শ্রাবণের মেঘ পর্ব-১১

0
368

গল্পের নাম : #শ্রাবণের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ১১
শাফিন মুখটা প্যাঁ/চা/র মতো করে রাখলো। বিকাল হতেই পার্লার থেকে মেয়েরা এসে মেধাকে সাজানো শুরু করল। মেঘার প্রিয় রং হলো কালো সাদা এবং নেভি ব্লু। কিন্তু যেহেতু বিয়ে, তাই লাল রঙের বেনারসিতে গোল্ডেন রঙের কাজে একটি শাড়ি পড়েছে সে। সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্ট, লাল রঙের ওড়না এবং বাকি সবকিছু। এদিকে মেঘা বসে বসে বোর হচ্ছে, সে মেকাপ পছন্দ করত না। আর আজ এতক্ষণ ধরে সাজানো হচ্ছে বলে তার বোর লাগছে, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে সাজানোর পর মেঘার সাজ পূর্ণ হলো। ওরা বেরিয়ে যেতে নিশিসহ বাকিরা ঢুকলো, নিশি এসে বলল,
” ভাই আজ তোকে দেখে চোখ ফেরাতে পারবে না, তোকে দেখে কাত হয়ে যাবে ”

মেঘা লজ্জা পেল, বাকিরাও মজা শুরু করলো। প্রায় সন্ধ্যার দিকে, চারদিকে চারজন মেয়ে মাথায় ওড়না ধরে মেঘা কে নিয়ে এলো। মেঘাকে একদিকে এবং শ্রাবণকে এক দিকে দিয়ে মাঝখানে পাতলা পর্দা জাতীয় উড়নাটি দিলো। সুন্দরভাবে বিয়েটি সম্পন্ন হল, তারপর দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে ফটোগ্রাফি এবং বিভিন্ন মজা করতে লাগলো সবাই। যেহেতু বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাকবে তাই কারো সেরকম মন খারাপ নেই, শুধুমাত্র রহিমা বানু এবং নিশী ছাড়া। রহিমা বানাকে তাদের সাথে থেকে যেতে বলেছিল, কিন্তু উনি গ্রাম ছাড়া কোথাও থাকবে না।
🍂
বিয়ে উপলক্ষে নিশি কে তার নিজের পছন্দমত শাড়ি দেয়া হয়েছিল। হালকা আকাশি রংয়ের শাড়ির মধ্যে গোল্ডেন কালার কাজের এক শাড়ি পড়েছে। খোলা চুলগুলো হালকা বাতাসে যখন উড়ছে, যেন মনে হচ্ছে আকাশ থেকে কোন পরী নেমে এসেছে। আহা নিজের সাথে তার পরিচয়টা বেশি দিনের নয়, কিন্তু কথা আছে না, ওয়ান সাইড লাভ। ইফতির ক্ষেত্রে সেরকম, মায়াবী নারীটির প্রেমে পড়েছে সে। হয়তো তাকে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু সে এখনই তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চায় না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটি নজর রাখছে সে মেয়েটির উপর।
সব ফরমালিটি শেষ করে, মেয়েরা মেঘাকে নিয়ে গিয়ে বাসর ঘরে বসিয়ে দিল। শ্রাবন তার পরিচিত বন্ধুদের এবং কলিগদের বিদায় দিয়ে ঘরে আসতেই দেখল, বাইরে কেউ নেই। শ্রাবণ ভাবলো, কোন রহস্য অবশ্যই আছে, কারণ যারা এত দু/ষ্টু/মি করে তারা কেউ নেই। না থাকলেই ভালো, তার প্রিয় সে কাছে যাওয়ার পথ সহজ হবে। শ্রাবন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখল, রুমটি মেঘার পছন্দের ফুল অর্থাৎ বেলি ফুল এবং কাঠগোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। হ্যাঁ, অন্যান্য বিয়েতে কাঠগোলাপ দিয়ে সাজানো হয় না, কিন্তু তার প্রেয়সির পছন্দ বলে কথা। বিছানার দিকে তাকিয়ে মানুষটির দিকে তাকিয়ে শ্রাবনের কিছুটা খ/ট/কা লাগলো। কিছুতো একটা গ/ন্ড/গো/ল আছে, আলমারির পিছনে কারো ছায়া দেখে শ্রাবন বাঁকা হেসে বলল,
” বউ, কাছে এসো। আলমারির পিছনে, বেলকনির দরজার ওপাশে, বাথরুমের সাইডে যারা যারা আছে তাদেরকে একটু বেরিয়ে যেতে বলো। কারণ আমি পি/টা/নি শুরু করলে কিন্তু দৌড়ানো জায়গা থাকবে না। ”

ব্যাস, এতোটুকু বলতেই সবাই তাড়াহুড় করে নেমে এলো। একজনের মুখটা দেখার মত ছিল, রৌদ্র এসে বলল,
” হায়রে ডিটেকটিভ মানুষ, সাথে মজা করা কঠিন। কেমনে বুঝলি? ”

শ্রাবন জোরে হেসে বললো,
” আলমারির পিছনে কারো ছায়া দেখা যাচ্ছিলো, আর একজন আছে মনে বাকিরাও তো আছে তাই না? আর আমি ভালো মতোই জানি সে তোরা থাকবি। আর বিছানায় বসে থাকা মানুষ টাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এটা আমার মেঘা নয়। কারণ, মেঘা এমন মোটা নয় ”

তিশা বলল,
” ধ্যাত ভাল্লাগে না, শ্রাবন ভাইয়া। তুমি আমাদের একটু মজা করার সুযোগ ও দিলে না। এত এত প্ল্যান করলাম সব ভে/ঙে দিলে, যাও তোমার সাথে আ/ড়ি ”

শ্রাবন বললো,
” এইযে ড্রা/মা/কু/ই/ন, এসব বন্ধ করে আমার বউটাকে আমায় দিয়ে যাও তোমরা। ভাব পড়ে করো, এখন সবাই বাইর হও নয়তো আমি পি/টা/নি শুরু করবো ”

সবাই একসাথে বলে উঠলো,
” ৪০ হাজার টাকা না দিলে, আমরা এক পাও বের হবো না। ”

এই বলে সবাই বিছানায় বসে পড়লো। শ্রাবন একটি ছোট লা/ঠি নিয়ে এসে বিছানায় বা/রি দিতেই, সবাই দৌ/ড়ে পালালো। সবাই বের হতেই শ্রাবন কারো হাসির শব্দ শুনতে পেল, পিছনে ঘুরে দেখল মেঘা হাসছে এবং বলছে,
” এরা যে এত দুষ্টু আমি জানতাম না, যদি ছোট থেকে এদের সাথে থাকতাম তাহলে আমিও হয়তো এমন হতাম ”

শ্রাবন মেঘার মন খারাপ দেখে বলে উঠলো,
” না এটাই ঠিক আছে, আমার বউ এমনি শান্তই ভালো। ওদের সাথে থাকলে তো লেজ ছাড়া বা/দ/র হয়ে যেতে। আর এতগুলো বা/দ/রকে আমি কি করে সামলাতাম ”

মেঘা শ্রাবনের কথাটি শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো, তারপর গিয়ে তাকে সালাম করলো। শ্রাবন হেসে বলল,
” আমি কিন্তু বাংলা সিনেমার নায়কের মত বলতে পারব না যে, ওগো প্রিয়া তোমার স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকে। বুঝলে তুমি মেঘবতী? তোমার স্থান আমার হৃদয়ের গহীনে। এবার গিয়ে বসো ”

মেঘা দিয়ে বিছানায় বসলো এবং শ্রাবন দরজা লাগিয়ে তার কাছে এসে বসলো। বলা শুরু করল,
” আমি জানি মেঘ পরী, প্রতিটা মেয়েরই নিজের বাসর নিয়ে কিছু স্বপ্ন থাকে। তোমারও নিশ্চয়ই আছে, তুমি চাও যে তুমি তোমার প্রিয় মানুষটির সাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে খোলা চুলে তারা ভরা আকাশে চাঁদ দেখতে তাই তো ”

মেঘা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, কারণ সে কখনো শ্রাবনকে সব বলেই নি। তাহলে জানলে কিভাবে মানুষটি? এতটা কেয়ারিং এত সুখ সহ্য হবে তো কপালে? মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে শ্রাবন বলে উঠলো,
” আমি জানি তুমি অবাক হচ্ছ, জেনে রেখো এই মানুষটি তোমার সব কথাই জানে। তুমি দিনে কতবার নিঃশ্বাস না সেটি আমি বলতে পারবো, তুমি কখন কাকে নিয়ে কি চিন্তা করো আমি সবই বলতে পারবো। এমনি এমনি ডিটেকটিভ এর অফিসার তো হইনি ম্যাডাম ”

মেঘা নিজের বো/কা/মি/র জন্য হাসলো, কারণ সে তো ভুলেই গিয়েছিল সে কার বউ। শ্রাবন বলল, চলো বেলকনিতে।‌ দুজনে বেলকনিতে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালো।‌ শ্রাবন মেঘাকে বললো,
” তুমি চেঞ্জ করে এসো ”

মেঘা চেঞ্জ করে এলো, এত এত গয়না, মেকআপ‌ সবকিছু ছেড়ে এখন পাতলা সুতি শাড়ি পড়ে তার বেশ ভালো লাগছে। শ্রাবনের পাশে দাঁড়াতেই শ্রাবন বলে উঠলো,
” জানো তো? আজ আমি এক কল্পনা প্রিয়সিকে দেখেছি। লাল রংয়ের শাড়িটা যেন মনে হয়েছিল, আকাশ থেকে এক পরী নেমে এসেছে। পরীটা আমার বউ, আজ সারাদিন তোমায় নিয়ে কম্প্লিমেন্ট দিলেও হয়তো শেষ হবে না। তাই আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না, থাক না কিছু কথা অজানা। সব কথা জেনে ফেলতে নেই মেঘপরী, এতে আকর্ষণ কমে যায় ”

মেঘা হাসলো এবং বললো,
” আচ্ছা আপনি কি আমাকে গিটার একটা গান শোনাবেন ”

শ্রাবন হেসে মাথা নাড়িয়ে গিটার আনলো, এবং বললো ” কোন গানটি গাইবো? ”

মেঘা বললো, আপনার ইচ্ছা।‌ শ্রাবন বললো,
” আচ্ছা দেখো আমার নাম শ্রাবণ এবং তোমার নাম মেঘা। আমাদের দুজনের নাম মিলিয়ে হয় শ্রাবনের মেঘ, তাই শ্রাবনের মেঘগুলো গানটা গাই? আজ থেকে শুরু হলো আমাদের শ্রাবনের মেঘের গল্প। ”

মেঘা বললো,
” বাহ! বেশ ভালো বলেছেন তো। আচ্ছা এই গানটি গান, আমারও ভালো লাগে গানটি ”

শ্রাবন গিটারের টুংটাং শব্দ করে গাওয়া শুরু করল,
” শ্রাবনের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ধারায়,
শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে
অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ধারায়
আজ কেন মন, উদাসী হয়ে
দূর অজানায়, চায় হারাতে
Music
কবিতার বই সবে খুলেছি
হিমেল হাওয়ায় মন ভিজেছে
জানালার পাশে চাপা মাধবী
বাগান বিলাসী, হেনা দুলেছে
আজ কেন মন, উদাসী হয়ে
দূর অজানায়, চায় হারাতে

শুরু হলো শ্রাবন মেঘের গল্প, দুজনে কিছুক্ষন জোছনা বিলাস করে ঘরে এলো। না জানি কাল কি কি বি/প/দ অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।

চলবে,