অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি পর্ব-১৩

0
4

#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি ।১৩।
#সাইরা_শেখ

সভ্যতার মা এলেন ঘরে। সভ্যতা ফোনের দিকে তাঁকিয়ে বিরবির করছে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মাশহুদের সঙ্গে কথা হয়েছে তোর?’
সভ্যতা মাথা উপর-নিচ নাড়ে, হয়েছে। মা হালকা হেসে বললেন, ‘কথা শেষ?’
‘না, ফোনের চার্জ শেষ।’
মা হাত বাড়িয়ে ফোন দিয়ে বললেন, ‘নে, কথা বল।’
‘তুমি কল দিয়েছিলে?’
‘না। আমি কেন কল দিবো? ও কল দিয়েছে। কল দিয়ে রীতিমতো কাঁপছে। কি বলেছিস ওকে?’
সভ্যতা ফোন নিতে নিতে বলল, ‘তোমাদের এটা কেন মনে হয়, কারোর কিছু হলে সেখানে মুখ্য ভূমিকা আমি পালন করি?এরপর উনি হাঁচি-কাশি দিলেও তো আমার দোষ খুঁজবে তোমরা। অদ্ভুত!’
মা যেতে যেতে বললেন,’কথা বলা শেষ হলে ফোন ঘরে রেখে আসবি। আমি নিতে আসতে পারবো না।’
সভ্যতা মৃদু চেঁচিয়ে বলল, ‘আচ্ছা।’

এরপর ফোন কানে চেপে ধরলো, ‘হু?’
‘তখন কি বলেছি, শুনেছ?’
‘না। কি বলেছিলেন? আবার বলুন।’
‘যদি দেশে থাকি? কখনও দেশের বাইরে না যাই? তখন কি বলবে?’
‘কিছু বলার নেই, কারণ আমি বিশ্বাস করিনা আপনি এ দেশে থাকবেন।যে নিজের মা-বাবা,ভাই-বোন,দাদা-দাদি সহ বাকিদের অনুরোধের বিপরীতে সরাসরি ‘না’ বলে দেয়। সে আমার কথা কি করে রাখবে? বিয়ের আগে হয়তো বলবেন যে ‘যাবেন না’ কিন্তু বিয়ের পরে? তখন যদি মত ঘুরে যায়? আপনার যদি এটা মনে হয়, আমার জন্য আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার, সুখ-শান্তি ত্যাগ করতে হচ্ছে, আমাকে বিয়ে না করলে আপনার জীবন আরও সুন্দর হতো। তখন? আপনার চলাফেরা সব সুন্দরীদের সাথে, আমার থেকেও সুন্দর মেয়েদের দেখেছেন আপনি। যদি কখনও তেমন কোনো মেয়েকে পেতে ইচ্ছে করে যে লাজুক, নরম, আপনার কথামতো চলবে, আপনি যেভাবে চান সেভাবে ভালোবাসবে। তখন কি করবেন? আমি স্রেফ নিজের কথা ভেবে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।’
‘এমন দিন আসবে না। যদি আসে, তাহলে তোমার সেই শা’স্তি আমি মাথা পেতে নেব। যা যা কা’টতে চাও কে’টে নিও। আমি টু-শব্দ অবধি করবো না।’
‘আসলেই?’
‘হুম,এবার বলো,হঠাৎ বিয়েতে রাজি হওয়ার কারণ কি? কেউ প্রেশার দিয়েছে?’
‘না।’
‘আমাকে এখন একটু ভালো লাগছে?’
‘তাও না।’
‘তাহলে কি কাঁদতে দেখে মন গলেছে?’
সভ্যতা কয়েকমুহূর্ত চুপ থেকে বলল, ‘আম্মু আপনাকে সব বলে দিল? আম্মু তো এমন না। আপনি আম্মুকে কি করে বশ করলেন?’
‘বশ? আমি কাউকে বশ করিনা। আমি তো শুধু তোমার পছন্দ মতো হচ্ছি। তুমি বলেছিলে তোমার বর হওয়ার আগে তোমার আব্বু-আম্মুর ছেলে হতে। শুধু সেই চেষ্টা করছি।’
সভ্যতা গলার স্বর নামিয়ে বলল, ‘ওহ.. বাড়ি ফিরবেন কখন?’
‘একটু পর। আজকের মতো কাজ শেষ। কি করছিলে তুমি?’
‘পড়ছিলাম। আপনি ফোন দেওয়ায় পড়া বন্ধ হলো। আচ্ছা পরে কথা বলবো, রাখছি।’
‘আচ্ছা। আমি পরশু ফোন দেব।’
সভ্যতা সন্দিহান গলায় বলল, ‘পরশু কেন?’
‘ব্যস্ত থাকবো কাল।’
‘ওহ, ওকে।’
মাশহুদ হেসে বলল,’মজা করছি।আমি রাতে কল দিবো।’
‘না, না। এতবার কল দিতে হবে না। একসাথে এত কথা বললে আমি পরে কথা বলার মতো টপিক খুজে পাইনা। আপনি বরং প্রতি শুক্রবারে কল দিন। গোটা সপ্তাহের কথা একদিনে হয়ে যাবে।’
‘ওকে..’

সভ্যতা কল কেটে দিল। নম্রতা কল করছে এবার। আজ সবার হলো কি?একজনের কল কাটতে না কাটতেই আরেকটা কল চলে আসছে। সভ্যতা রিসিভ করে বলল,
‘হু? বল।’
‘ওই.. তোর ফোন অফ কেন? সেই কখন থেকে, ফোন করছি।’
‘চার্জ শেষ আপু।এতবার কল দিচ্ছিস কেন?কি হয়েছে?’
‘মাশহুদ কল করেছিল,তোকে ফোনে পাচ্ছে না।ওকে কল করে নে, বেচারার টেনশনে অবস্থা খারাপ।’
সভ্যতা অবাক হয়ে বলল, ‘তোকেও ফোন করেছিল?’
‘তোকেও মানে? আর কাকে ফোন করেছে?’
‘আম্মুর ফোনেও কল দিয়েছে। মাত্রই আম্মুর ফোন দিয়ে কথা বললাম।’
মাহিন বলল,’আব্বুর কাছে গিয়ে একটু শুনে আয় তো, তাকেও কল দিয়েছে কিনা..’
সভ্যতা রেগে গেল, ‘তুমি ওখানে কি করো? আজাইরা কথা বলবা না। লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম মাহিন ভাই।’
‘তোর ওয়ার্নিং-য়ের আর কেয়ার করিনা। বউ এখন আমার বাড়ি। রাজ্য, রানি সব আমার। আর ভয় নেই।’
সভ্যতা দুষ্টু হেসে বলল,’তাই নাকি?একডাক দিলেই কিন্তু তোমার রানি আমার বাড়ি চলে আসবে। প্রাক্টিক্যালি দেখাবো নাকি ডেকে?’
‘থাক.. আমিই চলে যাচ্ছি। তোরা কথা বল।’
‘গুড।’
মাহিন চলে গেলে নম্রতা প্রশ্ন করে, ‘হঠাৎ রাজি হলি কেন? এখন চরিত্রহীনতার অযুহাত ফিকে লাগছে বুঝি? নাকি ভালো লাগছে, মাশহুদকে শুধু ‘তোর’ বলতে পারবি বলে।’
সভ্যতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’এ বিষয়ে প্রচুর কথা আছে, আপাততো সময় নেই হাতে। তুই-ও তো নতুন বউ। তোর ফোনে এত গল্প কিসের? যা গিয়ে শ্বশুড়বাড়ির সবার সেবা কর, নয়তো দুদিন পর ফেরত পাঠিয়ে দেবে।আমি কিন্তু তোকে এবাড়িতে আর ঢুকতে দেব না আপু। তাই ওখানেই টিকে থাকার চেষ্টা কর। রাখছি..’
.
.
আজ সভ্যতার জন্মদিন। নম্রতা এসেছে বিকালবেলায়। মাহিন রাতে এসে ওকে নিয়ে যাবে। দুই বোন সভ্যতার ঘরে বসে আছে, সভ্যতা পড়ায় মনোযোগী। কিছুদিন পরেই পরীক্ষা, এখন অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই ওর। নম্রতা ফোন দেখছিল, এবার ফোন রেখে সে সভ্যতাকে ডাকলো,

‘পিহু? এদিকে আয়। কিছু কথা আছে।’

‘মাশহুদের ব্যাপারে হলে,পরে বলবো আপু। এই চ্যাপ্টার শেষ করা জরুরি।’

‘এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন? সবাই চিন্তা করছে তোকে নিয়ে। কেন ডিসিশন পাল্টালি, বিয়ে করতে চাচ্ছিস,সেসব জানতে চায় সবাই।’

সভ্যতা বই বন্ধ করে বলল, ‘এখানে বসে না থেকে, যা গিয়ে আম্মুর সাথে গল্প কর।’

নম্রতা ধমকে বলল, ‘এখানে আসবি? নাকি সত্যি সত্যি চলে যাব?’

সভ্যতা উঠে নম্রতার মুখোমুখি এসে বসলো।বিরক্তিভাব নিয়ে বলল, ‘বল, কি জানতে চাস?’

‘কি হয়েছে তোর? মাশহুদকে বিয়ে করবি অথচ ওর সাথে কথাও বলিস না, প্রত্যেকদিন আমাকে ফোন দিয়ে তোর খোঁজখবর নেয় কেন?’

‘নিষেধ করেছি, আমাকে রেগুলার ফোন দিতে। প্রতিদিন কথা বললে, আমি কথা বলার টপিক খুঁজে পাই না। এটা তো জানিস তুই, আর রোম্যান্টিক কথা আমার আসে না। মেজাজ খারাপ হয় আহ্লাদী বাক্য শুনলে।তবে বিয়ের পর হয়তো অভ্যাস বদলাবে।’

‘এবার পুরো ঘটনা খুলে বল। প্রথম থেকে শেষ অবধি।’

সভ্যতা মুচকি হাসে। ফোনের ওপর ভেসে থাকা নামটি দেখে বলল, ‘আজ শুক্রবার। তাকে বলেছিলাম প্রতি শুক্রবারে কল করতে। মানুষটা আসলে খারাপ না, দেখ আমার প্রতিটা কথা শোনে।’

নম্রতা নাম্বারটি দেখে বলল, ‘তোরা কথা বল আমি পরে আসছি।’

‘উহু, ওনাকে বলে দিচ্ছি একটু পর ফোন দিতে। আগে তোর সাথে কথা বলা জরুরি।’

সভ্যতা মাশহুদকে আধঘন্টার পর ফোন দিতে বলল। নম্রতা চুপচাপ বসে আছে। সভ্যতা উপরে উপরে যতটা বাচ্চামি দেখায়, ভেতরে ভেতরে সে ততটাই পরিপক্ক মস্তিষ্কের। এটা প্রকাশ না করলেও বাড়ির সবাই জানে। সভ্যতা বালিশে হেলান দিয়ে বলল,

‘সবকিছু ডিটেইলে বলা পসিবল না,আর আমার বলতেও ইচ্ছে করছে না, তাই শর্টকাটে বলি..
প্রথমদিকে আমি মাশহুদকে পছন্দ করিনি কিন্তু কেন?
উত্তর হচ্ছে,আরীব ভাইয়ের জন্য। আরীবের চরিত্র ভালো না।সে ইংল্যান্ডে দুটো মেয়ের সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যদিও এটা অযুহাতের খাতিরে, নিজের দোষ ঢাকতে জানিয়েছিল মারিয়া ভাবি, কিন্তু তথ্যটি নির্ভুল। আমার মনে হয়েছিল, যাকে ছোট থেকে চিনি সে যদি বিদেশিনী দেখে চরিত্রের বারোটা বাজাতে পারে তাহলে মাশহুদ ৪-৫বছর ওখানে ধোয়া তুলতিপাসা সেজে থাকেনি।
সন্দেহ বাড়ার কারণ, লামিয়া ও শাহরিন আপু। সবার কথা আমি জানি না, চোখের সামনে এই দুজন বেহায়া মেয়ে সম্পর্কে জেনে, দেখে মনে হয়েছিল মাশহুদেরই দোষ আছে।নয়তো মেয়েরা এত বাড়াবাড়ি করার সাহস পায় কি করে?
বিয়ে বাড়িতে আমার কাছে এসেই ৩ জন ওনার ব্যাপারে জানতে চেয়েছে, ওনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বলেছে। আমি পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। ওনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে উনি সিঙ্গেল কিনা, ওনার উত্তর ছিল, ‘না।’ উনি একজনকে পছন্দ করে যে ওনাকে পছন্দ করে না। উনি অপেক্ষা করছেন তার জন্য। যাক, এটা নরমাল ইস্যু। সুন্দর মানুষকে সবাই পছন্দ করে এটা স্বাভাবিক। ওনার প্রতি মেয়েরা দ্রুত আকর্ষিত হয়, অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করে। এখানে ওনার কোনো দোষ দেখতে পাইনি আমি। তবে সেদিন পুরো সময়টা ওনার দৃষ্টিজুড়ে শুধু আমি ছিলাম, অন্যকোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাঁকাননি এটা দেখেছি। তাছাড়া আরেকটা সিক্রেট..
শাহরিন আপু যেদিন চলে গেল, তার আগেরদিন রাতে ওনাদের দুজনকে একসাথে ছাদে দেখেছিলাম। শাহরিন আপু মাশহুদকে নিজের জীবনের বিনিময়ে চেয়েছিলেন। আমি পুরো কথা শুনেছি, তার কথা ছিল, মাশহুদ তাকে সুযোগ না দিলে সে নিজেকে শেষ করে ফেলবে। সেখানে মাশহুদ বলেছে’সে পরোয়া করোনা, শাহরিন আপুর যা মন চায়, সে তাই করুক।’ লামিয়া আপুর মতো কেস, কিন্তু দুজনেই আনাড়ি। তারা ভেবেছে, এসব শুনে মাশহুদ গলে যাবে। এতকিছু জেনে শুনে আমি মাশহুদের মতো মানুষকে কি করে সন্দেহ করি বল তো?

মাশহুদ যেদিন চলে গেল তার আগেরদিন রাতে মৌশি (মাশহুদের ভাবি) কল করেছিলেন আমাকে। তার এবং আন্টি দুজনের সঙ্গেই কথা হয়েছে আমার। মৌশি ভাবি নিজে বলেছেন, লামিয়া ঘটনাটি সাজিয়েছিল। পরপরই ভাবি ক্ষমা চাচ্ছিলেন আমার কাছে। ব্যাপারটা একটু অস্বস্তিকর। জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলাম মাশহুদ ফোন করে তার মা-কে বলেছে সে আমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। আমি রাজি হইনি বলে, কেঁদে ফেলেছে। তখন প্রথম কাঁদার কথা শুনেই আমার কেমন যেন লাগলো। আমি ভেবেছিলাম মাশহুদ নামের ওই শক্ত পুরুষটার মনে মায়া-দয়া কম।নয়তো লামিয়ার সু’ইসাইড করার চেষ্টা,শাহরিনের হাত-পা ঝুলে থেকে কান্না দেখেও, তার মন গললো না কেন?

উনি প্রতিটা মুহূর্ত চেষ্টা করেছেন আমার মন জুগিয়ে চলার। কিছু নমুনা দিচ্ছি, শুনলেই বুঝতে পারবি ওনার কত ধৈর্য।
এ বাড়িতে উনি কোনো খাবার-ই ঠিকভাবে খেতে পারেনি। আমি ভেজাল করেছি, ওনার পাতে দেওয়া সব খাবারে। তারপরও উনি চুপচাপ সব খেয়েছেন। কাউকে টের পেতে দেয়নি, উনি যা খাচ্ছেন তা খাওয়ার অযোগ্য।

ওনার তোয়ালেতে আমি বিছুটি পাতা ডলে এসেছিলাম। এখানে আসার পরেরদিন ওনার এলার্জি বাড়েনি, ওসব র‍্যাশ, ফোলা হাত-পা সেই বিছুটি পাতার রিয়্যাকশন। উনি জানতেন কাজটা আমার তাই এলার্জি বলে আমার দোষ ঢেকেছেন।

উনি রাত জেগে কাজ করেন, ঘুমানোর আগে শাওয়ার না নিলে ঘুমাতে পারেন না।এজন্য দুদিন পানির লাইন অফ করে রেখেছিলাম, যে কারণে এখানে এসে রাতে ঘুমাতে না পেরে ওনার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ বসে গিয়েছিল।

উনি যতবার আমার সামনে এসেছে ততবার অপমান করে কথা বলেছি, চরিত্রহীন বলেছি, ওনার দিকে বারংবার আঙ্গুল তুলেছি। উনি চাইলেই আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দিতে পারতেন,পাল্টা উত্তর দিয়ে চুপ করাতে পারতেন, আমাকেও রেগে অসম্মান করতে পারতেন কিন্তু এমন করেননি। এ পর্যন্ত উচু গলায় কথা অবধি বলেননি আমার সাথে।

ওনার ফোনের পাসওয়ার্ড কি, জানিস? আমার নাম। কৌতুহলের বশে একবার চেক করেছিলাম। আমি আসলে প্রুফ জোগাড় করতে চেয়েছিলাম ওনার বাজে চরিত্রের। কিন্তু পাসওয়ার্ড দেখে যতটা অবাক হয়েছি, তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছি ওনার ফোনে আসা ম্যাসেজ, ইমেইল দেখে। বিদেশিনী-রা ওনাকে সরাসরি একসাথে থাকার প্রস্তাব দিয়ে রিজেক্ট হয়েছে তার প্রমাণ ছিল ফোনে। উনি মিথ্যা বলেনি, ওনার সাথে আসলেই অনেকেই থাকতে চেয়েছে কিন্তু উনি থাকেননি। এ কথা সত্য। ওনার চরিত্রে প্রকৃতপক্ষেই কোনো ভেজাল নেই।

কিন্তু তারপরও আমি শক্ত ছিলাম,কারণ আমি দেশের বাইরে যাব না। জানি, তোরা আমার ভালো চাস। তোরা চাস আমি মাশহুদের সঙ্গে একটা সুন্দর লাইফ স্পেন্ড করি। কিন্তু আমার পক্ষে আব্বু-আম্মুকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না। আমাকে তোরা জোর করে ঠিক পাঠাবি, সেটা আজ হোক বা কাল, তাই ওনাকে বিয়ে করতে চাইনি। আশেপাশের কাউকে বিয়ে করলে সবসময় তোদের কাছে থাকতে পারবো,সেই আশায় বসেছিলাম।

চলে যাওয়ার সময় উনি আমাকে আচমকা জড়িয়ে ধরলেন। ঘটনাটি আনএক্সপেক্টেড ছিল। আমার জীবনে প্রথম বার,কেউ আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। একটু অস্বস্তি হচ্ছিল কিন্তু জড়িয়ে ধরে উনি কেঁদে কেঁদে যখন বললেন,উনি আমাকে ভালোবাসেন, সত্যিই বিয়ে করতে চান, আমাকে চান।
তখন মনে হলো যে পুরুষ, আমাকে এভাবে চাইতে পারে সে আমার একটা অনুরোধ মানবে না?তাই সেই মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওনাকে বিয়ে করবো। উনি বলেছিলেন, উনি আমার অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি থেকে আকাঙ্ক্ষিত মনের মানুষ হবেন। আমি আজ স্বীকার করছি, উনি ওনার কথা রেখেছেন। আমি ওনার মতো একজনকেই সবসময় চেয়েছি আমার জীবনে।’

দরজার সামনে এসে দাঁড়াল কেউ। নম্রতা উঠে যাচ্ছে, সভ্যতা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’
নম্রতা হেসে বলল, ‘তোর বার্থ-ডে গিফট নিবি না?’
‘ওসব লাগবে না, আমি কি এখনও ছোট আছি?’ বলতে বলতে পেছনে ঘুরে তাঁকাল সভ্যতা। মুহূর্তেই নিঃশ্বাস আটকে আসে। চোখেমুখে বিস্ময় খেলে গেল। অস্পষ্ট স্বরে আওড়ালো, ‘আ..আপনি?’

চলবে…