#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_৭
“-শুধু একবার দেখা দাও ফারিয়া। আমি তোমাকে আবার নতুন করে ফিরে পেতে চাই। বিশ্বাস করো আমি নিজেও বুঝতে পারিনি দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তোমাকে এভাবে মায়ায় জড়িয়ে ফেলবো। এই মায়াকে আমি কি নাম দিবো বলো.?আমি খুব বড় ভুল করেছি মায়ের কথা শুনে দ্বিতীয় বিয়ে করে। আতিক বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার ফোনটা বেজে উঠে। আতিক জানে সামিয়া কল করেছে,কিন্তু আপাতত সামিয়ার সাথে আতিকের কোনপ্রকার কথা বলার ইচ্ছে নেই। তাই আতিক কলটা কেটে দেয়।সামিয়া আবার পুনরায় কল করে। আতিক বিরক্তিকর হয়ে ফোনটা কেটে দেয়। আজ সে বাড়িতেও যাবে না। অফিসেই কাটিয়ে দিবে রাতটা।
‘আতিক এভাবে ফোন কেটে দেওয়ায়,সামিয়া নামক রমনীর প্রচন্ড অভিমান হয়।যাকে বলে বেশ ভালো রকমের অভিমান। আচ্ছা আতিক কি বুঝে না সামিয়াকে তাকে কতটা ভালোবাসে। সামিয়ার সকল চিন্তা জুড়ে রয়েছে আতিক, এটা কি আতিক একটুও বুঝতে পারেনা। সামিয়া একরাশ অভিমান নিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। আজকে আসুক আতিক,তার সাথে কথা বলবে না বলে সিদ্ধান্ত নেই সামিয়া।
“সকাল হলে ঘুম থেকে উঠে গোমড়া মুখে নিয়প নিচে নামে সামিয়া।আতিক এর মা নারগিস বেগম তা বুঝতে পারে তার মন খারাপের কারনটা। আতিক কালকে সারারাত বাসার ফিরিনি এমন কি সামিয়া বারবার কল করলেও একটিবারের জন্য রিসিভ পর্যন্ত করি। এমনকি সে নিজে থেকে একটিবার কল করিনি। নাগরিস বেগম অবশ্যই ফোন করে জেনে নিয়েছে,আতিক অফিস এর কাজের প্রচন্ড চাপের কারনে বাসায় ফিরতে পারবে না।নাগরিস বেগম সামিয়ার পাশে এসে বললেন,
-‘মন খারাপ করো না মা। আতিক এর অফিসের কাজে এখন প্রচন্ড চাপ যাচ্ছে, তাই হয়তো তোমাকে কল করতে পারিনি।আমি একটু পর আতিক কে কল করে বলে দিবো,আসার পথে তোমাকে ভার্সিটি থেকে একবারে সাথে করে নিয়ে আসতে। নাগরিস বেগমের কথা শুনে সামিয়া নিজের অভিমান টুকু প্রকাশ করে মনে মনে বলে,কি জানি।তোমাকে আর কি বলি মা।আতিক আজ কাল একটু বেশিই ব্যস্থ দেখাচ্ছে আমাকে।সে কি জানে না তার এই ব্যস্থতা আমাকে কতটা পুড়াচ্ছে ভেতর থেকে।
‘নারগিস বেগম সামিয়ার থুতনি উচি করে বলতে থাকে,একদম মন খারাপ করে থাকবে না মা।তুমি তো জানো আতিক তোমাকে কতটা ভালোবাসে। তুমি তো জানো আজ কাল আতিক একটু অফিসের কাজে ব্যস্থ তাই আরকি তোমাকে সময় দিতে পারছে না।
-কিন্তু তাই বলে আমাকে এভাবে অবহেলা করবে?মাঝে মাঝে আমার মতো মনে হয় আতিক আমাকে ভালোই বাসে না। নারগিস বেগম বলতে থাকে,এভাবে বলো না। সে তোমাকে ভালোবাসে বলেই ছয় বছরের সংসার ভেঙে সামিয়াকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করেছে।আচ্ছা তুমি বরং এখন আতিক এর সাথে কথা বলে নাও আমি বলছি একটু পর।
-আতিককে কল করে তার মা নারগিস বেগম জানিয়ে দেয়,আসার পথে ভার্সিটি থেকে সামিয়াকে নিয়ে আসতে। আতিক অফিসের কাজগুলো ঠিকঠাক করে সামিয়াকে নিয়ে আসতে যায়।আতিক ভাবে আজ সকাল সকাল গিয়ে সামিয়ার একরাশ অভিমান ভাঙাবে। তাকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যাবে আর কিছুটা সময় ভার্সিটিতে কাটাবে।
‘এদিকে অনেকদিন ক্লাসে যায়নি ফারিয়া,বাসা থেকে খানিকটা হেটে মোড়ে দাড়িয়ে থাকে রিকশার জন্য। এমন সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিল নীল। হঠাৎ তার চোখ পড়ে ফারিয়ার দিকে, জরুরি একটা কাজে যাচ্ছিলো। হাজারো জরুরি কাজ থাকলেও সে এই সুযোগ আদেও হাতছাড়া করবে না। নীল ব্রেল কশে গাড়িকে থামিয়ে দিলে ফারিয়া চমকে উঠে। ফারিয়ার সকল ঘোর কাটিয়ে নীল বলে উঠে,আর দাড়িয়ে থাকতে হবে না গাড়ির জন্য। ফারিয়ার না করা সাধ্য আদেও কি আছে.? ফারিয়া কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে। একটু পর নীল ফারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,আমার নাম্বারটা তো তোমার কাছে আছে,ভার্সিটি শেষ করে আমার নাম্বারে কল করবে। আর আজকের পর থেকে যখন ভার্সিটিতে আসতে ইচ্ছে হবে আমাকে কল করবে ওকে। ফারিয়া পড়ে গেলো কঠিন পরিস্থিতিতে। কি বলবে সে এখন ভেবে পাচ্ছে না। ফারিয়ার সকল ঘোর কাটলো নীলের কথায়,কি হলো চুপচাপ যে.?এমনি। আমি কিছু প্রশ্ন করেছি সেগুলো উত্তর এখনো পায়নি কিন্তুু। আচ্ছা জানাবো বলে ফারিয়া মাথাটা নিচু করে থাকে।
-একটু পর ভার্সিটির কাছাকাছি এসে গাড়ি থামিয়ে ফারিয়া নামিয়ে চলে গেলো নীল। নীলের জরুরি কাজ থাকাতে সে ভার্সিটির ভেতরে রেখে আসতে পারলো না ফারিয়াকে।
“এদিকে আতিক সামিয়াকে নিতে ভার্সিটিতে যাচ্ছিল গাড়িটা ভার্সিটির সামনে রেখে। একপা দুপা করে অগ্রসর হচ্ছিল। তখুনি আতিক এর চোখ পড়ে গেলো ফারিয়ার দিকে। আতিক অনেকটা চমকে যায়। আতিক তারাহুরো করে ফারিয়ার সামনে গিয়ে পথ আটকে দাড়ায়। নিজের প্রাক্তন স্বামীকে এভাবে পথ আটকাতে থেকে,ফারিয়া কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে। আতিক এতদিন পর ফারিয়াকে দেখে তার ঠোঁটের কোনে হাসির ঝলকানি ঝিরঝির করে। কত খুজেছে গোপনে ফারিয়াকে,অবশেষে আজকে ফারিয়ার দেখা পেয়েই গেলো। ফারিয়া একপ্রকার না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলেই পুনরায় আবার পথ আটকে দাড়ায় আতিক। ফারিয়া এতদিন পর আতিককে দেখে স্থীর হয়ে দাড়িয়ে থাকতেও কেমন যেন শক্তিটুকুও পাচ্ছে না ফারিয়া। শরীরটুকুও দূর্বল লাগছে তার। আতিক এর এমন হুটহাট দেখা পাওয়াটা,ফারিয়াকে প্রতিনিয়ত দূর্বল করে তুলছে।তাই হয়তো আতিক তার কষ্টটা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় বারবার দেখা দিচ্ছে। ফারিয়া নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে শক্ত কন্ঠে বলতে থাকে,
-‘আতিক আমার পথ আটকে দাড়িয়ে আছো কেনো.?পথ ছাড়ো বলছি। তখুনি হঠাৎ আতিক ফারিয়া হাত চেপে ধরে,দেখো ফারিয়া আমার উপর এভাবে অভিমান করে থেকো না। আমাকে কিছুক্ষন সময় দাও কথা বলার জন্য তোমার পায়ে পড়ছি। ফারিয়া রাগে গজগজ করে তার হাত কাঁপতে থাকে,যাকে বলে প্রচন্ড রাগে। আতিক এর ছোয়া ফারিয়ার কাছে নোংরামি ছাড়া কিছুই লাগছে না। আগে আতিক এর ছোয়া তার শরীর রন্ধে ভালোবাসার স্রোত বয়ে যেতো,কিন্তু আজ তাতে একরাশ ঘৃণা ধরা দিচ্ছে। ফারিয়া তার হাতটা দ্রুত ছাড়িয়ে নেয় এক ঝটকা মেরে। তা দেখে আতিক অনকটা অবাক হয়ে যায়।অবাক হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। সে ফারিয়ার যাতে যত বড় প্রতারনা করে এটায় তার সাথে হওয়ার বাকি ছিলো। ফারিয়া আবারো বলতে থাকে,
-“তুমি কি বললে,আমি তোমার উপর অভিমান করেছি।তোমার মতো থার্ড ক্লাস লোকের উপর আমি কেনো অভিমান করবো। অভিমানের ভাষা তোমার জানা আছে? তুমিতো একটা স্বার্থপর অনেক বড় স্বার্থপর। যে নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারো। তোমাকে আমি কেনো সময় দিবো.? তোমাকে সময় দেওয়ার জন্য তো তোমার ঘরে সুন্দর রমনি বউ আছে। তার সাথে যত ইচ্ছে সময় কাটাতে পারো। তুমি কোন সাহসে আমাকে স্পর্শ করো.? তোমার তো দেখছি অনেক সাহস হয়েছে। লজ্জা করেনা ঘরে বউ থাকতে বাইরের একটা মেয়ের হাত ধরতে,লজ্জা করেনা কারো শরীরে স্পর্শ করতে.? ফারিয়ার ইচ্ছে করছে আতিককে আরো চরম অপমান করতে।
-আতিক আবারো নরম কন্ঠ বলতে লাগলো,ফারিয়া প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো। আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমার সাথে এমনটা করে। আমি বুঝতে পারিনি। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।
‘ফারিয়া বলার অধিকারটা তুমি চিরতরে হারিয়েছো। কি কথা শুনবো নতুন করে?কিসের ভুল করেছো তুমি.?আমার জানামতে তুমি কোন ভুল করোনি। তুমি যদি ভুল করতে আমি তোমাকে মাফ করে দিতাম,কিন্তুু তুমিতো আমার পাশে থেকেও দিনের পর দিন প্রতারণা করেছিলে,আমি মানলাম আমার বাচ্চা হচ্ছিলো না,আদেও কি আমার একার কোন সমস্যা ছিলো.? আমরা তো ডাক্তারের কাছেও গিয়েছিলাম,ডাক্তার কি বলেছিলো ভুলে গেছো.? আমাদের ভেতরে কোন সমস্যা নেই,আল্লাহ চাইলে ঠিক বাচ্চা হবে।
“আমাদের সমাজের মানুষের কাজ কি জানো,,ছেলের দোষ কোন মা দেয়না,বাচ্চা হতে দেরি হলে, বউয়ের কাধে এসে পড়ে সকল দোষ। শতকরা ৯০% শ্বাশুড়ি, তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের চোখে দেখেতে পারেনা। যদি দেখতো তাহলে তোমার মা কখনো বলতে পারতো না,দ্বিতীয় বিয়ে করতে। আজ যদি তোমার বোনের সাথে এমনটা হতো,তাহলে কি তোমার মা তোমার বোনের স্বামীকে বলতো দ্বিতীয় বিয়ে করে নিতে। কখনো বলতে পারতো না। সমাজে কিছু কিছু মা/শ্বাশুরি আছে এরা মা নামের কলঙ্ক। এদের কারনে প্রতিনিয়ত সুন্দর সাজানো গোছানো একটা সংসার ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।
‘-ফারিয়া কথাগুলো বলছে আর আতিক মাথা নিচু করে তা নিরবে শুনে চলেছে। আদেও কি আতিক এর কাছে কোন জবাব আছে.? হয়তো নেই। আতিক বলতে লাগলো,প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আতিক এর কথা শুনে ফারিয়ার ধৈর্য্যোর বাধ ভেঙে যাওয়ার মতো উপক্রম। আতিক এর প্রতি তার এখন একরাশ ঘৃণা মনের মাঝে। ফারিয়ার মনে পড়ে যাচ্ছে, আতিক আর সামিয়ার সব ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত যা সাক্ষী ছিলো ফারিয়া নিজেই। মনে পড়ে যাচ্ছে, সেই দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসার দিনটার কথা। ফারিয়া আতিক কে সারপ্রাইজ দিবে বলে অপেক্ষা করছিলো, আর আতিক কত বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিলো দ্বিতীয় বিয়ে করে এনে। ফারিয়া তাও থেকে যেতো ওই বাড়িতে। দরকার পড়লে কাজের মেয়ে হিসাবে থেকে যেতো। কিন্তুু আতিক সাথে করে এনেছিলে ডিভোর্স পেপারে যাতে করে,সাথে সাথে ফারিয়াকে ওই বাড়ি থেকে অতিদ্রুত তাড়িয়ে দেওয়া যায়। ভাগ্য কত বড় নিষ্টুর,, এত বছর পর সে মা হতে চলেছে,আর সেই দিনি ঘটেছিলো তার সাথে মর্মান্তর আর এত বড় ঘটনা। ফারিয়ার বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে আতিক আর তার মা নারগিস বেগমের প্রতিটা আঘাত আর অপমানের কথা।
‘বর্তমানে আতিক এর কেয়ারিংগুলো ফারিয়ার কাছে আদিক্ষেত ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না। আতিক ফারিয়ার দিকে এগিয়ে আসলেই, ফারিয়া চিৎকার দিয়ে উঠে,ততক্ষণে আশেপাশের ভার্সিটির কিছু ছেলে আর সামনে থাকা দোকানের মানুষ জড় হয়ে যায়।
“একটা ছেলে বলতে থাকে,কি হয়েছে আপু.?ফারিয়া আতিক এর দিকে ক্রোধে তাকিয়ে বলে,দেখুন না ঘরে বউ থাকতে ওনি আমাকে রাস্তাঘাটে কিভাবে ডিস্টার্ব করছে। লোকগুলো আতিক এর দিকে এগিয়ে বলবো,কি সমস্যা ভাই এভাবে রাস্তাঘাটে মেয়েদের ডিস্টার্ব করছেন কেনো.?
-‘একটা লোক বলতে থাকে,ঘরে বউ থাকতে এভাবে বেডিদের পিছনে পিছনে ঘুরতে লজ্জা করেনা আপনাদের। আপনাদের মতো কিছু পুরুষদের জন্য আমাদের পুরো পুরুষ জাতীদের কলঙ্ক হয়। আসলে আপনাদের মতো কিছু পুরুষ আছে যাদের ঘরে বউ থাকতেও সুন্দরী মেয়েদের দেখলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আসলে আপনাদের কিছু ছেলেদের চরিত্রই খারাপ।
-দেখুন আপনারা আমাকে ঠিক যেমনটা ভাবছেন আমি এমনটা না।আমাকে আপনারা ভুল বুঝছেন কথাগুলে আতিক সকলের উদ্দেশ্য বলছে।
‘ওপাশ থেকে আরেকটা বয়স্ক লোক বললো,চুরি করার পর ধরা খেলে সবাই বলে আমি চুরি করতে আসতে চায়নি,আমাকে জোর করে ধরে এখানে আনা হয়েছে। আমার সাথে যারা এসেছিলো তারা আসল চোর। কিন্তুু চোরের সাথে গেলে সেও চোর বলে চিহ্নত হবে। আপনিও ঠিক তেমনটা বলছেন আমাদের সাথে। আমরা আপনাকে কোন ভুল বুঝছি না,সঠিকটাই বুঝছি।
“আতিক আর লোকগুলোর ভেতরে চরম তর্ক চলছে এই সুযোগে ফারিয়া ওখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা অটো দেখে চলে যায়। আজকে আর ভার্সিটিতে এসেও ভেতরে যেতে পারলো না ফারিয়া আতিক এর কারনে। আতিক আশাহত হয়। সে পারলো না ফারিয়াকে বুঝাতে। ওখানকার লোকদের কোনরকম বুঝিয়ে ঝামেলা থেকে বেড়িয়ে আসে,তখুনি তার চোখ পড়ে সামিয়া নামক রমনীর দিকে।
-ছলছল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারমানে এতক্ষণ সামিয়া নিষ্পলকভাবে সবকিছু দেখছিলো। সামিয়াকে দেখে আতিক ক্ষিন নরম সুরে বলতে লাগলো,
‘সামিয়া,তুমি এ,,
চলবে কী.?