ভর করে দুইহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে,ভয়ে এখনো কাঁপছে সে।

নীলা কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দিব্যর দিকে,সে তাকে এতটা ভীত অবস্থায় কখনো দেখেনি। কি করে বোঝাবে এখন এই লোকটাকে?
সে নিজের ফুলে যাওয়া পেটটার দিকে একবার তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় দিব্যর দিকে।
সে দিব্যর কাছে গিয়ে তার পাশে বসে তার কাধে হাত রেখে তাকে কিছুক্ষণ শান্ত হওয়ার সময় দেয়। তারপর তার মুখ থেকে হাত সরিয়ে সেটা তার পেটের উপর রাখে,
“শান্ত হও তুমি,আর কিছু না হোক আমাদের অনাগত সন্তানের কথা ভাবো দিব্য। তোমার মাইনে সবে ২৫হাজার,আজকালকার দিনে এই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে ভালোভাবে থাকা অসম্ভব। সামনে আমাদের বাচ্চা আসবে এই পৃথিবীতে,তার যাবতীয় খরচ,তার ভবিষ্যতের কথা ভেবেছো একবারও?”

“কিন্তু নীলা ওই কন্ঠ…”

“সব তোমার ভ্রম দিব্য, তুমি কাল থেকে এই প্ল্যান নিয়ে চিন্তা করছিলে যে শ্যামা আপুর কোনো ক্ষতি হতে পারে,তাই তুমি এমন স্বপ্ন দেখেছো। এই সবকিছু তোমার মস্তিষ্কের ভ্রম শুধু।”

দিব্য একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নীলার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করলো,ভুল কিছু বলছেনা সে। আর আধ্যাত্মিক কোনো কিছুতে সে বিশ্বাসও করেনা।
“হয়তো তুমি ঠিকই বলছো নীলা। আমারই মনের ভুল এগুলো। আসলে স্বপ্নটা এতো জীবন্ত মনে হয়েছে যে জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো আমার।”

নীলা তৃপ্তির হাসি হেসে বলে,”এইতো বুঝতে পেরেছো সবটা।এখন নিজেকে ধাতস্থ করো,তুমি এমন নার্ভাস হয়ে থাকলে আপু সন্দেহ করবে”

দিব্য নীরবে মাথা দুলিয়ে সায় দেয়।
————————–
চোখে রোদ পড়ায় শ্যামা সকাল সকাল উঠে পড়েছে আজ। বেলকনিতে এভাবে অরণ্যকে অপেক্ষায় রেখে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য মনটা খারাপ হয়ে আছে তার। এত ঘুম কেনো আসে তার বুঝেনা সে,দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছে কাজ না করে করে। তাই আজকে নিজে হাতেই নাস্তা বানিয়েছে সবার জন্য। তবে খাবার বানাতে বানাতে অরণ্যের কথা আরও বেশি মনে পড়ে তার। অরণ্য না জানি ভালো করে খেয়েছে কিনা কাল। সেটা জানার আগেই তো ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
অরণ্য ঠিকই বলেছে,এদিকটা জলদি সামলে তার কাছে ফিরতে হবে। নয়তো উনার চিন্তায় চিন্তায় পা’গ’ল হয়ে যাবে সে।

নাস্তার টেবিলে সবার আগে হেনা ই আসে,কলেজে যেতে হবে তার,সাড়ে আট টা বাজে,সে আগে ভাগে খেয়েই বেড়িয়ে পড়ে। বাকিরা সবাই খেতে বসেছে ততক্ষণে।

মা হাসিমুখে বলে উঠে,”বাহ আজ আমার মেয়ে নাস্তা বানিয়েছে দেখছি,তোর বাবা ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলে খুশি হয়ে যাবেন।”

“হুমম তবে বাবা এখনো ঘুমাচ্ছে কেনো?এতো বেলা হলো”

মা মাথা দুলিয়ে হতাশার সুরে বলে,”রাতের ওষুধ গুলো অনেক কড়া,খেলেই ঘুম আসে উনার।
দশটার আগে উঠবেন না উনি।”

শ্যামা চিন্তিত স্বরে বলে উঠে,”ওষুধ গুলো আর কতোদিন খেতে হবে বলেছে ডাক্তার?”

মা একটি ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,”জানিনা রে মা,ডাক্তার বলেছেন এই মাসের রিপোর্ট দেখে নতুন ওষুধ দিবেন,দেখি কি বলে ডাক্তার।”

“ডাক্তারের কথা শুনে মনে পড়লো…” নীলা হঠাৎ খানিকটা উঁচুস্বরে বলে উঠলো।
শ্যামা আর মা দুজনেই তার দিকে ফিরে মনোযোগ দেয়।
নীলা আবার বলতে থাকে,
“আজকে আমার ডাক্তারের কাছে সাড়ে দশটার এপয়েন্টমেন্ট আছে। দিব্যর নাকি মিটিং আছে তাই সে যেতে পারবেনা। আপনারা কেউ আমার সাথে যাবেন?”

মা স্মিত হেসে বলেন,”এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে বউমা,তোমার সাথে আমিই যাবো নাহয়।”

নীলাও হালকা হেসে বলে,”ঠিক আছে মা,তবে বাবাকে রেখে আপনার যাওয়া ঠিক হবে তো?না মানে,বাবার সকালের ওষুধ,ডাক্তার কি কি খেতে মানা করেছেন সেগুলো শ্যামা আপু জানেন না,উনি খুঁজে নিতে পারবেন তো?”

মা মুখ গম্ভীর করে কিছু ভেবে বলে,”হুমম ঠিক বলেছো বউমা,আমিতো খেয়ালই করিনি। শ্যামা মা,তুই ই নাহয় বউমাকে নিয়ে যা হাসপাতালে,আমি নাহয় তোর বাবার কাছে থাকি।”

নীলা মনে মনে বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। এদিকে শ্যামা আড়চোখে দিব্য আর নীলাকে জরিপ করে চলেছে। দিব্য মাথা নীচু করে স্বাভাবিকভাবে নাস্তা করে চলেছে,যেনো এর কোনোকিছুর সাথেই তার কোনো সম্পর্ক নেই। নীলাও হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে জবাবের অপেক্ষায়।
এদিকে মায়ের কথা ফেলতেও পারছেনা,তাই বাধ্য হয়েই রাজি হয়ে যায় সে। তবে সে ঠিক করে চোখ কান খোলা রাখতে হবে এর সাথে গেলে। জানিনা এদের পেটে কি শয়তানি চলছে আবার।
———————-
“বাসায় যাবে মানে?” শ্যামা ভ্রুঁ কুঁচকে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে।

“হ্যাঁ আপু,আসলে তাড়াহুড়ো করে সামান্য কাপড় চোপড় নিয়ে চলে এসেছি,মালপত্র সব মাসের শুরুতে আনবো বলে আনা হয়নি। আমার আগের রিপোর্টগুলো বাসায় ভুলে ফেলে এসেছি। ওগুলো নিতে যেতে হবে আগে।”

শ্যামা নীলার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে সাবধান করার ভঙ্গিতে বলে উঠে,
“দেখো নীলা,আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করলে ভালো হবেনা বলে দিলাম।”

নীলা মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে,
“আপু আপনি আমাকে এতো ভুল বুঝেন কেনো?আমি এই এতো বড় পেট নিয়ে নিজেই হাঁটতে পারিনা,এই অবস্থায় আমি কি করবো আপনার সাথে?আমি সত্যিই রিপোর্ট ফেলে এসেছি” বলতে বলতে আবার চোখ থেকে টপাটপ দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

শ্যামা এই মেয়ের কান্নার ট্যালেন্ট দেখে সবসময়ই অবাক হয়,কার থেকে এই ন্যাকামির ট্রেনিং নিয়েছে এই মেয়ে কে জানে।
সে বিরক্তির সাথে জবাব দেয়,”আচ্ছা বেশ আর নাটক করতে হবেনা। জলদি চলো।”

নীলা মুচকি হেসে সিএনজিতে উঠে বসে,শ্যামাও তার পাশে বসে পড়ে। নীলাদের ভাড়া বাসাটা বেশি দূর নয় এখান থেকে,দশ মিনিটের মধ্যেই পৌছে যায় তারা। ভাড়া মিটিয়ে শ্যামা নীলার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“আমি ভেতরে যাবোনা,গেইটের বাইরে দাঁড়াচ্ছি। তুমি গিয়ে নিয়ে আসো।”

নীলা কোনো দ্বিরুক্তি না করে সম্মতি জানিয়ে গেইটের ভেতর ঢুকে পড়ে,মুখে তার খেলা করছে কুঠিল হাসি,সে মনে মনে বলে উঠে,’এতো সাবধানতা অবলম্বন করে কি করবি বলতো? তোর বিপদ তো ভেতরে নয়,বাইরে তোর অপেক্ষা করছে’

নীলা ভেতরে যাওয়ার পরেও অস্থির ভাব কাটেনা শ্যামার। মন কেমন কু ডাক দিচ্ছে শুধু। সে গেইটের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

এমন সময় হঠাৎ একটা সিএনজি এসে দাঁড়ায় শ্যামার ঠিক পাশে। চমকে উঠে ভালো করে কিছু বুঝে উঠার আগেই সিএনজি থেকে কাপড় দিয়ে মুখ বাধা দুজন নেমে একজন তাকে পেছন থেকে চেপে ধরে,আরেকজন নাকে একটা রুমাল চেপে ধরে। সাথে সাথে নিস্তেজ হতে থাকে তার শরীর,সে খানিকটা টের পেলো তাকে টেনে নিয়ে সিএনজিতে তোলা হয়েছে। পুরোপুরি জ্ঞান হারাবার আগে সে শুধু আশেপাশের লোকজনের চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলো।
——————-
রাত আটটা। পুরো বাড়ি জুড়ে মাতমের অবস্থা। মা কান্না করতে করতে বারবার নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।
হেনা মাকে সামলাচ্ছে,এখনো সে কলেজের ড্রেসটাই পড়ে রয়েছে। বাবা যেনো শোকে পাথর হয়ে চোখের পালক ফেলতেও ভুলে গেছেন। ঘরের যুবতী মেয়েকে এক রাস্তা মানুষের মাঝখান থেকে দিনে দুপুরে তুলে নিয়ে গেলো। কেউ নাকি থামাতে পারেনি এতোটা জলদি হয়েছে সবটা।

দিব্য পুলিশ স্টেশন থেকে ফিরলে বাবা উৎসুক নয়নে তার দিকে তাকায়। দিব্য তার দিকে তাকিয়ে নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“রিপোর্ট লিখিয়ে এসেছি বাবা,তারা নাকি খোঁজ পেলে জানাবেন। আমরা কিছু জানতে পারলে তাদের জানাতে বলেছে।”

বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে বলে উঠেন,”আমরা আমাদের মেয়ের খোঁজ জানলে তাদের সাহায্য চাইতাম নাকি?আমার মেয়েটা…আমার মেয়ে…” হাঁপাতে হাঁপাতে বাবা তার বুকের বা পাশটা চেপে ধরে।

দিব্য এগিয়ে গিয়ে ধরে ফেলে বাবাকে,”বাবা প্লিজ শান্ত হও তুমি,আপুকে জলদি খুঁজে পাওয়া যাবে।”

“কোথায় খুঁজে পাবে?কে দিবে খোঁজ?আমার মেয়েটা না জানি কোথায় আছে,তারা কারা,কোন উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে তাকে। হে খোদা! আমার মেয়েটাকে রক্ষা করো তুমি!”
তার শক্ত ধাচের বাবাকে এমন ভেঙ্গে পড়তে দেখে দিব্যর নিজের ভেতর অনুশোচনা হতে শুরু করে। তার খুব করে বলতে ইচ্ছে করে আপু সকালের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু সে তা বলতে পারলো না,অনেকটা এগিয়ে এসেছে সে এই পরিকল্পনায়,তার এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

নীলা এদিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে মনে মনে প্রার্থনা করে চলেছে দিব্য যেনো সবটা আবার উগড়ে না দেয়,এই লোকটার মাথা সকাল থেকে ঠিক নেই।
————————–
রাত পৌনে বারোটা। শ্যামাকে শহরের একটি নির্মাণাধীন ভবনের তিন তলায় চোখ,হাত বেধে ফেলে রেখেছে আবির ও তার বন্ধুরা। সব ঠিক মতোই চলছে। মেয়েটার জ্ঞান এখনো ফিরেনি।
আবির আর তার বন্ধুরা খানিকটা দূরে মদ্যপান করে মদ্যপ হয়ে আছে। তারা এই মুহুর্তে ৪জন এখানে। সাদমান আর আসফিই শ্যামাকে সিএনজি তে তুলে এনেছিলো,আর সিএনজি টা হলো নাহিদের,আবির এখানেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এরা চার জন অনেক ভালো বন্ধু।
রোজ নিয়ম করে রাতের বেলা মদের আসর বসানো,সেখানে দুনিয়ার যত অ’শ্লী’ল কথাবার্তা বলা,ছুটির দিনে নিয়ম করে এলাকার মেয়েদের ইভ’টি’জিং করা সব ধরনের অপ’ক’র্মে একে অপরের সঙ্গী তারা। এই মুহুর্তেও তাই করছে।

সাদমান তার গ্লাসের পানীয়টা এক চুমুকে শেষ করে অ’শ্লী’ল ভাবে বলে উঠে,”দোস্ত ভাবীর ফিগারটা কিন্তু জোস,পুরাই মাথা ন’ষ্ট”

আবির নেশার ঘোরে গর্বের সাথে বলে,”তাইনারে?আমিও পুরো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম,মেয়েটা আগে এমন ছিলোনা,হঠাৎ করে এমন সুন্দর হয়ে গেছে দেখছি।”

আসফি হেসে বলে,”তুই নিজেকে কিভাবে যে কন্ট্রোল করছিস কে জানে,আমি হলে তো এতোক্ষণে…..” বলেই নিজের ঠোঁট কা’মড়ে ধরে আসফি।

আবির একটু ধ’মকের সুরে বলে,”আমার মা’লে নজর দিস না আসফি, বন্ধুত্বে সব ভাগাভাগি করতে পারবো,কিন্তু বউ না।”

নাহিদ খানিকটা তা’চ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠে,”বা’লের বউ তোর,তুই কি কা’পুরুষ নাকি?বিয়ে যখন তোর সাথেই হবে তখন তুই এখনো বসে আছিস কি জন্য?কিছু তো সুযোগ নে”

“এই না,আমার বোনের মানা আছে। কোনো গন্ডগোল যাতে না করি,নয়তো প্ল্যান সব মাটি হয়ে যাবে।”

“আরে ধুরর কিছু মাটি হবেনা। মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে বলে রটাতে হবে তো?তুই কিছু করলে সেটা আরও বাস্তব দেখাবে।”

আবির ঘোর লাগা দৃষ্টিতে শ্যামার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢুক গিলে আসফির দিকে নিশ্চয়তার জন্য তাকায়ে বলে,”বলছিস?সত্যি কিছু হবেনা তো?”

“আরে কিচ্ছু হবেনা,বিয়ে তো তোর সাথেই হবে,তুই করতেই পারিস। আর আমরা করতে না পারলেও একটু দেখি,কি বলিস?” আসফির কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে ফেলে।

আবির বন্ধুদের কথায় মনোবল পেয়ে টলতে টলতে এগিয়ে যায় যায় শ্যামার কাছে।

শ্যামার জ্ঞান পুরোপুরি না ফিরলেও ওষুধের প্রভাব কমে আসায় তার একটু হুঁশ রয়েছে। আবছা আবছা ভাবে লোকগুলোর কথা তার কানেও এসেছে। তার মস্তিষ্কে এখনো সবটা ধোয়াশা হলেও এইটুকু বুঝতে পারে সে সামনে অনেক বড় বিপদ তার। কি করে রক্ষা করবে নিজেকে? নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও হাতের একটা আঙুল খানিকটা নাড়াতে পারলো সে শুধু। হতাশায় চোখের কর্ণিশ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে তার।
হঠাৎ করে অরণ্যকে একবার জড়িয়ে ধরতে,তার বুকে মাথা রাখতে অনেক ইচ্ছে করছে। তার একমাত্র শান্তির স্থান,যেখানে মাথা রাখলেই জগতের সকল কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অদম্য শক্তি চলে আসে,যেখানে এই ইহজগতের সব কষ্ট ভুলে থাকা যায়।

মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণেই হয়তো আবার জ্ঞান হারাতে শুরু করে সে। পুরোপুরি জ্ঞান হারানোর আগে তার নাকে একটি অতি পরিচিত আতরের সুবাস ভেসে আসে বলে মনে হয়। কিসের সুবাস তা বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারায় সে।

সবটা কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই ঘটে যায়। অরণ্য তার পায়ের কাছের লা’শগুলোতে শেষ বারের মতো একটা লা’থি মেরে নীচে ফেলে দিয়ে,শ্যামার দিকে এগিয়ে যায়।
র’ক্তের নেশা আজ তাকে পেয়ে বসেছে,জগতের যত হিং’স্রতা যেনো ভর করেছে তার উপর,এই মুহুর্তে সে তার সামনে যে আসবে তাকেই খু’ন করে ফেলবে সে।
সে তার র’ক্তা’ক্ত হাতের দিকে ঘৃ’ণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তা মুছে ফেলে শ্যামাকে স্পর্শ করার আগে।
একে একে শ্যামার হাতের এবং চোখের বাধন খুলে দেয় অরণ্য,তারপর তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

তার চোখে মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে,শ্যামার মুখের দিকে তাকিয়ে আত্মগ্লানি মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে অরণ্য,
“আমাকে ক্ষমা করে দিও শ্যামা,তোমার অরণ্যকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ। কালই যদি সবগুলোকে শেষ করে দিতাম তাহলে আজ তোমাকে এতো বড় বিপদে পড়তে হতোনা। ছাড়বোনা আমি,ওদের কাউকে ছাড়বোনা!”

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অরণ্য। আর কখনো নিজের প্রিয় মানুষকে নিজের সামনে শেষ হতে দেখতে চায়না সে। কখনো সে নিজেকে আবার সেই কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে দিবেনা।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে।

(চলবে)