অতঃপর প্রেমের আগমন পর্ব-১৩

0
375

#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৩

আয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিশের দিকে। আর আদ্রিশ ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ানার দিকে। আয়ানার ভ’য়া’র্ত মুখটা দেখতেও ভীষণ ভালো লাগছে তার। আর আয়ানা, সে কি করবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না। নড়াচড়ার শক্তিও যেনো হারিয়ে গেছে তার।

বাড়িতে কেউ ছিলো না তাই শুধু দরজা চা’পি’য়ে রেখেছিলো আয়ানা। আদ্রিশ রাতে পড়া নেয়ার কথা বলায় সে ভেবেছিলো রাতেই হয়তো আসবে। কিন্তু আদ্রিশ যে এখনই চলে আসবে আর এমন একটা সিচুয়েশন এ পড়তে হবে মাথাতেও আসে নি আয়ানার। সে এখনো চোখ বড় বড় করে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু যে বলবে তাও গ’লা দিয়ে বের হচ্ছে না। কথাগুলো যেনো কোথাও আ’ট’কে গেছে।

আনিকার চি*ৎ’কা’রে’র শব্দে হুশ ফিরলো আদ্রিশ আর আয়ানার। আয়ানা দ্রুত বেড থেকে ওড়না তুলে সারা গায়ে জড়িয়ে নিলো। আদ্রিশ খেয়াল করলো আয়ানার গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে মেয়ে টা। গালের পাশে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। এই রূপে আরও বেশি মা*রা’ত্ম’ক লাগছে আয়ানা কে। আদ্রিশ দ্রুত নিজের চোখ সরিয়ে বেলকনি তে চলে গেলো।

আদ্রিশ যেতেই আয়ানাও কোনো রকম ভেজা চুল মু’ড়ি’য়ে খোঁপা করে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। অমন অবস্থায় আদ্রিশ তাকে দেখেছে ভাবলেই লজ্জায় কা’ন দিয়ে যেনো গ’র’ম ধোঁ*য়া বের হচ্ছে আয়ানার, গালে জু’রে ছড়িয়ে পড়ছে র*ক্তি’ম আভা।

কিছুক্ষন পর রুমে উঁকি দিয়ে আয়ানা কে না দেখে আদ্রিশ বুঝলো সে পা’লি’য়ে’ছে। আদ্রিশ মাথা চু’ল’কে রুমে প্রবেশ করলো। চলে গেলো ফ্রেস হতে। আজ লাঞ্চ টাইম বেশ অনেকক্ষণ দেয়ায় বাড়িতে এসেছিলো সে। লাঞ্চ টাইম বেশি পেলে সে সবসময়ই বাড়িতে চলে আসে। পরিবারের সাথে বসে খাওয়ার মাঝে আলাদা তৃপ্তি অনুভব করে আদ্রিশ। তাইতো একটু বেশি সময় পেলে বাড়িতে ছুটে আসে। তাদের পরিবারের সবাই এমনই। সুযোগ পেলে পরিবারের সাথে সময় কা*টা’তে ভুলে না তারা।

——-

আয়ানা নিচে নেমে দেখলো আনিকা আহিলের পিছনে দৌড়াচ্ছে মা*রা’র জন্য। নিশ্চই আবার কিছু নিয়ে ঝ*গ’ড়া লেগেছে দুইজনের মধ্যে। দুই ভাই বোন একেবারে পা*গ’ল। সুযোগ পেলে সারাদিন দুইজন দুইজন কে জ্বা*লা’য়। বিশেষ করে আহিল আনিকা কে কথায় কথায় রা*গি’য়ে দেয়। এরপর আনিকা চার পাঁচটা কি*ল দিয়েই শান্ত হয়। ভালোই লাগে আয়ানার দুই ভাই বোনের খুনসুটি দেখতে।

আয়ানা ওদের কাছাকাছি আসতেই আহিল এসে আয়ানার পিছনে দাঁড়ালো। আয়ানা কে সামনে ধরে রেখে বলতে লাগলো,

— বোন বাঁচাও আমাকে এই পে*ত্নী’র হাত থেকে। তুমি না আমার ভালো বোন, সোনা বোন। এই পে*ত্নী’র একটা কি*ল খেলে দুইদিন আমার হাতে ব্য’থা থাকে। বাঁচাওওওও।

আনিকা আরও রে*গে গিয়ে নাক ফু’লি’য়ে বললো,

— আমি পে*ত্নী তাই না, আমি পে*ত্নী? দেখবো আমি আজ তোরে কে বাঁচায়। ভাবীর পিছনে লু’কি’য়ে’ছি’স কেন ভী’তু কোথাকার!

আনিকা, আয়ানা কে ট’প’কে আহিল কে মা*রা’র চেষ্টা করতে লাগলো। আর আহিল আয়ানা কে সামনে রেখে ঘু’র’তে লাগলো। এদের কা’ণ্ডে খিলখিল করে হাসতে লাগলো আয়ানা।

আদ্রিশ ফ্রেস হয়ে নিচে নামছিলো কিন্তু পা জোড়া থেমে গেলো কারো হাসির মিষ্টি ধ্বনিতে। সামনে তাকাতেই আরেক দফা হৃদস্পন্দন থ’ম’কে গেলো তার। আয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো সে। মনে মনে ভাবলো, ‘মেয়ে টা এতো সুন্দর করে হাসতে জানে, অথচ সবসময় মুখটা কে গো’ম’ড়া করে রাখে।’ আয়ানার হাসি দেখতে দেখতে আদ্রিশের হাত নিজের বুকে চলে গেলো। সে নিজেও বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার। অন্য মেয়েরা তার গায়ে ঢ*লে পড়লেও যেখানে সে সহজে তাকায় না, আর তাকালেও সেই চোখে থাকে আ*গু’ন দৃষ্টি ; সেখানে সে আয়ানার থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। বারবার তার সাথে কেনো এমন হচ্ছে!

আহিলের ধা*ক্কা’য় আদ্রিশের ধ্যান ভা*ঙ’লো। আহিল, আদ্রিশ কে ট’প’কে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আহিলের যাওয়ার দিকে দেখতে গিয়ে আয়ানার চোখ পড়লো আদ্রিশের উপর। দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনের। আদ্রিশ কে দেখামাত্র আয়ানার মুখের হাসি মি’লি’য়ে গেলো। গাল জোড়ায় ছড়িয়ে পড়লো র*ক্তি’ম আভা। আয়ানা এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না। দ্রুত অন্যদিকে চলে গেলো। এরমাঝে আনিকা আদ্রিশের হাত ঝাঁ*কি দিয়ে বললো,

— বউ কে কতো দেখবে। সারাদিনই তো দেখো। এবার বোনের দিকেও একটু নজর দাও।

আনিকার কথায় অ’প্র’স্তু’ত হয়ে গেলো আদ্রিশ। হালকা কা’শি দিয়ে বললো,

— কি বলছিস উ’ল্টা’পা’ল্টা?

আনিকা ভাব নিয়ে বললো,

— হয়েছে হয়েছে আর মি’থ্যা বলতে হবে না। এবার আমার ম্যাটার সল্ভ করো।

আদ্রিশ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— কি সল্ভ করবো?

আনিকা নাকের পা*টা ফু’লি’য়ে বললো,

— আহিল ভাইয়ু আমাকে আবার পে*ত্নী বলেছে। আমাকে রা*গি’য়ে’ছে। সবসময় আমার পিছে লেগে থাকে। এখন তুমি ওর বি’চা’র করবে। ও কেন আমার পিছে লেগে থাকে। নাহলে বড় মার কাছে তোমাদের দুইজনের নামে বি’চা’র দিবো। হুঁহ।

আদ্রিশ অবাক হয়ে বললো,

— তোরা তোরা ঝা*মে’লা করে আমাকে কেন মাঝখানে টা*ন’ছি’স?

আনিকা আদ্রিশের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,

— তুমি আমাদের বড় ভাইয়ু লাগো। তোমার একটা দায়িত্ব আছে না? তুমি ওকে ব’কে দিবা নাহলে খবর আছে তোমারও। এবার আমি যাই ফ্রেস হয়ে আসি। সেই কবে আমার মহান আম্মাজান আমাকে ফ্রেস হয়ে খেতে আসতে বলেছে আর আমি এখনো এখানে আছি দেখলে জু*তা নিয়ে তা*ড়া করবে।

আনিকা কথা শেষ করে দৌড়ে উপরে চলে গেলো। আদ্রিশ হালকা হাসলো বোনের ব্যবহারে। বোন টা তাদের এমনই পা*গ’লা’টে। এই রা*গে, এই হাসে। যেই আহিল কে এতক্ষন মা*রা’র জন্য তা*ড়া করলো, কিছুক্ষন পর সেই আহিলের ই গলা ধরে ঝু*লে থাকবে। এটা ওটা আবদার করবে।

———

খাবার টেবিলে বসে একত্রে খাচ্ছে সবাই। শুধুমাত্র আহিলের বাবা অনুপস্থিত। তিনি কোনো একটা প্রয়োজনে অফিসেই থেকে গেছেন। বাকি সবাই ফিরে এসেছে। সবাই খাবার খেলেও আয়ানা শুধু না’ড়া’চা’ড়া করছে। তার গ’লা দিয়ে খাবার নামছে না। কারণ তার পাশেই আদ্রিশ বসে আছে। আয়ানার ইচ্ছা করছে এক ছু’টে এখান থেকে পা’লি’য়ে যেতে। কিন্তু পারছে না।

আয়ানার খাবার না খাওয়ার বিষয় টা লক্ষ্য করলেন অনু বেগম। কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। আদ্রিশ ও লক্ষ্য করেছে। কিন্তু সে কি বলবে বা করবে ভেবে পেলো না। সে বুঝতে পারছে আয়ানার এমন করার কারণ।

খাওয়া শেষে সবাই একে একে উঠে গেলো। আয়ানা অনেক ক*ষ্টে তিন চার লো’ক’মা খেয়েছে মাত্র। আর খেতে পারে নি। সেও উঠে যাবে চিন্তা করলো। কিন্তু এতগুলো খাবার ন’ষ্ট করতেও ক*ষ্ট লাগছে তার।

নিজের পাশে কারোর উপস্থিতি টে’র পেয়ে পাশে তাকালো আয়ানা। কারণ আদ্রিশ খাবার শেষ করে উঠে গেছে সবার আগেই। পাশে তাকিয়ে দেখলো অনু বসেছে। অনু আয়ানার সামনে থেকে প্লেট নিয়ে খাবার মাখিয়ে তার মুখের সামনে ধরলো। অবাক হলো আয়ানা। মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো। অনু মুচকি হেসে আয়ানার মুখে খাবার পু’রে দিলো। আনন্দে আয়ানার চোখে পানি চি’ক’চি’ক করতে লাগলো। মনে একটা কথাই আসতে লাগলো, ‘ইস আমি কতো সৌভাগ্যবতী! এমন একজন শাশুড়ি মা পাওয়া মুখের কথা নয়।’ সৃষ্টিকর্তা যে তার ভাগ্যে এতো ভালো কিছু লিখেছে ভেবে চোখের কোণে পানি জমলো আয়ানার।

অনু যত্ন সহকারে সম্পূর্ণ খাবার খাইয়ে দিলো আয়ানা কে। আর আয়ানাও তৃপ্তি করে খেলো। তিনি হাত ধু’য়ে আয়ানার মুখ মু’ছি’য়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বললেন,

— আম্মা খাবারে অনিয়ম করলে কিন্তু আমি খুব রে*গে যাবো। ঠিকমতো খাবার না খেলে তো তুমি অ’সু’স্থ হয়ে যাবে। সামনে তোমার কতো বড় প’রী’ক্ষা আছে। অ’সু’স্থ হয়ে গেলে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাবে। তাই ঠিকমতো খাবার খাবে। আর নিজ হাতে খেতে ইচ্ছা না করলে আমাকে বলবে। আমি খাইয়ে দিবো আমার মেয়ে কে।

আয়ানার চোখ অ’শ্রু’শি’ক্ত হলো। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে একসময় শ’ক্ত করে ঝা*প্টে ধরলো অনু কে। অনুও পরম মমতায় আ’গ’লে নিলেন। আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। মেয়েটা তার অনেক বেশি আদুরে, আর নরম মনের ভেবে আলতো হাসলেন অনু বেগম।

চলবে?