#স্মৃতির শহর
#পর্বঃ১২
#তানিশা সুলতানা
বিছানায় গোল হয়ে বসে অনবরত মুচকি মুচকি হাসছে রাই। ভীষণ খুশি খুশি লাগছে। শব্দ করে হাসতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কেউ শুনে ফেললে হাসির কারণ কি বলবে রাই? তাই কোনোরকমে মুখ চেপে হাসি কন্ট্রোল করে।
পাশের রুম থেকে লুঙ্গি ডান্স গানের সুর ভেসে আসছে। হয়ত অহি শুনছে।
আপাতত রুমে কেউ নেই।
রাই খুশিতে গদগদ হয়ে বিছানার ওপর দাঁড়িয়েই নাচা শুরু করে দেয়। এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো এটা নিজেও জানে না। হতেই পারে ছোট খাটো খুশির কারণ। তাই বলে এতোটা খুশি হওয়া মোটেও উচিৎ নয়। কিন্তু রাইয়ের মনটা বুঝতে চাইছে না। মন বলছে এর থেকে ভালো আর কিছু হতেই পারে না।
রাইয়ের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে আদি রুমে ঢুকছিলো।
আদি দরজা ঢেকে ভেতরে ঢুকে রাইকে এভাবে নাচতে দেখে কিছুখন থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
তারপর কিছু একটা ভেবে ফোন বের করে ভিডিও করে নেয়। ঠোঁটে লেগে আছে এক চিলতে হাসি।
হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। গানের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। রাইও ক্লান্ত হয়ে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। বিছানার অবস্থা নাজেহাল। যে কেউ এখানে আসলে বলবে এখানে পাগলের বসবাস।
একটু জিরিয়ে বিছানা ঠিক করবে বলে ভেবে রাখে রাই।
“বিছানার এই অবস্থা কেনো?
আদি গম্ভীর মুখে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। রাইকে বুঝতে দেবে না এতখন ও এখানেই ছিলো।
রাই ধপ করে উঠে বসে। বুকের হার্টবিট ক্রশন ভারি হয়ে আসছে। কি বলবে এখন? আজানা কারণেই আদিকে মাঝেমধ্যে খুব ভয় করে রাইয়ের। কিন্তু সত্যিই তো আদি কখনো ওকে বকে না। ধমক দেয় না। মারেও না। তাহলে এতো ভয় কেনো? এতোটা জড়তা কেনো কাজ করে।
ঢোক গিলে রাই।
আদি বুঝতে পারে রাই ভয় পেয়ে গেছে।
” একটু নামো আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
হাতের জিনিস গুলো ফ্লোরে নামিয়ে বলে।
রাই তরিঘরি করে নেমে যায়।
আদি বিছানা ঠিক করে দিতে থাকে।
“কি কপাল আমার! কোথায় বলবে আপনার ঠিক করতে হবে না আমি করে দিচ্ছি তা না মহারানী নেমে গেলো।
আদি বিরবির করে বলে।
রাই মুচকি হাসে।
” এখন থেকে সব কাজ আপনাকে দিয়ে করাবো। আমি কাজ করলে তো আমার বেবি কষ্ট পাবে সেটা আমি হতে দেবো না।
রাই মনে মনে বলে।
“বসো এখন,
না কি কোলে করে বসিয়ে দিতে হবে?
আদি বলে।
রাই ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়ে।
” ওই ব্যাগে কি আছে? আমার জন্য কিছু এনেছেন?
রাই খুশিতে গদগদ হয়ে বলে।
আদি সরু চোখে তাকায় রাইয়ের দিকে।
“নাহহহ
শক্ত গলায় বলে আদি।রাইয়ের হাসি মুখটা চুপসে যায়। মুহুতেই চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
” আপন বর হলে এমনটা বলতে পারতেন?
ফুঁপিয়ে কান্না করে বলে রাই।
আদি হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। আপন বর মানে কি?
“আমি তোমার আপন বর না?
ব্যাগ গুলো বিছানায় রেখে রাইয়ের পাশে বসে বলে আদি।
” না তো
হলে তো কিছু আনতেন। এভাবে মুখের ওপর না বলতেন না।
চোখ মুছে বলে রাই।
“হুমমম সেটাই
এখানে কিছু থ্রি পিছ আছে সুতি। এগুলো পড়বে এখন থেকে। শাড়ি পড়বে না। ওকে
রাই মুখ ভার করে বসে থাকে।
ওটা জন্যই এনেছে তাহলে বললো কেনো আনে নি?
” ও বাবা এসব কে এনে দিলো?
আদি এবার পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায়। বাচ্চাদের ছোট্ট রেক, দোলনা গাড়ি জামাকাপড় অনেক গুলো বাচ্চার ছবি দিয়ে রুমটা ভরপুর।
এতোখনে রাইয়ের খুশি হওয়ার কারণ বুঝতে পারলো আদি। সত্যিই মেয়েটা অল্পতেই খুশি।
এই তো অল্প দামি সুতি থ্রি পিছ এনেছে আদি জানে এতেই রাই অনেক খুশি। অন্য কেউ হলে হয়ত অভিযোগ করে বলতো এই কম দামি থ্রি পিছ আমি পড়বো?
“এসব বাবা এনেছে। বলেছে আরও এনে দেবে। আপনিও কিছু আনবেন সব কিছু। আমদের বেবি পৃথিবী এসেই দেখবে ওর মা বাবা ওর জন্য কতো কিছু এরেন্জ করে রেখেছে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে রাই।
” আচ্ছা
আদি মাথা নারায়।
রাই থ্রি পিছ গুলো বের করে দেখে। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে একটা একটা করে গায়ের সাথে মিলিয়ে দেখছে।
“পছন্দ হয়েছে?
” খুব পছন্দ হয়েছে।
একটা বোরকা কিনে দিয়েন আমায়। আগের বোরকাটা মা রেখে দিয়েছে। দেবে না বলেছে। বাবা অনেক দাম দিয়ে কিনে দিয়েছিলো। সেটা এখন মা পড়ে। আপনি কোম দামি একটা কিনে দিয়েন।
মিষ্টি হেসে বলে রাই।
আদিও একটু হাসে।
“বিকেলে বরং আমার সাথে যেয়ো। পছন্দ করে কিনে নেবে।
আদি বলে।
” নাহহ থাক আমি যাবো না।
“কেনো?
” এমনি
“থাক তাহলে কিনতে হবে না।
” ওকে
রাই মন খারাপ করে বলে।
“ওকে
খাবো চলো
” যান না আমি কি করবো?
রাগ দেখিয়ে বলে রাই।
“তোমার সাথে খাবো।
” আমি আপনার সাথে খাবো না।
“মুখে মুখে তর্ক করলে এক চর দেবো। ভয় পাও আমাকে ভয় পেয়েই থাকবা। একদম স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবা না।
আমি যেটা বলবো সেটাই। তোমার থেকেও তোমার ভালোটা আমি বেশি বুঝি।
খুব শান্ত গলায় বলে আদি।
রাইয়ের এতেই কান্না পেয়ে যায়।
” একদম কাঁদবা না। তোমাকে কেউ মারেওনি আর বকেও নি। এখন কান্না করলে দেবো টেনে এক থাপ্পড়।
চোখ দিয়ে সবে পানি গড়াবে রাই সাথে সাথে মুছে ফেলে। অটোমেটিক কান্না আটকে যায়।
আদি রাইয়ের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হাসে।
“গুড গার্ল
এবার আসো।
বলেই আদি আগে আগে চলে যায়।
রাই ভেংচি কাটে।
” হনুমান😠😠😠
আদি খাচ্ছে আর রাই বসে বসে মশার কামড় খাচ্ছে। বেশ বিরক্ত লাগছে। তুই খাবি খা আমাকে এখানে বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয়?
বিরবির করে বলে রাই।
“আমি যাবো?
রাই এই নিয়ে পাঁচ বার বলবো।
আদি চোখ পাকিয়ে তাকায়। রাই চুপ করে যায়।
” তুমি জানো না আমি একা একা খেতে পারি না। আমি খাওয়ার সময় আমার সাথে মানুষ থাকতে হয়।
আদি হাড্ডি চিবতে চিবতে বলে।
“তাহলে মসজিদে গিয়ে মাইক দিয়ে বলে আসি “আদি বাবু খাচ্ছে আপনারা সবাই চলে আসুন”
রাইয়ের কথা শুনে আদির হেঁচকি উঠে যায়।
গোল গোল চোখ করে রাইয়ের দিকে তাকাতেই রাই এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
🥀🥀🥀🥀
দুপুরের খাবার পরে রাইয়ের শরীরটা বেশ খানিকটা খারাপ লাগছে। আদিও বাসায় নেই অহি ভার্সিটিতে গেছে শশুড় মশাই অফিসে আর শাশুড়ী মা ঘুমচ্ছে। কাকে বলবে?
বেশ কয়েকবার বমিও হয়েছে। পেটেও চিনচিন করে ব্যাথা করছে। মনের মধ্যে ভয়,ঢুকে গেছে। তেমন কিছু খেয়েছে বলে তো মনে পড়ে না রাইয়ের। তাহলে হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ।
দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে রাই।
কিন্তু হাঁটার শক্তি পায় না। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে। প্রচন্ড দুর্বল তাই এমন হচ্ছে।
“মমমমমমমমা
জোরে ডাকে রাই শাশুড়ীকে।
অসুস্থতার সময় একা থাকলে ভয়টা বারে। কেউ পাশে থাকলে সাহস জোগালে অনেকটা ভরসা পাওয়া যায়। রাইয়েরও একজন সাহস জোগানোর মানুষ প্রয়োজন। একটা মা প্রয়োজন। যে বলবে কিচ্ছু হবে মা। এই সময়,এমন একটু হয় ই। নিজের মাকে তো দেখে নি। এখন শাশুড়ী যদি একটু মা হয়ে যেতো।
চলবে