অবাধ্য প্রেম পর্ব-৩১+৩২

0
478

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩১
#নন্দিনী_নীলা

আত্নীয় স্বজনে বাসায় গিজগিজ করছে। এই সময়ে আমার হয়েছে জ্বালা। সবার এতো কাজ করে আমি শেষ। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সব একা হাতে করতে হয় সব আশাকে এজন্য ও কাজ করছি। আর তাছাড়া আমাকে তো নিবিড়ের মা বিনা পয়সায় পাওয়া কাজের লোক পেয়েছে এমন ভেবে কাজ করায়। উনাকে কয়েকদিন ভালো ভেবেছিলাম। উনি কি মিষ্টি করে আমায় ডেকেছিল। আমি ও খুশি মনে গেলাম উনার ঘরে।

‘ জি বলেন।’

নিবিড়ের মা আমার দিকে সুন্দর করে চেয়ে বলল, ‘ বিয়ে সামনে জানোই তো কতো কাজ। তুমি ও তো তাহমিনার সাথে পরিচিত তাই বলছিলাম। একটু হাতে হাতে কাজ করে দিও।’

আমি বললাম, ‘ জি আচ্ছা।’

তখন মিষ্টি করে কথা বলে আমাকে রাজি করিয়েছে। আর এখন আমাকে ইচ্ছে মতো খাটাচ্ছে। আমি তো খুশি মনেই কাজ করতে ছিলাম কিন্তু কেউ যখন জিজ্ঞেস করে আমি কি এই বাসার কাজের লোক। আমাকে কি নতুন রেখেছে এটা শুনলেই তো আমার মাথায় আগুন ধরে যায়। এই আজকের বিকেলের ঘটনা। কাল যেহেতু রাফসান কাকার গায়ে হলুদ তো আজকে অধিকাংশ আপন আত্মীয়-স্বজন সবাই চলে এসেছে তার মধ্যে। লতা তাদের জন্য ঠান্ডা শরবত করছিল আমি ওকে হেল্প করলাম। একা এতগুলো শরবত আনতে হিমসিম খাচ্ছিল তাতেও আমি হেল্প করছিলাম।
ওর সাথে আমিও আসলাম।

আর তখনই একজন নিবিড়ের ছোট চাচীকে কেউ উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ নতুন কাজের লোক রাখছিস?’

নিবিড়ের ছোট চাচী এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না। কাজের লোকের মতই আমাকে দেখে সেই তুই তুকানি করে কথা বলে। আর আজকে তো আমাকে কাজের লোক বানাতে দুইবার ভাববো না।

সাথে সাথে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ দুটোই আমাদের কাজের লোক!’

আমি ড্রয়িং রুম ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে গিয়েছিলাম। কাজের লোক বলাতে আমি লজ্জা আর অপমানে পেছনে তাকালাম ছলছল নয়নে। যতটা রাগ হয়েছে ঠিক ততটাই কষ্ট পেয়েছি গরিব বলে কি আমাদেরকে মানুষ মনে করে না নাকি। আমি তো এই বাসায় টাকা দিয়েই থাকি ভাড়াও দেই। আর একটা বাসা খুঁজে পাচ্ছি না বলে আমি বাসাটা ছেড়ে যেতে পারছি না। তাই বলে এইভাবে আমাকে কাজের লোক বানিয়ে দেবে। আমি তো তাদের ভালোর জন্য তাদের কাজে সাহায্য করছি। আর সেই সুযোগটা তারা নিচ্ছে আমি রেগে যাচ্ছিলাম দুটো কড়া কথা শোনানোর জন্য।

আশা আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, ‘ রেগে কোথায় যাচ্ছ তুমি এ বাসার কে সেইটা তো তারা দুইদিন থাকলে জানতে পারবেই। ঝগড়াঝাটি না করাই ভালো। ছোট ম্যাডাম এমনই তুমি গেলে আরো দশ কথা শুনিয়ে দিবে। তোমার সাথে যে মেজো স্যারের বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেটাও তো বলে দেবে। তার থেকে চলো এখান থেকে চলো। ওখানে গেলে তুমি আরো হাসির পাত্র হবে। অপমানিত হবে। ওরা সবাই একইরকম। কাকে তুমি বোঝাতে যাবে যে তুমি এ বাসার কাজের লোক না তুমি বাসার কাজের লোক না থাকলে ওরা তোমার সাথে কাজের লোকের থেকেও খারাপ ব্যবহার করবে। আমাদের মতো গরিবদের লাঞ্ছিত করেই ওরা আনন্দিত হয়।’

গরিব হলেও আমার আত্ম সম্মানবোধ অনেক। গরিব হয়েছি বলে যে অন্যের সব করা আমি মাথা পেতে নিয়ে নীরবে সহ্য করে কান্না করে ভাসিয়ে দেবো তেমন ভীতু মেয়ে ‌আমি না। ওখানে গিয়ে আমি, তবুও দশটা কথা শুনাতাম কিন্তু আমি চাই না এখন তাহমিনা আপুর শ্বশুর বাড়িতে আমার জন্য কোন ঝামেলা হোক। বিয়েটা শেষ হোক এই বাড়ি তে এক মুহূর্ত থাকবো না।

এখানে বিয়ে বাড়িতে এসেছে নিবিড়ের এক মামাতো বোন। মেয়েটা যে এত বেয়াদব বলে বোঝাতে পারবো না আমি যখন বিকেলে কাজ করে সন্ধ্যায় উপরে আসলাম এসে দেখলাম মেয়েটা আমার রুমের দরজা খুলে ভেতরে বসে ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো আবার এই মেয়ে আমার রুমে ঢুকে আছে কেন?

আমি রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, ‘ আপনি আমার রুমের ভেতর কি করছেন?’

মেয়েটা চমকে উঠে পিছন ফিরে বলল, ‘ আর ইউ সার্ভেন্ট গার্ল! ইস দিস ইউর রুম?’

‘ মুখ সামলে কথা বলেন। আমি এই বাসায় ভাড়া থাকি। না এই বাসার কাজের জন্য পড়ে আছি আর না আমি চাকর।’

‘হোয়াট? ডিড ইউ আঙ্কেল রেন্ট দি হাউস। হু ইজ ইট পসিবল টু ওন এ হাউস?’

‘এসব আমাকে জিজ্ঞেস না করে আপনি আপনার মামাদের কে জিজ্ঞেস করেন।’

‘কাজের মেয়ে হয়ে এখন মিথ্যা বলছো না তো। ‘

‘ সবাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন?তাহলেই বুঝতে পারবেন মিথ্যা বলছি নাকি।’

‘ছোট মামি তো বলল তুমি বাসায় কাজের মেয়ে। নিজে অস্বীকার করছ কেন?’

‘ এই সরেন তো আপনার সাথে আমি ফাউল প্যাচাল পারতে পারবো না। আপনি আমার রুমের ভেতরে কি করছেন? এত বড়লোক বাড়ির মেয়ে হয়ে আরেকজনের রুমে চুরি করতে আসছেন নাকি?’

‘ তুমি আমাকে চোর বললে? এত বড় স্পর্ধা তোমার। একটা কাজের মেয়ে হয়ে তুমি আমাকে চোর সাব্যস্ত কর। এটা আমার মামার বাসা এই বাসার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যখন তখন আমি যেতে পারি তুমি আমাকে না করার কে আর তোমার পারমিশন নেব।’

‘আপনার মামা বাসার আপনি যেখানে খুশি সেখানে ঘুরেন আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি আমার রুমের ভেতরে না ঢুকে দয়া করে বাইরে ঘোরাঘুরি করেন। নাচানাচি করেন। বের হন আমার রুম থেকে।’

মেয়েটা রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল রুম থেকে আর তখনই নিবিড় এই দিকে আসলো। বুঝলাম না উনি কোথা থেকে আগমন করল। নিবিড় কে দেখেই তো মেয়েটা ন্যাকামো শুরু হয়ে গেল‌।

এতক্ষণ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলছিল। এখনি শেষ করে ফ্যাচ করে কেঁদে উঠলো। আমি দরজা থেকে ভেতরে ঢোকা বন্ধ করে আমি আরো বাইরে গিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। বড়বড় চোখ করে। নিবিড় তো মেয়েটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এগিয়ে আসতেই।

মেয়েটা নিবিড়ের এক হাত ধরে তাতে কপাল ঠেকিয়ে নাক টানতে টানতে বলল, ‘ ব্রো।’

নিবিড় কোন কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘
হোয়াই আর ইউ ক্রইং মাইশা?’

মাইশা আমার দেখে হাত তাক করে বলল, ‘ এই চাকরানি টা আমাকে চিলেকোঠা রুমে যাওয়ার জন্য চোর বলছে। আমাকে অপমান করে রুম থেকে বের করে দিছে ব্রো। ও আমাকে অনেক ইনসাল্ট করছে, ওকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দাও ব্রো ওর সাহস কি করে হয় আমাকে ইনসাল্ট করার।’

আমি তো অগ্নি অক্ষে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছি ওই মাইশা না পাইশার দিকে। ও আমাকে চাকরানি বলল আবার। দুই ঠোঁট এক করে নাক ফুলিয়ে রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

নিবিড় নিজের রেগে আগুন। মাইশা কথা শেষ করতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজের বাহু থেকে সরিয়ে দিলো। মাইশা আচমকা ধাক্কা খেয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।

‘কি হয়েছে ব্রো তুমি রেগে গেলে কেন আমার উপর। তোমার তো ওই কাজের মেয়েটার উপর রাগ করা উচিত ছিল। তুমি আমাকে রাগ দেখাচ্ছ কেন?’ অবাক স্বরে বলল মাইশা।

নিবিড় রাগ সংবরণ করে বলল, ‘ ও আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে। আর মেজ কাকির আত্নীয় না জেনে কথা বলবি না। তুই নিচে যা।’

মাইশা কিছু বলতে গিয়েও তীব্র রাগে আমার দিকে তাকিয়ে চলে এলো। নিবিড় যে আমার পক্ষে কথা বলেছে এটা ও সহ্য করতে পারেনি ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে আমি বুঝে গেছি। কিন্তু কেন জানিনা নিবিড় আমাকে সাপোর্ট করায় আমার অজান্তে খুব ভালো লাগছে। বিরক্তকর মানুষটাকে ও সুন্দর লাগছে মনে হচ্ছে। আজ একটা ভালো কাজ করল তাই বোধহয়।

#চলবে……

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩২
#নন্দিনী_নীলা

নিবিড়ের দিকে এগিয়ে আমি বললাম, ‘ আপনি আমার পক্ষ নিলেন ভাবা যায়? আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিল?’ ভাবুক গলায় বললাম।

নিবিড় আমার কথার উত্তরে বলল, ‘ এখানে আমি কারো পক্ষ নেই নাই যেটা সত্যি জাস্ট বলেছি। এখন তোমার যদি মনে হয় আমি তোমার পক্ষ নিয়েছি তাহলে আমার কিছু বলার নাই‌!’

‘ আপনি এতো আলগা ভাব দেখান কেন? আপনাকে মেয়েদের মতো ভাব দেখাতে দেখলে রাগে শরীর আমার জ্বলে উঠে।’

নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আর তুমি মেয়ে মানুষ নরম থাকবে। সুইট থাকবে কিন্তু তুমি তো ছেলেদের থেকেও রাগী। সব সময় মাথায় ঝগড়া আর রাগ নিয়ে ঘুরাফেরা করো।’

‘ কিহ আমি ঝগড়া আর রাগ নিয়ে ঘুরাফেরা করি ?’

‘ এদিকে আসো একটা জিনিস দেখাব তোমায়!’ নিবিড় আমাকে ছাদের ডান দিকে যেতে বলল।

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘ কেন? কি দেখাবেন শুনি?’

‘ গিয়ে দেখো।’

‘ না আমি আপনাকে একটুও বিলিভ করি না। নিশ্চয়ই আপনার মাথায় কোন শয়তানি প্ল্যান আছে। ঐদিন আপনি আমাকে সুইমিং পুলে ফেলে দিয়েছিলেন। আজকে আবার কি বুদ্ধি করে এসেছেন?’ কড়া গলায় বললাম।

নিবিড় আমার না শুনে চোখ মুখ কঠিন করে ফেললো কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বলল, ‘ চলো আমার সাথে আজকে কোথাও ফেলব না।’

আমি চুপ থেকে বললাম, ‘ আপনি আমার মনটা ভালো করে দিছেন তাই জন্য যাচ্ছি না হলে আপনার কথা আমি কখনো শুনতাম না।চলুন দেখি কি দেখাবেন!’

নিবিড় আমাকে একদম কর্ণারে নিয়ে আসলো। এসে এখানে দেখতে লাগলাম কি দেখাতে আনলো।তেমন কিছু পেলাম না এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কিছু দেখার মতো আছে কিনা খুঁজলাম। আমি মুখটা রাগী ভাব এনে বললাম, ‘ আমার সাথে কি ফান করতেছেন? ক‌ই এখানে দেখার মতো তো আমি কিছুই পাচ্ছি না। অযথা এখানে আনলেন কেন আজব!’

নিবিড় নিজের জায়গা থেকে সরে আমাকে ওর জায়গায় দাঁড় করিয়ে বলল,, ‘ ওই দিকে তাকাও।’

আমি বিরক্তিকর মুখে নিবিড়ের হাত দিয়ে ইশারা করা জায়গার দিকে তাকালাম। আমার চোখে মুখে বিরক্ত স্পর্শ নিবিড় নিশ্চিত কোন চালাকি করে নিয়ে আসছে আমাকে। রেলিংয়ের ধারে এনে দাঁড় করালো কেন আমাকে আবার এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলতে চায় নাকি। আমি নিবিড়ের এক হাত শক্ত করে ধরে তার পর সেই দিকে তাকালাম‌। লোকটাকে বিশ্বাস নাই যদি আবার ধাক্কা মেরে আমায় একদম নিচে ফেলে দেয়। এখান থেকে পড়লে নিশ্চিত আমি মরে যাব আমি এত তাড়াতাড়ি তো মরতে চাই না। তাও এই শয়তান টার হাতে তো একদম না। আমি নিবিড়ের হাত শক্ত করে ধরায় নিবিড় আমার দিকে রাগ মিশ্রিত নয়নে চাইল। নিবিড় হয়তো বুঝতে পেরেছে
আমার মনের কি চলছে।

নিবিড় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ইডিয়েট। শোনো তোমাকে এখান থেকে ফেলে অযথা মেরে আমি জেলের ঘানি টানতে পারবো না। তুমি কোন স্পেশাল পার্সন নাও যে তোমাকে মারলে আমার কোন লাভ হবে। So stop thinking your stupid thoughts.’

সামনে তাকিয়ে আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই পাশটা জঙ্গল টাইপের আর অন্ধকার এজন্য আমি সন্ধ্যার পরে বেশি এই পাশে আসি না। বাগানের ঐ পাশটায় আলো আছে। এজন্য আমি যদি রাতে বের হই। আমি বাগানের পাশটায় দাঁড়িয়ে থাকি। এজন্যই হয়তো এই সৌন্দর্য আমার দৃষ্টির আড়ালে পড়ে গেছে। জোনাকির ঝিলমিল আলো। অন্ধকারে এক ঝাঁক জোনাকি খেলাধুলা করছে মনে হচ্ছে। কি অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। এক ঝাঁক ভালো লাগে আমার চারপাশে এসে ঘিরে ধরলো যেন। সময়টা আমি মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করতে লাগলাম।
আমার চোখে মুখে আনন্দের ছড়াছড়ি এসে ভিড় করছে। নিবিড় আমাকে এমন একটা আনন্দ উপহার দিল! আমি তো বিস্ময় হতবিহুল হয়ে যাচ্ছি। সবকিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক নয়নে নিবিড়ের পানে তাকালাম। আমার যেন বিশ্বাস‌ই হচ্ছে না উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না মেরে উল্টা আমাকে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে দিয়ে। আমাকে এমন একটা সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিল।

আমি নিবিড়ের দিকে হাসি উজ্জ্বল মুখে তাকাতেই নিবিড় আমার দিকে একটা বাক্য ছাড়লো, ‘ এই হাসিটা যে কোন পুরুষের রাতের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট। এমন পাগল করা হাসি আর কারো সামনে হেসো না প্রেয়সী। তখন তোমাকে সত্যিই আমার এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছা করবে। তখন আমার হাত যত শক্ত করেই ধরো তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবে না।’

আমি বোকা চোখে তাকিয়ে নিবিড়ের এমন আবুল তাবুল কথা শুনছি। এসব কথা আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না। এসব আমি কি শুনছি। আমি কি নিজের কানে ভুল শুনছি। নাকি স্বপ্ন দেখছি আচ্ছা এমন ভয়ানক স্বপ্ন কেন দেখছি। নাকি নিবিড়কে কে কোন ভুতে টুতে ধরেছে তাই তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছে। এমন তো হতেই,পারে এই নির্জন জায়গায় আসতেই হয়তো এখানে থেকে কোন একটা ভূত নিবিড়ের ঘাড় চেপে বসেছে আর নিবিড় নয় এইসব কথাবার্তা সেই ভূত বলছে। জীবন আমি ভুতে ভয় করিনি সব সময় সাহসিকতার সঙ্গে থেকেছি। কিন্তু আজকে নিজের সামনে ভূতরূপে নিবিড় কে দেখে আমি ভয়ে আধমরা হয়ে উঠছি ভয়ে আমার সাথে শরির থরথর করে কাঁপছে।

আমি নিবিড়ের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি। আমার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে নিবিড় হঠাৎ করেই নিজের এক হাত আমার বাম গালে স্পর্শ করতেই আমার কাঁপা কাঁপি আরো বেড়ে গেল ভয়ের চোটে। আমি এক চোখ বন্ধ করে নিবিড় মানে ভুতের হাতটা নিজের গালে দেখে আমার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। নিবিড় আমার গাল স্পর্শ করে বলল, ‘ কি হলো কাঁপছো কেন?’

কথা বলতে দেরি হয়েছে আমার অজ্ঞান হতে দেরি হয়নি। আমি নিজের শরীরে ভার ছেড়ে দিলাম। নিবিড় আমাকে দু’হাতে ধরে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিবিড় আমার অবস্থা দেখে বিস্মিত কন্ঠে বলল, ‘ ছোঁয়া হোয়াট হ্যাপেন্ড টু ইউ?’

আমি তো আর তার কথা শুনার অবস্থাতে নাই। নিবিড় ছোঁয়া কে ডেকে ও যখন সারা শব্দ পেল না। তখন ও নিশ্চিত হয়ে গেল ছোঁয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। হঠাৎ অজ্ঞান কেন হলো সেটাই ওর মাথায় আসছে না। নিবিড় ছোঁয়া কে পাঁজকোলে তুলে চিলেকোঠার রুমে নিয়ে গেল।

এদিকে আবির দৌড়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ কি হয়েছে ভাইয়া ভাবি অজ্ঞান কেন? কি করেছো তুমি? প্রেম করতে গিয়ে অজ্ঞান করে ফেললে তোমাকে দিয়ে দেখি কিচ্ছু হবে না।’

নিবিড় কড়া চোখে তাকালো আবিরের দিকে আবির ভাইয়ার কঠিন দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা গলায় বলল, ‘ আমি কিছু বলিনি। আমি যাই তুমি ভাবির সেবা যত্ন করো কেমন।’

আবির নিবিড় কে রেখে চলে গেল। ভাইয়া ক্ষেপেছে এখানে থাকা যাবে না। আবির ছাদে আর না দাঁড়িয়ে নিচে যাওয়া ধরলো তখন কারো সাথে ধাক্কা খেলো।

‘ কেরে আমারে ধাক্কা দিলি!’

পাশ থেকে লিহান বলল, ‘ আমাকে তুমি ধাক্কা দিলে কেন?’

আবির বলল, ‘ ও তুমি সরি‌। দোষ দুজনের ই। ‘

লিহান হেসে উপরে উঠা ধরল তা দেখে আবির চমকে উঠল নিবিড়ের কথা ভেবে। ও ছুটে গিয়ে লিহানের হাত ধরে বলল, ‘ ক‌ই যাও ব্রো?’

লিহান বলল, ‘ ছাদে যাব ছোঁয়ার সাথে আড্ডা দিতে।’

আবির চোখ কপালে তুলে বলল, ‘ কিহহ না না এখন তো যাওয়া যাবে না। তুমি আমার সাথে নিচে চলো। তোমার সাথে আড্ডা আমি দিব।’

লিহান সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,’ আমি কি বলেছি তোমার সাথে আড্ডা দিব? আমার ছোঁয়ার সাথে দরকার আছে।’

আবির আটকে বলল, ‘ ছোঁয়া আপুকে এখন তুমি কোথায় পাবে? ছোঁয়া আপু তো ঘুমিয়ে পড়ছে আমি তো গিয়েছিলাম। আপু বলল এখন ঘুমাবে কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে। তাইতো আমি চলে আসলাম।’

লিহান বলল, ‘ আমি গিয়ে শুনে আসি। তুমি আমাকে আটকাচ্ছো কেন? ও আমার সাথে গল্প না করলেও আমি এখন ছাদে যাবে এমনিতেই।’

আবির কোনভাবে আটকাতে পারল না লিহান কে লিহান গটগট করে উপরে চলে গেল।

#চলবে……