অবাধ্য প্রেম পর্ব-১৫+১৬

0
491

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৫
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড় আমাকে ওর একটা বান্ধবীর বাসার সামনে নিয়ে এলো। আমি কোথায় যাব এসব নিয়ে যখন পাগলপ্রায় অবস্থা তখন নিবিড় বলল, ‘ শোন তুমি চাইলে আমি তোমাকে আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকতে দিতে পারি।’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ফ্রেন্ডের বাসায় মানে। আপনি আমাকে ‌ আপনার ছেলে বন্ধুদের বাসায় রেখে আসতে চাইছেন?’

নিবিড় বিরক্ত মাখা গলায় বলল, ‘ ইডিয়েট, আমাকে কি শুধু ছেলে ফ্রেন্ড! আমার কি মেয়ে ফ্রেন্ড নাই?’

আমি নিজের বোকামি কথা বলে ফেলেছি বুঝতে পেরে বললাম, ‘আচ্ছা চলুন।’

আচ্ছা চলুন বলে দিয়েও তো এবার আমার টেনশন হচ্ছে নিবিড়ের বন্ধু যে দুইটা মেয়ে দুজনের একজনও তো আমাকে সহ্য করতে পারে না। আফিয়া মেয়েটা তো আমাকে তার চিরশত্রু মনে করে। আর তার সাথে থাকা মেয়েটা কি যেন নাম মনে নাই সে আমাকে পছন্দ করে কিনা জানিনা কার বাসায় নিয়ে যাবে কে জানে।

ডাইভিং এর মাঝে হঠাৎ নিবিড় বলে উঠলো, ‘হোয়াটস প্রবলেম?’

আমি চকিতে মাথা উঁচু করে বললাম, ‘কিসের সমস্যা?’

‘কি ভাবছো?’

আমি বললাম, ‘ আপনি আপনার কোন বান্ধবী বাড়ি আমায় নিয়ে যাচ্ছেন?’

নিবিড় বলল, ‘যেখানে তুমি থাকতে পারবে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি।’

‘আমাকে বলুন আগে। আপনার ঐ শাকচুন্নি আফিয়া বান্ধবীর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে না তো আমাকে?’

নিবিড় বলল, ‘ আমার ফ্রেন্ডের ইন্সাইট করলে কিন্তু গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। তুমি আমার সাথে আর ঝগড়া তর্ক করবে না বলেছিলে।’

‘ হ্যাঁ আপনার সাথে ঝগড়া করছি কোথায়? আপনার সাথে তো সুন্দর করে কথা বলছি। আমি তো ওই শাকচুন্নি টা কে ….

নিবিড় রাগী গলায় বলল, ‘ আবার বের হ‌ও আমার গাড়ি….

আমি মুখে হাত দিয়ে বললাম, ‘সরি সরি আমি আর একটা কথা বলব নাই যে মুখ বন্ধ করলাম। আপনি যেখানে খুশি আমাকে আজকে রাত থাকার ব্যবস্থা করে দেন। শুধু ওই শাক.. সরি ওই আফিয়ার বাসায় আমাকে নিয়ে যাইয়েন না।’

নিবিড় শান্ত হলো আর আমাকে গরম চোখে শাসিয়ে দিল ইশারায় নেক্সট টাইম যদি আমি তার কথার অবাধ্য হয়েছি তো আমার আর কোন অনুরোধ‌ই তিনি গ্রহণ করবে না।
হঠাৎ একটা ছোটখাটো রেস্টুরেন্টের সামনে এসে নিবিড় গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ বাসায় থেকে কিছু খেয়ে পালিয়ে ছিলে?’

খাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই পেটে আমার খিদের যন্ত্রণার টের পেলাম। সেই সকালে খেয়েছিলাম দুপুরে খাওয়ার আগে নিবিড়রা এসেছিল। তারপর যা হয়েছে তারপর তো রুমে বন্দি অবস্থায় ছিলাম। পালিয়ে এসেছি তো খাওয়ার বাহানা দিয়ে। খেতে আর পারি নি।

আমি ক্ষুধার্ত মুখে নিজের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘সকালের পরে আর খেতে পারেনি খুব খিদে পেয়েছে। পেট ব্যথা করছে খিদের যন্ত্রণায়।’

‘পালিয়ে আসার আগে কি পেট ভরে খেয়ে আসতে পারলে না। এখন আমার টাকা খরচ করে তোমাকে খাওয়াতে হবে।’অনিচ্ছা গলায় বলল নিবিড়।

উনি আমাকে খাওয়াতে চায় না সেটা তারই পানসে মুখটা দেখে আমি বুঝে গেছি।

আমি অনুরোধ গলায় বললাম, ‘কয় টাকা লাগে খেতে আমি পরে দিয়ে দেবো আপনাকে এবার তো চলুন।’

টাকার কথা বলতেই নিবিড় আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আচ্ছা। শুধু খাওয়ার টাকায় দিবা এই যে তোমাকে হেল্প করছি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় নিয়ে যাচ্ছি এই এত রাস্তা পাস করার জন্য আমার কতখানি তেল খরচ হচ্ছে জানো? শুধু খাবারের টাকা না। থাকার জন্য বাসা ভাড়া দিতে হবে। আর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া দিতে হবে।’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘সব দিতে হবে আচ্ছা সব মিলিয়ে কয় টাকা হবে?’

নিবিড় নির্বিকার গলায় বলল, ‘ ধরা 10/ 20 হাজার তো হবেই।’

আমি অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম এত টাকার অংক শুনে।
আমি গালে হাত দিয়ে বিশমিত গলায় বললাম,’ কি বললেন এত টাকা এই টাকা দিয়ে তো আমি আমার বাড়ি ওয়ালার পাঁচ মাসে ভাড়া দিয়ে দিতে পারব।’

‘তুমিতো ওই ভাঙাচোরা ফ্লাইটে থাকো আমি যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেটা তো ভিআইপি বাসা।’

‘আমার এত টাকার বাসায় যেতে পারবো না আমি না হয় আপনার এই গাড়িটিতে থাকবো। আর ওই দোকান থেকে আমি ভাত আর ডাল খাব আর আপনাকে ভাড়া হিসেবে 50 টাকা দিব।’

‘টাকার জন্য তুমি আমার গাড়িতে থাকতে চাও। আমি তোমাকে টাকা ছাড়া ফ্রি তে গাড়িতে থাকতে দেবো কেন? এটা কি তোমার শ্বশুরের ছেলের গাড়ি পাইছো?’

আমি নিবিড়ের কথাটা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না না বুঝতে পেরেই বলে উঠলাম, ‘হুম তাই পাইছি।’

নিবিড় হতবিহ্বল কন্ঠে বলল, ‘ হোয়াট?’

আমি ঢোক গিলে বললাম,’ খিদের যন্ত্রণায় মরে গেলাম এবার আপনি এতো কথা অফ করেন প্লিজ।’

নিবিড় গাড়িতে বেরিয়ে গেল। আমিও বেরিয়ে এলাম। ছোটখাটো রেষ্টুরেন্ট হলেও ভেতর টা খুব সুন্দর বাইরে থেকে মনে হয়নি এমনটা হবে।

আমরা একটা টেবিলে বসলাম। আর বসার পর থেকে আমি নিবিড় কে শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছি আমি শুধু ডাল ভাত খাব। আমি বেশি টাকা খরচ করতে পারবোনা। কিন্তু নিবিড় আমার কথা কানে নিল না সে একগাদা খাবার অর্ডার দিলো।

আমি হাঁ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল, কি হয়েছে ?

আমি রাগী গলায় বললাম, ‘এটা কি হলো আপনি এত টাকার খাবার অর্ডার দিলেন কেন? আমি যা বললাম তার উল্টা। আমি এত খাবার খাব না আর এসব তো খাব‌ই না। আমার এত টাকা নাই বলছি না।’

নিবিড় নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, ‘তোমার জন্য এসব অর্ডার করতে চাইছিলাম না। আমার জন্য শুধু করতে চাইছিলাম কিন্তু এখানে শুনলাম ডালভাত এখানে পাওয়া যায় না। কম দামি কোন খাবার এখানে নাই তাই তোমার জন্য ও করলাম। এখন তোমার যদি খেতে মন চায় খাও না হলে আমি খাই।’

আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, ‘আপনি জিজ্ঞেস করলেন কখন? আমার সাথে ছিটারি করেন?’

নিবিড় বলল, ‘ জিজ্ঞেস করতে হবে কেন মেনু দেখতে পাচ্ছ না। মেনু কার্ডে যা আছে এখানে সেই সব‌ই পাওয়া যায়। বিলিভ না হলে ধরো মেনু কার্ড পড়ে দেখো তোমার ডালভাত থাকলে তুমি আবার অর্ডার দিয়ে নাও।’

আমি মেনু কার্ডটা হাতে নিলাম আর উলটপালট করে কোথাও ডাল-ভাত পেলাম না। একটা রেসিপি তাও আমি ডাল ভাত পেলাম সেখানে ভাতের সাথে ডাল ইলিশ মাছ ভর্তা আর গরুর গোস্ত আল্লাহ। আমি ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম এখান থেকে শুধু ডাল আর ভাতটা আমাকে দেওয়া যাবে কিনা।

ওয়েটারকে ডাকতে যাব তখন নিবিড় আমাকে একটা ধমক দিল, ‘আমি যা অর্ডার করছি তাই খাবে চুপচাপ। বেশি কথা যেন না শুনি তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। মাইন্ড ইট।’

‘আমার কিন্তু সত্যি..

বলতে গিয়ে ও আমি বলতে পারলাম না নিবিড় আমার দিকে যেমন লাল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে চুপ করে রইলাম। খাবার নিয়ে আসতে আমার খিদে চাপ আর ও বেড়ে গেল আমি গপাগপ খেয়ে ফেললাম। টাকার চিন্তা বেমালুম ভুলে গেলাম।

নিবিড় আমাকে সেই আফিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড মেয়েটার বাসায় নিয়ে এসেছে মেয়েটা আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। সে হয় তো কল্পনাও করতে পারেননি নিবিড় এই রাতে আমাকে নিয়ে তার বাড়ি আসবে‌।

তার চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। বিস্ময়ের জন্য তিনি পাক্কা পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারলোনা। হা করে আমাদের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ করে নিবিড়কে টেনে একটু আমার থেকে দূরে নিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

দুজনে কি যেন ঘুজুরফুজুর করে তারপর আমার কাছে আসলো। আমার কাছে দুজনে এসে দাঁড়াল আমি দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় ওই মেয়েটা কে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ ইভা তাহলে ওকে নিয়ে যা কালকে সকালে এসে আমি ওকে নিয়ে যাব।’

ইভা মেয়েটা আমার হাত ধরে বলল, ‘ চলো ছোঁয়া আমার সাথে‌। নিবি তাহলে তুই চলে যা।’

#চলবে……

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_নীলা

ইভা মেয়েটাকে আমি যতটা আফিয়ার মত ভেবেছিলাম অহংকারী টাইপের কিন্তু তার বাসায় থেকে আমি বুঝতে পারলাম মেয়েটার ওর ধারের কাছেও না। খুবই মিশুক একজন আমার সাথে এত ভালো ভাবে কাটিয়েছে। আমাকে আর নিবিড় কে একসাথে দেখে সে রকম কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করেনি শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করেছিল।

আমরা যখন ঘুমাবো তখন ইভা শুধু বলেছিল, ‘ ছোঁয়া নিবিড় কে তো তুমি পছন্দ করতে না। আজ ওকে বিলিভ করে ওর সাথে আমার কাছে কিভাবে এলে?’

আমি বললাম, ‘ জানি না। কিন্তু আজকে তার ওপর আমার অনেক হয়েছিল আস্থা । মনে হয়েছিল তিনি আমাকে সাহায্য‌ই করবেন।’

‘তুমি একজন সঠিক মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছিলে। নিবিড় খুব ভালো একজন বন্ধু আমাদের। ও যদি কোন দায়িত্ব হাতে নেয় সেটা খুব নিখুঁতভাবে করে। ওকে এব‌ং কি আমাদের তুমি পছন্দ করো না জানি তোকে বিশ্বাস করে তুমি ঠকবে না। নিবিড় বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে জানে। যাইহোক ঘুমাও।’

আমি তখন মিষ্টি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমিতো আপনার কে ও পছন্দ করতাম না কিন্তু আপনি সত্যি খুব ভালো।’

তখন ইভা আপু বলল, ‘জানি। কিন্তু আমি তোমাকে মোটেও খারাপ ভাবি নি। তোমাকে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে ভাবছি। আমার ফ্রেন্ড কেউই কিন্তু তোমাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না।’

‘তাদের সহ্য করায় আমার কিছু আসে যায় নাকি আমি আবার তাদের পছন্দ করিনা।’

আমার কথা শুনে ইভা আপু হা হা করে হেসে উঠলো আমি ও হেসে উঠলাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে আমি খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। যদি ও ইচ্ছা ছিল আর একটু গল্প করি ইভা আপুর সাথে কিন্তু হয়ে উঠল না।

পরদিন‌ ইভা আপুর মা-বাবা আর তার ছোট বোনের সাথে আমার দেখা হলো তারা খুবই ভালো মনের মানুষ। সকালবেলা ব্রেকফাস্ট আর করব কি সাতসকালে নিবিড় এসে হাজির বাসায়।
নিবিড় কে দেখেই তো ইভা আপু বলে উঠলো, ‘কিরে তুই রাতে ঘুমাস নি সাত সকালে চলে এসেছিস?’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চলো এবার!’

ইভা আপু শুনেই বলে উঠলো, ‘ না খেয়ে যাবে নাকি কি বলিস তুই? চুপচাপ বসে থাক রান্না করছে আম্মু রান্না হলে তার পরে খেয়ে যাবি!’

নিবিড় বলল, ‘ দরকার নাই ওকে আমাকে ওর বাসায় পৌঁছে দিতে দে তো। এই মেয়ের পেছনে আমি আর এক ফোঁটা টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনা।’

ইভা আপু কড়া গলায় বলল, ‘এমন ভাবে বলছি যেন আমরা তোর মাথায় বন্ধ করে ধরে সব করাচ্ছি‌। তুই নিজে থেকে এসব করছিস তাই এখন আমার কথা শুনতে হবে। চুপচাপ বসে থাক এখন কোথাও যাবে না। ছোঁয়া খাবে আর সাথে তুই ও খাবি তারপর যাবি।’

নিবিড় বলল, ‘ নো। আমি কি তোদের বাড়ি ভাত খেতে আসছি নাকি? যখন আসবো তখন যত পারিস খাওয়াইস‌‌।’

‘সে না হয় তুই পরে এসে খাবি এখন ছোঁয়াকে আমি খালি মুখে পাঠাব না।’

নিবিড় বিরক্তিকর মুখে বলল, ‘ ছোঁয়া তুমি যাবে না?’

দু’জনের কথার মাঝে আমি কথা বলতে পারছিলাম না আমি বার সুযোগ পেয়ে বলে উঠলাম, ‘ না খেয়ে আমি কোথাও যাবো না। আপনার ইচ্ছা হলে আপনি চলে যান আমি একা যেতে পারব। যাওয়ার আগে শুধু আমার ব্যাগটা রেখে যাইয়েন!’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে সোফায় বসে পড়ল। রান্না হতে আরো 20 মিনিট লাগলো তারপরে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে পাক্কা দু’ঘণ্টা পর আমরা বের হতে পারলাম। নিবিড় তো খেলো ই না শত বলেও তাকে খাওয়ানো গেলো না সে শুধু এক কাপ চা খেল।

গাড়িতে এসেই আমি আমার ব্যাগটা ফিরে পেলাম। আহ কি শান্তি। করো ঘোরাঘুরি না করারও এটার জন্য। মানুষটা এতো খাটাশ হতে পারে উনাকে না দেখলে জানতামই না। উনি এবার আমার অনেক হেল্প করেছে এজন্য তাকে কিছুই বললাম না আমি শান্ত হয়ে বসে রইলাম গাড়িতে।

নিবিড় নিজেই দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে আমাকে বলতে লাগল, ‘ কালকে কি কথা হয়েছিল তুমি আমার সব কথা শুনবে আর এখন কি হলো তুমি আমার কথা অমান্য করলে।’

আমি উনার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললাম,’ আপনার মনে কি আছে আমি বুঝতে পারিনি ভেবেছেন তাই না। কালকে রাতে অনেক টাকার খাবার খেয়ে এমনিতে আমার অনেক টাকা গচ্চা গিয়েছে আজকে আবার আমার টাকা খরচ করে খাবার খেতে চেয়েছিলাম তাই না। আমিতো তা হতে দেব না।’

নিবিড় আমার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ইউ….

কি যেন বলতে চেয়েছিলে থেমে গিয়ে মুখে শয়তানী হাসি ফুটিয়ে তোলে বলল, ‘তুমি খেয়েছ তুমি না হয় না খাবে। কিন্তু আমি তো কিছু খাইনি আমার তো খেতেই হবে। এবার ফাইভস্টার হোটেলে যাব।’

‘ তো আমার কি আপনি যেখানে খুশি সেখানে যান। আমি খাব নাকি। যে আমার টাকা খরচ হবে। আপনি নিজের টাকা খরচ করে যা খুশি তাই করেন!’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি গলায় বলল, ‘ আমি নিজের টাকা খাবে কে বললো? এত হেল্প করছি আমার খাবার বিলটা তোমাকেই দিতে হবে।’

‘ এ্যা?

‘ এ্যা না হ্যা!’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে আছি নিবিড়ের দিকে। নিবিড় আমার নাম করে একগাদা খাবার খেল তারপর কি যেন হিসাব করে টাকা গুনতে লাগলো কত টাকা আমার কাছে পাওনা আছে।

আর আমি কপাল চাপড়াচ্ছি। উনি তো দেখছি সাহায্য করার নাম করে আমার টাকা ডাকাতি করল। অবশ্য এখন এইসব উনার ই টাকা কিন্তু পরে তো কষ্ট করে টাকাগুলো আমাকে শোধ করতে হবে।

রেস্টুরেন্টে থেকে বের হ‌ওয়ার সময় নিবিড় বলল, ‘ তোমার টাকার খাবার এতো টেস্ট ছিল যে আমার আরো খেতে ইচ্ছে করছে।’

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘রাক্ষসের মত এত খেলেন। এখন ও আপনার পেটে জায়গা আছে?’

‘ তোমার টাকা বাঁচানোর জন্য কম‌ই তো খেলাম। রাক্ষস বললে কিন্তু রাক্ষসের মতোই খাব এই ধরো রেস্টুরেন্টের সব খাবার শেষ করে ফেলব যেটা রাক্ষস থাকলে করতো।’

আমি আর কথা বাড়ালাম না গটগট করে বেরিয়ে এলা।এই লোকটার সাথে ঝগড়া না করে থাকা‌ই যায় না। যাবে কিভাবে যেভাবে আমাকে ঝগড়ার জন্য খোঁচাচ্ছে আমি একটা ভালো শান্ত মেয়ে বলেই এখনও ঝগড়া না করে থাকছি। এমন বজ্জাত লোকের সাথে থাকলে যে কেউ ঝগড়া করবে।

এবার আর রাস্তায় একটা কথাও বলিনি। নিবিড় আমাকে বাসার সামনে রেখে চলে গেল আমি বাসায় ঢুকতেই দীপার দেখা পেয়ে চমকে উঠলাম। ও এখানে কি করছে? ও একা না পারে ওর বয়ফ্রেন্ড ও আছে। ওর কপালে সিঁদুর আল্লাহ ওরা বিয়ে ও করে ফেলেছে। আমাকে দেখেই ও জরিয়ে ধরল। আমি বললাম, ‘ তোরা এখানে কি করিস?’

দীপা বলল, ‘ গতকাল রাত থেকে এখানে আছি। তোর বাসায় একটা চাবি আমাকে দিয়েছি সেটাই কাল কাজে লেগেছে। এখানে এসে তোকে পেলাম না। আমরা বাবার হাত থেকে রক্ষা পেতে এখানে আশ্রয় নিলাম। রাতে তোর মামি আসছিল তুই নাকি বিয়ে না করে পালিয়েছিস তাই খুঁজতে এসেছিল‌। না পেয়ে চলে গেছে আমি বলেছি আমরা এখানে নতুন ভাড়া নিয়েছি।

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ বাড়ি ওয়ালা কিছু বলে নি।’

‘ তিনি আমাকে দেখেছে শুধু। আমি বলেছি তুই দরকারে তোর মামার বাড়ি গিয়েছিস আমাকে বাসায় পাহারা রেখে।’

আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘ শেষে কিনা তুই আমার বাসার পাহারাদার হলি। শ্রাবণ ভাই ক‌ই?’

দীপা বলল, ‘ বাথরুমে লুকিয়ে আছে। জানতাম না তো তুই আসবি।’

আমি আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলাম।

#চলবে…..