অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-১৬+১৭

0
714

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓 [২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ১৬

আচম্বিতে দরজা নক করাতে ভরকে গেল ইশরা। ফাঁকা অন্ধকার রুমে দু’জনকে একসাথে দেখলে কি হতে পারে, তা ভাবলেই গাঁ শিউরে উঠছে তার। পিছিয়ে গেল ইশরা। আয়ানের দিকে এগিয়ে গেল। আয়ান পাত্তা দিলো না। ইশরার পাশ কাটিয়ে দরজা খুলে নিল। দরজা খুলে স্বল্প ফাঁক করে মাথা হেলিয়ে দিল। অপর পাশের ছেলেটি একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল আয়ানের দিকে। মাথা চুলকে ইতোহস্ত বোধ নিয়ে বলল..

— “ভাই, সবজি বার্গার পাই নাই। চিকেন বার্গার আর কোক নিয়ে এসেছি। ”

আয়ান হাত বাড়িয়ে প্যাকেট-টা নিজের হাতে নিয়ে স্মিত হাঁসলো। স্বল্প বয়সী ছেলেটা খুচরো টাকা এগিয়ে দিলো, নিল না আয়ান। বলল.. — “রেখে দে তোর কাছে!”

— “না ভাই লাগবে না!”
আর কিছু বলার আগে ক্রুব্ধ লোচনে তাকালো ছেলেটার দিকে আয়ান। ফিসফিসিয়ে বলল..– “তোকে যেতে বলেছি, সো গো..

মুহুর্তের মাঝেই ছেলেটি শূন্যতায় হারিয়ে গেল। বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকলো আয়ান। খাবারগুলো বেঞ্চির উপরে রেখে বন্ধ জানালা গুলো খুলে দিল। সাথে সাথে পশ্চিমা হাওয়া প্রবেশ করলো ক্লাসে। অন্ধকারে আবৃত শুনশান নিরিবিলি রুমটি ভরে উঠলো আলোর খেলায়। পূর্বের জায়গায় বসে পড়লো আয়ান। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে গেমস খেলতে মনোযোগ দিলো। বিরক্তিতে ছেড়ে গেল ইশরার মুখশ্রী। নাক ফুলিয়ে চলেছে। নাক ফুলালে দাঁতের সাথে দাঁতের অদ্ভুত ঘর্ষণ হয়। গাল তুলনামূলক একটু ফুলে যায়। কপাল কুঁচকে যায়, সাথে ভ্রু সরু হয়ে উঠে। বেঞ্চির দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল..

— “ইউ হেভ অ্যানি আইডিয়া, হাউ মাস হ্যাজ এনার্জি ইজ লস।”

আড়-চোখে ইশরার দিকে তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল..– “কথায় কথায় এতো নাক ফুলাও কেন তুমি? বোঁচা নাকটা ফোলালে তোমাকে বেলুনের মতো লাগে। যতো ইচ্ছা ফুলিয়ে ঢোল করে ফেলো, খাবার শেষ করার আগে তুমি এখান থেকে বের হতে পারবে না। ইজ ফাইনাল।”

আবার সেই তুমি সম্বোধন ভেতরে স্নিগ্ধ হাওয়া ছড়িয়ে দিলো ইশরার। জ্বালিয়ে দিলো সেদিনের ক্ষতগুলো।তবুও ইশরার হারার পাত্রী নয়। আয়ানের থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসে রইল সে। জেদ ধরে আছে, খাবে না মানে খাবে না। খাবার এনে জোর করে মুখে পুড়ে দিবে। সেও ফেলে দিবো। কিন্তু তেমন কিছু করল না আয়ান। প্যাকেট খুলে খাবার বের করে রাখল। খাবার দেখে পেটের ভেতরে মোচর দিয়ে উঠলো ইশরা। যতোই জেদ ধরুক। কাল রাত থেকে খায়নি। দৃষ্টি সরিয়ে পায়ের দিকে বন্দী করে নিল। তাকাবে না সেদিকে।

আয়ান বার্গার বের করে স্বনান্দে খেতে লাগল। মাঝে মাঝে খাবারের প্রশংসা করছে। যাতে ইশরা আরো কাবু হয়ে আসছে। অর্ধেকটা বার্গার খেয়ে কোক হার্ফ বোতল খেয়ে তিপ্তিকর ঢেকুর তুললো। ইশরার দিকে তাকিয়ে হাই তুলে বলল..

— “এখনো অর্ধেক আছে, চাইলে খেতে পারে! না-হলে পরে তাও পাবে না।”

পরক্ষণেই হামলে পড়লো খাবারের উপর। ইশরা নিজেকে সংযত করতে ব্যর্থ হলো এবার। আয়ানের হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিজের মুখে মুড়ে নিল। বিদ্রুপ হাসি ফুটে উঠলো আয়ানের মুখে। শার্টের কলার টেনে ঠিক করে, শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল.. — “ডং! আগে এলেই পারতি।” বড় বড় পা ফেলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল আয়ান। আয়ানের কথা কর্ণপাত করলো না ইশরা। নিজের মতো খাওয়া চালিয়ে যেতে লাগলো।

_________________
অজানা কারণে মন খারাপ ইশরার। ভার্সিটি থেকে ফিরেই কিছুক্ষণ নিস্প্রাণ হয়ে বসে ছিল সে। মন ভালো করতে বেলকেনিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। এতেও মন ভালো হলো না তার। দিশেহারা হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো শাওয়ার নিতে। এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে এলো ঘন্টা খানেক পর। মাথা ধরে আছে তার। পড়নের বাথরোব-টা না পাল্টেই শুয়ে পড়লো বেডের মাঝ বরাবর। অতি দ্রুত নিদ্রার অতলে তলিয়ে গেল ইশরা।
.
.
রাত তখন গভীর। কুকুরের অস্পষ্ট ডাক শোনা যাচ্ছে।সময় তখন রাতের প্রথম প্রহর। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ইশরা। অপ্রস্তুত স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে কেঁপে উঠছে সে। সেই ছোঁয়া অতি মাদকতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কখনো কখনো অপর পাশের মানুষটির শ্বাস প্রশ্বাস নিজের শরীরে আঁচড়ে পড়ছে, সেটা অনুভব করতে পারছে। নিভু নিভু চোখ খুলে তাকালো সে। আচম্বিতে নিজের চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখে নিদ্রা উবে গেল ইশরার। ফাল মেরে উঠে পড়লো সে। লোচন দুহাতে পরিষ্কার করে তাকালো। কিন্তু না, সেটা তার দৃষ্টিভোম নয়। আয়ান তার দিকে খানিকটা ঝুকে আছে। হাত দুটো তার দুপাশে বন্দী। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চেয়ে রইল সেই মানবটির দিকে। আয়ানের ভেতরের উষ্ণ গরম ফুঁ দিতেই নয়ন বেষ্টিত হয়ে গেল অনুভুতিতে। দু’হাতে শরীর ঢেকে নিলো অতিদ্রুত।

কদাচিৎ হাসলো আয়ান। ঈষৎ ঝুঁকে গেল ইশরার নিমিত্তে। চুলের মাঝে বন্দী টাওয়াল খুলে নিল। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল..

— “এতো প্যাকেট হওয়ার দরকার নেই। যা দেখার দেখে নিয়েছি একটু আগে। যখন তোর জামা কাপড় পাল্টে দিয়েছিলাম।”

ফট করে দৃষ্টি ঘুড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো ইশরা। তাজ্জব বনে গেল সে। সত্যি তার শরীরে গ্ৰে রঙের টি শার্ট আর ব্ল্যাক প্ল্যাজু। উঠে বসার চেষ্টা করতেই আয়ান শুয়ে পড়লো তার চুলের ভাঁজে। উঠে বসার আগেই চুলে টান পড়লো তার। পুনরায় শুয়ে পড়লো। নাক ফুলিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান মুখশ্রী গহীনে নিয়ে গেল কেশের ভাঁজের। চেপে ধরলো ইশরার নাক। ভ্রু কুঁচকে বলল..

— “এতো ইভার রিয়েক্ট করার কি আছে? আমিই তো- তোর হাজবেন্ড। সো তোর সবকিছু দেখার রাইট আমার আছে।”

তৃক্ষ্ম দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো ইশরা। আঙুল তুলে ইউ বলার আগেই অধর ছুয়ে দিলো সেই আঙুলে আয়ান। ঘামার্ত শার্টটা খুলে ফেললো। শুঁকে বলল..

— “এইসব বাদ দে! উঠেই যখন গেছিস, দেখ আঙ্কেলের অব্যবহৃত কিছু পাস কি-না।”

বিন্দু পরিমাণ নড়তে দেখা গেল না ইশরাকে। আয়েশ করে হাই তুলে চোখ বন্ধ করে নিল। আয়ান ফোন বের করলো। ফোনের কোণ দিয়ে কপালের কিনারায় স্লাইড করতে করতে বলল..

— “একটু আগে যেই স্বরণীয় মুহূর্তটা আমি দেখেছি, সেটা ফোনেও ভিডিও করে রেখেছি। যাতে সবাই দেখতে পারে। তাছাড়া তুই জামা কাপড় না আনলেও সমস্যা নেই। বস্ত্রবিহীন না-হয় বউয়ের সামনে ঘোড়াঘুড়ি করব।”

লজ্জায় কর্ণ উষ্ণ হয়ে এলো ইশরার। আয়ান দেখলো না। সে নিজের মতো ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। নাক ছিচকালো ইশরার। ফোঁস ফোঁস করতে করতে নামলো নিচে। চোখ আটকে গেল ডাক্তারি রিপোর্টের মাঝে। কার আবার কি হলো। ইশরা চমকালো বটে তবে পাত্তা দিলো না। বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

ডাইনিং এ আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে গেল সেদিকে। তমোনা খাবার বারছে। সংকোচে পড়লো ইশরা। কৌতূহলী কন্ঠে বলল..

— “মা; এতো রাতে ঘুম রেখে কি করছো এইসব?”

তমোনা ইশরার দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল..

— “বিয়ের পর প্রথম জামাই এসেছে! ভালো মন্দ না খাওয়ালে চলে। তেমন কিছু করতে পারলাম কই? গরুর মাংস, মুরগির মাংস আর ডিমের কোরমা। কালকে আরো ব্যবস্থা করবো। তুইও একটু সাহায্য কর..

ঠোঁট উল্টে গেল ইশরার। গরু, মুরগি, ডিম তাও নাকি কম। ইশরার জন্য কখনো এতোসব খাবার রাঁধে নি অথচ বাইরের একটা ছেলের জন্য রাঁধছে। বিরক্তিকর কন্ঠে বলল..

— “মা আয়ান এর আগেও অনেকবার এসেছে।”

— “জামাই হিসেবে তো আসেনি!”

দমে গেল ইশরা। ভেংচি কাটলো সে। সূচালো কন্ঠে বলল..

— “এখন এই কাজ রেখে তোমার জামাইয়ের জন্য একটা ছেঁড়া জামা থাকলে দাও, পড়ে রাস্তার মোড়ে বাটি নিয়ে বসবে।”

— “ছিঃ, এইসব কোন ধরনের কথা ইশু। প্রোপার সম্মান করতে শেখ!”
তমোনা রুমের দিকে এগিয়ে গেল। গ্ৰে রঙের ফতুয়া আর লুঙ্গি এনে ইশরার হাতে ধরিয়ে দিলো। ইশরাও বিনা বাক্যেয় লুঙ্গি আর ফতুয়া নিয়ে রুমে চলে এলো। ততক্ষণে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে আয়ান। আয়ানের লোমকূপে জমে আছে বিন্দু বিন্দু জলকণা। আজ ইশরার কাছে আয়ানকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম পুরুষ লাগছে। আঁখিযুগল আটকে গেল আয়ানের আঁখিতে। সাথে সাথে নিম্নোক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে।

ইশরার সোজাসুজি দাঁড়ালো আয়ান নামক যুবকটি। ইশরার শুষ্ক হাতটা নিজের জল জমা বুকের বাম পাঁজরে রাখল। কেঁপে উঠলো ইশরা। তট জলদি হাত সরিয়ে নিল। আয়ান বাধা মানল না। ইশরার দুহাত নিয়ে কাঁপল ডান্স শুরু করে দিল। ভেজা ভেজা ঠোঁট নাড়িয়ে গান গাইলো মৃদু স্বরে। নাচ শেষ করে কোলে তুলে নিলো ইশরাকে। ঢিলে হয়ে এলো পড়নের টাওয়াল। শব্দহীন খসে পড়লো সেটা। সামনে রক্ষিত আয়নাতে দৃষ্টিগোচর হলো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু। মস্তিষ্ক অচল হয়ে উঠলো ইশরার। হাত থেকে খসে পড়লো জামা কাপড় গুলো।

ইশরাকে ফেলে দিল আয়ান। দ্রুত টাওয়াল তুলে ঠিক করে নিল। ভ্রু কুঁচকালো ইশরা। বাঁকা হেসে বলল..

— “ঢেকে লাভ নেই! যা দেখার দেখে নিয়েছি। পুরো জাদুঘরে সংরক্ষিত করা যাবে।”

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

#অন্যরকম_ভালোবাসা 💓[২]
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ১৭

— “ঢেকে লাভ নেই। যা দেখার দেখে নিয়েছি। পুরো জাদুঘরে সংরক্ষিত করা যাবে। (মাথায় হাত দিয়ে আবার,) ইস্, ফোনের কথা মনে ছিল না, নাহলে ফোনে ছবি তুলে রাখতাম ভাবা যায়।”

অস্বস্তিতে পড়ে গেল আয়ান। আয়ান ঈষৎ ঝুঁকে প্রয়োজনীয় জামা কাপড় নিয়ে পরিধান করে নিল। ডিলেঢালা ফতুয়াটা নিয়ে নড়াচড়া করলো কিছুক্ষণ। চুলগুলো পেছনে হেলিয়ে দিয়ে বলল..

— “যেটা দেখার দেখেছিস, তোর টা আমি দেখেছি আর আমার টা তুই দেখেছিলাম। এতে সাহসিকতার কিছু হয়নি।”

বিরাগী হলো ইশরা। ছেলেটা ভাঙবে তবুও মচকাবে না। একটু লজ্জা পেলে কি এমন অশুদ্ধ হয়ে যেত। মুখ বাঁকিয়ে নিলো সে। মুহুর্তেই কোমড়ে ব্যাথা অনুভব করলো। কিছু সময় পূর্বে আয়ান যে তাকে ফেলে দিয়েছে। সেই কথাটা বেমালুম ভুলে গেছিলো সে। কোমড়ে হাত দিয়ে স্লাইড করলো।
এগিয়ে এলো আয়ান। একহাটু ভাঁজ করে ইশরার পাশে বসলো। নিজের ঠান্ডা শিতল হাতটা গলিয়ে দিলো টি শার্টের ভেতর দিয়ে উন্মুক্ত কোমরে। শীতল হাতের স্পর্শে মিইরে গেল ইশরা। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। পরক্ষণেই নিজেকে শূন্যতায় আবিষ্কার করলো ইশরা। আয়ান তাকে নিজের কোলে তুলে নিয়েছে। বেডের মাঝ বরাবর বসিয়ে দিল। কাবার্ডের কয়েকটা ড্রয়ার খুঁজে খুঁজে নিজে এলো মুভ। তর্জনীতে নিল স্বল্প পরিমাণ। অন্যহাতে খানিকটা সরিয়ে নিল টি শার্টের নিম্ন অংশ। ধীরে ধীরে লাগিয়ে দিতে লাগল ব্যাথার্ত স্থানে। একদিকে আয়ানের স্পর্শগুলো অন্যদিকে ব্যাথা সহ্য করতে সক্ষম হলো না সে। চাড়া দিয়ে উঠলো পূর্বের ব্যাথা। হাতের সর্বশক্তি প্রয়োগ করলো কাঁধে। ফতুয়ার মোটা কাপড় বেঁধ করে ভেতরের কিছুটা নখের দাগ পড়লো। হাত সরিয়ে বাকিটা নিজের পড়নের ফতুয়া সরিয়ে কাঁধে দিয়ে নিলো। পূর্বের স্থানে রেখে এলো মুভ। ইশরার পাশে বসে হাত টেনে নিজের কোলে তুলে নিলো আয়ান। নিজের কাঁধে মাথা রাখল ইশরার। হাতের আঙুলের মুঠোয় ইশরার আঙুলগুলো নিয়ে নিল। গভীর ভাবে অধর ছুয়ে দিল তাতে। অতঃপর অন্যহাত চুলের গহিনে নিয়ে নিল। ঠোঁটের কাছাকাছি এনে সেখানে সন্তর্পণে ছুঁয়ে দিল। আবেগ উফুল্ল কন্ঠে বলল..

— “ইশু, এই ইশুপাখি। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তনুর বিয়ের আগেই তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে যাবো। তার আগে আমার ব্যর্থতা-টা সফলতায় বদলে নেই। পারবে না, সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।”

মাথা তুলে আয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করলো ইশরা। মৃদু ধাক্কা খেলে আয়ানের চিবুকে। নড়লো না সে। মাথায় তাল গোল পাকিয়ে গেল তার। আয়ানের ব্যর্থতা, তনুর বিয়ের। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে বলল.. — “তনু তো দুয়ানকে..
ইশরার কথা কেড়ে নিয়ে আয়ান বলল..

— “ভালোবাসে তাই তো..

মৃদু নাড়িয়ে সায় দিলো ইশরা। দুহাতের বাঁধনে বেষ্টিত করে নিলো ইশরাকে। বুকে মুড়িয়ে দম বন্ধ করে বলল..

— “আঙ্কেল নিজে দুয়ানের জন্য তনয়াকে পছন্দ করেছেন। দিন দুই পরে এসে দেখে যাবেন। তখন তোরাও যাবি।”

নিজের শরীরের সমস্ত ভড় তখন ছেড়ে দিয়েছে আয়ানের উপর। নয়ন গ্ৰথণ করে সেই মুহূর্ত-টাকে অনুভব করতে ব্যস্ত ইশরা। সেই মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা নেই তার। তবে তার ইচ্ছেটা পূরন হলো না। তমোনা খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হলো রুমের ভেতরে। — “খাবার নিয়ে..
বাকি শব্দগুলো উচ্চারণ করতো পারল না। লজ্জায় মিইয়ে গেল সে। আগে থেকেই মেয়ের রুমে যাতাযাত ছিলো তার। হঠাৎ আয়ান আসাতে বিপাকে পড়ে গেলেন তিনি। ভুলেই গিয়েছিলেন, তার মেয়ে এখন বিবাহিতা। সাথে তার স্বামী রয়েছে।

দু’পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। গলা খাঁকারি দিয়ে জানান দিলো তার উপস্থিতি। সাথে সাথে তড়িৎ গতিতে সরে গেল দু’জনে। নিম্ন মাথায় ভেতরে প্রবেশ করে খাবার রাখলেন টেবিলে‌। মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন..

— “তোদের দুজনের সমপরিমাণ খাবার আছে! খেয়ে নিস আর বেশী রাত জাগিস না। খেয়াল রাখিস ছেলেটার কি প্রয়োজন হয়। তোর বাবা ঘুমাচ্ছে, আমি তার কাছে যাই।”

চলে গিয়েও ফিরে এলেন তমোনা। সরু চোখে প্রবেশদ্বারের দিকে তাকিয়ে বললেন..– “দরজাটা বন্ধ করে নে”

তমোনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করলো ইশরা। লজ্জায় ভেনিস হয়ে যেতে ইচ্ছে করতে তার। শেষে কি-না মায়ের সামনে। তার ভাবনার ছেদ ঘটল আয়ানের স্পর্শে। খাবারের ট্রে বেডের উপর রেখে আয়েশ করে বেডে বসলো সে। সূচালো কন্ঠে বলল..

— “ইশু তাড়াতাড়ি নিজের হাতে খাইয়ে দে-তো। খাবার খেয়ে কম্বলের ভেতরে ঢুকে বউকে জড়িয়ে বিন্দাস একটা ঘুম দিবো।”

ভেতরে থাকা অস্বস্তি নিয়ে আয়ানকে খাওয়াতে বসলো ইশরা। প্রথম লোকমা খাবার তুলে দিতেই আয়ান ফিরিয়ে দিল। জরানো কন্ঠে বলল.. — “তুইও কিছু খাসনি, খেয়ে নে,,”।
পরেরবার মুখে নিলো আয়ান। তৃপ্তি করে পেট পুড়ে খেল সে। খাওয়ার মাঝে দুষ্টুমি করে ইশরার হাতে কামড় দিলো সে।

______________
আজকের সকালটা খুব সুন্দর। চারিদিকে রোদ ঝলমল করছে। যদিও বর্ষাকাল। মাঝে মাঝের দিন গুলোতে আকাশ ভার করে থাকে। কিন্তু আজকে একদম পরিস্কার। তবে ইশরার মন ভার করে আছে। সকালটা আর পাঁচটা দিনের চেয়ে সুন্দর হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু হলো না। নিদ্রা ভঙ্গ হওয়ার পরে সেই মানুষটিকে দেখা হয়নি তার। হয়তো ভোরেই চলে গেছে। তাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে নি। না-কি সেটা তার দুঃস্বপ্ন ছিল। মনে খারাপ করে উঠে বসলো সে। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো নিচে।

রৌদ্র জুবায়ের আর তমোনা তখন ব্রেকফাস্ট করছে। চেয়ার টেনে বসলো। আমতা আমতা করে মাকে প্রশ্ন ছুঁড়ল..

— “মা, কালকে কি আয়ান এসেছিলো!”

অবাকের ভঙ্গিতে ইশরার দিকে তাকালো তমোনা। অবাক হলো কি-না জানা নেই। বিয়ের আগে ঘুমের মাঝে কিছু ঘটলে ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক ছিলো। বললেন..

— “তুই তো নিজে আমার কাছ থেকে তোর বাবার ফতুয়া লুঙ্গি এনে আয়ানকে পড়তে দিয়েছিলি। ভুলে গেছিস..আসলে আয়ান তোর ঘুমা ভাঙাতে চায়নি তাই আমাকে যাওয়ার আগে বলে গেছে।”

তারমানে ইশরার ধারণা ভুল নয়, আয়ান এসেছিল তার কাছে। তাহলে যাওয়ার আগে কেন বলে যায়নি। রাতে একবার বিয়ে, সক্ষমতা, ব্যর্থতার কথা বলেছিলো। একটা ডাক্তারটি রিপোর্ট দেখে ছিলো। সব মাথার উপর দিয়ে চলে গেল তার। রিপোর্ট-টা খুলে দেখার কথা ভুলে গিয়েছিলো সে। মস্তিষ্ক সচল হতে লাগল তার। তাকে একবার আয়ানের বাড়িতে যেতে হবে। কোনোরকম খাবার শেষ করে বেরিয়ে গেল আয়ান-দের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
_______________

বেকুলতা ছুঁড়ে গেছে সকলের। ইশরা যেন প্রথমবার আয়ান-দের বাড়িতে এসেছে। এটা ওটা খাওয়াচ্ছে তাকে। গল্প জুড়ে দিচ্ছে। কখনো রিহু এসে আয়ানের কথা বলছে আবার তনয়া এসে তার বিয়ের কথা বলছে। তবে কারো অসুস্থতার কথা শুনেনি। বারোটার দিকে এসেছিলো আর এখন দুটো ছাড়িয়ে গেছে। এতো কিছুর পরে পৌঁছালো আয়ানের ঘরে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে। একে একে আয়ানের প্রতিটি জিনিস খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো ইশরা। কাবার্ডের জামা কাপড় অগোছালো করে ছুঁড়ে ফেলেছে সে। পেল না সেই কাঙ্খিত জিনিসটা। বাস্কেট থেকে করে কয়েকটা মেডিসিনের খোসা নজরে এলো তার। দ্রুত ব্যাগ রেখে দিল। পুনরায় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

বিরাগী হয়ে বেডে বসে পড়লো ইশরা। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। বালিশে মাথা হেলিয়ে শুয়ে পড়লো। হাত আটকে গেল বালিশের মাঝে। শক্ত এবং মোটা কিছু স্পর্শে এলো তার। স্বচোখে না দেখেই মাতাল করা স্রোত বয়ে গেল বুকের পাঁজরে। বের করার আগেই ছিনিয়ে নিল কেউ। কৌতূহলী চোখে তাকাতেই আয়ানকে নজরে এলো তার। বালিশটা উঁচু স্থানে রেখে ক্ষেপা দৃষ্টিতে তাকালো ইশরার দিকে। উঁচু গলায় বলল..

— “এটা কোন ধরনের অসভ্যেতামো ইশরা। কারো পার্মিশন ছাড়া তার জিনিসে হাত দেওয়া, নষ্ট করা।”

— “এটা তোমার একার ঘর নয়, আমারও ঘর। তাই যেখানে সেখানে হাত দেওয়ার সমস্ত অধিকার আমার রয়েছে, রাইট নাউ।”

— “ইশরা আগে তুমি এখানে থাকতে, এখন নয়। সো আউট।”

ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইল ইশরা। নড়লো না একপা সমপরিমাণ। ইশরার এমন ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলো আয়ান। হাত ধরে টেনে দরজার বাইরে বের করে দিল ইশরাকে। তুমুল শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো। পুনরায় দরজা খুলে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে বন্ধ করে দিল। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লো নিচে। হাঁটুতে হাত রেখে আবেগিত কন্ঠে বলল..

— “কেন আমার দূর্বলতায় আঘাত করো তুমি ইশরা। আমি জানি আমি অক্ষম, ব্যর্থ। কিন্তু ঠিক হওয়ার চেষ্টা করছি। মাত্র কিছুদিন অপেক্ষা করা যেত না।”

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)