#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_১৬
#নাহিদা_ইসলাম
আমি তোর পায়ে পড়ি আমার মেয়ের জীবন টা শেষ হয়ে যাচ্ছে তুই কিছু কর।
–চাচি আমাকে যেদিন বাড়ির ভেতরে ডুকতে দেননি আমি ও তো এভাবে কেঁদেছিলাম তখন কি আমার কথা শুনেছিলেন?
রাসু বেগম এবার রেগে বললো,
–আমি কি তোকে লালন পালন করিনি খাওয়ায়ইনি? আজ আমার বিপদে তুই আমাকে ফিরিয়ে দিবি?
–ফিরিয়ে দিবো না চাচি আপনার জন্য না আমার বোনের জন্য আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
অহনা শুভ্রকে ডেকে তার মায়ের সাথে কথা বলতে বললো। শুভ্র শায়লা রহমানের রুমে যেতে ই দেখলো তিয়াস তার মায়ের সাথে কথা বলছে। শুভ্রকে দেখে তিয়াস যেনো মনে একটু শান্তি পেলো। দুই ভাই মিলে তার মায়ের সাথে কথা বলে মাকে অনেক বুঝালো। শায়লা বেগম দুই ছেলেকে বললো,
–আমি আগে তমার সাথে কথা বলতে চাই তারপর বিয়ে হবে।
শুভ্র তিয়াস উপরে গিয়ে তমাকে শায়লা রহমানের রুমে পাঠালো। তমা রুমে আসতে ই তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে শায়লা,
–তমা বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি দেখে লোভ লেগে গিয়েছিলো তাই না?
তমা শুধু তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না। তমার নিরবতা দেখে শায়লা বললো,
–তোমাকে মেনে নিবো একটা শর্তে,যদি শর্তটা মানতে পারো তাহলে তুমি তিয়াসের বউ হতে পারবে।
তমা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি শর্ত?
–আমার সব কথা শুনতে হবে। আমি যা বলবো ঐটা তোমার ভালো না লাগলে ও করতে হবে।
তমা কথা বাড়ালো না রাজি হয়ে গেলো।
শালয়া তমাকে তার রুমে রেখে ই বাসার সবাইকে ডেকে আনলো। এবং কাজীকে ডেকে আনতে বললো। তমা খুশি হয়ে অহনাকে জড়িয়ে ধরলো। রাসু বেগম এসে মেয়েকে বুকে টেনে নিলো।
কাজী আসতে ই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলো। অহনার খুব করে মনে পড়ছে তার বিয়ের কথা। শুভ্র পাশে দাড়িয়ে আস্তে করে অহনাকে বলবে,
–তোমার কি ওদের বিয়ে দেখে আবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে না।
অহনা আনমনে উত্তর দিলো,
–আপনি কি করে বুঝলেন।
–আমি সব বুঝে তোমার চোখের দিকে তাকালে তোমার ভেতরে কি চলছে তা বলে দেওয়ার ক্ষমতা আমি রাখি।
বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর তমার বাবা মা চলে যায়। অহনা তমাকে তিয়াসের রুমে রেখে আসে।
সবাই যার যার রুমে চলে যাওয়া পর শুভ্র রুমে গিয়ে দেখে অহনা বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে। অহনাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক ক্লান্ত দুচোখ বন্ধ করে আছে। শুভ্র গিয়ে অহনার পাশে শুয়ে পড়ে ডান হাত দিয়ে অহনাকে জড়িয়ে ধরে অহনার মুখের উপরে নিজের মুখ রেখে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে আছে।
–কোথায় চলে গেলেন। কথা বলছেন না কেনো?
শুভ্র অহনার কাপলে, গালে পুরো মুখে অনেকগুলো চুমু খায়।
অহনা বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে রেগে বললো,
–কি হচ্ছে এসব?
অহনার কানের কাছে গিয়ে বললো,
–যা দেখছো তাই।
কথাটা বলে ই অহনার চুলগুলো সরিয়ে গলায় আস্তে করে কামড় দেয়।
অহনা বেশ নাড়াচাড়া করছে দেখে শুভ্র বললো,
–রোমান্সের সময় এতো ডিস্টার্ব করো কেনো তুমি। চুপ করে শুয়ে থাকো।
__অসভ্য একটা।
–এভাবে না বলে বলবা অহনার অসভ্য।
অহনা শুভ্র কে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে শুভ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
–তুমি চাইলে ই আমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবে না। তখন ই পারবে যখন আমি নিজে তোমাকে ছেড়ে দিবো।
–তাহলে এখন আপনি আমাকে ছেড়ে দিন।
–আমার ছোট ভাই আমার পরে বিয়ে করে ও বাসর করছে আর আমার বউ আমাকে ছাড়তে বলছে। আজকে ছাড়ছি না।
______________________
জিনিয়া একা হয়ে গিয়েছে। কালকে অনেক কান্না করেছে সারাজীবন দুজন একসাথে ছিলো। তমা যে তিয়াসকে ভালোবাসে তা বুঝতে ই পারেনি জিনিয়া। জিনিয়া তমাকে বলেছিলো ও সে তিয়াসকে পছন্দ করে। সেদিন জিনিয়ার কথা শুনে তমা মন খারাপ করে ছিলো কিন্তু মুখফুটে কিছু বলেনি। এখন বুঝতে পারছে কেনো সেদিন তার কথা শোনার পর রিয়াকশন এমন ছিলো।
তমা সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানায়। তিয়াস শায়লা রহমান তমা এক সাথে বসে নাস্তা করে। কিন্তু শুভ্র অহনা এখনও নিচে নামেনি।
ঘড়িতে ঠিক দশটা বাজে, অহনা এখনও ঘুমাচ্ছে। শুভ্র ঘুম থেকে উঠে অহনার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। জানালার পর্দা ভেদ করে সূর্যের আলো মুখে উপর এসে পড়তে ই অহনা মিটমিট করে তাকাচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে ই দেখলো শুভ্র হাসছে,
–তোমার দেখে এতো কেনো মায়া হয় জান। অন্য কাউকে দেখলে তো এমন মায়া হয় না।
অহনার কপালে চুমু খেয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
–কয়টা বাজে?
শুভ্র উত্তর দিলো,
–পাঁচটা
–পাঁচটা বাজে রোদ উঠে? মিথ্যে বলছেন কেনো?
–সত্যি বললে তো তুমি এখন উঠে যাবে। আর তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা হবে না।
অহনা ফোন খুজে বের করে দেখলো দশটার উপড়ে বাজে সে দ্রুত উঠলো। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে কেউ নাই। তাই রহিমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
–কেউ উঠেনি?
–সবাই নাস্তা করে নিজেদের রুমে চলে গেছে।
–ওহ আচ্ছা।
অহনা টেবিলে গিয়ে দেখলো কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতে ই রহিমা বললো,
–আজকে ছোটবউ নাস্তা তৈরি করেছে আমি তো করিনি। আমাকে নাস্তা দিয়েছে আমি তো বাসার বাহিরে সকাল থেকে পরিষ্কার করছি জানি না তো।
তমা নাস্তা বানিয়েছে শুনে অহনা আর কিছু বলেনি। হয়তো পরিমাণ করতে পারেনি তাই খাবার শেষ হয়ে গেছে।
অহনা উপরে গিয়ে শুভ্রকে দিয়ে খাবার অর্ডার করে নাস্তা করে নিলো।
তমা রাসু বেগমকে কল দিতে ই জিজ্ঞেস করলো,
–কি রে কেমন আছিস ভালোই থাকবি জানি যে বাড়িতে বিয়ে হয়েছে খারাপ হওয়ার কথা ই না।
–হুম ভালো আছি।
–কি রে মা কাজ করতে হয় তোর?
–হুম সকালে উঠে নাস্তা বানিয়েছি।
কথাটা শুনে রাসু বেগম রেগে বললো,
–অহনাকে কি করে? ও থাকতে তুই কাজ করবি কেন। শুন ভালো করে তুই কোনো কাজ করবি না। সব ওরে দিয়ে করাবি। আমার মেয়ে কাজ করতে পারবে না।
–এসব কথা বাদ দাও এখন।জিনিয়া কোথায় মা তাকে একটু দেও কথা বলি।
রাসু বেগম জিনিয়ার সামনে মোবাইল নিতে ই জিজ্ঞেস করলো কে তমার নাম শুনে হাতে মোবাইলটা নিয়ে কল কেটে দেয়।
তমা বুঝতে পারলো জিনিয়া তার সাথে রাগ করেছে কথা বলতে চায় না। তিয়াস তমার মন খারাপ দেখে তমার পাশে এসে বসে বললো,
–কি হয়েছে আমাকে বলা যাবে।
–জিনিয়া কথা বলছে না আমার সাথে রাগ করেছে।
তিয়াস হেসে বললো এইজন্য মন খারাপ করতে হবে না। তোমাকে তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবো সময় করে যখন দুবোন একসাথে হবে তখন আর কেউই রাগ করে থাকতে পারবে না।
সন্ধ্যায় লামিয়া আর তার মা হামিদা বেগম শুভ্রদের বাসায় এসেছে। হামিদা বেগম তিয়াসের বউ দেখতে আসলে ও লামিয়া এসেছে শুভ্রকে দেখতে। তারা সোফায় বসতে ই তমা দ্রুত এসে হামিদা বেগমকে সালাম করে। লামিয়ার সাথে ও কথা বলে। শুভ্র অহনা ও এসে তাদের সাথে বসে। মৌ তিয়াস আগে থেকে ই বসা ছিলো। শায়লা রহমান গিয়ে হামিদার পাশে বসে। সবাই গল্প করছিলো হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। অন্ধকারের মধ্যে কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুভ্র অহনাকে চুমু খেতে যায় ঠিক সেই সময় কারেন্ট চলে আসে……..
চলবে
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]