#অন্তহীন_বসন্ত~২৩
লিখা- Sidratul Muntaz
অবন্তীরা চলে যাওয়ার ঠিক শেষ মুহূর্তে নিশান্ত ছাদে এসে দাঁড়ালো। নিচে থেকে অবন্তীর চোখ দু’টো তখন নিশান্তকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিল পাগলের মতো। তাকে আরেকটিবার দেখার জন্য তৃষিত মন।নিশান্ত হাত নাড়তেই অবন্তী তাকে দেখতে পেল। মিষ্টি করে হাসল। চার চোখের মিলন ঘটল কিছু সময়ের জন্য। তারপর অবন্তী সিএনজিতে উঠে গেল। অবন্তীর বাবা সামনে, পেছনে অবন্তী আর তার মা একসাথে। বিলকিস মিনমিন করে বলল,” নিশান্তকে শেষবারের মতো বিদায় জানিয়ে এসেছো তো?”
অবন্তী চমকে উঠল। বিলকিস ঠান্ডা স্বরে বলল,” যথেষ্ট হয়েছে। ওই বাড়ির কারো সাথে কোনো রকম সম্পর্কে জড়ানোর মানেই হয় না। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি।খবরদার, নিজের সর্বনাশ ডেকে এনো না। আজকের পর থেকে সবকিছু শেষ। আর কখনও যেন ওর নাম তোমার মুখে না শুনি।”
অবন্তী মাথা নিচু করে ফেলল। মায়ের হুমকির অর্থ তার বুঝতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু মা তো জানে না ইতোমধ্যে তারা এমন বাঁধনে জড়িয়ে গেছে যে চাইলেও আর সেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। অবন্তীর মন বিষণ্ণতায় ভরে উঠল। তারা যত পথ এগুচ্ছে ততই মনে হচ্ছে সে নিশান্তর থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। একবার তো ইচ্ছে করল চিৎকার করে গাড়িটা থামিয়ে দিতে। দৌড়ে আবার পেছনদিকে ছুটে যেতে। কেন ভেতরটা এতো শূন্য-শূন্য লাগছে? কেন? এমন তো নয় যে সে নিশান্তকে ছাড়া কোনোদিনও থাকেনি। দিব্যি তারা একে-অপরকে না দেখে দু-তিনবছরও কাটিয়ে দিতে পারতো একসময়। যদিও নিশান্তর ভাবনা মন থেকে তাড়াতে পারেনি কোনো সময়। আর এখন মাত্র কয়েকদিনের দূরত্বও অসহ্য ঠেঁকছে। এই অনুভূতিকে কি বলে? বিবাহ বন্ধনের শক্তি? কে জানে? তাদের বিয়েটা আদৌ শুদ্ধ হয়েছে কি? বাবা-মায়ের দোয়া ছাড়া আসলেই কি বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক পূর্ণতা পায়? অবন্তীর খুব কান্না পেতে লাগল হঠাৎ করে। ঠোঁট কামড়ে সে নিজেকে সামলালো। কেন তাদের সম্পর্কে এতো বাঁধা! আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো কেন হলো না তারা?
অবন্তীরা বাড়ি ফিরল সন্ধ্যা সাতটায়। অবন্তী শুধু অপেক্ষা করছে নিশান্তর ফোনের। বার-বার সে মায়ের ফোনটার দিকে নজর রাখছে। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। অবন্তী প্রায় ছুটে গেল। কিন্তু দেখল বাবার ফোন। তিনি দোকানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই হয়তো ফোন করেছেন। অবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিলকিস রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল,” কার ফোনরে অবন্তী?”
অবন্তী তেঁতো কণ্ঠে বলল,” বাবা।”
” নিয়ে আয়।”
” পারব না।” ত্যাঁড়া গলায় জবাব দিয়ে অবন্তী নিজের ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা আটকে দিল। তারপর বিছানায় বসে কাঁদতে লাগল। এতো অসহায় কেন লাগছে নিজেকে? আচ্ছা, নিশান্ত কি তার কথা ভুলে গেছে? তারা সেখান থেকে এসেছে প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা হয়ে গেল। অবন্তী এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারেনি নিশান্তকে। অথচ নিশান্ত… একটিবারের জন্যেও মনে করল না তাকে। মনে করলে নিশ্চয়ই ফোন করতো। বিলকিস অসহিষ্ণু গলায় বলল,” তোর কি হলো আবার? আমাকে মেজাজ দেখাচ্ছিস কেন?”
রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বিলকিস ফোন হাতে নিল। মিরাজ উদ্দিনের সাথে কথা শেষ করে ফোন রাখতেই আবার বেজে উঠল মোবাইলটা৷ এখন অচেনা নাম্বার। বিলকিস রিসিভ করল,
” হ্যালো, কে বলছেন?”
ওই পাশ থেকে কোনো জবাব এলো না। শুধুই নিঃশব্দতা। বিলকিস আবার বলল,” হ্যালো…”
এবারও নিশ্চুপ। বিলকিস সামান্য বিরক্ত হয়ে কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বারটায় আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল। একেবারেই অচেনা নাম্বার। হয়তো রং নাম্বার হবে। আরও দুই-একবার ‘হ্যালো’ উচ্চারণ করে বিলকিস ফোন রেখে দিল। জার্ণিং করে এসে এমনিও শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। তার উপর রাতের রান্না-বান্না। বিলকিস বিছানায় গেল একটু বিশ্রামের আশায়। কিছুক্ষণ পর আবার মোবাইল বাজতে শুরু করল। সেই একই নাম্বার। বিলকিস রিসিভ করে বলল,
“এই আপনি কে বলছেন? ”
কোনো উত্তর নেই। বিলকিস রাগী স্বরে বলল,” কথা বলবেন না তো ফোন দেন কেন?”
একটু থেমে আবার বলল,” আরেকবার ফোন করলে কঠিন গালি খাবেন। অভদ্র কোথাকার! ”
বিলকিস খট করে ফোন নামিয়ে রাখল। এর আগে শুনতে পেল ওই পাশে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আশ্চর্য মানুষ তো!
অবন্তী রাতে খেতে বসল গোমরা মুখে। তার একদমই ক্ষিধে পায়নি৷ কিন্তু মায়ের ধমক শুনে খেতে এসেছে। কেঁদে-কেটে চোখ ফুলে একাকার। বিলকিসের অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়ের এই বিরহের কারণ। এজন্যই ওই বাড়িতে আর কখনও যেতে চায় না সে। যেটা কোনোদিনও সম্ভব না সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখে লাভ আছে? ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা বাজে। অবন্তী বার-বার সেদিকে তাকাচ্ছে। কই নিশান্ত তো একবারও ফোন করল না তাকে! অবশ্য নিশান্তর ফোন নাম্বার অবন্তীর মুখস্ত। সে চাইলেই বাবার মোবাইল থেকে লুকিয়ে ফোন করতেই পারে। মায়ের মোবাইলে কখনও টাকা থাকে না। তাই ফোন করলে বাবার মোবাইল থেকেই করতে হবে। কিন্তু অবন্তী ফোন করবে না। কারণ সে চায় নিশান্তই তাকে আগে ফোন করুক।
মা আর বাবার মাঝখানে বসে অবন্তী খাচ্ছিল। তখনি বিলকিসের মোবাইল আরেকবার বেজে উঠল। অবন্তীর বুকটাও ধ্বক করে কেঁপে উঠল। নিশান্ত নয়তো? বিলকিস ফোন হাতে নিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলল,” ওই হারামজাদা আবার ফোন করেছে। এই মিরাজ, তুমি একটু দেখোতো। ব্যাটাকে দুইটা ধমক দাও।”
মিরাজ উদ্দিন ভ্রু কুচকে বললেন,” কে?”
” জানি না কে। সন্ধ্যা থেকে ফোন করে বিরক্ত করছে আমাকে। ফোন ধরলেই আর কথা বলে না। আমার তো মনে হয় বদমাইশ। মহিলা মানুষের কণ্ঠ শুনেছে তাই বার-বার ফোন করছে।”
মিরাজ বললেন,” আচ্ছা দাওতো, আমি দেখি।”
বাবা-মায়ের মাঝখানে অবন্তী কোনো কথা বলতে পারল না৷ এই অবস্থায় ফোনটা সে নিতেও পারবে না। কি করা যায়? নিরুপায় হয়ে চুপচাপ ভাত গিলতে লাগল। ওইদিকে মিরাজ উদ্দিন বলছেন,” হ্যালো, কে?”
কেউ কথা বলল না। মিরাজ কঠিন ভাষায় গালি দিলেন। অবন্তীর কান গরম হয়ে উঠল৷ গলায় ভাত আটকে গেল। এদিকে নিশান্তও সাথে সাথে ফোন কেটে দিল। মিরাজ চোয়াল শক্ত করে বলল,” অসভ্য! নিশ্চয়ই কোনো দালালের কাজ। ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখো।
অবন্তী ফ্যাকাশে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” দালাল কি বাবা?”
বিলকিস চোখ গরম করে বলল,” তোর জানতে হবে না। চুপচাপ ভাত খা।”
রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল তখন অবন্তী চুপিসারে উঠে মোবাইল নিয়ে বারান্দায় চলে এলো। মায়ের ফোন থেকেই নিশান্তর নাম্বারে মিসডকল দিল। প্রায় সাথে সাথেই কলব্যাক করল নিশান্ত।
” হ্যালো।”
অবন্তীর সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। এতোক্ষণ পর কণ্ঠটা শুনতে পেয়ে অতিরিক্ত উত্তেজনায় কিছুই বলতে পারল না। নিশান্তই আবার বলল,” অবন্তী, কেমন আছো?”
অবন্তী একটা প্রগাঢ় নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,” আই এম স্যরি। বাবা তখন ওইভাবে তোমাকে বলল… আমার খুব খারাপ লেগেছে।”
” তুমি কেন স্যরি বলছো? আমিই বোকামি করেছি। বার-বার ফোন করা উচিৎ হয়নি। আন্টি-আঙ্কেল হয়তো সন্দেহ করেছে। আসলে আমি অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। আর তুমি ফোনের কাছে থাকো না কেন?”
” এইটা কি আমার ফোন যে আমি সারাক্ষণ ফোনের কাছে বসে থাকব? এক মিনিটের জন্য মোবাইল হাতে নিলেও মা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়।”
নিশান্ত প্রবল আক্ষেপের স্বরে বলল,” আমার শাশুড়ী মা এতো কনজার্ভেটিভ কেন বলোতো?”
লজ্জায় অবন্তী কান গরম হলো। গাল লালচে হলো। নিশান্ত এখন থেকেই শাশুড়ী মা ডাকা শুরু করেছে! হায়রে, এইসব যদি মা কখনও শুনে ফেলে তাহলে কি হবে? হার্ট ফেইল না করলেই হলো। অবন্তী চাপা স্বরে হাসছিল। নিশান্ত অবাক হয়ে বলল,” হাসছ কেন?”
” কিছু না, এমনি। তুমি কি করছো?”
” তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে তোমাকে শুধু মিস করছি। আচ্ছা অবন্তী, তোমাদের বাসার এড্রেসটা দাওতো।”
” এড্রেস দিয়ে কি করবে? বাসায় চলে আসবে নাকি?”
” আসতেও পারি!”
অবন্তী শাসনের সুরে বলল,” এতো সাহস দেখানোর দরকার নেই। শোনো আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনে হয় এটাই আমাদের দু’জনের জন্য ভালো। ”
” কি সিদ্ধান্ত শুনি?” নিশান্ত দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। তাদের দু’জনের অবস্থানই বারান্দায়। মৃদু ঠান্ডা বাতাসে শরীর কাঁপছে। মশার কামড়ও আছে। তাও তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। অনেক সময় পর একে-অন্যের কণ্ঠ শুনতে পেরে তারা উৎফুল্ল। আকাশে ভরা পূর্ণিমা। এমন রাতকেই হয়তো স্বর্গীয় রাতের সাথে তুলনা করা যায়। অবন্তী বলতে লাগল,” এখন বিয়ের কথা বাড়িতে জানানো মানে নিজ উদ্যোগে বিপদ ডেকে আনা। কেউ মানবে না। জোর করে ডিভোর্সও করিয়ে দিতে পারে। আর যেহেতু আমার আঠারো বছর হয়নি তাই আমরা পালিয়ে গিয়েও বাঁচতে পারব না। এর চেয়ে ভালো হয় তুমি তোমার মতো থাকো। কানাডায় ফিরে যাও। তোমার লেখাপড়া শেষ করো। আমিও এখানে এইচএসসি পাশ করি, তারপর ভার্সিটিতে ভর্তি হই। তুমি যদি একবার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাও আর আমিও ম্যাচিউর হয়ে যাই তাহলে আমাদের এমনিতেও কেউ কিছু বলতে পারবে না। তখন মা-বাবা আমাদের নিষেধ করার আগে চিন্তা করবে। আর এখন জানাজানি হলে তো শিউর রিজেকশন। কেউই মানবে না। একটা বড়-সড় অশান্তি শুরু হবে। বুঝতে পারছো কি বলছি?”
নিশান্ত অস্ফূটস্বরে বলল,” হুম…”
অবন্তী বলল,” আইডিয়াটা কেমন?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিশান্ত জবাব দিল,” ভালো আইডিয়া। আসলে আমিও সকাল থেকে এসব ভাবছিলাম। কিন্তু তোমাকে বলতে চাইনি। ভয় পাচ্ছিলাম, তুমি যদি বিয়েটা নিয়ে রিগ্রেট ফীল করো!”
” আমি মোটেও রিগ্রেট ফীল করছি না নিশান্ত। বরং আমার মনে হয় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের রিলেশন সিকিউরড হয়ে গেছে।”
নিশান্ত হেসে জিজ্ঞেস করল,” সত্যিই তোমার এরকম মনে হয়?”
” অবশ্যই। কিন্তু আমার একটু ভয়-ভয়ও লাগছে।”
” ভয় কেন?”
অবন্তী মনমরা কণ্ঠে বলল,” তুমি আবার বদলে যাবে নাতো?”
নিশান্ত ভারী অবাক হয়ে বলে উঠল,” হোয়াট?”
অবন্তী মৃদু হেসে বলল,” অসম্ভব কিছু তো না। কানাডায় তোমার জন্য আমার চেয়েও কত সুন্দরী, স্মার্ট, সাদা চামড়া থাকবে, তাদের দেখে যদি তোমার মাথা ঘুরে যায়?”
” আমাকে তোমার কি মনে হয় অবন্তী? সুন্দর মেয়ে দেখলেই আমার মাথা ঘুরে যায়?”
” না… সেটা বলিনি..”
“এতো অবিশ্বাস থাকলে বাদ দাও। আমি কানাডাই যাবো না আর৷ তোমার বাসার পাশে বাসা নেই। প্রয়োজনে ঘর-জামাই থেকে যাই৷ যাতে সারাক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখতে পারো৷ কি বলো?”
অবন্তী খিলখিল করে হেসে উঠল,” ফাজলামি করছ?”
” উহুম। সিরিয়াস।”
বিলকিসের ঘুম জড়ানো কণ্ঠ ভেসে এলো,” অবন্তী, কার সাথে কথা বলিস?”
ছলাৎ করে উঠল অবন্তীর আত্মা। সে নিজের ঘরে একাই ঘুমায়। কিন্তু মাঝে মাঝে বিলিকিসও আসে তার সঙ্গে শুতে। আজ সেরকমই একটি দিন। বিলকিস অবন্তীর ঘরে ছিল বলেই বারান্দা থেকে হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়ে জেগে উঠেছে। অবন্তী ভয়ার্ত গলায় ফিসফিসিয়ে বলল, ” আচ্ছা, পরে কথা বলব। মা হয়তো জেগে উঠেছে। রাখছি।”
নিশান্ত কিছু বলার আগেই অবন্তী ফোন রেখে দিল। হতাশ হয়ে মোবাইলের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল নিশান্ত। তারপর ঘুমাতে গেল।
_________
অবন্তীর বিশ্বাসই হয় না যে সে এখন বিবাহিত। সেদিনের রাতটিকে স্বপ্ন মনে হয়। হিসাব করলে তাদের বিয়ের বয়স এখন এক সপ্তাহ। সময় কত দেরিতে যাচ্ছে। নিশান্তর সাথে খুব মাঝে মাঝে কথা হয়। মোবাইল হাতে নিয়ে রাখলে বিলকিস ধমক দেয়। আর ইদানীং সে একটু সন্দেহও শুরু করেছে। যে কারণে অবন্তী মায়ের সামনে ফোন ধরতেই পারে না৷ এদিকে নিশান্ত খুব যন্ত্রণা করে। কিছুদিনের মধ্যেই নাকি তারা কানাডা চলে যাবে। তাই শেষবারের মতো অবন্তীর সঙ্গে দেখা করতে চায় সে। কিন্তু অবন্তীর তো এখন স্কুল-কলেজ নেই। বাসা থেকে বের হওয়াও নিষেধ। বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতেও অবন্তীকে যেতে দেওয়া হয় না। আজ অবশ্য অবন্তীরা একটা মৃত্যুবার্ষিকীতে এসেছে। সকালেই নিশান্তকে সে জানিয়ে দিয়েছিল সারাদিন যাতে ফোন না করে। কারণ আজ মোবাইল সারাক্ষণ মায়ের কাছেই থাকবে। আজকে সারাদিন একবারও কথা হবে না শুনে নিশান্ত মনখারাপ করেছে। তখন অবন্তী বলেছে, সুযোগ পেলেই সে ফোন করবে। মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বনানীর একটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে। তারা বেশ বড়লোক। যার মৃত্যুবার্ষিকী হচ্ছে সে অবন্তীর বাবার বন্ধুর বাবা। অবন্তীরা সবাই সাদা, হালকা রঙের পোশাক পরে এসেছে। অবন্তীর গায়ে সম্পূর্ণ সাদা একটা সেলোয়ার-কামিজ। তাকে সাদা রঙে ভীষণ মানায়। বাবার বন্ধু-পত্নী অবন্তীকে দেখেই বলল,” মেয়ে তো বড় হয়ে যাচ্ছে মিরাজ ভাই। আমি কি আমার ছেলের জন্য প্রি-বুকিং দিয়ে রাখতে পারি?”
এই কথা শুনে কান জ্বলে উঠল অবন্তীর। কিন্তু বাবার দিকে তাকাতেই দেখল তিনি বত্রিশ পাটি বের করে হু-হুা শব্দে হাসছেন। মায়েরও একই অবস্থা। রাগে শরীর কাঁপতে লাগল অবন্তীর। তারা যে ছেলেটির কথা বলছে সে এক নাম্বারের মারকুটে। চেহারায় গুণ্ডা-গুণ্ডা ভাব। দেখলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাছাড়া মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কেউ বুঝি বিবাহ নিয়ে আলোচনা করে? ছি, ছি! দুপুরে খাওয়ার সময় বিলকিস ইচ্ছে করেই অবন্তীকে ছাদে পাঠিয়ে দিল। সেখানে সব বাচ্চারা আছে। অবন্তী জানে না ছাদ কয়তলায়। তখন সুন্দর দেখতে একটা ছেলে এসে বলল,” আমার সাথে চলো।”
অবন্তী ছেলেটিকে দেখে বিস্মিত হলো। যার সাথে কিছুক্ষণ আগেই বাবা-মা তার বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করে ফেলছিল এটাই সেই ছেলে। বিলকিস হাসিমুখে বলল,” যা, নীরবের সাথে যা।”
অবন্তীর একবার বলতে ইচ্ছে করল,” মা আমি ছাদে যাবো না। এখানেই থাকব।”
কিন্তু নীরবের মা-ও তখন হাসিমুখে তাকিয়ে ছিল৷ তাই অবন্তী আর কিছু বলতে পারল না। ছাদে উঠে অবন্তী একটা চমক খেল। তাকে যে টেবিলে বসানো হয়েছে সেখানে খাবার সার্ভ করছে নিশান্ত। অবন্তীর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সে কি দিনে-দুপুরে স্বপ্ন দেখছে? অবন্তীকে হতভম্ব দেখে নিশান্ত আবার চোখও মারল। অবন্তীর কাশি উঠে গেল। পাশ থেকে নীরব বলল,” পানি খাও অবন্তী।”
অবন্তী নীরবের হাত থেকে পানি নিচ্ছে না দেখে নিশান্তই তাকে পানি এগিয়ে দিল। সেই পানি খেয়ে অবন্তী শান্ত হলো। এতোক্ষণে বুঝতে পারল সে আসলে স্বপ্ন দেখছে না। আসলেই নিশান্ত তার সামনে দাঁড়িয়ে। সকালে নিশান্ত এই বাড়ির ঠিকানাও জিজ্ঞেস করেছিল। এখন মনে পড়েছে অবন্তীর। সে ভেবেছিল হয়তো এমনি, নিশান্ত যে এভাবে এসে সারপ্রাইজ দিবে তা অবন্তী কল্পনাও করেনি। আনন্দে তার চোখে পানি জমে উঠল। বুক কাঁপতে লাগল৷ মুখে অটোমেটিক হাসি এসে গেল।
চলবে
#অন্তহীন_বসন্ত ~২৪
লিখা- Sidratul Muntaz
টুকটুকে লাল রঙের পোলো টি-শার্টে নিশান্তকে এতো ভালো দেখাচ্ছে! সে এমনিতে শ্যামলা কিন্তু আজ কোনো এক বিচিত্র কারণে তাকে আজ ফরসা দেখাচ্ছে। ঠোঁটে প্রাণবন্ত হাসি। অবন্তীর বয়সী টিন-এইজ মেয়েরা কারণে-অকারণে নিশান্তর সাথে ফ্লার্ট করার তালে আছে। কেউ বলছে কোল্ড্রিংকস ঢেলে দিতে কেউ বলছে মাংস এনে দিতে আবার কেউ ইচ্ছাকৃতই পানির গ্লাস খালি করে নিশান্তকে ডেকে বলছে পানি ঢেলে দিতে। আর নিশান্তকে দেখে মনে হচ্ছে সে এইসবে খুবই মজা পাচ্ছে। লম্বা দেখতে একটা মেয়ে বলল,” ভাইয়া, আমাকে একটু মাংস দিন না।”
নিশান্ত চামচে করে মাংস দিতে গেলেই মেয়েটি চোখ বড় করে বলল,” এতো বেশি না, আরেকটু কম।”
নিশান্ত আরেকটু কমিয়ে নিল। তখন সাথে সাথেই মেয়েটি আবার বলল,” এতো কমও না, আর একটু বেশি।”
নিশান্ত আঁড়চোখে দেখল অবন্তী কটমট করে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। আলতো হেসে নিশান্ত বলল,” এতো কনফিউশন থাকলে আপনিই নিয়ে নিন।”
” কি বলছেন ভাইয়া? আমি নিতে পারলে কি আপনাকে ডাকতাম? আচ্ছা,আপনার নামটা জানা যাবে?”
মেয়েটি ঘাড় হেলিয়ে তাকাল। নিশান্ত বলল,” কেন?”
পাশের মেয়েটি বলল,” নাম জানা থাকলে ডাকতে সুবিধা হতো সেইজন্য।”
এই কথা বলে সে লম্বা মেয়েটিকে চোখ মারল। তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা মজা করছে। নিশান্ত হেসে বলল,” আমাকে সবাই ভাইয়া বলেই ডাকে। ধরে নিন আমার নামটাই ভাইয়া। ”
চশমা অলা একটা মেয়ে বলল,” ঠিকাছে ভাইয়া, নাম না বললেন, অন্তত ফোন নাম্বারটা বলেন!”
তারপর সবাই সমস্বরে খিলখিল করে হেসে উঠল। নিশান্ত দেখল অবন্তী এবার রীতিমতো রাগে ফুঁসছে। হঠাৎ সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমার কাছে নাম্বার আছে। কয়জনের লাগবে বলো? আমি এখুনি দিচ্ছি।”
সবাই অবাক হয়ে তাকাল। নিশান্ত অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসল। অবন্তী উঠে এসে সবার সামনে নিশান্তর নাম্বার মুখস্ত আওড়ে গেল। তারপর বলল,” নোট করেছে তো সবাই? নাকি আরেকবার বলতে হবে?”
মেয়েদের মধ্যে একজন বলল,” তুমি কিভাবে উনার নাম্বার জানো?”
অবন্তী এবার নিশান্তর হাত ধরে সগৌরবে বলল,” আমার বয়ফ্রেন্ডের নাম্বার আমি না জানলে আর কে জানবে?”
সবাই হতভম্ব। অবন্তী বলল,” চলো জান।”
এই কথা বলে সবার সামনে থেকে নিশান্তকে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। যেন সে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছাদ থেকে বেরিয়ে তারা সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়াল৷নিশান্ত শুধু হাসছে আর হাসছে। এদিকে ঈর্ষায় অবন্তীর চোখ ধিকধিক করে জ্বলছে, নাকের পাটা ফুলে লাল হয়ে গেছে। সে কোমরে হাত রেখে ক্রোধসিক্ত কণ্ঠে বলল,” খুব মজা লাগছে তাই না? কে বলেছিল ওয়েটার সেজে এতো ঢং করতে? ”
নিশান্ত হাসতে হাসতে বলল,” ঢং না করলে তো এই মজাটা মিস হয়ে যেতো। ইট ওয়াজ রিয়েলি হিলারিয়াস।”
” শাট আপ। একদম হাসবে না তুমি। আমার ঘুঁষি খাবে এখন। এক ঘুঁষিতে এই সুন্দর থোবড়া ভচকে দিবো একদম।”
নিশান্ত হালকা ঝুঁকে এসে অভিযোগের স্বরে বলল,” শুধু ঘুঁষিই দিবে? আর কিছু না?”
অবন্তী লজ্জা পেয়ে বলল,” সরো।”
তারপর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,” দিতাম, যদি তুমি মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট না করতে।”
” আমি কখন ফ্লার্ট করলাম? ওরাই তো আমার সঙ্গে করল।”
” আর তুমি ধোঁয়া তুলসীপাতা তাই না? কি দরকার ছিল আমাদের টেবিলে আসার? যেই টেবিলে ছেলেরা ছিল সেখানে যেতে পারলে না?”
” তোমাকে দেখতেই এসেছি। তাহলে অন্য জায়গায় কেন যাব? যেখানে তুমি ছিলে সেখানেই তো ছিলাম।”
এই কথা বলে নিশান্ত অবন্তী কোমরে হাত রাখল। অবন্তী আতঙ্কিত স্বরে বলল,” বিহেইভ! কেউ দেখলে কি ভাববে?”
” একটু আগে তুমিই নিজমুখে ঘোষণা দিলে। আচ্ছা, কেউ আবার নিচে গিয়ে বলে দেবে না তো?”
অবন্তী জীভ কেটে বলল,” আমি তো এই কথা চিন্তাই করিনি। মেয়েগুলোর উপর এতো রাগ উঠছিল! নীরব গিয়ে যদি মাকে বলে দেয়!”
” অস্বীকার করে দিও। সে তো আর আমার নাম জানে না।”
অবন্তী ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,” তবুও… মা খুব চালাক। যদি বুঝে ফেলে?”
” এটা বুঝবে না। কেউ দেখার আগেই আমি এখান থেকে চলে যাব। শোনো বাই দ্যা ওয়ে, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ”
” তুমিই তো আমার জন্য বড় সারপ্রাইজ। আবার কি সারপ্রাইজ?”
নিশান্ত হেসে এক চোখ টিপে বলল,” আরও একটা সারপ্রাইজ। চোখ বন্ধ করো।”
অবন্তী চোখ বন্ধ করল। নিশান্ত পকেট থেকে বের করে অবন্তীর হাতে একটা নতুন ফোনের বাক্স তুলে দিল। চোখ খুলে ফোনের বক্স দেখে অবন্তী অবাক। বিস্মিত সুরে প্রশ্ন করল,” এটা কি?”
” গিফট। তোমার সাথে কথা বলতে অনেক অসুবিধা হয়। এখন থেকে আর হবে না।”
” তুমি কি পাগল হয়েছো? এতো দামী ফোন আমি রাখব কিভাবে? আর মা দেখে ফেললে?”
” লুকিয়ে রাখতে হবে।”
অবন্তী মুখ মলিন করে বলল,” অসম্ভব। আমি এটা নিতে পারব না। স্যরি।”
সে দ্রুত নিশান্তকে বক্সটা ফিরিয়ে দিল। নিশান্ত বলল,” কেন?
অবন্তী মাথা নিচু করে বলল,” রাখার মতো কোনো জিনিস হলে অবশ্যই রাখতাম। কিন্তু এটা রাখার মতো কোনো জিনিস না।”
” কিন্তু এটা তো দরকারী জিনিস। দেখো অবন্তী, কানাডায় চলে গেলে তো আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলতে পারব না। তখন ইন্টারনেট লাগবে। আর তোমার কাছে যদি একটা ফোন না থাকে তুমি কিভাবে আমার সাথে কন্টাক্ট করবে? বিদেশী নাম্বার থেকে ফোন করলে আন্টি সন্দেহ করবে না?”
অবন্তী চুপ করে রইল। নিশান্ত অবন্তীর কাঁধ চেপে ধরে বলল,” প্লিজ, অন্তত আমার কথা চিন্তা করো। আমি তোমার সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকব?”
” তবুও আমি এই ফোন নিতে পারব না। যদি কখনও মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাই তাহলে অনেক বাজে ব্যাপার হবে। তাছাড়া বাবা বলেছিল যদি আমি ভালো রেজাল্ট করি তাহলে আমাকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিবে৷ তখন আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করব।”
” এতোদিন কি তাহলে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে?আর ধরো যদি বাই চান্স, তোমার বাবা ফোন না কিনে দেয় তখন কি হবে?”
” বাবা আমাকে প্রমিস করেছিল। অবশ্যই ফোন কিনে দিবে।”
” তার মানে তুমি আমার ফোন রাখবে না?”
অবন্তী কথা বলল না। নিশান্ত অবন্তীর কোমর ধরে কাছে টেনে আনল। অবন্তী আড়ষ্ট হয়ে গেল। এখানে খুব বেশি মানুষ নেই। দুই-একজন উঠা-নামা করছে শুধু। ভাগ্যিস এরা কেউই অবন্তীকে চেনে না। নিশান্ত গম্ভীর গলায় বলল,
“কি প্রবলেম তোমার? আমি কি তোমার কেউ না? সামান্য একটা ফোনও কি আমার থেকে নিতে পারবে না তুমি?”
” আমাকে ভুল বুঝো না। কিন্তু এই ফোন নিলে আমাকে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে। আর মা যেকোনো মুহূর্তে বুঝে ফেলবে। আমি চাই না…”
নিশান্ত অবন্তীর ঠোঁটে আঙুল রেখে থামিয়ে দিয়ে বলল,” কোনো কথা না। আমি বলেছি মানে এটা তোমাকে নিতেই হবে। নাহলে আমি এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যাব। আর তোমার সাথে কোনো কথা বলব না।”
অবন্তী চোখ বড় করে বলল,” তুমি সত্যি এইরকম করতে পারবে?”
” দেখতে চাও করতে পারব কি-না?”
অবন্তী হাঁ করে তাকিয়ে রইল। নিশান্ত সত্যি সত্যি নেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ ভূতগ্রস্তের মতো দাঁড়িয়ে থেকে অবন্তী দ্রুত তার পেছনে ছুটল। নিশান্তর হাত ধরে তাকে থামিয়ে বলল,” আচ্ছা, আচ্ছা, স্যরি।”
নিশান্ত থামল। অবন্তী হাঁফ ধরা কণ্ঠে বলল,” উফ বাবা, ঠিকাছে আমি ফোন নিবো। এবার খুশি?”
নিশান্ত অবন্তীর হাতে ফোন বক্স তুলে দিয়ে বলল,” হুম। খুব খুশি।”
অবন্তী আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কি-না। তারা ছাদ থেকে অনেকটা দূরে। সিঁড়িঘরের জানালার কাছে। অবন্তী ঢোক গিলে লাজুক কণ্ঠে বলল,” কিস মি।”
নিশান্ত চমকে উঠল,” হোয়াট?”
অবন্তী রাগী স্বরে বলল,” বাংলায় বলতে হবে? কিস করো আমাকে!”
” এইখানে?”
” তাহলে কি বেডরুমে যাব? পাগল!”
” কিন্তু এইখানে কিভাবে?”
অবন্তী ভাব নিয়ে বলল,” নাটক কোরো না। আমি জানি তুমি এটাই চাইছো৷ নাহলে বার-বার আমার ঠোঁটের দিকে তাকাচ্ছো কেন? সব বুঝি আমি।”
নিশান্ত অবন্তীর কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,” এমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং বউই তো চেয়েছিলাম আমি। না বলতেই সব বুঝে ফেলবে।”
অবন্তী হেসে ফেলল। নিশান্ত গাঢ় করে চুমু দিল অবন্তীর কোমল ঠোঁটে। দুই হাতের মুঠোয় নিশান্তর টি-শার্ট খামচে ধরল অবন্তী। সুখের আবেশে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল নোনাজল। হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনেই সচকিত হলো সে। নিশান্তকে থামার জন্য তাগাদা দিতে লাগল৷ কিন্তু নিশান্ত থামছেই না। অবন্তী দেখল সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসছে বিলকিস। সে মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারছে না। আর না পারছে নিজেকে ছাড়াতে। হঠাৎ কিছু বুঝতে না পেরে ফট করে নিশান্তর গালে চড় দিল অবন্তী। নিশান্ত হতভম্ব হয়ে গেল। অবন্তী দৌড়ে বিলকিসের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
হঠাৎ বিলকিসকে দেখতে পেয়ে নিশান্ত আরও হকচকিয়ে গেল। অবন্তী ভয়ে কাঁদতে লাগল। বিলকিস অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিশান্তর দিকে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করল।
চলবে