অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-১৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
জোহান ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে ওভেনে দেয় গরম করতে। আজ তার মা বাসায় নেই। তার বোনের বাসায় গেছে। আর পার্টি থেকেও সে জলদি চলে এসেছে। তাই খাবার গরম করছিল। হঠাৎ করে তার খেয়াল আসে মায়ার। তার কথাগুলোর। তার কথাগুলোর মনে পড়তে থাকে। তখনই ওভেন থেকে শব্দ আসে। সে ওভেন অফফ করে গরম খাবার প্লেট ধরতেই ব্যাথায় শব্দ করে উঠে। আবার তার মনে পড়ে মায়ার ব্যাথা পাবার কথা। ও কী ব্যাথায় মলম লাগিয়েছে? যে জেদি মেয়ে, নিশ্চিত নিজের বন্ধুদের বকা দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। সে বেশি কিছু না ভেবে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে রওনা দেয় মায়ার এপার্টমেন্টের দিকে।
দরজা খুলে জোহানকে দেখ আশরাফ তাকে ভেতরে ডাকে। তাকে দেখে মেহেদী তো খুশিতে আত্নহারা। একসময় সে তাদের জুনিয়র ছিলো। আর অনেক বড় ভক্তও ছিলো পঞ্চসুরের। তাদের আগে দেখাও হয়েছে কিন্তু জোহান তাকে ঠিক চিনতে পারে না। ড্রইংরুমে এসে দেখে নিচে তোশক ও চাদর বিছানো হয়েছে। তার মাঝখানে কতগুলো চিপ্স, কোক ও চকোলেট। আশরাফ তাকে বলে,
“আমরা দেখা হলেই সারারাত বসে আড্ডা দেই। আপনি সোফাতে বসুন।”
“সমস্যা নেই। এত ফরমাল হবার প্রয়োজন নেই।”
জোহান তাদের সাথে মেঝেতেই বসে।”
আশরাফ বলে, “ফরমাল হবো না? দেখছেন না একজন আপনাকে দেখে চোখ ব্যাঙের মতো করে রেখেছে। মনে হচ্ছে এখনই বেরিয়ে যাবে।”
মেহেদী তার কথা শুনে এক লাথি মারে।
তন্নি রান্নাঘর থেকে আসে বড় এক থালা নুডলস রান্না করে। সে আসতে আসতে বলে, “এই সার্কাস দেখে কিছু মনে করবেন না। এরা সেলিব্রিটি দেখেও নিজের বান্দরমার্কা কান্ড বন্ধ করতে পারে না।”
সে চোখ ঘুরায় আশরাফ ও মেহেদীকে দেখে।
জোহান হাসে, “ডোন্ট ওয়ারি। বন্ধুত্ব এমনই সুন্দর। সব বন্ধুত্ব সারাজীবন এমন থাকে না। একসময় এক ভুলের জন্যই শেষ হয়ে যায়। আপনারা অনেক লাকি। ভালো কথা, আমি এসেছিলাম মায়াকে দেখতে। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসেছিলাম। পা’য়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছিল।” “আমি আগেই ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।”
“ওহ তাহলে আমি যাই। সরি এত রাতে বিরক্ত করলাম।”
“আরে না বসো, আমরা সকলে এমনি টাইম্পাস করব। কোনো কাজ না থাকলে আড্ডা দিতে পারো।”
“কাজ তো নেই। আমি থাকলে সমস্যা হবে না তো?”
“একদম না।”
মেহেদী তার পাশে এসে বসে বলে, “আরে ব্রো তোমার নতুন এলবাম কবে বের হবে?”
“ওটা তো তোমার ফ্রেন্ডই জানে। আমার ট্রেনিং করাচ্ছে আপাতত।”
“ট্রেনিং আর তোমার? বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা?”
“সেটা একসময় ছিলাম। এখন তো আর নেই।”
“তোমার বাবার ভুলের কারণে তোমার শাস্তি পেতে হচ্ছে এটা আমার পছন্দ না। যার দোষ তাকে বলুক, তার দোষে তোমাকে কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে। মানুষের না মাথায় জ্ঞান কম।” মেহেদী রাগে মুখ ফুলিয়ে বলে।
জোহান তাকে দেখে হাসে খানিকটা, “ভুল কিছুটা আমারও ছিলো। বাবাকে ইম্প্রেস করার চক্করে অনেক ভুল করেছি।”
“তো তা স্বীকারও করেছ।” তন্নি কথার উওর দেয়। সে আরও বলে, “জনগণ এখন তোমার উপর রাগ করে থাকলেও আমি নিশ্চিত তোমার গান আসলে সকলে তোমাকে মেনে নিবে। আগের মতো ভালোবাসাও দিবে। আমরাও কিন্তু তোমাদের ভক্ত। ফাইভ মেলোডি ইজ লাভ। তোমরা লিজেন্ড। একটা সিক্রেট বলি?”
“বলো?”
তন্নি আশেপাশে তাকিয়ে ধীরসুরে বলে, “মায়াও না ফাইভ মেলোডির বিশাল বড় ভক্ত ছিলো। আর তুমি ওর সেকেন্ড ফেভারিট ছিলে।”
“মজা করছ?”
“সত্যি।”
এমন সময় ভেতরের রুম থেকে একটি মেয়ে আসে। ঢোলা নাইটস্যুট পরা। এলোমেলো চুলে বাচ্চামো ক্লিপ লাগানো। সে চকোলেট খেতে খেতে রুমে প্রবেশ করে আর বকা দেয়, “এত কথা কি বলছিস তোরা? আর ও এখানে কী করছ?”
জোহান তন্নিকে জিজ্ঞেস করে, “ও কী মায়ার ছোট বোন? ও মতো ফেসিয়াল ফিচার।”
“ও-ই তো মায়া।”
“কী!” জোহান চমকে উঠে দাঁড়ায়। সে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখে মায়াকে। সে অবাক হয়ে বে, “মানে ওর আধা কেজি মেকাপের পিছনে পিচ্চি দেখা যায়?”
মায়া রাগী মুখে বলে, “প্রথম কথা, আমি আধাকেজি মেকাপ করি না। আর দ্বিতীয় কথা, খবরদার আমাকে পিচ্চি বলবে না।”
“তো আর কী বলব? মুখ এটা লাগছে পিচ্চিদের মতো, টি-শার্টে কার্টুন আঁকা, চুলে পিচ্চিদের ক্লিপ মারা। এজন্যই তো বলি এত মেকাপ ধুপে ঘুরে কেন? এভাবে অফিসে এলে তো তেলাপোকাও ভয় পাবে না তোমার থেকে। মেকাপ দিয়ে পিচ্চি পুচ্চু থেকে রাক্ষুসি হয়ে যাও? কী সাংঘাতিক ব্যাপার!” বলে সে বসে পড়ে অবাক হয়েই।
“আর তোমাকে কে অনুমতি দিলো আমার বাসায় আসার?”
“আমি।” তন্নি তাকায় তার দিকে, “কোনো সমস্যা আছে?”
মায়া দ্রুত ডানে বামে মাথা নাড়ায়। তারপর তন্নির পাশে বসে পড়ে। তন্নি তাকে বকুনি দেয়, “তোকে বলেছিলাম না আমি তোকে রুমে নিতে আসব? পা’য়ে ব্যাথা পেয়ে টুংটুং করে ঘুরে বেড়ানোর দরকার আছে তোর?”
মায়া তন্নির কনুই ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে বলে, “ভাই আমার ইজ্জতের এভাবে বারোটা বাজাইস না। ও আমার অফিসে কাজ করে। নিজে তো আর ভয় পাবেই না, অন্য সবাইকেও বলে বেড়াবে।”
জোহান মায়াকে এভাবে বকুনি খেতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। মায়া চৌধুরীকে কেউ বকার সাহস রাখে সে জানতো না। সে ফিক করে হেসে দেয়।
মায়া রাগী স্বরে বলে, “এমন দাঁত বের করে হাসছো কেন?”
“ভাবছি, অফিসে যেভাবে বাঘিনীর মতো থাকো যেন সামনে পেলেই কাওকে চিবিয়ে খাবে আর এখানে পুরোই ভেজা বিড়াল। কিউট ভেজা বেড়াল।”
মায়ার রাগ বাড়ে, “মাথা ফাটায় ফেলবো একদম।”
জোহান মেহেদীর দিকে তাকিয়ে নিম্নস্বরে জিজ্ঞেস করে, “এই রূপেও মাঝেমধ্যে ভয়ংকর লাগে।”
মেহেদী শব্দ করে হেসে বলে, “ভাই আপনাকে দূর থেকে অনেক গম্ভীর ও অহংকারী লাগে। বাট আপনি আসলে পুরাই জোস। আচ্ছা ভাই আপনি এই শুক্রবার, শনিবার কী করছেন?”
“তেমন কিছু না। কেন?”
“ওই আমার….” সে বলতে বলতে মায়ার সরু দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে যায়। তারপর বলে, “না ভাই কিছু না। বাদ দেন।”
তারপর মুখ বানিয়ে আবার মায়ার দিকে তাকায়। জোহান দেখে দুইজনে ইশারায় কথা বলছে। আজব আজব মুখ বানিয়ে।”
আশরাফ তাকে জানায়, “ভয় পাবার কিছু নেই। মনে হচ্ছে এদের ভূতে ধরেছে বাট এমন কিছু না। এখানে সকলে একেকটা এলিয়েন। আমি ছাড়া। মুভি দেখবেন?”
জোহানকে জিজ্ঞেস করে সে আবার মায়ার মুখে তোশক মেরে জিজ্ঞেস করে, “এই চুন্নি মুন্নি তোরা কি ছবি দেখবি না কার্টুন?”
মায়া লজ্জায় তার মুখ লুকিয়ে নেয়। তার বন্ধুরা কিছু মুহূর্তে কিভাবে তার ইমেজের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।
মায়া বলে, “যা দেখার দেখ। আমার কিছু আসেযায় না।” “ঠিকাছে তাহলে হরর মুভি দিলাম।”
“না, অন্যকিছু।”
“কেন ভয় পাচ্ছিস? জোহান জানো এই মেয়ে যত সাহস দেখায় হরর মুভি দেখলে সব জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। নরমাল হরর মুভিও দেখতে পারে না। ভয়ে শেষ হয়ে যায়।”
“এমন কিছু না। তুই হরর মুভিই দিবি এখন। সবচেয়ে ভয়ংকর ফিল্মই দিবি।”
“এজ ইউর উইশ। দাঁড়া বের করছি।”
আশরাফ ছবি বের করতে করতেও তারা অনেক গল্প করল। তারপর ছবি ছাড়ার পর সকলে সিরিয়াল ধরে বসে। মায়া নিজেকে অনেক নিয়ন্ত্রণ করার সত্ত্বেও নিজের ভয় লুকিয়ে রাখতে পারে না। স্ক্রিনের সামনে ভূত আসতেই তার পাশে বসা তন্নিকে ধরে জোরে চিৎকার করে উঠে। এটাও কম ছিলো না, এর মধ্যে আশরাফ ও মেহেদী একটু পর পর তাকে আরও ভয় দেখায়। আর মায়া তাদের বসে। একটুপর তন্নি উঠে যায় সকলের জন্য কিছু রান্না করে আনতে। আশরাফও যায় তার পিছু পিছু।
মেহেদী বলে, “দুইটায় একসাথে রান্না করতে যাচ্ছে না প্রেম করতে?
” দুইজনে রিলেশনশিপে আছে?” জোহান প্রশ্ন করে।
“সে কলেজ থেকে। আগামী এক দুই বছরে বিয়ের প্লানিংও করছে।”
মায়া স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ ভূতের এক দৃশ্য জোরে চিৎকার করে উঠে। এর উপর মেহেদী পিছন থেকে এসে তার কাঁধের উপর একটি কুশন রাখলে সে আরও জোরে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে। এরপর সে কুশন দিয়েই মারে মেহেদীকে। মেহেদী শব্দ করে হাসতে হাসতে রান্নাঘরের দিকে যায় এবং বলে, “দেখে আসি ওই দুইটা লাভবার্ড করছে টা কি?”
মায়া মুখ ফুলিয়ে বসে। জোহান তারদিকে খানিকটা ঘেষে বসে এবং বলে, “যদি ভয় বেশি লাগে তাহলে বাঁচার জন্য আইডিয়া দিতে পারি।”
মায়া তবুও তার ভাব ছাড়ে না, “আমার ভয় লাগে না। ভুলে যেও না তুমি মায়া চৌধুরীর সাথে কথা বলছ।”
তবুও সে আইডিয়া দেয়, ” ঘুমন্ত মানুষকে সহজে কেউ উঠায় না। বিরক্তও করে না।”
মায়া তাকে পাত্তা না দিয়ে অন্যদিকে তাকায়। কিন্তু মেহেদী আসার আগে ঠিকই ঘুমের নাটক করতে শুরু করে। কিন্তু একসময় আসলেই ঘুমিয়ে পড়ে সে।
জোহান মেহেদীর সাথে কথা বলার ফাঁকে একবার তাকায় মায়ার দিকে। তাকে দেখা হাসে খানিকটা। খেয়াল করে ঘুমে সে পড়ে যাচ্ছিল। সে জলদি তার মাথাটা ধরে নেয়। নিজের কাঁধে তার মাথা রাখে, আলতো করে। আসলেই মেয়েটা ঘুমিয়ে গেল। ঘুমে কতটা শান্ত লাগছে তাকে। অথচ জাগ্রত থাকাকালীন ব্যবহার একদম রাক্ষুসির মতন।
মেহেদীর কথায় সে মায়ার দিক থেকে মুখ ফেরায়, “ব্রো এখন তো মায়া ঘুমিয়েছে এখন বলি। আগামী সাপ্তাহে আমার বোনের বিয়ে। তোমার আসতে হবে। প্লিজ মানা করো না, আমার বোনও তোমার অনেক বড় ফ্যান। তুমি আসলে অনেক খুশি হবে। বিয়ের দিনটা আরও আনন্দে ভরে যাবে।”
“তাই? তাহলে অবশ্যই আসবো।”
“থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমি আমার বোনকে ওয়াদা করেছিলাম, যখন শুনলাম তুমিও কোম্পানিতে জয়েন করেছ। কিন্তু মায়াকে বলার পরে ও মানা করে দিয়েছিল।”
“মানা করলো কেন?”
“আসলে ও দ্বিধায় ছিলো এভাবে বিনা পরিচয়ে তোমাকে ডাকলে তুমি সেটা অন্যভাবে নিতে পারো। খারাপ লাগতে পারে তোমার।”
“বাহ মায়া চৌধুরী অন্যের অনুভূতির চিন্তা করে আমি তো জানতাম না।”
“মায়া ওই বাহিরেই নিজেকে কঠিন দেখায়। মন একদম কোমল ওর।”
তন্নি রান্নাঘর থেকে খাবারের ট্রে নিয়ে আসে। সে বলে,
“ওয়াহিদ এবং দিয়ার জন্য না হলে ওর এমন কঠিন সেজেও থাকা লাগতো না। আর এক জনাব ওকেই বাসায় নিয়ে এসেছে।”
মেহেদী মুখ লটকিয়ে বলে, “দোস্ত যত যাই হোক ও তো আমাদের বন্ধু। ও ভুল করেছে কিন্তু চিন্তা কর, ওয়াহিদ দিয়াকে ভালোবেসে যদি মায়াকে বিয়েও করতো তাহলে কী ও হ্যাপি থাকতো তুই-ই বল।”
আশরাফও তার সাথে একমত হয়, “আমরা কাকে কখন ভালোবেসে ফেলি তা কি আমাদের হাতে থাকে? এই যে আমি যদি বুঝেশুনে ভালোবাসতাম তাহলে তো কোনো এলিগেন্ট, ম্যাচিউর, বুঝদার মানুষকে ভালোবাসতাম যে নিজের বয়ফ্রেন্ডের উপর হাত তুলবে না। তোর মতো শাঁকচুন্নিকে না’কি?”
“আমি শাঁকচুন্নি না? তুই দাঁড়া শুধু… ” সে খাবারের ট্রে নিচে রেখে তার পিছনে দৌড়ে যায় তাকে মারার জন্য।
শব্দ শুনে মায়া নড়ে চড়ে উঠে। আবার জোহানের বাহু ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। জোহান তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
ঘুম ভাঙলে মিটিমিটি করে চোখ খুলে মায়া। উঠে চোখ কচলে দেখে মেহেদী, তার পা’য়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে। সে পা সরিয়ে নেয়। খেয়াল করে সে জোহানের বাহু ধরে ঘুমিয়ে আছে। হাত ছেড়ে সে জোহানের দিকে তাকাতেই দেখে সে জেগে আছে। সে পিছনে সরে যায়। নিজের এমন কান্ডে লজ্জা পায় খানিকটা। তারপর স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“উঠালেই হতো।”
“এখন উঠিয়ে তো দিতাম। কিন্তু ম্যাডাম আপনি তো ভূত থেকে ভয় পেতেন আর আমি আপনার থেকে।”
মায়া আড়চোখে তার ফিরে তাকিয়ে ভেংচি কেটে উঠে যায়। জোহান তার পিছনে আসে, “কোথায় যাচ্ছো?”
“কিচেনে। কফি বানাবো।”
“আমিও খাব আর আমিই বানাবো। তুমি পা’য়ে ব্যাথা পেয়েছ।”
“যেয়ে ঘুমাও তো।”
“এখন তুমি যেভাবে সারারাত আমাকে ধরে ঘুমিয়েছিলে ভয় করছিল। নিজের সম্মানের রক্ষা করতে গিয়ে সারারাত নির্ঘুম কাটাতে হলো।”
মায়া রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। কিন্তু পরের মুহূর্তে আর নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হেসে দেয়।
জোহান বলে, “কাউন্টারে বসে কেবল বলো কোথায় কি আছে আজ জোহানের স্পেশাল কফি খাওয়াচ্ছি তোমায়।”
“তোমরা এমন বিহেভ করছ কেন যেন আমার পা’য়ে ট্রাক চড়ে গেছে। সামান্য কাঁচই তো ঢুকেছে। আমি একদম ঠিক আছি।”
“তাই?”
“হাঁটার সময় একটু ব্যাথা করছে আরকি।”
জোহান এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া না পেরে বলে, “ফাইন, বসছি।”
মায়া কাউন্টারে উঠে বসে বলে দেয় কোথায় কি আছে।
জোহান তার কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা আমি শুনলাম তোমার না’কি একসময় আমি ফেভারিট ছিলাম। আই মিন সেকেন্ড ফেভারিট।”
মায়া চোখ বড়বড় করে তাকায় জোহানের দিকে, “কি… কে বলল এসব আজেবাজে কথা? মেহেদী ও আশরাফ বলেছে তাই না? ঘুম থেকে উঠে নিক ওদের ভর্তা না করলে আমার নাম মায়া চৌধুরী না।”
“তন্নি বলেছে।”
তন্নির কথা শুন মায়ার সব ভাব বেরিয়ে যায়। সে বলে, “তন্নি বলেছে? থাক যাই হোক, একসময় তো আমিও বাচ্চা ছিলাম। বাচ্চাকালে চয়েজও তো খারাপ থাকে।”
জোহান আড়চোখে তাকায় মায়ার দিকে।
তারপর নিজে কাজে ধ্যান দেয়।
মায়া জিজ্ঞেস করে, “একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
“তুমি কবে থেকে অনুমতি নেওয়া শুরু করলে?”
“তুমিও নিজের ভালোবাসা পাওনি তাই না?”
জোহান মগে কফি বিট করছিল। মায়ার প্রশ্ন শুনে হঠাৎ থেমে যায়। তাকায় মায়ার দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে।
মায়া আবারও প্রশ্ন করে, “মেয়েটা ইনারা, তাই না?”
জোহান আরও অবাক হয়।
মায়া বলে, “গতকাল তুমি যেভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছিলে তা দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম।”
জোহান এক মুহূর্তের জন্য সরু দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। তারপর হেসে চুলা থেকে দুধের পাতিলটা নামিয়ে মগে ঢেলে বলে, “আমিও দেখেছিলাম, ওয়াহিদকে দিয়ার সাথে গল্প করতে। ওদের একসাথে অনেক হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। তখন বুঝলাম ওয়াহিদ কেন দিয়াকে বেছে নিলো।”
সে কফির মগটা মায়ার পাশে রেখে আবার রাগী দৃষ্টিতে তাকাল মায়ার দিকে। তার কাছাকাছি এসে বলে, “কারণ তুমি স্বার্থপর। কেবল নিজের কষ্টের গল্প শুনাতে পারো, কিন্তু অন্যও যে তোমার কথায় কষ্ট পেতে পারে তা ভাবতে পারো না। তুমি অন্যকারো চিন্তাই করো না। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারটা তোমাকে বলিনি। তাহলে তোমার সেদিকে এত ধ্যান দেবার প্রয়োজনটা কি আমি বুঝতে পারছি না।”
আবার দূরে সরে সবার জন্য চা’য়ের পানি বসাল। যেন সবাই উঠলে চা খেতে পারে।
মায়া সেখানে বসে রইল। হঠাৎ তার চোখের সামনে ভেসে উঠে পুরনো কিছু স্মৃতি….
“দেখ মিষ্টি, আমার সত্যি মনে হচ্ছে তোর ব্রেনে সমস্যা হয়েছে। তুই অডিশনে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও কেন সুযোগটা দিয়াকে দিচ্ছিস? ওই মেয়েকে তুই চিনিস দুই সাপ্তাহও হয় নি।” ওয়াহিদ রাগী সুরে কথাগুলো বলে মায়াকে।
“এখন তো এই সুযোগটা আমার থেকে বেশি দিয়ার প্রয়োজন। দেখ তুই কোম্পানি সামলাতে আংকেলের হেল্প করছিস তাই আমি তোর সাথে থাকার জন্য অডিশন দিয়েছি। কিন্তু দিয়ার তো এই পজিশনের প্রয়োজন আছে। ও এর মাধ্যমে গানে আরও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে আর ওর একটু প্রমোশন করলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ও টাকাও পাবে।”
“তুই কি বোকা? আমি জানি না। তোর গানের গলা একবার শুনে সবাই যে মুগ্ধ হয়েছে তারপর তোর পজিশন অন্য কাওকে দেওয়া… আমি জানি না কিভাবে করব।”
“আরে আমি তো নিজে থেকে সরে যাচ্ছি। তোর কিছু করা লাগবে না।”
“আর আংকেল যে তোর উপর চিল্লাবে তার কি?”
মায়া ওয়াহিদের গাল টেনে বলে,
“কি কিউট তুই! বিয়ের আগেই বউয়ের এত চিন্তা হচ্ছে? চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, আমি সামলে নিব। এমনিতেই আমার অন্যকিছুতে ইন্টারেস্ট নেই। আমি শুধু অপেক্ষায় আছি তোর বউ হয়ে তোকে ভালোবাসার।”
“তুই আর তোর যত আজেবাজে কথা। ঠিকাছে আগামীকাল ওই মেয়েকে নিয়ে আসিস। আমিও দেখি আমাদের কোম্পানির যোগ্য কি-না!”
বর্তমানে,
মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিনের এক ভুলের কারণে তার সম্পূর্ণ জীবন এলোমেলো হয়ে গেল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ঠিকই বলেছ। আমি অন্যের কথা ভাবতে চাই না। অন্যের কথা চিন্তা করে নিজে কষ্ট পাওয়া থেকে স্বার্থপর হওয়া ভালো। কিন্তু তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলা আমার উচিত হয় নি। ক্ষমা করো।”
জোহান অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া চৌধুরী তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারে তা যে অবিশ্বাস্য।
মায়া কাউন্টার থেকে নামতে গেলে মগটায় হাত লেগে পড়ে যায়। গরম কফি সম্পূর্ণ তার হাতে পড়ে যায়।
আঁতকে উঠল জোহান, “তুমি কী বোকা? এই পাশে গরম কফির মগ রেখেছি তাও কী ধ্যান নেই তোমার?”
সে দ্রুত মায়ার কাছে যেয়ে হাত ধরতে নেবার আগেই মায়া তাকে থামায়। সে বলে, “আমার ভুল ছিলো। আমিই তোমার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ শুরু করেছিলাম। আমি ভুলে গিয়েছিলাম অচেনা লোকেদের নিজের পৃথিবীতে স্থান দিতে নেই। আবেগের বশে কাওকে নিজের গল্প শুনাতে নেই। সরি… মাফ করে দিও। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি।”
জোহান অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে হয়তো অতিরিক্ত বলে ফেলছে। সে নিজের কথাটা গুছিয়ে বলে, “আসলে আমি ওভাবে বলতে চাই নি। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই…”
মায়া তার কথা শেষ হবার আগেই বলে, “তোমাকে ধন্যবাদ। আমি ভুলে গিয়েছিলাম অতীতে এক নতুন মানুষকে জীবনে বন্ধু হিসেবে স্থান দিয়ে আমার অতীত নষ্ট করেছি। আবারও একই ভুল করতে যাচ্ছিলাম। অতিরিক্ত শেয়ার করে ফেলেছি তোমার সাথে। ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে ভুল করার আগেই থামানোর জন্য।”
মায়া কথাগুলো হেসে বললেও তার চোখের কষ্ট স্পষ্ট বোঝা গেল। সে যাবার সময় রান্নাঘরে তন্নি এলো। সে জিজ্ঞেস করল, “শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। সব ঠিক আছে তো?”
মায়া তাকে উওর না দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। তন্নি আবার জোহানকে জিজ্ঞেস করে, “ওর সকাল সকাল কী হলো আবার?”
জোহান উওর দেয় না। তার নিজের উপর ভীষণ রাগ হয়। গতকালের ঘটনার পর আজ এতকিছু বলা ঠিক হয় নি। সে কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। সোজা আসে নিজের বাসায়। বাসায় ঢুকেই পায়চারি শুরু করল সে। অস্থিরতা লাগছে তার। রাগ হচ্ছে তার। মায়ার উপর, নিজের উপরও। সে নিজেকেই বলে, “মায়া খেয়াল করলেও সে ইনারার কথাটা না তুললেও পারতো। কত সুন্দর করে কথা বলছিলাম আমরা। সব এভাবে নষ্ট করাটা ওর উচিত হয় নি।”
সে মাথায় হাত রেখে সোফায় বসে পড়ে। আবার তার নিজের উপর ভীষণ রাগ উঠছে। সে ভেবেছিল নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা শিখেছে সে। সে ভুল ছিলো। এখনো তার ধৈর্য্য ধরাটা শেখার আছে। সে কেবল এখন আর কাওকে কষ্ট দিতে চায় না। এতটুকুও কি তার দ্বারা সম্ভব না?
জোহান জোরে সোফায় হাত মারে। নিজেকেই বলে, “আমি কেবল নিজেকে শোধরাতে চাই। অতীতের ভুলগুলো আর করতে চাই না। এতটুকুও কি আমাকে দিয়ে হবে না? আজই অফিসে যেয়ে ক্ষমা চাইব মায়ার কাছে।”
.
.
সকলে মানা করা সত্ত্বেও মায়া অফিসের দিকে রওনা দেয়। গাড়ি থেকে নামতেই তার এসিস্ট্যান্ট তার কাছে এসে বলে, “ম্যাম আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কন্টেক্ট সাইন করতে হবে। অপর পার্টি আজকেই বিদেশে যাবে তাই তাড়াতাড়ি পাঠাতে বলেছে।”
মায়া সামনের দিকে হাঁটতে থাকে, “আমাদের কবে পাঠানোর কথা?”
এসিস্ট্যান্ট আসে তার পিছনে, “দুইদিন পরে।”
“আর তারা কখন পাঠাতে বলেছে।”
“একঘন্টায় আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে, নাহলে ডিল করবে না।”
“সময়ের আগে তারা যাচ্ছে, আর তারাই তাড়া দিচ্ছে? তাদের বলো নিজে এসে আমাকে সাইন করিয়ে নিতে, নাহলে জানিয়ে দেও ডিলের কথা ভুলে যেতে। আমাদের কাছে ডিলের কমতি নেই।”
“আপনি যা বলেন ম্যাম।”
হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় দিয়া। মায়া তাকে দেখে অবাক হয় কিন্তু তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। দিয়া নিজে থেকে বলে, “আমি একটু কথা বলতে পারি?”
“গানের ব্যাপারে হলে আমার কেবিনে এসো।”
“না, অন্য ব্যাপারে।”
মায়া হাত তুলে আঙুলের ইশারায় তার এসিস্ট্যান্টকে যেতে বলে। সাথে সাথে লোকটি চলে যায়। মায়া তার হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করে, “কী কথা?”
দিয়া নরম স্বরে বলে, “আসলে গতকালের বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি। তোর জন্য খারাপ লাগছিল। এভাবে আবার এনগেজমেন্ট ভেঙে গেল তাই…”
মায়া তার কথা কেটে বলে, “আমার জন্য খারাপ লাগার কোনো প্রয়োজন নেই।”
মায়া যেতে নিলে দিয়া আবার ডাক দেয়,
“তুই চাইলে আমি কাওকে দেখব?”
“এক্সকিউজ মি?”
“খারাপ ভাবে নিস না প্লিজ। আসলে গতকাল এনগেজমেন্ট ভাঙার পর অনেকে তোকে নিয়ে কথা বলছিল। আমার তখন অনেক খারাপ লাগছিল। যাই বলি, শুরুটা আমার জন্য হয়েছে। আজ তুই এই কোম্পানির মালকিন হতে পারতি, কিন্তু আজ এখানেই কাজ করছিস। আমার কারণে তোর প্রতিদিন এত পরিশ্রম করা লাগছে। আমার খারাপ লাগছে তোকে দেখে।”
মায়া কিছুমুহূর্ত দিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দেয়, “তোর মনে হয় আমি কেবল এখানে কাজ করি? আমি এই পুরো কোম্পানি চালাই। শেয়ার তোদের নামে থাকতে পারে কিন্তু তোরা আমার কৃপায় এই আরাম আয়েশ পাচ্ছিস। আর তোর খারাপ লাগার কিছু নেই।”
“তোর কৃপায়? তুই এমনটা কীভাবে বলতে পারিস? এইসব ওয়াহিদের।”
“উফফ দিয়া। তোর ওয়াহিদের হাতে যখন কোম্পানিটা ছিলো তখনই রাস্তায় বসার অবস্থা এসে পড়েছিল। আমি সব সামলেছি। এই-যে লাক্সারি প্রডাক্ট ইউস করছিস সব আমার দান। আমার ভিক্ষা দেওয়া ক্যারিয়ার আর লাক্সারি দুটোই ইনজয় কর। ভিক্ষার জিনিস বেশিদিন হাতে থাকে না।”
দিয়ার মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। সে উঁচু স্বরে বলে, “আমি তোর ভালোর জন্য কথা বলতে এসেছিলাম। আমার অপমান করাতে নয়। আমি গরীব হতে পারি কিন্তু ভিক্ষা নেই না।”
“ওহ প্লিজ, নট এগেইন। নিজের এইসব দু:খের কাহিনী শুনাতে শুনাতে ক্লান্ত হচ্ছিস না? তোর থেকে হাজারগুণ খারাপ অবস্থায় মানুষ আছে। তারা নিজের সম্মান রাখতে জানে, তোর মতো সান্ত্বনা নেওয়ার জন্য ক্রেভিং করে না। এছাড়া তোর ক্যারিয়ার এতও উন্নত নয় যে এতো লাক্সারি ব্যাগ, কাপড় এফোর্ড করছিস। আমি যতটুকু জানি তোর এক এলবামের সেল দিয়ে এই ব্যাগটাও আসবে না। তাই না?”
ওয়াহিদ দিয়াকে খুঁজতে এসেছিল। সে প্রায় প্রতিদিনই তার সাথে দেখা করতে আসে। আজ তাকে স্টুডিও এর পরিবর্তে করিডরে মায়ার সাথে কথা বলতে দেখে সে অবাকই হয়। সে এগিয়ে যেতেই দেখে দিয়ার মুখটা কাঁদোকাঁদো লাগছে। সে সাথে সাথে দৌড়ে যায় তার কাছে,
“দিয়া কী হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?”
দিয়া মাথা নাড়ায়, “কিছু না।”
“বলো কী হয়েছে?”
“আমি তো…আমি তো মায়াকে কেবল সান্ত্বনা দিতে এসেছিলাম গতকালের জন্য। ভাবছিলাম ওর জন্য একটি ছেলে দেখব। সবাই সেটেল্ড হয়ে গেছে কেবল ও ছাড়া। কিন্তু ও আমাকে উল্টো অপমান করল।”
বলে আরও জোরে কান্না শুরু করে সে।
ওয়াহিদ মায়াকে বলে,
“ও কেবল তোর চিন্তা করছিল। তুই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কেন করলি?”
মায়া বিরক্তি নিয়ে বলে, “আমি কাওকে বলিনি আমার চিন্তা করতে। আর এখন আমার এত যোগ্যতা আছে যে আমার নিজেকে সুখে রাখার জন্য কোনো ছেলের প্রয়োজন নেই। তাই নিজের কাজে মতলব রাখলে ভালো হয়।”
বলেছে যেতে নিলেই ওয়াহিদ তার হাত ধরে নেয়। যে হাতে সকালে গরম কফি পড়েছিল। সাথে সাথে ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নেয়।
ওয়াহিদ বলে, “আমি জানি আমাদের জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস। মিষ্টি যা বলার তুই আমাকে বলতে পারিস, তোর মনের সব ক্ষোভ বের করতে পারিস, বকতে পারিস, মারতে পারিস কিন্তু প্লিজ দিয়াকে কিছু বলিস না।”
মায়া নিজের ব্যাথা লুকিয়ে তার হাত সরিয়ে দেয়, “আমি সেধে সেধে কারও সাথে কথা বলতে যাই না। তাই ভালো হবে তুই এবং তোর ফিয়োন্সেও নিজের কাজে কাজ রাখবি। আমি এখন নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারি। আর আমার কাওকে লাগলে আমার বন্ধুরা এবং আমার ছোট বোন আছে। আমার পর মানুষের পরামর্শের প্রয়োজন নেই।” বলে সে চলে যায়।
জোহান এন্ট্রি গেইট দিয়ে ঢুকে দেখে দিয়া ও ওয়াহিদের সাথে মায়াও দাঁড়ানো। সে রাগ দেখিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। জোহান এই সুযোগ হাতছাড়া না করে তার পিছনে গেল। সকালের ব্যাপারে কথা বলার জন্য। সে মায়াকে ডাক দেয়, “মায়া একটু শুনো….”
এত কিছুর পর মায়ার মেজাজ এমনিতেই গরম। এর উপর আবার জোহানের ডাক শুনে তার মাথা আরো গরম হয়ে যায়। সে হাঁটতে হাঁটতে পিছনে ফিরে বিরক্তির সুরে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি সমস্যা?”
“সকালের বিষয়ে কথা বলার ছিলো।”
“আমার কোন কথা বলার নেই। এই সার্কাস দেখতে আমার ভালো লাগছে না।” সে আবারও পিঠ করে হাঁটতে থাকে।
জোহানও নাছরবান্দা। এত সহজে পিছু ছাড়ার মানুষ তো সে নয়। সে ওয়াহিদের পাশ কাটিয়ে মায়ার পিছনে যায়। তাকে ডাকতে থাকে। কিন্তু মায়া দাঁড়ায় না।
মায়া কেবিনের ভিতরে ঢুকলে জোহানও তার পিছু পিছু ঢুকে যায়। মায়া তার চেয়ারে বসে বলে,
“আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার অনুমতি ছাড়া রুমে ঢুকবে না।”
জোহান মায়ার সামনে এসে বলে, “আরে তোমার অনুমতি যাক তেল নিতে। আমার কথা শুনো….”
“আমি কোনো কথা শুনব না।” সে চেয়ার ঘুরিয়ে নেয়।
জোহানের এবার মেজাজ বিগড়ে যায়। সে মায়ার চেয়ার ঘুরিয়ে নিজের দিকে টান দেয়। তার দিকে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে শক্ত গলায় বলে, “আমার কথা আগে শুনো। তারপর যা বলার বলো।”
মায়া থমকে যায়। তার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। সে চোখ নামিয়ে দেয়। এদিকে ওদিক তাকায় কেবল।
জোহান মায়ার থুতনিতে আঙুল রেখে মুখ তুলে। তার চোখে চোখ মিলিয়ে বলে, “আমার দিকে তাকাও।”
হঠাৎ মায়ার বুকের ভেতরটা কেমন ধক করে উঠে। অস্থিরতা অনুভব হয়। সে চোখ মিলিয়ে রাখতে পারে না জোহানের সাথে। তাই চোখ নামিয়ে নেয়।
জোহান তাকে বলে, “আমি জানি সকালে সে কথাগুলো বলা উচিত হয় নি আমার। আমার মেজাজ খারাপ হলে মাথা ঠিক থাকে না। যা তা বলে ফেলি। কিন্তু সত্যি সে কথাগুলো আমি মন থেকে বলি না। ছোটবেলা থেকে আমি এমনই। নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করছি। সময় লাগছে। আমি কী করব বলো? তোমাকে সে কথাগুলো বলার পর থেকে আমার নিজেকেই থাপড়াতে মন চাচ্ছে। মাফ করে দেও। আর এমন হবে না।”
জোহান অপেক্ষা করে মায়ার উত্তরের। যখন সে উওর দেয় না তখন বলে, “কিছু তো বলো।”
“তুমি আমার একটু বেশিই কাছে এসে পড়েছ।”
চলবে…
অনুভূতির খাঁচা
পর্ব-১৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
জোহান অপেক্ষা করে মায়ার উত্তরের। যখন সে উওর দেয় না তখন বলে, “কিছু তো বলো।”
“তুমি আমার একটু বেশিই কাছে এসে পড়েছ।”
জোহান খেয়াল করে কথাটা সত্যি। তার খেয়ালে আসলে সে নিজেই অস্থিরতা অনুভব করে। সে সরে যেয়ে পকেট থেকে মলম বের করে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে। মায়ার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নরম সুরে বলে, “আমি নিজের অবুঝতার কারণে অনেক সুন্দর সম্পর্ক হারিয়েছি। অনেককে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। এটা সত্যি তোমাকে প্রথম দেখে ভেবেছিলাম তুমি অনেক কঠিন মানুষ, মন বলতে তোমার কিছু নেই। রাক্ষুসি, ভয়াবহ, ঘোরাল, বেয়াদব, যে কেবল নিজের অনুযায়ী সবাইকে চালায়। কিন্তু বিগত কয়দিনে তোমাকে যতটুকু চিনেছি তুমি অনেক আলাদা। হয়তো তুমি নিজেকে এমন দেখাতে বাধ্য ছিলে। আমিও একসময় তোমার মতো ছিলাম। কিন্তু আমি তখন ভুল পথে ছিলাম, তুমি ভুল না। তুমি ঠিক বলেছ, আমি ইনারাকে পছন্দ করতাম, ভালোবাসতাম। কিন্তু আমি কখনো ওর যোগ্য ছিলাম না। সভ্য ওর জন্য পার্ফেক্ট। এখন আমি ওদের জন্য খুশি।” জোহান এর মাঝে খানিকটা হেসে আবার তার দিকে তাকায়, “আমি আমার অতীতকে বর্তমানে আনতে চাই না। অতীতে নিজের ভুলে আমার আশেপাশের অনেক মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করে দিয়েছিলাম, আমার এত সুন্দর একটা গ্রুপ নষ্ট করে দিয়েছিলাম, নিজেকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। ডিপ্রেশনে ভুগছিলাম। সেসব কথা এখন আর মনে করতে চাই না এতটুকুই।”
মায়া কিছু বলে না। তার দিকে তাকিয়েই থাকে। হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, “আমার এত যত্ন কেন নিচ্ছো?”
“তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এজন্য…হয়তো।”
হঠাৎ দরজা খোলা শব্দে দুজনে সেদিকে তাকায়। ওয়াহিদ দরজার কাছে দাঁড়ানো। সে জোহান ও মায়াকে দেখে কপাল কুঁচকে নেয়। তার কেবল এতটুকু বলে, “আগামীকাল সকালে আমি মিটিং রাখছি। জরুরী কথা আছে।”
আর চলে যায়।
তার এমন কান্ডে দুইজনে থতমত খেয়ে যায়। একে অপরের দিকে তাকায়। মায়া তার হাতটা সরিয়ে নেয়। খানিকটা ইতস্ততবোধ করে জোহানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। চোখ নামিয়ে বলে, “সকালে আমারও দোষ ছিলো। তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলাটা আমার উচিত হয় নি। আমিও সরি। তাই দুইজনের দোষে দোষে কাটা গেছে। ওকে?”
জোহান হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে ফ্রেন্ডস?”
মায়া তার দিকে তাকায়। দ্বিধা বোধ করে, “আমার একটু সময় লাগবে ভাবার জন্য। ”
জোহান হাত পিছিয়ে নেয়, “ব্যাপার না। তাহলে আমি আসি। মলমটা রেখে যাচ্ছি। ব্যাথা হলে লাগিয়ে নিও।”
মায়া মাথা নাড়ায়। জোহান চলে যাবার পর সে তাকায় নিজের হাতের দিকে। হাতটা তার বুকের বাম পাশে রাখে। সে বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার হৃদপিণ্ডের স্পন্দন এতটা দ্রুত হয়ে গেল কেন?
.
.
ইনারা ডাইনিং টেবিলে এসে দেখে সকলে নাস্তার জন্য বসেছে। তাকে দেখে কথা বলার মাঝে সকলে চুপ হয়ে যায়। সুরভি সভ্যের পাশে বসে ছিলো। তাকে জিজ্ঞেস করে, “দুলাভাই সবারটা তো বুঝলাম আপনার ফুপি এতটা চুপ আছে কীভাবে? উনি তো আগুনে ঘি ঢালতে পিছপা হয় না।”
“উনি সবচেয়ে বেশি ভয়ে আছে।”
“তারও ব্যান্ড বাজিয়েছে ইনারা রাণী?”
“তোমার বান্ধবী কাওকে ছাড় দেয়?”
“একদম না।” আফসোসের ভাবে মাথা নাড়ায় সুরভি।
“এবার কী আমার ভাইয়ের পালা?”
“বুঝছি না ওর মাথায় কী চলছে!”
“ব্যাপার হলো এখানে দুই পার্টিই বোম্ব। কেউ কাওকে ছাড় দিবে না। মাঝখানে ফাঁসবো আমি আর তুমি।”
সুরভী তাকায় তার সামনে বসা অভ্রর দিকে। সে আরামে পরোটা আর চা খাচ্ছে। তাকে দেখে বিড়বিড় করে সুরভি বলে, “ইনারার মাথায় যাই চলুক এই রাক্ষসের বাপ খাক্ষস থেকে তো মুক্তি পাব।”
সভ্য ভালো মতো না শুনতে পেরে জিজ্ঞেস করে, “কী বললে?”
“কিছু না দুলাভাই। আমাদের সেশন শেষ তো। প্যারা না নিয়ে খাওয়াতে মন দেন।”
সভ্যও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে নিজের খাবারে মন দেয়।
দাদাজান ইনারাকে দেখে বলে, “আরে ইনারা তোমার শরীর এখন কেমন আছে?”
ইনারা স্বাভাবিক গলায় বলে, “এখন ভালো লাগছে দাদাজান। আল্লাহ জানে গতকাল রাতে কি হয়েছিল। দাদাজান আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
মা ইনারাকে জিজ্ঞেস করে, “সব কথা পরে। আগে কিছু খেয়ে নেও। গত রাতেও কিছু খাও নি। বলো কি খাবে?”
“পরোটা দিয়ে আঁচার খাব। কিন্তু আগে বলেন আপনি যে সবাইকে খাবার দিচ্ছেন আপনি নিজে খেয়েছেন?”
“আমার সবাইকে খাবার দিয়ে নিজে খেতে ভালো লাগে তুমি জানো।”
“আর আপনি জানেন আমার আপনার এই অভ্যাস একটুও ভালো লাগে না মা। সকালে উঠে সবচেয়ে বেশি কাজ আপনি করেন তাই সবার আগে আপনার খাওয়া উচিত।”
“আচ্ছা আগে তুমি খেয়ে নেও তারপর আমি খাব।” মা এসে ইনারার পাশে বসে নিজেই তাকে খাওয়াতে থাকে।
দাদাজান বলেন, “আমার নাতিবৌ একদম ঠিক বলেছে। আমার নাতিবৌ সবসময়ই ঠিক বলে।”
“হ্যাঁ এজন্যই তো আমাকে না বলে গতকাল বৌ সোয়াপ হয়ে গেছে।”
“ওই হয়েছে কি….”
দাদিজান গম্ভীর সুরে বলেন, “তোমার শরীর খারাপ ছিলো বলে ডাকিনি। এটা কোনো বড় ব্যাপার না।”
“বড় ব্যাপার না? দাদীজান আপনি জানেন না কত বড় ব্যাপার। ওর বড় ভাই থেকে বেশি ভাইগিরি তো আমি পালন করেছি। একবার কলেজে থাকতে একটা ছেলে ওকে ডিস্টার্ব করতে এসেছে আর আমি এমন মাইর দিলাম যে হাত ভেঙে গেছে। বেচারা কয়মাস প্লাস্টার লাগিয়ে ঘুরল। এরপর ভার্সিটি উঠার পর একবার এক ছাত্রদলের লোক সবার র্যাগিং করছিল। আমি প্রথমে সুন্দর ভাষায় মানা করেছি কিন্তু এরপর ওই ছেলে সুরভিকে র্যাগিং করার চেষ্টা করেছে এক ইট মেরে মাথা ফাটায় দিসি। এমন কত হয়েছে কারও নাক ফাঁটালাম, কারও মাথা, আর কাওকে তো হাস্পাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এখন দাদীজান আপনি বলেন সুরভির বিয়ে যদি অভ্র ভাইয়ার সাথে হয়। আর ভাইয়ার জন্য আমার বান্ধবী কষ্ট পায় তাহলে কী নিজের ভাসুরের মাথা, নাক, চোখ কি আমার মতো কোনো আদর্শ বউ ফাঁটাতে পারে?”
অভ্র খাবার মুখে তুলতে যেয়েও ইনারার কথা শুনে থেমে যায়৷ চোখ বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। সে হতভম্ব হয়ে বলে, “তুমি জানো তো আমি কে?”
“দেখেন ভাইয়া আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও কোনো সমস্যা ছিলো না কিন্তু আপনি আমার ভাসুর হয়ে আমার বান্ধবীর সাথে বিয়ের কথা কেন ভাবতে গেলেন? এখন এক থেকে দুই হলে আমি আপনার মাথা ফাঁটাব কীভাবে?”
ইনারা চিন্তিত সুরে কথাটা বলে মা’য়ের দিকে ফিরে। দেখে সে-ও সবার মতো তার কথা শুনে পাথর হয়ে আছে। সে বলে, “মা খাওয়ান।”
মা খাওয়ায়। ফুপি প্লেট নিয়ে উঠে বলে, “আমি নিজের রুমেই যেয়ে খাই।”
তারপর কেটে পড়ে। অভ্র তাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। আবার খাওয়া শুরু করে। দাদাজান বলেন, “আরে সে চিন্তা আমার উপর ছেড়ে দেও। তুমি না মারতে পারলে কী হয়েছে? আমি আছি তো, কীভাবে মারতে হবে শুধু বলবে। বাকিটা আমিই দেখবো।”
“এইত্তো আমার বেস্ট দাদাজান। সবসময় আমার সাইডে।”
দাদীজান দাদাজানকে চোখ ঘুরান দিয়ে ইনারার দিকে তাকায়, “ঘরের বৌদের এভাবে কথা বলাটা মানায়?”
“এখন দাদীজান আপনি জানেন আমার মনে যা আসে আমি তাই বলি। আর সব সত্যি বলি। ভবিষ্যতে এক থেকে দুই হলে আপনারাই বলবেন যে আমি ভুল বলেছি। এখন আপনি বলুন আমাকে না বলে এটা করাটা আপনাদের ভুল ছিলো কি-না? দাদীজান সত্যি বলবেন কিন্তু।”
“ঠিকাছে, ছিলো কিন্তু তখন… ”
“এই’যে ছিলো তো। তাহলে এখন এই পরিবর্তে আমার জন্য কিছু করতে হবে।”
“কী করতে হবে?”
“আমাকে নিয়ে সবার ঘুরতে যেতে হবে। চলুন না দাদীজান আজ সবাই ঘুরতে যাই। আজ সবার অফিস বাদ। আমরা আজ সারাদিন ঘুরবো।”
অভ্র উঠে দাঁড়ায়, “আমি এসব নাটকে নেই। আমার কাজ আছে।”
ইনারা স্বাভাবিকভাবেই বলে, “আপনি না আসলে আমার বান্ধবীকে আমি দিব না।”
“আমাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।”
“বিয়ে হলেও আমার অনুমতি ছাড়া ওকে নিতে পারবেন না।”
“তুমি কী ওর গার্ডিয়ান না’কি?”
ইনারা একগাল হেসে মাথা নাড়ায়। অভ্র সুরভির মা বাবার দিকে তাকায়। তারা কিছু বলতে পারে না। অভ্র মেজাজ খারাপ করে একবার সুরভির দিকে তাকায় আবার সভ্যর দিকে। তারা তো খাওয়ায় ব্যস্ত। যেন সারাজীবনে খাবারই খায় নি। সে বিরক্তি নিয়ে বসে পড়ে।
ইনারা জানায় সবাইকে, “আমি ঢাকার কাছেই একটি রিসোর্ট ঠিক করেছি গতকাল রাতেই। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আজ কেবল আমরা ঘুরবো আর মজা করব। আর কোনো রান্না করার প্রয়োজন নেই কারণ আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আমি অনেক এক্সাইটেড।”
দাদীজান বলেন, “কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে যাওয়া কী ঠিক হবে?”
“আরে দাদিজান জীবনে তো সব হঠাৎ করেই হয়। জীবন এতটুকু, না ইনজয় করলে হয়।”
“তাও ঠিক।”
“আসেন দাদীজান আমি আপনাকে সাজিয়ে দেই। এমন সাজাবো যে নায়িকারা ফেইল হয়ে যাবে।”
“আরে এই মেয়ে কী বলে?”
“আহা দাদীজান লজ্জাতে তো আরও সুন্দরী লাগে আপনাকে।”
ইনারা দাদীজানকে জোর করে নিয়ে গেল।
সুরভি হাফ ছেড়ে বাঁচে, “আমরা বেঁচে গেছি দুলাভাই। কিন্তু খেতে খেতে আমি শেষ।”
“কথা না বলার জন্য যেভাবে খেয়েছি পেট বাস্ট হয়ে যাবে নিশ্চিত। বাট ইনারা থেকে বাঁচার মিশন সাকসেসফুল। কনগ্রেটস।”
“সেইম টু ইউ দুলাভাই।”
সুরভি হেসে সভ্যকে বলে অভ্রর দিকে তাকায়। অভ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন এখনই কাঁচা গিলে খাবে।
সুরভি মাথা নিচে নামিয়ে কপালে হাত রেখে বলে, “সুরভি কোথায় ফেঁসে গেলি তুই। একদিকে কুয়া, অন্যদিকে নালা, মাঝখানে আমি এক হতভাগা।”
.
.
দুই ঘণ্টার মধ্যেই ইনারা সবাইকে তৈরি করিয়ে নিচে আনে। নিচে মিনি বাস দেখে সবাই অবাক হয়ে। দাদাজান বলেন, “আমরা গাড়ি দিয়ে যাই। কতগুলো গাড়িই তো আছে তাহলে বাস কেন?”
“দাদাজান গাড়ি দিয়ে তো সব জায়গাতেই যান। আজ এত বছর পর সবাই একসাথে ট্রিপে যাচ্ছি তাহলে একটু সেই ফিলও তো লাগবে।”
দাদীজান বলেন, “এত বছর পর না। প্রথমবার পুরো পরিবার একসাথে যাচ্ছে, নাহয় এই পুরুষদের তো কাজের থেকে বিরতি নেই।”
দাদাজান বলেন, “আমি তো সিকিউরিটির জন্য কোথাও যাই না। যদি কিছু হয়ে যায়।”
অভ্র বলে, “আমি তার ব্যবস্থা করছি।”
ইনারা জানায়, “সব ব্যবস্থা আমি করে নিয়েছি। সিকিউরিটিরও। ইনফ্যাক্ট আমরা যে প্রাইভেট রিসোর্টে যাচ্ছি তা আমার চাচার। ওখানে মাঝেমধ্যে ফিল্মের শুটিং হয় কিন্তু এখন একদম খালি। সো নো চিন্তা, যাস্ট ডু ফুর্তি।”
বাসে এক এক করে উঠে সবাই। সভ্য ইনারার পাশে এসে বসে। আর সে রাগ হয়ে বলে, “আপনি মুখ উঠিয়ে এখানে কেন বসে পড়লেন? এখানে সুরভি বসবে, আপনি অন্য ঠিকানা খুঁজেন।”
“মহারাণী সাহেবা আপনার মনে হচ্ছে না আপনি নিজের বান্ধবীকে পেয়ে আমাকে বেশিই ইগনোর করছেন?”
“করছি তো, এখন এই বান্দর মার্কা মুখ নিয়ে কেটে পড়ুন।”
“ঠিকাছে, চলে যাচ্ছি। পরে কথা বলতে এসো আমিও তোমাকে ইগনোর করতে পারি।”
সে যাবার সময় ইনারা উল্টো জিহবা বের করে তাকে ভেঙাতে থাকে।
ইনারা সুরভিকে ডেকে নিজের কাছে বসায়। সুরভি আসার পর প্রথম প্রশ্ন এটাই জিজ্ঞেস করে,
“সত্যি করে বলতো তোর মাথায় কি চলছে? কি করতে চাচ্ছিস তুই?”
“তিনটি পরীক্ষা নিব পরীক্ষাতে পাশ করলে তোকে নিয়ে চিন্তা মুক্ত হয়ে যাব।”
“এখন তো বল কেমন পরীক্ষা?’
” দেখ তুই জনসেবায় বিশ্বাস করিস। সবসময় মানুষকে সাহায্য করিস। নিজের সামর্থ্যের বাহিরে যেয়ে সাহায্য করিস। তাহলে তোর স্বামীরও তো এমন মনোভাব থাকতে হবে। তার প্রথম পরীক্ষা, তার আচরণের পরীক্ষা।”
সুরভি মনে মনে বলে, “অভ্র তো তাহলে নিশ্চিত ফেইল। মনোভাব আর আচরণ ভালো তার? এক নাম্বারের স্বার্থপর মানুষ। আর সে অন্যের সাহায্য করবে? সে তো কেবল নিজের কাজ থেকে মতলব রাখে। যেখানে নিজের স্বার্থ থাকে সেখানেই তার আচরণ ভালো থাকে।”
সুরভি শান্তির নিশ্বাস ফেলে বলে ফেলে, “তাহলে সে ফেইল হলে আমি বেঁচে যাব।”
“হোয়াট?” ইনারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই বেঁচে যাবি মানে?”
“মানে…মানে উনি খারাপ হলে আগে দিয়ে জেনে যাব না? জেনে গেল তো বেঁচে যাব। সরে পড়ব যে সম্পর্কটা থেকে।”
“ওহ আচ্ছা। ঠিক বলেছিস। এখন শুধু গন্তব্যের অপেক্ষা।”
বাস চালু হয়। অনেকক্ষণ জার্নির পর ড্রাইভার এক জায়গায় বাস থামায়। হোটেলের সামনে। দাদাজান একজনকে পাঠায় সবার জন্য খাবার আনতে। কিন্তু লোকের যাবার পর ইনারা সভ্যকে বলে, “আমি কফি খাব।”
“আচ্ছা আমি কাউকে ডাকছি।”
“না, কেউ তো জানে না আমি কেমন কফি খাব।”
“আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।”
সভ্য মাস্ক ও সানগ্লাস পরে বের হয়। তার যাবার পর ইনারা আবার ডাকে অভ্রকে, “ভাইয়া শুনেন….”
অভ্র মোবাইলে কাজ করছিল। ইনারার ডাক শুনে তার দিকে ফিরে তাকায়, “বলো।”
“সুরভির চা খেতে ইচ্ছা করছে। আপনি নিয়ে আসেন।”
“আমি কেন আনব? লোকের অভাব আছে?”
“হবু বউ তো আপনার। আপনারই ওর খেয়াল রাখা উচিত।”
“কিন্তু আমি এভাবে বাহিরে যেতে পারব না। সমস্যা হতে পারে।”
“আপনার ছোট ভাই অর্ধেক জীবন কাটিয়েছে তারকা হিসেবে। সারা দেশের মানুষ তাকে চিনে। তাও উনি আমার জন্য গিয়েছে। আপনি কী আমার বান্ধবীকে আসলেই ভালোবাসেন?”
অভ্র বিরক্তি নিয়ে বলে,”যাচ্ছি…”
ফজলু মিয়া দাঁড়ায়, “ফজলু মিয়া থাকতে অভ্র ভাই যাইব, হায় কী দিন আইল, কী হইয়া গেল!”
অভ্র তাকে চোখের ইশারায় বসতে বলে। তারপর বাহিরে যায় চা আনতে।
ফুপি এর মাঝেই মা’কে বলেন, “দেখলেন ভাবি আপনার ছেলেদের কেমন আঙ্গুলে নাচাচ্ছে। কিছু বলেন নাহলে এই মেয়ে ওদেরকে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দিবে।”
মা হাসিমুখেই উওর দেয়, “ইনারা আসার পরই এই পরিবার একসাথে আসছে। আজ প্রথমবার আমরা একসাথে সবাই ঘুরতে বের হচ্ছি। আমার দুই ছেলের সাথে কতবছর পর সময় কাটাচ্ছি। তাও এসব বলাটা কী মানায় ভাবি?”
“এই মেয়ে সাথে থেকে আপনার কথারও তেজ বাড়ল দেখি।”
“এমন কিছু না ভাবি। ইনারা আমার মেয়ের মতো, ওকে নিয়ে খারাপ কথা শুনলে আমার কষ্ট লাগে।”
ফুপি বিড়বিড় করে তাদের বসে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ইনারা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। তার সাথে উঁকি দেয় সুরভিও। সে জিজ্ঞেস করে, “কী করছিস তুই আমি বুঝতে পারছি না।”
“আমি আমার এক কর্মীকে গরীব সেজে আসতে বলেছি। সে তার দু:খের কাহিনী শুনিয়ে সাহায্য চাইবে। দেখি উনি সাহায্য করে না’কি?”
সুরভিও তাকায় সেদিকে। সে একশো শতাংশ নিশ্চিত অভ্র সাহায্য করবে না। তার মন ও চিন্তা দুটোই অনেক ছোট। তাই হয়। সে দেখে যখন অভ্র চা নিতে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন একটি ছেলে এসে অভ্রর কাছে এসে অনেক অনুরোধ করে। সাহায্য চায়। অভ্র কিছু একটা বলে চা নিয়ে এসে পড়ে। যদিও সে চাইতো অভ্র এই পরীক্ষায় পশা না করুক। তবুও তার রাগ উঠছে। এই লোকের কাছে এত টাকা তবুও একটা গরীব মানুষ দেখে মনে দয়াও এলো না। তো এত অর্থ থেকেই বা লাভ কী? অল্পকিছু নেতা কেবল জনগণের কল্যাণের কথা ভাবে আর অভ্রর ব্যাপারে আজ পর্যন্ত সে এমন খবর পাই নি। যে পেয়েছে তা কেবল দেখানো।
ইনারা আফসোসের সুরে বলে, “প্রথম পরীক্ষায় এত জঘন্যভাবে ফেইল হবে জানলে এত টাকা খরচই করতাম না। জানিস সুরভী এই বদ গরীব দেখার জন্য মেকাপ করা ও জামার জন্য আমার কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছে। বলে কি ম্যাডাম আজকালকার একতো জিনিসের দাম এর উপর এত জলদি সব এরেঞ্জ করাটাও তো মুশকিল তাই এত টাকা লাগবে।”
” অল্প কিছু নেতা মানুষের কল্যানের কথা ভাবে।”
ইনারা তার দিকে তাকায় কপাল কুঁচকে, “তাহলে তুই তাকে কি দেখে পছন্দ করছিস? এক মিনিট, দেখ ভাইয়ার এসিস্ট্যান্ট নিচে নামছে।”
তারা আবার জানালায় উঁকি দেয়। ফজলু মিয়াকে ছেলেটার সাথে কথা বলতে দেখে।
অভ্র সুরভির সামনে এসে তার চা’য়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে, “এই নেও তোমার চা।”
ইনারা ও সুরভি দুইজনে এমন ভাবে তাকায় অভ্রর দিকে যেন সে কোনো এক বড় ভুল করে ফেলেছে।
অভ্র কিছু বুঝতে পারে না, “কি হলো তোমরা চা আনতে বললে এনে দিলাম, এখন কি খাইয়েও দিতে হবে?”
সুরভি চা হাতে নিয়ে নেয়। অভ্র যাবার পর তারা আবার বাহিরে দেখতে যাবে তখন আবার আসে সভ্য, “তোমার কফির সাথে তোমার পছন্দের চিপস ও চকোলেট এনেছি। তোমাদের দুইজনের জন্যই আনলাম।”
তারা আবার একইভাবে তাকায় সভ্যর দিকে। সভ্য থতমত খেয়ে বলে, “আমি আবার কী করলাম?”
ইনারা তার হাত থেকে খাবার নিয়ে চিপ্সের প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করলেও তার দিকে একইভাবে তাকিয়ে থাকে। সভ্য নিজের জান বাঁচিয়ে বসে নিজের সিটে। তারা আবার বাহিরে তাকিয়ে দেখে ফজলু মিয়া নেই। সে বাসে উঠে পড়েছে এবং বাস ছেড়েও দিয়েছে।
ইনারা বলে, “কিছু তো দেখতেই পারলাম না। কি হলো?”
বলতে না বলতেইবতার কাছে ফোন এলো। সে ফোন ধরে বলে, “হ্যাঁ সজীব বলো, কী হলো সেখানে?”
“ম্যাম প্রথমে তো অভ্র স্যার আমাকে কিছু না বলে বাসে চড়ে গেলেন। তারপর আমি আপনাকে ফোন দিব এর আগেই দোকান থেকে আমাকে কয়েক প্যাকেট খাবার দিয়ে বললেন উনি দিতে বলেছে আর খাবারের টাকা দিয়ে গিয়েছে।”
“আর ফজলু মিয়া কি কথা বলল তোমার সাথে?”
“সে একটা কার্ড দিয়ে বলেছে তার সাথে চাকরির জন্য দেখা করতে। আমার হাত পা ভালো আছে তাই ভিক্ষা না করে কাজ করে খেতে। তাদের একটা আশ্রম আছে সেখানে লোকেদের দেখাশোনা করতে হবে।”
“তাই? আচ্ছা তোমার কাজ হয়েছে। তুমি অফিসে যেতে পারো।”
“ম্যাম শুনেন।”
“বলো…”
“ম্যাম আপনার আর তাদের কাজের বেতন একই রকম। শুধু তাদের কাজ সহজ বেশি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে… ”
“সজীব তুমি অফিসে যাও আমি এসে তোমার সাথে কথা বলব। এখন আমার অনেক কাজ আছে।”
ফোন রেখে ইনারা সুরভিকে জানায়, “অভ্র ভাইয়া সজীবকে জব অফার করেছে আর তাকে খাবারও দিয়েছে। তাও তার আশ্রমে। আমি জানতাম না সে আশ্রম চালায়। মানে সে প্রথম পরীক্ষায় পাশ। এখন আমি বুঝতে পারছি, তুই বলেছিলি অল্প কিছু নেতা জনকল্যাণ নিয়ে ভাবে আর অভ্র ভাইয়া তার মাঝে একটা।”
সুরভি জোর করে হাসি দেয় একটা। তারপর আবার জিজ্ঞেস করে, “দ্বিতীয় পরীক্ষা কী?”
“যে কারণে প্রথমে তোর মন ভেঙেছে তা দ্বিতীয়বার হোক আমি চাই না। তাই দ্বিতীয় পরীক্ষা হলো তার চরিত্র কেমন তা দেখা। মানে যেকোনো মেয়ে দেখলে তার মন ফুসলে যায় না তো, তা দেখা।”
সুরভি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। হাল্কা কন্ঠে বলে, “এবার অন্তত সে অভদ্র ফেইল হোক।” আবার পরের মুহূর্তে তার খেয়াল আসে, “আচ্ছা অভ্র কোনো আশ্রম চালায় তা তো সে জানতো না।”
গন্তব্যে যেয়ে পৌঁছাতে লাগে কিছু সময়। প্রায় দেড় ঘন্টা। রিসোর্টে বড় একটি পার্ক এড়িয়া আছে, পুল আছে, আবার বারবিকিউর ব্যবস্থাও আছে। তারা বাগান দেখার সময়ই সেখানে একটি মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে ইনারাকে। সে বলে, “এতদিন পর তোমাকে দেখে অনেক ভালো লাগছে। এতদিন সেটে অনেক মিস করেছি। তোমাকে ছাড়া শুটিং করা অনেক বোরিং।”
মেয়েটি সকলের পরিচিত অভিনেত্রী রেশমি। তাকে দেখে ইনারাও অনেক খুশি হয়। সে বলে, “আমিও তোমাদের অনেক মিস করিছিলাম।” তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
রেশমি তাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই আমাকে এখানে ডেকেছিলি কেন?”
“অনেক জরুরি কাজ আছে বলছি।”
ইনারা ম্যানেজারকে বলে সকলের রুম দেখিয়ে দেয়।
ম্যানেজার তাদের নিয়ে গেলে ইনারা সুরভি ও রেশমির সাথে তাদের রুমে যায়। সে রেশমিকে বলে, “রেশমি তোকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ডেকেছি। আর আমি জানি এই কাজ কেবল তুই-ই করতে পারবি। তোর মতো সুন্দরী, হট, ডলের মতো মেয়ে ছাড়া…”
“মাখন মারা শেষ হলে কাজের কথায় আয়।”
“একটা পুরুষকে আকর্ষিত করতে হবে তোর প্রতি। তার পরীক্ষা নিব।”
“সভ্য ভাইয়াকে? ব্রো তার পরীক্ষা কেন নিবি তুই? তার পিছনে পুরো দেশ পাগল ছিলো এককালে সে কেবল তোকেই পাত্তা দিয়েছে। আজ পর্যন্ত তার এমন কোনো খবর শুনি নি আর তুই…”
ইনারা তাকে থামিয়ে বলে, “আরে থাম থাম। ওই অসভ্য এমন কিছু করলে এতদিনে তার চোখ তুলে হাতে দিয়ে দিতাম না?”
“পয়েন্ট আছে।”
“আমি কথা বলছি আমার ভাসুরের। উনার সাথে সুরভির বিয়ের কথা ঠিক হয়েছ। তাই তাকে আমার তিন অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। প্রথমটায় তিনি পাশ দ্বিতীয়টা তুই নিবি।”
“হুম… করা যায়। কিন্তু পরিবর্তে আমি কী পাব?”
“যা চাইবি।”
দরজায় নক পড়ে। ইনারা উঠে দরজা খুলে দেখে সভ্য
দাঁড়ানো।
সভ্য বলে, “তুমি এখানে? আমি চিন্তায় সারা রিসোর্টে খুঁজে নিয়েছি। আর তোমার ফোন বন্ধ কেন?”
“এত চিন্তার কী আছে? আমি কী বাচ্চা যে হারিয়ে যাব? ফোনের হয়তো চার্জ শেষ। এতে এত খোঁজা লাগে? আমি কী বান্ধবীদের সাথে একটু সময়ও কাটাতে পারব না?”
সভ্য সরু দৃষ্টিতে তার দিকে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলে, “এক কাজ করো, আজ ওদের সাথেই থাকো। আমি আর তোমার খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা তোমার কথা চিন্তাও করব না।”
বলে সেখান থেকে চলে যায়।
ইনারা জিহ্বায় কামড় বসিয়ে বলে, “অসভ্যটা মনে হয় এবার ক্ষেপছে। সুরভি, রেশমি আমি গেলাম।”
বলে সে সভ্যর পিছনে যায়। তাদের রুমের কাছে এলে সভ্য রুম লাগানোর পূর্বেই ইনারা ভেতরে ঢুকে যায়।
সভ্য সম্পূর্ণভাবে তাকে এড়িয়ে যায়। সে বাচ্চাদের মতো তার সাথে লাফিয়ে কিউট চেহেরা বানালেও সভ্যর মন গলে না। মুখ গোমড়া করেই রাখে।
ইনারা বলে, “সরি জানুটা আমি তখন বেশিই বলে ফেলেছি।” আবার কান ধরে বলে, “সরি…”
“তোমার সরি তোমার পকেটে রাখো আর নিজের বান্ধবীদের কাছেই যাও। আমার কাছে আর আসার দরকার নেই।”
সভ্য যেতে নিলেই ইনারা তার কলার ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। সভ্য অবাক হয়। তার হৃদসম্পন্দন হয় বেগতিক। সে প্রেমাসক্ত নয়নে তাকায় ইনারার দৃষ্টির মাঝে।
ইনারা মাসুম চেহারা করে বলে, “আমার জামায় পকেট তো নেই। এখন সরি কোথায় রাখব?”
সভ্য থ খেয়ে গেল এক মুহূর্তের জন্য। তারপর হেসে দিলো। ইনারার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল, “তোমার সাথে আমি রাগ করেও থাকতে পারি না।”
তারপর তার কপালে একটি চুমু খায়। তার মাথাটা বুকে লাগিয়ে বলে, “কী শুনতে পাড়ছ?”
“হঠাৎ তোমার হৃদসম্পন এত বেড়ে গেল কেন?”
“কারও নয়নে নয়ন জুড়িয়ে আবার মন হারালাম যে তাই।”
ইনারা লজ্জায় লাল হয়ে সভ্যর সাদা শার্টটা শক্ত করে ধরে। কিন্তু পরক্ষণেই সভ্য জিজ্ঞেস করে, “তোমার ব্রেনে কী জগা খিচুড়ি পাকছে?”
ইনারা সভ্যকে ছেড়ে তার দিকে তাকায়, “তুমি বাহির থেকে আমাদের কথা শুনেছ?”
“এত বছরে এতটুকু তো বুঝছে আমার মহারাণীর মাথায় কখন কী চলে? তুমি অভ্র ভাইয়ার ব্যাপারে এত সহজে রাজি হবে না আমি জানি।”
“ঠিকই ভেবেছ তবে আজ রাতেই বুঝতে পারব যে অভ্র ভাইয়া কি সুরভির জন্য পার্ফেক্ট কি-না?”
“কীভাবে?”
“সেটা বুঝতেই পারবে।”
চলবে…