অপরাজিতা পর্ব-১৫+১৬

0
301

#অপরাজিতা
#১৫তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

রাজিতার গলায় আনান হাত দিতেই রাজিতা এক ঝটকায় আনানের হাত সরিয়ে দিতে দিতে বলল,

–“কি করছেন?”

আনান কণ্ঠটা নরম করে বলল,

–“মেয়েরা নাকি উপহার পেতে পছন্দ করে। তাই তোমার জন্য…”

–“আমার জন্য উপহার এনেছেন? এতকিছু বলার পরেও আপনি ভাবলেন কি করে যে, আপনার উপহার পেয়েই আমি সব ভুলে যাবো এক্ষুনি? আর দেখি কি উপহার এনেছেন?”

বলেই রাজিতা আনানের দিকে ঘুরে ওর হাত থেকে নেকলেসটা নিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

–“আপনার কি আমাকে লোভী মেয়ে মনে হয়?”

–“না, আসলে! আমিতো শুধু তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য ছোট্ট একটা উপহার এনেছি। জানিনা তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা!”

–“আমাকে দেখে কি আপনার সত্যিই এমন মনে হয় যে, আপনাদের টাকা-পয়সার লোভে পড়ে আমি আপনাকে ভালবাসতে শুরু করেছি?”

–“আমি কি তা বলেছি?”

–“বলেননি? তাহলে তখন ওটা কি ছিলো? আমি কি এমনি-এমনি বলছি?”

–“তখন রাগে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। তাই উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি।”

–“নিজের রাগটাকে আগে কন্ট্রোল করা শিখুন। রাগ মানুষের সমস্ত গুণগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। সবসময়তো শুধু আমাকেই জ্ঞান দিন। নিজেকেও মাঝেমধ্যে জ্ঞান দিবেন, তাহলে আর এইরকম সিচুয়েশন তৈরি হবেনা।”

–“দেখো আমিতো মেনে নিয়েছি যে, আমার ভুল হয়েছে৷ তোমাকে আমার বিশ্বাস করা উচিৎ ছিল।”

–“একটা মেয়ে বিয়ের পর পুরো পৃথিবীর সাথে হাসিমুখে লড়ে যেতে পারে, যদি তার ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকে। কিন্তু সেই ভালবাসার মানুষটিই যদি বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়! তাহলে পুরো পৃথিবীটাই পর হয়ে যায়!”

আনান এইবার রাজিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাজিতা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও আনানের শক্তির কাছে পেরে উঠলো না। রাজিতার চোখের পানিগুলো যেন ঝড়তে ঝড়তে এখন কিছুটা শিথিল হয়ে এসেছে। ও আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“শুধুমাত্র মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে এবারের মতো মাফ করে দিচ্ছি। আশা করি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনো হবেনা। মানুষ মাত্রই ভুল করবে, আবার ক্ষমা চাইবে৷ কিন্তু একভুল দুইবার করা মানে আগের ভুলটাকে ভুল না ভাবা। ”

আনান আস্তে করে বলল,

–“হুম।”

রাজিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,

–“আর আমাকে উপহার দিতে চাইলে দামী কিছু না দিলেও হবে। বিয়ের মধ্যে যা দিয়েছেন ওগুলো পড়ারই সময় নেই! আর দিয়ে কি হবে! সব মেয়েরাই শুধু দামী গিফট চায়না আনান সাহেব! কিছুকিছু মেয়ে ভালবাসার ছোট-ছোট উপহারগুলোও হৃদয় দিয়ে আগলে রাখে। ”

আনান এবার রাজিতাকে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে গেলো। আরপর লাইট জ্বালিয়ে টেবিলে রাখা একটা ফুলের মালা এনে রাজিতাকে বলল,

–“একটু উঠে বসতে পারবে?”

রাজিতা আনানের হাতে থাকা ফুলের মালা দেখে বলল,

–“এসব আবার কখন আনলেন?”

তারপর আনান রাজিতার বেনী করা চুলে ফুলগুলো দিতে গেলে রাজিতা সরে গিয়ে বলল,

–“আমার এখন ভালো লাগছে না৷ ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাবো। আপনিও শুয়ে পড়ুন।”

বলেই কাথাটা গায়ের উপর তুলে দিয়ে শুয়ে পড়লো রাজিতা।

আনান বুঝতে পারলো যে, রাজিতা এখনো রেগে আছে। ও যেসব কথা বলেছে! এতসহজে রাগ ভাঙে! আনান আর কিছু না বলে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো যে, কে হতে পারে যে, এই ছবিগুলো পাঠিয়ে ওর গড়তে থাকা ভালবাসায় ফাটল ধরিয়ে দিলো! একবার তাকে খুঁজে পেলে আনান কখনো ক্ষমা করবে না। তার উপযুক্ত শাস্তি তাকে পেতেই হবে৷ আনান এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, রাজিতার আপন কেউ ছাড়া এই ছবিগুলো অন্যকারো পাওয়ার কথা না। কিন্তু সে কে!

সারা সকাল রাজিতা আনানের সাথে ভালো করে কথা বলেনি।মুখটা কালো মেঘের মতো করে রেখেছে। গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আনান বলল,

–“তোমার কি মনে হয়? কে পাঠাতে পারে ছবিগুলো? ”

রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে আনান বলল,

–“আর কত চুপ থাকবে? আমাকে এভাবে শাস্তি কেন দিচ্ছো? তোমার শাস্তি দেওয়া শেষ হচ্ছে না! দেখো এভাবে চুপ থাকলে কোনকিছু সলভ করা যাবেনা। ছবিগুলো যে পাঠিয়েছে সে তোমার শত্রু হবে! আর আমি চাইনা কেউ তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করুক। এই কাজের শাস্তি তাকে পেতেই হবে!আজ আমাকে ছবি পাঠিয়েছে! কাল যে, আমার পরিবারকে ছবি পাঠাবে না তার গ্যারান্টি আছে? মা-বাবা ছবিগুলো দেখে যদি আমার মতো ভুল বুঝে!দুইদিন পর গেট-টুগেদার পার্টি। আমি চাইনা সবকিছু শুরুর আগে শেষ হয়ে যাক! আমি তোমার লাইফে আর কোনো ঝামেলা চাইনা।নাতো আমি নিজে করব, আর নাতো কাউকে করতে দিবো৷ প্রমিস!”

রাজিতা দেখলো যে, আনানের কথাই ঠিক। ছবি কে পাঠিয়েছে তা আগে বের করতে হবে।

–“আপনাকে ছবিগুলো কীভাবে পাঠিয়েছে?”

–“মেসেঞ্জারে। এই দেখো, আইডিটার নাম মনে হয় ‘পলাশ ফুল’ ছিলো। এখন ব্লক করে রেখেছে।”

রাজিতা আনানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেসেজগুলো দেখলো। বেশিকিছু লেখেনি, তবে একটা লেখা দেখে ও আৎকে উঠলো, লেখার ধরনটা ওর খুব পরিচিত! তারপর ফোনটা আনানের হাতে দিতে দিতে বলল,

–“রিমি!”

আনান নিজেও যেন চমকে উঠলো রিমির নাম শুনে৷ রাজিতার কাছে যতটুকু শুনেছে, রিমি অনেক ভালো একটা মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই ওর অনেক সাহায্য করেছে। তাহলে রিমি কি করে হতে পারে!

আনান অবাক হয়ে বলল,

–“রিমি কি করে হতে পারে? তুমিতো বলেছিলে…”

–“জানিনা! আমিও সিওর না। সিওর না হয়ে কাউকে সন্দেহ করলে তোমার মতো পস্তাতে হবে৷ আমি এখন একটু যাবো চাচ্চুদের ওখানে, রিমির সাথে কথা বলতে হবে।”

–“এখন গিয়ে কি কথা বলবে? আর রিমি বাসায় আছে কিনা, সেটাওতো জানতে হবে। ”

–“হ্যাঁ, আমি ফোন করে শুনছি ও বাসায় আছে কিনা। আমারতো এখন ক্লাস নেই, আপনি আমাকে ওখানে ছেড়ে দিলেই হবে। কাজটা রিমি করে থাকলে আমার বেশি সময় লাগবে না সেটা বের করতে। আমি চাচ্ছি এটা রিমি যেন না হয়। যাকে আমি আমার আপন ভাবি, শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবি সে যদি আমার শত্রু হয় তাহলে আমি সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না! ”

–“ক্লাস শেষ হলে আমিও তোমার সাথে যেতাম। তোমাকে একা পাঠাতে সাহস হয়না।”

রাজিতা একগাল হেসে বলল,

–“আরে আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি! আর এই কয়দিনে আপনার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ভয় পাবেন না। ”

–“মানছো তাহলে যে, আগে তুমি বোকা ছিলে!”

–“আপনি এমনভাবে বলছেন! যেন এই কয়দিনে আমি সবকিছু শিখে পুরো পৃথিবী উল্টিয়ে ফেলেছি!”

–“আমি কি বলেছি! নাকি তুমিই বললে!”

রাজিতার ভাগ্য ভালো ছিলো যে, রিমি বাসাতেই আছে।
ড্রাইভার গাড়িটা রাজিতার চাচ্চুর বাসার সামনে রাখতেই রাজিতা নেমে চলে গেলো। আনানের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও রাজিতাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে হলো ।

রাজিতাকে দেখেই রিমি জড়িয়ে ধরে বলল,

–“কিরে! এতো সকাল-সকাল তুই? আনান ভাইয়ার সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে?”

রাজিতা ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওর চাচা আর চাচির সাথে কথা বলে রিমিকে নিয়ে ওর রুমে যেতে-যেতে বলল,

–“তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। চল!”

রিমি ওর রুমে গিয়ে বলল,

–“কি এমন কথা যে, সবার সামনে বলতে পারলি না?”

রাজিতা কান্না করতে করতে বলল,

–“জানিস, আনান আমাকে আর নিবে না! বলেছে এখন থেকে এখানেই থাকতে! কোনো জিনিসপত্র ও আনতে দেয়নি। বলেছে উনাদের বাসার কিছুই আনা যাবে না। ”

রিমি ওকে শান্বনা দিয়ে বলল,

–“চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর কয়দিন পরেইতো নিয়ন ভাইয়া আসছে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

–“আনান আমাকে ভুল বুঝেছে। আমি এখন কি করব?আমার মনে হয় নিলা আপুই কাজটা করেছে!”

বলেই আবার কান্না করতে করতে ছবি পাঠানোর সব ঘটনা রিমিকে খুলে বলতেই রিমি বলে উঠলো,

–“দেখেছিস আপুর কাজ-কর্ম! নিজে বিয়ে করতে চলেছে, তাও তোর পিছু ছাড়ছে না! আমি আজকেই নিয়ন ভাইয়াকে বলে দিবো!”

–“হুম। আর চাচ্চুদের এখনি কিছু বলিস না, চিন্তা করবে। আমি পরে বলে দিবো। তুই আমাকে একগ্লাস ফলের জুস এনে দিতে পারবি? সকালে ভালো করে কিছুই খাইনি।”

রিমি ওকে রেখে রুম থেকে বের হতেই রাজিতার নিজের অভিনয়কে নিজেই বাহবা দিলো! ও নিজেও চায় যে, ওর গোপন শত্রুটা যেন রিমি না হয়! কিন্তু ইনভেস্টিগেটতো করতেই হবে!

রিমির ফোনের পাসওয়ার্ড ওর জানা আছে। ফোনের লক খুলে মেসেঞ্জারে ঢুকে সুইচ প্রোফাইলে গিয়েই রাজিতার হার্টবিট দ্রুত চলতে শুরু করলো। ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

রিমির আরেকটা আইডির নাম ‘পলাশ ফুল’। তারমানে ওর ধারণা সত্যি হয়ে গেলো! এটা রিমি না হলেই হয়ত ও বেশি খুশি হতো! তারপর চ্যাটলিস্টে আনানের আইডি দেখে ১০০% সিওর হয়ে গেলো!
ধপ করে রিমির বিছানার উপরে বসে পড়ল রাজিতা। ওর চোখের পানির ধারা বন্ধ হয়ে গেছে।

রিমি হয়ত কল্পনাও করতে পারেনি যে, রাজিতা এভাবে ওকে ধরে ফেলবে৷ রিমির মতে,প্রথমত, রাজিতা একটু বোকা টাইপের মেয়ে! দ্বিতীয়ত, ও কখনো রিমিকে সন্দেহ করবে না! তৃতীয়ত, রাজিতা কখনো কারো পার্সোনাল জিনিসে ইন্টারফেয়ার করেনা।

রিমি এসে রাজিতার হাত থেকে ফোনটা নিতেই সব বুঝে গেলো। দুজনেই চুপচাপ পাশাপাশি বসে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই।

রিমিই প্রথম কথা বলল,

–“প্লিজ রাজি! আমাকে মাফ করে দে। আমি আসলে…”

–“তুই এটা কেন করলি রিমি? আমি তোকে সবচেয়ে আপন ভাবতাম। আমি ভাবতাম যে, চাচ্চু আর নিলয় ভাইয়ার মতো তুইও আমায় আপন ভাবিস। তুই সবসময় আমার ভালো চাস। আমি না চাইতেও আমার সাহায্যে এগিয়ে আসিস। কিন্তু তুই!”

–“আমি! আমি সত্যি তোকে অনেক ভালবাসি। আমি তোকে সাহায্য করার জন্যই!”

–“আমার সাহায্য? আমার সংসারটা শুরু না হতেই ভেঙে দেওয়াটাকে তুই সাহায্য বলছিস?”

–“আমি আসলে নিজে কাজটা করিনি! নিয়ন ভাইয়া! হ্যাঁ, নিয়ন ভাইয়া আমাকে এটা করতে বলেছিল।”

নিয়নের নাম শুনতেই রাজিতা বিছানা থেকে উঠে বসল। কাল থেকে এসব কি হচ্ছে ওর সাথে! ওর আপন মানুষগুলোই কেন আস্তিনের সাপ হয়ে বেরুচ্ছে! ও কি এমন পাপ করেছে যার শাস্তি সবাই হাসিমুখে ছুরি ঢুকিয়ে করছে!

রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে রিমি বলল,

–“নিয়ন ভাইয়া তোকে ভীষণ ভালবাসে! আর তোর অন্যকোথাও বিয়েটা ভাইয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এখন আনান ভাইয়া তোকে আর না নিলে ভালই হবে! নিয়ন ভাইয়া আসলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে! এসব নিয়ন ভাইয়ার প্ল্যান!”

–“নিয়ন ভাইয়া তোকে এসব করতে বলেছে?”

–“আমি কি মিথ্যা বলছি? নিয়ন ভাইয়াই আমাকে এসব করতে বলেছিল। তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? রাজি! নিয়ন ভাইয়া তোকে ভীষণ ভালবাসে। তোকে একদম রাজ-রানীর মতো করে রাখবে৷ ভাইয়ার থেকে ভালো আর কেউ তোর খেয়াল রাখতে পারবে না। দেখিস!”

–“তুই নিজের ভাইয়ের জন্য আমার জীবনটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে একবারও ভাবলি না?”

–“রাজি! নিয়ন আমার ভাই! নিজের ভাইয়ের কষ্টটা আমি কি করে চেয়ে-চেয়ে দেখতাম!”

–“আর আমি? আমি কেউ না? তাই না?”

–“রাজি! তুই আমাকে কেন ভুল বুঝছিস? আমিতো ভাইয়ার কথাতে শুধু…”

–“ওই নামটা আর কখনো আমার সামনে নিবিনা। আর তুইও কখনো আমার সামনে আসবি না। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না! সবাই বিশ্বাস-ঘাতক!…আর হ্যাঁ, আনান আমাকে অনেক ভালবাসে। সো, নেক্সট টাইম এমন চিপ কাজ আর করার কথা কল্পনাতেও আনিস না!”

বলেই রাজিতা রিমির রুম থেকে বের হয়ে সোজা ভার্সিটিতে চলে গেলো। আজব! ওর এখন আর একটুও কান্না পাচ্ছে না! পাথরের মতো কঠিন হয়ে আছে ও৷

আনান কয়েকবার কল করেছিলো, রিসিভ করেনি। আর কাউকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না রাজিতার। আনানকেও না। নিজের উপরেই বিতৃষ্ণা চলে এসেছে।

আজ আনানের ক্লাস ছিলো রাজিতাদের ব্যাচের সাথে। ক্লাস শেষে আনান রাজিতাকে ওর রুমে যেতে বলল। রাজিতার অনিচ্ছাসত্ত্বেও আনানের রুমে গেলো।

আনান রাজিতার চোখেমুখ দেখেই বুঝতে পারলো যে, রাজিতা জানতে পেরে গেছে ছবিগুলো কে পাঠিয়েছে। রাজিতা আনানের সামনে চেয়ারে বসতেই আনান পানির বোতল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,

–“ওটা রিমি ছিলো?”

রাজিতা আগে অনেকটা পানি খেয়ে নিলো৷ ওর মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীর পানি খেলেও হয়ত ওর তৃষ্ণা মিটবে না। তারপর আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“কষ্ট পাওয়ার জন্য আমিই কি একমাত্র পারফেক্ট? ”

–“কি বলছো এসব তুমি?”

–“সবাই কেন শুধু আমাকেই বেছে নেয় কষ্ট দেওয়ার জন্য?”

–“আরকেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না। এই আনান থাকতে কেউ তোমার ধারে-কাছেও আসতে পারবে না। কেউ তোমাকে একটু কষ্ট দিলে তার দ্বিগুণ কষ্ট তাকে পেতে হবে।”

–“আর সেটা যদি আপনি নিজে হন। তখন?”

–“আমি একবার ভুল করেছি বলে কি বারবার ভুল করব? কথা দিচ্ছি, না জেনেশুনে কখনো তোমাকে ভুল বুঝব না।প্রমিস!”

রাজিতা আনানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

–“আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমি আপনাকে কখনো ভুল বুঝলেও না। কারণ, এখন আপনি ছাড়া আমার যে আপন বলতে কেউ নেই। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে চাইনা। ”

তারপর রাজিতা আনানকে সব খুলে বলতেই রাগে অগ্নিবর্ণ ধারণ করে আনান বলল,

–“দেখেছো! আমি আগেই বলেছিলাম যে, তোমার নিয়ন ভাইয়ার মনের খবরটা তোমার জানা উচিৎ ছিলো! কিন্তু উনি তোমাকে পাওয়ার জন্য এমন জঘন্য একটা কাজ করবে আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে! এর শাস্তিতো পেতেই হবে। একবার দেশে আসুক!”

–“আপনি কথা দিন, এই নিয়ে কোনো ঝামেলা করবেন না! এতদিনের উপকারের প্রতিদানটা না হয় আমি এভাবেই দিলাম! ”

চলবে…..

#অপরাজিতা
#১৬তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আজ রাজিতার শুধু দুইটা ক্লাস ছিলো। আনানেরও শুধু একটাই ক্লাস ছিলো। তাই ওরা তাড়াতাড়ি-ই বেড়িয়ে পড়ল।
গাড়িতে উঠার পর থেকে রাজিতাকে চুপ থাকতে দেখে আনান বলল,

–“আজ আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। বলো কোথায় যাবে?”

রাজিতা আনানের কাঁধে মাথা রেখে বলল,

–“আজ আমার ভালো লাগছে না। অন্যদিন যাবো।”

–“ভালো লাগছে না বলেইতো আজ সারাদিন ঘুরব।”

–“আমি যেখানে বলব সেখানেই নিয়ে যাবেন?”

–“হুম। বলেছি যখন নিয়ে যাবো। বলেই দেখো!”

–“যদি বলি সিলেটের জাফলং যাবো?”

–“হুম! নিয়ে যাবো। সময় বেশি লাগবে আর…”

–“আচ্ছা হয়েছে, বুঝতে পেরেছি। এতই যখন আমার পছন্দের জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে তখন আমি আপনাকে আমার সবথেকে প্রিয় জায়গায় নিয়ে যাবো। ”

–“তোমার প্রিয় জায়গা? কোথায় সেটা?”

–“গেলেই বুঝতে পারবেন। সিক্রেট! ”

আনান দেখলো যে, ওর সাথে কথা বললে রাজিতার মন ভালো হয়ে যাবে৷ তাই ও কথা বাড়ানোর জন্য বলল,

–“তোমার পছন্দের জায়গা আর কি হবে! এইকোনো পার্ক-টার্ক হবে নাকি?”

–“আপনার কোনোকিছু গেস করার ক্ষমতাটা এতো বাজে কেন! আপনিতো আমার পছন্দের জায়গার ধারে-কাছেও যেতে পারলেন না!”

–“উম! তাহলে কোনো রেস্টুরেন্ট? কোনো শপিং মল? নাকি কোনো রিসোর্ট? ”

রাজিতা এবার হেসে ফেলল। অনেকক্ষণ পর রাজিতার প্রাণখোলা হাসি দেখেই আনানের কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গেলো। ওর নিজের ঠোঁটেও হাসি ফুটে উঠলো। তারপর আনান আবার বললো,

–“আরে তুমিই বলে দাও! আমিতো পারছি না! মেয়েদের পছন্দের জায়গা কি হতে পারে আমি কীভাবে জানব!”

–“হুম। এইতো আরেকটু পরেই।…. বামের দিকে মোড় নিবেন মিজান ভাই।”

পরের কথাটা রাজিতা কিছুটা জোরে ড্রাইভারকে বলল।

গাড়ি থেকে নামতেই আনান দেখতে পেলো যে, ওরা একটা পুরাতন বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছে। আনান রাজিতার হাতটা ধরে এগুতে এগুতে বলল,

–“এইটাই তাহলে আমার বউয়ের পছন্দের সিক্রেট জায়গা?”

–“হুম। আমার যখনি বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে, নিজেকে একা-একা লাগে, বা মন খারাপ থাকে, এখানে চলে আসি। ওদের দেখলে আমার নিজের বাবা-মায়ের কথাটা ভুলে যাই। ওদের সাথে নিজেকেও খুশি রাখার চেষ্টা করি।”

–“এত জায়গা থাকতে এটাই তোমার প্রিয় জায়গা?”

–“হুম। আমি তখন সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছি। স্কুল শেষে বাসায় ফেরার পথে বুঝতে পারলাম যে, আমার প্রচন্ড জ্বর হয়েছে। জ্বরটা হয়তো সকালেই এসেছিলো, আমি বুঝতে পারিনি! ঠিক এই জায়গাটায়…”

রাজিতা বাসাটার সামনেই একটা বসার জায়গা দেখিয়ে বলল,

–“ঠিক এই জায়গাটায় আমি এসে বসে পড়ি। তারপর আরকিছু মনে নেই। পরে জানতে পারি যে, এখানে বসার পর জ্বরের প্রকোপে আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি, আর এখানের একটা বাচ্চা আমাকে দেখে লোকজন ডেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

–“তোমার জ্বর নিয়ে বের হয়েছিলে কেন?”

–“আমিতো বুঝতেই পারিনি যে, জ্বর হয়েছে। এখনি বুঝতে পারিনা! তখনতো আরো ছোট ছিলাম!”

কথাগুলো বলতে বলতে দুপুরের রোদের মধ্যেই দুজনে ওখানে বসে পড়ল। আনান বলল,

–“তারপর কি হলো?”

–“সেটাই ছিলো আমার এখানে আসার শুরু। তারপর থেকে আমি যখনি এখানে আসতাম, আমার মনটা ভালো হয়ে যেতো।আস্তে আস্তে এখানকার তুলি আন্টির সাথে আমার পরিচয় হলো। আরো অনেক এতিম বাচ্চার সাথে পরিচয় হলো। তারা অনেকেই এখন এখান থেকে চলে গেছে। মাঝেমধ্যে আসে, আমার সাথে দেখা হয় মাঝেমধ্যে। ”

–“এখনো কীভাবে দেখা হয়?”

–“মনে করেন যে, হয়ত কোনো প্রোগ্রাম হলো,আর সেখানে আমিও আসলাম, ওরাও আসলো৷ ”

–“ওহ আচ্ছা।”

রাজিতার এমন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কথা বলতে দেখে আনানের খুব ভালো লাগছে। রাজিতার এইরূপটা আনানের কাছে লুকানো ছিলো, আজ যেন তা নিজের জানান দিচ্ছে। রাজিতা আবার বলল,

–“এখন ওরা ১৬ জন বাচ্চা আছে। আমি আসলেই ওদের জন্য কিছু না কিছু খাবার নিয়ে আসি৷ ওরা অনেক খুশি হয়৷ আর ওদের হাসিমুখ দেখে আমার নিজেরও ভালো লাগে।”

–“আমাদের বিয়ের পরেও কি এখানে এসেছো?”

–“না! দেখেছেন, বিয়ের পর আসলেই মানুষ স্বার্থপর হয়ে যায়৷ শুধু তাই নয়, সুখে থাকলে মানুষ কখনোই দুখী মানুষদের আর মনে রাখেনা। আজ আমার মন খারাপ হয়েছে আর ওমনি ওদের কথা মনে পড়ে গেলো!”

–“কয়-দিনই বা হয়েছে আমাদের বিয়ের! আর তোমাকে আমি একা ছাড়লেতো আসবে!”

–“তা অবশ্য ঠিক! তারপরেও। আচ্ছা আপনি বলেছিলেন না যে, আমাকে গিফট দিতে চান?”

–“হুম। শুধু বলিনি। দিতে চাইও।”

–“তাহলে সামনের ওই দোকানটা থেকে ২০টা আইসক্রিম নিয়ে আসুন।”

–“এতগুলো আইসক্রিম তুমি খেতে পারবে?”

–“আপনার আইকিউতো দেখছি আমার চেয়েও কম!”

কথাটা বলতেই আনান বুঝে গেলো যে, রাজিতা নিজের জন্য নয়, বাচ্চাগুলোর জন্য আইসক্রিম আনতে বলছে।

আইসক্রিম পেয়ে বাচ্চাগুলো খুব খুশি হয়েছিলো। তুলি আন্টি ওদের জোর করে খেতে বসিয়েছিলো। অচেনা জায়গায়, এমন পরিবেশে আনানের অস্বস্তি লাগলেও রাজিতাকে খুশি করার জন্য খেতে বসেছিলো। টেংরা মাছের ঝোল আর মিষ্টি কুমড়ার ভাজি দিয়ে বাচ্চাগুলো কি তৃপ্তি সহকারে খেলো! তা দেখে কেন জানি আনানের চোখে পানি চলে এসেছিলো।

গাড়িতে বসে রাজিতা বলল,

–“আপনি চাইলে আজ আপনাকে একটা বাস্তব গল্প শোনাতে পারি। একজনের জীবনে ঘটে যাওয়া, একদম সত্য ঘটনা। শুনবেন?”

–“হুম, বলো। তুমি বললে সব শুনতে রাজি আছি।”

–“গল্পটা তুলি আন্টির। আঙ্কেলের সাথে বিয়ের পাঁচটা বছর উনাদের খুব সুখেই কেটে যায়। তারপর আন্টির কোল আলো করে একটা ফুটফুটে মেয়ে আসে। আন্টি আদর করে মেয়েটার নাম রাখেন মায়া। মায়ার বয়স একবছর না হতেই আঙ্কেল উনাদের বাসার কাজের মহিলাকে বিয়ে করে বাসা ছেড়ে চলে যান। আন্টি বাচ্চা মায়াকে নিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েন। তখন উনার পাশে কেউ ছিল না। ভাগ্যিস উনি কিছুটা শিক্ষিত ছিলেন! তাই একটা কেজি স্কুলে চাকরি নিয়ে অনেক কষ্টে মায়াকে মানুষ করতে থাকেন। একবছর-দুবছর করে কেটে যায় ১৯ টি বছর। মায়া তখন এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। আর হ্যাঁ, এরমধ্যে মায়া অনেকবার চেষ্টা করেছে ওর বাবাকে দেখার জন্য।”

এতক্ষণ পর আনান বলে উঠে,

–“এরমধ্যে মায়ার বাবা একবারো ওদের খবর নেয়নি?”

–“না! নিজের মেয়েটাকে দেখতেও ফিরে আসেনি। ওই মহিলাকে নিয়ে অন্যশহরে গিয়ে সংসার পেতেছিলেন। মায়া ছিলো তুলি আন্টির একমাত্র সম্বল।”

–“তুমি বারবার ‘ছিলো’ বলছো কেন?”

–“কারণ এখন আর নেই। আরে আপনি চুপ করে গল্প শুনুন। গল্পের মধ্যে এতো কথা বললে গল্প করে মজা পাওয়া যায় নাকি!”

–“আমারতো মনে হয় যে, গল্প করার সময় গল্পের শ্রোতা মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করলেই বরং গল্পটা জমে ভালো! ”

–“আপনার লজিক আপনিই রাখেন৷ এখন আমার গল্প শুনেন। কোথায় যেন ছিলাম! ওহ আচ্ছা মনে পড়েছে৷ মায়ার এইচ এস সি পরীক্ষার সামনে ওর মা জানতে পারে যে মায়া একটা ছেলেকে ভালবাসে।ওরা পালিয়ে বিয়েও করে নেয়। নিজের মেয়ের সুখের জন্য তিনি রাজি হলেও ছেলের পরিবার কিছুতেই মায়াকে মেনে নিতে চায়না। যে মেয়ের বাবা নিজের ছোট মেয়ে আর বউকে ফেলে রেখে কাজের মহিলার সাথে চলে গেছে, সে মেয়ে কত ভালো হতে পারে! ব্যাপারটা মায়া কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। ও শেষবারের মতো ওর বাবার সাথে দেখা করতে ব্যর্থ হলে সুইসাইড করে নেয়! ওর মা স্কুল থেকে ফিরে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখে নির্বাক পাগলের মতো হয়ে যায়!”

–“তবুও ওর বাবা আসেনি?”

–“হুম। ১৯ বছর পর এসেছিলো মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে। শুধু তাই নয়, নিজের মেয়ের খুনের দায় নিজের বউয়ের উপর চাপিয়ে দিতে চাইলে আশেপাশের লোকজন জব্দ করে উনাকে তাড়িয়ে দেন। শুধু তাই নয়, এই বাড়িটা তুলি আন্টির নামে করে দিতে বলেন। তারপর আস্তে আস্তে একজন -দুইজন করে এতিম বাচ্চা জোগাড় করে তাদের দেখাশুনা শুরু করেন তুলি আন্টি।”

–“উনার হাজব্যান্ড আর আসেনি?”

–“না মনে হয়।”

–“কি পাষাণরে বাবা!”

–“হুম। এখন তুলি আন্টি ওদের নিয়েই থাকেন সব সময়। কেউ সাহায্য না করলে ডাল-নূন যা হয় তাই খায়!”

গল্পটা শুনে আনানের খুব খারাপ লাগছে।সারারাস্তা দুজনে চুপচাপ আসলো।

রাজিতা যেন এই দু’ঘন্টায় কাল থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভুলে গেছে। রাজিতাকে খুশি দেখে আনান নিজেও অনেক খুশি।

রাতে রাজিতাকে পড়তে বসতে দেখে আনান পেছন থেকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,

–“আমার বউটা যে আজ দেখছি পড়তে বসেছে! সূর্য কি আজ পশ্চিম দিক থেকে উঠেছিলো! নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি!”

রাজিতা হাত দিয়ে আনানের মাথাটা সরিয়ে দিয়ে বলল,

–“ঢং বাদ দিয়ে যান এখান থেকে। পড়তে দিন। নইলে নিজেই আবার কাল অপমান করবেন।নিজেই ক্লাস-টেস্ট নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে! আবার নিজেই ঢং করছে!”

–“পরশুতো পার্টি আছে। আর তারপর দিন একটু রেস্ট নিবে না! তাই কালকেই টেস্টটা নিয়ে নেবো ভাবলাম। যার জন্য করি চুরি! সেই বলে চোর! আমি আর চুরিই করব না!”

–“নিজেই বলছেন চুরি করছেন! আবার চোর বললেই দোষ! ”

কথাগুলো বলেই দুজনে হাসতে লাগলো। এরপর আনান বলল,

–” তা তোমার ফ্রেন্ডরা যাবেতো? আমি কিন্তু ওদের জন্য এরেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছি৷ ওরাতো অনেকজন! তাই আগে থেকে জানালেই ভালো হবে।”

–“চিন্তা করবেন না। দুয়েকজন বাদে সবাই থাকবে৷ হাজারহোক স্যার ইনভাইট করেছে! না গিয়ে উপায় আছে!”

–“ভুল বললে! আমি ওদের ইনভাইট করেছি স্যার হিসেবে নয়৷ দুলাভাই হিসেবে! আর ওরা স্যারের জন্য নয়, ফ্রেন্ডের জন্য আসবে!”

–“ওই একই হলো!”

–“তোমার জন্য একটা অফার আছে। ”

–“কি অফার?”

–” ওই ১৬ টি বাচ্চার এস এস সি পর্যন্ত পড়ার খরচ আমি দিবো।”

কথাটা শুনেই খুশিতে রাজিতার চোখ চকচক করে উঠলো। ও চেয়ার ছেড়ে আনানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

–“আমি কি সত্যিই শুনছি? আপনি সত্যি ওদের পড়ার খরচ দিবেন?”

–“হুম। আপাতত শুধু ওই ১৬ জনের। তাও আবার এস এস সি পর্যন্ত। পরের ব্যাপার পরে দেখা যাবে।এখন শুধু তোমার মতামতের অপেক্ষা।”

রাজিতা আনানকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তবে এটা কোনো দুঃখের কান্না নয়। এটা সুখের কান্না। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে রাজিতা বলল,

–“আমি যে কি খুশি হয়েছি! তা বলে বুঝাতে পারব না। আমি আগে ভাবতাম যে, যারা না চাইতেই সব পায় তারা না পাওয়ার কষ্ট কখনো বুঝেনা! কিন্তু আপনাকে দেখে আমার নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

আনানও রাজিতার পিঠে হাত দিয়ে বলল,

–“আগেই এত খুশি কেন হচ্ছো। আগে আমার শর্তটা শোনো।”

–“আপনার সব শর্ত আমি মাথা পেতে নেবো। শুধু একবার বলুন!”

–“আপাতত একটা শর্ত মানলেই হবে।”

–“কি?”

–“আমি আর এই আপনি শুনতে চাচ্ছি না। আপনি শুনলে নিজেকে কেমন পরপর লাগে।”

রাজিতা আনানকে ছেড়ে দিয়ে বোকাদের মতো আনানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“মানে?”

–“মানে এটাই। তোমার মুখে ‘তুমি’ ডাকটা শুনার জন্য শুধু কান নয়, হৃদয়টাও আকুপাকু করছে। বলো আমার শর্তে রাজি?”

রাজিতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,

–“এটা আবার কি ধরনের শর্ত!”

–“বলো রাজি?”

–“হুম।”

–“তাহলে বলো।”

–“আজ না! কাল থেকে, আমি পড়ব এখন!”

–“অফারটা কিন্তু আজকের জন্যই শুধু। ভেবে দেখো! নইলে পরে অনুতাপ করেও লাভ হবেনা!”

কথাগুলো বলেই আনান বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে রইলো।

আনান বাচ্চাগুলোকে দেখেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিয়েছে যে, ওদের সাহায্য করবে! এক্সট্রা হিসেবে রাজিতার মুখে ‘তুমি’ বলা শুনতে পেলেতো মন্দ হয়না! শুয়ে-শুয়ে নিজেই নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে থাকে!

চলবে…..