অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব-১১+১২

0
443

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#পর্ব_১১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

হাতে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ। প্রতিটি চুমুকে কেমন একটা নিখুঁত ভাব। এক দেখায় যে কেউ আকৃষ্ট হতেই পারে। তরী অল্প অল্প ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে। কফি সম্পূর্ণ শেষ করে ক্যান্টিন ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে বের হলো। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ। সে বান্ধবীদের সাথে কিছু সময় আড্ডায় বসলো। ক্যাম্পাস এখনো খালি হয়নি। যারা অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিল, তারা এখনো দৌঁড়ঝাপের উপর আছে। অন্যরাও কেউ কেউ তরীদের মতো আড্ডায় মেতেছে। শাড়ির কুঁচি ঠিক করেই তরী রাস্তায় নামলো। ফুটপাত ধরে সামনে এগোলেই বাস স্টপেজ। তরী সামনে না এগিয়ে থেমে গেল। থামতে হলো তাকে। তুখোড় ব্যক্তিত্বের এই মানবের ধারালো নজর এড়িয়ে যাওয়ার অনুমতি যে তরীর নেই। মন তাকে কিছুতেই অনুমতি দিতে চায় না। কঠোর বিরোধীতা করে। মাহমুদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। তরী থেমে থেমে শুধালো,
-“আজও এদিকে এসেছেন যে?”

মাহমুদ নরম চোখে তাকালো। সূর্যের তেজ ম্লান হয়ে এসেছে। সকালের সেই চকচকে সাজ এখন আর নেই। কিছুটা মলিন দেখাচ্ছে। চোখের নিচে অল্পস্বল্প কাজল ছড়িয়ে সৌন্দর্য খানিকটা কমে এলেও মাহমুদের নজরে মুগ্ধতার কমতি নেই। তার এখনো ভালোলাগছে। এ এক নতুন তরী। তার অগোছালো তরী। তরীর প্রশ্নসূচক দৃষ্টির কবলে পড়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো মাহমুদ। তার গলায় অনুরাগ ঝরে পড়লো।
-“সকালে একটা জিনিসের কমতি ছিল। তা সম্পূর্ণ করতেই এসেছি।”

তরীর বোধগম্য হলো না কিছুই। সে বোকা বোকা চাহনি নিক্ষেপ করলো। মাহমুদ আলতো হেসে পকেটে হাত গুঁজলো। কুচকুচে কালো লোমশ হাত বের করতেই বেরিয়ে এলো সফেদ রাঙা শিউলি ফুলের মালা। মুহুর্তেই ভুরভুরে সুগন্ধি ছড়ালো বারোমাসি শিউলি। দুধ সাদা এই রূপসী কপালে লাল-কমলা টিপ পরে টুকটুক করে তাকিয়ে যেন বলছে “জড়িয়ে নাও আমায়, তোমার ওই কেশরাশির খোঁপায়”।
তরীর ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠলো। চোখদুটো ঝলমল করছে প্রফুল্লচিত্তে। মৃদু হেসে মাহমুদের দিকে তাকালো। তা অবলোকন করে মাহমুদের অধর কোন প্রশস্ত হলো। নরম কন্ঠে শুধালো,
-“পরিয়ে দেই?”

উঁচু কন্ঠে কথা বললেই যেন মেয়েটি নুইয়ে পড়বে। কুঁকড়ে যাবে। তরী মাথা দুলিয়ে অনুমতি দিলো।
মাহমুদ তরীর পেছনদিকে আড়াল হলো। হাত রাখলো কৃষ্ণ চুলের খোঁপায়। নিপুণ হাতে আঁটসাঁট ভাবে বেঁধে দিলো শিউলিফুলের মালা। চমৎকার এই রূপ অবলোকন করতে গিয়ে মাহমুদের দৃষ্টি আঁটকে গেল অন্য কোথাও। শ্রাবণের তীব্র তাপদাহে একটু একটু করে ঘেমে উঠেছে শরীর। কালো রঙ এর ব্লাউজ আঁটসাঁটভাবে লেপ্টে আছে তরীর শরীরের সাথে। কারো কারো নজরে দৃশ্যটি বেশ আকর্ষণীয়, গিলে খাওয়ার মতো। দৃষ্টি ঝলসানো এই দৃশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা। মাহমুদ আলগোছে আঁচল টে*নে দিল পিঠের উপর।
তরী প্রশ্নসূচক তাকাতেই মাহমুদ সত্যটা ধামাচাপা দিল। পাছে নাজুক মেয়েটা আরেকটু নুইয়ে যায়! সীমাহীন অস্বস্তি নিয়ে ঝরে যায়! মাহমুদের দৃষ্টি স্বচ্ছ। নেই কামুকতার ছোঁয়া। চোখে চোখ রেখে সরল গলায় জবাব দিলো,
-“এভাবেই ভীষণ ভালো দেখাচ্ছে, তরী।”

তরী আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসলো। তার চোখ হাসছে।
বেখেয়ালি হাঁটতে গিয়ে ফুটপাতের পাশ ঘেঁষে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। হাতে টা*ন পড়তেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। এক্ষুণি পড়ে গেলে কেমন লজ্জায় পড়তে হতো তাকে! ভেবেই হাঁসফাঁস লাগলো। পিচ ঢালা রাস্তা আর জুতার ফিতায় পা বেজে খানিকটা লেগেছে। তবে খুব একটা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে না। মাহমুদ চিন্তিত দৃষ্টিতে তার পায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। কপালের ভাঁজ গুলো জানান দিচ্ছে সে কতটা বিচলিত। মাহমুদের অভিযোগ,
-“আপনি বড্ড বেখেয়ালি, তরী।”

তরী কিছু বললোনা, চোখের পলক ঝাপটালো বার কয়েক। হুট করেই নিচে বসে পড়লো মাহমুদ। পায়ের ছুঁলে যাওয়া অংশে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁইয়ে দিতেই দু-কদম পিছিয়ে গেল তরী। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। পায়ে হাত দেওয়া ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে। অনেকেই ব্যাপারটিতে কা*মু*ক*তা খুঁজতে চাইবে। তরী চাইছেনা কেউ তাদের নিয়ে বা*জে ধারণা পোষণ করুক। তাকে নিয়ে মানুষের ভাবনা তার উপর প্রভাব ফেলে। পৃথিবী উজাড় করা মন খা*রা*প তাকে ঘিরে ধরে। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে উঠে পড়লো মাহমুদ। চিন্তিত স্বরে বলল,
-“এইটুকু পথ হাঁটতে পারবেন? আচ্ছা আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি রিকশা ডেকে নিচ্ছি।”

সামনে তাকালেই বাস স্টপেজ দেখা যাচ্ছে। কয়েক কদমের জন্য রিকশা? আ*ঘা*ত*টি এমন আহামরি নয়। তরী মনে মনে হাসলো। বাঁধা দিলো মাহমুদকে। মাহমুদের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কোমল হাতের মুঠোয় চেপে নিলো। মাহমুদের মনে হলো তুলতুলে নরম তুলো তার আঙ্গুল ছুঁয়ে দিল। পিছু ফিরে হাতের ওই শক্ত বাঁধনে তাকালো। কতটা নিঃসংকোচে তার আঙ্গুল আবদ্ধ করে নিলো। হৃদয়ে বয়ে গেল উপচে পড়া ঢেউ। তরীর চোখে তাকাতেই মেয়েটা মাথা নুইয়ে নিলো। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,
-“হাঁটতে পারবো আমি। ব্যথা নেই পায়ে।”

রা করলো না মাহমুদ। তরীকে নিয়ে হাঁটলো। দু-কদম এগিয়ে নিঃসংকোচ আবদার করে বসলো,
-“তরী, চলুন না বিয়ে করে ফেলি।”

তরীর পা জোড়া থেমে গেল। চোখেমুখে ভীতি নামলো। তবে মাহমুদের হাত ছাড়লোনা। ওভাবেই ধরে রইলো শক্ত বাঁধনে। মাহমুদ দুর্বোধ্য হাসলো। তরীর হাত শক্ত করে চেপে ধরে ভরসার গলায় বলল,
-“ভয় পাবেন না, তরী। আমি ক্ষণিকের আবেগ দিয়ে জিততে গিয়ে বিবেকের কাছে হেরে যেতে চাইনা। আমার পাওয়ায় আবেগ, বিবেক দুটোই চাই।”

তরী স্বস্তি পেলো। এখনই বিয়ে করা তার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। মানুষটাকে তার ভালোলাগে। ভালোলাগার জল ফোঁটা গড়াতে দিচ্ছে। সে বুঝতে চায় নিজেকে, পাশের এই মানুষটিকে।
মাহমুদ বলল,
-“আপনি সবসময় সেজেগুজে থাকবেন না, তরী। হুট করে একদিন সেজে আমায় চমকে দেবেন, ঠিক আজকের দিনটির মতো। আমি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই চমকের অপেক্ষায় থাকবো।”

তরীর মনে সুপ্ত ভালোলাগা। ভেতরকার নিরবতার অবসান ঘটালো না। চলুক কিছু ভালোলাগা নিভৃতে, নিঃশব্দে। তাদের নিমন্ত্রণহীন তুমুল অনুভূতির সাক্ষী হলো শ্রাবণের এক পড়ন্ত বিকেল। কোলাহলে পরিপূর্ণ এক ফুটপাত। দু’জোড়া পায়ের কদম পড়লো সমান তালে।

★★★

মায়ের আঁচল ধরে পিছু পিছু ঘুরছে রামি। আয়েশা সুলতানা খানিকটা বিরক্ত। সকাল থেকেই জ্বালিয়ে মারছে ছেলেটা। বিরক্তি ঝরা গলায় বললেন,
-“তোর ওসব রেসিপি আমি পারি না-কি? একবার বানিয়ে শিক্ষা হয়েছে আমার। তুই নিজে বানিয়ে নে।”

রামি নাকমুখ কুঁচকে বলল,
-“উঁহ্! আমি পারবোনা।”

-“তাহলে যা এখান থেকে।”

-“আমি তাহলে হবু বউকে ডেকে নিয়ে আসি। সে এসে বানিয়ে খাওয়াবে আমায়। তোমায় কত করে বলেছি বিয়ে করিয়ে দাও, শুনলেই না।”

আয়েশা সুলতানা চুপ করে রইলেন। রামি বাসা থেকে বেরিয়ে চারতলায় উঠলো। তরীকে জোরপূর্বক টে*নে নিয়ে এলো তাদের বাসায়। মায়ের ফোন থেকে রেসিপি দেখিয়ে বলল,
-“তোমার দায়িত্ব এটা আমায় বানিয়ে খাওয়ানো।
মা বলেছে বড় হলে তোমায় আমার বউ করে আনবে।”

তরী হালকা কে*শে উঠলো। রামি বলল,
-“ঝটপট ফ্রাইড চিকেন বানিয়ে খাওয়াও। আমি রান্নাঘরে তোমায় পাহারা দিচ্ছি।”

আয়েশা সুলতানা ফ্রিজ থেকে মুরগী নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। রামি রান্নাঘরে তাকের উপর বসেই ফোন ঘাটছে। মুঠোফোন তীব্র শব্দ করে উঠলো। বড় ভাবি ফোন করেছেন। রামি রিসিভ করে কানে তুললো।

-“কেমন আছো ভাবি?”

-“ভালো। তুই কেমন আছিস?”

-“আমার আর ভালো থাকা আছে না-কি? কেউ আমায় পাত্তা দিচ্ছে না।”

ইরা বিন্দুমাত্র আফসোস না করে বলল,
-“তোর আর ইহজীবনে ভালো থাকা হবে না। মা কোথাও সেটা বল।”

-“মা’কে কী দরকার? মুরব্বিকে ডিঙিয়ে ছোটো বাচ্চাদের সাথে জরুরি কথা বলতে চাইছো? সভ্যতা, নম্রতা শেখোনি?”

-“আপনি মুরব্বি? মাফ করবেন দাদাশ্বশুর।
আসলে আমার বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। মায়ের সাথে কথা বলতেই ফোন করেছি।”

রামি দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,
-“বলেছিলাম তোমার বোনকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তুমি দিলেনা।
মা’কে কত করে বলি তরী আপুকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও৷ তাও দিচ্ছে না। আমার জীবনটাই বেদনা।”

স্পিকার অন থাকায় তরী সবটা শুনতে পাচ্ছে। ইরা ভাবি চমৎকার হাসলেন। রিনিঝিনি হাসির শব্দটিও ভারি মিষ্টি শোনালো। তিনি রগঢ় করে বললেন,
-“যাদের বউ করার চিন্তায় চিন্তায় তুমি শুকিয়ে যাচ্ছো, তাদের বাহুর নিচে পড়ে থাকো তুমি। বউরা তোমায় ভ্যানিটি ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।”

তরীও খিলখিল করে হেসে উঠলো। রামি নাকমুখ কুঁচকে বলল,
-“কয়েক বছর পর ঠিকই বউদের তুলনায় বড় হয়ে যাবো আমি। দেখে নিও। এখন যত পারো অপ*মান করে নাও। সময় আমারও আসবে।”

ভাবি তরীর গলা শুনে বললেন,
-“তরী আছো?”

-“জি ভাবি।”

-“শোন, তুমি আর মিঠু কিন্তু সবার সাথে আসছো। আমি বারণ শুনছি না।”

তরী গাঁইগুঁই করে বলল,
-“বাবা যেতে দেবেন না। তাছাড়া আমার পড়াশোনা, মিঠুরও ক্লাসে গ্যাপ যাবে। এমনিতেও এর পড়াশোনায় মন নেই।”

-“দুদিনে ওমন কিচ্ছু হবেনা। আঙ্কেলের সাথে আমি কথা বলবো। আমরা দুদিন পর এমনিতেও ওই বাসায় আসছি।”

-“আচ্ছা, আগে আপনি আসুন।”

-“এবার মা’কে একটু দাও তো!”

রামি আয়েশা সুলতানার কাছে ফোন দিয়ে এসে তরীকে বলল,
-“তুমিও যাবে আমাদের সাথে দারুণ হবে তাইনা? আমার এখনই নাচতে ইচ্ছে করছে।”

তরী বলল,
-“এত নেচে লাভ নেই। আমাদের যাওয়া হবেনা।”

ইদের দিন রামিদের বাসায় গিয়ে প্রথমে অস্বস্তি হলেও অল্প কিছুক্ষণেই জড়তা কে*টে গেল। ভেবেছিল রামির ভাবি কেমন হবেন? তাকে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? বাকিদের মতো যদি আপন করে না নিতে পারেন? তরীর ভয় দূর হয়ে গেল নিমিষেই। রামির ভাবি ইরা মানুষটিও বাকি সবার মতো। সহজেই তরীর সাথে মিশে গেলেন। বিয়ের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্তানের মুখ দেখেননি। তবুও মানুষটি কতটা প্রাণোচ্ছল থাকার চেষ্টা করেন। তরীর ভীষণ মনে ধরলো ইরা ভাবিকে। নিঃসন্দেহে তিনি একজন চমৎকার মানুষ।

মাহমুদ এসে বসলো মায়ের পাশে।
তরী রান্না শেষ করে প্লেট হাতে আয়েশা সুলতানার কাছে গেল। চোখাচোখি হয়ে গেল মাহমুদের সাথে। তরী চোখ নামিয়ে নিলো। আয়েশা সুলতানা তরীকে পাশে বসিয়ে দিলেন। জড়োসড়ো হয়ে বসলো সে। মাহমুদ খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাকেই দেখছে। যা তরীর নজর এড়ালোনা। কপালের চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে আরও একবার তাকালো মাহমুদের দিকে। আবারও দুজনের চোখাচোখি হলো।
আয়েশা সুলতানা তরীর উদ্দেশ্যে বললেন,

-“ইরা তোমাকে আর মিঠুকে ছাড়ছে না। যেতেই হবে তোমাদের। ওর বাবা মা কাল এসে দাওয়াত দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আমিই বারণ করে দিয়েছি। এমনিতেই সব জায়গা তাদের দৌঁড়াতে হবে। বিয়ে পনেরো দিন পর হবে।”

তরীর গলায় স্পষ্ট দ্বিধা। মৃদু স্বরে বলল,
-“আমি আর মিঠু কিভাবে যাবো আন্টি? আমার, মিঠুর দুজনেরই পড়া আছে।”

-“দু-দিনের আহামরি কোন ক্ষ*তি হবে না।
আর তোমার বাবার সাথে আমি আর মাহমুদ কথা বলে নেবো।”

তরী মাহমুদের দিকে তাকালো। তার সম্পূর্ণ মনযোগ খাওয়ায়। বাসায় চলে এলো তরী।

★★★

পড়াশোনায় ব্যস্ত তরী। পাশেই মুঠোফোন পড়ে আছে অবহেলায়। মেসেঞ্জারের টুং শব্দে হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল। মাহমুদ কেবল মেসেঞ্জারেই বার্তা পাঠায়। কন্ট্রাক্ট নাম্বার এখনো আদান-প্রদান হয়নি তাদের। তরী খুলে রাখা বই একপাশে ঠে*লে রেখে ফোন হাতে নিলো।

❝ফ্রি আছেন, তরী? একবার ছাদে আসবেন?❞

সময় দেখলো তরী। রাত্রি দশটা উনপঞ্চাশ। সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। লম্বা শ্বাস টে*নে লিখলো,

❝আপনি কি ছাদে?❞

সেন্ড করার পরপরই সিন হলো। মুহূর্তেই ফিরতি বার্তা,
❝আপনার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি।❞

তরী সিন করে রেখে দিল। সুতির ওড়নাটি শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো ভালোভাবে। ফোন হাতে পা টিপে দরজা পর্যন্ত গেল। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও দরজা থেকে ফিরে এলো। দশ মিনিট এভাবেই কে*টে গেল। এখন আর পড়াশোনা হবেনা। বইপত্র গুছিয়ে শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিলো। তরীকে চমকে দিয়ে প্রথমবারের মতো মাহমুদের আইডি থেকে কল এলো। তরীর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এলো।

#চলবে……

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#পর্ব_১২
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

ঘরের বাতি নেভানো। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নির্জীবতা গ্রাস করে রেখেছে পুরো ঘর। ক্রমাগত স্পষ্ট হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ। বুকের ভেতর ত্রাসের খেলা। মুঠোফোন নামক যন্ত্রটি ডান হাতের মুঠোয় চেপে আছে তরী। আবারও তীব্র শব্দ হলো। তরী রুদ্ধশ্বাসে কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলো। কানে চেপে ধরতেই নিস্তব্ধতাকে জয়ী করে মাহমুদও নিরব রইলো। তরীর বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে এলো বিন্দু বিন্দু ভালোলাগার শ্বাস। ক্ষণকাল পর নিরবতা ভাঙলো মাহমুদ। তার চিরাচরিত শান্ত স্বরেও ব্যাকুলতা প্রকাশ পেলো।

-“আসছেন না কেন, তরী?”

তরী ঘোরের মাঝে আটকে গেল। বুক ভার করা অনুভূতি হলো তার। হঠাৎই মন বিষিয়ে উঠলো। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তার যাওয়া উচিত ছিল। মানুষটিকে এভাবে অপেক্ষা করানো তার মোটেই উচিত হয়নি। তরতর করে কেমন বয়সের ঘর এক এক করে কমতে লাগলো। বুঝদার এক যুবতী হয়ে উঠলো ঘন আবেগের পসরা সাজানো কিশোরী। আবেশে নিভে এলো চোখের পাতা। চিকন ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে রিনিঝিনি স্বর বের হলো,
-“আমি এক্ষুণি আসছি।”

তরীর মত পাল্টে গেল। ঘুমোতে যাওয়া বাদ দিয়ে মন ছাদের দিকে টা*ন*লো। ধীর পায়ে দরজায় পা বাড়ালো। সাবধানে দরজা খুলে বাইরে দিয়ে চাপিয়ে রাখলো। ফোনের আলো না জ্বালিয়ে অন্ধকারে পা বাড়িয়ে সিঁড়ির হাতল চেপে এক একটি সিঁড়ির ধাপ পার করে ছাদে পা রাখলো। কিছুর সাথে সজোরে ধাক্কা লাগতেই মৃদু চিৎকারে দু-কদম সিটকে পড়লো তরী। ছোট্ট প্রাণটি হাতে চলে এলো যেন।
তড়িৎ তরীর হাত চেপে ধরলো মাহমুদ। তাকে শান্ত করতে বলল,
-“আমি তরী, ভয় পাবেন না।”

বুকে হাত চেপে ঘন ঘন শ্বাস নিলো তরী। মাহমুদের স্বর শুনে কিছুটা শান্ত হলো। অন্ধকার হাতড়ে মাহমুদের সাথে ধাক্কা লাগলো তার। নিজেকে ধাতস্থ করে মৃদু চেঁচিয়ে বলল,
-“এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আপনি? এক্ষুণি ভয়ে জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিল প্রায়!”

অন্ধকারে তরীর রণচণ্ডী রূপ ঠাওর করা যাচ্ছে না। তবে কন্ঠের তেজ স্পষ্ট শ্রবণ করে হাসলো মাহমুদ। শব্দ হলো খুবই সামান্য। তরী আরেকটু রাগ দেখিয়ে বলল,
-“হাসছেন আপনি?”

মাহমুদ কথা না বলে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে তরীর মুখে ধরলো। চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকারে আলো পড়তেই চোখের পাতা নিভে গেল। মাহমুদ স্বাভাবিক ব্যাপারটিতেও মুগ্ধতা খুঁজে পেল। মুখটিতে স্নিগ্ধতায় ভরপুর, কতশত মায়া। দিন দিন তার দুর্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে বুকের খাঁচায় বন্দি করে রাখতে। তবে সে তরীকে সময় দিতে চায়। তরী আলোর বিপরীতে চোখ পিটপিট করে তাকালো। রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গাল দুটো ফুলে উঠলো। গমগমে স্বরে বলল,
-“চোখে আলো ধরে রেখেছেন কেন?”

মাহমুদ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। তরীর প্রশ্নের জবাব দিলোনা। অনিমিখ চেয়ে থেকে আবদার করলো,
-“আরেকটু রা*গ করুন না, তরী!
আপনার তেজী রূপটাও যে ভীষণ ভালোলাগে।”

দূর থেকে হিমশীতল করা বাতাস শরীর ছুঁয়ে দিলো। তরীর চোখেমুখে লজ্জার জোয়ার নামলো। মুখ লুকানোর বৃথা চেষ্টায় কিছু সময় পার করলো। মাহমুদ আলো ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাক করতেই তরী সোজা হয়ে দাঁড়ালো। এখন আর চোখে আলো লাগছেনা।

-“আপনি আমাদের সাথে বিয়েতে যাবেন, তরী?
চলুন না, একসাথে যাই! আপনাকে ছাড়া ভালোলাগবে না আমার।”

মাহমুদের চোখজোড়া শান্ত অথচ তরী কোথাও একটা ব্যাকুলতা টের পেলো। তার বুকের ভেতরটা ছটফটিয়ে ডানা ঝাপটালো। মলিন স্বরে জবাব দিলো,
-“বাবা যাওয়ার অনুমতি দেবেন না।”

মাহমুদ তরীর স্বীকারোক্তি চাইলো। শান্ত, দৃঢ় কন্ঠে শুধালো,
-“আপনি যেতে চান কি-না বলুন! আঙ্কেলকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।”

তরী মাথা নিচু করে সম্মতি জানালো। মাহমুদ প্রলম্বিত শ্বাস ছাড়লো। মেয়েটাকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা আজকাল। এই নিকষকৃষ্ণ অন্ধকারের বুকে তরীকে তার এক টুকরো চাঁদ মনে হয়। যে নরম আলো ছড়ইয়ে তার হৃদয় আলোকিত করে। মাহমুদ মৃদু আলোয় চোখজুড়ালো। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটাকে সবরকম ভাবেই চমৎকার লাগে, ভয়*ঙ্কর সুন্দর লাগে। তরী জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে উসখুস করছে। দ্বিধা নিয়ে বলল,
-“আমি আসছি।”

-“আরেকটু থাকুন না, তরী।”
মাহমুদের নিঃসংকোচ আবদার বরাবরের মতো আজও ফেলতে পারলোনা তরী। দ্বিরুক্তি না করে দাঁড়িয়ে রইলো। ক্রমশ তার অস্থিরতা বাড়লো। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রাত গভীর হচ্ছে। অথচ মাহমুদের হেলদোল নেই। পারলে সে সময়টাকেই থামিয়ে দিতো।
তরী করুণ সুরে বলল,
-“রাত অনেক হয়েছে। এবার যাওয়া উচিত। বাবা মা জেগে গেলে সমস্যা হবে।”

-“এত পালাই পালাই করেন কেন, তরী? ঠিক আছে চলুন।”

তরী সামনে হাঁটলো। মাহমুদ তার পিছুপিছু কাছ ঘেঁষে হাঁটতেই জমে গেল সে। চোয়াল শক্ত করে বাকি সিঁড়ি পার করলো। আরেকটু কাছাকাছি থাকলেই সে ঢলে পড়বে।

★★★

শুক্রবার, শনিবার দুদিন সরকারি বন্ধ পেয়ে বড়ো ভাইয়া আর ভাবি চলে এলেন। আয়েশা সুলতানা বিকেলে সময় করে বিল্ডিং এর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ইরাকে। সন্ধ্যার পর আসলেন তরীদের বাসায়। দরজায় বেল দিতেই তরী এসে দরজা খুললো। সকালেই ইরার সাথে দেখা করে এসেছে সে। তরী মিষ্টি হেসে বলল,
-“ভেতরে আসুন।”

আয়েশা সুলতানা ইরাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। বৈঠকখানায় তরীর বাবা বসে আছেন। ইরা সালাম দিল। বাবা গম্ভীর স্বরে সালামের জবাব দিয়ে উঠে পড়লেন। ভাবলেন মেয়েমানুষের আলাপ-আলোচনায় থেকে তিনি কী করবেন? উল্টো নতুন মেয়েটার হয়তো অস্বস্তি হবে।
ইরার একটুও অস্বস্তি হলোনা। বরং চমৎকার হেসে বলল,
-“আঙ্কেল কোথায় যাচ্ছেন? সবাই মিলে গল্প করি, বসুন।”

মেয়েটি যেন আদেশ দিল উনাকে। তরীর বাবা গম্ভীর, একগুঁয়ে ধাঁচের মানুষটি থতমত খেলেন। তবে চেহারায় তা প্রকাশ না করেই সোফার একপাশে বসে পড়লেন। ইরা মিটিমিটি হাসলো। সে বেশ বুঝতে পেরেছে উনি খানিকটা ভড়কে গিয়েছেন। তরী মায়ের সাথে চা-নাশতার ব্যবস্থা করে পাশে এসে বসলো। ইরা নিজ থেকেই কথা তুললো। তরীর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“আঙ্কেল একটা আবদার করবো। বলুন রাখবেন?”

তরীর বাবা আশ্চর্য হচ্ছেন। মেয়েটা একের পর এক চমকে দিচ্ছে উনাকে। ঠিকঠাক পরিচয় হয়নি। অথচ অনায়াসে আবদার করছে। তরীটা যে ঠিক বিপরীত। খুব তাড়াতাড়ি কারো সাথে মিশতে পারেনা। তাই ভেবেছিলেন এই মেয়েটাও তেমনই হবে। কিন্তু তিনি ভুল। নিজের গম্ভীরভাব কিছুতেই ধরে রাখতে পারলেন না। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
-“বলো।”

-“আমার বোনের বিয়ে কিছুদিনের মধ্যে। আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। কিন্তু তরী আর মিঠু মায়েদের সাথে হলুদের আগেই চলে যাবে।”

-“সম্ভব নয়। মিঠু, তরী দুজনেরই পড়াশোনা আছে। তরী এবার লাস্ট সেমিস্টারের ছাত্রী।”

ইরা মলিন কন্ঠে বলল,
-“দুদিনে এমন কিছু হবেনা, দিন না আঙ্কেল! ওরা দুজন সেদিন অল্পকিছু মুহূর্তেই আমাকে বোন বানিয়ে এসেছে। এখন আমি কিভাবে ভাই-বোন রেখে অন্য বোনের বিয়েতে যাই? আমার তো বাবা নেই। আপনি অন্তত বাবা হয়ে আমার আবদারটি রাখুন!”

বাবা নেই শুনে তরীর বাবা কিছুটা নরম হলেন। বললেন,
-“আচ্ছা যখন যাবে, তখন দেখবে।”

-“এটা কি আবদার রাখা হলো? আপনি আবদার রাখলেনও না আবার ছুঁ*ড়েও ফেললেন না।”

অগত্যা মত দিতে হলো বাবাকে। রাশভারি গলায় বললেন,
-“ঠিক আছে যাবে।”

ইরার ঠোঁটে হাসি ফোটে উঠলো। আয়েশা সুলতানা মনে মনে হাসলেন। মাহমুদের বাবাও ছিলেন এমন কাঠখোট্টা স্বভাবের। ঠিক এমনভাবে অল্প অল্প করে শশুরের মনেও জায়গা করে নিলো মেয়েটা। রামি নাচতে নাচতে মিঠুকে বলল,
-“জামাকাপড় এখন থেকে গুছিয়ে নে। সাথে কয়েকটা পলিথিন বাড়িয়ে নিস। তোর তো খাবার টোকানোর অভ্যাস আছে। সমস্যা নেই আমি আছি তো। সবাইকে বুঝিয়ে বলবো ছেলেটা হাবাত। বছরে একবারও ভালো খাবারের দেখা পায়না।”

মিঠু অগ্নি চোখে তাকিয়ে ভস্ম করে দিলো রামিকে।
-“তুই হাবাত, তোর বংশে যে কয়টা বেঁচে আছে সবগুলো হাবাতের দল। পলিথিন তোর লাগবে, মিঠুর নয়। মিঠু হলো জমিদারের বংশধর।”

রামি দু*হাত আঁজলা করে মুখ উগড়ে বমি করার ভান করে মিঠুর দিকে ছুঁড়ে মা*র*লো।
-“তোর জমিদারিতে বমি করি আমি।”

মিঠুর সকাল থেকেই সর্দি লেগেছিল। হাতের টিস্যু দিয়ে নাক মুছে রামির শরীরে ছুঁ*ড়ে বলল,
-“তোর মতো হাবাত কী চিনবে জমিদারির? তোরা চিনিস ভাত, সবগুলো ফ*কি*ন্নি*র জাত।”

অরু কোমরে হাত দিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো দুজনের ঝগড়া। একটু পরই গলায় গলায় ভাব হয়ে যাবে। বড়দের মতো দুজনকে ধমকে উঠলো অরু,
-“ঝগড়া বন্ধ করো। পি*টি*য়ে একেবারে চামড়া তুলে ফেলবো দুজনের।”

রামি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো অরুকে। বিদ্রুপ হেসে বলল,
-“চুনোপুঁটি আমাদের শাসন করতে এসেছে। যা ভাগ এখান থেকে।”

অরু নিজের অপমান বরদাস্ত করতে পারলোনা। বিছানার ঝাড়ু হাতে নিয়ে তাড়া করলো রামিকে। দুজনে মিলে চক্কর কা*ট*লো পুরো রুম। রামিকে হেনস্তা হতে দেখে পায়ে পা তুলে আরাম করে বসলো মিঠু। বসে বসে অরুকে ডিরেকশন দিচ্ছে রামিকে কিভাবে কিভাবে আক্র*মণ করলে ভালো হয়।

★★★

অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে সূর্য উঠলো পূব আকাশে। সকালের মিঠা রোদ বেলা বাড়ার সাথে সাথে উত্তাপ ছড়ালো। তরী ক্লাসের জন্য বের হলো। মাহমুদ নিচেই দাঁড়িয়ে আছে। ইদানীং তরী না নেমে আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর একসাথে যায়। তরী প্রথম প্রথম মাহমুদের সাথে যেতে না চাইলেও এখন তার আবদার ফেলতে পারেনা। ধারালো চোখ দুটো তাকে সম্মোহিত করে ফেলে। চুম্বকের মতো আকর্ষিত হয়। তরী এসে পড়তেই সিএনজি নিলো মাহমুদ। সিএনজিতে ঠিকঠাক উঠে বসতেই তরীর বাবা এসে পড়লেন। তিনিও সামনের দিকেই যাবেন। ইমার্জেন্সি কল পেয়ে বাসা থেকে বের হলেন। মাহমুদ উনাকে পেছনে বসতে বলে সামনে ড্রাইভারের সাথে চলে গেল।

তরীর বাবা মাহমুদের সাথে আলাপ জুড়ে দিয়ে একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“বিয়ের অনুষ্ঠানে তুমিও যাচ্ছো?”

মাহমুদ ভদ্রছেলের মতো গলার স্বর নিচু রেখেই জবাব দিলো,
-“জি আঙ্কেল। মা আর রামিকে এখান থেকে আমিই নিয়ে যাবো।”

তরীর বাবা বললেন,
-“তোমাদের সাথে তরী আর মিঠুও যাচ্ছে। ওদের খেয়াল রেখো। বিশেষ করে মিঠুর খেয়াল রাখবে। কখন কী ঘটিয়ে বসে। মনে বাঁদরামি ছাড়া আর কিছুই নেই ছেলেটার।”

মাহমুদ উনাকে আশ্বস্ত করে বলল,
-“চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। আমি সামলে নেবো।”

তরীর বাবা গন্তব্য আসতেই নেমে গেলেন। মাহমুদ ফের পেছনে গিয়ে বসলো। আলতো হেসে তরীর ডান হাত মুঠোয় নিলো। চোখে চোখ রেখে গভীর স্বরে বলল,
-“দেখলেন তো তরী! আপনার বাবা কেমন করে আমায় দুদিনের জন্য আপনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। এরপর সারাজীবনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন।”

তরী তাদের হাতের দৃঢ় বন্ধনে তাকালো৷ চোখ বুজে রইলো খানিকটা সময়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলল “আপনি যে আমার মন ব্যথার গোপন ঔষধ হয়ে উঠেছেন, মাহমুদ। এভাবেই শক্ত করে ধরে রাখুন আমায়।”
কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করলোনা। মাহমুদের চোখে চোখ রেখে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস তার নেই। তরী লজ্জায় লুটিয়ে পড়বে। মাহমুদের হাত থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলোনা। বাড়তে দিল গাঢ় অনুভূতি।

#চলবে……..