#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_৩
-‘আমার চিৎকার ওনার কান পর্যন্ত তো যাওয়ার কথা না,প্রাইভেট কাড়ের গ্লাস যদি দেওয়া থাকে তাহলে বাইরে কোন শব্দ তো ভেতরে প্রবেশ করবে না। তারমানে গ্লাস খোলা ছিলো তার কারনে আমার চিৎকার ওনার কান পর্যন্ত সহজে পৌঁছে গেছে। ওনি কি আমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনবে। আমার জন্য বেচারা বিপদে পড়বে গাড়ি থেকে নামলেই।
“গাড়ি থেকে নামতেই আমিতো শক খাওয়ার মতো উপক্রম। এটা আর কেউ না ভার্সিটির বড় ভাই নীল। ওনি আবার কোথা থেকে আসলো,ওনাকে দেখে আমি প্রান ফিরে পেলাম। এখন বুকের মাঝে একটু হলেও সাহস হয়েছে। এই এই আপনি না ফারিয়া.? আমি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালাম। আপনারা এভাবে ওনাকে আটকে রেখেছেন কেনো.?
‘ওমনি বলতে লাগলো,কে রে ভাই তুই,শুধু শুধু এসব ঝামেলার ভেতরে আছিস না কথাগুলো নীলকে ইঙ্গিত করে বলছে ছেলে দুইটা আর এদিকে আমার মাথায় পিস্তল ধরে আছে। আপনারা ছেড়ে দিন ফারিয়াকে,আমিও চাইনা আপনাদের সাথে কোন প্রকার ঝামেলা করতে,তাই ভালোই ভালোই বলছি ছেড়ে দিন। যদি না ছাড়ি তাহলে কি করবি.?
কি করবো সেইটা পড়ে টের পাবি,তাহলে তোরা মানে মানে ছাড়বি না.?
-“না ছাড়বো না কি করবি আমাদের.? বস বস একটা ঝামেলা হয়ে গেছে, একজন এসে আমাদের ঝামেলা করছে কথাগুলো ফোনের ওপাশে থাকা বসকে বলছে। কয়েক মিনিট পর একটা গাড়ি নিয়ে চুল বড় বড় লোক উপস্থিত হলো। নীল একপাশে দাড়িয়ে আছে,আর তার পাশে গাড়ির ড্রাইভার আর সুরেচ ভাইয়া মানে নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড রয়েছে। মিস্টার নীল তুই এখানে.?? তুই আমাদের কাজে ঝামেলা করতে এসেছিস,তোকে আজ প্রানে মারবো,কেউ তোকে বাঁচাতে আসবে না। আজকে রাজা চৌধুরীর হাতে তোর মৃত্যু লেখা আছে। কথাগুলো বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকে রাজা চৌধুরী।
‘দেখ রাজা তোর সাথে আমার অনেক পুরানো শত্রুতা। কিন্তুু আমি চাই না তোর সাথে নতুন করে কোন ঝামেলা করতে তুই ফারিয়া ভালোই ভালোই ছেড়ে দিবি। আমি চলে যাবো। কেনো এই মেয়েটা তোর কি হয় রে.? যার জন্য তুই আমার সাথে ঝামেলায় জড়াছিস..?একটু পর ফারিয়া পিস্তল ধরা লোকটার হাতে কামড় বসিয়ে দিলো সজরে,তারপর দৌড়ে নীলের পিছড়ে দাড়িয়ে পড়লো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চোখে মুখে ভয়ের ছাপ,নীলকে দেখে ধরে প্রান ফিরে পেয়েছে নতুন করে।নীল ইশারা করে সুরেচকে বললো,ফারিয়াকে একটু সাইডে নিয়ে যেতে।
-“নীল হেঁটে গিয়ে রাজা চৌধুরীর সামনে দাঁড়াল। চোখ দিয়ে যেন ওর অগ্নিকুন্ডের লাভা গলে পড়ছে। নীল রাজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,তোর আমাকে মারার খুব শখ তাইনা.?চলে আজকে তোর সব আশা পূরণ করে দিবো।নীল সবাইকে একটা ফেরার চান্স দেয় তাই তোকেও একটা সুযোগ দিচ্ছি। যদি আমাকে পরাস্ত করতে পারিস,তাহলে তুই আমার সাথে যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস। আর যদি না পারিস তাহলে বাকিটা তখনই দেখতে পারবি। তো লেটস স্টার্ট দেন।
‘নীল হাতের ঘড়ি খুলে পাশে রাখলো তারপর নিজের হাত গোটাতে লাগলো।(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
রাজা চৌধুরী মনের ভেতর ভেতরে ভয় পেলেও উপরটা হাসি দিয়ে নীলের সাথে তুমুল লড়াই করতে নিজেকে রেডি করে নিলো। রাজা চৌধুরী আর মিস্টার নীলের ভেতরে শুরু হয়ে গেলো লড়াই। আর যথারিতি যেমনটা হয় ঠিক তেমনটাই হলো। নীলের বলিষ্ঠ শরীরের দক্ষতা আর ফাইটিং স্কিলের সামনে রাজা চৌধুরী ৩ মিনিও টিকতে পারলো না। কাপোকাত হয়ে নিচে চিত হয়ে পড়ে রইলো।নীল এবার রাজা চৌধুরী বুকের উপর এক হাটু ভর দিয়ে বসে ক্রুদ্ধ কন্ঠ বলে উঠলো,তুই আজ সবথেকে বড় ভুলটাই করলি আমার সাথে লড়তে এসে। যার কোন মাফি নেই। আছে শুধু ভহংকার শাস্তি। যা দেখে মানুষের রুহ কেঁপে উঠবে। তোকে কত সুন্দর করে সম্মানসূচক ভাবে বলেছিলাম,ফারিয়াকে ছেড়ে দে। না জানি তুই রাস্তায় কত মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে কত সর্বনাশ করেছি। আজ যদি তোকে ছেড়ে দিয় তাহলে,আমার একটা ভুলের কারনে অনেক মেয়ের নিষ্পাপ প্রান চলে যাবে।
-“রাজা চৌধুরী আকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো,প্লিজ নীল আমাকে মাফ করে দাও। সত্যি নীল আমার বড় ভুল হয়ে গেছে। এমন ভুল আমি আর কখনো করবো না। আমার প্রানটা ভিক্ষা দাও। তুই না আমাকে মেরে ফেলবি বলেছিলি,জীবন মরনের মালিক তো একজন। সে যাকে রাখবে সেই থাকবে।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
‘নীল বলে উঠলো,তুই ভুল করলে মাফ করে দিতাম। কিন্তুু তুইতো চেয়েছিলি একটা জীবনকে নষ্ট করতে। দেখ এখন আমি তোর জীবনটাকে কিভাবে শেষ করি। নীলের এমন কথা শুনে রাজা চৌধুরীর গলা শুকিয়ে কাট হতে থাকে,ভয়ে সে ঢোক গিলতে থাকে। বুঝতে পারছে সময়ের সাথে সাথে তার আয়ু কমে আসতেছে। নীল ওর ব্লেজারের পেছন থেকে একটা ধারালো ছুরি বের করলো। তারপর রাজা চৌধুরী হাতটা মাটির সাথে চেপে ক্ষিপ্ত সুরে বলতে লাগলো, তোর এই নোংরা হাত দিয়ে না জানি কত শত মেয়ের শরীরে স্পর্শ করেছিস,না জানি কত পাপ করেছি এই হাত দিয়ে,তোর এই হাত রাখার কোন অধিকার নেই। কথাটা বলেই নীল চাকু দিয়ে হাতের কব্জি থেকে কেটে ফেললো। এভাবে অপর হাতটিও একইভাবে কেটে ফেলে। রাজা চৌধুরী গগনবিহারী আর্তনাদ করতে লাগলো।
”একটু পর নীল রাজা চৌধুরী জিহ্বা টেনে ধরে বললো,এই জিহ্বা দিয়ে তুই আমাকে মেরে ফেলার কথা বলেছিলি এই জিহ্বা রাখার কোন অধিকার নেই বলেই চাকু দিয়ে কেটে দেয়।(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
রাজা চৌধুরী মাটিতে কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে থাকে। একটু পর নীল রাজা চৌধুরীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,এই চোখ দিয়ে না জানি কত মেয়ের অর্ধনগ্ন আপত্তিকর জায়গাগুলো দিকে নজর দিয়েছি,এই চোখ রাখার ও অধিকার হারিয়ে ফেলেছিস বলেই, চোখদুটো উপরে ফেলে। রাজা চৌধুরী রক্তে পুরো মাটি ভিজে তরতর হয়ে যায়। নীল এবার উঠে দাড়িয়ে রাজা চৌধুরীর ক্ষতবিক্ষত শরীরের দিকে তাকিয়ে বললো,আমি তোকে জানে মারবো না। তোর মৃত্যুর জন্য তুই নিজে হাহাকার করবি আর বুঝতে পারবি তোর করা সকল কৃতকর্মগুলো কথা।
-‘নীলের সারা শরীরে রক্ত লেগে রয়েছে। রাজা চৌধুরীর সঠিক হিসাবটা আজকে বুঝিয়ে দিতে পেরে নীলের মনের ভেতরে ভালো লাগছে। একটু পর দেখলাম নীল ভাইয়া আমার পাশে এসে দাড়ালো। ওনার শরীরে রক্ত দেখে আমি একপ্রকার ভয় পেলেও, সাহস করে বলি,আপনি ঠিক আছেন তো.? ওনি সায় জানালো মাথা নাড়িয়ে। তারপর ওনাকে একে একে সবকিছু বলতে লাগলাম। হঠাৎ ওনার বাম হাতের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম রক্ত পড়ছে,বুঝতে বাকি রইলো না ফাইটিং করতে গিয়ে হয়তো কেটে গেছে।
“আমি দেরি না করে খপ করে ওনাকে বললাম,আপনার হয়তো হাত কেটে গেছে,প্লিজ একটু এগিয়ে দিন হাতটা। ওনি বলতে লাগলো,কোন প্রয়োজন নেই। তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আপনি বললেই হবে তেমন কিছু হয়নি,হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে, হাতটা আমার দিকে এগিয়ে দিন। কিরে নীল এতবার করে যখন বলছে তখন দিতে সমস্যা কি কথাগুলো সুরেচ নীলের দিকে ছুড়ে মারলো। আমার অনেক জোরাজোরি আর সুরেচ ভাইয়ার কারনে একপ্রকার বাধ্য হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিলো,নিজের কাছে থাকা ওড়নাটা দিয়ে ওনার হাতটা বেধে দিলাম।
‘এই মেয়েটা কেনো বারবার আমার সামনে পড়ে যায়.?আর এই মেয়েটার সাথেই কেনো বারবার আমার দেখা হয়ে যায়। মেয়েটার চোখ মুখ কিন্তুু মায়াভরা। এই মেয়েটার দিকে তাকালেই মনে হয় তার সাথে আমার হাজার বছরের পরিচিত। মেয়েটাকে অনেকটা ভালো লাগে। কিরে নীল দিনে দুপুরে কি স্বপ্ন দেখা শুরু করলি,সুরেচের কথায় আমার সকল ভাবনার ছেদ কাটলো। কি সব ফালতো কথা ভাবা শুরু করেছি ইদানিং। মেয়েটাকে কি একা ছাড়া ঠিক হবে.?কথাগুলো নিজের মনের কাছে নিজে প্রশ্ন করছি।
-“ধন্যবাদ ভাইয়া,আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চায়না। আপনি না থাকলে আজকে হয়তো আমার শেষরক্ষা হতো না। আমার উপর থেকে কেনো জানি বিপদ সরতেই চায়না। কিছুমাস আগে আপনি কলেজে আমাকে বকাটে ছেলেদের হাত থেকে আজকে আবার। আপনি না থাকলে আমার যে কতবড় বিপদ হয়ে যেতো বলে বুঝাতে পারবো না। মিস্টার নীল আমার হাতে একটা কাড ধরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য একটা জব ম্যানেজ করে দিতে পারি,এতে করে তোমার পড়াশোনা শেষ করতে সমস্যা হবেনা। আমি চাচ্ছি না তুমি টিউশনি করতে এসে বিপদের সম্মাখীয়ে পড়ো। আমি না হয় আজকে তোমাকে বাঁচালাম,কিন্তুু প্রতিদিন তো আর বাচাতে পারবো না।
‘ওনার হাত থেকে কাডটা নিয়ে চলে যেতে নিলেই ওনি বলে,মিস ফারিয়া তুমি আমাদের সাথে গাড়িতে যেতে পারো। আমি ওনার কথার উপরে আর কোন কথা না বলে চুপ করে ওনাদের গাড়িতে উঠে বসলাম। ওনি ড্রাইভারকে বললো সাবধানে গাড়ি চালাতে। আমাকে নামিয়ে দিয়ে ওনি চলে গেলো।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
-“আমাকে দেখে মা বলতে লাগলো,আজকে যে আজকে একটু দেরি হলো.?আমি মাকে বললাম,রিকশা পাচ্ছিলাম না তাই একটু দেরি হয়েছে। মাকে মিথ্যাটা বলতে হলো একপ্রকার বাধ্য হয়ে। একটু পর ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে আছি। মা খাওয়ার জন্য ডাকছে, তবে একটু পর বাবা আসলে তারপর একসাথে খাবো। বাবার সাথে খাওয়াটা আমার একপ্রকার অভ্যাস হয়ে গেছে, তবে বাবাও কিন্তুু আমাকে না নিয়ে কখনো একা খান না।
“নীল বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে দিয়ে সোফায় বসে আছে। তখুনি নীলের সকল ঘোর কাটিয়ে একজন সার্ভেন্ট এসে বলতে লাগলো, স্যার আপনার ডিনার রেডি। নীল সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললো,ওকে ইউ ক্যান গো নাও।সার্ভেন্ট টা আস্তে করে মাথা ঝাকি চলে গেলো।বেডরুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ঘড়ি খুলতেই ওড়নার সাথে ঘড়ি বেধে গেলো। তখুনি নীলের মনে পড়ে যায় ফারিয়ার কথা। ওড়নার দিকে তাকিয়েই মনে পড়ে, ফারিয়ার সেই নিষ্পাপ চেহারাটা,তার হাসিটা, মনে পড়তেই নীলের ঠোঁট দুটো আপনা আপনি হাসির রেখায় প্রসারিত হয়ে গেলো।নীল মনে মনে ভাবতে থাকে আসলেই মেয়েটা নিষ্পাপ।
‘নীল হাত থেকে ওড়নার বাধন খুলতেই আয়নার দিকে চোখ পড়ে নীলের।আয়নার দিকে তাকাতেই,,,
চলবে,,