#সাইকো বস
#নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৬
-না মামিমা আমি ঐখানে ই যাবো।
কারো কোনো কথা না শোনে ই বেরিয়ে পড়লো নাবিলা বাগান বাড়ির উদ্দেশ্য। টাইমে লাগে নাই বেশি বাগান বাড়িতে পৌঁছে যায় নাবিলা।
দ্রুত পায়ে হাটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করার জন্য মেইন গেইট খুলা ই ছিলো। সরাসরি ডুকে যায়। এদিক ওদিক খুজে নিস্তব্ধতার মাঝে হাসির শব্দ শোনতে পায়। শব্দের উৎপত্তি খুজতে ই পেয়ে গেলো শুভ্রকে কিন্তু সাথে যে অহনাকে এমন অবস্থা দেখবে তা মনে হয় নাবিলা স্বপ্নে কল্পনা করতে পারেনি।
শুভ্র অহনার উপরে শুয়ে আছে মাথাটা উঁচু করে এক ধ্যান এ তাকিয়ে আছে অহনার দিকে, শুভ্র এমন পাগলামি দেখে অহনা বাচ্চাদের মতো হাসতেছে। সেই শব্দ ই নাবিলার কানে পৌঁছায়।
দুজনকে এভাবে দেখে নাবিলার গায়ে মনে হচ্ছে আগুন জ্বালিছে কেউ। এভাবে দেখতে না পেরে হঠাৎ ই শুভ্র বলে ডাক দেয়।
হঠাৎ করে এভাবে ডাক দেওয়াতে অহনা ভয় পেয়ে যায়। শুভ্র ও এমন অবস্থার জন্য অপ্রস্তুত ছিলো।
শুভ্র উঠে অহনাকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয়।
—আরে জান পাখি তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো।আমি আছি তো।
—এই মেয়েটা কে। এমন ভাবে নক না করে কেউ কী ভেতরে আসে।
— নাবিলা তুই হঠাৎ এখানে আসলি কেনো।
— তোকে খুজতে আসছিলাম, কিন্তু এমন কিছু দেখবো ভাবি নাই।
অহনা ভালো করে ই বুঝতে পারতেছে নাবিলে সেই পরিমান জ্বলতেছে ওদের কে এভাবে দেখে। কিন্তু তার মনে প্রশ্ন এটা কে আর ওদের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ই আছে কেনো। এর মধ্যে শুভ্র বলে উঠলো,
—নাবিলা বাসায় যা। তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি।
— না যাবো না আমি কী করছিস তুই এই মেয়েটার সাথে।
— এই মেয়ে কী অহনা আমার বিবাহিত স্ত্রী। পরের বার ভাবি বলে ডাকবি। যা এখন থেকে তোর ছায়া ও আমার সহ্য হয় না ঐদিনে পর থেকে।
নাবিলা রাগ করে চলে গেলো।
—অহনা তুমি বসো আমি মেইন গেইট লক করে আসি।
— না আমি বাসা থেকে বলে আসিনি। বাসায় দিয়ে আসেন আমাকে।
—একটু আগে ই তো আসলা। যেতে হবে না আজকে। আর একটু থাকো না।
— অন্য দিন আবার আজকে দিয়ে আসেন।
রাসেল গাড়ি চালাচ্ছে অহনা আর শুভ্র পিছনে বসে আছে। শুভ্র বার বার অহানর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছে, আর অহনা বার বা হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে তাই শুভ্র অহনার হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। কপালে কপলা ঠেকিয়ে বললো
—এখন কী করবা।
—মানুষ আছে সামনে দেখবে, সরে বসুন।
–আজব তো তুমি আমার বিয়ে করা বউ রাসেল এটা জানে। এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে।
শুভ্র আস্তে আস্তে অহনার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ই গাড়ির ব্রেক করলো।টাল সামলাতে না পেরে দুজনে ই সরে যায়।
— এই রাসেল তুই কীরে গাড়ি চালাতে পারিস না ভালো করে।
— বস চলে আসছি তো।
শুভ্র এমন অবস্থা দেখে অহনা হাসতে হাসতে শেষ। অহনা গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছে তার আগে ই শুভ্র হাত ধরে ফেলে। অহনা মুচকি হাসি দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে চলে যায়।
বাসার ডুকার সাথে সাথেই অহনার আম্মু বলতে শুরু করলো
— অনেক বড় হয়ে গেছো দেখছি। এখন আর অনুমতি নেওয়ার ও প্রয়োজন পরে না।
—আসলে আম্মু মনে ছিলো না দ্রুত চলে গেছিলাম তো।
— কয়েকদিন পর দেখা যাবে তুমি আমাকে ও ভুলে যাবে।
— আম্মু তুমি আমার সাথে তুমি করে কথা বলছো কেনো। কী এমন ভুল করলাম যে এমন ব্যবহার করছো।
— আহ্ কী হচ্ছে টা কী কাকিমা তুমি এমন করছো কেনো থাক না অহনার ভুল হয়ে গেছে। যা তো অহনা রুমে যা।
আমি চলে আসলাম রুমে, আম্মু এমন ব্যবহারের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিলাম হঠাৎ দেখলাম নাবিলা আমার রুমে প্রবেশ করলো। নাবিলাকে দেখে তো থ হয়ে গেলাম। সাথে সাথে আম্মু আর রনি ভাইয়া ও প্রবেশ করলো।
—কী হলো আপনি এখানে কেনো।
—বোন তুমি ই পারে আমাকে বাঁচাতে।
—আপনি তো বেচে ই আছেন।
–আসলে আমার আর শুভ্রর অনেক দিনের সম্পর্ক। আমি লন্ডন যাওয়া পর শুভ্র আমার সাথে রাগ করে তোমাকে বিয়ে করে ফেলেছে।
—কী বলছেন কী এসব আপনি।
— অহনা তুমি আমাকে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কেনো মিথ্যা বলতে যাবো।
এসব শোনে আম্মু বলতে শুরু করলো,
—মাকে তো একবার ও জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। এখন দেখ কী হয়। সবাইকে এতো আপন করে না নিলে ও পারিস।
—আন্টি আপনারা ই পারেন আমার জীবন বাঁচাতে। শুভ্র কে না পেলে আমি কিছু একটা করে বসবো। আমি শুভ্র কে অনেক ভালোবাসি।
এসব কথা শোনে মনে হয় আমি পাথর হয়ে গেছি কী বলে এসব। আমি যে শুভ্রকে চিনি সে কখনো এরকম হতে পারে না। আমার চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।
রনি ভাইয়া এগিয়ে আসলো হয়তো আমার চোখের জল সহ্য হচ্ছে না।
— আরে পাগলি কান্না করছিস কেনো। কিছু হয়নি। উনাকে তুই চিনিস।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নাবিলা আবার বলতে শুরু করলো,
— আমি শুভ্র ফুফাতো বোন। আমাদের সম্পর্ক অনেক দিনের আমি আশা করবো আপনার আমার কথা বুঝবেন। আপনার এখান থেকে চলে যান। যত টাকা লাগবে আমি আপনাদের দিয়ে দিবো।
এবার আমি মুখ খুললাম,
—মুখ সামলে কথা বলুন মিস নাবিলা। আপনার টাকা আর আপনার স্বামী আপনার কাছে রাখবেন। চলে যান এখান থেকে আপনাদের মধ্যে এই অহনা কখনো বাঁধা হয়ে দাড়াবে না।
নাবিলা একমুহূর্ত ও না দাড়িয়ে চলে যায়। সাথে সাথে আম্মু বলতে শুরু করলো,
— দেখলি তো ছেলেরা এমন ই, এখন কী আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো, মানুষ আমাকে কী বলবে।
—আম্মু চুপ করো, সব ছেলেকে এক মনে করো না। যা হইছে আমার হয়েছে চুপ। আমি বুঝি নাই। আমাকে একা থাকতে দেও।
— কাকিমা আপনি চলে যান আমি অহনার সাথে কথা বলছি।
এটা শোনে আম্মু চলে গেলো, আমি চুপ করে আছি কী হয়ে গেলো আমার সাথে। আমি ভুল করে ফেললাম অনেক বড়। শুভ্র কীভাবে পারলো আমার সাথে এমনটা করতে। ভালোবাস ছিলাম আমি।
আমাকে এমন চুপ থাকতে দেখে রনি ভাইয়া বলে উঠলো,
— আমার ছোট্ট পরীটকে কষ্ট পেতে দেখলে আমার একটু ও ভালো লাগে না। অহনা শোন তুই একবার শুভ্রর সাথে কথা বলে দেখ তো। সবাইকে বিশ্বাস কর উচিত নয়।
—আমি কারো সাথে কথা বলতে চাইনা।
—রাগ করে থাকলে কোনো কিছুর সমাধান হয় না। ঠান্ডা মাথায় কথা বল শুভ্র সাথে।
রনি ভাইয়া আরো অনেক কিছু বললো, কিন্তু কোনো কথা ই আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাছে না। নাবিলার বলা কথাগুলো বার বার কানে বাজতেছে।
এভাবে কেটে গেলো ঐ দিনের রাত,
শুভ্র বার কয়েক কল দিয়েচে রিসিভ করি নাই। সহ্য হচ্ছে না আমার শুভ্র এসব।
রেডি হচ্ছি অফিসে যাওয়ার জন্য আম্মু এসে জিজ্ঞেস করলো
–কীরে কোথায় যাবি।
—অফিসে,
–কেনো, তুই বাসা থেকে কোথাও যাবি না।
— আম্মু আমি উনাদের সাথে চুক্তি বদ্ধ। যেতে তো হবে ই।
— কী বলছিস এসব, মাথা ঠিক আছে তোর।
—সব ঠিক আছে তোমাকে কথাটা বলি নাই আম্মু। উনারা এই জবটা আমাকে এমনি এমনি দেয় নাই চুক্তি বদ্ধ হয়েছি তাই দিয়েছে।
আর কথা না বাড়িয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
অফিসে যাওয়ার পর,
শুভ্র আমার সামনে দাড়িয়ে আছে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
— কতগুলো কল দিয়েছি। কোথায় ছিলে। টেনশন হয় আমার বুঝ তুমি।
—- আমাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু না মি.শুভ্র। কাজ থাকলে আমাকে দেন করে দেই।
রাগিয়ো না আমায় এই বলে দুই বাহুতে চেপে ধরে আমি জোরে হাত ছিয়ে নেই। এতে শুভ্র বেশ অবাক হয়।
—নাবিলার সাথে গিয়ে এসব করবেন। আমাকে আর ছুয়ার চেষ্টা করবেন না।
চলবে