অতঃপর প্রনয় পর্ব-২২

0
81

#অতঃপর_প্রনয়
#পর্ব-২২
#জেসমিন_জেমি

আবিরার রুমের দরজা বন্ধ, পুরো রুম অন্ধকার করে রেখেছে আবিরা । বিদঘুটে অন্ধকারে ফ্লোরে বসে আছে। পিনপিন নিরবতায় ঘেরা রুমে থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে চাঁপা কান্নার শব্দ। ইলমি বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ দরজায় দাঁড়িয়ে আবিরাকে ডেকে যাচ্ছে।
মেয়েটা সেই কখন থেকে দরজা বন্ধ করে রুমে বসে আছে। সন্ধ্যায় মাহিদরা তাকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে তখন থেকে মেয়েটা রুমে বন্দি । সবটা এতো তারাতারি হয়ে যাবে কেউ ভাবেও নি। সবাই বেশ অবাক হলো। মিলন তাজওয়ার এক প্রকার চেঁপে ধরেছিলেন ইমরুল তালুকদারকে। মেয়েটাকে তাদের ঘরেই দিতে হবে। এমন লক্ষি একটা মেয়েকেই তাদের ছেলে বউ হিসেবে চাই। ইমরুল তালুকদার এ পর্যায়ে কোনো মতামত দিতে পারলেন না। তবে তাজওয়ার সাহেবের মুখের উপর না ও করতে পারলেন না। করুন চোখে সোফায় গম্ভির মুখে বসে থাকা ছেলের দিকে চাইলো। চোখ ইশারায় কিছু বুঝাতেই আবরার একপলক তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তার বউকে ডেকে রুমের দিকে চলে গেলো। ইমরুল তালুকদার রাগে ফুঁসতে লাগলেন। ছেলে হয়েছে একটা হাড়ে বজ্জাত। এ সময় তার বউকে নিয়ে রুমে যাওয়ার কি প্রয়োজন পড়লো? অসভ্য ছেলে কোথাকার। যে দেশের এমপি এমন অসভ্য সে দেশের সাধারণ মানুষ কি করে ভালো হবে? মাথা খারাপ মানে, সবটুকুই খারাপ। মনে মনে হাজার খানেক গালি দিলেন। তবে অর্ধেক গালি এসে ঘুড়ে ফিরে তারই লাগলো।

ইলমি কিচেনের দরজার পাঁশেই লুকিয়ে ছিলো দূর থেকে জাহানারা বেগমের ঠোঁট টিপে হাসি ইলমির চোখের আড়াল হলো না। আবির ও হাসলো। তূর্ণা ঠোঁট চেঁপে হেঁসে বললো,
ভাবি ভাইয়ার হয়তো কিছু চাই যেটা তখন অসম্পূর্ণ…
ইলমি তূর্ণার কথার মানে বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। তূর্ণা কথা শেষ করতে পারলো না হিমি বেগম মেয়ের কান মলে বললেন,,
দিন দিন বেশ পেঁকে যাচ্ছো তোমরা।

তূর্ফা- মা ছাড়ো লাগছে।

হিমি বেগম ছেড়ে দিলেন। ইলমি ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো সে এখন রুমে যেতে পারবে না। হিমি বেগম বললেন,
যা দেখ ছেলেটা কি বলে? কোনো কিছুর দরকার হয়তো।
হিমি বেগম একপ্রকার জোড় করে রুমে পাঠালো। ড্রয়িংরুমে আসতেই জাহানারা বেগম হেঁসে বললেন,

ভাইজান আপনার ছেলের বউ কিন্তু ভীষণ সুন্দর আর ভীষণ লক্ষি ও!

ইমরুল তালুকদার স্বভাব সূলভ হাসলেন বললেন,

হ্যাঁ তা যা বলেছেন একদম লক্ষি একটা মেয়ে।

ইমরুল তালুকদারও তাল মিলিয়ে বললেন,
লক্ষি একটা মেয়ে।

আছমা বেগম টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললেন,
বউ কেনো বলছেন জাহানারা আপা? বলুন মেয়ে।

জাহানারা- হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো।

সবাই হাসলো ইলমিও হাঁসলো তার মাঝেই আবরার আবারো ডেকে উঠলো। ইমরুল তালুকদার রাগে ফুঁসে উঠলেন। জাহানারা বেগম হেঁসে বললেন,

যাও।
ইলমি তৎক্ষনাৎ রুমের দিকে ছুটলো।

*——*

ইলমি রুমে যেতেই আবরার ইলমিকে টেনে নিজের একদম কাছে নিলো। ইলমি নিজেকে ছাড়িয়ে ফুঁসে উঠলো রাগী কন্ঠে বললো,
-দিন দিন কি বুদ্ধি গুলো দান করে দিচ্ছেন?
আবরার ভ্রু কুঁচকালো বললো,
মানে?

– নাকি লাজ লজ্জা সবার মাঝে বিতরণ করে দিয়েছেন?

আবরার এবার ইলমিকে একদম নিজের সাথে চেঁপে ধরলো বাঁকা হেসে ইলমির কোমড় চেঁপে বললো,
এতো লাজ লজ্জা দিয়ে কি হবে জান?

ইলমি এক প্রকার তেঁতে উঠলো,
ছাড়ুন! ভীষন নির্লজ্জ তো আপনি !

আবরার ইলমির গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় আঙুল ছোঁয়ালো ইলমি ঠোট কুঁচকালো আঙুলে কামড় বসাতে নিলেই আবরার দু আঙুলে ইলমির ঠোঁট চেঁপে বাঁকা হেঁসে বললো,

হুহ ভীষণ নির্লজ্জ!
পরপর বলে উঠলো,
আই নিড এ কিস চড়ুই।

ইলমি একপ্রকার ছিটকে সরে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না৷ বললো,
অসভ্য।
আবরার আফসোসের সূরে বললো ,
সভ্য হতে চাই তবে পাখিটা হতে দেয় না।

ইলমি চোখ পাকিয়ে বললো,
আপনার..
কথা শেষ করতে পারলো না ইলমি। তার আগেই আবরার ইলমির ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিলো। ইলমি চোখ পাকালো পরপর কিল বসালো আবরারের বুকে তাতেও যখন কাজ হলো না। ইলমি শক্ত হাতে আবরারে গলা জড়িয়ে ধরলো পরপর নিজের নখ গুলো দিয়ে আঁচড় কাঁটলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে আবরার ইলমিকে ছেড়ে দিতেই ইলমি হাঁপিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে চট করে বললো,,

অসভ্য, নির্লজ্জ লোক! আর কখনো ছুবেন না আমায়। আপনার স্পর্শ চাই না আমার ।

বলতে বলতে এবার যেনো একটু বেশিই বলে ফেললো। মুহুর্তেই যেনো বাজ পড়লো রুমে । আবরার ছিটকে সরে গেলো ইলমির থেকে। ইলমি টাল সামলাতে পাড়লো না দেয়ালে গিয়ে পিঠ লাগলো। ইলমি পরপর জিব কাটলো কি বলে ফেললো সে। কাচুমাচু মুখ করে আবরারের দিকে তাকাতেই দেখলো আবরার একদম নিরব, ততক্ষণে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা ছেয়ে গেলো। ইলমি এগিয়ে আবরারের হাত জড়িয়ে অপরাধীস্বরে স্যরি বলতেই আবরার নিঃশব্দে হাত সরিয়ে নিলো। আবরার সরে যেতে নিলেই ইলমি জড়িয়ে নেয়, মিউয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,
ভূল হয়ে গেছে আর কখনো বলবো না।

আবরার যেনো শুনলো না, এক ঝটকায় ইলমিকে নিজের থেকে সরিয়ে গম্ভীর কন্ঠে শুধু বললো, বিয়েতে আবিরার কি মতামত সেটা যেনো সে শুনে পরপর গটাগট পায়ে চলে গেলো ইলমি অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো।

———
আবিরা নিজের রুমের বেলকনিতে রেলিঙ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। এক মনে দূর আঁকাশে জ্বলজ্বল করা চাঁদের পানে তার দু-চোখ। বিরবির করে বললো,
চাঁদ তুমি ভীষণ সুন্দর তবে তোমার থেকেও বেশি সুন্দর আমার ইমির। তুমি কি জানো?

পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেকি হাঁসলো চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। বললো,
হয়তো তোমার থেকে বেশি মূল্যবান ও!

– জানো চাঁদ? একজন প্রেমিকার চোখে তোমার থেকেও বেশি সুন্দর তার না হওয়া প্রেমিক!

পরপর হু হু করে কেঁদে উঠলো আবিরা।
তখনি শাড়ীর আঁচল টেনে রুমে ডুকলো ইলমি। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো সে । ইলমির আওয়াজ পেতেই আবিরা তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে নিলো ।

ইলমি- এভাবে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আবিরা ফিরলো না। মুখে বললো,
এমনি ভালো লাগছে না।

ইলমি – তোর কি এ বিয়েতে সম্মতি আছে? মানে তুই কি বিয়েতে রাজি?

আবিরা ঠোঁটের কোনো কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটলো।
রাজি! এ বিয়েতে সে রাজি? যাকে ভালোবাসে সেই মানুষটাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য কেউ রাজি থাকে?

পরপর মাসখানেক আগের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই চোখ মুখ কঠোর হয়ে উঠলো। শক্ত কন্ঠ বলে উঠলো,
হ্যাঁ রাজি।

ইলমি চমকালো, থমকালো সে ভেবেছিলো এ বিয়েতে আবিরা রাজি থাকবে না। ইলমি তো বুঝেছিলো আবিরা তার ভাইজানকে ভালোবাসে। তবে এই মেয়ে বিয়েতে রাজি হচ্ছে কেনো? মেয়েটা কি পাগল টাগল হয়ে গেলো? আজব। পরপর উত্তেজিত কন্ঠে বললো,

কিইইই! আবিরা বিয়েতে সত্যিই তোর সম্মতি আছে৷

আবিরা এবার ভ্রু কুঁচকালো, বিরক্তি কন্ঠে বললো,
ভাবি এক কথা কত বার বলবো?

ইলমি আবিরার মুখে ভাবি শুনে ভড়কে গেলো। ভোঁতা মুখে বললো,
আচ্ছা ঠিক আছে।

আবিরার সম্মতি থাকা মানে আবরারের ও বিয়েতে মত আছে। সবাই রাজি হওয়াতে জাহানারা বেগম নিজের হাতের স্বর্ণের আংটি তার হবু ছেলের বউয়ের হাতে পড়িয়ে দেয়।

———-
এখন মেয়ের দরজার সামনে আছমা বেগম এসে দাড়িয়েছে। বেশ অনেকক্ষন পরে দরজা খুললো মেয়েটা আছমা মেয়ের এই হাল দেখে আৎকে উঠলেন একি হাল হয়েছে মেয়ের? উশখো খুশখো চুল, কান্না করার কারনে চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। শাড়ী এলোমেলো।

আছমা বেগমকে দেখেই আবিরা জড়িয়ে ধরলো। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,
তখন রাগের বশে বিয়েতে রাজি তো সে হয়ে গেছে। বিয়েটাও না হয় সে করে নিবে কিন্তু মন থেকে কি ইমিরকে সরাতে পারবে?

আছমা বেগম ও মেয়ের সাথে কেঁদে উঠলো। ইলমি মা মেয়ের কান্না থামাতে ফোড়ন কেটে বললো,,
আমাকেও তো কেউ দেখো।

আছমা বেগম ইলমিকেও বুকে জড়িয়ে নিলেন। আবিরা ইলমির মুখের দিকে চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো এই মেয়েটা একদম ইমিরের মতো দেখতে এক নাক, চোখ জোড়াতেও তাদের ভীষণ মিল। আবিরা কি করে ভূলতে পারবে লোকটাকে? ভালোবাসে ভীষণ ভালোবাসে ওই পাষান লোকটাকে ভূলে যাওয়া মানে পুরো আবিরাকে ভূলে যাওয়া। আবিরার অস্তিত্বে যে ইমিরের বাস সেখানে অন্য কেউ কিভাবে বাস করবে? আদৌ কি পারবে?

চলবে,,,,,,