অবেলায় এলে তুমি পর্ব-০৪

0
274

#অবেলায়_এলে_তুমি🍁
#পর্ব:৪
#লেখনীতে: তামান্না ইসলাম কথা

“এই মেয়ে তুমি নিহানের বেডরুমে কি করছো? আর আমার মেয়েকে তুমি কোলে নিয়েছ কেনো? আমার মেয়ে কোনো রেসপন্স করছে না কেনো? কি করেছো তুমি আমার মেয়ের সাথে? নিহান! নিহান কোথায়? আর আম্মু সেই বা কোথায়? কি করেছো তুমি সবার সাথে? নিহান! নিহান কোথায় তুমি? দেখে যাও আমাদের মেয়েকে এই মেয়েটা কি করেছে। তোমাকে আমি ছাড়বো না।”

উপরের কথা গুলো বলেই একটা মেয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। ডিম লাইটের আলোতে মেয়েটার মুখ অস্পষ্ট।

“আমি কিছু করিনি বিশ্বাস করুন। আমি তো শুধু নিরাত্রিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। আমাকে প্লিজ কিছু করবেন না।”

সামনের মেয়েটির যেনো কথা গুলো শুনতে পারলো না। প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে এগিয়ে আসলো। সামনের মেয়েটি যত এগিয়ে আসতে লাগলো আমি ততটা পিছনে যেতে লাগলাম।

” কিছু না করলে আমার মেয়ে কথা বলছে না কেনো? তোকে আজ আমি ছাড়বো না।”

কথা বলতে বলতে মেয়েটা একদম কাছে চলে আসে। ব্যালকনির রেলিং এ এসে পিট ঠেকে গেলো। পিছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই। সামনের মেয়েটি কোনো কিছু না বলেই ধা*ক্কা দিয়ে ব্যালকনি থেকে ফেলে দিলো।

“না!”

চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। ফ্যানের নিচে থেকেও শরীর বেয়ে ঘাম ঝরতে লাগলো। আমার চিৎকারে নিরাত্রি নিজেও ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আমার সেই দিকে কোনো খেয়াল নাই।

“তরী কি হয়েছে তোমার? এভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলে কেনো? আর ফ্যানের নিচে এভাবে ঘামতে শুরু করেছো?”

“ওই মেয়েটা! বিশ্বাস করুন আমি কিছু করিনি। আপনি ওই মেয়েকে একটু বলুন না আমি কিছু করিনি। ওই মেয়েটা আমাকে ধা*ক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।”

“কোন মেয়ে তরী? এখানে তো কোনো মেয়ে নেই।”

” আরে ওই তো মে….”

এবার সম্পূর্ণ রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলাম যে আমি আমার রুমে আছি। এখানে কোনো মেয়ে নেই।

“কিন্তু আমি যে দেখলাম একটা মেয়ে আমাকে নিচে ফেলে দিলো?”

” এখানে কেউ নেই তরী তুমি স্বপ্ন দেখেছো। এই পানি খাও। আর পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে লক্ষী মেয়ের মতো। আমি নিরাত্রিকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।”

বেডসাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে কথা গুলো বললেন ভদ্রলোক। লোকটার হাত থেকে পানি খেয়ে একবার ঘড়ির দিকে তাকালাম। আরেকটু পরেই ফজরের আজান দিয়ে দিবে। তাই আর না ঘুমিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে যেতে গেলাম। তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে নিতে পারবো।

“আপনি নিরাত্রিকে নিয়ে একটু বসুন আমি নামাজ পড়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবো। তখন আপনিও নামাজ পড়ে নিতে পারবেন। তাহলে আর কারো নামাজ পড়তে অসুবিধা হবে না।”

কথা গুলো বলে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। এখনো মনে হচ্ছে যেনো, সেই স্বপ্নের মেয়েটা আমাকে দেখে-দেখে হাসছে।

” একদিকে ভূতনির জামাই জ্বালাচ্ছে তো আরেক দিকে মরে ভূত হয়ে যাওয়া সতীন জ্বালাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ আমাকে একটু এদের শায়েস্তা করার বুদ্ধি দাও।”

🍁🍁🍁🍁

সকাল সকাল উঠে সবার জন্য নাস্তা রেডি করে ডায়নিং টেবিলে রেখে বসে বসে নিরাত্রির জন্য খাবার তৈরি করছি। মামা সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছে। গতকাল রাতে মামা যেই কথা বলেছিলো মামীকে তারপর আর মনে হয় না আমাদের জন্য রান্না করবে। আমার জন্য তার সংসার ভেঙ্গে যেতে বসেছে আবার মামা এতো গুলো কথা শুনিয়েছে। এইসবের পরেও আমাদের জন্য আবার রান্না করতে যাবে না কি! আর এমনিতেও মামীর অভ্যাস নেই সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার। তাই নিজেই সবার জন্য নাস্তা রেডি করে বসে আছি।

“তরী!”

মনোযোগ সহকারে নিরাত্রির খাবার তৈরি করছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে কেউ ডেকে উঠতেই দেখি মামী দাঁড়িয়ে আছে। এখন সকাল আটটা বাজে। আর এইসময় মামীকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম। সাধারণত মামী নয়টা কি সাড়ে নয়টার আগে ঘুম থেকে উঠে না। কিন্তু আজকে আজকে এই সকালে ঘুম থেকে উঠে যাওয়ায় বেশ অবাক হলাম। শুধু তাই নয় মামীর কোলে নিরাত্রি আর তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ভদ্রলোক।

” মামী তুমি এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছো? তোমাকে তো কখনো এতো সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেখিনি। তা সূর্য আজ কোন দিক দিয়ে উঠলো শুনি? আমি মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি।”

টিপকেনি সুরে মামীকে কথা গুলো বলে নিরাত্রিকে মামীর থেকে নিতে গেলাম। ওমা! এই মেয়ে দেখি মামীর কোলে হিসু করে দিছে। মেয়ের এমন কাজ দেখে উপস্থিত সবাই হেসে দিলাম। মামী চোখ দুটো গরম করে নিরাত্রিকে তাকাতেই নিরাত্রি কান্না করে দিলো।

“মামী একদম চোখ গরম করে নিরাত্রিকে দেখবে না তুমি। গতকাল রাতের কথা ভুলে যেও না তুমি। আর আমি টেবিলে খাবার রেখে দিয়েছি সবাই খেতে বসুন আমি নিরাত্রিকে ডায়পার পড়িয়ে নিয়ে আসছি।”

কথা গুলো বলেই আমি নিরাত্রিকে নিয়ে চলে গেলাম রুমের দিকে। এতো বেলা হয়েছে এখনো মেয়েটাকে খাওয়ানো হয়নি।

“মামী আপনি আর যাই করেন না কেনো আমার মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবেন না। আপনার এই যে মেয়েকে দেখলেন না সে কিন্তু তার সাথে করা ব্যবহারের জন্যে আপনাকে কিছু না বললেও নিরাত্রিকে বললে ছেড়ে দিবে না। আর শুনলাম মামা নাকি বলেছে…”

“মামা কি বলেছে সেটা পরে বলবেন এখন খেতে বসুন। আমি সবাইকে খাবার দিচ্ছি।”

“কিন্তু নিরাত্রি?”

নিরাত্রিকে ডায়পার পড়িয়ে নিয়ে আসতে আসতে সবার উদ্দেশ্যে কথা গুলো বলতেই ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন।

” আমি সকালে পাশের বাড়ির কাজের মেয়ে আছে তাকে আসতে বলেছি। যেনো সে একটু নিরাত্রিকে রাখে। ওই তো চলে এসেছে।”

ভদ্রলোকের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই মেয়েটা চলে আসে। তার কাছে নিরাত্রিকে দিয়ে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলাম।

“মামী তার আপনি আপনার বাবার বাড়ি যাচ্ছেন কখন? না মানে আমরা যাওয়ার সময় আপনাকে পৌঁছে দিতে পারবো আর কি। আপনাকে আর টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে যেতে হতো না।”

খাবার মুখে দিতে দিতে ভদ্রলোক মামীকে কথা গু বললেন। ভদ্রলোকের কথা শুনে মামীর লজ্জায় মাথা নীচু করে নিলেন। মামীর ধারণা ছিল না যে, ভদ্রলোক সব কথা শুনেছে। মামী মাথা নিচু অবস্থায় একবার আড়চোখে মামার দিকে তাকালেন কিন্তু মামা কোনো রূপ কথা না বলে চুপচাপ করে খাবার খাচ্ছে। মামা যে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। মামা বরাবর আমাকে একটু বেশি ভালোবাসে। কিন্তু মামীর সেটা পছন্দ ছিল না। মামার অনুপস্থিতিতে আমাকে মারধর করতেও ভুলতো না। আর কিছু বললেই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখাতো। এইবার যখন সব কিছু জানতে পেরেছে এইবার আর নিজের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করবে না। মামী আর কোনো কিছু না বলে অল্প খাবার খেয়ে উঠে চলে গেলেন।

” তরী তুমি নিজেও তৈরি হয়ে থেকো আর হ্যাঁ তোমার বই প্যাক করে নিও।”

“মামা একটা কথা বলার ছিলো। যদি তোমার আপত্তি না থাকে তাহলে আমি কিছু দিন এখানে থেকে যেতে চাচ্ছি।”

ভদ্রলোকের কথাকে একসাইডে এক প্রকার ছুড়ে ফেলে দিয়ে রেখে মামাকে কথাটা বললাম। মামা আমার কথা শুনে একবার ভদ্রলোক তো একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার খাবার মুখে দিলেন। ভদ্রলোক আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

“আপত্তি থাকতে যাবে কেনো? আমি একবার জামাইকে বলতে চাচ্ছিলাম যেনো তোদের কয়েকটি দিন এখানে থেকে যেতে। কিন্তু এখন তুই যখন নিজে থেকে বললি আর জামাই যদি থেকে যেতে বলে তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

“আরে মামা উনার তো অফিস আছে। উনি চলে যাবে। আমি আর নিরাত্র থাকবো। উনি একটু পরেই চলে যাবে। অফিসে একটা জরুরি মিটিং চলে আসছে।”

ভদ্রলোককে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মামাকে কথা গুলো বলে দিলাম। একবার আড়চোখে ভদ্রলোককে দেখে নিলাম। মামা আমার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে খাওয়া শেষ করে চলে গেলো। আর আমি ভদ্রলোকের অবস্থা দেখে এক আনন্দ উপভোগ করতে লাগলাম। ম
আমার সাথে লাগতে আসা। হুঁ! আমার সাথে লাগতে আসলে আমিও কম যায় না।

🍁🍁🍁🍁

“তুমি একদম কান্না করবে না। আমিও দেখি তরী রানীর কতটা পাখনা গজিয়েছে। খুব বাড় বেড়েছে তাই না! যত ইচ্ছে পাখিকে উপরে উঠতে দাও। যখন আমি একবার পাখনা ছেঁটে দিবো তখন উপর থেকে পরলে বেশ ভালো করেই বুঝবে উপরে উঠার কত কথা জ্বালা।”

কথা গুলো বলেই কল কেটে দিলো আগন্তুক। কল কেটে দিয়ে হাতে থাকা সিগারেটে শেষ ফুঁক দিয়ে পা দিয়ে পিষে দিলো।

#চলবে