#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___১৮
চন্দ্র কলেজ গেইট এর কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো। চন্দ্রকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে গাড়িতে উঠাতেই পেছন থেকে দেখে নিলো স্পন্দনের লোক। কিন্তু কিছু করার আগেই গাড়িটা সীমানার বাইরে চলে গেছে।মিশাল সাথে সাথে ফোন করলো স্পন্দনকে।বললো,
__স্যার এদিকে বিপদ হয়ে গেছে।
__কি হয়েছে মিশাল?
__ম্যামকে তুলে নিয়ে গেছে।গাড়ির নম্বর তুলে রেখেছি ফোনে। আমি পেছনেই আছি।
__মুখ দেখতে পেয়েছো?
__এতো দ্রুত কাজ করেছে যে আমার মাথা কাজ করছিল না।সরি স্যার। আমি থাকতে এমনটা হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।
__ঠিকানা মেসেজ করে দাও। আমি আসছি।
__জ্বী স্যার।
মিশালের মেসেজ পেয়ে লোকেশন অন করে স্পন্দন গাড়ি নিয়ে ছুটলো।
চন্দ্রকে অজ্ঞান করে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে।একটু পরেই ভারী বুটের ধপধপ শব্দ শুনে লোকগুলো রুমের দরজা খুলে দিলো। লোকটি এসে থমথমে গলায় বললো,
__জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো।
চন্দ্রের চোখেমুখে পানি দিতেই চন্দ্র চোখ পিটপিট করে তাকালো। মুখের সামনে একটা ভয়ংকর চেহারার মানুষকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চন্দ্র ভয়ে আঁতকে উঠলো। লোকটি গমগমে কন্ঠে বললো,
__হ্যালো মিসেস্ স্পন্দন। আপনার মতো সুন্দরীকে এভাবে বেঁধে রাখার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মিসেস্ স্পন্দন।
__ক্ কে আপনি?
লোকটি হা হা করে হাসতে লাগলো।বললো,
__আপনি তো আবার চেনেন না আমাকে মিসেস স্পন্দন। আমি আবরার চৌধুরী।হৃদির একমাত্র ভাই। মাহতাব চৌধুরীর ছেলে।
__আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?
__আরে আপনাদের বিয়েতে তো আমাকে দাওয়াত দেয়নি স্পন্দন মির্জা।তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ের উপহার দিতে এখানে নিয়ে আসা।
চন্দ্র হাত পায়ের বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করছে।তা দেখে আবরার চৌধুরী বললো,
__আহ্ মিসেস স্পন্দন মির্জা । এভাবে ছটফট করলে যে আপনার কষ্ট হবে। আর আপনার কষ্ট দেখে যে আমার বুকটা ফেটে যাবে।
__কেনো এনেছেন এখানে?
__আবরার চৌধুরীর সাথে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না মিসেস স্পন্দন।সো আওয়াজ নিচে।
__আপনি জানেন না আমাকে এখানে তুলে এনে নিজের কত বড় বিপদ ডেকে এনেছেন।
__হু’মকি?তাও আবরার চৌধুরীকে? সাহসের তারিফ করতে হবে আপনার মিসেস স্পন্দন। আপনার স্বামীর কুকীর্তি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে না?
__স্পন্দন কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না।এসব বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই আবরার চৌধুরী।
__আরে খুব ভালোবাসেন বুঝি স্বামীকে?
__হ্যাঁ খুব ভালোবাসি। কিন্তু সেই কইফিয়েত আমি আপনার মত লোকের কাছে দিবো না।
রাগে আবরার চৌধুরীর মুখ লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে চন্দ্রকে গিলে ফেলবে এখনি। চন্দ্র এখনো বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করতে লাগলো।
__আপনি কার হয়ে সাফাই গাইছেন?যে আমার বোনের খু’নী? কতটুকু চেনেন আপনি স্পন্দন মির্জাকে?
__আমার স্পন্দন কখনো কাউকে খু’ন করতে পারে না। আপনি মিথ্যা বলছেন আবরার চৌধুরী।
__ওহ্ রিয়েলি মিসেস স্পন্দন? আপনি জানেন আপনার স্পন্দন আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ বোনটাকে খু’ন করেছে?
__আমি বিশ্বাস করি না।স্পন্দন এমন কাজ কখনোই করতে পারে না।
আবরার চৌধুরী তেড়ে এসে চন্দ্রর মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলো।বললো,
__আমার একটা মাত্র বোন ছিলো হৃদি।তাকে নির্মমভাবে ঠকিয়েছে আপনার স্বামী। আমি আপনার অনেক বকবক সহ্য করেছি এতো সময়। কিন্তু আর নয়।আপনাকে মে’রে এখানেই পুঁ’তে রেখে দেবো মিসেস স্পন্দন।
চন্দ্র চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা।মুখটা শক্ত করে চেপে রেখেছে আবরার চৌধুরী।ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো চন্দ্র।তা দেখে আবরার চৌধুরী আরেকটা কুৎসিত হাসি হেসে বললো,
__আরো আরো ছটফট করেন মিসেস স্পন্দন। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে আপনাকে এভাবে ছটফট করতে দেখে তা বলে বোঝাতে পারবো না মিসেস স্পন্দন। ঠিক এভাবেই ছটফট করতো আমার ছোট্ট বোনটা। আমার বারণ করা সত্তেও ঐ স্পন্দনের সাথে কথা বলতো।তার সাথে দেখা করতো। আমি বন্ধ করেছিলাম বলে আমাকে সহ্য করতে পারতো না।অথচ যে বোন আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো সেই বোন ঐ স্পন্দনের জন্য আমার সাথে এতো কিছু করেছে। কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট।যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তার দ্বিগুণ কষ্ট আমি স্পনদনকে কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিবো।এটা আমার নিজের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতি।
চন্দ্রের মুখটা ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো আবরার চৌধুরী। চন্দ্রের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।এতো জোরে চেপে ধরেছিলো আবরার চৌধুরী যনো মুখের হার ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে।ব্যথা যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে চন্দ্রের। তবুও সাহস করে বলে উঠলো,
__আপনি কি চান আবরার চৌধুরী?
__আমি চাই স্পন্দনের ধ্বংস। আমি চাই সৈয়দ মির্জা আমার পায়ে পড়ে ছেলের প্রাণ ভিক্ষার জন্য কান্নাকাটি করুক।ছটফট করতে থাকুক ।আর বুঝুক প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেলে তাদের আপনজনের ঠিক কতটা কষ্ট হয়।
__আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে স্পন্দন আপনার বোনকে ভালোবাসতো।তার কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ স্পন্দন কোনোদিন করবে না। এগুলো আপনার মনের ভুল।
__মনের ভুল?কোনটা মনের ভুল? আমার বাবাকে যখন নির্মম ভাবে অপমান অপদস্থ করেছিলো ঐ সৈয়দ মির্জা সেটা ?সেটা মনে রাখা আমার মনের ভুল?বলুন?
__বড় আব্বু কেনো এমন করেছিলেন তা আমি জানি না। কিন্তু তার জন্য আপনি স্পন্দনকে কেনো কষ্ট দিবেন?
__কেনো দেবো না? আমি আজ অনাথ।। আমার হাসিখুশি পরিবারের সবাই আমাকে একা ফেলে চলে গেছে ঐ সৈয়দ মির্জা আর তার ছেলের জন্য। আমি জীবনেও তাদের ক্ষমা করবো না। আমার প্রতিশোধ চাই। আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।
__কি নিয়ে প্রতিশোধ নিবি আবরার চৌধুরী?
__স্পন্দন তুই? তুই এখানে আসলি কি করে?
__কি ভেবেছিলি আবরার? আমার চন্দ্রকে তুই তুলে নিয়ে আসবি আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?
__এসেই যখন পড়েছিস তখন নিজের চোখেই দেখে নে তোর ভালোবাসার চন্দ্রকে কিভাবে একটু একটু করে যন্ত্রণা দিতে দিতে শেষ করে দেই।
__আবরার?মুখে লাগাম টেনে কথা বল। না হলে স্পন্দন তোর এমন অবস্থা করবে যা তুই ভাবতেও পারবি না।
আবরার চৌধুরী এবার চন্দ্রের গলায় একটা চা’কু চেপে ধরে বললো,
__আর একপা এগোলেই তোর বউকে এখানেই শেষ করে দিবো স্পন্দন।
স্পন্দন মুচকি মুচকি হাসছে আর এগোতে এগোতে বললো,
__আমার চন্দ্রের গায়ে যদি একটা আঁচড় পড়ে তবে ভুলে যাবো তুই হৃদির ভাই। সেদিন হৃদির জন্য তুই বেঁচে গেছিস। আজকে আর তা পারবি না আবরার।
__তোকে কিন্তু এগোতে মানা করেছি স্পন্দন।পিছিয়ে যা। পিছিয়ে যা বলছি।
__চন্দ্রকে ছেড়ে দে আবরার।
__না।
__আমি শেষ বারের মতো বলছি আবরার চন্দ্রকে ছেড়ে দে। বাঁচতে চাস তো চন্দ্রকে ছেড়ে দে বলছি।
আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশের গুলি এসে লাগলো আবরারের হাতে।হাত থেকে ছু’ড়িও পড়ে গেলো। চন্দ্র ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। পুলিশের লোক এসে আবরার চৌধুরীর সবাইকে ধরে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো।স্পন্দন ছুটে এসে চন্দ্রর হাত পায়ের বাঁধন খুলে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।মিশাল এগিয়ে এসে বললো,
__স্যার ওদেরকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়েছে।ম্যামকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলেছি।আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই। আপনি ম্যামকে নিয়ে আসুন।
স্পন্দন চন্দ্রের হাত ধরে বসে আছে হাসপাতালে।বাড়ির সবাই এসেছে খবর পেয়ে।স্পন্দন এ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি কারো সাথে।একটু পরেই চন্দ্রের জ্ঞান ফিরলো।স্পন্দনকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।স্পন্দন ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
__এই তো আমি চন্দ্র।আর কোনো ভয় নেই। তোমার স্পন্দন এসে গেছে তো। এবার শান্ত হও চন্দ্র।
__ঐ ঐ লোকটা,,,,
__কিছু হবে না চন্দ্র। আমি আছি তো। একদমই ঠিক আছি।একটু শান্ত হয়ে থাকো প্লিজ। তোমার শরীর খারাপ করেছে। উত্তেজিত হলে আরো খারাপ করবে।
ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলেন।আপাতত এতেই শান্ত থাকবে চন্দ্র। অতিরিক্ত শকে এমন হয়েছে।স্পন্দন বাইরে এসে বললো,
__চন্দ্র ঠিক আছে। ঘুমাচ্ছে এখন।
__ঠিক কি হয়েছিল ওর সাথে স্পন্দন?
__ছোট আব্বু আসলে চন্দ্রকে আবরার চৌধুরী তুলে নিয়ে যায় আপনার অফিস থেকে বের হবার পর।
__আমি জানতাম তোমাদের এই শত্রুতার জন্যে আমার মেয়েটাকেই কষ্ট পেতে হবে।তাইতো চাইছি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে।এখনো বলবে তোমার কাছে ও ভালো থাকবে? নিরাপদ থাকবে?
স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের বাবার দিকে এরপর বললো,
__চন্দ্র যদি কোথাও থাকে তাহলে স্পন্দনের সাথেই থাকবে।স্পন্দন বেঁচে থাকতে চন্দ্রের কিছুই হতে দেবে না।
__হতে দেবে না?পেরেছো আটকাতে?
__আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করুন ছোট আব্বু।সে চাইলে না আজকে চন্দ্রের এতো বড় বিপদ হতো না আমার চরিত্রের উপর দাগ পড়তো।তাই এসব বাদ দিয়ে এটা শুনে রাখুন স্পন্দনকে ভালো রাখতে চন্দ্রকে চাই।আর চন্দ্রকে ভালোবেসে আগলে রাখবে যে সেটাও এই স্পন্দন।তাই ভবিষ্যতে এসব কথা আমার সামনে দ্বিতীয় বার বলবেন না।
#চলবে,,,,,,,
#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___১৯
__বড় ভাইয়া উত্তর দাও স্পন্দন যা বললো তার।
সৈয়দ মির্জা অসহায় ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।কোনো রকম কথাই তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না আজ।তা দেখে উনার আম্মা বললেন,
__এটা হাসপাতাল। এখানে এসব পারিবারিক সমস্যার কথা না বলাই ভালো।সবাই বাড়িতে চলো। ওখানে গিয়ে সব কথা হবে।
__আমি কোথাও যাবো না দাদিমা।তোমরা যাও। আমি চন্দ্রকে রেখে কোথাও যেতে পারবোনা।
__সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোর স্পন্দন। এবার বাড়িতে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে। আমি আছি চন্দ্রর কাছে।
__আমি কোথাও যাবো না মা।তোমরা যাও। চন্দ্র ভয় পেয়ে আছে।ঘুম থেকে উঠেই আমাকে খুঁজে না পেলে উত্তেজিত হয়ে যাবে। আমি ঠিক আছি। তুমি বাড়িতে যাও মা।
সবাই চলে যেতেই স্পন্দন হাসপাতালের করিডরে গিয়ে বসলো।মাথার চুলে হাত দিয়ে চন্দ্রকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।মিশাল এগিয়ে এলো স্পন্দনের কাছে।বললো,
__স্যার একবার থানায় গিয়ে দেখে আসছি আমি।আবরার চৌধুরীর নামে সব এভিডেন্স গুলো জমা ও তো করতে হবে।
__হুম।তবে ও যেনো ওর কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি পায় মিশাল।ওর জন্য হৃদি পৃথিবীতে নেই। আমি হৃদির মৃত্যুর দায়ভার নিয়ে আজ মাথার উপর অপরাধীর ট্যাগ ঝুলছে। সৈয়দ মির্জার এখনো তার অপরাধের শাস্তি দেওয়া বাকি।
__চিন্তা করবেন না স্যার। একবার যখন আবরার চৌধুরী ধরা পড়েছে তখন তার শাস্তি সে পাবেই।আর আপনার বাবা,,,,
__সৈয়দ মির্জার জন্য আমার জীবন আজ ছন্নছাড়া অগোছালো। আমি অপরাধী তার করা কুকর্মের জন্য।তাকেও শাস্তি পেতে হবে মিশাল।
__জ্বী স্যার সব হবে। আপনি এখন ম্যামের কাছে যান। আমি থানায় যাচ্ছি।
__হুম।
মিশাল চলে যেতেই স্পন্দন চন্দ্রের কেভিনে গিয়ে ওর পাশে বসলো। চন্দ্র আজকের ঘটনা গুলো ঠিক কিভাবে নেবে সেটাই ভাবছে।যদি চন্দ্র ওকে ভুল বুঝে?যদি আবরারের বলা কথাগুলো বিশ্বাস করে?যদি ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায়?ভাবতে ভাবতেই স্পন্দনের বুকের ভেতরটা চাপা কষ্টে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।
সৈয়দ মির্জার দিকে সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঘটনা জানার জন্য সবার আগ্রহের ও শেষ নেই। এরপর সৈয়দ মির্জার আম্মা বললেন,
__মির্জা বলো সবাইকে যা জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করে আছে।
__আমি আর মাহতাব চৌধুরী ব্যবসায়ীক প্রতিদন্দী ছিলাম অনেক আগে থেকেই।তার ই মেয়ে ছিলো হৃদি। আমার লোকজন যখন আমাকে খবর দেয় স্পন্দন আর হৃদির সম্পর্ক নিয়ে তখন ওরা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছে একে অপরকে। আমি এই নিয়ে স্পন্দনকে প্রশ্ন করলে ও সবটাই বলে আমাকে।আরো বলে সে হৃদিকে ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়। আমার সাথে এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয় স্পন্দনের।
ওদিকে মাহতাব ও জেনে যায় এই সম্পর্কের ব্যাপারে।সে আমাকে ব্লাকমেইল করতে থাকে এই সম্পর্ক মেনে নিতে।আমি রাজি না হলে ওরা অন্য ভাবে চেষ্টা করে।স্পন্দনের সাথে দেখা করতে চায় হৃদি। কিন্তু মাহতাব ওকে বলে যদি ও স্পন্দনকে বলে আমাকে ওর ব্যবসার পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে তবেই স্পন্দনকে মেনে নেবে।হৃদি তাদের কথা বিশ্বাস করে স্পন্দনকে ফাঁদে ফেলতে হাত মেলায় বাবা ভাইয়ের সাথে। এরপর স্পন্দনকে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করব যদি তোমার বাবা আমার বাবার দেওয়া সব শর্ত মেনে নেয়।স্পন্দন হৃদিকে ভালোবেসে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আমার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে। আমি রাজি হই না।এটা যখন স্পন্দন হৃদিকে বলে তখন হৃদি স্পন্দকে বলে তুমি যদি আমার জন্য এটুকু করতে না পারো তবে আমি ও বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো।
স্পন্দন পাগলের মতো হয়ে যায় এরপর।নেশা করতে থাকে। আমাকে সহ্য করতে পারে না।তখন মাহতাবের সাথে আমার ডিল করার জন্য দেখা করতে বলি। সেদিন উত্তেজিত হয়ে দু পক্ষের সংঘর্ষে মাহতাবের গায়ে গুলি লাগে।সেটা খুব অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটেছিলো। কিন্তু আবরার আমাকে অপরাধী মনে করে। আমার নামে কেইস ও দেয়। আমি এর থেকে বাঁচতে স্পন্দনকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করি।স্পন্দনকে আশ্বাস দেই হৃদির সাথে বিয়ে দেওয়ার।ও আমার কথায় হৃদির সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু সেদিন হৃদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সুইসাইড করে।আর আবরার স্পন্দনের নামে শারীরিক নির্যাতনের পর হ’ত্যা মামলা দিয়ে দেয়। আমাকেও জেলে যেতে হবে এই ভয়ে আবরারের সাথে মিলে সেই দোষ ও স্পন্দনের উপরেই দিয়ে দেই।জেইল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর স্পন্দন তা জেনে যায়।আর তারপরের ঘটনা তো সবারই জানা।
__ছিঃ ভাইয়া ছিঃ। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ছেলের জীবন নিয়ে খেলতে তোমার বিবেকে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হলো না। মানুষ সন্তানের জন্য কত কিছুই করে।আর তুমি? নিজের ছেলেকেই অপরাধী বানিয়ে দিলে।একটা চরিত্র হীন লম্পটের খেতাব নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার জীবন দিয়ে দিলে?
__আমি তখন টাকা আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়েছিলাম।যখন ভুল বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।স্পন্দনের মনে তখন আমার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই।
__এতো কিছু করার পরেও তুমি বলছো তোমার জন্য ভালোবাসা রাখতে। কিভাবে? তুমি পারতে?
__আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা সবাই। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
__থানায় খবর দে আশরাফ। এবার আর লুকোচুরি না রেখে ওর উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।
__আচ্ছা আম্মা।আমি ফোন করছি।
সবাই সত্যিটা শুনে বিশ্বাস ই করতে পারছেনা।সবাই এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।স্পন্দনের জীবনে এতো কিছু হয়ে গেছে।অথচ ওরা জানেই না।দাদিমা বললেন,
__আমাকেও সবাই ক্ষমা করে দিও।সত্যিটা জেনেও চুপ করে থেকে ছেলেকে বাঁচাতে চেয়েছি।স্পন্দনের সঙ্গে জোর করে চন্দ্রের বিয়ে দিয়েছি।তবে ভালোর জন্যই দিয়েছি।কারণ আমি জানতাম যদি কেউ স্পন্দন দাদুভাইকে ভালো রাখতে পারে সেটা চন্দ্র। তোমাদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে মাপ করে দিও তোমরা।
স্পন্দন পরদিন চন্দ্রকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো। চন্দ্র মানসিক ভাবে ভীষণ আঘাত পেয়েছে।বাড়িতে আসতেই ওর মা স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
__আমাকে ক্ষমা করে দে বাবা।এতো কিছু ঘটে গেছে তোর জীবনে আর আমি মা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না।
__তোমার কোনো দোষ নেই মা। তুমি কাঁদছো কেনো?যে অপরাধ করেছে তাকে তার পাপের শাস্তি পেতেই হবে মা।
__চন্দ্র মা তুই ঘরে চল।
__আমি থানা থেকে আসছি মা।
চন্দ্র ওর বড় আম্মুর কাছে সব শুনে কেঁদে ফেললো।বললো,
__তোমার এই ছেলেকে অপরাধী ভেবে আমি কত কিছু বলেছি তোমাকে। আমাকে মাপ করে দাও বড় আম্মু।
__তুই তো কিছু ভুল বলিস নি মা। আমরাও তো জানতাম না স্পন্দন যে সত্যি সত্যি তার বাবা আর আবরার চৌধুরীর চক্রান্তের শিকার হয়ে জেল খেটেছে। তুই তারপরও আমার কথা রেখে ওর সাথে থেকে গেছিস।তার জন্যেই আজকে আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আমার সেই হাসি খুশি স্পন্দন।
__বড় আম্মু?
__বল চন্দ্র।
__বড় আব্বুকে মাপ করে দাও।
__আমি তাকে মাপ করার কেউ না চন্দ্র।সে অপরাধ করেছে স্পন্দনের সাথে।স্পন্দন চাইলেই তাকে মাপ করবে।নয়তো না।তবে যে আমার ছেলের জীবন নিয়ে খেলেছে তাকে আমি অন্তত কোনো দিন আগের চোখে দেখতে পারবোনা।
স্পন্দনের সামনে ওর বাবা লকাপে মাথা নিচু করে আছে।স্পন্দন বললো,
__এসব করে কি পেলেন সৈয়দ মির্জা?
__আমাকে ক্ষমা করে দিও স্পন্দন।
স্পন্দন হাসতে হাসতে বললো,
__আমার জীবন থেকে যে দুটি বছর হারিয়ে গেছে তা আপনি ফেরত দিতে পারবেন সৈয়দ মির্জা?
__আমি অনুতপ্ত স্পন্দন।
স্পন্দন আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলো। সোজা গিয়ে দাদিমার সামনে চলে গেলো।দাদিমা মাথা নিচু করে আছে।স্পন্দন বললো,
__তুমি সব জানতে দাদিমা?
__তুমি যখন জেল থেকে বেরিয়ে নেশায় ডুবে থাকতে তখন একদিন মির্জা আমার কাছে এসে সব বললো। আমি চাইলেই সেদিন ওকে পুলিশের কাছে দিতে পারতাম। কিন্তু তোমার বাবা আমার বড় ছেলে।তার প্রতি আমার স্নেহ সেদিন আমাকে সব লুকিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো দাদুভাই। কিন্তু আমি চাইনি তোমার জীবন এমন অন্ধকার হয়ে থাকুক।তাই চন্দ্র দিভাই এর সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার কথা বলি তোমার বাবাকে।সে প্রথম মেনে নিতে না চাইলেও আমার কথায় বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যায়।
__আমার আর কারো প্রতি কোনো রকম রাগ অভিমান অভিযোগ নেই। তুমি তোমার ছেলেকে বলে দিও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
__আমাকে ভুল বুঝো না দাদুভাই।
__তোমার জন্য আমি চন্দ্রকে পেয়েছি দাদিমা। চন্দ্র আমাকে যতটা ভালোবাসে এমন করে আর কেউ কখনো ভালোবাসতে পারবেনা।তাই এজন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ দাদিমা।
#চলবে,,,,,,