#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪০
#নন্দিনী_নীলা
নিবিড় যেতেই লিহানের আগমন ঘটলো। ও কেন যেন বাসার ভেতরে আসে। লিহান ভেতরে এসে আমাকে অমন থমকে যাওয়া মুখে আমাকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে, ‘ ছোঁয়া, আর ইউ ওকে? বাইরে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
আমি থতমত খেয়ে কানে হাত দিয়ে বলি, ‘যাওয়ার জন্যই তো বের হয়েছি। তুমি এখানে কি করছো? বিয়ে পড়ানো কি শেষ?’
লিহান বলল, ‘ ফোন অফ হয়ে গেছে আজকে চার্জে বসাই নাই। এজন্য চার্জে বসাতে আসলাম। আর বিয়ে এখনো শুরু হয় নাই। কিন্তু শুরু হয়ে যাবে।’
‘তো এটা কি পরে করতে পারতে না বিয়ে না দেখেই চলে আসছো।’
‘ তুমি দেখি বিয়ে দেখার জন্য খুব এক্সাইটেড।’
‘সবার বিয়েতে এক্সাইটেড থাকি না। কিন্তু আপন মানুষের বিয়েতে এক্সাইটেড থাকি। থাক তুমি তোমার কাজ কর আমি যাই।
বলে আমি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলাম বাইরে এসে দেখলাম সবাই জরো হয়ে আছে। আপুরা যেহেতু স্টেজে বাসা এজন্য তাদের আমি ভালই দেখতে পাচ্ছি তারমানে এখন কাবিন হচ্ছে। দুজনে একটা কাগজের সাইন করলো এরপর হুজুর দিয়ে বিয়ে করানো হবে। নিবিড় তাদের আশেপাশে নাই আমি দেখতে পেলাম নিবিড় আমাদের সবার পেছনে একাই দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই বিয়েতে। আমি একবার পেছনে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালাম। তখনই ভিড় ঠেলে নিবিড় আমার কাছে চলে এলো আর আমাকে এক হাতে জাপটে ধরে বলল, ‘আরে জান তুমি চলে আসছো। আমাকে রেখেই বিয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছো। আমি যে তোমার জন্য বিয়ে না দেখে ওইখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’
আমার কাঁধে নিবিড়ের হাত আমি নিবিড়ের হাতের আঙ্গুলে একটা চিমটি কেটে বললাম, ‘বিয়ে দেখবেন ভালো কথা আমাকে জাপটে ধরেছেন কেন?’
নিবিড় বলল, ‘একটু গায়ে না হয় ছোয়ায় লাগছে। তাই এত্ত জোরে চিমটি দিলে বাপরে শক্তি আছে। আমাকে সবাই তোমার উপর ফেলছে ধাক্কিয়ে এর জন্যই তো পড়ে যাওয়ার ভয়ে তোমাকে ধরে রাখছি।’
আমি বললাম, ‘ও আচ্ছা তাই। আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরান তো। আমি এখান থেকে সরে অন্য জায়গায় দাঁড়াব। আর আপনি ভুলেও আমার আশেপাশে এসে দাঁড়াবেন না।’
নিবিড় আমাকে কোনমতেই ছাড়বেনা আমি ওকে ধাক্কায় বিয়ে দেখা বাদ দিয়ে বাইরে চলে আসলাম। ঠেলে বাইরে এসে দেখলাম নিবিড়ের মা আর মাইসা দুজনের রাগী মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই নিবিড়ের মা আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাসার ভেতরে নিয়ে আসলো। রাগের কারণ কিছুই বুঝতে পারছি না। নিবিড়ের মা আমাকে এমনভাবে টেনে আনলো জানো আমি মানুষ না। গরু ছাগল।
মাইশা আমার দিকে শয়তানি চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আছে ও এত খুশি কেন সেইটা আমি বুঝতে পারছি না।
‘ কোন সমস্যা আন্টি আপনি আমাকে এভাবে টেনে আনলেন কেন? আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রেগে আছেন?’
নিবিড়ের মা আচমকা তেরে এসে ঠাস করে আমার গালে থাপ্পর মারল। আমি আচমকা থাপ্পর খেয়ে থমকে গেলাম। গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে নিবিড়ের মায়ের দিকে তাকালাম। তিনি এখনো আমার দিকে রাগে ক্ষিপ্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে।
‘ কোন অপরাধ আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন?’ ঝাঁঝালো গলায় বললাম।
নিবিড়ের মা আমাকে বলল, ‘ এই মুহূর্তে তুমি এই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে সবাই এখন বিয়ের ওখানে বিজি। তোমাকে যেন আর এক সেকেন্ডে বাসায় না দেখি। বড়লোক বাড়ির ছেলেকে ফাঁসিয়ে এই বাসায় পার্মানেন্ট থাকার ধান্দা তোমার। আমি ধরতে পারবো না ভেবেছ? আর আমার ছেলের সাথে যদি কোন রকম সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
‘ আপনার মাথা ঠিক আছে? আপনি আমার বড় বলে আপনাকে আমি অসম্মান করছি না। কিন্তু আজেবাজে কথা বললে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো না। আপনার ছেলেকে আমি ফাঁসাচ্ছি? আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন তার সাথে আমার কোন রকম সম্পর্ক নাই। সে নিজেই আমাকে ডিস্টার্ব করে। এত পারেন নিজের ছেলেকে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখেন না। তা পারেন না আমাকে দোষ দিতে আসছেন। আচ্ছা আপনার কানে এই বিষগুলো ঢেলেছে কে? আপনি তো আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতেন না। কিন্তু আপনি এসব জানতেন না। আপনাকে কি এই কথাগুলো মাইশা আপু বলেছে?’
মাইশা চেচিয়ে উঠে বলল,, ‘দেখছো মামি কত বেয়াদব এই মেয়েটা। তোমার সাথে কেমন চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলছে। কিভাবে নিবিড়কে একা ফাঁসাচ্ছে বলছে ব্রো নাকি তাকে ডিস্টার্ব করে না। নিজের দোষ গুলো ঢেকে ব্রো কে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তুমি কিন্তু ওর কথাই ভুলো না মামি।’
আমি মাইশা কে কিছু বলতে যাব তখনই নিবিড় দরজা খুলে ভেতরে এলো। ওকে দেখেই নিবিড়ের মার সুর চেঞ্জ হয়ে গেল। তিনি সোফায় বসে পরল। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ছোঁয়া আমাকে এক কাপ চা করে দাও তো খুব মাথা ব্যাথা করছে।’
নিবিড় আমাদের দিকে চেয়ে ছিল অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে নিবিড়ের মা কথাটা বলল যা শুনে আমি চমকে উঠলাম। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম আমাকে ইশারায় ওইসব বলতে মানা করছে। গিরগিটির মতো রং পাল্টায়।
আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম। নিবিড় মায়ের কাছে গিয়ে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করছে মাথা কেন ব্যাথা করছে হ্যানত্যান। মাইশা নিবিড়কে দেখেই বাইরে চলে গেছে। চা করে এসে দেখলাম নিবিড় নিজের মায়ের মাথা টিপে দিচ্ছে।
রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ও দাঁতে দাঁত চেপে ওনার হুকুমটা আমার শুনতে হলো। এত অপমানিত, থাপ্পর খেয়েও উনার জন্য আমার চা করতে হলো। আমি চা নিয়ে একদম ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম কঠিন মুখ করেই বললাম, ‘নিন আপনার চা।’
নিবিড় বলল,’ আম্মু তোমাকে চলো রুমে নিয়ে যায়। শুয়ে থাকলে মাথা ব্যথা কমে যাবে।’
নিবিড়ের মা চা খেয়ে ছেলের সাথে রুমে চলে গেল আমি বাইরে চলে এলাম। আমাকে বাসার ভেতর থেকে বের হতে দেখে বলল, ‘বিয়ের এখানে উপস্থিত না হয়ে ভেতরে কি করছিলে? তুমি না আমাকে তখন বিয়ে দেখার জন্য তারা দিয়ে চলে এলে।’
‘আমি তো বিয়ে দেখেই ভিতরে গেছিলাম একটা দরকার।’
লিহান অবাক গলায় বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস।’
‘ হ্যাঁ।’
‘বলো কি তাহলে বর বউ এখন কবুল বলল কেন? বিয়েতে কয়বার কবুল বলে?’
আমি জিভ কেটে বললাম, ‘আমি আসলে কাবিন দেখেই চলে গেছি। বিয়ে পড়ানো দেখি নি।’
লিহান বলল, ‘আবির আম্মু তোমাকে ঐভাবে টেনে নিয়ে গেল কেন?’
আমি ঢোক গিলে লিহানের দিকে তাকিয়ে আছি। লিহান উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে জানার জন্য।
‘তুমি দেখেছো?’
‘হ্যাঁ দেখলাম তো উনি খুব রেগে ছিলেন বোধহয় তোমার উপর!’
‘হয়তো কিন্তু নিয়ে গেলেন এমন ভাবে কিন্তু যাওয়ার পরে এক কাপ চা চাইলেন। বুঝলাম না চা খাওয়ার জন্য অমন করে নিয়ে গেলেন কেন?’
লিহান অবিশ্বাস্য বলায় বলল, ‘সিরিয়াসলি?’
‘একদম। উনার নাকি মাথা ব্যথা করছে। চা খেয়ে এখন তো রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে বোধ হয়।’
‘বলো কি? দেখে তো মনে হয়নি অসুস্থ। উনি তো খুব রেগে ছিলেন দেখা গেল।’
‘ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। যা হয়েছে তাই তো বললাম।’
নিবিড় কে দেখলাম এদিকে আসছে। নিবিড় এসেই আমাকে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কি কথা হচ্ছে?’
লিহান বলল, ‘তোমার আম্মুকে নিয়ে কথা হচ্ছে!’
আমি চমকে উঠলাম লিহানের কথা শুনে। ফাজিল ছেলে এসব এখন নিবিড় কে বলে দেবে নাকি। আমি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছি লিহানের দিকে। নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ কি হয়েছে ছোঁয়া তুমি লিহান কে চোখ রাঙানি দিচ্ছ কেন?’
আমি আমতা আমতা করে বলল, ‘ কই না তো!’
লিহান আমার চোখ রাঙানিতে থেমে গেছে আর কিছু বলছে না দেখে নিবিড় লিহান কে জিজ্ঞেস করে, ‘আম্মুকে নিয়ে কি কথা বলছিলে?’
‘ কই কিছু না তো।’ লিহান অস্বীকার করে বলল।
নিবিড় সন্দেহীন চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আবার অস্বীকার করছ। এইমাত্র না বললে তোমরা আমার আম্মু নিয়ে কথা বলছিলে।’
লিহান বলল, ‘আমি জিজ্ঞেস করছিলাম বিয়ে না দেখে ছোঁয়া কোথায় ছিলে। ছোঁয়া বলল তোমার আম্মু মানে আন্টিকে নাকি চা করে দিতে গেছিল। তিনি নাকি অসুস্থ। ‘
বলেই লিহান সেখান থেকে চলে গেল। সেখানে থেকে গেলাম আমি আর নিবিড়। নিবিড় এবার আমার দিকে তাকিয়ে খুশি মুখ করে বলল, ‘ তুমি তো খুব লক্ষ্মী বউমা হবে ছোঁয়া। বিয়ের আগে থেকেই শাশুড়ির সেবা যত্ন করে মন জয় করার চেষ্টা করছো।’
আমি কটমট চোখে তাকালাম নিবিড়ের দিকে। নিবিড় আমার চাহনী দেখে বলল, ‘ রাগ কিন্তু তোমাকে সুন্দর লাগে না।’
এই কথাটা শুনে যেন আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল আমি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,, ‘ আপনি যাবেন এখান থেকে!’
আর বিরবির করে বললাম, মা ছেলে দুজনে আমাকে জ্বালিয়ে খেলো। একটু আগে ওনার মা আমাকে কিরকম ভাবে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। থাপ্পর পর্যন্ত দিয়েছে। তাও আমাকে সব কিছু দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে উনার মায়ের জন্য চা করে আনতে হলো। যেখানে ওনার মা আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারেনা সেখানে উনি আসছে আমাকে লক্ষী বউ বলতে। শুধুমাত্র উনার জন্য আমাকে থাপ্পর খেতে হলো। নিবিড় কী যেন বলছে আমাকে আমি তো তার কথা শুনছি না আমি রাগে ফুসফুস করছি। থাপ্পরের কথা মনে পড়তে মনে হলো প্রতিশোধটা নেওয়া হয়ে যাক। নিবিড় কি যেন বলতে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল মনে হয় নিচু হয়ে বলতো কথাটা। আমিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম। আমি ঠাস করে নিবিড়ের গালে থাপ্পড় মেরে বসলাম। নিবিড় গালে হাত দিয়ে হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড়ের মুখের এক্সপেরেশন দেখে আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।
তবুও রাগী গলায় বললাম, ‘আমার থেকে দশ হাত দূরে থাকবেন। দশ হাত মেপে বুঝছেন! একদম আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবেন।’
#চলবে…..
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৪১
#নন্দিনী_নীলা
নিবিড় আমার হাত ধরে বলল, ‘ রেগে আছো কেন? হোয়াটস হ্যাপেন্ড?’
আমি হাত ঝাঁপটা মেরে ছাড়িয়ে বললাম, ‘ডোন্ট টাচ মি।’বলেই চলে এলাম সেখান থেকে।
চাইলেই নিবিড়কে কথাটা বলে দিতে পারতাম কিন্তু কি হতো অযথায় তাদের মা ছেলের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। এখানে আমি যদি নিবিড় কে চাইতাম তাহলে না হয় নিবিড় কে নিজের কাছে রাখার জন্য নিবিড় ভুল না বোঝার জন্য সব চেষ্টা করতাম। যেখানে আমিই চাই না নিবিড় পাগলামো করুক। আর আমি না ওকে কখনো মেনে নেব। না ওর পাগলামো কে আমি একসেপ্ট করব।
আজকের রাতটাই আমি এই বাসায় আছি আমাকে তাড়িয়ে দিলেও আমি আগামীকাল চলে যাব। রাখতে চাইলেও চলে যাব।
এই বাসায় কি আমি একটা জোকার সেজে থাকবো নাকি। সবার অবজ্ঞা অবহেলা সহ্য করে অনেকদিন থেকেছি। কারণ তখন আমি নিরুপায় ছিলাম। আমার যাওয়ার কোন জায়গা ছিল না। কিন্তু এখন আমি বাসা ঠিক করে ফেলেছি। লিলির সাহায্যে। এ বাসা থেকে গেলে আমাকে শুধু অবজ্ঞা অবহেলা না নিবিড়ের এই পাগলামো থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
রাফসান কাকা আমাকে স্টেজ থেকে ডাকছে। সে তার বন্ধু আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে ছবি তুলছিল। সেদিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম তাহমিনা আপু মুখ গোমরা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবলাম আজকে একবার আপুর ধারের কাছে যায়নি। কাজটা ঠিক হয়নি। যার জন্য এত অপমান এত লাঞ্ছনা সহ্য করো আমার থাকতে হচ্ছে তাকে কিনা আমি এমন একটা আনন্দের দিনে দুঃখ দিলাম। অপরাধী ন্যায় মুখ করে আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপু আমার দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকাল না। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমি আপুকে জাপটে ধরে হাসিমুখ করে বললাম,, ‘আপু স্মাইল নতুন বউ যদি মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে রাখে তাহলে ছবি একটু ভালো হবে না।’
আপু আমার হাত নিজে থেকে ছাড়িয়ে বলল, ‘তুই এখানে এসেছিস কেন? যেখানে ছিলি সেখানেই থাক। আমার ধারের কাছে আসতে হবে না কাউকে। আমার এমনিতেই কেউ নাই তোদের আর দয়া দেখাতে হবে না।’
আমি অসহায় মুখ করে বললাম, ‘তোমার কি মনে হয় আমি দায়ে পরে তোমার সাথে ছবি তুলতে এসেছি? এখানে কোনো ভালোবাসা নেই।’
‘কোন ভালবাসা নেই। থাকলে তুই আগে আসতি আমার কাছে। এইভাবে আমাকে একা রাখতি না। কখন থেকে তোকে খুজছি জানিস।’
‘তুমি কি চাও এখন সবার সামনে আমি কান ধরে উঠবস করি। তোমার রাগ বানাই। আপু তুমি যদি চাও তাই করবো আমি। তাও প্লিজ এমন আনন্দ ময় একটা দিনে তুমি মুখটা এমন করে রেখো না। একটুও ভালো লাগছে না দেখতে। হাসো প্লিজ।’
তখনই ক্যামেরাম্যান বলে উঠলো, ‘আপনারা মান অভিমান বাদ দিয়ে এবার একটু সুন্দর হয়ে দাঁড়ান। আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো ছবি না তুলে।’
আমি আপুকে তবুও কান ধরে সরি বলতে নিছিলাম আপু হেসে দিয়ে কান থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে বলল, ‘ পাগলী রাগ ভাঙিয়েই ছাড়লি।’
আমি আর আপু হাসিমুখ করে ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকিয়ে আছি, কিন্তু ক্যামেরাম্যান ছবি না তুলে আবার বিরক্ত করে বলল, ‘ এবার বর। এতক্ষণ বউ রাগ করছিল এবার বর কারে ডাকে ..
রাফসান কাকা নিবিড় কে ডাকছে। নিবিড় ত ডাক শুনেই ঝড়ের গতিতে স্টেজে চলে এলো। রাফসান কাকা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এতক্ষণ ডাকলাম আসলি না। এখন ডাক দিতে না দিতে দৌড়ে আসলি।’
‘এতক্ষণ ত আসার মানুষ টা ছিল না। তাই আসিনি।’
কেউ বুঝতে না পারলেও আমি নিবিড়ের কথার মানে বুঝতে পারছি। নিবিড় হাসি মুখ করে আমার পাশে এসে বসল। আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাব নিবিড় আমার হাত শক্ত করে ধরে বসিয়ে রেখে বলল, ‘ সুন্দর করে ছবি তোলে দেন তো।’
বলেই হাসি মুখে ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকাল নিবিড়। আমি রেগে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। নিবিড় তা বুঝে সামনে দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল, ‘আমাকে পরে দেখিও। আগে পোজ দাও সুন্দর করে ছবিটা ভাল হবে তাইলে।’
আমি বললাম, ‘ আপনার সাথে আমি ছবি তুলবো না। সেখানে ভালো আর খারাপ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।’
‘সবার সামনে সিনক্রেট করো না। তাহলে আমি কিন্তু লিমিট ক্রস করে সিনক্রেট করবো। আমাকে তো চিনোই।’
আমি চুপ করে সামনে তাকালাম। আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে হলো। তারপর আমি সেখান থেকে চলে এলাম। এদিকে তাহমিনা আর রাফসান অবাক হয়ে নিবিড় আর ছোঁয়াকে দেখছিল। ওদের ফিসফিসিয়ে কথা বলা না শুনলেও মুখে এক্সপ্রেশন দেখে কিছু একটা সন্দেহ করেছে।
নিবিড় ও স্টেজে ছেড়ে চলে গেছে। দুজনের একজন ও রাফসান ও তাহমিনার সাথে কথা বলে নি।
.
বাসার ভেতরে চলে এলাম আমি। দেখতে পেলাম কাকার রুম সাজানো হচ্ছে ফুল দিয়ে। আমি কৌতুহল নিয়ে একটু কাছাকাছি যেতেই আমাকে ধমকে দিল মাইশা। মাইশার দিকে চেয়ে বললাম, ‘ তোমার সাথে আমার কথা আছে এদিকে আসো।’
মাইশা অহংকারী গলায় বলল, ‘ আমি তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না।’
‘ইচ্ছা না থাকলেও বলতে হবে আসো আমার সাথে।’
বলে মাইশার হাত ধরে টেনে আমি নিয়ে এলাম একটু নিরিবিলি জায়গায়।
মাইশা তো রাগে চিৎকার করে উঠল, ‘ You have so much courage. Drag me against my will?’
‘ নিবিড়ের মার কানে আমার নামে বিষ কেন দিছো তুমি? ‘
মাইশা বলল, ‘ বেশ করেছি। ‘
‘কাজটা তুমি ঠিক করনি। ওনার কাছে তুমি আমাকে খারাপ করে কি পেলে আমি জানিনা। আর আমি ওনার ছেলের বউ হওয়ার জন্য বসে রই নাই। তুমি একদম ঠিক করো নাই।’
‘ আমাকে একদম মিথ্যা বলবে না। তোমার আর ব্রো এর মাঝে যে একটা সম্পর্ক আছে। তাও আবার গভীর সম্পর্ক সেটা আমি সেই দিনই বুঝেছিলাম। যেদিন ব্রো তোমার জন্য আমার উপর চিল্লাচিল্লি কর ছিল। তারপর তো আমি ফলো করেই দেখেছি। তোমরা একটু কিছু হলে ঝগড়া করো আবার দেখি খুব মাখামাখি। মম বলেছিল ছোটলোকরা নির্লজ্জ টাইপের হয় বেহায়া টাইপের হয়। তুমিও নিশ্চয় বেহায়া নির্লজ্জপণা করেই ব্রোকে তোমার দিকে টেনেছো। তুমি তো সুন্দর ও না। সুন্দরী হলে না মানা যেত যে তোমার রূপ দেখেই ভাইয়া তোমার জন্য এত পাগল হয়েছে। তোমার মধ্যে তো পছন্দ করার মতো কিছুই নেই। না তুমি সুন্দরী আর না তুমি ধনী। এতিম তুমি তোমাকে কি জন্য ভাইয়া পছন্দ করলো বলো আমায় নিশ্চয়ই খারাপ কিছু করেছো। অথবা জাদু করেছো। ‘
‘ হোয়াট আর ইউ ম্যাড। একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে তুমি বিলিভ করো জাদু করা যায়?’
মাইশা গর্জে উঠে বলল, ‘আগে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন বিশ্বাস করছি। তোমার প্রতি ভাইয়ার পাগলামো দেখে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। এটা জাস্ট মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বশ করা ছাড়া ভাইয়া তোমার মত একটা মেয়ের জন্য পাগল কেন হবে।’
‘সেই প্রশ্ন আমাকে না করে তুমি তোমার ব্রো কে জিজ্ঞেস করো। আর তুমি যে আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথাগুলো বলছো আর যে মিথ্যে উদাহরণগুলো বলছো সবকিছুই তোমার আরেক পাগলামি। আসলে তোমরা ভাই বোন সবই পাগল। পাগলের পাল্লা এসে পড়লাম সবাই আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছো। যে যার মত ভাবনা চিন্তা করে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করছো। শোনো তাই আমাকে নিয়ে ভাবা বাদ দাও আমি আগামীকাল চলে যাচ্ছি বাসা থেকে। তুমি তোমার ব্রোকে পাগল থেকে মানুষ কর আর নিজের মাথাটা ঠিক কর। তোমার মামি মানে নিবিড়ের মাকেও বলিও তার ওমন পাগল ছেলে আর ওনার পুত্র বধু হওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নাই আমার।’
বলেই মাইশাকে রেখে বাসর ঘরে ঢুকে গেলাম। আমাকে দেখে মাহি বলল, ‘ কেমন হয়েছে আপু। সুন্দর হয়েছে না কাকুর বাসর ঘর সাজানো।’
আমি বললাম, ‘ খুব সুন্দর হয়েছে।’
এদিকে আবির আড়াল থেকে মাইশা আর ছোঁয়ার কথপোকথন সব শুনেছে। ও অবাক হয়ে মাইশা কথা ভাবছে। ব্রো যদি কোনভাবে জানতে পারে মাইশা তার প্রেমে পাগল হয়ে আছে তাহলে যে মাইশা কে করবে সেটাই ভাবতে পারছি না।
#চলবে…..