#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৯ক]
__________________
“এই মেয়ে নাকি বাড়ির বউ আদব কায়দা কিচ্ছু জানে না ভাইয়া আপনি দেখেছেন আমার দিকে কীভাবে তাকিয়ে ছিল।আমি ফুফু শ্বাশুড়ি হই সালাম তো প্রাপ্য নাকি?”
” তোমায় দেখে আতঙ্কে মেয়েটার মুখ নীল হয়ে গেছে ভয়ে মুখ থেকে সালাম বের হয়নি।”
মাহমুদার কথা শুনে মুখ কুচকালেন লিপি।সব কাজে পুত্র বধূর পক্ষ নেওয়া মাহমুদার মুদ্রাদোষ হয়ে গেছে।আবিদ শাহরিয়ারের দৃষ্টি নিবদ্ধ টিভির দিকে আশেপাশে দুই নারীর তর্কাতর্কি তার কানে এসেও আসছে না।রাত অনেক হয়েছে এবার ডিনারটা সারতে হবে মাহমুদা টেবিলে খাবার গুছিয়ে ডাকলেন ঈশানকে।আবিদ শাহরিয়ার টিভিটা বন্ধ করে বসলেন টেবিলে তার পিছু পিছু গেলেন লিপি এবং লিজা।
.
“আমি যাব না নিচে আজ না খেলে কিছু হবে না।ঈশা তোমার খিদে পেয়েছে?আমি খাবার উপরে পাঠিয়ে দিতে বলবো।”
” ঈশান প্লিজ নিচে চলুন আপনি যদি এখন না যান সব দোষ আমার ঘাড়ে পড়বে সবাই বলবে…”
” কী বলবে?”
” এত কথা বলতে পারবো না আপনি চলুন এক্ষুনি যাবেন।”
ঈশান পাত্তা দিল না ঈশার কথায়।সে নিজের মর্জিতে শুয়ে পড়লো বিছানায়।নিচে গেলে ডাইনিং এ নিশ্চয়ই ফুফু আর বাবা চোখের সামনে পড়বে এদের মুখদর্শন করতে চায় না সে।ঈশা টেনে ধরলো ঈশানের হাত,
” চলুন ও ঈশান চলুন না।”
” আমি যাব না।”
” আমার ভীষণ ক্ষুধার্ত আমার জন্য অন্তত চলুন।”
” বেশি ক্ষিদে লাগলে আমায় খাও।”
” কি!”
” না মানে ওই যে ঝুড়িতে দেখো আমার কিছু বাদাম আর বিস্কুট আছে ওগুলো খাও পেট ভরে যাবে।”
ঈশানের কথার মাঝে দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দ হলো ঘড়িটা যে জানান দিচ্ছে রাত বারোটা বেজে গেছে।মাহমুদা বার বার ঈশাকে অনুরোধ করেছে ঈশানকে নিয়ে যেন সে নিচে নামে।তাই তো ঈশানের ত্যাড়ামির কাছে হারলে আজ চলবে না।
” ঈশান শেষ বার বলছি আপনি যদি নিচে আমার সাথে না যান তবে তবে তবে উমমম হ্যাঁ আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না অন্য রুমে চলে যাব।”
” তুমি জানো আমায় এসব বলে লাভ নেই।আচ্ছা থাক বউটাকে আর কষ্ট দিয়ে লাভ নাই চলো।”
.
খাবার টেবিলে নেমেছে নিগূঢ় নিরবতা।সকলের মুখে রা নেই মাহমুদা আড় চোখে তাকাচ্ছেন ঈশানের দিকে ছেলেটা মাথা নামিয়ে যে খাচ্ছে খেয়েই যাচ্ছে আশেপাশে কেউ আছে কি না সে যেন বুঝতেও পারছে না।ঈশার অস্বস্তি ভাবটা বুঝতে পারছে ঈশান কিন্তু এখন কিছু বলবে না সে,মেয়েটা তাকে জোর করে নিচে নামিয়েছে এবার থাক বসে।
” ঈশান শ্বশুর বাড়িতে কেমন যত্ন আত্তি করলো তোমায়?”
মাহমুদার প্রশ্নে চোখে হাসলো ঈশান।ওই বাড়ির কথা মাথায় আসতে মনটা ভীষণ পুলকিত হলো।
” এমনি এমনি বলেনি শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি বুঝলে আম্মু নিজের ছেলের মতো আদর যত্ন করেছে।”
” তা তো করবেই।বড়লোক বাড়ির ছেলে জামাই হিসেবে পটিয়েছে ওনাদের ভাগ্য বলা চলে।”
শেষোক্ত বাক্যটি বলে তাচ্ছিল্য হাসলেন লিপি।তার কথায় আবিদ শাহরিয়ার ইশারায় চুপ থাকতে বলেন।এত বড় অপবাদ!লজ্জায় মিহিয়ে গেল ঈশা।মাহমুদা ভীষণ বেকায়দায় পড়লেন লিপির কি সব কাজেই নাক গলাতে হবে?ঈশান চুপচাপ মুখে খাবার পুরলো।
” এই মেয়ে কি যেন নাম?ওহ হ্যাঁ ঈশা তা তোমার বাবার কয়টা বাড়ি আছে এই শহরে?”
” তা দিয়ে আপনি কি করবেন?ওদের বাড়ির সামনে ভিক্ষা করবেন?নাকি কাজের লোক হিসেবে নিয়োগ হবেন?”
ঈশানের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলেন লিপি।মাহমুদা ঠোঁট কুচকে হাসছিলেন।ছেলের স্পর্ধা দেখে অবাক না হয়ে পারলেন না আবিদ শাহরিয়ার।চোখ রাঙিয়ে তিনি বলেন,
” ঈশান তোমার ফুফুর সাথে এভাবে কথা বলছো কোন সাহসে?”
” কোন সাহসে বলছি তার জবাব দিতে বাধ্য নই।”
” লিপি তো অযৌক্তিক প্রশ্ন করেনি যা বলেছে একদম ঠিকঠাক।”
” আমিও খারাপ কিছু বলিনি যা বলেছি একদম ঠিকঠাক।”
আবিদ শাহরিয়ার চুপ হয়ে গেলেন।এই ছেলের দিন দিন বেয়াদব হয়ে উঠছে।রাসেল আড় চোখে তাকালো ঈশানের দিকে তার পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু এখন হাসা যাবে না।ছোট থেকে এই লিপির প্রতি কম ক্ষোভ জন্মায়নি তার।অনাথ বলে নানান কথা শুনিয়েছে একটা সময় সবটা চুপ চাপ হজম করেছে রাসেল।
ঈশানের হাতটা আলগোছে ধরলো ঈশা। ঈশান কি বুঝলো কে জানে সে ঈশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
” রাত বারোটা বেজেছে ওমনি দুষ্টুমি শুরু তাই না?এত অধৈর্য হচ্ছো কেন?খেতে দাও।”
ঈশার কানটা ঝাঁঝা করে উঠলো।এই ছেলে এমন কেন?সবকিছুতে উলটা পালটা দুই লাইন বেশি বুঝে।
৯৭.
বিষণ্ণ মন নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে অনু।এতদিন ঈশা তাকে টেনে টুনে নিয়ে যেত কিন্তু এখন নিজেকে বাধ্য মেয়ের মতো যেতে হচ্ছে।একা একা যেতে কি ভালো লাগে?আজ ভুলেও ভার্সিটির দিকে আসতো না সে কিন্তু আসার একমাত্র কারণ গতরাতে ঘরে তুমুল ঝগড়া হয়েছে।ঝগড়ার মূল কারণ তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ছেলে ভালো সরকারি চাকরি করে।পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম শহরে ছেলেদের বাড়ি আছে সব মিলিয়ে গলে গেছেন অনুর মা দোলন।এদিকে অনুর বাবার ইতিবাচক মতামত দিয়েছেনে সব মিলিয়ে গ্যাঁড়াকলে ফেসে গেল মেয়েটা।ঈশার বিয়ে হওয়ার পর থেকে দোলনের ঝোঁক বেড়েছে অনুকে বিয়ে দেওয়ার।
রাস্তার পাশে অনুর গা ঘেষে একটি গাড়ি থামতে চমকে গেল অনু।গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা বের করে অনুকে ডাকলো রাসেল।
” বলেছিনা আজ নিয়ে যাব চলে এলে যে?উঠে এসো।”
অনু আশেপাশে পরখ করে দ্রুত চড়ে বসলো গাড়িতে।প্রথম সাক্ষাৎকারে মিহি হাসলো দুজনে।
” গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে রাসেল।আজ ভার্সিটি যাব না অন্য কোথাও চলো ”
” ঠিক আছে।এবার বলো বাসায় কি হয়েছে।”
” বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি এবার কি করবো।”
” মজা করছো?এর আগেও এমন মজা করেছো।”
” আমি সিরিয়াস রাসেল।আমি মজা করছি না।”
” হুম ঈশার বিয়ে হয়ে গেছে তো তাই এখন মনটা আকুপাকু করছে তাই না?”
” রাসেল আমি মজা করছি না।তুমি কি করবে তাড়াতাড়ি করো।”
” আমি এখন কী করবো?বাড়িতে আঙ্কেল এসেছে তারা ঈশার আর ঈশাকে আলাদা করতে উঠে পড়ে লেগেছে তার মাঝে আমি আমার বিয়ের কথা বলবো পাগল নাকি।”
” তাহলে আমি কি করবো?”
” যদি এটা মজা না হয়ে থাকে যদি সিরিয়াস ইস্যু হয় তবে আমি বলি যেভাবে হোক ওনাদের ম্যানেজ করো।”
অনু রুষ্ট হলো।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে গলাটা ধরে এসেছে কীভাবে কি করবে সে?বাবা যখন একবার মতামত দিয়েছেন তখন কোন মতেই টলানো যাবে না তাকে।অপরদিকে ঈশানদের পরিবারকে মোটাও পছন্দ করে না অনুর পরিবার।ঈশার মায়ের এত ভর্ৎসনা শুনে ঈশানদের প্রতি তাদের জন্ম নিয়েছে নেতিবাচক ধারণা।
.
ঈশানের শার্টের কলার ঠিক করে মিহি হাসলো ঈশা।তাকে নিগূঢ় চোখে পরখ করছে ঈশান।কখনো কখনো হুট হাট গালে ছুঁয়ে দিচ্ছে ঠোঁট।ঈশার চুলে হাত বুলিয়ে মেয়েটাকে আরো কাছে টানলো ঈশান।দুজনের মাঝে যে স্বল্প দুরত্ব ছিল সেটাও ঘুচে গেছে।ঈশা গলা জড়িয়ে ধরলো ঈশানের তবে এতে মাটিতে পা ছুঁতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।দু’হাতের আলিঙ্গনে ঈশাকে উপরে তুললো ঈশান।
” আজ ভার্সিটি যাবে না কেন?”
” আমার ইচ্ছে করছে না ঈশান।আরো কিছুদিন পর যাব।”
” গেলে ভালো হতো।যাও রেডি হয়ে আসো তোমায় নিয়ে যাব।”
” নিয়ে যাবেন?কোথায় নিয়ে যাবেন?”
” অফিসে নিয়ে যাব।এখানে তোমাকে রেখে গেলে আমি এক দন্ড শান্তি পাব না।”
” এ হয় না ঈশান।আমি এখানেই থাকবো।”
” জেদ করে লাভ নেই চলো আমার সাথে।মা নিজে বলেছে তোমায় নিয়ে যেতে।”
” আমি তো জেদ করছি না।আমি থাকতে চাই সবার সাথে মিশতে চাই।”
” এরা তোমার মনে আঘাত দিয়ে কথা বলবে ঈশা প্লিজ আমি এসব সহ্য করতে পারবো না।”
” আমাকে আমার মতো মানিয়ে চলার স্বাধীনতা দিন।আমি…”
ঈশান ঈশার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কয়েক সেকেন্ডে নিজেকে ছেড়ে সংযত করলো সে।ঈশা যখন যেতে চাইছে না কি আর করার তখন একাই অফিসে যাবে সে।
৯৮.
গতকাল থেকে লিপির ভাবনায় ছিল কখন ঈশান বাড়ির বাইরে বের হবে।
ঈশান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আর এই সুযোগটা কাজে লাগালো লিপি।ঈশাকে নিচে আসতে দেখে মাহমুদাকে বলে,
” কি দিন কাল এলো শ্বাশুড়ি রান্না করে খাওয়াবে আর বাড়ির বউরা দুপুরে উঠে নাচতে নাচতে হাজির হবে।”
প্রতিটা কথা ঈশার কানে এলো তবে সে প্রত্যুত্তর করলো না।মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়ালো মাহমুদার পাশে।ঈশাকে দেখলেই লিপির গায়ে জ্বলন ধরে ঈশানের ভয়ে কিছু বলার সাহস করে না।তবুও যতটুকু পারা যায় এই মেয়েকে অপদস্থ করতে ছাড়েন না।
“এই ঈশা নাকি ফিশা যাই হোক শুনো তোমার বাবা মা কি শিক্ষা দেননি শ্বশুর বাড়িতে কিভাবে চলতে হয়?”
” আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি হলো পরিক্ষা কেন্দ্র যেখানে শিখে পড়ে আসতে হবে।যাই হোক শিখে পড়ে আসার আগে আপনাদের বাড়ির ছেলে আমাকে জোরজারি করে পরিক্ষার কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়েছে তাই তো পরিক্ষার কোন প্রস্তুতি নিতে পারিনি।এখন আশেপাশে মানুষগুলো থেকে দেখে শেখা ছাড়া আর উপায় নেই।”
ঈশার প্রত্যুত্তর শুনে হেসে ফেললেন মাহমুদা।ঈশার হাত টেনে বসালেন তার পাশে।অপমানে গাটা জ্বলে উঠলো লিপির।
” লজ্জা শরম নেই তোমার?ফুফু শ্বাশুড়ির মুখে মুখে তর্ক করো।”
” যদি ভুল হয়ে থাকে মাফ করবেন।”
” মাফ করার প্রশ্নই আসে না।তোমার মতো…”
” খবরদার লিপি আমার ছেলের বউকে নিয়ে তোমার কোন মতামত শুনতে চাই না।তাকে তুমি গ্রহণ করার কেউ না যে বিয়ে করেছে তার ভালো লাগলেই চলবে।”
মাহমুদার কড়া জবাবে থমকে গেলেন লিপি।একটা বাইরের মেয়ের জন্য এত দরদ।
.
” আসবো বাবা?”
অপরিচিত কণ্ঠে চমকে গেলেন আবিদ শাহরিয়ার।ঈশাকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা সন্দিহান হলেন।আগাগোড়া একবার পরখ করে ঈশাকে আসতে ঈশারা করেন।হাতে জুসের গ্লাসটা টি-টেবিলে রেখে এক কোনে দাঁড়িয়ে রয় ঈশা।
” তোমাকে আমার রুমে পাঠিয়েছে কে মাহমুদা?”
” জ্বি।”
” এসেছো যখন ওখানে বসো।”
ঈশা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো চুপচাপ বসলো একটি চেয়ারে।বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে।
“এঙ্গেইজমেন্টের পরেও তোমাদের বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছি তবে আমি সফল হইনি।এই নিয়ে আমার আফসোস নেই।আফসোসটা হচ্ছে আমার নিজের কাছে নিজের।যে মানুষটা নিজের কথার খেলাপ করে না আজ সেই মানুষটা হেরে যাচ্ছে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারছে না।”
“এমন কোন কথায় আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় যে কথায় অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতায় বাধাগ্রস্ত হয়।আমার ভুল হয়ে থাকলে মাফ করবেন আমায়।”
আবিদ শাহরিয়ার চোখের চশমাটা ঠেলে দিলেন।ভ্রু যুগল কুচকে তাকালেন ঈশার দিকে।
” কথাটা ভালো বলেছো তবে ঈশানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা নিশ্চয়ই জানো?”
” আপনি নিজেও জানেন আপনার ছেলে কখনো এমনটা কারতে পারে না।সে কিন্তু প্রমাণ করেছিল তার দোষ নেই সে সম্পূর্ণ নির্দোষ তবুও আপনি নিজের জেদে অটল রইলেন এর কারণ নিশ্চয়ই একটাই সেটা হলো লিজাকে এই বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করা।আপনি মেয়েটাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন কিন্তু তাই বলে তার সাত খু ন মাফ করা উচিত নয়।আপনি কি সত্যটা উদঘাটন করেছিলেন?”
” প্রয়োজন বোধ করিনি আমি জানি লিজা এমনটা কখনোই করেনি।ঈশান যেসব প্রমাণ দিয়েছে আমি বিশ্বাস করেও করলাম না।একটা মেয়ে কখনো তার সর্বস্ব বিলিয়ে দেবে না তাই না?তবে একটা ছেলে ঝোঁকের মাথায় ভুল করতে পারে।”
” সবাইকে এক পাল্লায় মেপে কী সত্যটা প্রমান হবে?ঈশান আমার রক্তের কেউ না তবুও তাকে বিশ্বাস করি।”
” তোমার কি ধারণা এই বাড়িতে তোমার স্থায়িত্ব কতদিন?”
” শেষ নিশ্বাস অবধি।”
” এতটা আত্মবিশ্বাস।”
তাচ্ছিল্য হাসলেন তিনি।ঈশা মাথা ঝুঁকলো।আবিদের সাথে এতটা কাট কাট জবাবে কথা বলা কি ঠিক হচ্ছে?হয়তো না তবে ভুল কিছু তো বলছে না সে।
” আপনাদের ষড়যন্ত্রে আমি লিপ্ত হয়েছি।ঈশানকে অবিশ্বাস করে বাড়ি ছেড়েছি।ঘাপটি মেরে ছিলাম এক বদ্ধ রুমে লাভ কী হলো?আমার নিস্তার হয়েছে?ঠিকি তো আপনার ছেলে খুঁজে বের করল।”
“এত বিশ্বাস রেখে লাভ নেই।পুরুষ মানুষের মন বলা তো যায় না।”
” বিয়ের এত বছরেও আপনি পালটেছেন?মা বলেন ঈশান আপনার মতো হয়েছে।”
আনমনে হেসে ফেললেন আবিদ।অতীতে ফিরলেন আরো একবার।মাহমুদাকে বিয়ে করতে কম কসরত করতে হয়নি তাকে।জেদি,অবাধ্য আবিদ নুইয়ে গেলেন মাহমুদার নিকট।
৯৯.
অফিসে গিয়ে ঈশান আদৌ কাজ করছে কি না সন্দেহ হচ্ছে ঈশার।দশ মিনিট বাদে ফোন করে জানতে চায় কোথায় আছে সে।বিয়ের প্রথম প্রথম এত রঙ সবাই দেখায়।হেঁয়ালির কারণে যখন ব্যবসায় লোকশান হবে তখন ঠিকি ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালাবে।
দুপুরে ঈশান অফিসে খেলেও আজ যে সে বাড়িতে আসবে তা খুব ভালো ভাবে জানে ঈশা।পুরো রুমটায় পাইচারি করে বারান্দায় যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো সে।তখনি কানে এলো লিজার গলা।
” আসবো?”
” হ..হ্যাঁ আপু আসুন।”
” একা কি করছিলে?”
” কিছু না।কি আর করবো।”
” এই বাড়িতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।আগে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে বাড়ি থেকে বের হতাম সারা রাত-দিন চিল আর চিল কেউ কিচ্ছু বুঝতো না।”
” তাই নাকি ক্লাবে যেতেন?”
“হুম। সারা রাত পার্টি দিনে ঘুম।”
“বন্ধুদের সাথে যেতেন নাকি বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যেতেন।”
” উভয়।আমার বন্ধুরা আমার স্বভাবের।যে ছেলেটাকে ভালো লাগে সর্বোচ্চ দুইমাস আর যার টাকা দেখে মন গলে তাকে সর্বোচ্চ দশ বারোদিন রেখে ছেড়ে দি।এর মাঝে লিভ ইন তো আছেই।”
ঈশা ঢোক গিললো।এতটুকুতে ঈশা বেশ ভালো ভাবেই বুঝেছে এই লিজা মেয়েটা মোটেও বুদ্ধিমান না সে সাধাসিধে নিজের জীবন নিয়ে তার কোন লজ্জা নেই,অপরাধবোধ নেই।যদি লজ্জিত হতো চালাক মেয়ে হতো কোনদিন ঈশার কাছে এসব সেয়ার করতো না।সত্যি কি লিজা ঈশানকে পেতে চায়?যদি ঈশানকে পাওয়া তার বাসনায় থাকতো তবে মেয়েটা ঈশাকে সহ্য করতেছেই বা কি করে!ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে লিজা বলে,
” আচ্ছা একটা কথা বলতো এই পর্যন্ত কয়টা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল তোমার?লিভ ইন করেছো?ঈশান তোমার জীবনে কত তম?”
” প্রথম এবং শেষ।”
ঈশা প্রত্যুত্তর করার আগেই ঈশান লিজার প্রশ্নের জবাব দিলো।তৎক্ষনাৎ ঈশা চোখ বুঝলো এই রে কাজ সেরেছে।ঈশান যে এই সময় আসবে তার ধারণায় ছিল তবে এত তাড়াতাড়ি যে আসবে ভাবতে পারেনি।অপরদিকে লিজা ঈশানের চোখে চোখ রাখলো।
” তুই কি ভেবেছিলি ঈশা তোর মত নোংরা?কাকে কি প্রশ্ন করছিস বোকা মেয়ে, ঈশা তো আমাকেই সামলাতে পারে না দশ পুরুষের সাথে আর করবে প্রেম?”
ঈশা চোখ বড় করে তাকালো ঈশানের দিকে।গলায় বেধে থাকা টাই খুলে ঈশার পাশে দাঁড়ালো ঈশান।
” এই রুমে আর আসবি না।তোকে দেখলে আমার সহ্য হয় না বের হ।”
” ঈশান তুমি আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করো না প্লিজ।”
” বাজে ব্যবহার?আমার জীবনটা নরক করে দিয়েছিস তোকে মেরে চামড়া তুলে দি নাই এটাই তোর ভাগ্য নিজের ধৈর্য্যের তারিফ করছি।”
” আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছি।যা হয়েছে প্লিজ ছোট বেলার ভুল ভেবে নাও।”
” স্বভাব চরিত্র কিচ্ছু পালটায়নি তোর।এখনো সেই একি আছে।আমি জানি লিজা এবার বাবার হাতে সব প্রমান দিতে পারি।”
” মামা আমায় অন্ধ বিশ্বাস করে।তুমি সব প্রমান দিলে উনি ভেঙে পড়বেন।মানসিক ভাবে শেষ হয়ে যাবেন নিজের বাবার ক্ষতি তুমি করবে না আমি জানি।”
” এখান থেকে যা আর কোনদিন আসবি না এই রুমে।আমার রুমে যার তার আসার অনুমতি নেই।”
” বউ নি একটু বেশি গর্ব তাই না মাটিতে তো পাও পড়ছে না দেখছি।”
” পা আমার মাটিতে থাকবে তবে বউয়ের পা থাকবে না কেন জানিস?”
ঈশান ঝটপট কোলে তুলে নিলো ঈশাকে।আচমকা টানে ঈশা ঈশানের শার্টের কলার খামছে ধরলো।
” দেখেছিস বউয়ের পা মাটিতে নেই।নতুন বিয়ে করেছি বউ নিয়ে একটু রোমান্স করবো তোদের জ্বালায় শান্তি নেই আসলে আসতি আরো সাত আট মাস পর এখন আসলি কেন?যা এক্ষুনি বের হ।আমার ভেতরের সত্তা জানান দিচ্ছে বউয়ের আদর না পেলে এখন তিনি রুষ্ট হবেন।”
এদের এত আদর সোহাগ দেখে লিজা কিঞ্চিৎ হাসে।তার মন বলছে ঈশানের সংসার ভাঙার জন্য লিপির একটা চাল যথেষ্ট।
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৯খ]
___________________
” আসার সময় আমাকে ফোন করে দিও আমি নিয়ে যাব তোমায়।”
” আমি একা যেতে পারবো আপনি আপনার কাজে মন দিন।”
” তা বললে তো হয় না।আমি যখন বলেছি নিয়ে যাব তখন যাবই।”
ঈশা কথা বাড়ালো না।ঈশানের ঝাকড়া চুলে এলোমেলো হাত বুলিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো অনেকদিন পর ভার্সিটি এসেছে সে।সবকিছু কেমন কেমন লাগছে।অনু অদূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।আচ্ছা মেয়েটার কী মন খারাপ?চঞ্চল অনুর মাঝে কোন ভাবাবেগে নেই অদ্ভুত!
” নাও এই আঙুল দুটো।”
ঈশান অতি সত্বর দু’আঙুল ছুঁয়ে দিল ঈশার ঠোঁটে।মেয়েটা ভ্রু কুচকে তাকাতে ঈশান লাজুক হাসে।
” কিসি দিয়ে দিলাম।”
” মানে?”
” ওসব বুঝবে না এবার যাও।”
ঈশা হাসলো ঈশানকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো অনুর কাছে।মেয়েটার শুকিয়ে যাওয়া মলিন মুখ দেখে শুধালো সে,
” তোর বিয়ে ঠিক হচ্ছে বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না।তুই তো এখনি চিন্তায় ম রে যাবি দেখছি।”
” আমি চিন্তা করবো না তো কে করবে?রাসেল এই সম্পর্কে সিরিয়াস না আমি জীবনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।”
” রাসেল ভাইয়া সিরিয়াস না?তুই এই কথা ধারণায় আনলি কেন?”
” সে ভাবছে আমি মজা করছি কিন্তু এবার আব্বু বিয়ে নিয়ে পড়েছে আব্বুর সম্মতি মানে বুঝতে পারছিস?রাসেলকে যতবার বলেছি তার সেই এককথা বিয়ে আটকাও নিজে চেষ্টা করো আমি এখন বাড়িতে কিছু বলত পারবো না কয়েকদিন আগে ঈশানের বিয়ে গেলো তা নিয়ে ঝামেলা এখনো চলমান।আমি কি করি বলতো? ”
” এত চিন্তা করিস না আমি আছি তো চল ক্লাসে যাই।”
ঈশা ক্লাসে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো তখনি গেট দিয়ে দৌড়ে প্রবেশ করলো দিহান।পেছন থেকে ঈশার চুল টেনে তাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় সে।
” এই চুন্নি বিয়ে করে ভুলেই গেছিস আমি তো ভেবে নিয়েছিলা আর আসবি না।”
” কেন আসবো না?তোর কি অবস্থা?মীরা কেমন আছে?”
” মীরা ওর আন্টির বাড়ি গেছে আমি ভালো আছি।আজ চল ক্লাস না করে একটু ঘুরে আসি অনেকদিন হলো তিনজনের আড্ডা দেওয়া হচ্ছে না।”
” না না আজ যাওয়া যাবে না।ঈশান বলেছিল তার অফিস যেতে আমি যাইনি বলেছি আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে এখন যদি সে জানে আমি বাইরে গেছি নির্ঘাত ঝামেলা পাকিয়ে দেবে।সবচেয়ে বড় কথা আমায় নিতে আসবে।”
” ছুটির আগে চলে আসবি চল তো এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।অনুকে দেখছিস না মেয়েটার মুখ শুকিয়ে এইটুকুনি হয়ে গেছে এখন আমাদের চিল করা প্রয়োজন।তুই যদি এখন বারণ করিস তবে ভেবেই নিব বিয়ের পর সত্যি সবাই পর হয়ে যায়।”
ঈশা দ্বিতীয় বার বারণ করার সুযোগ পেল না মনে ভয় নিয়ে চললো সে।
১০০.
মুজাহিদ হাসান অফিসে বেরিয়ে গেছেন।এদিকে বাড়িতে ঈশাও নেই সম্পূর্ণ বাড়িটা ফাঁকা।এই মুহূর্তে হাতে কোন কাজও নেই তাই তো টিভি নিয়ে বসলেন সুলতানা।কিয়ৎক্ষণ বাদে বেজে উঠলো ডোর বেল।তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে দেখতে পেলেন একজন অর্ধ বয়স্ক মহিলাকে যার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।
” আপনারা?”
” আমি ঈশানের ফুফু আর এ হলো আমার মেয়ে লিজা ঈশানের কাজিন।”
সুলতানা দ্রুত দরজা থেকে সরে গেলেন হাসি মুখে বললেন তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে।লিজা মনমরা হয়ে প্রবেশ করলো লিপির পিছু পিছু।মায়ের এসব কূটকর্ম তার মোটেও ভালোলাগে না একবার যদি ঈশানের সাথে সত্যি সত্যি তার বিয়ে হয়ে যায় তবে কী হবে?
” আপনারা দাঁড়িয়ে কেন বসুন।”
সুলতানা দ্রুত গেলেন রান্না ঘরে টুকটাক নাস্তা নিয়ে ফিরলেন বসার ঘরে।
” এত আয়োজন করবেন না।দয়া করে আমরা যে এসেছি এই কথা করে কাউকে বলবেন না।”
লিপির কথায় ভ্রু যুগল কুচকে যায় সুলতানার।তিনি জহুরি চোখে একবার পরখ করলেন লিপি এবং লিজাকে।
” বলবো না কেন?”
” আমরা এসেছি আপনাকে সতর্ক করতে আপনার যেমন একটা মাত্র মেয়ে আমারো একটাই মেয়ে।মেয়েটাকে ছোট রেখে আমার স্বামী মারা যান তার পর থেকে আমার জীবন যুদ্ধ শুরু।”
আবেগে আপ্লুত হলেন সুলতানা।লিজার দিকে তাকালেন সহানুভূতি দৃষ্টিতে।তবে মস্তিষ্কে হানা দিলো একটি প্রশ্ন,’ঈশানের ফুফু কি সতর্ক করতে এসেছেন?’চিন্তা না বাড়িয়ে লিপিকে ঝটপট প্রশ্ন করলেন তিনি।
” সতর্ক করার ব্যপারটা ঠিক বুঝলাম না।”
” আমাকে আপনি বিশ্বাস করবেন না হয়তো।আজ থেকে কয়েক বছর আগে ঈশান যখন দেশের বাইরে ছিল পরিবার সহ তখন আমরাও তাদের সাথেই ছিলাম।ঈশান আর লিজা একই ক্লাসে পড়ে তাই তাদের বনিবনা খুব ভালো।কিন্তু ঈশান একদিন সুযোগ বুঝে আমার মেয়েকে….”
চোখের পলকে কেঁদে ফেললেন লিপি।তার ন্যাকা কান্না দেখে লিজা আহাম্মক বনে গেল তার মা এত ভালো অভিনয় পারে,বাহ!সুলতানা ঢোক গিললেন ঈশানের বাবা রাজীবকে একই কথা বলেছে কিন্তু এসব তো অস্বীকার করেছে ঈশান আর তাকে ঠিক কোন কথার ভিত্তিতে মুজাহিদ হাসান এবং ঈশা বিশ্বাস করেছে তার জানা নেই।কিন্তু এখন কলিজাটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।নিজ হাতে মেয়ের বলিদান দিয়ে দিলেন না তো?
” যা ছিল তা অতীত এখন কি আর করবেন।”
” আপনিও এই কথা বলছেন ঈশান সুবিধার না দেখবেন একবছর না যেতে আপনার মেয়েকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।ওর ভালো মানুষের লেবাস ধরে থাকা রূপটা তখন আপনারা বুঝতে পারবেন।”
” আমরা আমাদের মেয়েকে সেচ্ছায় ওবাড়ি পাঠায়নি ঈশান বাধ্য করেছে এখন আমার মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো?”
“লিজার সাথে ঈশানের বাবা সেদিনের পর বিয়ে ঠিক করেছিলেন কিন্তু এই ছেলে দেশে এসে সবটা অস্বীকার করলো আমার মেয়ের জীবনটা ধ্বংস করে ছেড়েছে।আপনি আপনার মেয়ের জীবন এভাবে শেষ করে দেবেন না।”
” তবে এবার আমি কী করবো?”
১০১.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল ঈশানের কথা বেমালুম ভুলে বসেছিল ঈশা।তাকে নেওয়ার জন্য ঈশানের আজ আসার কথা থাকলেও সে আসতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়।এতে অবশ্য বেঁচে গেল ঈশা সে আরো কিছুটা সময় বন্ধুদের সাথে থাকতে পারবে বলে খুশি হয়।সবার আড্ডার মাঝে অনুর বাড়ি থেকে তার মা ফোন করেন এবং দ্রুত বাড়ি আসতে বলেন।অনু রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায় দিহান সিদ্ধান্ত নেয় ঈশাকে তার শ্বশুর বাড়িতে ছেড়ে আসবে কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা সে একাই যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।বাধ্য হয়ে দিহান তার রাস্তায় চলে যায়।ঈশা রিক্সা না নিয়ে হাটতে শুরু করে কিয়ৎক্ষণ পর রিক্সা নেবে এখন তার হাটতে মন্দ লাগছে না।
” ঈশা।”
পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠে থমকে গেলো মেয়েটা।পেছনে ঘুরতে অয়নকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” অয়ন ভাই।”
” এই রাস্তায় কি করছিলে?”
” বন্ধুদের সাথে এসেছিলাম ওই রেস্টুরেন্টটাতে।”
” তা তো দেখেছিলাম।আমিও ওখানেই ছিলাম।”
” ওহ।”
” সুখে আছো তাই না?”
” আপনারা বিয়েতে আসলেন না যে?”
” আসার মত কোন মুখ রেখেছো?ঈশানের কাছে তবে বেশ ভালো আছে সুখে আছো।”
অয়নের কথায় প্রত্যুত্তর করার প্রয়োজন বোধ করলো না ঈশা।সে কথা ঘুরিয়ে বলে,
” আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে আমি বরং যাই।”
ঈশা বড় বড় পা ফেলে হাটতে শুরু করে।নিরিবিলি রাস্তায় ঈশাকে একা পেয়ে মনের ভেতরে ক্ষোভটা ক্রমশ বাড়তে থাকে অয়নের।দ্রুত এগিয়ে ঈশার হাত ছুঁয়ে দিলো অয়ন।জোর কসরত করেও তার বন্ধনী থেকে মুক্তি পেল না ঈশা।
” অয়ন ভাই কি হচ্ছে কি ছাড়ুন।”
” আমার বাড়ি চলো।”
” আমি কেন আপনার বাড়ি যাব ছাড়ুন হাত।ঈশান দেখলে আপনার… ”
” ওই পা গ লটার ভয় আমায় দেখাও?পাইনা আমি ওঁকে ভয়।খুব তো বেশি ভালোবাসে তোমায় তাই না?আজকের পর এই ভালোবাসা কোথায় যায় আমিও দেখতে চাই।”
অয়ন কি বোঝাতে চাইছে তা ঈশার বুঝতে বেশি সময় নিলো না।মন বলছে নিজেকে বাঁচানো প্রয়োজন আর তাই তো অয়নের পায়ে আঘাত করে ঈশা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকে।তার পিছু পিছু ছুটতে থাকে অয়ন।মোড় কাটানো রাস্তায় ছুটতে হঠাৎ একটি সিএনজির মুখে পড়ে ঈশা।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়ে ড্রাইভার ব্রেক কষার সাথে সাথে রাস্তায় উলটে পড়ে ঈশা।অয়ন পৈশাচিক হাসি দিয়ে ঈশার কাছে আসতে হঠাৎ সিএনজি থেকে নেমে আসে একটি ছেলে।
” ভাবী আপনি ঠিক আছেন?”
পিচ ঢালা রাস্তায় ঈশার হাত পায়ের বেশকিছুটা অংশ ছিলে গেছে।হৃদয়ের গোচরে রক্তের দেখা মিললে ঢোক গিললো সে ঈশান জানলে কি হবে!
” ওই ছেলেটা আপনাকে তাড়া করছিলো?”
” হ..হ্যা।”
শ্বাস আটকে আসছিলো ঈশার এতক্ষণ যাবৎ দৌড়ানোর ফলে হাঁপিয়ে উঠেছে।তার সাথে সাথে ভয়ে আড়ষ্ট সে, অপরদিকে কেটে যাওয়ার ফলে হাতে পায়ের জ্বালা ক্রমশ বাড়ছে।
অয়ন হৃদয়কে দেখে এক ছুটে পালিয়ে যায়।যদিও সে চিনতে পারেনি হৃদয়কে তবে ঈশাকে ভাবি ডাকতে বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা ঈশানের লোক।হৃদয় অয়নকে কিছুটা তাড়া করে থেমে যায় বিশ্রি কয়েকটা গালি দিয়ে বলে,” স্যারকে সেদিন বলেছি শেষ করে দিতে শুনলই না আমার কথা।”
ঈশার চোখের কোনে জল জমেছে।হৃদয় ঈশাকে গাড়িতে উঠতে অনুরোধ করে কিন্তু ঈশা চেনে না,জানে না অপরিচিত একটি ছেলের গাড়িতে কখনোই সে উঠবে না।বাধ্য হয়ে হৃদয় ফোন করলো ঈশানকে।ঈশানের নির্দেশে হৃদয়ের সঙ্গে সিএনজি করে হসপিটাল অবধি এলো ঈশা।
.
ঈশার হাতে পায়ের কিছুটা অংশে ব্যান্ডেজ করা হসপিটাল থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরেছে তারা।ঈশান গোসল সেরে বসলো ঈশার পাশে তার চেহারা দেখে ঈশা বুঝে নিয়েছে ছেলেটা বেজায় রেগে আছে।কিন্তু ঈশার মনের কোণে ভয় জমেছে যদি ঈশান জানতে চায় সে ওই রাস্তায় কি করছে বিকাল বেলায় তবে কী জবাব দেবে?ঈশান তো জানে সে ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরেছে।অনাবৃত দেহে টি-শার্ট জড়ালো ঈশান।ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে তাকালো ঈশার মুখোমুখি।ঈশার ভয়ার্ত চাহনিতে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো সে।ঈশার ঠোঁটের কোনে চুমু খেয়ে সন্দিহান স্বরে বলে,
” ভয় পাচ্ছো কেন জান?আমি ছাড়া এখন তো কেউ নেই।”
” ভ..ভয় পাব কেন।আমি ভয় পাচ্ছি না।”
“তাই নাকি?তুমি বুঝতে পারছো আমি ভীষণ রেগে আছি?”
” হ্যাঁ বুঝতে পারছি।”
” কেন রেগে আছি বলতো।”
” অয়ন ভাইয়ের কাজে।”
” আমি সেই কারণে এতটা রেগে নেই।ব্যপারটা অন্য কিছু।”
ঈশান পুনরায় ঈশার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।ঈশানের এমন রহস্যপূর্ণ কথার ভাজে ভয়ে জমে যাচ্ছে ঈশা।ঈশানের অবাধ্য ছোঁয়া ঠেকলো ঈশার গ্রীবায় হঠাৎ ব্যথার চিলিক দিতে ঈশানকে দু’হাতের সাহায্যে সরিয়ে দিলো সে তাতে অবশ্য ঈশান মিহি হাসে।ঈশার খোলা চুলে হাত বুলিয়ে হঠাৎ জোরে চেপে ধরে ঈশান ছেলেটার কান্ডে ঘাবড়ে যায় ঈশা। কিছু বুঝে উঠার আগে তার থেকে দূরত্ব নিয়ে বসে পড়লো ঈশান।
” আমার রাগ, আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না ঈশা।তুমি আমায় মিথ্যা বলেছো অন্ধের মতো বিশ্বাস করি তোমায়।আমি দুপুর পর্যন্ত ভেবে নিয়েছি তুমি ক্লাসে ছিলে বলেছিলাম গাড়ি পাঠিয়ে দি ড্রাইভার বাসায় পৌঁছে দেবে তোমায়।তুমি বললে যেতে পারবে, ছুটির পর একটু দিহান অনুর সাথে সময় কাটাবে আমি বারণ করিনি ভেবেছিলাম ঠিকঠাক ভাবে বাসায় চলে যাবে।তিনটায় তোমায় ফোন দিলাম তুমি বললে বাসায় ফিরেছো,আম্মুকে ফোন দিলাম আম্মুও মিথ্যা বললো কেন বললো আমি তো জানি তুমি শিখিয়ে দিয়েছো।আর হৃদয় যখন ফোন করলো তুমি রাস্তায় তখন আমার কেমন লেগেছে জানো?এখন খোঁজ নিয়ে জানলাম মহারানী আজ ক্লাসেই জাননি।আমার সাথে এত মিথ্যা নাটক করার কী দরকার ছিল ঈশা?আমি বিশ্বাস করি তোমায় আমার বিশ্বাসের এই দাম দিলে?”
ঈশা থমকে গেলো পিটপিট চোখে তাকালো ঈশানের দিকে।চোখে চোখ রাখতে অপরাধবোধে নিংড়ে যাচ্ছে সে।তার চাহনি দেখে ঈশানের ভেতরের জ্বালা বাড়লো।হাত টেনে দাঁড় করালো মেঝেতে।ঈশার হাতে পায়ের ব্যান্ডেজে চোখ বুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” কতখানি আঘাত লাগলো আজ যদি হৃদয় না থাকতো তবে কী হতো?এই উত্তর দাও কী হতো?”
” ঈশান সরি আমি আর…”
” চুপ।একদম চুপ সরি দিয়ে কোন সমাধান হয়েছে আর না হবে।অয়ন ছুঁয়েছে তোমায় তাই না?বলো কোথায় ছুঁয়েছে,বলো কোথায় কোথায়?কথা বলছো না কেন?”
ঈশান বেসামাল হয়ে উঠলো ঈশার হাতে পায়ে জহুরি চোখে দেখতে নিলে ঈশা ঈশানের হাত চেপে ধরে।
” আমি তোমার কথায় নিজেকে স্থির রেখেছি কিন্তু অয়ন যা করেছে তার মূল্য তাকেই চুকাতে হবে।”
“ক.. কি করবেন আপনি?”
” এই ব্যপারে তোমার সাথে কোন আলোচনা করতে আমি ইন্টারেস্ট নই।আগে বলো অয়ন তোমায় কি বলেছে?”
” আমি ভুলে গেছি।”
” কি আরেকবার বলো।”
” আ…আমি ভুলে…”
ঈশান ঈশাকে ছেড়ে দাঁড়ালো।মেঝেতে রাখা আর্টিফিশিয়াল গাছের বড় টবটা হাতে তুলে ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।ঈশা ভয়ে ছিটকে দাঁড়ালো দেয়ালের কাছে।ঈশানের রাগি চাহনিতে এতদিনের আদুরে ঈশানকে খুঁজে পেলনা ঈশা।ছেলেটার রাগটা প্রবল ভাবে বেড়েছে।ঈশাকে গলা তুলে বলে,
” এই তুমি দূরে কেন?কাছে আসো আমার রাগটা বেড়েছে।তোমায় না পেলে আরো বাড়বে।কাছে আসো।”
” না না।”
” আসবে না?”
” না।”
ঈশান একে একে হাতের কাছে যা পেয়েছে ভেঙেছে।এই ছেলেকে এবার অন্তত থামানো দরকার তড়িঘড়ি করে ঈশা এগিয়ে আসতে ঈশান একটি শোপিস ছুড়ে মা রে অসাবধানে শোপিসটি পড়ে যায় ঈশার পায়ে।তৎক্ষণাৎ চামড়া ফেটে বেশ অনেকটা দেবে কেটে যায় ঈশার পা।ঈশার পায়ে রক্ত দেখে ঈশান ঘাবড়ে গেলো ঈশার কাছে যাওয়ার আগে দরজায় করাঘাতের শব্দে ধ্যান ফিরলো।দরজা খুলতে ঈশানকে বকতে বকতে কক্ষে আসেন মাহমুদা।সেই সাথে রাসেল তো আছেই।ঈশা তাজ্জব বনে তাকিয়ে আছে সবার দিকে তার পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে এখন তার কী করা উচিত?কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে।
” ঈশারে তোর পায়ে..”
মাহমুদা থেমে গেলেন ঈশানের দিকে নজর বুলাতে চেচিয়ে বলেন,
“জা নো য়ার তুই এমন করেছিস তাই না?আমি বলেছিলাম ফুলের মতো মেয়েটাকে তুই ভালো রাখবি না।আমি ভুল করেছিলান জেনে শুনে তোর মতো দজ্জালের হাতে এই মেয়ের জীবন বেঁধে দিয়ে।”
সম্পূর্ণ মেঝে কাঁচে ভরতি বিধায় ঈশান বিছানার উপরে উঠে ঈশার কাছে গেলো।একদিনে ঈশার এতগুলো আঘাত ঠিক হজম হচ্ছে না কি করবে কি বলবে তার মাথায় আসছে না।রাসেল জহুরি চোখে ঈশার পা দেখে বলে,
” বাসায় রেখে কাজ নেই পায়ের কাটা অংশ সেলাই করতে হবে।”
” বেশি বউ বউ করেছিস তোর বউ বউ করা দেখছি আমি দাঁড়া।”
মাহমুদা ভীষণ ক্ষেপে গেলেন ঈশান কি করবে ভেবে পেল না। দ্রুত হাতে ঈশাকে কোলে তুলে নেয় যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে তার আগে বাঁধা দিলেন মাহমুদা।
” ঈশার মায়ের অসুখটা বেড়েছে এক্ষুনি ঈশাকে নিয়ে যেতে বলেছে ঈশান।আমি তো সেই কথা বলতেই এলাম তারপরে শুনলাম ভাঙাচুরের শব্দ।”
ঈশা আঁতকে উঠলো ঈশানের কলার টেনে বলে,
” পায়ে কিচ্ছু করতে হবে না আমি হসপিটাল যাব না। আমাকে আমার বাসায় রেখে আসুন ঈশান।”
.
রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি হসপিটাল থেকে ঈশাদের বাড়িতে এসেছে ঈশান।মেয়েটার পায়ে তিনটে সেলাই লেগেছে।ঈশার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে বুকটা ধক করে উঠলো মুজাহিদ হাসানের।আগের মতো ঈশানের ঠোঁটের কোণে হাসি নেই কেমন মলিন চেহারা।ঈশার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বড্ড দেরি হয়ে যাচ্ছিলো তাই সময় মতো সুলতানাকে ওষুধ খাইয়ে দিলেন মুজাহিদ হাসান।সুলতানা গভীর ঘুমে মগ্ন ঈশা তার মায়ের কাছে যাওয়ার আগে ঈশাকে পরখ করলো তার বাবা।
” তোমার কি হয়েছে ঈশা?হাতে পায়ে এত আঘাত লাগলো কী করে?”
” আমি একটা ভু….”
ঈশান সত্যিটা প্রকাশ করতে চেয়েছিলো কিন্তু ঈশানের কথা শেষ হওয়ার আগে ঈশা দ্রুত বলে,
” বাবা এক্সিডেন্ট করেছিলাম।ভার্সিটি থেকে আসার পথে রিক্সা থেকে উল্টে পড়ে যাই।”
ঈশান অবাক চোখে তাকালো ঈশার দিকে।আর সেই চাহনি দেখে সন্দেহের বাতি জ্বললো মুজাহিদ হাসানের মনে।নিশ্চিয়ই মেয়েটা কিছু আড়াল করছে।ঈশানের প্রতি বড্ড রাগ রাগলো মুজাহিদ হাসানের তিনি ঈশানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলেন,
” সত্য মিথ্যা আমি জানি না।আমার মেয়ে আদৌ এক্সিডেন্ট করেছে কি না আমার সন্দেহ হচ্ছে।তবে ঈশান তোমায় বলছি আমার মেয়ের উপর কোন কারণে বিরক্ত হলে,রাগ হলে,তার প্রতি ভালোবাসা উবে গেলে আমার ঘরের মেয়েকে আমার ঘরে ফিরিয়ে দিও।তবুও তাকে কখনো আঘাত দেবে না,একটা কটুবাক্য শোনাবে না।আমরা যেকোন সময় যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে প্রস্তুত আছি।”
বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠলো ঈশানের।মুজাহিদ হাসানের প্রতিটা শব্দে ছিলো পরিপূর্ণ রাগ জেদ এবং দৃঢ়তা।তিনি কি ইনিয়েবিনিয়ে ডিভোর্সের কথা তুলেছেন?
#চলবে__
#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৯গ]
____________________
বেশ কিছুক্ষণ সুলতানার অপেক্ষায় ঈশা বসেছিল কিন্তু রাত বাড়লো সুলতানার ঘুম ভাঙলো না।ঈশান এই সময় আর বাড়ি ফিরবে না তাই আজ এ বাড়ি থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।মুজাহিদ হাসানের মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে একে তো স্ত্রীর অসুস্থতা তার উপর মেয়েটার এই বাজে হাল কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না তিনি।ঈশার চোখে মুখে আজ ভয়ের ছাপ মেয়েটা এত আতঙ্কগ্রস্ত কেন?ঈশান কি তাকে মে রে ছে?আসার সময় নিশ্চয়ই শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে কাউকে যেন কিচ্ছুটি না বলে।তবে সুলতানার ভাষ্যমতে লিপির কথাই সত্যি এক বছর না হতে মেয়েটাকে অত্যাচার করে বের করে দেবে।বুকের ভেতরটা চিনচিন ব্যথার অনুভব করলেন মুজাহিদ হাসান।ঈশানকে তিনি বিশ্বাস করেন ছেলেটা যে ঈশাকে তার সর্বোচ্চটা দিয়ে আগলে রাখবে সেটাও মানেন কিন্তু সত্যি মিথ্যা কথার আড়ালে সবটা ঝাপসা লাগছে দু’চোখে।
” বাবা বসার ঘরে আসো একটু কথা আছে।”
ঈশা কিছু বলবে?নিশ্চয়ই গোপন কথা।মুজাহিদ হাসান আশার আলো দেখলেন মেয়েটার বাহু টেনে হাঁটতে সাহায্য করে নিয়ে গেলেন বসার ঘরে।
” বাবা তুমি কি ঈশানকে ভুল বুঝলে?”
” আমি সেই কথা একবারেও বলেছি?”
” না তোমার সেই কথাগুলো কেমন যেন ছিল।যাই হোক আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন বাবা অয়ন ভাই যা তা শুরু করেছে।”
” কেন কি করেছে সে?”
ঈশা পর পর সবটা খুলে বলল।রাগে মুজাহিদ হাসানের ঘাম ঝরছে দাঁতে দাঁত চেপে মেয়ের সামনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন না হলে এতক্ষণে অকথ্যা ভাষায় কয়েকটা গালি দিলে শান্তি পেতেন।
” এখানে দোষ আমার আমি ঈশানকে মিথ্যা বলেছি কিন্তু অয়ন ভাই যে আজ এমনটা করবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।শ্রেয়া আপুর বিয়ের সময় উনি একই কাজ করতেন তোমাকে বলবো বলেও বলিনি।”
” কেন বলনি?এর সমাধান তখনি হতো।যখন যা হবে তার সমাধান ঠিক তখনি করতে হবে এখন দেখলে তো মাথা চড়া দিয়ে উঠলো অসভ্য ছেলেটা।”
” সরি বাবা আমি বুঝতে পারিনি।”
” এখন রুমে যাও ঈশান একা।তোমার মা আজ আর উঠবেন না মনে হয়।”
ঈশা পা খুঁড়িয়ে চলে গেলো নিজের কক্ষে।ঈশান কপালে হাত ঠেকিয়ে শুয়েছিল ঈশার পাশে বালিশ দেওয়া, পানির জগ গ্লাস ঠিকঠাক ভাবে রাখা এসব কে করেছে?ঈশান!
” তুমি হাঁটছো কেন?ডাক দিলেই তো নিয়ে আসতাম।”
ঈশান উঠে এলো ঝটপট হাতে দরজা রুদ্ধ করে ঈশাকে পাঁজাকোলে নিলো।বিছানায় বসিয়ে সে বসলো তার মুখোমুখি।
” চলুন রাতের খাবারটা খেতে হবে।”
” না আমার আজ খাবার গলা দিয়ে নামবে না।প্লিজ আমায় আর জোরাজোরি করো না আমার ভালো লাগছে না।”
” ঠিক আছে শুয়ে পড়ুন লাইটটা অফ করে দিন।”
.
মেয়েকে কাছে পেয়ে সুলতানার অস্থিরতা কমেছে।ঈশাকে চোখের আড়াল করতে বড্ড দ্বিধা লাগে তার।মেয়েটা চোখের আড়াল হলেই কেঁদে কেটে বুক ভাসান।হঠাৎ মায়ের এমন আচরনে বড্ড চিন্তায় ফেলছে ঈশাকে।সকালের নাস্তা আজ হোটেল থেকে আনা হয়েছে।সুলতানার অসুস্থতার কথা শুনে অনু আর অপেক্ষা করলো না সকাল সকাল এই বাড়িতে হাজির হলো মেয়েটা।সকালে নাস্তার ব্যবস্থায় হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে সে।
ঈশান আজ আর অফিস যাবে না।নাস্তা শেষে ল্যাপটপটা নিয়ে বসার ঘরে বসেছে সে।মুজাহিদ হাসান অফিসে চলে গেছেন।হঠাৎ তার চোখের সামনে আবির্ভাব হলো অনুর।হাত ভরতি ফলের ট্রেই।
” আঙ্কেল বলে গেছেন নাস্তা শেষে আপনাকে ফল কেটে দিতে।”
” রেখে যাও।”
“তবে দুলাভাই এখানে একটা স্পেশাল ফল আছে।এই যে কলাটা দেখুন এই কলাটা কিন্তু জোড়া কলা।”
” হুম তা তো দেখতেই পারছি।”
” যদি সাহস থাকে এটা আপনাকে খেতে হবে।সাহসের কথা কেন তুলেছি এটা সিক্রেট।”
” তুমি এই কলায় কি মিশিয়ে দিয়েছো আগে সেটা বলো।”
” কিছুই করিনি বাসার অবস্থা করুন আর আমি আপনার সাথে মজা করবো এতটাও পাগ ল আমি নই।যাই হোক খেয়ে দেখুন।”
ঈশান কলাটা ঘুরিয়ে ফিরে দেখলো তারপর ধীরে ধীরে পুরো কলাটা খেয়ে শেষ করে তাকালো অনুর দিকে।
” কলা খেতে কলার মতো লেগেছে এখানে আবার সিক্রেট কি ছিল?”
” যারা জোড়া কলা খায় তাদের জোড়া বাচ্চা হয়।”
” মিথ্যা কথা ভাগো এখান থেকে।”
অনু ঠোঁট বাকালো হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় ঈশাদের বাড়িতে কাজ করা সেই খালাটি।ঈশানের দিকে তাকিয়ে জিভে কামড় বসিয়ে বলে,
” ও জামাই এইডা সইত্য জুড়া কলা খাইলে জুড়া বাইচ্চা হয়।অনু আফা সইত্য কথা কইছে।”
ঈশান সন্দিহান চোখে দুজনকে পরখ করলো।ঈশান দ্রুত মেসেজ করলো রাসেলকে এই ব্যপারে জানতে চাইলে রাসেল নিজেও একই কথা বলে।ঈশান চুপচাপ ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে উঠে এলো ঈশার কক্ষে।ঈশা তখন শুয়ে ছিল হঠাৎ শরীরে ভার অনুভব হতে চমকে তাকালো।ঈশান তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে।
” সরি ঈশা একটা ভুল করে ফেলেছি।”
” কি করেছেন?উঠুন আমি এবার ম রেই যাব।”
” আমি জোড়া কলা খেয়ে ফেলেছি আমাদের নাকি এবার জোড়া বাচ্চা হবে।তুমি এইটুকুনি মানুষ দুইটা বাচ্চা সামলাতে পারবে?”
ঈশার ভীষণ হাসি পেল এই কাজ যে অনু করেছে সে যানে।তাই ভনিতা করে বলে,
” খেলেন কেন?এখন কি হবে?”
” আমি কি জানতাম জোড়া খেলে জোড়া বাচ্চা হয় আজ প্রথম শুনেছি।”
” জেনে শুনে খাবেন তো।অনু মানেই সাংঘাতিক কিছু এই কথা বার বার ভুলে যান কেন?”
ঈশান ঈশার উদরে হাত রাখলো।ঈশা তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালালো কিন্তু ঈশান এক চুলো নড়লো না।
“সরি আমি ভুলে খেয়ে ফেলেছি তুমি একটু সামলে নিও।”
১০২.
অনুকে আজ দেখতে আসবে আর সেই নিয়ে চলছে সকলের মহা ব্যস্ততা।দোলন বলেছে হয়তো আজ কাবিনটাও হয়ে যাবে।যেহেতু আগের পূর্ব পরিচিত শুধু আজ সকলে এক হবেন একটু আলোচনায় বসবেন।অনু কি করবে ভেবে পেল না রাসেল বললো বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে এদিকে দোলন তাকে চোখে চোখে রাখছে এবার কি হবে?ভয়ে গলাটা শুকিয়ে গেল মেয়েটার।ঈশাকে জানানো হলো ঈশা বললো সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দেওয়া ভালো হবে আর এই ছাড়া কোন উপায় নেই।অনু ঠিক তাই করলো সে মুখোমুখি হলো বেলায়েতের।
” বাবা শুনছো একটা কথা ছিল।”
” বল মা হাতে অনেক কাজ।”
” বাবা আমি…”
থেমে গেল অনুর গলার স্বর।মেয়ের ভাব ভঙ্গিমা বড্ড সন্দেহ লাগলো বেলায়েতের কাছে তাই তাকে তাড়া দিয়ে বলেন,
” কি বলবে বলো।”
” বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।আমি বিয়ে করে ফেলেছি।”
অনু ভয়ের তাড়নায় মিথ্যা বলে বসলো সে তো বিয়ে করেনি কিন্তু এই ছাড়া আর রাস্তা নেই।
” কি বললে তুমি আরেকবার বলো।”
” আমি একজনকে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করেছি বাবা।ঈশানের ভাই রাসেল তুমি চেনো উনাকে।”
দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেয়ের গালে চড় বসালেন বেলায়েত।ঝোক সামলাতে না পেরে মেঝেতে ছিটকে পড়লো অনু।দোলন সহ অনুর চাচা চাচীরা এগিয়ে এলো তার কাছে।
” তোমার মেয়ে কি বলেছে শুনেছো?সে নাকি বিয়ে করে ফেলেছে আমার একমাত্র মেয়ে তাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন জল্পনা কল্পনা।”
দোলন অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো অনুর দিকে।অনুর গাল চেপে বলেন,
” তোর বাবা সত্যি বলেছে?কথা বল এটা সত্য?”
অনু মাথা দুলালো।দোলনের রাগটা আকাশচুম্বী হলো অনুর চুল টেনে দাঁড় করিয়ে বেদম প্রহার করতে থাকেন তার চাচা চাচী ধরতে গিয়েও কোন লাভ হলো না।দোলন রাগের তাড়নায় কাচের গ্লাসটা ছুড়ে দিলেন অনুর মাথায়।
” তোর কত বড় কলিজা তুই বিয়ে করেছিস তুই আমাদের মেয়ে না।মেয়ে হলে এমনটা করতে তোর বুক কাঁপতো।”
বেলায়েতে এগিয়ে গেলেন মেয়ের কাছে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
” যা করার করেছো তুমি ওই ছেলেকে ছেড়ে দেবে।”
” কেন বাবা ওদের মাঝে কি এমন সমস্যা আছে যে আমাকে ছাড়তে বলছো?আমি তো কোন ক্রুটি খুঁজে পাইনি।”
” রাসেল ছেলেটা ওনাদের নিজেদের সন্তান নয়।তাকে দত্তকে আনা হয়েছে।”
” তো?ঈশান ভাই আর রাসেল দুজনকে এক চোখে দেখা হয়।”
” তুমি ওসব বুঝবে না আর বুঝলে এত বড় অন্যায় করতে না।তুমি ওই ছেলেকে ডিভোর্স দেবে।”
” কোনদিন না।শুধু শুধু নিজের অহেতুক জেদ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে কেন দিচ্ছো?”
বেলায়েত ভীষণ রেগে গেলেন।অনুর চুল টেনে বের করে দিলেন ঘরের বাইরে।
“বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। আজ থেকে তুই আমাদের মেয়ে না।তুই আমাদের কেউ না।”
নিজের জেদের কাছে আজ ব্যথাটাও হেরে গেলো অনুর।এর আগেও সে অনেকবার ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে সে অন্য কাউকে পছন্দ করে কিন্তু দোলন সবটা এড়িয়ে গেছেন ঈশানের পরিবারটাকে তাদের পছন্দ নয় এর মূল কারণ নিশ্চয়ই ঈশান।সে তো আর ঈশানকে বিয়ে করবেন না।নাকি মূল সমস্যা রাসেল তাদের সন্তান নয় বলে?এই মুহূর্তে ঈশাদের বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই অনুর কাছে তাই সে সেখানেই গেলো।মেয়েটার অবস্থা দেখে হতবিহ্বল ঈশান।ঈশা তো কেঁদেই ফেললো গালে তিনটে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সুলতানা চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন অনুর দিকে যেখানে তিনি নিজের মেয়ে নিয়ে সন্দিহান সেখানে অন্যর মেয়েকে নিয়ে এই মুহূর্তে নাক গলানো মানানসই নয়।
ঈশান বেজাজ রেগে গেছে রাসেলের উপর।সে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল রাসেলের সাথে দেখা করবে বলে।নিজের বাড়ি ফিরতে মুখোমুখি হলো আবিদ শাহরিয়ারের তিনি গম্ভীর স্বরে বলেন,
” একা কেন এসেছো?বাড়ির বউ কোথায়?”
দু’চরণ থমকে গেল ঈশানের।বাবা কি বললেন ‘বাড়ির বউ!’ তবে ঈশাকে কি উনি গ্রহণ করেছেন?
” কিছু প্রশ্ন করেছি আমি।”
” ও কিছুদিন সেখানে থাকবে।”
” তুমি আবিদ শাহরিয়ারের ছেলে তো?বিয়ের পর তোমার মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতাম না আর তুমি..যাজ্ঞে সে সব কথা।ঈশাকে নিয়ে এসো আমি বেশি দিন এখানে থাকতে পারবো না পরিবারটা পরিপূর্ণ রেখে দেখে যেতে চাই।”
ঈশান সন্দিহান চোখে চোখ রাখলো আবিদ শাহরিয়ারের।ভ্রু যুগল কুচকে সে বলে,
” তুমি ঈশাকে মেনে নিয়েছো?আর মেনে নিলেই বা কেন?”
” মেনে নিয়েছি, তবে কেন মেনে নিয়েছি তা বলবো না।”
বুকে চেপে থাকা পাথরটা এক নিমিষে সরে গেল ঈশানের অপরদিকে লিপি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো ঈশান।
” লিজাকে বিয়ে করতে বাধ্য করবে না বাবা?”
ঈশানের খোঁচানো কথা বুঝতে পারলেন আবিদ তিনি কড়া নজরে তাকালেন ছেলের দিকে।
” তা তুমি কি এখন তাই চাইছো নাকি?”
“এখন এসব রাখো ছোট ছেলের বিয়ে নিয়ে ভাবো।”
” সে এই যুগের ছেলে আমি আর কি ভাববো খোঁজ নিয়ে দেখো তিনিও প্রেমে মজে আছেন।”
আবিদ শাহরিয়ার দাঁড়ালেন না বড় বড় পা ফেলে চলে গেলেন নিজের কক্ষে।বাবার মতিগতি ঠিক ভালো ঠেকলো না ঈশানের এক নিমিষে কি করে পালটে গেল এই মানুষটা।
.
আজ ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় রাসেল গভীর ঘুমের মগ্ন।হঠাৎ ঘুমের মাঝে গালে চড় পড়ায় বেশ চমকে তাকালো সে।ঈশান তার দিকে তাকিয়ে আছে রক্তিম দৃষ্টিতে।রাসেল বুঝে উঠার আগে ঈশান তার কলার টেনে বিছানার থেকে নামিয়ে আনে।
” কি করছিস ঈশান তোর বউ নিয়ে ভেগে যাইনি তো।আরে ছাড় ভাই।”
” তুই একটা অপদার্থ ছেলে ইচ্ছে করছে গালটা লাল করে দিতে।”
” আমি আবার কী করলাম?”
” তুই জানিস অনু কি অবস্থায় আছে?অনুর যে বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে সেই ব্যপারে তোর হেলদোল নেই!তুই আম্মুকে একটি বার জানালিও না।”
” তোর বিয়ের এত ঝামেলা তার মাঝে..”
” তার মাঝে মানে কী?আমাকেও একবার জানাতি অথচ জানাসনি।তুই এক্ষুনি মাকে সবটা বলবি।”
” আমার ভয় লাগছে তুই ম্যানেজ করে দে না।”
” পারবো না তুই তোরটা সামলাবি।”
রাসেল কি বলবে কি করবে ভেবে পেল না।মাহমুদার সামনে দাঁড়িয়ে নিশ্বাসটা বন্ধ হয়ে এলো তার।পরিক্ষার সময়েও এতটা নার্ভাস লাগেনি যতটা আজ লাগছে।রাসেলের হাটু কাঁপার ভাব ভঙ্গিমা দেখে ঈশান নিজেই সবটা খুলে বললো।রাসেল আর অনুর সম্পর্ক নিয়ে প্রথমে মাহমুদা ইতস্তত বোধ করলেও পরবর্তীতে তিনি রাজি হয়ে যান।অনুর হালের কথা শুনে বড্ড ঘাবড়ে গেলেন তিনি তাই তো দেরি না করে অনুর পরিবারের কাছে দ্রুত প্রস্তাব নিয়ে যান ঈশান এবং মাহমুদা।
১০৩.
” ভাইয়া শেষ মেষ আপনিও আমার সাথে বেইমানি করলেন?আপনি ঈশাকে মেনে নিলে আমার মেয়ের কি হবে?”
” তোমার মেয়ের জন্য ছেলের অভাব হবে না।আমি লিজাকে অনেক বড় ঘরে বিয়ে দেবো।অনেক ধুমধাম করে নানান আয়োজনে।”
” চাই না আমার সেসব কিছু আমার মেয়ে স্বপ্ন দেখে এসেছে ঈশান তার বর হবে আর এখন…”
ন্যাকা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন লিপি।তার কান্না দেখে কোন হেলদোল হলো না আবিদ শাহরিয়ারের।বরং মনের সুখে তিনি টিভি দেখছেন তবে ভেতরে ভেতরে সবটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তার।এতদিনের বানোয়াট নাটক যখন সম্মুখে এলো তখন কি করে যে তিনি নিরব রইলেন এখনো ভেবে নিজেও কুল পেলেন না।নিস্তব্ধতা এখন একমাত্র রাস্তা তার কাছে।
#চলবে__