#স্পর্শ
#পর্ব_১৪
#writer_nahida_islam
অতসী পা ছাড়িয়ে বললো,
-যে অন্যের কথা শোনে আমাকে মারতে পর্যন্ত দুবার ভাবেনি তাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
-অতসী আমি ভুল করেছি আমার ভুল শিকার করছি। আর কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না প্লিজ অতসী আমাকে বুঝার চেষ্টা করো। রানী করে রাখবো আমি তোমাকে।
কথাটা শোনে আমি অট্টহাসি দিলাম। এটা দেখে ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইফাজের চোখে চোখ পড়তে ই দেখলাম চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছে।
-আমার কথা শুনে তোমার হাসি পাচ্ছে।
-হাসি কেনো পাবে না বলেন। আমি যখন আপনাদের বাসায় ছিলাম আমার সাথে কুকুরের মতো ব্যবহার করেছেন। আপনাদের বাড়ির কাজের লোকের সাথে ও এর থেকে ভালো ব্যবহার করেছে। কারণে অকারণে মেরেছেন। রুহানের সাথে কথা বলার কারণে আমার গায়ে সিগারেট দিয়ে পোড়িয়ে দিয়েছিলেন। কী খারাপ ব্যবহার করেননি বলেন তো। একটু অসুস্থ থাকলে ও হাজাট টা কথা শুনতে হতো। এখন আপনি বলছেন আমাকে রানীর মতো করে রাখবেন। আপনি ই বলুন কথাটা শুনতে কী হাস্যকর নয়।
-অতসী সব ভুল ছিলো, প্রতিদিন আমার ব্রেনওয়াশ করা হতো তোমার নামে খারাপ কথা বলে।
-অবশ্যই আপনি এখনো বাচ্চা না। বাচ্চার বাবা হতে চলেছেন তাও কেনো মানুষের কথায় চলেছেন।
-অতসী ভুল তো মানুষের ই হয় বলো।
-কী বলবো, বিয়ের দিন থেকে এসন অত্যাচার সহ্য করে এসেছি। সবার কাছ থেকে শুনতে হয়েছে আপনি আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেননি।
-অতসী আমার কথাটা শুনো প্লিজ। আমি তোমাকে বিয়ে করেছিলাম কারণ তুমি প্রয়ন্তীর ব্যাপারে সব জানতে, আমাকে অনেক ভালো বুঝতে তুমি। তখন আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বিয়ে করলে তুমি আমাকে খুব ভালো বুঝবে আর প্রিয়ন্তীর ও কষ্ট পাবে।কিন্তু সব শেষ করে দিলো এই মহিলা।
-জ্বি আপনার সব কথা আমি শুনেছি আপনি এখন যেতে পারেন, আমার চোখের সামনে থেকে।
-অতসী দেখো আমার এখন তুমি আর দাদিমা ছাড়া কেউ নেই। আগে জানতাম না আমি অনাথ ছিলাম। কিন্তু আজ থেকে তো আমি অনাথ। আমার কেউ নেই। তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ।
-এসব আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
-অতসী আমাকে তোমার পায়ের নিচে হলে ও একটু ঠাই দেও প্লিজ।
-আদিখ্যেতা কম দেখালে হয় না।
-অতসী তুমি এতো পাষান, আমার চোখের পানি তোমার আদিখ্যেতা মনে হচ্ছে।
-পাষান ছিলাম না। পাষান আপনারা বানিয়েছেন।
-ক্ষমা চেয়েছি অতসী। এর থেকে বেশি আর আমি কী করতে পারি।
-সেটা আপনি জানেন।
-তুমি কী চাও আমি মরে যাই এভাবে কষ্ট পেতে পেতে।
-আপনি এই রুম থেকে বের হবেন না আমি বের হবো।
-তুমি কেনো আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো,
কথাটা বলা শেষ হওয়ার আগে ই আমি রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। এসে ই মা বাবার রুমে চলে গেলাম। দাদিমাকে বেডে শুইয়ে রেখেছে। আমি গিয়ে দাদিমার হাতটা ধরে পাশে বসলাম। আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে উনি কেদে উঠলো,
-দাদিমা আপনি কাদছেন কেনো?
-আমার নাতিটা খুব কষ্ট পেয়েছে তাই না রে।
-আপনি চিন্তা করবেন না উনি ঠিক আছে।
-তুই ইফাজকে ভুল বুঝিস না।
-ভুল বুঝবো কেনো।
-তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে কিন্তু তুই বিশ্বাস কর এসব ও নিজে থেকে করেনি। তানিয়া ইফাজকে দিয়ে সব করিয়েছে।
আমার হাতটা ছাড়িয়ে বললাম,
-দাদিমা ইফাজ এখন ও ছোট নয়। ওর বুঝার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আছে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।
-তানিয়াকে অনেক বিশ্বাস করতো এইজন্য ই কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা একবার ও ভাবেনি।
-আচ্ছা এগুলো বাদ দেন। কী খাবেন বলুন। আমি আপনার জন্য খাবার বানিয়ে আনছি।
-আমার ক্ষুধা নেই রে বোন। আমার ইফাজটা যে কষ্ট পাচ্ছে।
-নাতির জন্য এতো চিন্তা করতে হবে না।
-তুই যদি ইফাজের সাথে থাকতি তাহলে আমার এতো চিন্তা হতো না কিন্তু আমার নাতিটা এখন একা।
আমি দাদিমাকে রেস্ট নিতে বলে কিচেনের দিকে যেতে লাগলাম।
মনে মনে ভাবলাম দাদা দাদিমা বুঝে এমন ই হয় নিজের চিন্তা না করে নাতি নাতনিদের চিন্তা করে। আমার দাদা বা দাদিমা কারো আদর ই পাইনি। আমার জন্মের আগে ই উনারা মারা গিয়েছে। যদি থাকতো তাহলে হয়তো উনার মতো করে ই আমাদের কথা ভাবতো। আমি ও তো মা হবো আমার বাচ্চা ও বড় হবে পড়াশোনা করবে বিয়ে করবে তারপর তো আমি ও দাদিমা হবো। এসব ভেবে আনমনে অতসী হাসতে থাকে।
-আপু তুই এভাবে হাসছিস কেন।
নীলুকে দেখে অতসী হাসি বন্ধ করে দিলো।
-এমা হাসি বন্ধ করে দিলি কেনো। তুই হাসলে অনেক ভালো লাগেরে আপু।
-হে হয়েছে আমার মিথ্যে প্রশংসা এখন চল আমাকে হেল্প করবি।
-আগে বল কী নিয়ে হাসছিলি।
-বলা যাবে কিন্তু বলবো না।
-বল না আপু প্লিজ।
-আচ্ছা চল কিচেনে। বলতেছি।
নীলু হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে কেনো হাসছিলাম তখন, আবার নীলুকে দেখে হাসি বন্ধ করে দিলাম কেনো। কী পরিস্থিতিতে পড়লাম হাসলে ও বলতে হবে।
-আপু..
-হুম, ভাবতেছিলাম যে আমি ও তো মা হবো, আমার সন্তান ও পড়াশোনা করে বড় হবে। তারপর সুন্দর একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো, বাচ্চা হবে।তখন আমি ও দাদিমা হবো।
নীলু আমার কথা শুনে হাসছে। আমি মুখটা মলিন করে জিজ্ঞেস করলাম,
-হাসছিস কেনো?
–তোমার চিন্তাভাবনা শুনে।
-ভুল কী ভাবলাম।
-এখন ও তোর বেবিটা হয়নি তার আগে ই এতো চিন্তা। মানুষ শুনলে কী বলবে বল তো।
-মানুষের কথা বাদ দে তো। স্বপ্ন দেখতে তো মানা নেই।
-আচ্ছা তোদের বুদ্ধি সুদ্ধি কী লোভ পেয়েছে। ইফাজ এতো মানুষিক চাপের মধ্যে আছে তার মধ্যে তোরা হেসে বাড়িটা পুরো মাথায় করে রেখেছিস। এতো হাসি তামাসার কী হলো হে।
আমি আমার পেয়াজ করছিলাম, কথার স্টাইল শুনে ই বুঝে গিয়েছি এটা মা। তাই উওর দিলাম,
-আল্লাহ সব দেখে মা আমাকে যে কষ্ট দিচ্ছে তা আল্লাহ ফেরত দিতেছে। ইফাজের জন্য এতো মায়া। কই আমি ও তো কষ্ট ছিলাম শুধু মানুষিক না মা শারীরিক নির্যাতনের শিকার ও হয়েছে। তখন তো একবারের জন্য ও তোমাকে কাছে পাইনি।
-অতসী ইদানীং তুই একটু বেশি ই খারাপ ব্যবহার করছিস তোর মনে হচ্ছে না।
-মা তুমি আমার বিয়ের পর থেকে আমার মায়ের মতো নাই এটা কী তোমার মনে হচ্ছে না।
-বেশ মুখে মুখে কথা বলতে শিখেছিস। মা কখনো সন্তানের খারাপ চায়না এটা জানিস তো। আমি যদি তখন তোর মতো ভেঙ্গে পড়তাম তোর কথা শুনতাম তাহলে আজ তাদের ডিভোর্স হয়ে যেতো। আমি মানছি আমি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু কার জন্য করেছি তোর জন্য ই তো। আমি চেয়েছি তুই একটু মানিয়েনে। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-মাআআআ। কথায় আছে না শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা তুমি ও তাই করছো।
-বললাম তো মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।
-নীলু একটু আসবা তোমার সাথে কথা ছিলো।
নীলু ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করে কী করবে। আমি বললাম যা।
নুডলস রান্না করে দাদিমার রুমে নিয়ে গেলাম। দাদিমাকে উঠিয়ে খেতে দিলাম। দাদিমাকে খেতে দিয়ে বাবার পাশে গিয়ে বসলাম। বাবার পাশে বসতে ই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,বাবাকে এমন অবস্থায় দেখতে ভালো লাগে না। চোখের পানি আটকে রাখতে পারি না। তাই খুব কম আসি বাবার কাছে। আমি কান্না করলে বাবা ও কান্না করা শুরু করে দেয়। কিছুক্ষন বাবার পাশে বসে থেকে রুমে চলে আসলাম।
ইচ্ছে করে সারাক্ষণ শুধু শুয়ে থাকি। কিন্তু তা কী সম্ভব। আকাশটা মেঘলা হয়ে এসেছে। চারদিক পুরো অন্ধকার। রুমের ভেতর থেকে বাহিরের সাইডটা হলুদ একটা ভাব দেখা যাচ্ছে। এমন সময় বাহিরে হাটতে বিষন ভালো লাগে। বেশিক্ষণ আর বৃষ্টি লেইট করলো না। খুব জোরে বৃষ্টি পড়তে থাকে।
-এই আপু। কী এতো ধ্যান ধরেছিস।
দরজার দিকে তাকাতে ই দেখলাম নীলু। অনেকটা ভিজে গেছে। হাতে একটা ব্যাগ।
-কোথায় গিয়েছিস।
-ইফাজ ভাইয়া নিয়ে গেছে। এই যে দেখ এই ব্যাগটাতে তোর পছন্দের সব খাবার।
-তোকে আমি বলেছি আমি খাবো?
-আরে দেখনা কী কী এনেছি। ফুচকা, চিকেন ফ্রাই, চটপটি, সমুচা, পেয়ারা।
-এগুলো আনতে বলেছি আমি।
-তুই বলবি কেন ইফাজ ভাইয়া বলেছে তোর কী কী পছন্দ নেওয়ার জন্য। আবার পরে যাবে এখন এই টুকু ই এনেছি। বৃষ্টির জন্য আনতে পারিনি।
-আমি এগুলো খাবো না।
-অতসী তুমি এমন করো না। আমার উপর যত ইচ্ছে রাগ করো কিন্তু খাবারের উপর রাগ করো না।
-এই শুনেন, ডিভোর্স পেপারে নিয়ে আসেন, সাইন করে দিবো।আমি আপনাকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা।
-তোর কথা ই এখন ডিভোর্স হবে না। তারমানে তোমাকে এখন আমাকে সহ্য করতে ই হবে।
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]