#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব_১৮ [প্রথম অংশ]
ফারহান নেলসন টি এস্টেটে ফিরে আসলো রাত দেড়টার কাছাকাছি। আশপাশ প্রচন্ড নীরব। এই অন্ধকারে কাচা রাস্তা দিয়ে হেটে আসাটা অনেক কষ্টকর হলেও ফারহানের অভ্যেস আছে রাত-বিরাতে হাটাচলা করার। তবে আজ ওর মন কিছুটা বিষন্ন। হাজারো ব্যস্ততার ভীড়েও এই সময়টার কথা সবসময় মনে থাকে ফারহানের। আজ ওর জন্মদিন। তবে শুভেচ্ছা জানানোর মতো কোনো মানুষ ওর নেই। কত বছর ধরে যে নিজের জন্মদিন ফারহান পালন করে না বলতে গেলে ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই গিয়েছে সে। এছাড়া কি করার আছে ওর। মা-বাবা তো আর নেই যে ওর যত্ন নিবে।
ফারহান জামাকাপড় পাল্টে কাউচে বসে পড়লো বারান্দায়। এক হাতের চায়ের কাপটি রেলিংয়ের ওপর রেখে দিলো সন্তর্পণে।বাইরে ঝপাঝপ বাতাস বয়ে চলছে। হয়তো বৃষ্টির পূর্বাভাস। ফারহানের হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ওর ছোটবেলার এক স্মৃতির কথা। একবার এমনই এক রাতে বেশ জ্বর হয়েছিলো ওর মায়ের। বাবা চাচুর সাথে ব্যবসায়ের কাজে ঢাকা গিয়েছিলো। ছোট ফারহান দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এতে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। কেননা বাসায় তখন আর কেউ ছিলো না। ফারহান সে রাত বৃষ্টিতে ভিজে ডাক্তার চাচার কাছে গেলো। পরে উনি ওষুধের নাম লিখে দিতেই ফারহান ওষুধ আনতে চলে গিয়েছে তোরাপগঞ্জ বাজারে। ১২ টার পর সারা বাজার জণশূণ্য। কপাল করে একটি ওষুধের দোকান খোলা পেয়েছিলো সে,,,তারপর ওষুধ নিয়ে পুনরায় ভিজতে ভিজতে সাইকেল নিয়ে চলে যায় বাড়িতে।ওর মার জ্বর সারে প্রায় শেষ রাতে। তখন আকাশটা শান্ত। এর মধ্যে ফারহান কাউচে ঘুমিয়ে পড়াতে মা তখন জ্বরের ঘোরেই ছেলের গায়ে কাথা মুড়িয়ে দিতে ভুলেননি। ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণভরে দোয়া করেছিলেন তিনি।
ফারহানের সে স্মৃতির কথা মনে পড়তে অজান্তেই তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে পড়লো এবার। সেই ভীতু ছোট ফারহান আর সেই ফারহান নেই। সে এখন ২৯ বছর বয়সী এক যুবক। দেশের মানুষ আর ছাত্রদের জন্য সর্বস্ব দিয়ে কাজ করা এক তরুন রাজনীতিবিদ।
ফারহান কাউচের পাশ থেকে গিটারটি হাতিয়ে নিলো এবার। আজ ও গান গাইবে। ওর জন্মদিনের রাতে সবসময়ই বিষাক্ত সুরে গান গাওয়ার মতো এক প্রবল ইচ্ছে হয় ওর। তা ফুটিয়ে তুলে নিস্তব্ধ সুরে। ফারহান গিটারে সুর তুললো এবার। চোখ বন্ধ করে গিটারের তারে আঙুল নাচিয়ে একের পর এক সুর ভাসিয়েই যাচ্ছে। সারা চা বাড়ি নিস্তব্ধ। অদূরে কড়ই গাছের জঙ্গল থেকে শিয়ালের ডাক পরিবেশটা আরও তুমুল করে তুলছে। সেই সাথে তো রয়েছেই চা বাড়ির আষাঢ়ের হাওয়া।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর তালে আধার দরজায় একটি অবয়ব দেখতে পেলো ফারহান। চিরচেনা এই জায়গাটিতে এই দৃশ্য ফারহানের কাছে নতুন। ফারহান মলিন চোখে একপলক ওই অবয়বটির দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর গিটারে বাজানো বন্ধ করে বলে উঠলো,,,
-‘কেন এসেছেন আফরা?’
আফরা আলতো হাসলো এবার। ফারহান নির্বিকার। শীতল চোখেজোড়া একমনে হাতের গিটারটির দিকে। আফরা অবাক হওয়ার ন্যায় বলে ওঠলো,,
-‘বাব্বাহ ! আপনার সিক্সথ সেন্স অনেক ভালো তো। আমার অবয়ব দেখেই বুঝে নিলেন যে এটা আমি?’
ফারহান বললো, ‘এত রাতে আপধি ছাড়া আর কারও দুঃসাহস নেই যে আমার এখানে আসতে পারবে।…..(কিছুটা থেমে) কেন এসেছেন এটা বলুন।’
আফরা বাকবিলম্ব না করে বসে পড়লো ফারহানের ঠিকমুখোমুখি। তুমুল ঝড়ো হাওয়ায় আফরার বাধা চুলগুলো মুখের কাছে আছড়ে পড়ছে বারবার। সে রাতের মতো এবার স্লিভলেস টপস আর হাফ প্যান্ট পড়েনি। বরং ফুলহাতা নাইট ড্রেস পড়ে আছে। হয়তো সেদিনকার ফারহানের কড়া কথায় আফরা এগুলো পড়েছে। বিষয়টা ফারহানের ভালোলাগলো। মেয়েটা চঞ্চল প্রকৃতির হলেও সবার কথা শুনে। আফরা বলে উঠলো,,
-আপনি এমন কেনো?
-কেমন?
-এইযে দাম্ভিক আর বদমেজাজি টাইপ? আমি এসেছি এত রাতে,,,,কই বলবেন , আফরা ! আসুন গল্প চরি। ফাহিম আর ইলা হয়তো এমনটাই বলতো । তবে আপনি তো আবার মিঃ কমরেড। কথা মুখ দিয়ে বের হয়না।
শেষ কথাটা ব্যঙ্গ করে বললো আফরা।ফারহান ভ্রু কুচকালো আফরার এমন সহসা কথাগুলো শুনে। শীতল কন্ঠে বললো,,,
-এজন্যই ওরা ফাহিম আর ইলা এবং আমি ফারহান। ওদের মা শিক্ষা দিয়েছে কিভাবে মেহমানদের সাথে কথা বলতে হয় আর আমার মা আমায় শিক্ষা দেয়নি ; তাই আমি এমন।
আফরা চুপ হয়ে গেলো। এই মানুষটার সাথে মজা করাটাই বেকার।ফারহান নিঃশব্দে বসে রইলো এবার। আফরার গহীন দৃষ্টি ওকে এক অন্য ঘোরে নিয়ে যাচ্ছে। গিটারটা রাখতেই আফরা স্থির কন্ঠে বললো,,,
-আপনার এই বিষাক্ত সুরের মায়াজালেই তো আবদ্ধ হয়ে আসলাম এখানে। আর এখন এই গিটারটিই আপনি রেখে দিচ্ছেন?
ফারহান মৃদু গলায় বললো, ‘আমার তখন ইচ্ছে হচ্ছিলো গিটার বাজানোর। এখন আর ইচ্ছে করছেনা। তাই রেখে দিচ্ছি।’
ফারহান উঠে দাঁড়ালো এবার। আফরার হাত ধরে টেনে উঠালো ওকেও। আফরার চাহিনী নিবিড়। বাতাসের তালে কেপে ওঠছে ওর ঠোঁটজোড়া। এই শ্রীমঙ্গল জায়গাটি বারবার ওকে অজানা মায়ায় হারিয়ে দিচ্ছে। সেই সাথে ফারহান নামের মানুষটাও। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বারবার। সেই সাথে বারবার উজ্জল ফর্সা হয়ে উঠছে ফারহানের শ্যামলা মুখ। কি ঘোর লাগানো তার দৃষ্টি। দেখেই অজানা এক জগতে হারিয়ে যাওয়া যায়। আফরা এবার প্রশ্ন করলো,,,
-আচ্ছা আপনি এখানে কাউকে আসতে দেননা কেনো?’
-কারন আমার ব্যক্তিগত জায়গায় কারও হস্তক্ষেপ আমি পছন্দ করিনা।
আফরা কিছুটা অবাক হয়ে গেলো ফারহানের কথায়। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো,,
-ব্যাক্তিগত জায়গা মানে?
ফারহান হাসলো কিঞ্চিত। তারপর মৃদু গলায় বললো,,,,
-চাচুর ওই বাংলোবাড়িটি ছাড়া এই পুরো নেলসন টি এস্টেটি আমার।
অবাকের সীমা যেন আরও অতিক্রম করলো আফরার। সে তো মনে করেছিলো যে জায়গাগুলো সম্পূর্ণ মিঃ ইফাজের । ফারহান শুধু এখানে দায়িত্বে আছে। কিন্ত হলো উল্টো। হঠাৎ অনিশ্চিত ভাবনার মুখোমুখি হয়ে আফরা স্থির হয়ে গেলো। নরম গলায় বললো,,
-তাইতো বলি। রাজনীতি করে আপনার দিন চলাটা সহজ না। আপনার ইনকাম সব এই টি এস্টেট থেকেই। তাই না?
-হ্যাঁ।
ফারহান বলে উঠলো।
আফরা হঠাৎ তীক্ষ্ণ চোখে ফারহানের দিকে তাকালো। আফরা এতক্ষণে খেয়াল করেছে ফারহান কিছুটা বিরক্ত আফরার উপস্থিতিতে । তাই জড়ানো কন্ঠে বললো,,,
-আমি বুঝিনা আপনি আমায় এত বিরক্তিকর মনে করেন কেন? আমি কি আসলেই বিরক্তিকর কেউ?
-শুধু বিরক্তিকর বললে ভুল হবে…..মহা বিরক্তিকর। আপনার মতো পাগলাটে মেয়ে আমি কখনোই দেখিনি। রাতে গিটারের সুর শুনেছেন দেখে এভাবে এখানে এসে পড়তে হবে?কেউ দেখলে কি হবে?
ফারহানের প্রখর গলা। আফরা গোল গোল চোখ করে বললো,,
-তো লুকিয়ে আসবো নাকি? লিসেন,,,,এই আফরা লুকিয়ে টুকিয়ে কাজ করার মানুষ না । বুঝেছেন?
ফারহান তপ্ত শ্বাস ছাড়লো এবার। এখন কথা বাড়ালেই কথা বাড়বে। দাঁতে দাঁত চেপে তাই বলে উঠলো,,,,
-আপনি প্লিজ এখান থেকে যাবেন?
আফরা হঠাৎকিছু একটা ভেবে খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো ফারহানের।কিছুটা পা উচু করে। ফারহান তখনও স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মুখের বিরক্তিভাটা উড়ে গেলো কলর্পূরের ন্যায়। আফরার ঠোঁটে স্মিত হাসি। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,,,,
-যাবো না আমি। দরকার পড়লে সারারাত আপনার হন্টড হাউসেই থাকবো। এবার কি করবেন আপনি?
.
.
.
~চলবে~
#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব_১৮ [দ্বিতীয় অংশ]
আফরা হঠাৎকিছু একটা ভেবে খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো ফারহানের।কিছুটা পা উচু করে। ফারহান তখনও স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইলো। মুখের বিরক্তিভাটা উড়ে গেলো কর্পূরের ন্যায়। আফরার ঠোঁটে স্মিত হাসি। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,,,,
-‘যাবো না আমি। দরকার পড়লে সারারাত আপনার হন্টেড হাউসেই থাকবো। এবার কি করবেন আপনি?’
ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। প্রচন্ড বাতাসের সমাহারে সর্বত্র উত্তাল। ফারহান অনুভব করতে পারছে এই মেয়েটার জন্য অজান্তেই ওর হৃদয়ে চিনচিন ব্যাথার উপদ্রব। হলো টা কি ফারহানের? এতদিন সবার সামনে শক্তপোক্ত যুবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও আজ এই ভীনদেশি মেয়েটার প্রতি এতটাই দুর্বল যে বারবার নির্বাক হয়ে যায়? ফারহান সামলে নিলো নিজেকে। কাঠ কাঠ গলায় বললো,,,
-জানেন, আমার এই জায়গাটায় আসা সবার জন্য নিষিদ্ধ। তবুও আপনি বেশ কয়েকবার আসার মতো দুঃসাহস চালিয়েছেন। আর এখন বলছেন যে এখান থেকে যাবেন না। সত্যি বলতে আপনার মতো উইয়ার্ড গার্ল দেখা আমার জন্য সৌভাগ্যের না দুর্ভাগ্যের বুঝতে পারছি না।
-সেটা আমার দেখার বিষয় না। তবে একটা বিষয় ভাবলাম যে আমি বোধহয় দিন দিন আপনার কথা অমান্য করাটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি। তাই না মিঃ কমরেড?
ফারহান থমথমে গলায় বলল,
-ডোন্ট কল মি মিঃ কমরেড।
আফরা হাসলো কিঞ্চিত। মৃদু কন্ঠে বললো,,,,
-আমি এবার আবারও আপনার কথা অমান্য করবো। কেননা আমার সাধ্য নেই আপনাকে ‘ফারহান’ নামে ডাকার।
ফারহান কিছু বললো না এবার। আফরার সাথে কথা বাড়ালেই আফরা খুটিঁ মেরে এখানে বসে থাকবে। তাই এড়িয়ে চললেই ভালো হবে। ফারহান নিঃশ্বাস ছাড়লো বারকয়েক। এই প্রথম আফরা মেয়েটা ওর চিন্তাভাবনাকে অন্য মোড়ে নিয়ে যাচ্ছে যেদিকে ফারহানের দিন চলে যায় রাজনীতির মাধ্যমে। ‘রাজনীতি’ , হ্যাঁ এই রাজনীতি জিনিসটাকেই ও জীবনের মূলমন্ত্র বানিয়ে রেখেছিলো। পরিবারিক ঝামেলার পর ছাত্রজীবনে ছোটভাবে এসবে যুক্ত হলেও ওর বিচক্ষণতা আর দূরদর্শীতার জন্য উপরমহলের অনেক নজর কেড়ে নেওয়াতে ফারহানের নামডাক অনেক বেড়ে গিয়েছে শ্রীমঙ্গলে। সিলেট বিভাগের যত অঞ্চল আছে, কম-বেশি সব পার্টিতেই ওকে আহবান করা হয় তাদের দলে নিযুক্ত করার জন্য। কিন্ত এসবে দৃষ্টি না দিয়ে ফারহান নিঃস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে সবার জন্য। এভাবেই চলছে দিনকাল। তবে এই প্রথম ফারহান এমন একজন মেয়ের মুখোমুখি হলো যে পুরোটাই ওর বিপরীত। বিপরীত তাদের জীবনাচার আর খাদ্যাভাসও। তবুও মেয়েটির জন্য এই প্রথম ফারহান বুঝতে পারলো যে রাজনীতিই জীবনের সবকিছু না,,,,,এর বাহিরেও একটি আলাদা জগত আছে।
সেটা সুন্দর কিনা সে জানেনা,,,তবে সেটা উপভোগ্য।
আফরা এবার প্রশ্ন করলো,,,
‘কি হলো আপনার?’
ধ্যান ভাঙলো ফারহানের। আফরা মেয়েটার ওর অনিশ্চিত জীবনের উপস্থিতি কেমন যেনো বিষিয়ে তুলছে। তাই ফারহান কঠোর গলায় বললো,,
-আপনি চলে যান এখান থেকে।
আনন্দিত মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো আফরার। ফারহান এমন ভাব করছে যেন আফরার এমন খারাপ মন হওয়াটা ওর কাছে কিছুই না। অজান্তেই আফরার মনে এক করুন হাহাকার জন্মালো। আচ্ছা ফারহানের উপস্থিতি আফরার যেমন ভালোলাগে ,,,,সেভাবেই কেনো আফরার উপস্থিতিটা ফারহানের ভালো লাগে না? একটা সুপ্ত অভিমান জেঁকে বসলো ওর মনে। যার কথা ফারহানের অজানা। আফরা মলিন গলায় বললো,,,
-ঠিক আছে। চলে যাচ্ছি। আর এই নিন আপনার টিশার্ট। আর কখনোই আপনার ব্যাক্তিগত জিনিস এভাবে আমায় দিবেন না।
ফারহান সেদিকে না তাকিয়েই বললো,,,
-এটা এখন আমার আর প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে আপনার কাছে রাখুন নয়তো ফেলে দিন। সেটা আমার ব্যাপার না।
ফিচালো হাসি দিলো আফরা।অবাধ্য বর্ষণধারার ন্যায় সিক্ত হয়ে ওঠছে ওর চোখজোড়া। ঠোঁট দুটো হালকাভাবে চেপে শার্টটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় আটকে নিলো। তারপর সময়বিলম্ব না করে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতেই চলে গেলো বাংলোর দিকে।
____________________
গতরাতের বৃষ্টি তান্ডবের পর সকালে আকাশ অনেক পরিষ্কার। কড়া রৌদ্দুরের রশ্নিতে সারা শ্রীমঙ্গল যেন খা খা করছে।চা বাগানে কর্মরত উপজাতিদের অদূরেই দেখা যাচ্ছে কাজ করতে। আফরা সেদিকে অবাক পানে তাকিয়ে থাকলো। গতকাল ফারহানের তিক্ত আচরণের জন্য বড্ড কষ্ট পেয়েছিলো সে। বুকের ভিতর জমে গিয়েছিলো একরাশ হাহাকার। তবে পরে ভাবে যে,,,কেনো এত কষ্ট পাচ্ছে সে? আদৌ কি সে ফারহানকে ভালোবাসেনাকি শুধু মোহে পড়ে আকর্ষণ পাওয়ার জন্য এরকম করছে? প্রত্যেকটি মেয়ের মধ্যেই একটি বৈশিষ্ট্য আছে যে, সে যদি কোনো ছেলেকে মনে মনে পছন্দ করে তার এটেনশন সে পেতে চায়। আফরা ভেবে নিলো এটাই। কেননা এসব ভালোবাসা তার জন্য না। আফরা রুমে বসে এসব ভাবছিলো তখনই দরজা খুলে এসে পড়লেন মিসেস নাবিলা। আজ উনার চোখে-মুখে উৎফুল্লতার ভাব। তিনি আফরাকে বললেন,,,
-একি আফরা? এভাবে গুমসুম হয়ে আছো কেনো?
-এভাবেই আন্টি,,,,ভালোলাগছে না।
আফরার একথাটি শুনে মলিন হয়ে গেলেন মিসেস নাবিলা। জড়ানো কন্ঠে বললেন,,,
-আহা ! তুমি এসেছ কতদিন হলো অথচ কোথাও নিয়ে যেতে পারলাম না তোমাকে। কি বলবো আমি তোমার বাবাকে?,,,,,,,,,,,,এক কাজ করো। ফটাফট রেডি হয়ে যাও।
চমকে গেলো আফরা। তাই বললো,,
-হঠাৎ কোথায় যাবো?
-ইলার সাথে কলেজে যাও। আজ ওদের কলেজে নেতা-পেতারা অনুষ্ঠান করছে ছাত্রদলের অধিবেশনের জন্য। আর এরা রাজনীতি করে তো,,,,ক্ষমতার জন্য কয়েকদিন এরা জনগণদের অনেক সুবিধা টুবিধা দেয়। তুমি যাও ওখানে, তারপর ফাহিম ইলার সাথে শ্রীমঙ্গল বাজারে সাত-রঙের-চা খেয়ে এসো। ভালোলাগবে।
আফরা ভাবলো এসময় ঘোরাটা মন্দ হবে না। তাছাড়া এখানে আসার উদ্দেশ্যটাই হলো ঘুরাফিরা করা,,,,ফারহানের তিক্ত ব্যবহারের শিকার হওয়াটা নয়। আফরা তাই মুচকি হেসে বললো,,
-ঠিক আছে। আমি তাহলে রেডি হচ্ছি।
মিসেস নাবিলা খুশি হলেন। এভাবে ফাহিম আর আফরা যদি একে অপরকে সময় দিতে পারে তাহলেই বিষয়টা আরও ভালোভাবে এগোনো যাবে। আর যাই হোক,,,,,,আফরা মেয়েটাকে ফাহিমের জন্য কিছুতেই হাতছাড়া করবেননা তিনি।
.
.
.
.
.
~চলবে…….ইনশাআল্লআহ