প্রেয়ন পৃথুর প্রেমসুতা পর্ব-০১

0
19710

#প্রেয়ন_পৃথুর_প্রেমসুতা💖
#পর্ব_০১
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

–১মাস এই বিয়েটার বয়স হবে মাত্র ১ মাস। ১মাস পর তোমায় আমি মুক্তি দিয়ে দিবো কিন্তু এই ১মাস আমার কথার নড়চড় হবে না আমি যা যা বলবো তাই তাই করতে হবে।
আমার বলা প্রতিটি কথা অক্ষর অক্ষর পালন করতে হবে।
তোমার এই ১মাসের বিনিময়ে তোমার বাবকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমার।
তোমার ছোট বোনের স্কুল খরচ টাও আমার৷
বলো রাজি?
–১মাসের জন্য বিয়ে!
–হ্যাঁ পৃথু ১ মাসের জন্য আমার কন্ট্রাক্ট পেপার রেডি শুধু সাইন করার পালা।
–১মাস পর?
–১মাস পর তোমায় ছেড়ে দিবো আমার বন্দি খাঁচা থেকে মুক্তি দিবো কিন্তু তোমার বাবা আর বোনকে আমি যা দিবো তাতে তেমাদের সারা জীবন কেটে যাবে।
প্রেয়ন ভাইয়ের কথা শুনে চুপচাপ বসে রইলাম৷
আমি ‘পৃথুলা রাইম’। মাত্র ইন্টার পরিক্ষা শেষ করেছি।
বাবা স্টোকোর রুগি ওনার সারা জীবনের সঞ্চয় সব একটা ফ্লাটের পেছনে ইনভেস্ট করে আজ সেটা উঠে গেছে। ফ্রট ছিলো ওরা। যার কারনে বাবার কাছে একটা পয়সা নেই।যেটা ভাবতে ভাবতে বাবা কাল রাতে স্টোক করেছে। আমাদের বাড়িটা ছাড়া কিছু নেই৷
‘প্রেয়ন খান’ আমার এক মাত্র ফুপির ছেলে ফুপাতো ভাই অনেক প্রভাব শালি লোক আমার ফুপা।
এই বিপদে কাউকে পাচ্ছিলাম না পাশে তাই ফুপার কাছে আসছিলাম৷
মায়ের দিক দিয়ে সব বন্ধ কারন আমার মা নেই তাই মামা খালারা আমাদের পরিচয় দেয় না৷
কিন্তু এখানে এসে আমাকে এগুলা করতে হবে শুনে পৃথিবী যেন থমকে যাচ্ছে।
ওদিকে বাবার চিকিৎসা অফ রেখেছে আমি কি করবো।
–পৃথু কি ব্যাপার?
–আমি রাজি প্রেয়ন ভাই।
–গুড।
এখানে সাইন কর।
আমি ওনার দেখানো সব যায়গায় সাইন করে দিলাম।
বিয়ে নামক এক বৈধ এবং পবিত্র সম্পর্কে জড়ালাম এক মাসের জন্য।
–আপনার কথা তো শুনলাম আমার বাবা।
–সব হবে পৃথু চল আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রেয়ন ভাই আমাকে নিয়ে হসপিটালে এলো। আমার ছোট বোনটা অগোছালো হয়ে বসে আছে হসপিটালের এক কোনে।
–রাইমা বাবা কই৷
–আপু তুই এসেছিস বাবাকে বের করে দিছে ওই যে বাবা৷
আমি বাবার দিকে তাকাতে আমার কলিজায় টান খায়।
সামান্য কিছু টাকার জন্য এই মানুষ গুলো ববাকে বাইরে রেখে দিয়েছে।
–ডক্টর নার্স।
প্রেয়ন ভাইয়ের চিৎকারে সবাই জড়ো হয়৷
–ওনাকে বাসায় ট্রিটমেন্ট এর ব্যাবস্থা করুন৷
ফুল ট্রিটমেন্ট বাসায় হবে যতো টাকা লাগে আমি দিবো।
–জি স্যার অবশ্যই।
প্রেয়ন ভাইয়ের একটা কথায় হসপিটালের সবাই বাবার পেছনে লেগে লেগ তাকে এম্বুলেন্স এ বসানো হলো সমস্ত কিছু নিয়ে তারা আমাদের বাসার দিকে রওনা দিবে।
–আপু তুই যাবি না৷
–না আপু যাবে না রাইমা৷
–কেন প্রেয়ন ভাই
–আপুকে দিয়ে ছোট্ট একটা কাজ আছে ওটা করেই দিয়ে আসবো।
–আচ্ছা আপু আমি যাই।
–হুম৷
আস্তে আস্তে আমার বাব আর রাইমা আমার দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।
হটাৎ হাতে টান অনুভব হতে আমি পেছনে তাকায়। দেখি প্রেয়ন ভাই আমাকে টানছেন৷
আমি ওনার সাথে হাঁটা শুরু করি।
গাড়ি করে ওনার বাসার সামনে আসি।
–শোন এখন মা বাবার কাছে তোকে আমার স্ত্রী বলে পরিচয় করাতে চলেছি মা তোকে কিছু বললে তুই সহ্য করবি শুধু। খবরদার আমার মাকে কোন কথার উত্তর দিবি না।
–জি
আমাকে নিয়ে প্রেয়ন ভাই ঘরে এলো।
আমরা ভেতরে আসতে ফুপি ছুটে এলো।
–কিরে পৃথুলা তুই এখানে কি মনে করে ভাই জান ভালো আছে তো।
–আম্মু আমি পৃথুকে বিয়ে করেছি।
–কি বিয়ে করেছিস মানে?
–আজ বিয়ে করেছি ওকে।
–প্রেয়ন তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
–না মা সত্যি আমি ওকে ভালোবাসি তাই বিয়ে করে এনেছি।
কি পৃথু বল।
–জ জি ফুপি৷
হটাৎ আমার গালে চড় পরতে উল্টো দিকে ঘুরে পরতে গেলাম কিন্তু প্রেয়ন ভাইয়া আমাকে ধরে বসলেন।
–পৃথুলা তুই আমার মেয়ে মতো। হয়ে এটা কি করে করলি।
ফুপি শুধু আমার ভুল টাই দেখলো।
আসলে আপন আর পর কখনো এক না আমি তো নেহাত গরিব ও।
–প্রেয়ন আমি এই বিয়ে মানি না।
–মানো আর না মানো ও আমার স্ত্রী।
কথাটা বলেই প্রেয়ন আমার হাত ধরে টানতে টানতে তার রুমে এনে ফেললো।
আমি ভয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছি৷
–পৃথু এদিকে আয়।
আমি ওনার দিকে এগোলাম।
–এই গালে চড় মেরেছে তাই না খুব জ্বালা করছে তোর (আমার বাম গালে হাত দিয়ে)
–ন না উনি ফুপি চড় দিতেই পারে (ভয়ে)
–না পৃথু তোকে আমি নিয়ে এসেছি তোকে চড় মারার অধিকার ভালোবাসার অধিকার শুধুই আমার অন্য কারোর না।
আমি অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম৷।
–ঠাসসসস।
গালে হাত দিয়ে ছল ছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি প্রেয়ন ভাইয়ের দিকে।
–চড় টা জোরে মারলাম কারন ওই চড় টা ডাকার ছিলো।
শাড়ি আর গয়না পরে রেডি থাক।
কথাটা বলেই প্রেয়ন ভাই রুম ত্যাগ করলো।
এটাই কি নিয়তি আমার সাথে করবে?

চলবে।