#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব১০
তূর্য মায়াকে এক হাতে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল:-
-আমাদের বিয়ে উপলক্ষে সামাজিক ভাবে কোনো অনুষ্ঠান এখনো করা হয়নি। যখন সামাজিকভাবে সবকিছু করা হবে, তখন তোরা যত খুশি আনন্দ করিস। (তুর্য)
ইরা বুকে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে,
মুখে এক চিলতে হাসি এনে তুর্যর কথায় সম্মতি জানালো।
তারপর ইরা, তূর্য এবং মায়ার কাছ থেকে চলে যেতে চাইলেও তূর্য তাকে যেতে দিল না। তূর্য মায়া এবং ইরাকে সঙ্গে নিয়ে একটা টেবিলে বসে পড়লো, তারপর সুন্দরভাবে ডিনার করলো, পুরোটা সময়ই ইরা অনেক হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তূর্য চোখ ফাঁকি দিলেও মায়ার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি ইরা। মায়ার কাছে কেন যেন ইরার ওই হাসি গুলোকে মিথ্যা মনে হল। তবুও মায়া এটা নিয়ে কাউকে কোন প্রশ্ন করল না।
পুরোটা সময় ইরার মুখে হাসি থাকলেও চোখগুলো যেন অন্য কথা বলছিল।
ডিনার শেষে তোজো মায়া এবং ইরাকে সাথে করে রওনা হয় বাসার দিকে।
তুর্য যে বিল্ডিংয়ে থাকে তার পাশের বিল্ডিং-এ ইরার ফ্ল্যাট, তাই ইরাও আর অমত করল না।
সারাটা রাস্তা গাড়িতে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলল না।
ইরার বিল্ডিং এর সামনে গাড়ি আসতেই এরা গাড়ি থেকে নামার পূর্বে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল :-
-নিজের এবং তূর্যর খেয়াল রেখো। (ইরা)
ইরা গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে তূর্য এবং মায়াকে বিদায় জানালো। তারপর তূর্য আবার গাড়ি স্টার্ট দিল নিজেদের বিল্ডিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
অল্প সময়ের মধ্যে তারা নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে আসলো। তুর্যর গার্ডরা শপিং এর সমস্ত জিনিসপত্র আগেই ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়েছে, তাই আসার সময় মায়া এবং তুর্যকে কোন রকম কষ্ট পোহাতে হলো না।
বাসায় ফিরে তূর্য এবং মায়া যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো, তারপর তূর্য তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে অফিসের কিছু ফাইল চেক করতে।
আর ওদিকে মায়া আতিয়া বেগমের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে থাকলো।
কথা বলতে বলতে মায়া আজকে কেনা সবকিছুই আতিয়া বেগমকে দেখালো।
কথা বলা শেষ হতেই মায়া ধীরে ধীরে রওনা হলো তূর্য রুমের দিকে। গিয়ে দেখল তূর্য বিছানায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
তূর্য মায়াকে দরজার কাছে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে ভিতরে আসতে বলল।
মায়াও তূর্যর কথায় ভিতরে চলে আসলো।
-তারপর তূর্য মায়া কে জিজ্ঞেস করল :-
কি ব্যাপার এখনো ঘুমাওনি কেন? (তুর্য)
-এমনিতেই ঘুম আসছিল না তাই। (মায়া)
-রুমে গিয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করো, সকালে যেন ঘুম থেকে উঠতে লেট না হয়,
কাল কিন্তু তোমার ভার্সিটির প্রথম দিন, (তুর্য)
-কাল আমার ভার্সিটির প্রথম দিন সেই আনন্দেই তো আমার ঘুম আসছে না। (মায়া)
-তুমি কিছু খাবে (তুর্য)
-না,না মাত্রই তো এতকিছু খেয়ে আসলাম। (মায়া)
-ঠিক আছে। (তুর্য)
-আপনার রুমের বেলকনি+মিনি ছাদটা অনেক সুন্দর।
কিন্তু ওখানে একটা জিনিস নেই। (মায়া)
-কি জিনিস? (তুর্য)
-একটা দোলনা (মায়া)
-তোমার দোলনা ভালো লাগে? (তুর্য)
-অনেক বেশি ভালো লাগে। (মায়া)
-ঠিক আছে, আমি কালকের মধ্যেই তোমার জন্য সুন্দর দেখে একটা দোলনা আনিয়ে দেবো। (তুর্য)
-সত্যি? (মায়া)
-হুম (তুর্য)
তূর্যর কথা শুনে মায়া অনেক খুশি হয়ে গেল।
এবং নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
__________________
সকাল বেলা,
মায়া অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠলো,
আজ থেকে সে নিজের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পা বাড়াচ্ছে।
তাই ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এসে ফজরের নামাজ পড়ে নিলো।
খান বাড়িতে থাকতে মায়া প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে, হাঁটতে বের হতো খান বাড়ির বাগানের দিকে।
সেই কারণে মায়ার আর এই সময়টা ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না।
তাই মায়া নিজের রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল তূর্য রুমের দিকে। তূর্য রুমের দরজাটা খোলাই ছিল। তাই মায়া প্রথমে একবার উঁকি দিয়ে নিল, তারপর ধীরে ধীরে রুমের ভিতর ঢুকে গেল। মায়া রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো তূর্য বিছানায় নেই।
তূর্যকে বিছানায় না দেখে মিনি-ছাদের দিকে এগোতেই দেখতে পেল তূর্য সেখানে পুশ-আপ করছে।
তুর্যর পরনে শুধু কালো রংয়ের একটি ট্রাউজার
ছিল।
তূর্যর জিম করা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে,
যা দেখতে মায়ার কাছে খুবই আকর্ষণীয় লাগছিল।
অন্যদিকে আবার তূর্যর এমন উন্মুক্ত শরীর দেখে মায়া কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছিল।
কিন্তু মায়া লজ্জা পেলেও মায়ার নির্লজ্জ চোখ দুটো বারে বারে সেদিকেই তাকাচ্ছিল।
তখনই তূর্য বলে উঠলো :-
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাবে নাকি? (তুর্য)
কথাটা মায়ার কানে আসতেই লজ্জায় মায়ার মরে যেতে ইচ্ছে করলো।
তাই কথা ঘোরানোর জন্য মায়া বলে উঠলো :-
-ফুল গাছগুলোতে কি পানি দেওয়া হয়েছে?
নাকি আমি দিয়ে দেবো?(মায়া)
তুর্য তোয়ালে দিয়ে নিজের ঘাম মুছতে মুছতে বলল:-
কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছো? (তুর্য)
মায়া কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল :-
-আমি এখন যাই, ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেই। (মায়া)
মায়া কথাটা বলেই দৌড়ে তূর্যর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তূর্য এভাবে মায়ার চলে যাওয়া দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।
__________________
সকাল ৮:৩০ মিনিটে তূর্য এবং মায়া একসাথে ব্রেকফাস্ট করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পড়লো।
তুর্য প্রথমে মায়াকে সাথে করে চলে গেল মায়ার ভার্সিটিতে, সেখানে গিয়ে ভার্সিটির কয়েকজন প্রফেসরের সঙ্গে মায়ার পরিচয় করিয়ে দিল।
তারপর ভার্সিটিতে মায়াকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে তূর্য রওনা হলো নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে।
তূর্য মায়াকে একা ছেড়ে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে না তাই গোপনে সে মায়ার দেখাশোনা করার জন্য
৪ জন বডিগার্ড পাঠিয়ে দিয়েছে।
ওদিকে ভার্সিটিতে দু ঘন্টা যেতে না যেতেই মায়া একটা বান্ধবী জুটিয়ে নিয়েছে। মেয়েটার নাম জাইফা, জাইফার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দুটোই লন্ডন শহরে, কিন্তু জাইফার মা বাংলাদেশের মেয়ে,
তাই মায়ের মুখে বাংলা ভাষা শুনতে শুনতে,
ছোট থেকেই জাইফার বাংলা ভাষার উপর ভালোই আয়ত্ত আছে,
সে খুব সুন্দর ভাবে বাংলা ভাষা বলতে এবং বুঝতে পারে।
ভার্সিটির প্রথম দিনটা জাইফার সঙ্গে মায়ার বেশ ভালোই কাটলো।
ভার্সিটিতে মায়ার ক্লাস শেষ হতেই, মায়া ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দেখল তূর্য তার গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু একটা করছে।
মায়াকে আসতে দেখে তুর্য তার ফোনটা পকেটে পুরে নিল।
তারপর মায়া আসতেই মায়াকে জিজ্ঞেস করল :-
-ভার্সিটির প্রথম দিন কেমন কাটলো? (তুর্য)
মায়া উৎফুল্ল হয়ে জবাব দিল :-
-আলহামদুলিল্লাহ,
অনেক ভালো কাটলো আজকের দিন টা।
আজকের দিনটা এখনো আমার কাছে স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। (মায়া)
-তোমার মুখে এই হাসিটা দেখার জন্যই তোমাকে ওভাবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। (তুর্য)
তূর্যর কথার বিপরীতে মায়া আর কিছু বলল না।
পুরোটা রাস্তা দুজনেই নিরব ছিল, তূর্য মায়াকের সাথে করে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসলো। তারপর দুজন একসাথে লাঞ্চ করে তু্র্য আবার অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো।
আর যাওয়ার সময় মায়াকে বলে গেল তূর্য ছাড়া অন্য যেই আসুক মায়া যেন দরজা না খুলে।
মায়া ও ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে তূর্যর কথায় সম্মতি জানালো।
ফ্রেশ হয়েই মায়া চলে গেল তূর্যর রুম, মিনি-ছাদের দিকে এগিয়ে যেতে মায়া দেখল সুইমিংপুলের পাশে খুব সুন্দর একটি দোলনা রাখা হয়েছে।
দোলনা দেখে মায়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাচতে শুরু করলো।
আর ওদিকে তূর্য অফিসের কেবিনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ল্যাপটপের স্ক্রিনে মায়ার সেই পাগলামো গুলো দেখে হাসতে থাকলো।
_______________
রাতে তূর্যর ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল, মাঝখানে কয়েকটা দিন অফিসে ছিল না তাই আজ একদিনে কয়েকটা মিটিং সারতে হয়েছে তাকে।
রাত তখন বারোটা, তূর্য ভেবেছিল মায়া হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দেখতে পেল ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মায়া টিভি দেখছে।
তূর্য কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল
-এত রাতে এখানে কি করছো (তুর্য)
-টিভি দেখছিলাম।(মায়া)
-এটা কি টিভি দেখার সময় (তুর্য)
-এটা কি বাসায় ফেরার সময়? (মায়া)
-কোম্পানিতে কাজের অনেক চাপ ছিল আজ, একসাথে অনেকগুলো মিটিং ফিক্স করে রাখা হয়েছিল আজকের জন্য।
সবগুলো মিটিং শেষ করে তবে আসলাম।
ডিনার করেছো? (তুর্য)
-না চলুন একসাথে ডিনার করবো। (মায়া)
-এত রাত হয়েছে তবুও ডিনার করোনি?
আমার জন্য অপেক্ষা করার কি দরকার ছিল?
ডিনার করে নিলেই তো পারতে। (তুর্য)
-আমার একা একা খেতে ভালো লাগে না।
সে যাই হোক দোলনাটা কিন্তু অনেক সুন্দর হয়েছে। (মায়া)
-তোমার পছন্দ হয়েছে? (তুর্য)
-অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে। (মায়া)
তূর্য আর কথা বাড়ালো না, ফ্রেশ হয়ে এসে দুজন একসাথে ডিনার করলো। তারপর যে যার রুমে চলে গেল ঘুমানোর জন্য।
________________
দেখতে দেখতে ছয়টা মাস পার হয়ে গেল
এই ছয় মাসে মায়া এবং তূর্যর মাঝে খুব সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
তূর্য প্রতিদিন মায়াকেও ভার্সিটিতে দিয়ে তারপর অফিসে যায়, আবার মায়ার ভার্সিটির ক্লাস শেষ হওয়ার আগে ভার্সিটির সামনে উপস্থিত হয় মায়াকে নেওয়ার জন্য।
গত ৬ মাসে এই প্রথম কোম্পানির অনেক বড় একটা প্রজেক্টের কাজে তূর্যকে আফ্রিকা যেতে হবে দুই দিনের জন্য।
এদিকে মায়ার এক্সাম থাকায় মায়াকে সাথে নিয়ে যেতে পারছে না। আবার শুধুমাত্র মেডদের উপর ভরসা করে মায়াকে এখানে রেখে যেতে পারছে না।
তাই তুর্য সিদ্ধান্ত নিল, এই দুদিনের জন্য মায়াকে ইরার কছে রেখে যাবে।
যদিও মায়া তুর্য বলেছিল যে, জাইফাকে সঙ্গে করে সে ফ্ল্যাটেই থাকবে।
কিন্তু জাইফা মেয়েটা তূর্য খুব বেশি পরিচিত নয়,
তাই মায়াকে নিয়ে তূর্য কোনো প্রকার রিক্স নিতে চাইলো না।
তূর্য মায়াকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইরার ফ্ল্যাটের সামনে।
গত ছয়টা মাসে সাথে ইরার সাথে তূর্যর দেখা হয়েছে হাতে গোনা কয়েকবার। ইরা এখন কেনো যেন তূর্যর সামনেই আসতে চায় না।
তূর্য আগেই ফোন করে ইরাকে সবকিছু বলে রেখেছিল,
কলিং বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই ইরা এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিল।
তুর্য ইরার ফ্ল্যাটে মায়াকে রেখে তখনই রওনা হলো এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে।
যাওয়ার সময় তুর্য বারে বারে ইরাকে বলে গেছে ইরা যেন নিজে গিয়ে মায়াকে ভার্সিটিতে দিয়ে এবং নিয়ে আসে।
ইরাও তূর্যর কথায় সম্মতি জানিয়েছে।
ইরা তার পাশের রুমেই মায়ার থাকার ব্যবস্থা করেছে।
সারাটা দিন খুব সুন্দর ভাবেই কাটলো মায়ার,
রাতে ইরা এবং মায়া দুজন একসাথে ডিনার করতে বসলো।
মায়া কিছুক্ষণ পরপরই ইরার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে ছিল। ইরাও সেটা খেয়াল করলো কিন্তু মায়াকে কিছুই বলল না।
এদিকে মায়া অপলক ভাবে ইরার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে :-
একটা মেয়ে এতটা সুন্দরী কিভাবে হয়?
মায়ার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি হয়তো ইরা।
ইরার সামনে মায়ার নিজের সৌন্দর্যকে দুধ ভাত মনে হচ্ছিল।
নিঃসন্দেহে ইরা মায়ার চেয়ে অধিক সৌন্দর্যের অধিকারীনি।
ডিনার শেষে ইরা মায়াকে বলল :-
-মায়া তুমি এবার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। (ইরা)
-আপু আমি তো ওই রুমে ঘুমাবো না আমি তোমার সাথে থাকবো আর সারারাত গল্প করবো। (মায়া)
ইরা আর না করতে পারল না।
তাই ইরা মায়াকে সাথে করে নিজের রুমে চলে গেল।
বিছানায় শোয়ার পরে তারা দুজনেই কিছুক্ষণ নিজেদের ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
তারপর মায়া একসময় নিজের ফোন বিছানার পাশে রেখে বলল :-
-আচ্ছা আপু তোমার আব্বু আম্মু কোথায় গেছে? ওনাদের তো বাসায় দেখলাম না। (মায়া)
-উনারা আমার সাথে থাকে না। (ইরা)
-কেন? (মায়া)
-সে অনেক লম্বা ঘটনা, এখণ সেগুলো বোলতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে। আর কালনা তোমার এক্সাম আসছে, তুমি ঘুমাও এখন। (ইরা)
-আপু বলোনা প্লিজ, প্লিজ। আমি তোমার সম্পর্কে সব কিছু জানতে চাই। (মায়া)
ইরা মায়ার মুখের দিকে তাকালো, দেখল মায়া খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে, মায়ার এত আগ্রহ দেখে ইরা বলতে শুরু করল তার কষ্টে ভরা অতীত।
-আমার জন্ম এবং শৈশব কেটেছে ঢাকায়।
বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে আমি, খুব আদরেই বেড়ে উঠছিলাম।
কিন্তু আমার বয়স যখন ৮ বছর হলো,তখন থেকেই দেখতাম বাবা অকারণেই আমার মায়ের গায়ে হাত তুলতো।
আমার মা সংসারটাকে ধরে রাখার অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি যখন ক্লাস ফোরে তখন কোন এক অজানা কারণে আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়।
আমার ঠাই হয় মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে।
কিছুদিন পরে জানতে পারি আমার বাবা নাকি আমরা চলে আসার চারদিন পরেই ঘরে নতুন বউ তুলেছিলো। আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স এর কারণ মূলত ওই মহিলাই ছিল।
তার এক বছর পরে আমার মাকেও মামারা জোরকরে অন্য এক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়।
তখন থেকে আমি আমার নানীর কাছে বড় হতে লাগলাম।
আমার বাবা প্রতি মাসে মোটা অংকের একটা এমাউন্ট পাঠিয়ে দিতো আমার ভরণপোষণের জন্য।
কিন্তু আমার ভরণপোষণের জন্য কখনো সেই টাকাগুলো খরচ করতে হয়নি, কারণ আমার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিল আমার বড় মামা।
আমার বড় মামার তিনটা ছেলে থাকলেও কোন মেয়ে সন্তান ছিল না।
তাই আমার বড় মামা এবং মামি আমাকে খুব ভালবাসতেন।
ইমন এবং আমি ক্লাস সিক্স থেকে একসাথে পড়তাম, তখন থেকেই আমরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।
H.S.C কমপ্লিট করে আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করব।
যদিও আমার মামা মামি কোন ভাবেই আমাকে একা ছাড়তে চাইছিলো না, তবুও তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে আমি লন্ডনের এক ভার্সিটিতে ভর্তি হই।
ততদিনে আমার মাও তার নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো,
সেই সংসারে আমার দুটো জমজ ভাইয়ের জন্ম হয়।
আমার মা নিজের সংসার সামলিয়ে আমার কথা ভাবার মত সময়ই আর পেল না।
তারপর লন্ডনে এসে আমাদের বন্ধুত্ব হলো তূর্য সাথে।
তখন থেকেই আমরা তিনজন বেস্ট ফ্রেন্ড। (ইরা)
ইরা জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার কথা শুনে মায়ার চোখের কোনে পানি চলে আসলো।
তখনই মায়া হঠাৎ বলে উঠলো :-
-আপু তুমি তুর্যকে খুব ভালোবাসো তাই না? (মায়া)
মায়ার মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে ইরা…….
চলবে।