অদৃষ্টের মৃগতৃষ্ণা পর্ব-৩০+৩১

0
262

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৩০)
#লিখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী

“তুমি যদি আরেকবার আমায় ইগনোর করো তবে আজ সত্যি আমার থেকে রেহাই পেতে মুশকিল হবে তোমার।”

আধাঘন্টা আগে কাশফির কাছে পাঠানো লাস্ট মেসেজটা দেখে কৌশিক ফোন অফ করে ডিসপ্লে উল্টে টেবিলে রাখলো। হুট করে ভীষণ রকমের অস্থির অস্থির লাগছে তার।
আজ প্রথম কোনো প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনে বিন্দুমাত্র মনোযোগ রাখতে পারলো না কৌশিক, চিন্তায় চিন্তায় কপালে দুই আঙ্গুল ঘষছে। কাব্য খেয়াল করার সত্ত্বেও কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে কিছুক্ষণ পূর্বেও ডেটের জন্য উচ্ছ্বসিত হয়েছিল কৌশিক, বুকিং করাও শেষ কিন্তু সকাল থেকে তার কোনো মেসেজই সিন করেনি কাশফি, দুপুরের দিকে কয়েকবার কল করেছিল কিন্তু রিসিভ করেনি এখন কাশফির ফোনে কোনো কলই যাচ্ছে না, লাইনে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানাচ্ছে বার বার। ইচ্ছে করে ফোন অফ করে রেখেছে ভেবেই সে রেগে আগুন হয়ে আছে। বিরস মুখে মিটিংয়ের থেকে সরে আসার জন্য সে উঠে দাড়ায়,

“কিছু ব্যক্তিগত কারণে আমার আজ এই পর্যন্ত শেষ করতে হচ্ছে, কন্টিনিউ জেন্টেলম্যান।”

কৌশিক মুখ বেজার করে মিটিং থেকে সরে এসে তার অফিস কেবিনে ঢুকে পড়লো। এসির পাওয়ার কমিয়ে টাই লুজ করে দিয়ে শার্টের দুটো বাটন খুলে দিলো। অস্থিরতা বেড়ে বুকের মাঝে কেমন যেনো ধড়ফড় করতে শুরু করলো। কৌশিক এসব নিয়ে মাথা ঘামালো না লিয়ার নাম্বারে কল দিয়ে রিসিভ করার অপেক্ষা করলো,

“হ্যালো ভাইয়া।”

“তোর ভাবীকে ফোনটা দে।”
কৌশিকের গম্ভীর গলার ঝাঁঝালো কণ্ঠে লিয়া বুঝে নিলো কৌশিকের মেজাজ ভীষণ চটেছে। ঢোক গিলে সে কি বলবে না বলবে খুঁজে পায়না তৎক্ষণাৎ কৌশিকের কড়া ধমকের সুর শোনা গেলো আবার,

“কিরে? তোকে বলেছি ফোনটা গিয়ে তোর ভাবীকে দিয়ে আসতে তুই কি শুনিস নি?! আবার রিপিট করবো?!”

লিয়া ভয়ে অমতা অমতা করে বললো,
“ভাইয়া, ভাবী তো বাসায় নেই।”

কৌশিক কিছুক্ষণের জন্য মৌন রইলো, সে কী ঠিক শুনেছে কিনা যাচাই করলো বোধহয়। কানের থেকে ফোন নামিয়ে সময় দেখলো, এখন তো পড়ন্ত বিকেল প্রায়। কাশফির ড্রাইভার থেকে তো আগেই জানতে পেরেছে যে কাশফি বাসায় এসেছে তবে কি বুঝালো লিয়া। কৌশিক গমগমে সুরে বলল,

“নেই মানে? ভার্সিটি থেকে ফিরে কোথায় গিয়েছে?!”

“ভার্সিটি থেকে ফিরেছিল কিন্তু এরপর তার আর কায়েসের লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, কোথায় গিয়েছে কিছুই জানিনা।”

কৌশিক আগুনের গোলার মতো বিস্ফোরিত হলো, কাশফির হুট করে না জানিয়ে চলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই যদি না কেউ তাকে হেনস্থা করে। তার আত্মসম্মানবোধ চরম, অন্তত কৌশিক বিশ্বাস করে যে কাশফি সাথে বাজে কিছু ঘটেছে।
“লিয়া, সত্যি করে বল ঠিক কি হয়েছে সেখানে…”

“ভাইয়া…

***

রেস্টুরেন্টের ছাদে বসে কায়েস এলোমেলোভাবে পাস্তা আর জ্যামাইকান ফ্রাইড চিকেন খাচ্ছে। জোভানের সামনে বসা অনুভূতি শুন্য কাশফি আলতো হাতে বার বার টিস্যু দিয়ে মুছে দিচ্ছে কায়েসের সস লেগে যাওয়া মুখ। জোভান তপ্ত নিশ্বাস ফেললো জিজ্ঞেস করতে ভীষণ ইতস্তত বোধ হলো তার। তবে নিরবতা প্রথমে কাশফিই ভাঙলো,
“আপনি শুধু শুধু আমাদের পিছনে সময় নষ্ট না করেই পারতেন জোভান।”

আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গিয়েছে জোভান, প্রাণবন্ত হাসিটাও দেখলো না কাশফি। না চাইতেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে তাকে, অথচ সে তার প্রতি এখনো সদয়। মনে মনে অনুশোচনা হলো খুব।

“তুমি কল কেনো ধরো নি, ঈশিতা? আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।”
জোভানের কণ্ঠ কিছুটা ভঙ্গুর, চোখজোড়া বোধহয় ছলছল করছিল। কাশফি শুকনো ঢোক গিললো তারপর নজর আড়াল করে মিনমিনে কন্ঠে বললো,

“ভুল বুঝাবুঝির কারণে রেগে ছিলাম।”

“আমি সেদিন সত্যি তোমার জন্য এসেছিলাম।”
— জোভান থেমে গিয়ে কিছু একটা ভেবে মুখ বেজার করে নেয়। কৌশিকের দেওয়া প্রমাণ মনে পড়লেই তার ভিতর ছলাৎ করে উঠে। আবার কাশফির দিকে একনাগাড়ে চেয়ে বিরস কণ্ঠে বললো —
“হয়ত তুমি আমাকে কৃপা দেখিয়ে বিয়েতে রাজি ছিলে কিন্তু আমি সত্যিই তোমায় ভালোবেসে ছিলাম।”

নজর লুকিয়ে চুরিয়ে থাকা কাশফি অপরাধীর ন্যায় মাথা নত করে নিলো। জোভানের গলার দুর্বল স্বর শুনে তার গলা কাপছে, ভীষণ কাপছে। জেনে বুঝে তার দ্বারা এত বড় অপরাধ কি করে হলো? অন্তত সে করো অনুভূতি নিয়ে বিশ্রী রকমের খেলা খেলতে চায় নি। কখনোই না! চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিললো সে।

“I’m sorry, জোভান। আমি সত্যিই খুব লজ্জিত, আমি ভেবেছি বাবার কথায় রাজি হয়ে আমি ঠিক জিনিস করছি।”

জোভানের রাগ জায়েজ, সে চেয়েও রাগ লুকাতে অক্ষম হলো। রাগ, দুঃখ, হতাশা মিলিয়ে জটলা পাকিয়ে প্রকাশ্য হলো,
“এটলিস্ট তুমি আমায় বলতে তো পারতে যে তুমি আমাকে পছন্দ করো না। ভালোবাসার পরিবর্তে করুণা তো আমি মোটেও চাইনি ঈশিতা।”

কাশফি থমকায় তারপর চমকে উঠলো,
“তুমি কিভাবে—”
নিজের পুরে কথা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়, হঠাৎ চট করে মাথায় ধরে—
“কৌশিক বলেছেন এমন?”

“হয়ত তার মাধ্যমে জেনেছি তবে তোমার মুখ থেকে জানতে চাইছি এটা কি সত্যি নয়?”

কাশফির চোখ বন্ধ হয়ে এলো, হাত মুঠ করে নিয়ে আরেকদফায় বিষণ্ণ হয়ে এলো তার বদন। ভীষণ অনুতপ্ত সে কিন্তু ক্ষমা চাইবার কোনো পন্থা যে নেই তার কাছে।
“আমি ক্ষমা চাইলেও কম হয়ে যাবে, জোভান। বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে হার্ট করতে চাইনি। আমি…”

কাশফির গলায় কথার দলা পাকিয়ে যায়, চোখে জমতে দেখে জোভান থামিয়ে দিলো। এসব নিয়ে সে আর কিছুই শুনতে চায় না যত শুনবে ততই রাগ বাড়বে।

“ঈশিতা, যা চলে গিয়েছে তা নিয়ে কথা না বলাই শ্রেয়।”

কাশফি হাত বাড়িয়ে জোভানের হাতের উপর হাত রাখলো। জোভান থমকালো, এই প্রথমবার বুঝি স্বেচ্ছায় কাশফির ছোঁয়া পেলো তবে তা ক্ষনিকের জন্য। তাকে নিরাশ করে কাশফি হাত সরিয়ে নিলো তারপর মুখে হাসি রেখে বললো,
“ইউ ডিজার্ভ বেটার জোভান, আশা করি তুমি কোনো একদিন আমায় ক্ষমা করে দিবে।”

জোভান নিজের উপর নিজে হাসলো, সে বেটার ডিজার্ভ করে কিন্তু কাশফি তার সেই বেটার একজন নয়। কথা পাল্টানোর জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নেয় সে।

“তুমি বলো আমায়, তুমি কৌশিকের সাথে কেমন আছো?”

“ভালো।”

“লাগেজ নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলে?”

কাশফি জোর পূর্বক হেঁসে ঝট করে উত্তর দিলো,
“সামনেই আমার ছোট চাচার বাড়ি, সেখানে যাচ্ছিলাম।”

জোভান ভ্রু কুঞ্চিত করলো, কৌশিকের দায়িত্বহীনতা তার চরম অসহ্য লাগলো। আর আগে থেকে তো রাগ ছিলোই তাই আচ্ছা মতন ঝেড়ে দিলো,
“কৌশিক তোমাকে দিয়ে আসছে না? এত কিসের ব্যস্ততা তার?”

কৌশিকের নাম শোনা মাত্রই কাশফির ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো। জোভানের মুখে কৌশিকের বিরুদ্ধে এমন কিছু শুনে তার মন বিষিয়ে উঠলো। দায়িত্বহীনতা আর কৌশিককে এক বাক্যে বসানো অসম্ভব কিছু। তবুও নিজের অসন্তোষ লুকিয়ে সে বললো,

“উনি অফিসে ছিলেন তাই জানাই নি।”
অবিশ্বাস্য লাগলো কাশফির এতগুলা মিথ্যে সে নিমিষেই বলে ফেললো, মুখে পর্যন্ত বাঁধলো না।

জোভান দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার কিছু একটা খটকা লাগছে, কাশফির আচরণও তার কাছে খুব একটা সুবিধার ঠেকছে না।
“তুমি কি আসলেই ঠিক আছো কাশফি? কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো, I can help you.”

“আমি ঠিক আছি জোভান, থ্যাংকস বাই দ্যা ওয়ে।”

কাশফির কথায় সে ধরে নিলো কাশফি কথা বাড়াতে অনিচ্ছুক। তবুও সে আরেকবার তাকে সাহায্যের হাত বাড়িতে জিজ্ঞেস করলো।
“যদি তুমি চাও আমি তোমাদের ড্রপ করে দিয়ে আসতে পারি।”

“ইটস ওকে জোভান, আমি ক্যাব বুক করে দিয়েছি। আমরা চলে যেতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না।”
— কাশফি ইশারা করে বিল নিয়ে আসতে বললো তারপর জোভানের দিকে ফিরে একটা বন্ধুসুলভ হাসি হেসে নরম গলায় বললো,
“লাইফ কখনো কারো জন্যই থেমে থাকে না, এখন ক্ষনিকের জন্য কষ্ট পাচ্ছ কিন্তু সৃষ্টিকর্তার প্ল্যান হয়ত আরো ভালো কিছু। নিজের খেয়াল রেখো আমি উঠছি।”

ওয়েটার টেবিলে বিল নিয়ে আসলে কাশফি বিল দেওয়ার পূর্বেই জোভান বিল পরিশোধ করলো,
“আমি থাকতে তোমার বিল দেওয়ার প্রয়োজন নেই ঈশিতা।”

কায়েসকে নিয়ে কাশফি বিদায় জানিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে নেমে পড়লো। ম্লান হাসলো জোভান, দুই চোখ কাশফির যাওয়ার পথে নিবন্ধিত।‌‌ সব কিছু ভুলে যাওয়া কি এতো সহজ? হয়ত।

“তুমিও নিজের খেয়াল রেখো ঈশিতা, বিদায়।”

***

কাশফি ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো বিছানায়, আর বিছানার শুয়ে শুয়ে নানান রকমের উল্টোপাল্টা ছড়া আওড়াচ্ছে কায়েস। কাশফি হাই তুললো, সারাদিনের ধকলে তার শরীর প্রচুর ক্লান্ত। তারপর সে এগিয়ে গিয়ে কায়েস কে বললো,
“গায়ে ধুলো বালি জমেছে, চল ফ্রেশ হতে হবে।”

কায়েস প্রথমে বাহানাবাজি করলো কিন্তু কাশফি টেনে কোলে তুলে নিয়ে চললো।

“আচ্ছা বুবু দে’হ ব্য’ব’সা মানে কি?”
কাশফির থমকে দাড়ায়, গায়ে অজস্র হুল ফুটলো যেন। সে বিস্মিত চোখে কায়েসের নির্মল মুখের দিকে চায়। তারপর কড়া কণ্ঠে ধমক দিয়ে বললো,
“ভালো মানুষদের এসব বলতে নেই। আর যেনো কোনো দিন এই শব্দ মুখে না শুনি!”

“তাহলে ওরা কেনো বললো? ওরা কি পঁচা?”
কাশফির গলায় বিশাল পাথর বাঁধলো যেন। সে কোনো উত্তর না দিয়ে কায়েস কে বাথরুমের নিয়ে গেলো। হাত মুখ ধুয়ে টাওয়াল দিয়ে মোছানোর পর সে কায়েসের কপালে চুমু দিয়ে বললো,

“আজ যা হয়েছে তা ভুলে যাবি। ওরা যেমনই হোক ওদের মতো থাকুক, তুই ভালো তো দুনিয়া ভালো।”

কায়েস মনোযোগ দিয়ে শুনে বুঝদারের মতো মাথা নাড়ায়। কিছু কিছু জিনিস ভুলে বাঁচতে ক্ষতি নেই। যেমন কৌশিক মির্জা, তাকে ভুলতে সময় লাগবে তবে ভুলে যাবে, হয়ত। কাশফি নিশ্চয়তা দিতে পারলো না।

কিছুক্ষণ পর রুমে নক করলো কেউ, ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বেজে পার হতে দেখে ভাবলো ডিনার নিয়ে এসেছে। সে দরজা খুলে দাড়িয়ে অনড় হয়ে রয়।
তৎক্ষণাৎ প্রাণহীন ক্লান্ত একজোড়া ধূসর চোখের তির্যক দৃষ্টিতে আটকা পড়লো সে। দরজার অপর পাশে উষ্কখুষ্ক চুলে, ভাঁজ নষ্ট হয়ে আসা শার্ট পরে, ক্লান্ত মুখশ্রী নিয়ে দাড়িয়ে আছে কৌশিক। কৌশিকের আলুখালু অবস্থা দেখে বিস্মিত কাশফির বুকের ভিতর নিঙ্গড়ে উঠলো, বুকের বাম পাশে সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করলো। সে তো লুকিয়ে চুরিয়ে এসেছে তবে কৌশিক তার কাছে পৌঁছালো কি করে?
কাশফিকে দেখা মাত্রই নিমিষে কৌশিকের সব ক্লান্ততা মুছে গিয়ে মুখশ্রী ক্রোধান্মত্ত হয়ে উঠলো। দুই কদমের দূরত্ব ঘুচিয়ে কাশফির কাছে পৌঁছাবে তার পূর্বেই আতঙ্কিত কাশফি ধরাম করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।

“ওপেন দ্যা ফাকিং ডোর, কাশফি!”
কৌশিকের ভয়ঙ্কর গর্জনে কাশফির আত্মা কেঁপে উঠলো, কৌশিককে নিজের কিংবা কায়েসের শব্দ না শুনতে দেওয়ার জন্য মুখে আঙ্গুল তুলে কায়েসের দিকে ইশারা করলো চুপ থাকার জন্য। কৌশিক দুই একবার দরজায় ঘুষি, লাথি মেরে তাকে খোলার জন্য হুমকি দিলো।

কৌশিক আরেক দফায় হুংকার ছুড়লো,
“আমার থেকে পালানোর অনেক সাহস না তোমার, কাশফি? তাহলে লুকিয়ে কেনো আছো। এক্ষুনি বের হয়ে আসো!”
প্রতুত্তরে কাশফি কিছুই বললো না, ভয়ে ভয়ে অপেক্ষায় রইলো কৌশিক কবে প্রস্থান করবে সে ক্ষণের। এদিকে কৌশিক নাছোড় বান্দা, জ্বলন্ত উল্কা পিণ্ডের মতো আগুনের গোলা ছুঁড়ছে অনবরত।

“আরেকবার ওয়ার্ন করছি, যদি তুমি না খোলো তবে আমি অন্য উপায়ে ভিতরে আসছি।”
কৌশিক কাশফির জবাবের অপেক্ষা করলো কিন্তু কাশফির কোনো উত্তর এলো না। হতাশা আর রাগে গজগজ করে ফেটে পড়ার উপক্রম তার, তৎক্ষণাৎ লেভিন ম্যানেজার থেকে রুমের অতিরিক্ত চাবি নিয়ে হাজির হয়। কৌশিক চাবি দিয়ে খুলে রুমে প্রবেশ করেতে গেলে কাশফি দরজায় চাপ প্রয়োগ করে ঠেলে ধরলো। এই চাপ কৌশিকের কাছে পিঁপড়ার সমতুল্য মনে হলো। সে নিমিষেই দরজা হালকা ফাঁক করে জুতো পরা পা প্রবেশ করালো, এদিকে কাশফি কৌশিকের জুতা দেখে আরো জোর লাগালো কিন্তু কৌশিক অনায়াসে ঢুকে পড়লো অবশেষে।

কৌশিকের গায়ের অত্যধিক জোরে কাশফি সরে গিয়ে কিছুটা দূরে হটলো। কৌশিক ভাবলেশহীন পকেটে হাত দিয়ে কাশফির সম্মুখে এসে দাড়িয়ে তার হা হয়ে থাকা মুখশ্রীতে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয়। তারপর তার বামে দাড়ানো গার্ড কে ইশারা করে কায়েসকে নিয়ে যেতে বললো। ঘাবড়ে গিয়ে কাশফি কৌশিকের উদ্দ্যেশে কিছু বলবে তার পূর্বেই কৌশিকের ক্রুদ্ধ কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হলো,

“চুপ, একদম চুপ!”
কৌশিকের হিংস্র চাউনি আর রাগের প্রকোপ উপলব্ধি করে কাশফির প্রতিবাদ গলায় আটকে গেলো। মৌন রয়ে ভয়ার্ত মুখে কেবল দেখে গেলো কিভাবে বুঝিয়ে ভুলিয়ে গার্ডটা কায়েসকে কোলে তুলে নিয়ে যায়। সাথে আরেকজন এগিয়ে গিয়ে তার লাগেজ দুটো নিয়ে নিয়ে প্রস্থান করলো।
লেভিন কৌশিকের কানের কাছে এসে কিছু একটা বলে বাকি পাঁচ জন গার্ড নিয়ে দরজা আটকে বাইরে বেরিয়ে গেলো। রুমে রইলো কেবল ভীতিগ্রস্ত কাশফি আর শিকারীর মতো নজরে চেয়ে থাকা ক্ষিপ্ত কৌশিক।

“আমি ম্যানেজারের সাথে কথা বলবো, কৌশিক পথ ছাড়ুন।”
কাশফির ভয়ার্ত কন্ঠে কৌশিক যেনো আরো আগুন।

“আজ কুকুরের মতো দৌড়ের উপর রেখেছ আমায়। তোমাকে না পেয়ে আমার ভিতর কি চলছিল সেই খবর কী রেখেছো?”

“কৌশিক প্লিজ —”
বাকি কথাটুকু শোনার ইচ্ছে হল না কৌশিকের, উন্মাদের মতো ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে কাশফীকে দেওয়ালে চেপে ধরলো। চিৎকার করে আবার প্রশ্ন করলো,

“১৯৬ বার কল দিয়েছি তোমায়, ইচ্ছে করে কি ফোন ধরো নি?!”
কাশফি প্রতুত্তরে কেঁপে উঠলো কেবল, নিজেকে শক্ত রাখার ঢের চেষ্টা করলো কিন্তু অক্ষম হলো বারবার। তবুও হার না মেনে চোখ নামিয়ে কৌশিকের চোখের আড়াল থেকেই ধরা গলায় বললো,
“ধরার কোনো কারণ ছিল না কৌশিক। আমাদের মাঝের ক্লাস ডিফারেন্স কি আপনার চোখে পড়ে না?!”

কৌশিকের মেজাজ বেজায় তুঙ্গে, বিস্ফোরিত নয়নে উগ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,
“ক্লাস ডিফারেন্স— সেটা কোত্থেকে এলো?!”

“এক্সাক্টলি, আপনি এলিট সোসাইটির একজন মানুষ আর আমি মিডেল ক্লাস।”

“I don’t fúcking care.”
কাশফি শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেয়, তার নিশ্বাসের উঠানামা বেগতিক। কৌশিকের পুরুষালি দেহের উষ্ণতা তার দেহ ছুঁই ছুঁই, দুটো শরীর কেবল কাপড় দ্বারা পৃথক হয়ে আছে। কৌশিকের এতো কাছে পেয়ে নিজেকে মাতাল মনে হলো কাশফির। ড্রাগ এডিক্টের মতো সে স্বামীর শরীর হয়ে আসা কোলন, ঘামের গন্ধ আর পুরুষালি মাস্কি ঘ্রাণের মিশ্রণ নাকে টেনে নেয়।
পরক্ষণে নিজেকে ধাতস্থ করে তপ্ত নিশ্বাস ফেলে হতাশা মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,
“কিন্তু মানুষ তো ঠিকই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করবে।”

“যে আঙ্গুল তুলবে তার হাত আমি আলাদা করে ফেলবো।”

“কৌশিক, আমি আমার চরিত্রে কোনো দিন দাগ লাগতে দিই নি কিন্তু এখন আপনার জন্য মানুষ আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এবার তফাৎ বুঝলেন?!”

কৌশিকের রাগ কমলো না তরতর করে বেড়ে চললো সে চোয়াল শক্ত করে বজ্র কণ্ঠে জানালো,
“তোমাকে যে যাই বলুক না কেন তোমার প্রয়োজন ছিল আমাকে জানানোর। আমি যে মুখ তোমার অপমান করেছে সে মু’খ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিতাম।”

“কয় জনের মুখ বন্ধ করবেন আপনি কৌশিক?”

“যতজন তোমার বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলবে ততজনের।”

“এসব সম্ভব না, আমার কাধে আমার বাবা আমার ভাইয়ের দায়িত্ব আছে আর আপনার বাড়ির পরিবেশ আমার ভাইয়ের জন্য উপযুক্ত না।” — কাশফি থামলো তারপর ঠোঁট কামড়ে ধীর শব্দে আবার বললো —
“আমি আপনার সাথে আমার ভবিষ্যত দেখতে পাই না কৌশিক।”
কিন্তু কাশফির নাজুক সত্তা তার কথাটার ঘোর বিরোধিতা করলো। একথা সম্পূর্ন মিথ্যে দাবি করলো। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো সে, এতটা দুর্বল নিজেকে ভাবতেই অবাক লাগলো তার।

“আমার হাত আকড়ে ধরে রাখো কাশফি তবেই ভবিষ্যত দেখতে পাবে।”
কৌশিক কাশফির ইন্সিকিউরিটি বুঝতে পারলো। তাই নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টায় কাশফির মুখের দিকে মুখ বাড়িয়ে নাকে নাক লাগালো, এক হাতে কাশফির নরম গাল ধরে অন্য হাত তার কোমরের খাঁজে রেখে গলা নামিয়ে তীব্র অধিকারবোধ নিয়ে বললো,

“ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ কিংবা অধিকার কোনোটাই আমি তোমাকে দিচ্ছি না — দিবো না।”

কাশফি নিজের মনোযোগ ক্ষুণ্ন হতে দিলো না তবে কৌশিকের হাত তার কোমরে বিচরণ করছে সেটাও উপেক্ষা করতে পারলো না। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেকে যথা সাধ্য শক্ত রেখে দৃঢ় কণ্ঠে জানালো,
“আমার জন্য আমার সেলফ রেস্পেক্ট বড় তাই আমি আপনার সাথে মির্জা বাড়িতে ফিরছি না।”

“যেখানে তোমার অপমান হয়েছে সেখানে তোমাকে ফিরতে হবে না। তুমি শুধূ আমার হাত ধরে চলো, তোমাকে রাজ্য আর সিংহাসন দেওয়ার দায়িত্ব আমার।”

কাশফি স্তব্ধ হয়ে পড়ে, মানুষটা নিজে, তার কণ্ঠ আর তার প্রতিটা শব্দ প্রেমে পড়ার মতো। তার পেটের ভিতর হাজার হাজার রঙিন প্রজাপতি ডানা মেলে উড়োউড়ি করতে লাগলো। আগত কৌশিকের ঘ্রাণ তার শ্বাস প্রশ্বাসে মিশে একাকার।

“বিশ্বাস করো আমায়?”
কাশফি সরাসরি কৌশিকের চোখে চোখ রাখলো, কৌশিকের মুখে অকপটভাব, বেশ সিরিয়াস সে। কাশফি নিমিষেই গলে গেলো যেনো, চাতক পাখির মতো কিছুক্ষণ কৌশিকের দিকে একনাগাড়ে চেয়ে রইলো অনেকক্ষণ, এক যুগ পর দেখা হলো যেন। আর যাই হোক কৌশিক মির্জা নামক তুফান এই মন থেকে ধুয়ে, মুছে কিংবা তুলে ফেলা অসাধ্যকর।

অতপর কাশফি মেনে নিলো, খুবই হালকাভাবে মাথা নেড়ে কৌশিকের সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হওয়া মাত্রই কৌশিক কাশফিকে চট করে কোলে তুলে তার কোমল অধর নিজের ওষ্ঠাধরের মাঝে চেপে, টেনে ধরলো।
কাশফির উরুদ্বয় কৌশিকের শক্ত পেটানো কোমরে জড়ানো।

তার মেয়েলী নমনীয় অধরে দাঁতের আঁচড়ে শিরশিরানি অনুভূতি হলো পরক্ষণে প্রবল বেগে জিভের আদ্র স্পর্শে মাতোয়ারা হয়ে উঠলো। বলিষ্ঠ অবাধ্য হাত জোড়ার বিচরণ চললো তার সর্বাঙ্গে, প্রতিটা ভাজে। ঘণ্টার পর ঘন্টা কৌশিক থেকে আড়াল থেকে ব্যাকুল হয়ে উঠে কাশফিও। নিজেকে সপে দিতে বিলম্ব করলো না।

“You taste divine, Kashfi. My sweetest sin.”
কৌশিক উন্মাদের মতো অধর ছেড়ে ফতুয়ার বোতাম এক টানে খুলে ফেলে এলোপাথাড়ি নাক ঘষলো গলায়, মোহ আচ্ছন্ন হয়ে সুরসুর করে চেরি ব্লোসোমের ঘ্রাণ এলো নাকে, সম্পূর্ণ কাবু হয়ে পড়লো কৌশিক। তার শক্তিধর চুমুতে সিক্ত হলো কাশফির গলা, বক্ষস্থল, উরোজ। ধূসর চোখের স্পষ্টত কামুক দৃষ্টি ফেলে ব্যক্তিগত নারীর ত্বকে নিজের করা লালাভ আবরণে ঢের সন্তুষ্ট হয়।

“I think I’m badly enamoured of you.”
কৌশিকের নিচু স্বরের হাস্কি কণ্ঠে প্রগাঢ় উত্তেজনা, কাশফি রুদ্ধশ্বাস হয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো কিন্তু কৌশিক তার বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কাশফির দাঁত থেকে ঠোঁট টেনে নিয়ে বললো,

“আমার কাজ আমায় করতে দাও।”
আরেকটা প্যাশনেট চুমুর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনহারা দুজন, একে অপরের মাঝে ডুবে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। তাদের ভার ছেড়ে দিলো বিছানা, একজোড়া শক্ত বাহু তার কোমর প্যাচিয়ে আলিঙ্গন করে নিলো তার ধরে চুমুতে সিক্ত করে দুই কায়া একে অপরের মাঝে মিশে একাকার।

হঠাৎ দরজায় শক্ত হাতের ঠকঠক শব্দ শুনে অর্ধনগ্ন কাশফির উপর থাকা কৌশিক রুষ্ট হলো। লেভিনের উল্টোপাল্টা টাইমিং দেখে মেজাজ খারাপ হলো। সে তাকালো রুদ্ধশ্বাস হয়ে বিমূঢ় বনে থাকা কাশফির দিকে। সে কাশফিকে অনিচ্ছাকৃত টেনে তুলে ফতুয়া গায়ে জড়িয়ে নিয়ে কাশফির লালাভ ঠোঁটে শক্ত একটা চুমু বসিয়ে দিলো। তারপর কড়া ভাষায় নির্দেশসূচক জানিয়ে দিলো,

“We are not done yet, wife.”
কাশফির লাজ গাল হয়ে গলা আর কান ছুঁয়েছে। সুবিধাবাদী কৌশিক সুযোগ বুঝে কানের লতিতে কামড়ে ফিসফিস করে রুক্ষ স্বরে বললো,

“একা পাই তোমায় তারপর বাকি অসম্পূর্ণ কাজটুকু সেরে ছাড়বো ইনশ’আল্লাহ।”
কাশফির কান দিয়ে দিয়ে ধোয়া বের হয়ে লজ্জায় ঝা ঝা করলো। আড়ষ্ট হয়ে সে উঠে দাড়িয়ে পড়লো, এদিকে কৌশিক শার্ট ইন করে দরজা খুলে দাড়ালো।

মুখে হাসি নিয়ে লেভিন বললো — “সরি টু ডিস্টার্ব ইউ বস।” তারপর সে কৌশিকের দিকে বাড়িয়ে একটা পেন ড্রাইভ দিলো।
কৌশিক বিরস মুখে পেনড্রাইভ নিয়ে গাড়ি রেডি করে রাখতে বলে তারপর কাশফির কোমর ধরে টেনে তার সঙ্গে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো দুজন। হোটেল ছেড়ে গাড়ি চলতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাওয়া কাশফি পাশাপাশি বসে থাকা কৌশিকের দিকে অবিশ্বাস্য নজরে দেখে, কাশফির গা ঘেষে বসা কৌশিক গাড়ি তে উঠেই কানে ইয়ারপডস গুঁজে ল্যাপটপের স্ক্রিনে কিছু একটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কৌশিকের কর্ম ব্যস্ততা দেখে কাশফি যেনো বোকা বনে গেলো অথচ কিছুক্ষণ আগে কিনা কা মুকতার উত্তাপে দগ্ধ হয়েছিল দুজন আর এখন কি করে সে এতটা নিরুদ্বেগ হয়ে আছে? কই কাশফি তো এমন হতে পারছে না।

কৌশিকের নজর অনড়, চোয়াল শক্ত, মনোযোগ অক্ষুণ্ন। মাঝে মাঝে সে হাত মুষ্টিমেয় করছে। তার এতো গভীর মনোযোগ কিসের প্রতি তা আড়চোখে দেখে নিলো কাশফি তবে ল্যাপটপ স্ক্রিনে দুপুরের ঘটনার ফুটেজ দেখে কাশফি স্তব্ধ হয়ে গেল। ভাবলো এসব কৌশিক কেনো দেখছে? কাশফি কৌশিকের দিকে ভালো করে তাকিয়েও কিছুই বুঝতে পারলো না। নিজের চিন্তা চেতনা আড়াল করে রেখেছে কৌশিক মির্জা।

গাড়ি থামলো মির্জা বাড়ির সামনে, কাশফি ভ্রু কুঁচকে নেয়। কৌশিকের কিছুই বোধগম্য হলো না তার। সে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি ফেলে কৌশিকের দিকে,
“আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?”

কৌশিক কাশফির কপালে চুমু দিয়ে উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে গম্ভীর স্বরে বলল,
“তুমি গাড়িতে বসো, আমি আসছি।”

তারপর কৌশিক নেমে হনহনিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। গাড়িতে কাশফিকে একা রেখে ড্রাইভার আর লেভিন নেমে গাড়ির কাছেই দাড়ালো। বেশ কিছুক্ষণ পরও কৌশিক বেরিয়ে এলো না। কাশফির মন আরো উতলা হয়ে উঠলো। কেনো কৌশিকের কোনো সাড়া শব্দ নেই? তার কাছে শান্ত কৌশিক থেকে রাগান্বিত কৌশিক ঢের ভালো লাগে। অন্তত সে রাগান্বিত কৌশিকের রাগ আন্দাজ করতে জানে কিন্তু শান্ত কৌশিক মৃগতৃষ্ণার মতো।
হুট করে একটা তীক্ষ্ম চিৎকারের শব্দ কানে এলো তার, সে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে উচ্চস্বরে লেভিন কে ডাকলো, সিগারেট ধরে দাড়ানো লেভিন পাশ ফিরে কাশফির দিকে চেয়ে এক ভ্রু উচু করলো।

“মাত্রই ভিতর থেকে চিৎকারের আওয়াজ শোনা গিয়েছে।”

“তো?”
লেভিনের দায়িত্বহিনের মতো কাণ্ডে কাশফি ভরকে গেল।

“তো মানে কি? আপনার গিয়ে দেখার দরকার!”

“কেউ মরুক বাঁচুক তাতে আমার কি?”

কাশফি পুরোপুরি বেকুব বনে গেলো যেনো,
“আপনি কি আমাকে দায়িত্বহীনতা দেখাচ্ছেন?”

“আমার দায়িত্ব এখন আপনাকে দেখে রাখা যা আমি একনিষ্ঠ হয়ে করছি।”

কাশফি সাফ সাফ বুঝতে পারলো কেনো কৌশিকের রাইট হ্যান্ড লেভিন কারণ উভয়ই একই ক্যাটাগরির লোক, তারছেড়া।
“কিন্তু, এতক্ষণ হলো কৌশিক বের হচ্ছে না কেনো তা তো জানা দরকার!”

“কুল ডাউন, ম্যাডাম। বস ঠিকাছে।”

কপাল চাপড়ালো কাশফি তারপর বিরক্ত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বললো,
“আপনাকে কিছু বলাই সময় নষ্ট, আমিই নামছি।”

কাশফি নেমে গিয়ে বেশ দ্বিধা নিয়ে হেঁটে আসলো। দরজার কাছাকাছি আসতেই কৌশিকের ক্ষুব্ধ কণ্ঠ শুনতে পেলো,
“আপনি কাপুরুষ ছিলেন চাচা তাই আপনার বউ এতগুলো জীবন নষ্ট করার সত্ত্বেও আপনি কিছুই করতে পারেননি।”

কৌশিকের এমন কথায় সে স্তব্ধ হয়ে গেলো, এবার দ্রুত পায়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পুরোপুরি থমকে গেলো। পুরো দৃশ্য আবার নিজ চোখে দেখে নিমিষেই তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। ভাবতে পারেনি এই মুহূর্তে ঠিক পাঁচ বছর আগের কৌশিকের ভয়ানক রূপ আবার দেখতে পাবে,
নিষ্ঠুর, নির্দয়, নির্মম।
The cold blooded brutal murderer Koushik Mirza.

পাঁচ বছর আগের কথা ভাবতেই তার গা গুলিয়ে আসলো, তখন তার বয়স ১৯ বছর ছিল আর এখন ২৪। এত লম্বা সময় পেরিয়েও সেদিনের কথা সে আজও ভুলতে পারে নি।

কৌশিকের দুজন গার্ড অনামিকা আর মালতীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে, টেবিলে কৌশিকের চাচা থ মেরে বসে আছেন যেনো তিনি অবিশ্বাস্য কিছু দেখেছেন আর মাধবী অশ্রু মুখে কৌশিকের কাছে মিনতি করছে।

কৌশিক করো কোনো কথা কানেই তুললো না, সে তার গার্ডের হাত থেকে কেরোসিন নিয়ে নিচে ফেলে রাখা দামী দামী ব্র্যান্ডের ব্যাগ, ড্রেস, শাড়ি, এক্সপেনসিভ সব এন্টিক জুয়েলারির উপর ছড়িয়ে দিলো তারপর পকেট থেকে লাইটার নিয়ে এসব দামী জিনিসের উপর ছুড়ে ফেললো। মুহূর্তেই দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলতে শুরু করলো জিনিস গুলো আর শোনা গেলো মাধবীর চিৎকার। মাধবীর চোখের সামনে সকল দামী শখের জিনিস পুড়তে লাগলো আগুনে। জ্বলন্ত আগুন অতি দ্রুত গ্রাস করে নিলো সব কিছু।

“চাচা, বাড়ি যেহেতু আমার তাই সিদ্ধান্তও একান্ত আমার হওয়া উচিত, তাছাড়া আমার ওয়াইফ এই বাড়িতে থাকতে অনিচ্ছুক তাই আমি কালই এই বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছি, এসব নিচু ক্লাসের প’তি’তা’দের আমার বাড়িতে জায়গা নেই। কালকের মধ্যে আমি এই বাড়ি খালি চাই। আপনার যদি যথেষ্ঠ অর্থ থাকে তবে আপনি আমার এস্টেট ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।”
কৌশিকের গলার স্বর শান্ত তবে চোখে মুখে হিংস্রতা। তার চোখ জোড়ায় প্রশান্তির চাপ, আগুনে জ্বলন্ত সব জিনিসের দিকে দৃষ্টি রেখে মাধবীর দিকে চেয়ে হুংকার ছুড়ে বলে,

“আমার মা তোমার মতো নিচু মহিলার জন্য সারা জীবন সাফার করেছেন। আমার মায়ের পর মিসেস কৌশিক মির্জা আমার সব আর তাই তুমি আমার ওয়াইফ কেও আঘাত করলে।”

কৌশিক এবার মাথা ফিরিয়ে অনামিকার সামনে দাড়িয়ে একটা ক্রুর হাসি হাসলো,
“তোর মতো হাই ক্লাস প্র/স্টি/টি/উ/টের সাহস কি করে হয় আমার ওয়াইফের গায়ে হাত তোলার? হুম?”
তারপর সে চওড়া গলায় তার গার্ড কে অর্ডার করলো ‘তার হাত ভেঙে গুড়িয়ে দাও যাতে মৃ/ত্যুর আগ পর্যন্ত চরম শিক্ষা হয়ে থাকে।’

কাশফি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সে চায় না কৌশিক করো খুন করুক তাই এসব আর মেনে নিলো না, কৌশিক কে থামানোর জন্য পা এগোবে তার আগেই লেভিন তার সামনে এসে পথ রুখে দাঁড়ায়,
“বসকে থামানো এখন অসম্ভব মিসেস মির্জা।”

“তাহলে আপনি তো আর থামাবেন না।”

“আমি আগেও বলেছি আমার নির্দেশ ছিল আপনাকে দেখে রাখা আর কিছু না।”

“আপনি সামনে থেকে সরে দাঁড়ান লেভিন, It’s an order.”
লেভিন চোয়াল শক্ত করে চোখ ছোট করে নেয় কিন্তু সরলো না। কাশফি হতাশ হয়ে কৌশিকের দিকে আরেকবার তাকালো কিন্তু কৌশিক যে নিজের আগুনে নিজে জ্বলছে, কাশফিকে দেখার সময় কই…
কিন্তু কাশফি তো একটা স্টেবল লাইফ চায়, যেখানে তার ভবিষ্যত দেখতে সুন্দর হবে কিন্তু কৌশিকের এমন রূপ সে মানতে নারাজ। তার শান্তিময় জীবনে খুন খারাপি সে কখনো চায় নি। আর দেরি না করে সে চিৎকার করে কৌশিক কে ডাকলো,
“কৌশিক এমন করবেন না, প্লিজ।”

কৌশিক থমকে গেলো, তারপর মাথা পাশ ফিরিয়ে বিস্ফোরিত নয়নে কাশফিকে চায়। কপালের রগ ফুলে ফেঁপে আছে, চোয়াল শক্ত, রাগে তার হিতাহিত জ্ঞান শুন্য। লেভিনের দিকে চেয়ে সে রুষ্ট কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো,

“লেভিন, তোমাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম তাকে এখানে না নিয়ে আসতে।”
লেভিন কিছু বলার আগে কাশফি বলে উঠলো ‘ তার কোনো দোষ নেই, আমি লেভিনের কথা শুনিনি’
সে ঘন ঘন শ্বাস ফেলে মনে ঢের সাহস জুটিয়ে কৌশিক কে ডিস্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করলো। তাই কৌশিকের কাছে এগিয়ে গিয়ে নরম কণ্ঠে বোঝালো,

“কৌশিক প্লিজ এভাবে অকারণে করো খুন করবেন না, প্লিজ।”

“অকারণ?! তোমাকে অপমান করেছে কাশফি মানে আমাকে অপমান করেছে, আমি কি করে তাকে ছেড়ে দিই?”
কৌশিকের গর্জনে কাশফির গলা শুকিয়ে গেলো তবুও সে দমলো না। কৌশিক যেভাবে তাকে কথার মাধ্যমে কাবু করে ঠিক সেভাবে কাবু করার চেষ্টা করলো।

“আমার কথা শুনুন কৌশিক, আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে চলুন, কায়েস আমাদের অপেক্ষা করছে। আপনিই তো বললেন আমাদের এখানে থাকতে হবে না। এসব করে নিজের কাঁধের পাপের বোঝা নিবেন না প্লিজ।”

“Are you worried about me, Sunshine?”
কাশফি মাথা নেড়ে তাকে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো তারপর মিনমিনে কণ্ঠে জানালো ‘অনেক’
কৌশিকের তৃপ্তি অনুভব হলো, তার বুকের আগুনের দগ্ধ উত্তাপের পরিবর্তে ঠান্ডা ধরনের প্রশান্তি অনুভব করলো। উত্তপ্ত লাভার মতো রাগ তার সেতো কবেই গলে পানি হয়ে গিয়েছে বেমালুম কৌশিক।

কাশফি শার্ট ধরে টেনে আবার আকুল অনুরোধ জানালো বাসায় নিয়ে যেতে। কৌশিক স্তম্ভিত হয়ে গেলো। বাসা? তবে কাশফি কি তার সাথে নিজেকে দেখতে চাইছে?! তার সাথে ভবিষ্যত দেখতে ইচ্ছুক কাশফি? কৌশিক মাথার মাথার উপর শক্ত চুমু দিয়ে কাশফির পিঠে হাত রেখে গার্ডদের নির্দেশ দিলো তাদের ছেড়ে দিতে। তারপর কাশফিকে বুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো,

“কাশফি, যেদিন আমার হাত ছেড়ে দিবে সেদিন জানে মেরে ফেলব তোমায়, এরপর নিজে ম’রে যাবো।”

#চলবে…

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৩১)
#লিখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী

“Don’t mix business with pleasure.”
একটা খুবই ছোট এবং সিম্পল প্ল্যান ছিল তার — কৌশিক মির্জার পার্সোনালি, Aura আর পাওয়ার ট্রান্সফর্ম করে নিজের হাতিয়ার বানানোর, প্ল্যান ছিল অতীত জানার তারপর কৌশিক মির্জাকে ব্যবহার করে টিস্যুর মতো ফেলে দেওয়ার কিন্তু এই প্ল্যানে বিশাল রকমের ধাক্কা খেয়ে পুরোপুরি থমকে গেলো কাশফি। নিজের কাছে এরকম বাজে ভাবে হেরে যাবে ভাবতে পারে নি সে!

কৌশিকের প্রতি বিয়ের আগে এমন ছোট ছোট অনুভূতি সে অগ্রাহ্য করে এসেছে কিন্তু বিয়ের পর থেকেই কৌশিকের ঘনিষ্ঠতা, কৌশিকের প্যাশন, কামনা- বাসনা, পরিতোষ, স্পর্শকাতরতা সব স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে উপলব্ধি করতে পায়। তার নিঃশ্বাসে কৌশিকের উপস্থিতি খুঁজে পায়, কৌশিকের স্পর্শের মাঝে উষ্ণতা খুঁজে বেড়ায়, তার বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে পুরো একটা রাত পার করে দিলেও দুঃস্বপ্ন ধরা দেয়না।
ইদানিং কৌশিকের নিকটে থাকলে ঘনিষ্ঠতার শিকার হলে তার সর্বাঙ্গ জুড়ে কৌশিকের সমীপে সমর্পণ করার তীব্র স্পৃহা প্রকাশ করে, ইচ্ছে আর আকর্ষণ এতো প্রবল হয়ে উঠে যে মাঝে মাঝে নিজের মাঝে কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না তার, মাতাল মনে হয় নিজেকে। সে কৌশিক কে কাল ম্যানিপুলেট করতে চেয়েছিল ঠিক কিন্তু অস্বীকার করতে পারলো না যে কৌশিকের প্রতি উদ্বেজিত ছিল। কৌশিকের ভালো চেয়ে সে কৌশিক কে থামিয়েছে কিন্তু প্ল্যান তো এমন ছিল না…

নরম বিছানায় শুয়ে থাকা কাশফির সকল ভর কৌশিকের উপর, নগ্ন কায়ায় চাদর তুলে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে কৌশিকের প্রশস্থ, শক্ত, পেশল বুকে শুয়ে আছে সে। চোখ বুঝে তার নগ্ন পিঠে কি কি আঁকা বুকি করলো কৌশিক, অন্যহাত শক্ত বাঁধনে কাশফির কোমরে প্যাঁচানো। কিছুক্ষণ পরও কাশফি সজাগ টের পেয়ে পুরু কর্কশ স্বরে বললো,

“আজ একঘণ্টার মধ্যে ছাড়া পেয়ে গিয়েছ কাল কতক্ষনে ছাড়া পাবে তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারছি না তাই বলছি ঘুমিয়ে পড়ো, কাল তোমার এনার্জির প্রয়োজন আছে।”
কৌশিকের কথা কর্ণকুহরে আসতেই থতমত খেয়ে গেলো কাশফি, কান ঝা ঝা করে লজ্জায় আড়ষ্ট কাশফির গর্তে ঢুকে পড়ার অবস্থা। কৌশিকের প্রশস্থ বুক হতে মাথা তুলে খিটখিটে স্বরে বললো,

“কৌশিক আপনাকে আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব যদি আরেকবার অপদস্থ করেন তো!”

কৌশিক ভাবলেশহীন হাতের তালু দিয়ে কাশফির মাথা তার বুকে চেপে ধরলো।
“আমাকে ভোলা ভালা পেয়ে তুমি বড্ড অবিচার করছো।”

“আপনি ভোলা ভালা? সিরিয়াসলি কৌশিক? রাস্তায় কেউ কিছু খাইয়ে দিয়েছে নাকি আপনাকে?”

“অন্তত, যে অপবাদ যুক্ত করলে তার তো আমি করিনি।”

“ওহ, তাহলে কিছুক্ষণ আগে বেহায়া, অসভ্যের মতো কথাবার্তা আমি বলেছি?!”

“সুইটহার্ট তোমার বলার টার্ম শুদ্ধ করো, ওইসব Dirty talk ছিল। Didn’t you like that?”

“ছিঃ, না!”

কাশফির নাক সিটকানো দেখে কৌশিক ভ্রু উঁচিয়ে ধরলো তারপর কোনো রকম ভনিতা করা ছাড়াই শক্ত ফেঁসফেঁসে কন্ঠে বললো,
“মিথ্যুক কোথাকার, এসব শুনে তখন তো আমার নাম জপছিলে।”

কাশফি লজ্জায় হাসফাঁস করে গোঙিয়ে উঠলো। ভয়ঙ্কর রকমের বিব্রত হয়ে লাল নীল হলুদ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বেফাঁস কথাবার্তায় কাশফিকে জব্দ করতে পেরে কৌশিকের চোখে দুষ্টুমির ঝলক আর ঠোঁটের কোণে ঢেউ খেলানো বাঁকা হাসি। আচমকা কাশফি তার বুকে জোরালো রকমের চিমটি কেটে চাপা স্বরে চ্যাচিয়ে বললো,
“কৌশিক, আপনি একটা চরম অসভ্য, নির্লজ্জ, বেহায়া পুরুষ!”

রাতের অধিকাংশ সময় না ঘুমিয়ে কাটার ফল সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠা হলো কাশফির। আড়মোড়া ভেঙে ঢুলুঢুলু অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সময় দেখলো পনে দশটা। চোখ বড় বড় হয়ে বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা হলো তার। দিন দিন এসব ছ্যাবলামি আর কান্ডজ্ঞানহীনতা বেড়ে চলছে তার। কৌশিকের কাঁধের উপর চড়ে চরম দায়িত্বহীন হয়ে গিয়েছে সে! কোথায় সকালে আগে উঠে স্বামী আর তার ভাই খেয়েছে কিনা দেখবে তা নয়।
নিজের সাথে রাগারাগি করে ভোতা মুখে নিচে নেমে দেখতে পেলো নাস্তা আগে থেকেই বানানো। চৌকিত হয়ে কাশফি মহিলা স্টাফ কে ইশারা করে ডাকলো,
“কৌশিক আর কায়েস কি নাস্তা সেরে ফেলেছেন?”

“সবার খাওয়া শেষ, শুধু আপনি বাকি আছেন।”

“ওহ আপনার স্যার কি অফিসে?”

“জ্বি, স্যার নাস্তা রেডি করে কায়েসের সাথে বসে খেয়ে বেরোনোর আগে বলে গিয়েছেন আপনাকে না জাগাতে।”

“আপনার স্যার নাস্তা নিজে বানিয়েছেন?”

“জ্বি ম্যাম, আমি কি আপনার নাস্তা গরম করে দিব?”

“আপনি গরম করে রাখুন আমি আসছি।”
কাশফি গিয়ে কায়েসের রুমের সামনে এসে দাড়ালো, প্রথমে ভেবেছিল রুম অগোছালো হবে কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার রুম ছিল বেশ সাজানো গোছানো। আরো অবাক করা বিষয় ছিল কায়েস বিছানায় বসে জ্ঞানী ব্যক্তির মতো তিন চারটা বই মেলে ধরে একবার একটায় চোখ বুলাতে লাগলো।
কাশফি চোখ ছোট ছোট করে নিয়ে এগিয়ে এসে বিছানার পাশে বসলো,
“আজ বই চারটা খুলে পড়ছিস? কই আমি তো বলে বলে মুখের ছাল তুলে ফেলি তবুও তো একটা বই নিয়ে পড়তে বসাতে পারি না।”

“আমি পড়ালেখা করতে চাই।”
কায়েসকে সিরিয়াস হতে দেখে কাশফি চোখ পিট পিট করে চায়। ছেলেটার কি কোনক্রমে মাথায় আঘাত পেয়েছে?

“বুবুকে বলতো, কী হলো রে তোর?!”

“আমি পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস হতে চাই। ভাইয়া বলেছেন সিরিয়াস না হলে উনি কোনো কোম্পানির দায়িত্ব আমার হাতে দিবেন না।”
কায়েসের কথা শুনে কাশফি থতমত খেয়ে যায় তারপর পেট ধরে উচ্চশব্দে হাসতে শুরু করলো। কায়েস রীতিমত বিরক্ত সে আবার বই চারটায় চোখ বুলিয়ে মিন মিন করে পড়তে লাগলো।

“ওরে বাবা তুই কোম্পানিতে বসবি? তুই না জ্যোতিবিদ্যা পড়বি তবে বিজনেস কোত্থেকে করবি?”

“মানুষের টেষ্ট পাল্টাতে পারে বুবু!”

“আচ্ছা? সে তো অনেক পরের কথা এখন একটা বই নিয়ে পড় সেটাই অনেক।”

“ভাইয়া বলেছেন ফাউন্ডেশন স্ট্রং করার জন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবে। তারপর একটা টিচার রাখবে, আর কমবেষণ স্কিলের জন্য আরেকটা টিচার রাখবে।”

কাশফি হকচকিয়ে উঠে ঠোঁট জোড়া চেপে বললো,
“কি স্কিল বললি?”

“তুমি কি গাধা? তুমি কমবেষণ স্কিল বুঝোনা?”

কায়েসের জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব বেশিক্ষণ টিকলো না কাশফি কন টেনে ধরায় সে কান ছাড়ার জন্য মিনতি করতে লাগলো। কাশফি মুখ বাঁকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“আমি গাধা তাই না? ঐটা কমিউনিকেশন স্কিল হবে গর্দভ!”

“ভাইয়া বলেছে ভুল মানুষেরই হয়। এখন তোমার পড়ালেখা চাঙ্গে উঠেছে বলে তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না!”

“এই কি বললি? আমার পড়ালেখা চাঙ্গে উঠেছে?!”
কাশফি তার কান আরো একবার মলে দিলো, বাঁচার তাগিয়ে কায়েস এবারও দোষ কৌশিকের ঘাড়ে চাপা দিয়ে নিজের গা ঢেকে গেলো কিন্তু রেহাই পেলো না।

“আরে বুবু আমি কি বলেছি নাকি, একথা তো ভাইয়া বলেছে।”

***

লোহার শক্ত গেইট দেখে কাশফির চোখ অনড় হয়ে রইলো সেথায়, গেইটের উপর বড় বড় অক্ষরে লিখা “Mohammadpur Ideal Academy”
ড্রাইভার মাথা বের করে গেইটের সামনের দারোয়ান কে কড়া কণ্ঠে কাশফির পরিচয় জানালো। সাথে সাথেই গেইট খুলে তাদের গাড়ি প্রবেশ করলো স্কুলের এরিয়ায়। আজ সে একা আসার সাহস পায়নি সাথে গার্ড নিয়ে এসেছে। প্রথমেই সে সারি সারি ফুল বাগান পেরিয়ে গিয়ে বটমূলে চিত্রকলা বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের আসর দেখতে পেলো। এরপর কয়েকটা ভবন পেরিয়ে তাদের গাড়ি থামলো ছাই রঙের একটা বিল্ডিংয়ের সামনে। বিল্ডিংটায় স্মৃতির পাতায় স্পষ্ট, এখানে তার ক্লাসরুম ছিল বোধহয়।

“ম্যাডাম…”
গাড়ির ড্রাইভার যে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিল তার হুস কাশফির নেই। পরক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে সে তার গার্ডের সাথে দোতলায় প্রিন্সিপাল রুমের সামনে এসে দাড়ালো। প্রিন্সিপল তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই কাশফি রুমের ভিতর প্রবেশ করে নিজের পরিচয় জানালো,
“আমি ঈশিতা ইমরোজ, কৌশিক মির্জার ওয়াইফ।”

প্রিন্সিপালের ভাবভঙ্গি এমন যেনো সে বিশ্বাসই করলো না পরে গার্ড এসে তার ব্যাজের দেখায় দিকে ইশারা করে ফোনে কৌশিকের প্রাইভেট সিকিউরিটি সিস্টেমের মেম্বারশিপ দেখানোর পর বোধহয় প্রিন্সিপাল বিশ্বাস করলেন। তিনি তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এসে কাশফির সাথে হাত মিলালেন,

“প্লিজ মিসেস মির্জা আপনি বসুন। চা কফি কিছু নিবেন।”
কাশফি গার্ডকে ইশারা করে বেরিয়ে যেতে বললো তারপর চেয়ার টেনে বসলো। তারপর গলা পরিষ্কার করে কিছুটা কুণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“না। আমি কিছু জানতে এসেছি জেনেই চলে যাবো।”

“জ্বি জ্বি জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

“এই স্কুলের নাম ঠিক কি কারণে পাল্টানো হলো?”

“যতটুকু আমি জানি, ওনার চেঞ্জ হওয়ার পরপরই নাম পাল্টে গিয়েছে।”
কাশফি মাথা নেড়ে আই ঢাই না করে স্ট্রেট ফরোয়ার্ড হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“একসময় আমার ফ্রেন্ড আরিয়ানা মেহনাজ কাশফি এখানে পড়তো তবে হুট করেই আমরা আলাদা হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে তাকে খুঁজে পেলাম না আর, তাই তার ইনফর্মেশন নিতে এসেছি তার স্টুডেন্ট ডিটেইলস দেওয়া যাবে?”

“আমি চেক করে জানাচ্ছি। একটা ঠিক কত বছর আগের কথা?”

“প্রায় ১০ বছর আগের কথা।”

“তাহলে আমি দুঃখিত, এতো আগের স্টুডেন্ট ডিটেইলস পাওয়া মুশকিল হবে কারণ এই দশ বছরে অনেক কমে পরিবর্তন হয়েগেছে। আমি তবুও খবর পেলে আপনাকে জানাবো।”

“ধন্যবাদ। ইংলিশ টিচার নাহার ম্যাডাম কি এখনো স্কুলে আছেন যদি থাকেন তবে ডেকে দিবেন প্লীজ?”

“সরি টু সে, কিন্তু মিসেস নাহার হার্টের ব্লকেজ ধরা পড়ার পর থেকে জব ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী।”
কাশফি থমকালো, অতীতের এতো গুলো মানুষের মধ্যে একটা পরিচিত নাম নাহার ম্যাম তাছাড়া ম্যাডাম দেখতে কেমন সেটার ধারণা কাশফির নেই। তার স্মৃতিতে কেবল ম্যাডামের নামটাই অক্ষত রইলো।

“তার হসপিটালের ঠিকানা পাওয়া যাবে?”

“সিটি হসপিটাল, সেন্ট্রাল এরিয়া।”

কাশফি বের হয়ে এসে চললো পুরো এরিয়া ঘোরার উদ্দ্যেশ্যে। দুরু দুরু বুকে যেতে যেতে বহুদূর আসার এক পর্যায়ে দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত সেই কেবিনের। দু পা দু পা করে এগিয়ে এসে থামলো তারপর আলতো হাতের ধাক্কায় দরজাটা খুলে দিতেই দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তার।
চোখের সামনে সে ব্যালেরিনা নীলাম্বরী আর হিমাদ্রীকে দেখতে পেলো। পিয়ানোর সুর তুলে হিমাদ্রী অদ্ভুত হাসি হেসে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নীলাম্বরীর পনে। ব্যালেরিনা নীলাম্বরী বিরতিহীন নেচে চললো, হিমাদ্রীর এমন প্রশংসনীয় দৃষ্টি তো তার অনুপ্রেরণা, তার কিশোরী উদ্দীপনার উৎকর্ষতা।

কাশফির চোখ ভেজা হয়ে এলো, কেনো হলো, কি করে হলো সে জানে না। চোখ পিট পিট করে সে কয়েক কদম পিছে হটে গেলো, এই কেবিনে ঢোকার সাহস কিংবা অনুমতি তার নেই তাই আজ এখানে থেমে যাওয়াই শ্রেয়।

***

কৌশিক বোর্ড টেবিলের মিটিং থেকে বেরিয়ে এসেছে মাত্র। তার অফিস কেবিনে ঢুকে বেশ মনোযোগ দিয়ে ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে দেখার সময় ইন্টারকমে একটা কল আসলো। কল রিসিভ করতেই শোনালো তার এসিস্ট্যান্টের কণ্ঠ,
“স্যার সৌরভ সরকারে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে এসেছেন আপনার সাথে দেখা করার জন্য, তাকে কি উপরে আসতে বলবো নাকি বাহানা বানিয়ে না করে দিব?”

কৌশিকের মাথা, ঘাড় আর বাহুর রগ ফুলে উঠলো। মুহূর্তে চোখ মুখ খিচে বিশ্রী একটা গালি দিলো, এই মুহূর্তে তার সৌরভ সরকারের মতো লোকের সাথে দেখা করার ইচ্ছে কিংবা রুচি কোনোটাই নেই। এমনিতেই সৌরভ সরকারের প্রতি তার ঘৃনা, ক্ষোভ, রাগ বেশ পুরোনো। তাকে আর সৌরভ সরকারকে একরুমে যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সে সৌরভ সরকারের মাংস খু’বলে খু’বলে তুলে কোনো হিং’স্র প্রাণীকে খাওয়াত।

“আজ না করলে সেই কাল আবার ধই ধোই করে চলে আসবে। তুমি বরং উপরে পাঠাও।”

“স্যার লেভিন কে জানানো হয়েছে সে আপনার কেবিনে পৌঁছে যাবে।”

লেভিন ভিতরে প্রবেশ করে কৌশিকের টেবিলে পাঁচটা ঠান্ডা পানির বোতল রেখে গম্ভীর স্বরে বললো,
“বস, দিগন্ত চৌধুরীর ডিরেক্ট বার্তা আপনার উদ্দ্যেশে — ‘কৌশিক উল্টা পাল্টা কিছু করে জেল খাটানোর সুড়ঙ্গ তৈরি করিস না। আজ বুড়োটার কথা আজ শুনে যা, এরপর প্ল্যান মোতাবেক দুজন মিলে দশকের অপেক্ষার চ্যাপ্টার ক্লোজ করবো।’ ”

কৌশিক মনোযোগ দিয়ে শুনে মাথায় আঙ্গুল চেপে কর্কশ গলায় লেভিনকে জিজ্ঞেস করলো,
“বুড়ো বা’স্টার্ড টা কি দিগন্তের অফিসেও গিয়েছিল?”

“জ্বি বস, সে পরবর্তী এমপি ইলেকশনে দাঁড়াবে তাই এখন থেকেই Lowkey profile রাখছে।”

“ওহ তাহলে মিনিষ্টারের জুতো চেটে ক্ষমতা পেয়ে তার ডানা গজিয়েছে?”

লেভিন ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে আবার ছেড়ে দিলো তারপর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে কৌশিকের উদ্দ্যেশ্যে সিরিয়াস হয়ে বললো,

“বস, তোমার কোনো কাজে আমি হস্তক্ষেপ করিনি আশা করি রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সৌরভ সরকারের সাথে নরমালি কথা বলে বিষয় হাতের মুঠোয় রাখবে। সুযোগের জন্য তুমি পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছ।”

“ভুল দশ বছর অপেক্ষা করেছি।”
পাঁচ মিনিটের মাথায় মুখে বিশ্রী রকমের হাসি নিয়ে সৌরভ সরকার উপস্থিত হলো, তারপর গোঁফ চুলকে ভাঙ্গা গলার ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে বললো,

“কি গো বিয়ে করেছ কচি সুন্দরী এক মেয়েকে, তা জানালে না বুঝি!”
কাশফিকে নিয়ে কথা শুরু করায় রাগে ফেটে পড়ার উপক্রম হলো কৌশিকের। কিন্তু সে জানে যে সৌরভ সরকার ইচ্ছে করেই কাশফিকে নিয়ে কথা তুলছে, যাতে সহজে রাগাতে পারে তারপর কৌশিকের নামে কেইস ঘুচিয়ে নিজে গা ঢাকা দিয়ে চলবে। কৌশিক এমনটা হতে দিলো না,

“হঠাৎ তোমার আগমনের কারণ দেখছি না সৌরভ সরকার।”

সৌরভ সরকার নিজের জঘন্যতম রূপ প্রকাশ করলো, বুকে হাত বুলিয়ে জিভ বের করে ঠোঁট চেটে বি’শ্রী রকমের শব্দ করে নোংরা রকমের ভঙ্গিমা করলো,
“ঘরে যা আটকে রেখেছো তা দেখেই তো কাঁপুনি উঠে গেলো।”

“কে?”
কৌশিক ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করলো যেনো সে বুঝতেই পারলো না। সৌরভ সরকার হো হো করে হেসে উঠলো।

“কে আবার? তোমার স্ত্রী! ”
কৌশিক মাথা নেড়ে এমনভাব করলো যেনো সে থোড়াই তোয়াক্কা করে। কিন্তু ভিতর ভিতর জ্বলন্ত রাগে দগ্ধ হয়ে আক্রোশে সৌরভ সরকার কে খু ন করার পরিকল্পনা বারংবার মাথায় আসছে। হাঁটু ঝাকিয়ে, চোয়াল স্বাভাবিক রেখে হাত টেবিলের উপর রাখলো,
“মেয়ে মানুষ টাকা উড়ানোর ধান্ধা। পার্লারে যাবে, স্পা করাবে, নেইল স্যালনে যাবে, মেকআপ কিনবে আরো কত কি?!”

“হতে পারে। জ্যমের মাঝে তোমার ড্রাইভার আর গার্ড নিয়ে কারে বসে ছিল, কোথায় যাওয়া হচ্ছিল বোধহয়…”

কৌশিক আর বাকি কথাটুকু শুনলো না, শোনার জন্য মনোযোগ রাখার চেষ্টা পর্যন্ত করলো না। তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সৌরভ সরকারকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে ফোনে দিগন্তের জন্য একটা ক্ষুদে বার্তা লিখলো। তারপর মুখে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার পটু অভিনয় করলো।
গত এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে আজ রাত তার পরিকল্পনার চূড়ান্ত ইস্তেফা ধার্য করলো মাত্র।

***

ঘড়িতে বারোটা বাজতে আর মাত্র বিশ মিনিট বাকি, কাশফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কায়েসের রুম থেকে নেমে আসলো। এখনো কৌশিকের কাছ থেকে কোনো কল আসে নি এমন কি সে কল করার পরও কৌশিক কল রিসিভ করেনি। বুকে অস্থিরতা আনচান করছে, এদিকে লেভিনের নাম্বারটা পর্যন্ত তার জানা নেই। রুমে একা একা ঘুম আসবে না দেখে ভাবলো টিভি দেখা যাক, রিমোট খুঁজে টিভি অন করে অলস ভঙ্গিতে বসলো সোফায়। টিভিতে একটা সংবাদ চ্যানেল এর নিউজ ব্রিফিং চলছিল, শাড়ি পড়া এক মহিলা সংবাদ পাঠ করলেন—

“আজ ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সৌরভ সরকার এবং তার গাড়ির ড্রাইভার। নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়েই রওনা হয়েছিলেন তারা কিন্তু পথের মধ্যে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের তলায় এসে পড়ার উক্ত স্থানে নিহত হন দুজন। আরো রিপোর্ট জানাচ্ছেন হাসিবুল আলম।”

রিপোর্টার রক্তাক্ত রাস্তায়, দুমড়ে মুচড়ে ধ্বংসাত্মক অবস্থায় উল্টে থাকা গাড়িটার আশেপাশের এরিয়ার মার্ক করা জায়গা দেখিয়ে রোপোর্ট করছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে আবছা আবছা এম্বুলেন্সের শব্দ শোনাচ্ছে হয়ত লাশ ময়না তদন্ত করার জন্য তুলে নিয়ে গিয়েছেন। রিপোর্টার আরো কিছু তথ্য দিতে লাগলো কিন্তু তৎক্ষণাৎ টিভি অফ হয়ে গেলো।

কাশফি বিস্মিত হয়ে হড়বড় করে নিজের হাতের দিকে চেয়ে রিমোট দেখতে না পেয়ে পিছনে ফিরে আতকে উঠে চিৎকার করে ছিটকে গেলো কিছুটা।
কালো জ্যাকেট আর কালো প্যান্ট পরা কৌশিকের চোখে মুখে ঘাম লেপ্টে একাকার, কি এক বিশৃঙ্খল অবস্থা হয়ে আছে তার। সে চোঁখ ছোট ছোট করে চোয়াল শক্ত করে পকেটে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে। তার আশপাশের পরিবেশ চরম ভয়ঙ্কর হয়ে ঠেকছে কাশফির নিকট।
ভয়ে তটস্থ কাশফি নিজেকে সামলে নিয়ে অমতা অমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
“এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? এই হাল কেনো করে রেখেছেন নিজের?!”

“অনেক বছর আগের কাজ পড়েছিল, সেরে মাত্র আসলাম। তুমি আমাকে না বলে কোথায় বেরিয়ে ছিলে?”
কাশফি ঢোক গিললো তারপর নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে বললো,

“আমার বান্ধবীর…”

কাশফি পুরো কথা শেষ করতে পারলো না, কৌশিক নিচু গলায় ভয়ঙ্কর স্বরে আওড়ালো,
“তুমি পুষ্পকুঞ্জের খোঁজে ছিলে, তাই না?”

কাশফি কথাটা বোধহয় শুনতেই পেলো না তাই কোনো রকম প্রক্রিয়া বা জবাব দিলো না। আচমকা তার চোখ বড় বড় হয়ে ঠোঁট জোড়া হা হয়ে এসেছে। কেবল স্তম্ভিত হয়ে পুরোপুরি থমকে গেলো সে, চোখ জোড়া আটকে রইলো কৌশিকের পকেট থেকে বের করা হাতের থেকে টুপ টুপ করে গড়িয়ে পড়া তাজা লাল বর্ণের র/ক্তে/র দিকে। কাশফির রুদ্ধশ্বাস হওয়ার অবস্থা, সে বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে ছলছল চোখে ফিসফিস করে শব্দ করলো,

“ক—কৌশিক… র’ক্ত…আপনার কি…”
কাশফির এলোমেলো আধো আধো কথাবার্তা কৌশিক আর শুনতে চাইলো না। সে নিচু টোনের হাস্কি স্বরে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে জানালো,

“বহু বছরের প্রতিহিংসার ইতি টেনে র’ক্ত পি’পা’সা মিটিয়ে এসেছি কাশফি। তবে তোমাকে না দেখতে পেয়ে আজ সারাদিন ক্লান্তি লাগছিল, আমাকে কিছুক্ষণ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ক্লান্তি দুর করে দিবে?!”

#চলবে…