#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৫
#নাহিদা_ইসলাম
শুভ্রকে দেখে বাচ্চারা হাসছে। শুভ্র অহনাকে ছেড়ে পাশাপাশি দাড়িয়ে পেছন দিক দিয়ে ডান হাত দিয়ে ধরে বললো,
–এখন বলো।
অহনা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
–এমন করছেন কেনো। আমি কোথাও চলে যাবো নাকি।
–মা কেনো বললো তুমি বাসায় আর আসবে না।
— সেটা আপনার মা কে জিজ্ঞেস করেন তাহলে ই তো হয়। আমি তো আসার সময় উনাকে কিছু বলে আসি নাই। আপনারা ঘুমাচ্ছেন, তাই ডিস্টার্ব করিনি। আর আপনার বেড সাইট টেবিলে আমি একটা কাগজে লিখে এসেছিলাম। আমি বাহিরে বের হচ্ছে।
–আমি এসব খেয়াল করেনি অহনা। তুমি একা কোথাও যাবে না। আমি ঘুমাই বা কাজ করি আমাকে বলে তারপর বের হবে।
খাবার চলে এসেছে দেখে অহনা বিল দিয়ে খাবারগুলো এক সাইডে রাখে।
শুভ্র অহনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— এসব যে অর্ডার করেছো টাকা কোথা থেকে?
অহনা হেসে বললো,
–খাবারগুলো বাচ্চাদের দেই তারপর না হয় আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।
অহনা সব বাচ্চাদের খাবারের বক্সের সাথে পাঁচশত টাকা করে দিয়েছে। সবাইকে খাবার দেওয়া শেষে অহনা শুভ্রকে নিয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে যায়। গাড়িতে বসে শুভ্রকে বললো
— চলুন আমরা শপিং করে আসি
–টাকাগুলো কোথা থেকে পেয়েছো আমাকে বলবে না?
–আপনার কি ধারণা টাকা কোথা থেকে পাবো?
–উত্তর জানলে নিশ্চয়ই তোমাকে প্রশ্ন করতাম না অহনা।
–যদি আমাকে বিশ্বাস করেন তাহলে উত্তরের অপেক্ষায় থাকেন।আমি সময় মতো আপনাকে উত্তর দিবো
অহনা শপিং মলে ডুকে বাসার সবার জন্য শপিং করলো। শায়লা রহমানের জন্য শাড়ি মৌয়ের জন্য থ্রি পিস তিয়াস আর শুভ্রের জন্য হ্যান্ড ওয়াচ আর পারফিউম।
শপিং শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে নেমে রাস্তায় যত ভিক্ষুক দেখেছে সবাইকে টাকা দিয়েছে। শুভ্র অহনার এমন কান্ড দেখে অবাক। এই মেয়ে সবাইকে দেওয়ার মত এতো টাকা কোথায় পেলো।
বাসায় ডুকে ই সবাইকে ডেকে এনে তাদের গিফট গুলো বুঝিয়ে দিলো।
শায়লা রহমান অহনার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেলো,
–আমার টাকা দিয়ে আমাকে ই গিফট কিনছো?
–আপনার টাকা? কে বললো।
–নয়তো তুমি এতো টাকা পেলে কোথায়? আর তোমার না চলে যাওয়ার কথা ছিলো তুমি এখনও যাওনি কেনো? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো। কি কারণে আবার ফিরে আসলে।
–আপনার ভাবনা আর আমার ভাবনা এক না বলে…
শুভ্র অহনাকে ডাকছে। শুভ্র ডাক শুনতে পেয়ে অহনা হেসে বললো,
—শাশুড়ী মা আপনার ছেলে ডাকছে আমি যাচ্ছি
বলে ই উপরে চলে গেলো।
শুভ্র শার্ট খুলে রাখতে ই শুভ্রের কল আসে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রুমে পায়চারি করছে। অহনা রুমে ডুকে ই শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। ওপাশ থেকে বার বার হ্যালো হ্যালো করলে ও শুভ্র কোনো কথার ই উত্তর দিচ্ছে না। শুভ্র বেডে মোবাইল ফেলে দিয়ে অহনাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখন ই অহনা শুভ্রেকে ছেড়ে দিয়ে শুভ্রের থেকে দূরে চলে যায়। শুভ্র অহনাকে বার বার ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে অবশেষে বিছানর চাদরের সাথে পা প্যাচ লেগে অহনা বিছানায় পড়ে যায়। এবার শুভ্র অহনার উপরে শুয়ে অহনার দুহাত শুভ্র তার বাম হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,
–কথা বলতে দিলে না কেনো?
অহনা হেসে বললো,
–ইচ্ছে হয়েছে তাই।
–এখন আমারও অনেক কিছু ইচ্ছে করছে?
–চিৎকার করবো কিন্তু
শুভ্র হেসে অহনার দুহাত ছেড়ে অহনার উপর শুয়ে পড়ে।
–অহনা আমি অনেক ক্লান্ত। নড়াচড়া করো না এভাবে থাকতে দেও প্লিজ।
★★★★
শায়লা রহমানকে গতকাল শুভ্র সরাসরি না করে দিয়েছে। অহনা আর শায়লা রহমানের সাথে থাকবে না। গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তার পর আর অহনাকে নিজের থেকে দূরে রাখবে না। শায়লা রহমান ছেলের কথা উপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি।
সকাল দশটা, তিয়াস তমাকে নিয়ে এসেছে বিয়ে করার জন্য। সবাই চুপচাপ বসে আছে। তিয়াসের এমন কান্ডে শায়লা জ্ঞান হারিয়েছে তাই আপাতত রুমে শুয়ে আছি। অহনা তমাকে নিয়ে বললো,
–আমার সাথে চল শুভ্র এখন তোকে বাসায় নিয়ে যাবে।
তমা তিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে। তিয়াস সোফা থেকে উঠে বললো,
–ভাবি আমি তমাকে ভালোবাসি এবং বিয়ে করতে চাই। আশা করি আপনি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবেন।
অহনা তিয়াসের দিকে তাকিয়ে বললো,
–ভাই তোমাকে সাহায্য করার মতো ক্ষমতা আমার নাই। আমি আমার চাচা চাচি এবং আমার শ্বাশুড়ি মাকে ভালোভাবে চিনি। এই বিয়ে না হওয়া ই শ্রেয়। তবে যেহেতু ভালোবাসে ফেলেছো তাই আমি দ্বিমত পোষণ করছি না তবে তোমাদের বাবা মাকে রাজি করাতে হবে।
অহনা তমার হাত ছেড় দিয়ে শুভ্রের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললো,
–এই বিয়ের জন্য আমার আমার কথা শুনতে হবে। যদি তমা আমার নিজের আপন বোন হতো তাহলে এতোক্ষণে আমি কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় মারতাম। মা তো আমাকে ই মেনে নিতে পারে নাই। তমাকে কিভাবে মানবে।
শুভ্র অহনার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
–ভরসা রাখো আমার উপর একদিন সব সুখ তোমার পায়ের নিচে এনে দিবো। যা সমস্যা হবে দুজন মিলে সমাধান করার চেষ্টা করবো।
তমাকে তিয়াস নিয়ে এসেছে শুনে রাসু বেগম আর রমজান মিয়া দ্রুত অহনার শ্বশুর বাড়ি আসে। তাদের আসার কথা শুনে শায়লা শুয়া থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে উনাদের সামনে বসে,
–বড়লোক ছেলে দেখে কি লোভ সামলাতে পারেন নাই?
কথাটা শুনে অহনার চাচার চোখে পানি চলে আসে। চোখের পানি লুকিয়ে বললো,
–আপা ভুল তো আর আমার মেয়ে একা করেনি আপনার ছেলেও করেছে।
শায়লা আটকে দিয়ে বললো,
–আমার ছেলের সাথে আপনার মেয়ের তুলনা দিচ্ছেন ই বা কি করে। একজন তো দিয়ে উদ্ধার হয়েছেন। এখন আরেকজন ও আমার উপর চাপাতে চাচ্ছেন?
–আমার মেয়ে একা আসেনি আপনার ছেলে গিয়ে নিয়ে এসেছে।
–আমার ছেলে আনতে ই পারে কিন্তু আপনার মেয়ে আসবে কেনো?
–ছেলেদের ক্ষেত্রে সব দোষ মাফ। তাদের সব অপরাধ ক্ষমাযোগ্য কিন্তু মেয়েদের কোনো দোষ ক্ষমা যোগ্য নয়।
শায়লা এবার রেগে গিয়ে বললো,
–দয়া করে আপনার মেয়েদের নিয়ে যায়।
রমজান মিয়া উঠে গিশে তমাকে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। অহনাকে গিয়ে থামিয়ে তমাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
তিয়াস নিজের মায়ের রুমে গিয়ে নিজের মায়ের সামনে দাড়ায়। মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
–আমার আমার সুখ চাই নাকি টাকা চাই?
ছেলের এমন প্রশ্নে শায়লা একটুও অবাক হয়নি তার উত্তর দিতে দেরি করলো না,
— আমার দুটোই চাই। এমন ফ্যামিলিকে কিভাবে তোর রুচিতে ধরলো তিয়াস?
অহনা তমাকে প্রশ্ন করলো,
–এসব করার আগে পরিণতি কেমন হবে একবারও ভাবলি না।
তমা কান্নারত অবস্থায় বললো,
–কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে আব্বা আর বাড়িতে জায়গা দিবে না। তিয়াসও মনে হচ্ছে তার মায়ের কথাকে ই প্রধান্য দিবে। আমার কি হবে রে অহনা।
অহনা তমার চোখ মুছে দিয়ে বললো,
–কান্না করিস না দেখা যাক কি হয়।
হঠাৎ রাসু বেগম রুমে ডুকে অহনার পায়ে পড়ে। অহনা পা সরিয়ে বললো,
–কি করছেন আপনি? দূরে সরুন।
–অহনা মারে আমাকে ক্ষমা করে দে। তুই ই একমাত্র ভরসা শুভ্রকে বল তার মাকে রাজি করাতে। আমি তোর পায়ে পড়ি আমার মেয়ের জীবন টা শেষ হয়ে যাচ্ছে তুই কিছু কর।
–চাচি আমাকে যেদিন বাড়ির ভেতরে ডুকতে দেননি আমি ও তো এভাবে কেঁদেছিলাম তখন কি আমার কথা শুনেছিলেন?
চলবে
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]