#সূখতারার_খোজে
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ২৩ [প্রথম খন্ডের সমাপ্তি]
-আ..আপনি জানেন??
অভ্র আর কবিতার মাঝে রয়েসয়ে দাড়ালো অর্নব।কবিতার আধখাওয়া প্রশ্নে অর্নব ফোকলা হেসে বেশ জমিয়ে দাড়ালো। বললো,
-অর্নব চৌধুরীকে খাটাস বলেছিলেন না আপনি? মিস কবিতা আপনি যে একজন বিবাহিত আমি জানি। এটাও জানি আপনাদের ডিভোর্স হয়েছে। কার সাথে হয়েছে এটাও জানি। অভ্র। এর’ই সাথে তো বিয়ে হয়েছিলো আপনার তাইনা?
কবিতা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। অর্নব অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
-এটা কি জানেন মিস কবিতা? আপনার প্রক্তন স্বামীর হাতে খুবই কম সময় আছে? জানিনা কোন আনন্দে এখানে ছুটে এসেছে।
কবিতা ভ্রুযুগল কুঁচকে তাকালো অর্নবের দিকে। বললো,
-এর মানে?
-মানে হলো আপনার বান্ধবী তারা’কে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো জানেন নিশ্চই?
কবিতা হুম বললো। অর্নব ফের বলতে আরম্ভ করলো,
-বারোই অক্টোবর রাতে তারাকে আর কেউ নয় এই অভ্রই কিডন্যাপ করেছিলো। চেয়েছিলো বিয়ে করবে! কিন্তু তার আগেই সেখানে পৌছায় সায়ন। কোনমতে প্রানহাতে পালায় এই লোক। শুধু মেয়েটার বদনাম করবে বলেই ছবিটা তুলেছিলো। ভাবতেই গা রি রি করে ওঠে।
কবিতার মাথায় যেন বাজ পড়লো তৎক্ষনাৎ! তারার কিডন্যাপার অভ্র? এতটা অমানুষ উনি?কবিতা ঘৃনা নিক্ষেপ করলো অভ্রের প্রতি। অভ্র হঠাৎ অর্নবের কলার খামচে নিলো। দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
-ইউ রাস্কেল।
-কলারটা ছাড় অভ্র।
সায়নের গলায় অভ্র থেমে গেলো। কলার ছেড়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে ফুসতে লাগলো অভ্র। সায়ন অভ্রের সম্মুখে গিয়ে বললেন,
-আরও কি করার আছে তোর অভ্র? আমি তো ভেবেছিলাম তুই পালাবি অভ্র। পাতাল খুঁড়ে তোকে বের করতে হবে। কিন্তু তুই তো দেখি বেশ সেজেগুজে হাজির হয়েছিস। আর তুই যে এমন খারাপ বিহেভিয়ার করছিস অর্নবের সাথে,তুই জানিস আমি চাইলেই কিন্তু তোকে এক্ষুনি পুলিশে দিতে পারি?যথেষ্ট প্রুভ আছে আমার কাছে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, তুই কি সাইকো অভ্র? তোর মানুষিক সমস্যা আছে তাইনা?
অভ্র গুম উন্মাদ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ইতিমধ্যে কপালে ঘাম অভ্রের। সায়ন ফের বললো,
-আমি চাইছিনা আজকের এই পার্টিটা নষ্ট হোক। তাই তোকে বলছি অভ্র। আজকে কোন সিনক্রিয়েট করিস না।
কবিতা ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলো। চোখে নোনাজল জমছে। বুক ছাড়খাড় হয়ে আসছে। গলায় দলা পাকিয়ে আসছে। অশ্রুতে টলোমলো চোখে একবার তাকালো অভ্রের পানে কবিতা। পাগল! উন্মাদ দাড়িয়ে সম্মুখে। মুহুর্তে ঘৃনার মুখ ফিরিয়ে নিলো কবিতা। দাড়াতে কষ্ট হচ্ছে কবিতার। সেখান থেকে ছুটে চলে গেলো কবিতা। সিঁড়িছুটে ছাঁদে গ্রিল আঁকড়ে দাড়িয়ে রইলো কবিতা।
______
-আধঘন্টা ধরে আপনাকে দেখছিলাম! কি করছেন এখানে?
কারো ডাকে চোখের পানি ঝটপট মুছে নিলো কবিতা। পিছু ফিরতেই কোলে গাত গুজে অর্নবকে দেখতে পেলো সে। অর্নব অপলক চোখে তাকিয়ে তার দিকে। কবিতা নাক টেনে বললো,
-আপনি?
হাত ছেড়ে ক্ষুদ্র শ্বাস ছাড়লো অর্নব। এগিয়ে এসে কবিতার পাশে গ্রিলে হাত রাখলো। সূদুর আকাশে তাকিয়ে বললো,
-রাতে ছাদে এসেছেন? ভুতে ধরবে।
কবিতা ফিক করে হাসলো। তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ বাধ ভাঙছে। আবারো আসা পানি মুছে হেসে বললো কবিতা,
-সেটার’ই বাকি এখন।
-মানে?
কবিতার চোখ চকচক করে ওঠে। বললো,
-অনেককিছু।
-আমার কথাই আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তো?
কবিতাও গ্রিলে ঠেস দিয়ে দাড়ালো। রাতের হালকা স্নিগ্ধ হওয়ায় দুলছে কবিতার চুলগুলো। বেবি হেয়ারগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে। অর্নব সেভাবেই বললো,
-নীহারিকা পাখি চেনেন মিস কবিতা?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে তাজ্জব চোখে তাকিয়ে রইলো কবিতা। বললো,
-চিনি। কিন্তু..
-নিচে সায়ন,আর আপনার বান্ধবী কত মজা করছে। সাথে তনয়া,সাবিহা কত মজা করছে। আপনি এখানে কি করছেন মিস কবিতা?
-ভালো লাগছিলো না। তাই..
অর্নব এবারে তাকালো কবিতার দিকে। নাকের ডগায় শিশির বিন্দু কবিতার। যথাসম্ভব সেটা চোখের পানি। অর্নব হাত ইসারা করে দেখাতেই পানিটুকু মুছে আবারো নাক টেনে তাকালো কবিতা। কিছুক্ষন কাটলো নিরবতা। হঠাৎ কবিতা জোরে বলে উঠলো,
-আপনি তখন যেগুলো আমার সম্পর্কে বললেন সেগুলো জানলেন কিভাবে?
-অর্নব চৌধুরীকে কেউ গালি দিলো আর সেটা অর্নব স্পেয়ার করবে? সায়নকে বলতেই সায়ন সব বলে দিলো। সত্যিই আকাশে মেঘ জমছে!আ’ম সরি মিস কবিতা। না জেনে কত কি বলেছি। আ’ম রিয়েলি সরি।
বলেই অর্নব হনহন করে চলে গেলো। কবিতা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো। সরি? মেঘ জমছে আকাশে মানে?আর নীহারিকা পাখিই বা মানে কি? আর রিয়েলি সরি? তালগোল পাকাচ্ছে সবকিছু!
____
রাত প্রায় সাড়ে চারটে। কালকের অনুষ্ঠান শেষ! সকলে চলে গেছে। রয়েছে তনয়া,তূর,ইলিমা। এখতেয়ার চলে গেছেন সে রাতেই। একলা বাড়ি ফেলে থাকা উচিত মনে করেননি এখতেয়ার। রয়েছে তইমুর সমেত তার ফ্যামিলি। অর্নবকে অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনি কেউ। বরাবরই অর্নব এমন। পুরো বাড়ির মানুষ গভির নিদ্রায় আচ্ছন্ন। কেউ জেগে নেই। দোতলার পূর্বের কোনার বড় কাঠের দরজার খানিক শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো তারার। উদুম করে উঠে বসলো। যেন বড্ড খারাপ সপ্ন দেখলো তারা। শহরেও শেয়ালের হাঁক শোনা যায়! কিভাবে? তারা সবুজ ডিমলাইটের আলোয়, জগ ভর্তি পানি থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ডগডগ করে খেয়ে নিলো। বুক থমথম করছে। অন্যান্য রাতের তুলনায় আজকে তারাকে বেশ অদ্ভুত লাগছে। আবারো শুয়ে পড়লো তারা। অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ঘুম আসছে না। এদিকে সায়ন ঘুমে কাঁদা। চাঁদ উঠেছে! হালকা আলো আসছে বেলকনি থেকে ঘরে। তারার আর না পেরে উঠেই পড়লো বিছানা ছেড়ে। চোখে আর ঘুম নেই! বেলকনির দিকে একপা একপা করে এগিয়ে দাড়ালো তারা। আকাশে একটিও তারা নেই। আছে অর্ধেক চাঁদ।
হঠাৎ ধুরুম করে কিছু পড়ার আওয়াজে শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠলো তারার। চোখ শব্দস্হানে নিতেই শরীরের লোমকূপ দাড়িয়ে গেলো তারার। গায়ে চাদর পড়ে তার শশুড় বাইরে। চোরের মতো এদিক ওদিক চাওয়া চাওই করছে। তারা থ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। একটু পর অনুরুপ চোর ভঙ্গিমায় বাইরে এসে দাড়ালো তূর, তইমুর। কালো চাদরে মোড়া তিনজনে। এদিক ওদিক চেয়ে বাড়ির উত্তর দিকে হাটতে লাগলো ওরা।
‘এত রাতে এরা বাইরে কেন? তূর ভাইও সাথে? তাহলে কি এটারই কথা বলেছিলো কাল তূর ভাই? এটাই কি নতুন জিবন?’ কৌতুহল হচ্ছে তারার। তার কি যাওয়া উচিত? রগে রগে অজানা আগ্রহ টানছে তারাকে। ছুটে রুমে চলে এলো তারা। সায়ন ঘুমে নাক ডাকছে। পাশে রাখা শাল গায়ে জড়িয়ে তারা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। একপ্রকার ছুটেই বেড়িয়ে গেলো তারা। সিঁড়ি বেয়ে তড়িৎ গতিতে নিচে নেমে এলো। সদর দরজা বন্ধ! উত্তেজনায় হাত কাঁপছে তারার। নিজের শশুড়কে কি সন্দেহ করা ঠিক? কিন্তু এত রাতে চোরের মতো বাড়ির উত্তরে কি? তারা আরেক ছুটে বাড়ির পেছোনের দরজায় চলে গেলো। দরজাটা দক্ষিণ দিকে। দরজা খুলে পশ্চিম হয়ে বাইরে চলে এলো তারা। শিতল বাতাস বাইছে। রোজ এই বাগানে আলো জ্বলে। আজ নেই! ঘুটঘুটে অন্ধকার! তারার কৌতুহল ছুটিয়ে নিয়ে গেলো তারাকে। উত্তর দিকে যেতেই মোবাইলের আলো চোখে পড়লো তারার। সবার হাতে মোবাইল। বুকে দামামা বাজছে৷ আরেকটু এগোতেই শুকনো কাঠে পা পড়ে খরখর আওয়াজ করে উঠলো। মুহুর্তে ধুক করে উঠলো তারার হৃৎপিণ্ড! ওখান থেকে কেউ মোবাইলের আলো তাক করলো সেদিকে। ধরা পড়ে গেলো তারা। কেউ একজন বললো,
-জানাতাম তুমি আসবে তারা। জানতাম তুমি আসবে!
~সমাপ্ত!
[খুব শিগগিরই রহস্যের সমাধা নিয়ে আসছে ‘সূখতারার খোজে’-দ্বিতীয় খন্ড। আমি দ্বিখণ্ডিত করতে চাইনি। আমার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনেই এ কাজ করতে হলো। খুব শিগগিরি আসবে-২। ধন্যবাদ🧡]