অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-০৫

0
255

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [০৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

অচেনা নাম্বার থেকে সকালে কয়েক বার ক’ল এসেছিল কন্ঠের ফোনে, কিন্তু কে জিজ্ঞেস করলেই ফোন রেখে দেয়।

আজকে বেশ সুন্দর আবহাওয়া, রোদের ঝলকানিও কম নয় তবে তে’জ হয়ত একটু কম, মাঝে মাঝে দ’ম:কা হাওয়া এসে স্পর্শ করছে কন্ঠের তুলতুলে শরীরটাকে।বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নিল সে,অধর টেনে হাসে। ভীষণ আনন্দ লাগছে তার, কিন্তু তার কারণ জানা নেই। আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়, মূহুর্তে তূর্যের গম্ভীর থমথমে মুখ খানি ভেসে উঠে। আঁ’তকে উঠে কন্ঠ,এটা কী হচ্ছে?চোখ বন্ধ করতেই ওনার মুখ দেখলাম?
ক’র্কশ শব্দে হাতে থাকা মুঠো ফোন বেজে উঠল,স্ক্রিনে জল জল করছে মেসে’ঞ্জা’র থেকে কল এসেছে তাও আবার তাদের আ’ড্ডা গ্রু’প থেকে।চট করে ফোন রিসিভ করে কন্ঠ, ভিডিও ক’লে আছে সবাই।

” হ্যলো গাইস।”

” হ্যলো কন্ঠ,কী করছিস?”

সোহা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে কন্ঠ কে, কন্ঠ স্ফীত হেসে বলে।

” এই তো ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।”

এলোমেলো চুলে বিছানার এক কোণে বসে আছে সান।এলো চুল গুলোতে হাত দিয়ে ব্রাশ করে বলে।

” এই কন্ঠ শুনলাম তোর বড় বোন নীলা আপু কে দেখতে আসছে?”

কন্ঠ হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।
তারিফ এক গাল হাসি নিয়ে বলে।

” মামা অনেক দিন পর তাহলে বিয়ে খেতে পারব,এই দেখ কন্ঠ তোরা কিন্তু দাওয়াত দিবি?আর যদি নাও দেস তাহলে আমরা বিনা নিমন্ত্রণে চলে আসবো কইয়া দিলাম।”

তারিফের কথা শুনে সবাই হুঁ হুঁ করে হেসে উঠে, সবাই এই কয়েক দিনে বুঝে গেছে তারিফ খেতে কতটা ভালোবাসে। সবাই সবাইকে এতটা ভালো ভাবে চিনে গেছে যে কেউ বলতেই পারবে না এই মাত্র কয়েক দিন আগেও এরা একে অপরের অপরিচিত ছিল।

” সান চল না শপিং এ যাই, কেমন হবে আজ সবাই মিলে আড্ডা দেবো?”

তাহিয়ার আইডিয়া মন্দ নয়,ওর কথায় সহমত পোষণ করে কন্ঠ বলে।

” হ্যা চল সবাই মিলে যাই বেশ মজা হবে।”

সোহা উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠে।

” ওরে মামা, খালা-রা কন্ঠ বলছে যাবে চল চল যাই,ও তো কোনো কিছুই যেতে চায় না।চল আজকে চলেই যাই।”

সবাই মিলে ঠিক করে ওরা শপিং এ যাবে।রিয়া বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিল, কন্ঠ গিয়ে ওকে তুলে শপিংএর কথা বলতেই এক দৌড় ওয়াশরুমে চলে যায় রেডি হতে।
_________

” স্যার গোঁ সত্যি বলতেছি আমি কিছু করিনি,ওরাই তো,,,,,,

আর কিছু বলতে পারল না কন্ঠ, ওনার কথার পিঠে থামিয়ে দিল তূর্য।

” যাস্ট শাট আপ,কী করছো এটা?ওয়াট দ্যা হেল ইস দিস?”

তূর্যের এহন থমকে হাত পা রিতিমত কাঁপছে কন্ঠের, তূর্যের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তারিফ, কন্ঠেরছ পিছনের সিটে বসেছিল সোহা,তাহিয়া,সান এবং রিয়া। আচমকা এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আন্দাজ করতে পারেনি কন্ঠ।
রেস্টুরেন্টে বসে ছিল কন্ঠ এবং ওর ফ্রেন্ডরা ,পুরো রেস্টুরেন্ট বুক করেছে তারা। শপিং শেষে মাত্র রেস্টুরেন্টে বসেছে ওর,এর মধ্যে তাহিয়া একটু ওয়াশরুমে গেছে,সান সবাই কে এক সঙ্গে করে বলে।

” গাইস তোদের জন্য একটা গুড নিউজ আছে একটা।”

সবাই সানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়,সান নিজের বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে বলে।

” আজ তাহিয়ার বার্থডে আর এই খবর এই মাত্র ফেসবুক থেকে জানলাম।”

সবাই বেশ এক্সাইটেড হয়ে উঠল তাহিয়ার জন্মদিনের কথা শুনে, মূহুর্তের মধ্যে প্ল্যান করে ফেলে। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার কে বলল তাড়াতাড়ি সবটা একটু গুছিয়ে দিতে,একটা বড় সড় কেক অর্ডার করে ফেলে।
কিছুক্ষণ পর তাহিয়া আবার ফিরে আসে, হঠাৎ রেস্টুরেন্টের ভেতরে এসে দেখে কেউই নেই ভ’ড়কে যায় তাহিয়া।

” কন্ঠ?সান? রিয়া?এই তারিফ,সোহা কই তোরা?”

হঠাৎ হ্যাপি বার্থডে বলে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সবাই।তাহিয়া ভীষণ খুশি হয়ে যায়, সত্যি ভাবতে পারেনি তাকে এভাবে সবাই উইশ করবে ভাবেননি সে।
শপিং শেষে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে সহিতা, খুবই বিরক্ত লাগছে তূর্যের ।একে তো গরম তার উপর , এভাবে কী থাকা যায়? অবশেষে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য রাজী হয়।

এক গাদা কেক নিয়ে ছুটে যায় কন্ঠের দিকে সান,মুখে পুরো লেপ্টে দেয় তার। সবাই ওকে দেখে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।

” এই কন্ঠ তুই দিতে পারিস না?এইইনে সসের বোতল।”

কন্ঠ যেই সসের বোতল ওর উপর ছুড়ে দিতেই সরে যায় সান, ভেতরে প্রবেশ করছিল তূর্য। বিশ্রী ভাবে সবটুকু সস গিয়ে তূর্যের ধপধপে সাদা শার্ট কে লালে পরিণত করে।চোখ মুখ শক্ত করে নেয় তূর্য, হঠাৎ ওর আগমনে ঠোঁট দুটো কিঞ্চিত ফাঁক হয়ে গেল কন্ঠের।
অগ্নি দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে তূর্য কন্ঠের দিকে, সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।সবারই যেন তূর্য কে দেখে হাঁটু কাঁপছে, কন্ঠ দু তিনটে শুকনো ঢুক গিলে কাঁপা গলায় বলে উঠে।

” স্যারররররর সত্যি আ’ম সরি। আমি জানতাম না আপনি হঠাৎ করে এভাবে চলে আসবেন।”

সহিতা নাক মুখ কুঁ’চকে তাকায় কন্ঠের দিকে, বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে।

“‌এই মেয়ে এটা কী ধরনের অস’ভ্যতা?কী করলে এটা?পুরো শার্ট নোং’রা করে দিলে।”

” সরি ম্যাম আমি তো ইচ্ছে করে করিনি, ওদের সাথে মজা করছিলাম তখন হঠাৎ এমন হয়ে গেছে।এই তোরা বল না,,,,,

কন্ঠ পিছনে তাকিয়ে দেখে একটাও নেই, সবাই ওকে ফেলে উধাও হয়ে গেছে।

” সব কটা হা’রা’মি, আমারে ফেলে চলে গেল?এ্যা এ্যা এ্যা এখন আমি কী করব?স্যার এমন ভাবে তাকিয়ে আছে এক্ষুনি কাঁচা চি’বিয়ে খাবে, আল্লাহ গোঁ এই বার বাঁচিয়ে দেন পাক্কা একদম প্রমিজ করছি আর কোনো দিন এমন হবে না।”

মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে কন্ঠ আর ইচ্ছে মত গালাগালি ফি’ক্কা মা’রছে।

” এই তোমরা কী পাবলিক প্লেসেও এমন করো?”

এমন করি মানে?কী বুঝাতে চাইছে উনি?

” আমরা কী করলাম স্যার?এটা তো ভুলবশত হয়ে গেছে।”

তূর্য আঙুল উঁচিয়ে বলে।

“‌যাস্ট শাট আপ,ইডিয়েট একটা।”

নাক মুখ কুঁ’চকে নেয় কন্ঠ, এভাবে বকা দিচ্ছে আমাকে?মানা যায় না।

” স্যার আপনি কিন্তু এখন আমাকে শুধু শুধু বকা দিচ্ছেন,এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমি তো সরি বলছি।”

তূর্য দাঁতে দাঁত চেপে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়,ওর পিছু পিছু সহিতাও বেরিয়ে আসে। কন্ঠ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, সবার সামনে এভাবে অপমান করলো? ব’জ্জা’ত স্যার একটা।
____________
ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো বাড়ি, হরেক রকম ফুল দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে। দেখতে বেশ ভালো লাগছে, আজকে নীলা কে দেখতে আসবে,সেই সুবাদে সকাল থেকে সবাই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

” আপু এটা তোমাকে বেশ লাগবে,নাও এটাই পড়ো।”

একটা হলুদ রঙের শাড়ি মেচিং করা ব্লাউজ এনে কন্ঠ নীলার হাতে তুলে দেয়,রিয়া শাড়িটা দেখে বলে উঠে।

” ওয়াও এটা তো সত্যি অসাধারণ, কিন্তু এটা কার শাড়ি কন্ঠ?”

কন্ঠ স্ফীত হেসে বলে।

” এটা মায়ের শাড়ি, আমি কখনও পড়িনি। কিন্তু আপু কে কিন্তু বেশ লাগবে।”

নীলা শাড়িতে হাত বুলিয়ে দেখতে থাকে,এটাই তো ওদের ফুপির শাড়ি, এখনও গায়ের গন্ধটা মিশে আছে।

” জানো আপু আমি এখনও মায়ের জিনিস গুলো থেকে মায়ের শরীরের গন্ধ পাই, ভীষণ ভাবে মনে পড়ে মা কে।”

কথাটা বলার সময় চোখের কোণে থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে কন্ঠের,যা লুকিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করি সে।
নীলা বুঝতে পারে কন্ঠের মন খারাপ হয়ে গেছে তাই সে মন ভালো করার জন্য বলে উঠে।

” এই দেখ একদম মন খারাপ করবি না আমাকে রেডি করে দে তো, সবাই এসে গেলে তো দেরী হয়ে যাবে।”

সাফিন এবং ওর পুরো ফ্যামিলি মানে খান ফ্যামিলি আহমেদ বাড়িতে প্রবেশ করে, শুধু তূর্য বাদে।তার আসার কোনো ইচ্ছা নেই এবং কী সে খুবই ব্যস্ত। কলেজের জন্য তাকে অনেক লেকচার সীট তৈরি করতে হবে,তাই ওকে আর কেউ জোর করেনি,এটা তো শুধু পাকা দেখা হচ্ছে, বিয়ের সময় তো তূর্য কে অবশ্যই থাকতে হবে।
বাড়িতে আসার পর অহনা খান নীলার পাশে কন্ঠ কে দেখে মুচকি হাসেন, হঠাৎ হাসির কারণ বোধগম্য হলো না তার।শাহা খানের আগে থেকেই নীলা কে বেশ পছন্দ তাই অহনার সাথে কথা বলে একে বারে আংটি পরিয়ে দেবে তেমন প্রস্তুতি নিয়ে আসে।

শাফিন খান আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে।

” ভাইয়া আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে আর শাহা তো আগে থেকেই নীলা কে পছন্দ করে এবং কী সাফিনও।ওর বাবা মানে আমার ভাই বছর পাঁচেক আগে সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে, বর্তমানে আমিও ওর চাচা আমিই ওর বাবা। আমাদের যেহেতু সবাই নীলা কে পছন্দ করেছি তাই ভাবছিলাম আংটি বদল করে নিলে ভালো হতো।”

আহাদ আহমেদ সাহাদ আহমেদ,আনিকা আহমেদ ও তনয়া আহমেদ ভীষণ খুশি হয়।তনয়া আহমেদ কন্ঠ কে বলে রান্না ঘর থেকে মিষ্টি নিয়ে আসছে। কন্ঠ তড়িৎ গতিতে ছুটে যায় রান্না ঘরে, সবাই মিষ্টি মুখ করে নেয়,আনিকা আহমেদ সাহাদ আহমেদ কে আলাদা করে সাইটে নিয়ে যান।

” কী হলো তোমার?”

আনিকা আহমেদ ফিস ফিস করে বলেন।

” ছেলের জন্য তো আমরা আংটি নেই নি, এখন কী দেবে?”

আহাদ আহমেদ ওদের কাছে এসে বলে ।

” তোরা এসব নিয়ে চিন্তা করছিস কেন?এই দেখ এটা ছেলের জন্য আগে থেকেই আনিয়ে রেখেছিলাম।”

আহাদ আহমেদ পকেট থেকে সোনার আংটি বের করে দেয় সাহাদ আহমেদের হাতে।চোখ দুটো চিক চিক করে উঠে আনিকা আহমেদের, সত্যি কান্না পাচ্ছে ওনার।তনয়া আহমেদ আনিকার ঘাড়ে ভরসার হাত রাখে।

চলবে…………✨।