অধ্যায়টা তুমিময় পর্ব-০৪

0
1

#অধ্যায়টা_তুমিময়
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৪

বউ ও বউ রাগ করো না, কি ভুল হলো বলে যা-ও। আর ওদের যদি বকা কম দিয়ে থাকি একবার বলো বেশি করে বকে দিচ্ছি।

_ কি হচ্ছে কি?

_ কোথায় কি হচ্ছে?

_ আমিও তো বলছি, কি হচ্ছে এসব।

_ আমিও জানতে চাইছি কি হবে।

_ রাস্তার মধ্যে বউ বউ করছেন কেন?

_ এ্যা বউ কি বলো তুমি। বউকে বউ বলবো না তো কি বলবো।

_ বেশি হচ্ছে কিন্তু।

_ ওও বেশি হচ্ছে আমি আরো ভাবলাম কম হচ্ছে হয়তো।

_ আমাকে এভাবে বিরক্ত করার মানে কি?

_ বিরক্ত, বিরক্ত কোথায় করলাম। আমি আরো তোমায় ওদের কথার ধার থেকে বাঁচালাম।

_ কে বলেছে আপনায় বাঁচাতে। আমি বলেছি।

_ তুমি বলবে তারপর আমাকে কিছু করতে হবে।

_ ওদের এসব বলার সুযোগ তো আপনিই করে দিয়েছেন। তাহলে দোষ ওদের দিচ্ছেন কেন?

_ আমি সুযোগ দিয়েছি, এখন আমিই নিয়ে নিলাম সেই সুযোগ।

_ আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন।

_ যাক কেউ অন্তত বললো, আমি বেশি কথা বলি। তা বউটা কোথায় যাচ্ছে।

_ কেন জানেন না?

_ জানি কিন্তু বউয়ের মুখে শুনতে ইচ্ছে হলো তাই জানতে চাইলাম।

_ মরতে যাচ্ছি যাবেন।

_ ছি্ ছি্ এভাবে বলে না, আল্লাহ পাপ দিবে। এক সাথে জান্নাতে যাবো, মরতে না। তাহলে তো জান্নাতের বদলে জাহান্নামে দিবে, এসব বলতে নেই বউ তওবা পড়ো তওবা।

এই কথা বলেই মেঘ দুই গালে আলতো করে থাপ্পড় দিলো। সেটা দেখে আমার একটু হাসি পেলো, কিন্তু না নিজের আত্মসম্মান নিজেকেই ধরে রাখতে হবে। তাই নিজের মাঝে খুব গম্ভীর একটা ভাব এনে বললো।

_ আপনি যাবেন বাড়িতে, নাকি আমি ফিরে যাবো।

_ চলো এগিয়ে দিয়ে আসি।

_ কোন দরকার নেই।

কথাটা বলেই আমি এগিয়ে গেলাম। কিন্তু লোকটা থামলো না, আবারও আমার পিছু নিলো। নাহ আজ আর স্কুলে যাওয়া হবে না দেখছি। প্রথমে ওই কুটনি মহিলা গুলো, এখন এই ছেলে। পেছন ঘুরে চোখ মোটা করে মেঘের দিকে তাকালাম। আমার চাহনি দেখে, মেঘ এক পা পিছিয়ে গেলো।

_ ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো, আমি যে সুন্দর সেটা আমি জানি। ওভাবে তাকিয়ে থেকে আমাকে বোঝানোর দরকার নেই। চোখ টাকে একটু নিয়োজিত রাখো, আমার নজর লেগে যেতে পারে। বেচারি আমার বউটা পড়ে কাঁদবে।

মানুষটার কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেলাম। বোঝাতে চাইলাম কি, আর তিনি বুঝলো কি? আল্লাহ আমাকে একদিনে এই মানুষটা পাগল করে দিবে। আমাকে এক ধ্যানে কিছু ভাবতে দেখে, কিছুটা এগিয়ে এলো মেঘ। আমার সামনে আসতেই বললাম।

_ গেলেন আপনি নাকি চিৎকার করবো। একটু জোরেই বললাম যেন সে ভয় পায়। সত্যি হলোও তাই সে লাফিয়ে উঠলো। বুকে থু থু ছিটিয়ে বললো।

_ এভাবে বলে কেউ, ভয় পেলাম তো? যদি আমি ভয় পেয়ে হার্টঅ্যাটাক করতাম তখন কি হতো বলুন তো? বেচারি আমার বউটা।

_ এই কি বেচারি বেচারি করছেন, আমাকে কি আপনার বেচারি মনে হচ্ছে নাকি। আমি যথেষ্ট শক্ত। আর আপনি যদি আমার পিছু না ছাড়েন আমি কিন্তু লোক ডাকবো।

জোনাকি পিছন ঘুরে চোখ মোটা করে তাকাতেই মেঘ কেটে পড়লো। মানে মানে এখন না কাটলে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। স্বস্থির শ্বাস নিয়ে জোনাকি স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। কিছুক্ষণ পর সে পৌঁছে গেলো স্কুলে। আজ প্রথম পিরিয়ডে তাঁর কোন ক্লাস নেই। তাই সে লাইব্রেরিতে বসলো। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে পানি পান করলো। পানির বোতলটা ব্যাগে ঢুকাতে নিলেই একজন লোক তাঁর সামনে এসে একটি চকলেট ধরলো। জোনাকি চোখ তুলে সামনে তাকাতেই, মুখটা আবারও বিরক্তিকর রূপ ধারণ করলো। স্কুলে আসার পথে মহিলাদের বিরক্ত করা কম হয়েছে, তাই উনি এসে বাকিটা পূরণ করবে। না আর ভালো লাগছে না এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

_ আমি চকলেট খাই না।

_ সেটা আমি জানি, কিন্তু আমার বোন জানে না।

_ আজকে বাড়িতে ফিরে বলে দিবেন।

_ আচ্ছা বলে দিবো, আজকে তো নিন।

এখন চকলেটটা না নিলে লোকটা কথার ঝুড়ি খুলে বসবে, যা আমার একদম সহ্য হবে না। তাই হাত বারিয়ে চকলেট টা নিতেই গেলেই সেটা অন্য কেউ নিয়ে গেলো। তাকিয়ে দেখি মেঘ। আল্লাহ এই ছেলে আমায় পাগল করেই ছাড়বে দেখছি। এখানেও চলে এসেছে, না জানি এখানে কিসব করে।

নিজের হাত থেকে প্রাপ্ত মানুষটার জায়গায় অন্য কেউ চকলেট নিতেই অবাক হলো জাহাঙ্গীর। কোথায় একটু ভাব করবে চকলেটের মাধ্যমে তাঁর আগেই। মেজাজটা খিঁচে তাকালো মেঘের দিকে। কিন্তু মেঘ আপন মনে চকলেট খেতে ব্যস্ত। মেঘকে চকলেট খেতে দেখে আরো রাগ হলো জাহাঙ্গীরের, ইচ্ছে হলো লোকটার হাত থেকে চকলেট কেঁড়ে নিতে।

_ এটা কি হলো, কে আপনি আর আমার হাত থেকে চকলেট নিলেন কেন?

_ আরে আপনাদের মেম চকলেট খেতে পছন্দ করে না, কিন্তু তাঁর বর চকলেট অনেক পছন্দ করে। আপনার বোনকে বলবেন, তাঁর মেম চকলেট না খেলে কি হবে, তাঁর স্বামীর খুব ভালো লাগে। এখন থেকে আমাকেই তাঁর নামের চকলেট গুলো দিয়েন।

এই কথা বলেই চকলেটের বাকি অংশ মুখে পুড়লো মেঘ। আর জাহাঙ্গীর একবার জোনাকির দিকে আরেকবার মেঘের দিকে তাকালো। আসলে সে বোঝার চেষ্টা করছে কে কার কি হয়। জোনাকি যে বিবাহিত কই সেটা তো সে আগে জানতো না? কোথা থেকে উদয় হলো এই পরগাছা। এতো বছর সিরিয়ালে থেকেও অন্য কেউ তাঁর জায়গা দখল করে নিলো, ব্যাপারটা হজম হলো না জাহাঙ্গীরের। তাই সে বললো —

_ কিসের বর, আর কিসের স্বামী। এত বছর সিরিয়ালে থেকেও আমি জায়গা পেলাম না আর আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, এটা তো হবে না ভাই।

_ আরে ভাই আপনি ভুল ভাবছেন, আমি উড়ে এসে জুড়ে বসিনি, আরো সাত বছর আগেই বসে ছিলাম! এখন শুধু জায়গায় বসে পড়লাম।

মেঘের কথা শুনে মনে মনে হিসেবে কষতে রইলো জাহাঙ্গীর। তাঁর মানে বেচারা তাঁর আগেই সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে। জোনাকি তাঁকেও পাত্তা দেয়নি। বেশ ভালোই হলো, নিজের জায়গাটা একটু আছে। তৎক্ষনাৎ মনে হলো লোকটা যদি প্রেমিক পুরুষ হয় তাহলে স্বামী বলে দাবি করলো কেন? না আবারও এলোমেলো হয়ে গেলো অংকটা। তাই জাহাঙ্গীর বললো–

_ সেটা তো বুঝলাম ভাই, কিন্তু স্বামী বলে পরিচয় দেওয়ার কি আছে, ভয় পেলাম তো?

_ ভয় পেলেন কেন ভাই? আর আমি তো সত্যি তাঁর স্বামী। বউ পছন্দ হয়নি বলে বিয়ের রাতে পালিয়ে গিয়েছিলাম।

চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো জাহাঙ্গীর, বলে কি লোকটা? চোখ দুটো বড় করেই বললো।

_ তা ফিরে এলেন কেন?

_ এখন বউ পছন্দ হয়েছে তাই। কিন্তু এখন বউ আমাকে পছন্দ করছে না। তাই চেষ্টা করছি বউয়ের পছন্দের তালিকায় নাম লেখানোর।

কথাটা বলে নিঃশ্বাস ছাড়লো মেঘ। আর এদিকে জাহাঙ্গীরের মনে হলো নিজেকে পাগল পাগল। তিন বছর ধরে কত কত স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে ছিলো, আর মানুষটা কিনা সাত বছর আগেই কারো দলিল করা বউ হয়ে গেছে। অন্যের বউ নিয়ে কিনা কত আশা করেছে। হানিমুন থেকে শুরু করে ক’টা বাচ্চা নিবে তাঁর প্ল্যান করাও শেষ, অথচ যাকে নিয়ে এতো কিছু সেই অন্য কারো। তাই রেগেমেগে হাতের কলমটা নিচে ফেলে দিলো। জোনাকি চমকে উঠলো। এতোক্ষণ সে নিরব দর্শকের মতো সব দেখছিলো। তাঁর কি করার এখানে। জাহাঙ্গীর আঙুল উঁচু করে জোনাকির দিকে তাক করলো, আর বললো–

_ এভাবে আমায় ছ্যাকা না দিলেও পারতেন। আপনি যে বিবাহিত সেটা আগে বলে দিলেই পারতেন। আর এতো ভালো হওয়ার কি দরকার ছিলো, একটু খারাপ হলে তো কোন ক্ষতি হতো না! অন্তত আমি আপনার প্রেমে পড়তাম না।

আরো কিছু বলার উদগ্রীব হলে মেঘ জাহাঙ্গীরের তাক করা জোনাকির দিকের আঙুল নামিয়ে বললো।

_ ওর দিকে আঙুল উঁচু করে কথা বলার কোন অধিকার আপনার নেই। তাই এই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবেন না। আর আমার স্ত্রীর সাথে কেউ উঁচু গলায় কথা বলুক এটাও আমার পছন্দ না। তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক যেটাই হোক, আপনার কোন রাইট নেই সেটা নিয়ে তাঁকে ব্লেম করা। আর মনে রাখবেন, সে বিবাহিত না অবিবাহিত সেটা নিয়ে বাহিরে সে আলোচনা করতে চাক বা না চাক, পুরোপুরি তাঁর একান্ত বিষয় এটা। আমি তাঁর স্বামী হয়েও যদি তাঁকে প্রশ্ন না করি, কেন সে সবাইকে বলেনি সে বিবাহিত! সেখানে আপনি প্রশ্ন করার কে? আর সে ভালো বলেই আমাকে তাঁর কাছে ফিরে আসতে হয়েছে, তাই এটা জানতে চাইবেন না সে এতো ভালো কেন? সে ভালো বলেই আল্লাহ তাঁকে এতো ভালোবাসেন, সাথে আমিও। কথা গুলো মনে রাখবেন। আর আপনাকে কথা গুলো এই জন্যই বলেছি, কারণ ও এখানে চাকরি করবে! তাই দ্বিতীয়বার যেন এই পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। চলো জোনাকি।

কথাটা বলেই জোনাকির হাত ধরে বেরিয়ে এলো লাইব্রেরি থেকে। জোনাকি কয়েক মুহূর্তে থমকে দাঁড়ালো। মজা করতে করতে কখন মানুষটা সিরিয়াস হয়ে গেলো, বোঝাই গেলো না। এতো বুঝদার ভাবুক মানুষটা নাকি দায়িত্ব নেওয়ার ভয়ে তাঁকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলো ভাবা যায়। সত্যিই কি মানুষটা সব ঠিক করতেই ফিরে এসেছে। হঠাৎ নিজের চিন্তার জগৎ থেকে ফিরলো জোনাকি। হাতটা মেঘের থেকে ছাড়িয়ে বললো—

_ কি সমস্যা আপনার মেঘ। আমার পিছনে কেন পড়ে আছেন। আর ওভাবে জাহাঙ্গীর স্যারকে বলার কি দরকার ছিলো। মানুষটা কষ্ট পেয়েছে।

_ তাঁর কোন অধিকার নেই, তোমার দিকে আঙুল উঁচু করে কথা বলার।

খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলো মেঘ।

_ এই সাত বছরে এমন অনেক আঙুল আমার দিকে উঠেছে। তখন কোথায় ছিলেন আপনি, কোথায় ছিলো আপনার ভালোবাসা। একদিনেই বউয়ের প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠলো নাকি। অথচ আমার দিকে আঙুল উঁচু করে সবাই কথা বলেছিলো আপনারি জন্য। কোথায় ছিলো তখন আপনার বড় বড় কথা। এতোদিন যখন কাউকে প্রয়োজন হয়নি আজও হবে না। তাই প্লিজ আমাকে রেহাই দিন আপনার থেকে। আমি জাস্ট নিতে পারছি না আপনার বারাবাড়ি গুলো। আপনার এই মাত্রাধিক অধিকারে আমার দম বন্ধ লাগছে। তাই প্লিজ নির্লজ্জের মতো আমার পিছনে না ঘুরে নিজের দায়িত্ব গুলো পালন করুন। এগুলো করে আমাকে খুশি না করে পরিবারের দায়িত্ব নিলে আমি বেশি খুশি হবো।

কথা শেষ করে জোনাকি কোথায়ও একটা মিলিয়ে গেলো। জোনাকির সামনে মুখটা কালো করে রাখলেও জোনাকি যেতেই মেঘ হেঁসে দিলো।

_ তুমি আমাকে যতোই নির্লজ্জ বলো না কেন জোনাকি, আমি জানি তুমি মনে মনে খুশিই হয়েছে আমার এই অধিকার দেখানোর ব্যাপারে। আর দায়িত্ব, হ্যা এখন থেকে আমি পরিবারের সাথে সাথে তোমার এবং তোমার পরিবারের দায়িত্বও নিবো। যাঁরা সবাই আমাকে কেয়ারলেস এবং গা-ছাড়া ভাব বলে। তাঁরাই বলবে, হ্যা আমি দায়িত্ব নিতে শিখে গেছি। তোমাকে দেখার পর আমার জীবনে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে। যে অধ্যায়টা তুমিময়।

——————
অকারণেই আজ আকাশে মেঘ জমেছে। যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে। একটু পর পর বাতাস, শরীর মন দুটোই ছুঁয়ে যাচ্ছে। সচ্ছ কাঁচের জানালা বেধ করে চোখ দু’টো আঁটকে গেছে একটি পাখির দিকে। কি সুন্দর করে তাঁর পাশের পাখিটির অভিমান ভাঙাতে চাইছে সে। কখনো ডানা মেলে উড়ে গিয়ে তাঁর পাশে বসছে। কখনো বা ঠোঁট জোড়া তাঁর ডানায় ঘসে দিচ্ছে। পাখিটি যখন রাগ করে অন্য ডালে গিয়ে বসছে, তখন সে আবারও তাঁর পাশে গিয়ে বসছে। একি ভাবে আবার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে চলেছে। না চাইতেও ঠোঁট জোড়া হেঁসে উঠলো। মন বলে উঠলো একেই বুঝি বলে ভালোবাসা। পাখিদের দিকে তাকিয়ে থাকায় জোনাকি খেয়াল করেনি তাঁর পাশের চেয়ারে একটি মেয়ে এসে বসেছে। কিন্তু পাঁচ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরও যখন জোনাকির নজর তাঁর দিকে পড়েনি, তখন সে তুড়ি বাজালো জোনাকির চোখের সামনে। হঠাৎ নিজের ধ্যান ভাঙতেই সামনে তাকালো জোনাকি। তাঁর সামনে বসে আছে অতি সুন্দরী এক নারী। যাকে একবার দেখলেও মন ভরবে না। চেহারার সাথে সাথে মনটাও সুন্দর। ইচ্ছে করবে সারাজীবন এমন একটা মেয়ের সাথে গল্প করতে। আবার জোনাকির ধ্যানে পড়লে নিঝুমের রাগ হলো। তাই সে বললো।

_ ভাবি কি হয়েছে তোর এভাবে কি দেখছিস।

নিঝুমের কথায় ফিক করে হেঁসে দিলো জোনাকি। যখনই সে নিঝুমের সামনে আসে, ঠিক ততোবারই এভাবে হারিয়ে যায়। নিজের এই আচরণে মাঝে মাঝে সে-ও খুব বিরক্ত হয়। নিজেকে সামলে বললো।

_ কিছু না, কেমন আছিস?

_ পরিবারের বাহিরে যদি বলিস, তাহলে বলবো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু পরিবার নিয়ে যদি বলিস তাহলে বলবো, জানতে চাস না।

_ একটা সুখবর আছে।

_ এমন কি সুখবর যে এতো আর্জেন্ট খবর দিলো।

_ বাবা, মানে ছোট বাবা তোকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর তোকে এবং ভাইয়াকে যেতে বলেছে।

জোনাকির মুখে এমন কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো নিঝুম। দীর্ঘ সাত বছর তাঁর বাবা তাঁর সাথে কথা বলেনি। দূর থেকে শুধু দায়িত্ব পালন করে গেছে। ছোট্ট একটা ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে এতো বছর। তাই বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলো। তাই নিঝুম সব’টা শুনেও বললো।

_ কি বললি আবার বল।

_ বললাম ফিরে চল বাড়িতে। তোর বাড়ি, তোর ঘর, তোর পরিবার সবাই অপেক্ষায় আছে।

_ তুই সত্যি বলছিস।

_ হুম সত্যি।

_ বিশ্বাস কর ভাবি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বাবা আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন। আসলে যে ভুলটা আমি করেছি বাবা যে ক্ষমা করবেন এটা আমি ভাবতেই পারিনি।

_ বাদ দে-না, শুধু শুধু পুরনো ঘা খুঁচিয়ে নতুন করার মানে হয় না।

_ পুরাতন বলিস কেন, সেই ঘা তো তোর বুকে এখনো তরতাজা। বিশ্বাস কর ভাবি আমি জানতাম না ভাইয়া এভাবে পালিয়ে যাবে। যদি জানতাম আমি সবাইকে বলতাম, যে ভাইয়া চলে যাচ্ছে।

_ এবার নিয়ে ঊনআশিবার এই একি কথা বললি। কতবার বলবো, যা হয়েছে তা আমার ভাগ্য।

_ সব কিছু এতো সহজে তুই মেনে নিস কি করে, তোর কষ্ট হয় না।

_ তোর কি মনে হয় আমার কষ্ট হচ্ছে।

_ জানি না, তা বাবা হঠাৎ আমায় ক্ষমা করলেন কেন?

_ যাঁর চলে যাওয়ার সূত্রে তোর বাড়ি ছাড়া হয়েছিল! সে ফিরে এসেছে।

_ কিহহ, মেঘ ভাইয়া ফিরে এসেছে।

_ হুম।

_ আমার বিশ্বাস ভাইয়া তোকে এবার ফেলতে পারবে না। তোকে খুব ভালোবাসবে।

_ তোর ভাইয়ার ভালোবাসা মানে পুরো পাগলামি। এক দিনে আমায় পাগল করে দিয়েছে।

_ কেন কি করেছে?

কি করেনি সেটা বল। তারপর জোনাকি সব কিছু খুলে বললো। সব শুনে নিঝুমের হাসি যেন থামছেই না। সে পারলে গড়াগড়ি খেতো মাটিতে। কিন্তু এটা রেস্টুরেন্টে এখানে এসব কিছু করা সম্ভব নয়।

_ কি বলিস ভাইয়া এসব করেছে। বেচারা জাহাঙ্গীর স্যার। কথাটা বলেই নিঝুম আবার হাসতে রইলো।আর জোনাকি নিজের রাগ চেপে বসে রইলো।

_ কি কথা হচ্ছে তোদের। আমাকেও বল আমিও একটু হাসি। অনেক দিন হলো মন খুলে হাসি না।

হঠাৎ মেঘের কন্ঠে ওরা দু’জনেই তাকালো। নিঝুমের হাসি মিলিয়ে গেলো। আর জোনাকি বিরক্তি স্বরে বললো।

_ এসে গেছে, না জানি এখানে আর কি কি ঘটনা ঘটায়।

_ এসে গেছি মানে, এখন কি চলে যাবো।

_ আপনি আমায় ফলো—-

_ ভাবি চুপ কর, ভাইয়া তুই ফিরে এসেছিস, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কথাটা বলেই নিঝুম মেঘকে জড়িয়ে ধরলো। এক সময় নিঝুম কেঁদে দিলো। নিঝুমকে কাঁদতে দেখে মেঘ বললো–

_ প্লিজ কাঁদেকেটে নাকের পানি চোখের পানি এক করিস না, আমার কাছে টিস্যু নেই।

মেঘের কথায় নিঝুম হেঁসে দিলো।

_ তুই আগের মতোই আছিস।

_ ভেবেছিলাম পরিবর্তন করে ফিরবো, কিন্তু কারো দীর্ঘশ্বাস যে এতটা ভারি জানা ছিলো না। তাই আর নিজেকে পরিবর্তন করা হলো না। কথাটা বলে আঁড়চোখে একবার জোনাকিকে দেখলো মেঘ। কিন্তু জোনাকির চোখ অন্য দিকে। অভিমান জমে পাহাড় হয়েছে, কবে যে অভিমানের পাহাড় ভেঙে ভালোবাসার পাহাড় গড়ে উঠবে জানা নেই মেঘের।

চলবে,,,