অনুরাগে সখি নিভৃতে যতনে পর্ব-০৬

0
2

#অনুরাগে_সখি_নিভৃতে_যতনে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৬
___________________________
আশহির কথাগুলো বলে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে উঠে বসলো।মৌরিন আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করা শুরু করলো।দুজনের মাঝে নিরবতা!নিরবতা ভেঙে মৌরিন বললো,

-“আমি আপনার বাড়ির লোককে কিছু জানাইনি।”

-“ভালো করেছেন।অযথা চিন্তা করতো।অবশ্য আমার মনে হয় না আমাকে নিয়ে কেউ চিন্তা করবে বলে!”

মৌরিন আর কিছু বললো না।কিছুক্ষণ পরে আশহির বললো,

-“আপনি আজকে আমার বিপদে পাশে দাঁড়ালেন।কিন্তু আপনি তো আমাকে শাস্তি দিতে চান!”

-“আপনি আমাকে মা*রতে চেয়েও বার বার আমার বিপদে সহায়তা করেছেন তারই ঋণ শোধ করলাম!”

আশহির আর কিছু না বলে মৃদু হাসলো।মৌরিন নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“তা তারিনি কি টেস্টটা করিয়েছেন?”

-“হুম পজিটিভ এসেছে!”

-“কংগ্রাচুলেশনস!কিন্তু এমন ভালো একটা খবর পেয়ে আপনি এমন হতাশা নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন কেনো যে গাছের সাথে ধাক্কা খেলেন!”

-“আপনি তো ভালো করেই জানেন বাড়িতে বর্তমানে আমার অবস্থাটা!”

-“আমি এর জন্যই বলেছিলাম আমি আপনাদের বাড়িতে না থাকাটাই ভালো হবে।”

-“বোকার মতো কথা না বলে মন দিয়ে ড্রাইভ করুন।”

মৌরিন চোখ রাঙিয়ে আশহিরের দিকে এক পলক তাকিয়ে ড্রাইভ করায় মনোনিবেশ করলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা বাড়িতে পৌঁছে গেল।অহিদা বেগম আর তারিনি ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিল।আশহিরের মাথায় ব্যান্ডেজ করা দেখে তারা কিছুটা ঘাবড়ে গেল।অহিদা বেগম আশহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“মাথায় ব্যান্ডেজ কেনো কি হয়েছে তোর?”

আশহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“কিছুই হয়নি আম্মু।হালকা একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে।”

আশহির কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেল।অহিদা বেগম মৌরিনের কাছে গিয়ে বললো,

-“তুমি আশহিরের সাথে কোথা থেকে আসলে?”

-“উনি যেখানে এক্সিডেন্ট করেছিলেন আমি সেখান থেকে আসতে ছিলাম।উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়েছে।উনার সেন্স ছিল না।মাথায় এতোটা আঘাত পেয়েছে তাই আমি ড্রাইভ করে নিয়ে এসেছি।”

অহিদা বেগম চোয়াল শক্ত করে বললেন,

-“ওদের সংসারটা তো শেষ করেই দিয়েছো।এখন আবার আমার ছেলের প্রতি এতো দরদ দেখিয়ে তারিনিকে আরো কষ্ট দিতে চাইতেছো!”

মৌরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আমি এমন কিছু করিনি যে উনি আরো কষ্ট পাবেন।আর সংসারটা আমি নষ্ট করিনি।এই বিয়েটায় যতটা দোষ আমার আছে ঠিক ততখানিক দোষ আপনার ছেলেরও আছে।”

মৌরিন কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেল।কিছুক্ষণ পরে তার সুটকেস নিয়ে নিচে আসলো।মৌরিনকে দেখে তারিনি বললো,

-“তুমি এই সুটকেস নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”

-“এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।এতো কথা শুনে এই বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

-“আশহিরের এই অবস্থা আর তুমি চলে যাচ্ছো!”

-“আপনার স্বামীকে আপনিই সামলান।উনাকে নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।”

মৌরিন কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।



তারিনি রুমে গিয়ে দেখলো আশহির বিছানায় শুয়ে আছে।তারিনি গিয়ে আশহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“মৌরিন এই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে।”

আশহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“উনার যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছেন।”

-“কি সব বলছো তুমি আশহির?ও তোমার স্ত্রী!ও চলে গিয়েছে আর তুমি এমন রিলাক্সে বসে আছো।”

-“হ্যাঁ বসে আছি।আর স্ত্রী যে বলছো বিয়েটা উনিও মানেন না আর আমিও মানি না।তাই উনার যা ইচ্ছা উনি তা করতেই পারেন।আর তারিনি প্লিজ এখন এইসব নিয়ে কথা বলো না আমার ভালো লাগছে না কিছু!”

আশহির কথাগুলো বলে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে রইলো।তারিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো?”

-“মনের সুখে গাড়ি চালাচ্ছিলাম তাই হয়ে গিয়েছে।”

তারিনি আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল।

______________
মৌরিন অফিসে গিয়ে হাজির হলো।মৌরিনকে দেখে ফরহাদ বললো,

-“আপনার তো রাতে কোনো ডিউটি নেই তাহলে আপনি এখানে কেনো?”

-“আমি ওই বাড়ি থেকে চলে এসেছি স্যার।আর এতো রাতে আমাকে কেউ হোস্টেল বা বাড়ি ভাড়া দিবে না তাই এখানে আসলাম।সকালে গিয়ে নিজের থাকার একটা ব্যবস্থা করে নিবো!”

-“কি সব বলছেন!চলে এসেছেন মানে?শ্বশুর বাড়ি থেকে কে চলে আসে এভাবে?”

-“প্লিজ স্যার এইসব নিয়ে কথা বলতে আমার আর ভালো লাগছে না।আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছি না আমার জন্য একটা সংসার শেষ হয়ে যাচ্ছে।আশহির মির্জার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট!এই সময়টা একটা দম্পতির জন্য কতটা আনন্দের কিন্তু আমি উনাদের মাঝে চলে আসায় সবটা শেষ হয়ে গিয়েছে।”

মৌরিন কথাগুলো বলে কেঁদে দিল।ফরহাদ বেশ অবাক হলো।কারণ সে আজকে প্রথম মৌরিনকে কাঁদতে দেখতেছে।ফরহাদ গিয়ে মৌরিনের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“মৌরিন আপনি কাঁদবেন না।আপনি বরং এখানে রেস্ট নিন।আমার একটা ইনভেস্টিগেশন আছে তাই আমাকে যেতে হবে!”

মৌরিন চোখের পানি মুছে বললো,

-“জ্বি স্যার আপনি যান।আমার কোনো সমস্যা হবে না।”

ফরহাদ কিছুক্ষণ মৌরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল।ফরহাদ চলে যেতে মৌরিন গিয়ে একটা চেয়ারে বসলো।

-“কত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে!না একটা ডিসিশন নিতেই হবে এবার।আমি চাই না আমার জন্য একটা সংসার এভাবে শেষ হয়ে যাক।আমিই দূরে সরে যাবো!”

হঠাৎ করে মৌরিনের মোবাইলে একটা কল আসলো।সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে।সে কলটা রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠে কেউ বললো,

-“আপনি আশহির মির্জার বিরুদ্ধে যেই প্রমাণ খুঁজছেন তা আমার কাছে আছে।ওই কর্মকাণ্ডের সময় আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম।”

মৌরিন চমকে গিয়ে বললো,

-“কি বলছেন আপনি?আর আপনি কে?”

-“মোবাইলে এতো কিছু বলা সম্ভব না।আমি আপনাকে একটা লোকেশন পাঠাচ্ছি কালকে সন্ধ্যা সাতটায় চলে আসবেন!”

কথাগুলো বলে কলটা কেটে দিল।মৌরিন মোবাইলটা হাতে নিয়ে থ হয়ে বসে আছে।ওই নাম্বার থেকে একটা জায়গার নাম পাঠালো।এতো হতাশার মধ্যেও মৌরিন আশার আলো খুঁজে পেল।সে মৃদু হেসে বললো,

-“যাক একটা ভালো সংবাদ তো পেলাম।তবে সতর্কের সাথে যেতে হবে।এটা যদি আশহির মির্জার কোনো ফাঁদ হয়!ফরহাদ স্যারকে কি সবটা জানাবো?না থাক দরকার নেই।তবে কালকে এই আগন্তুকের সাথে দেখা করার আগে আমার আরও একটা কাজ বাকি আছে।

___________________________
সকালবেলা ঘুম ভাঙতে আশহির দেখলো তারিনি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে।বরাবরই এই দৃশ্য দেখতে আশহিরের বেশ ভালো লাগে।অন্যদিন হলে আশহির গিয়ে তারিনি জড়িয়ে ধরে তার চুলে নাক ডুবিয়ে দিতো কিন্তু এখন যে তা সম্ভব না।দুজনের মাঝে যে আকাশ সমান দূরত্ব!

আশহির বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল।অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হতে তারিনি বললো,

-“মৌরিনকে নিয়ে কি ভাবলে?”

-“তারিনি আমি তোমাকে কালকেই যা বলার বলে দিয়েছি।”

-“আশহির ও এখন তোমার স্ত্রী!”

আশহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“একটা মিথ্যে সম্পর্ককে বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে নেই।আর তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলেও যাও তাও উনাকে আমি কোনোদিনই আপন করে নিবো না।তাই যে যেমন আছে থাকতে দেও!”

আশহির কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।তারিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“মুখে তো কত কি বলা যায়,সবটা তো আর এতো সহজ না আশহির!”

_________________
-“আপনি শিওর এই বিষয়ে?”

উকিলের কথায় বেশ বিরক্ত হলো মৌরিন।নিশ্বাস ফেলে বললো,

-“দেখুন আমি শিওর বলেই এখানে এসেছি।তাই বারবার এক প্রশ্ন করে বিরক্ত করবেন না।”

-“আচ্ছা ম্যাডাম আমি সব কাগজ পত্র রেডি করতেছি।”

-“হুম একটু তাড়াতাড়ি করুন।”

মৌরিন কথাগুলো বলে উকিলের চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল।সে তার থাকার জন্য একটা বাড়ি খুঁজতেছে।তবে একা থাকার জন্য কেউ তাকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।সে আনমনে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো।গাড়ি থেকে নেমে মৌরিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আশহির বললো,

-“তো এখন এই রাস্তাই কি আপনার বাসস্থান?”

মৌরিন চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“তা নিয়ে আপনার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।যেখানে যাচ্ছিলেন যান।আপনার সাথে কথা বলার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।”

মৌরিন কথাগুলো বলে চলে যেতে গেলে আশহির বললো,

-“একটা আশ্রয়স্থল দিয়েছিলাম নিজেই ত্যাগ করলেন।”

মৌরিন গিয়ে আশহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“যেখানে নিজের সম্মান নেই সেই স্থান ত্যাগ করাই উত্তম।”

আশহিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৌরিন সেখান থেকে চলে গেল।আশহির দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে অফিসের দিকে রওয়ানা দিল।

#চলবে…………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]