#সংসার
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১১
দিপা তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘সে তোর কথা শোনার জন্য দোকানে বসে আছে না কী? সে তো সুন্দরী বউ নিয়ে ফূর্তি করতে সাজেক গেছে।
নিপা রাগে বেসামাল হয়ে বলল,
-‘এখানে আমার জীবন মরণের প্রশ্ন! আর তোমার বড়ছেলে অকৃতজ্ঞের মতো চলে গেছে? ফোন দিয়ে বড়দাভাইকে আসতে বলো মা?
রুপা ফোন নিয়ে ছুটে এলো।
নন্দিতাদেবীর অনেকবছর আগের কথা মনে পড়ে গেল। তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। সেই যুগে ওতো হানিমুন টানিমুন ছিল না। তবে নতুন বউ নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার খুব চল ছিল। রূপায়নের বাবা যখন প্রথম নন্দিতাদেবীকে নিয়ে তার মামারবাড়ি বেড়াতে গেল। সদ্য বিয়ে হওয়া নন্দিতাদেবী তখন খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে স্বামীর হাত চেপে ধরে গাড়িতে বসে ছিল৷ মামারবাড়ির খুব কাছে গিয়ে খবর এলো, তার এক ননদ এক লোকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে। রূপায়নের বাবা খবর পেয়ে নন্দিতাদেবীকে সাথে নিয়ে তড়িৎ গতিতে গাড়ি থেমে নেমে গেল। এইদিকে মামাবাড়িতে প্রথম জামাই আসছে বলে, আস্ত খাসি মেরে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। সেদিন বাড়িতে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। রূপায়নের বাবা কিছুই করতে পারেনি। শুধু শুধু মাঝখান থেকে নন্দিতাদেবীর স্বামীকে সাথে নিয়ে প্রথম বেড়াতে যাওয়াটাই মাটি হলো। তারপর কত ঘুরতে গেছে। কিন্তু সেই প্রথম বেড়াতে যাওয়ার মতো উচ্ছ্বাস আর কখনো কাজ করত না।
নন্দিতাদেবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে শীতল কণ্ঠে বলল,
-‘খবরদার কেউ রূপায়নকে ফোন দিবি না। ও ঘুরে আসুক তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
নিপা ক্ষেপে গেল। বলল,
-‘আমার থেকেও তোমার ছেলের ঘুরে বেড়ানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার কাছে?
আজ নন্দিতাদেবী দমে গেল না। বেশ কঠোরভাবে উত্তর দিল।
-‘চুপ..তোর ওই মুখে আর একটাও কথা শুনব না আমি। বিয়েটা তো নিজের পছন্দে করেছিলি। কত করে আমি, রূপায়ন বুঝিয়েছি। তখন আমাদের কারো কথা শুনিনসি তুই। তারপরও রূপায়ন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বেশ ধুমধাম করে তোর বিয়ে দিয়েছে। তোর যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, তখন তাই দিয়ে তোর সংসার গুছিয়ে দিয়েছে। এমনকি তোর বেকার অল্পশিক্ষিত জামাইকেও লোক ধরে, ঘুষ খাইয়ে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সৌরভের দ্বিতীয় বউ যখন বাড়িতে এসে উঠেছে। আমি বা রূপায়ন কেউ চাইলেও এখন কিছু করতে পারব না। সময় লাগবে! ওরা ঘুরে আসুক। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এই কথার পর আর কেউ কোন কথা বলার সাহস পেল না।
সাভার থেকে খাগড়াছড়ির দূরুত্ব ২৬৯ কিলোমিটার। একটানা প্রায় ১৬ ঘণ্টা বাস জার্নি করে অনুপমার অবস্থা শোচনীয়। বার কয়েক বমি হয়েছে। মাথা ভনভন করে ঘুরছে। আগেরদিন দুপুর দুটোর দিকে বাস ছেড়েছে। পরদিন ভোর ছয়টায় খাগড়াছড়ি বাস টার্মিনালে নেমেছে। অনুপমা ক্লান্ত হয়ে একটা টং দোকানের বেদীতে বসে পরল। রূপায়ন ব্যাগপত্র বুঝে নিয়ে অনুপমার পাশে এনে রাখল। জলের বোতল কিনে অনুপমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘চোখে, মুখে জলের ছিটা দাও? ভাল লাগবে। অনুপমা হাতমুখ ধুয়ে, রূপায়নের কাঁধে মাথা রেখে কতক্ষণ বসে রইল।
রূপায়ন, অনুপমা সকালের জল খাবার খেয়ে নিল। তারপর ওরা খাগড়াছড়ি জীপ (চান্দের গাড়ি) মালিক সমিতির অফিসে চলে গেল। রূপায়নকে বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হলো না। ভাগ্য সহায় ছিল। একটা ট্রাভেল গ্রুপের সাথে ওরা চান্দের গাড়িতে করে সাজেকের পথে রওনা হলো। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি উঁচুনিচু মেঠোপথ ধরে গাড়িটা সাঁইসাঁই করে ছুটছে। চারপাশে সবুজের সমারোহ। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে, আনন্দে অনুপমার চোখে জল এসে গেল। পাশে রূপায়ন, অনুপমার একহাত চেপে ধরে বসে আছে।
খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার।
সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিঘীনালা থেকে সকাল ১০ টা এবং বিকাল ৩ টায় শুরু হয়। ওরা দশটায় এসে সেনাবাহিনী ক্যাম্প পাড় হলো। চান্দের গাড়িতে প্রায় তিনঘণ্টা জার্নি করে অবশেষে ওরা এসে গন্তব্যে পৌঁছাল।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে প্রায় ১৮০০ ফিট উঁচু সাজেক ভ্রমণ এর কেন্দ্রস্থল। পাহাড়ের উচ্চতা থেকে আশেপাশের অন্যান্য পাহাড়, ঘন বান দ্বারা বেষ্টিত সবুজের সমারোহ, আকাশের মেঘের নিবিড় ভাবে ঘুরে বেড়ানো সবমিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সেরা একটি স্থান সাজেক ভ্যালি
রূপায়ন, অনুপমার একহাত মুঠো করে ধরল। অন্যহাতে ব্যাগপত্র নিয়ে মূল রাস্তায় কাঠের ব্রিজ পার হয়ে রুইলুই রিসোর্টের পথে হাঁটা ধরল। অনুপমা মুগ্ধ হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে। রূপায়ন মৃদু হেসে বলল,
-‘কেমন লাগছে?
অনুপমা বলল,
-‘সাংঘাতিক সুন্দর। একদম দুচোখ জুড়িয়ে যায়।
-‘কেবল তো শুরু।
রূপায়নরা যে রুমে উঠল। সেই রুমের তিনদিকে আলদা আলদা বারান্দা এবং কমন বারান্দা আছে। রুমের পিছনের ৩ সাইট বারান্দা থেকে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের দৃশ্য যতোদূর দৃষ্টি যায়, ততোদূর পর্যন্ত সারি সারি পাহাড় দেখা যায়।
কাঠ দিয়ে প্রতিটি রুমের ভিতরের সাজ-সজ্জা করা হয়েছে সুনিপুণ ও শৈল্পিকভাবে। রুমের ভেতর এটাচড বাথরুম আছে। এত সুন্দর.. এত সুন্দর! অনুপমা মুগ্ধ হয়ে চারপাশে ছুটাছুটি করছে। সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় ধুয়েমুছে গেছে। রূপায়ন আচমকা অনুপমাকে কোলে তুলে নিল। অনুপমা লজ্জা পেয়ে বলল,
-‘এই কী করছো.. ছাড়ো?
-‘ছাড়ার জন্য তো তোমায় ধরিনি!
অনুপমা কেঁপে উঠল। রূপায়নের কাঁধ জড়িয়ে ধরে, ফিসফিস করে বলল,
-‘তাহলে?
রূপায়ন, অনুপমার নাকে নাক ঘষে, চোখে চোখ রেখে গভীর ভাবে তাকাল। আবেগী কণ্ঠে বলল,
-‘সারাজীবন বুকের মাঝে, খুব যত্ন করে আগলে রাখার জন্য তোমায় আমি ধরে রাখতে চাই অনুপমা। তুমি আমার অতৃপ্ত পুরুষ সত্তাকে করেছো পরিপূর্ণ।
আরও কিছু বলার আগে অনুপমা আলতো করে রূপায়নের ঠোঁটে হাত রাখল। আবেশে বুঁজে আসা কোমল কণ্ঠে বলল,
-‘উফ..চুপ করো না!
রূপায়ন, অনুপমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিল। খুঁনসুটিতে মেতে রইল অনেকক্ষণ।
স্নান সেরে, খেয়েদেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিল দুজন।
একদম শেষ বিকালে ঘুম ভেঙে অনুপমা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। চারপাশের মনোরম পাহাড় ও তার সাথে সাদা তুলোর মতো মেঘের ভ্যালি দেখে অনুপমা অবাক বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। মুগ্ধতার রেশ সহজে কাটতে চায় না যেন।
যে কোন সময়ই সাজেক প্রকৃতির অপরূপ মায়ার রঙে রাঙিয়ে তোলে সকলকেই। রূপায়ন ঘুম ভেঙে অনুপমাকে পাশে পেল না। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পরল। বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে আলতো করে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে, কাঁধে চিবুক রাখল। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
-‘এটি এমনই এক আশ্চর্যময় স্থান। যেখানে একই সাথে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। কখনো অনুভূত হবে খুব গরম, কখনো ভিজে যাবে হঠাৎ করে আসা বৃষ্টিতে অথবা নিমেষের মধ্যেই তোমার চারপাশ ঢেকে যাবে সাজেক ভ্যালির ঘন মেঘের কুয়াশার চাদরে। চারিদিকে মেঘের তুলোর মতো উঁড়া, এখান থেকে ওখানে, পাহাড় থেকে পাহাড়ে, তোমার মনে শিহরণ জাগানো আনন্দ দেবে।
বলতে বলতেই সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ ওদের আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে গেল। প্রিয় মানুষটির শিহরণ জাগানো গরম নিঃশ্বাস ও ঝিরিঝিরি মেঘের উষ্ণতায় অনুপমা আবেশে বুঁদ হয়ে রইল। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। আবেগী কণ্ঠে বলল,
-‘এত সুখও আমার কপালে লেখা ছিল বুঝি?
রূপায়ন মৃদু হাসল। উত্তরে অনুপমাকে আরও একটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘স্বর্গসুখ কাকে বলে, আমি জানি না অনুপমা। তবে তুমি আমার জীবনে এসে, আমাকে, রংধনুর সাত রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার পর থেকে, আমার প্রত্যেকটা সেকেন্ড মনে হয়, আমি স্বর্গসুখে ভেসে বেড়াচ্ছি। তুমি আমার জীবনে আরও আগে এলে না কেন অনুপমা?
অনুপমা সেকথার উত্তর না দিয়ে, রূপায়নের বুকের মাঝে মাথা রেখে চুপটি করে বসে রইল। এই ছোট্ট জীবনে অনুপমাকে ভালোবেসে, প্রতিটা মুহূর্ত আগলে রাখার জন্য এই মানুষটাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রেখো ঠাকুর। বিকালের দিকে রূপায়ন গায়ে টিশার্ট জড়িয়ে বলল,
-‘চলো.?
-‘কোথায়?
-‘গেলেই দেখতে পাবে!
অনুপমা একটা লং জামা আর প্লাজো পরে, মাথায় উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধে নিল। সিঁথিতে সিঁদুর পরে, গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে নিল। রূপায়ন, অনুপমার কাঁধ চেপে ধরে, হাঁটতে হাঁটতে রিসোর্টের বাইরে এলো। উদ্দেশ্যে হ্যালিপেড যাবে।
অনুপমা দুইগালে হাত রেখে দেখল, সূর্যাস্তের রঙিন রূপ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। রূপায়ন, অনুপমাকে নিয়ে ফাঁকা জায়গায় চলে গেল। পাহাড়ের পথ ধরে, বেশ কিছুটা উপরে উঠে, টানটান হয়ে শুয়ে পরল। হাত ধরে অনুপমাকেও পাশে শুইয়ে দিল। দুজন, দুজনের মাথা ঠেকিয়ে, আড়াআড়ি ভাবে শুইয়ে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে দেখতে লাগল, সন্ধ্যার পরিষ্কার আকাশে অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাণ জুড়ানো কোটি কোটি তারা। সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে আর মিটিমিটি করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে একটি-দুটি থেকে সহস্র তারা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠল। অনুপমা আগে এরকম তারাভরা আকাশ জীবনেও দেখেনি।
রূপায়ন বলল,
-‘অনুপমা?
-‘হুম?
-‘আর একটু গভীরভাবে আকাশের দিকে তাকাও?
অনুপমা চোখ ডলে নিয়ে গভীর ভাবে আকাশপানে তাকিয়ে রইল। স্পষ্টভাবে দেখতে পেল মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ।
অনুপমা মুখে হাত চেপে ধরে অবাক বিস্ময়ে বলল,
-‘ওয়াও এত সুন্দর? এই ছায়াপথ সব সময় বইয়ের পাতায় দেখেছি। কী সৌভাগ্য আমার। আজ নিজে চোখে দেখলাম!
রূপায়ন হেসে দিল। মন ভাল করা হাসি।
গভীর রাত পর্যন্ত তারাভরা আকাশের নীচে, পাহাড়ের বুকে দুটিতে শুয়ে শুয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত উপভোগ করল।
রিসোর্টে ফিরে তৃপ্তি করে রাতের খাবার খেলো দুজন। কখনো অনুপমা, রূপায়নকে তুলে খাইয়ে দেয় তো কখনো রূপায়ন অনুপমাকে। মেন্যুতে ছিল, সাদা ভাত, আলুভাজি, মুরগির মাংস, সবজি।
ঘড়িতে এলার্ম বেজে উঠতেই রূপায়ন জেগে গেল। অনুপমার সারা কপালে লুটিয়ে পরা অবাধ্য এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে, ফিসফিস করে বলল,
-‘ওঠো লক্ষ্মীটি?
অনুপমা ঘুমঘুম চোখে মিটিমিটি করে তাকাল। রূপায়নের সুন্দর মুখখানি অনুপমার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই একটুখানি হাসল। ঘুমে বুঁজে আসা মায়াবী কণ্ঠে বলল,
-‘আর একটু ঘুমাব প্লিজ?
রূপায়ন জোর করে অনুপমাকে টেনে তুলল। একগাছি সিল্কি সুন্দর চুলগুলো খোঁপা দিয়ে বেঁধে, মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা তুলে দিল। তারপর হাতটা চেপে ধরে খুব ভোরে কোথায় যেন নিয়ে গেল।
চারিদিকে হালকা কুয়াশায় ঘন মেঘের মেলা। গতকাল সন্ধ্যায় যে জায়গায় অনুপমারা এসেছিল। ভোরে সেখানেই নিয়ে এলো রূপায়ন। রূপায়ন, অনুপমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে, কানের লতিতে মুখ ঠেকিয়ে বলল,
-‘পাহাড়ের বুকে তাঁকাও অনুপমা?
অনুপমা কেঁপে উঠল। নিঃশ্বাসে চঞ্চলতা। অনুপমা চোখ তুলে তাকাল। ধীরে ধীরে পাহাড়ের বুক বেয়ে বিশাল লাল রঙা সূর্যটা একটু একটু করে নীল আকাশের দিকে ছুটে যাচ্ছে। ঝিরিঝিরি সাদা সাদা মেঘ, দুজনকে বারংবার ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। রূপায়ন ঘড়ি দেখে, অনুপমার একহাত চেপে ধরল। নিয়ে গেল, সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়ে। ওরা চূড়ায় উঠতে উঠতে দেখতে পেল মিজোরাম সীমান্তের পাহাড় আর সবুজের মিতালি। অনুপমা কিছুদূর গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে পরল। হাঁটার অভ্যাস না থাকার কারণে, পা আর চলে না। রূপায়ন তাড়া দিল। রূপায়নের উৎসাহে অবশেষে, কংকাল পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সফল হলো অনুপমা। চারপাশে তাকিয়ে, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে, ভুলে গেল, কোনো যান্ত্রিক নগরে দূষিত বাতাস, শব্দ এবং কর্কট সমাজে জন্ম নেওয়া মানুষ। মন, প্রাণ, দেহ পুলকিত হলো এক বিশুদ্ধ চিন্তা এবং অনুভূতিতে। রূপায়ন কিছুটা পিছিয়ে গেল। দুহাত আড়াআড়ি ভাবে রেখে, চিৎকার করে বলল,
-‘ মাথার উপর ঝলমলে নীল আকাশ, পায়ের নীচে গাঢ় সবুজ রঙা পাহাড়, আকাশে ভেসে বেড়ানো ঝিরিঝিরি সাদা মেঘ সাক্ষী! আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি অনুপমা।
অনুপমার চোখের কোণে জল জমেছে। দৌঁড়ে গিয়ে রূপায়নের বুকের ভেতর ঝাঁপিয়ে পরল। বিড়বিড় করে বলল,
-‘ভালোবাসি।
রূপায়ন ছেড়ে দিয়ে, অনুপমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসল। অনুপমার বামহাত টেনে নিয়ে, ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দিল। তারপর হাতের উল্টো পিঠে গভীর চুমু এঁকে দিল।
(চলবে)