#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [০৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
ক্যান্টিনে বসে আছে কন্ঠ,রিয়া,সোহা,সান তারিফ এবং তাহিয়া।
সবাই তূর্য কে নিয়েই আলোচনা করছে,সোহা উঠে বলে।
” ভাই যাই বলিস না কেন তূর্য স্যার কিছু সেই হ্যান্ডসাম।”
সোহার কথা শুনে খিল খিল করে হেসে উঠলো কন্ঠ,ওর হাসির কারণ কেউই ধরতে পারল না, অতঃপর ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে সবাই ওর দিকে। তারিফ কন্ঠ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
” এই কন্ঠ তুই হাসলি কেন?”
কন্ঠ ভীরু স্বরে বলল।
” আসলে তোমাদের কথা শুনে হাসি পেল।”
সান নাক মুখ কুঁ’চকে বলে।
” আচ্ছা তুই আমাদের তুমি করে বলছিস কেন সেটাই তো বুঝলাম না? আমরা তো তুই করেই বলছি।বাই এনি চান্স তুই কি আমাদের সাথে এখনও ফ্রি হতে পারিস নি?”
রিয়া ফিক করে হেসে বলে।
” ভাই আর বলিস না ও এমনি,প্রথম প্রথম এগুলো ভীতু স্বভাবের থাকে বাট কয়েক দিন গেলে ফ্রি হয়ে যাবে।”
ক্লাস চলাকালীন একটা শব্দ করার সাহস কেউ দেখালো না তূর্য খানের সামনে, সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিল। তূর্য যা কিছু পড়াচ্ছিল সবাই তা মন দিয়ে শুনছিল,যতক্ষণ পর্যন্ত তূর্য ক্লাস নিচ্ছিল ততক্ষন বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ হচ্ছিল কন্ঠের,এই বুঝি ভুলবশত কিছু বলে ফেলল আর ক্লাস থেকে বের করে দিল তূর্য স্যার।
” এই তোদের দুজনের নাম্বার দে তো আমাদের গ্রু’পে এ’ড করে নেব।”
তাহিয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে আসে কন্ঠ, কিসের নাম্বার?আর কিসের গ্রু’প?
কন্ঠ তাহিয়া কে জিজ্ঞেস করে।
” কিসের গ্রু’প?”
তাহিয়া উঁহু শব্দ করে,তারিফ ফোন দেখিয়ে বলে।
” এই যে আমাদের আড্ডা গ্রু’প, এখানে আমরা সবাই আছি। আমাদের যা কথা আছে প্রয়োজনীয় এখানেই বলি,যেমন ধর কারো নোট প্রয়োজন বা অন্য কিছু তার পর পড়াশোনা সাজেশন এসব নিয়েও কথা হয়।”
কন্ঠ মাথা নাড়ল,সান রিয় আমি এবং কন্ঠের দুজনের নাম্বার নিয়ে গ্রু’পে এ’ড করে নেয়।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় তূর্য খান, অতঃপর সোহা সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে।
” আচ্ছা আজকে কী আর তূর্য স্যারের ক্লাস নেই?”
কন্ঠ বলে উঠে।
” ওয়েট আমি সিডিউল চেক করে বলছি।”
কন্ঠ ফোনে সিডিউল বের করে দেখে হ্যা আজকে আর তূর্য স্যারের ক্লাস নেই। সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল এমন একটা শ্বাস নেয়।
তূর্য বাড়িতে আসা মাত্র শাহিনা খান চেঁচিয়ে বললেন।
” বউ ও বউ কই গো তুমি? আমার নাতনি মাত্র আইছে আর তোমরা কই থাকো?”
অহনা খান রান্না ঘর থেকে তড়িৎ গতিতে ছুটে আসলেন,অহনা খান পানির গ্লাস হাতে নিয়ে তূর্য কে এগিয়ে দেয়। মূহুর্তের মধ্যে চোয়াল শক্ত করে নেয় তূর্য, চোখের ইশারায় বলে গ্লাস আগের জায়গায় রেখে দিতে।অহনা খান এক পলক দেখে শাহিনা খানের দিকে, অতঃপর সেন্টার টেবিলের উপর গ্লাসটা আবার রেখে দেয়। তূর্য নিজের হাতে গ্লাস তুলে পানি খায়,ফুস করে শ্বাস নিয়ে বলে।
” দাদী আমি নিজের কাজ গুলো নিজে করতে পারি তো, তোমাকে এত্ত চিন্তা করতে হবে না।”
শাহিনা খান বিরক্ত প্রকাশ করে বললেন।
” তুই হলি পুরুষ মানুষ তূর্য দাদু ভাই, তুই কেন নিজের কাজ নিজে করবি?”
ম্লান হাসে তূর্য,শাহিনা খান আগের যোগের মানুষ,তাই আগের দিনে যা ঘটত বা ঘটে এসেছে সেগুলো মেনে চলতে পছন্দ করে। কিন্তু তূর্য তো একজন শিক্ষক তা ছাড়া ওর উচিত নিজের কাজ গুলো নিজে করা।
” দাদী পুরুষ মানুষ বলেই কী অন্য কে দিয়ে কাজ করাতে হবে? আমারও দুটো হাত আছে,পা আছে, নিজের কাজ নিজে করার ক্ষমতা রাখি।”
তপ্ত শ্বাস ফেলে শাহিনা খান,রুমের দিকে পা বাড়ায় তূর্য।
শাফিন খান সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে, ওনার ঠিক কিছুক্ষণ পর বাড়িতে আসে সাফিন খান।
দু’জনে ডাইনিং টেবিলে বসে,কাজের লোক তরু এসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন।শাফিন খান ঢক ঢক করে পুরো পানি খেয়ে তরু কে উদ্দেশ্য করে বলল।
” আচ্ছা তোদের ভাবী কোথায়?”
তরু হাত মুছে বলে।
” ভাইয়া ভাবী তো উপরে বড় তূর্য স্যারের রুমে গেছে।”
” ও আচ্ছা।”
তরু আবারও রান্না ঘরে গেল,শাফিন খান এবং সাফিন দু’জনে আবারও অফিসের কাজ নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করে।কিছু সময় পর নিচতলায় আসেন অহনা খান।
” তোমরা এসে গেছো?”
মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে অহনা নিচে আসছে, অতঃপর সব ফাইল গুলো নিয়ে ভেতরে রেখে আসতে যায় সাফিন।
” সাফিন একে বারে ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি খেতে দিচ্ছি তোমাদের।”
সাফিন মাথা নাড়িয়ে ভেতরে চলে গেল,শাফিন খান কপালে জমে থাকা ঘাম হাতের উল্টো মুছে বলল।
অহনা খান হঠাৎ স্বামী কে এমন চিন্তিত দেখে বলেন।
” কী গোঁ তোমার হঠাৎ কী হয়েছে?”
শাফিন ভাঙা কন্ঠে বলে।
” বলো না আর শরীর টা ভালো লাগছে না।”
” তুমি দাঁড়াও আমি খাবার নিয়ে আসছি,খেয়ে ওষুধ নিয়ে নেবে।”
“আচ্ছা, কিন্তু তূর্য কোথায় অহনা?”
” ও তো স্টাডি রুমে আছে।”
” ও আচ্ছা।”
___________
রাতে মে’সে’ঞ্জা’রে কল দেয় সান, সবাই জ’য়ে’ন করল। কন্ঠ রিয়া দুজনেই জ’য়ে’ন করেছে, সবাই ভীষণ সিনিয়াস মুডে আছে। তূর্য স্যার যে ম্যাথ গুলো দিয়েছে তার কোনো সলিউশন খুঁজেই পাচ্ছে না কেউ, অতঃপর কিছু না পেয়ে সবাই একত্রে কলে আসে।
সান কথা দেখিয়ে বলে।
” ভাই আমি চেষ্টা করেছিলাম সল্ব করার কিন্তু হয়নি, মাঝখানে গিয়ে আটকে গেছি।”
রিয়া নিজের খাতা দেখিয়ে বলে।
” আসলে আমি পারিই না তাই ধরিও নি,হি হি।”
রিয়ার হাসি দেখে সান তারিফ,সোহা হুঁ হুঁ করে হেসে উঠল।সোহা কন্ঠ কে উদ্দেশ্য করে বলল।
” এই কন্ঠ তুই কি এটা করেছিস?”
কন্ঠ খাতা বের করে দেখায়।
” করেছি কিন্তু জানি না এখন ঠিক হয়েছে কি না?”
ওদের মধ্যে তারিফ ঝট করে বলে উঠে।
” আচ্ছা আগে আমাকে বল উত্তর কী 5.36 এসে কী না?”
কন্ঠ খাতায় চোখ বুলিয়ে বলে হ্যা এটাই এসেছে।”
তারিফের মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি খেলে যায়, চিৎকার করে বলে উঠে।
“ওরে ওরে কন্ঠ এটাই সঠিক ছবি দে আমরাও করে ফেলি,মামা এটাই উত্তর।”
সবাই ভীষণ খুশি হয়, তাদের মধ্যে কন্ঠ বলে উঠে।
” আচ্ছা তোমরা একটু বুঝে নাও, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
সান ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
” ধুর মামা এসব বোঝাবুঝি করতে হবে না, তুই ছবি দেয়।স্যার কী আমাগো বলবে বুঝি দেও?চল চল ছবি দে।”
কন্ঠ আরো একবার সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে।
” কিন্তু এটা সঠিক হয়েছে কী না তা তো বুঝতে পারছি না।”
সান বলে উঠে।
” 5.36 মানেই সঠিক, হুররে।”
✨
ক্লাসের প্রায় সকাল স্টুডেন্ট কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কেউই তূর্য স্যারের দেওয়া হোম ওয়ার্ক গুলো কমপ্লিট করতে পারেনি। কিন্তু ওয়াইড বোর্ডের সামনে কান ধরে আছে,সোহা,সান,তারিফ,তাহিয়া কন্ঠ এবং রিয়া।একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।
ওদের ছয়জনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করেছে তূর্য খান।
দু তিনটে শুকনো ঢুক গিলে নিল কন্ঠ,বার বার তারিফের দিকে দেখছে।ওর জন্যেই ওমন হয়েছে, ওদিকে সবাই সরু দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে তাকিয়ে আছে কন্ঠের দিকে। ওদের মনে হচ্ছে কন্ঠের জন্য এখন এই অবস্থা।
চলবে…………✨।