অনুরাগে সখি নিভৃতে যতনে পর্ব-০১

0
6

#অনুরাগে_সখি_নিভৃতে_যতনে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০১

“ঘরে বউ রেখে কিভাবে তুমি আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে আনতে পারো আশহির?”

উপরোক্ত প্রশ্নটি করে তারিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আশহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আশহির সদর দরজায় নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে।আশহিরকে চুপ থাকতে দেখে তারিনি আবার বললো,

-“এখন চুপ হয়ে আছো কেনো?কথা বলতে ভুলে গেছো তুমি আশহির?আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না এই খবরটা পেতে না পেতে তুমি বিয়ে করে ফেললে!এই তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা!”

আশহির তারিনির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“তারিনি আমি সত্যিই তোমাকে ভা……..”

সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই তারিনি আশহিরের গালে একটা চ*ড় মেরে বললো,

-“তোমার মুখে এই কথা মানায় না।আই হেট ইউ আশহির!”

আশহিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তারিনি কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেল।

এতোক্ষণ ধরে সবটা দাঁড়িয়ে দেখছিল মৌরিন।সে নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“শুধুমাত্র আমার জন্য আজকে তারিনি এতোটা কষ্ট পাচ্ছে।আপনার আমাকে বিয়ে করাটা উচিত হয়নি।”

আশহির নিজেকে সামলে বললো,

-“আমি আপনাকে বিয়েটা না করলে আপনি এতোক্ষণে বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ পেয়ে যেতেন!কিন্তু আমি চাইনি আমার শত্রু আমি ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে মৃত্যুর স্বাদ পাক!”

আশহিরের কথা শুনে মৃদু হেসে মৌরিন বললো,

-“কে মৃত্যুর স্বাদ পাবে তা তো সময় বলে দিবে মিস্টার আশহির মির্জা!”

আশহির কিছু বলতে যাবে এমন সময় সেখানে অহিদা বেগম এসে হাজির হলেন।তিনি আশহিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,

-“তুই এমনটা কি করে করলি?মেয়েটা রুমে বসে কিভাবে কান্না করতেছে!ও তো আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।তোকে নিজের ছেলে বলতেও আমার লজ্জা করতেছে।”

-“আম্মু তোমরা সবটা না জেনেই আমাকে ভুল বুঝতেছো।”

-“চুপ কর তুই।কি জানার আছে আর?মেয়েটা আর বেশিদিন আমাদের সাথে থাকতে পারবে না সেই খবরটা পেয়েই তো তুই বিয়ে করে নিলি!”

আশহির আর কিছু না বলে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।অহিদা বেগম মৌরিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“আর তোমাকেও বলিহারি মেয়ে!একটা বিবাহিত ছেলেকে তুমি বিয়ে করো কিভাবে?একবারও বিবেকে বাঁধলো না তোমার?”

মৌরিন একবার আশহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“উনাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি।উনি নিজ ইচ্ছায় বিয়েটা করেছেন।”

অহিদা বেগম কিছু বলতে যাবেন তার আগে আহমেদ সাহেব সেখানে এসে বললেন,

-“পরের মেয়েকে কথা না শুনিয়ে নিজের ছেলেকে শোনাও।তারিনিকে তো নিজে ভালোবেসেই বিয়ে করে এনেছিল এখন আবার এই মেয়েকেও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে এনেছে।এই ছেলে তো দেখি কাপড়ের মতো বউ পাল্টাচ্ছে!”

আশহির দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“তোমরা কিছু না জেনেই আমাকে যা তা বলে যাচ্ছো।আর শোনো হ্যাঁ আমি নিজ ইচ্ছাতেই মৌরিনকে বিয়ে করেছি।আর তার যথেষ্ট কারণ আছে।কিন্তু আমি সেই কারণ তোমাদের কাউকে বলতে বাধ্য না।”

কথাগুলো বলে আশহির মৌরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আমার সাথে আসুন আমি আপনার থাকার রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।”

আশহির হাঁটা শুরু করলো।মৌরিনও তার পিছু পিছু গেল।আহমেদ সাহেব বললেন,

-“এই ছেলে তো কারো কথা শোনার প্রয়োজনই বোধ করে না।”

অহিদা বেগম আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।আশহির মৌরিনকে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে বললো,

-“আপনি এখানে থাকুন।”

আশহির চলে যেতে গেলে মৌরিন বললো,

-“আমার এই বাড়িতে থাকা ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না।আমি অন্য জায়গায় নিজের থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারবো।”

আশহির মৌরিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আপনি এই বাড়িতে থাকলে আপনার কাজেই সুবিধা হবে।আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া ইজি হয়ে যাবে!আর এক ছাদের নিচে থেকে মোকাবেলা করার মজাই আলাদা!”

আশহির কথাগুলো বলে মৌরিনের রুম থেকে চলে গেল।মৌরিন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“এই লোকটাকে যে কবে তার কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি দিতে পারবো তা একমাত্র আল্লাহ’ই জানেন!”

_______________
আশহির তার রুমে গিয়ে দেখলো তারিনি বিছানার এক কোণে বসে কান্না করতেছে।আশহির গিয়ে তারিনির পাশে বসে তার হাত ধরতে গেলে সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আমাকে তুমি স্পর্শ করবে না আশহির।”

আশহির উঠে দাঁড়িয়ে তারিনির সামনে গিয়ে বললো,

-“তারিনি তুমি আমার কথাগুলো একবার শোনো!”

-“আমি তোমার কোনো কথাই শুনতে চাই না।তুই আমার সব বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছো আশহির।আমি তো আর কিছুদিনই আছি এই দুনিয়াতে,আমি মরে গেলে না হয় বিয়ে করতে!কিন্তু আমি বেঁচে থাকতেই তুমি এমনটা করলে!”

-“প্লিজ তারিনি বার বার এই ম*রে যাওয়ার কথা বলো না।আমার কষ্ট হচ্ছে।আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না।”

আশহিরের কথা শুনে তারিনি উচ্চস্বরে হেসে দিল।কিছুক্ষণ পরে হাসি থামিয়ে বললো,

-“তোমার কষ্ট হচ্ছে?প্লিজ হাসিয়ো না আশহির!”

আশহির গিয়ে তারিনির দুই হাত শক্ত করে ধরে বললো,

-“তারিনি একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো।তুমি কি কোনো কিছু দেখতে পারছো না?”

তারিনি আশহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে,চোখের কোণায় পানি জমে আছে!তারিনি নিজেকে সামলে বললো,

-“কেনো করলে এমনটা আশহির?”

-“আমার যে আর কিছু করার উপায় ছিল না।তবে এমনটা করার পিছনে যেই কারণ আছে আমি তা তোমাকে এই মুহূর্তে বলতে পারবো না!”

তারিনি এক ঝটকা দিয়ে তার হাত জোড়া ছাড়িয়ে বললো,

-“নতুন বউকে নিয়ে ভালো করে সংসার করো।আমি আমার বাপের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।আর টেনশন নেই কিছুদিনের মধ্যেই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো!”

আশহির চমকে গিয়ে বললো,

-“তারিনি!”

-“কি?তুমি কি চাচ্ছো দুই বউকে নিয়ে একসাথে সংসার করতে?এতোটা নিচু হয়ে গিয়েছে তোমার চিন্তা ভাবনা!”

আশহির দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“আমি এই বিয়েটা নিজ ইচ্ছায় করলেও আমি উনাকে বউ হিসেবে মানি না।আমার বউ শুধুমাত্র তুমি!আর কেউ না।”

তারিনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

-“বাহ্!একটা মেয়েকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে এনে তাকে বউ হিসেবে মানো না?মানে সবকিছু তোমার মর্জি মতো চলবে?”

-“বিয়ে করার পিছনে একটা কারণ আছে সেটা তোমরা কেউই জানো না।তাই আমাকে একটু সময় দেও অন্তত!”

তারিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আচ্ছা যাও সময় দিলাম।আমার মৃত্যু হওয়ার আগে অন্তত জানিয়ে দিও।”

-“তুমি কি চলে যাবে এই বাড়ি থেকে?”

-“কিছুক্ষণ আগে ভেবেছিলাম চলে যাওয়ার কথা কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিলাম যাবো না।এই বাড়ির মানুষগুলোকে আমি বড্ড ভালোবাসি।তাই যেই কয়দিন বেঁচে আছি তাদের সাথেই থাকতে চাই।আর হ্যাঁ আজ থেকে আমি তোমার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না।”

-“প্লিজ তারিনি এমনটা করো না।আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবো না।”

-“এইসব মন গলানো কথা বলা বন্ধ করো আশহির।”

-“আমি কোনো মন গলানো কথা বলছি না।আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি।প্লিজ তুমি এই আমার থেকে দূরে চলে যেও না।”

তারিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আচ্ছা আমি এই রুমেই থাকবো কিন্তু আমরা এক বিছানায় থাকবো না।আমাদের মাঝে কোনো ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক থাকবে না!”

আশহির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“তুমি যা চাও তাই হবে।”

তারিনি আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।আশহির চোখ বন্ধ করতে তার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

তারিনি নিচে যেতেই অথৈ তার কাছে এসে বললো,

-“ভাবি তুই ঠিক আছো?তুমি আবার এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে না তো?”

তারিনি মৃদু হেসে বললো,

-“না রে একবারে না হয় লা*শ হয়ে বের হবো এই বাড়ি থেকে।আর তো কিছুদিন!”

অথৈ তারিনিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“প্লিজ ভাবি এভাবে বলো না।”

তারিনি অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।অহিদা বেগম এসে বললেন,

-“বউমা আমি যে তোমাকে কি বলবো তার ভাষা আমার কাছে অজানা!”

তারিনি অথৈকে ছেড়ে অহিদা বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“মা বাদ দেও এইসব।আমি সবটা মেনে নিয়েছি।এই কিছুদিনের মধ্যে আমি কোনো ঝামেলা চাই না।একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই।”

হঠাৎ সেখানে এসে মৌরিন হাজির হলো।মৌরিনকে দেখে অহিদা বেগম বললেন,

-“তুমি এখানে কেনো এসেছো?কি দরকার তোমার?”

-“আমি একটা চাকরি করি।তার জন্য আমার বাহিরে যেতে হবে।”

তারিনি হাসি দিয়ে বললো,

-“বাহ্ তুমি চাকরিও করো।এর জন্যই হয়তো আশহিরের তোমাকে পছন্দ হয়েছে তাই একেবারে বিয়েই করে ফেলেছে।”

মৌরিন কিছুক্ষণ তারিনির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-“উনি আমাকে পছন্দ করেন না।উনি একজনকেই পছন্দ…..এটুকু বলে থামলো মৌরিন।তারপরে মৃদু হেসে বললো,

-“পছন্দ বললে ভুল হবে,ভালোবাসেন!আর সেটা আপনাকে!”

-“আমাকে ভালোবাসলে তোমাকে বিয়ে করতো?”

-“আমাকে বিয়ে করার পিছনের কারণটা আপনাদের অজানা।তাই অযথা এই বিষয় নিয়ে উনাকে ভুল বুঝবেন না।”

কথাগুলো বলে মৌরিন বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।

#চলবে…………………

___________________________