অবেলায় এলে তুমি পর্ব-০৯

0
179

#অবেলায়_এলে_তুমি
#পর্ব:৯
#লেখনীতে: তামান্না_ইসলাম_কথা

দুঘন্টা মামা বাড়ি এসেছি আমি, নিরাত্রি আর শাশুড়ি আম্মা। নিহান আমাদের নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে। বাড়ির ভেতরে আর প্রবেশ করেনি। এ বাড়ি এসে দেখি এলাহি কারবার। মামী ছেলের আগমনে সম্পূর্ণ বাড়ির ছবি পাল্টে দিয়েছে। নতুন করে বাড়ির রং করেছে, ঘরের আসবাবপত্র কিছু পরিবর্তন করেছে। মামা আগে যখন বলতো পুরানো জিনিস গুলো পরিবর্তন করতে চাইতো মামী করতে দিতো না। বলতো এইগুলো তার নিজের হাতে করা জিনিস। এই গুলো সে কখনো পরিবর্তন করবে না আর করতেও দিবে না। কিন্তু মামী যে ছেলের আগমনে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে জানা ছিলো না। শুধু ছেলের আগমনে এতো কিছু হয়নি। খুঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সোহেল ভাইয়ার একজন বিদেশী বান্ধবী আসবে। যদিও মেয়ের পরিবার বাংলাদেশী কিন্তু সে না কি লন্ডনে চাচার কাছে বড় হয়েছে। সে-ই রমনীর আগমনের জন্য মূলত বাড়ির রংঢং করা।

“তরী তোকে কালো শাড়িতে পুরাই হট লাগছে রে।আর তোর মেদহীন পেট তো আরোই।”

গুনগুন করতে করতে চা বানাচ্ছিলাম সবার জন্য। এমন সময় কথাটা শ্রবণ হওয়ার পাশাপাশি কোমরেও স্পর্শ পেতেই কালবিলম্ব না করে পাশ ফিরে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বসলাম।

“তোর সাহস হয় কি করে আমাকে এমন কথা বলার? শুধু কি বলেছিস? আবার তোর নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করিস। মেয়েদের কি তোর দুর্বল মনে হয়? তোর কি মনে হয় তোর বিদেশীনিদের মতো সবাই? তুই এভাবে বলবি আর স্পর্শ করবি আর মেয়েরা তোর উপর ঢলে পড়ে যাবে? তোকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু তুই তো রাস্তার কিট। আমার ভাবতেই অবাক লাগে তুই সেদিনের অপমানের কথা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি এইটা ভেবে। তুই যদি,,,”

“তুই আমাকে থাপ্পড় মারলি কোন সাহসে? আর তুই-তুকারি করছিস।”

আমার কথা শেষ করার আগেই গালে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বললো সোহেল ভাইয়া। কিন্তু তার এই কথা শুনে আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো। মানুষ কতটা খারাপ আর নির্লজ্জ হলে নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টো প্রশ্ন করে সেটা হয়তো এই মানুষকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

“এখন তো শুধু থাপ্পড় মেরেছি আর কখনো আমার সাথে লাগতে এলে এমন জায়গায় দিবো যে না তো কাউকে দেখাতে পারবি আর না তো কাউকে বলতে পারবি। আমাকে যদি সেই ছোট তরী ভেবে থাকিস তাহলে জন্য এক বালতি সমবেদনা। তুই ভাই ভাইয়ের মতোই হয়ে থাকবি। আর তোর যদি খুব বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে পতিতালয়ে চলে যাবি।”

“তোর এই রূপের অনেক গরম তাই না? তোর এই রূপ আর দেমাগ আমি বের করে দিবো।”

কথাটা বলে আমার দিকে আবার এগিয়ে আসতে চাইলেই হাতের কাছে থাকা গরম চা সোহেল ভাইয়ার উপর ঢেলে দিলাম।

“কি হয়েছে এখানে?”

আমার আর ভাইয়ার মাঝেই কোথা থেকে যেনো মামী চলে আসে।

“তোমার ছেলে নিজের চা নিয়ে খেতে পারে না। সেটা গায়ে ঢেলে দিয়েছে। আর ওহ্ হ্যাঁ মামী! তোমার ছেলেকে বলে দিবে এইটা বাংলাদেশ লন্ডন না যে এখানে সব কিছু চলবে। আর আমার পিছনে যেনো ভুলেও লাগতে না আসে তাহলে আজকের কথাটা তাকে মনে করিয়ে দিবে।”

কথা গুলো বলে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে আসি। আর মামী এবং সোহেল ভাইয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার ছেলের যে আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছে সেটা বললেও মামী বিশ্বাস করবে না কারণ ছেলে ভক্ত মা সে। ছেলের সব খারাপ কাজ মামার থেকে ডেকে রাখাই হচ্ছে মামীর কাজ।

🍁🍁🍁🍁

ঘন্টা খানেক আগে থানার সামনে গাড়িতে বসে আছে নিহান। পাশেই বসে আছে আয়ান। দুইজনের হাতেই সিগারেট। কিন্তু নিহান সিগারেট কম থানার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজে চলেছে বারবার। যেটা আয়ানের নজর এড়ালো না। কিন্তু নিহান এখানে কেনো এসেছে সেটা এখনো অপরিষ্কার আয়ানের কাছে।

“চল!”

“চল মানে? কোথায় যাবো আমরা?”

“তোর শশুড় বাড়ি! ঐযে দেখা যাচ্ছে তোর শশুড় বাড়ি। ওখানে যাবো শালা!”

কথাটা বলেই আয়ানের পেটের মধ্যে গুঁতো মারল নিহান।

“শালা তুই আমাকে এক ঘন্টা ধরে এখানে বসিয়ে রেখে এখন বলছিস থানার ভিতরে যাবি?”

কথা গুলো বলতে বলতে দুই বন্ধু নিজেদের মাঝে মজা করে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
পুরানো একটা কেসের বিষয়ে আপডেট জানতেই নিহান থানায় এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু এতো সময় কাঙ্খিত ব্যক্তিকে না পাওয়ায় সে গাড়িতে বসে ছিলো। এখন তাঁকে দেখতে পেয়েই থানার দিকে এগিয়ে গেলো।

“এই নিন স্যার আমি সমস্ত কিছু এই পেনড্রাইভে কালেক্ট করে দিয়েছি। এই পেনড্রেইভেই আপনি সব কিছু পেয়ে যাবেন। কে বা কারা, কারা ড্রাগসের সাথে যুক্ত ছিলো এবং যেইদিন অরিত্রি ম্যাডাম হসপিটালে এডমিট হয় সেইদিন থেকে হসপিটালে যারা আসা যাওয়া করছে সমস্ত কিছু আপনি এই পেনড্রাইভে পেয়ে যাবেন। আর এইটা হচ্ছে অরিত্রি ম্যাডামের আসল ফরেন্সিক রিপোর্ট এখানে সব কিছু দেওয়া আছে। কি কারণে অরিত্রি ম্যাডামের মৃত্যু হয়েছে এখানে সব কিছু দেওয়া আছে।”

কথা গুলো বলেই লোকটা একটা পেনড্রাইভ এবং একটা ফাইল নিহানের দিকে এগিয়ে দিলো। নিহান একবার পেনড্রাইভ এবং ফাইল চেক করে সামনে তাকাতেই লোকটাকে আর দেখা গেলো না। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই যেনো সেখান থেকে লোকটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়েও যখন লোকটাকে দেখতে না পেয়ে পাশ ফিরতেই আয়ানকে দেখে কিছুটা চমকে গেলো।

“কি রে তুই না ভিতরে ছিলি? এখানে এসে এমন চুপি চুপি দাঁড়ি আছিস কেনো?”

আয়ানকে নিজের পাশে দেখতেই কথাটা বললো নিহান। কিন্তু নিহানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

“আমি না হয় আমার কথা পরে বলছি কিন্তু তুই এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস? আবার দেখলাম কাউকে একটা খুঁজে চলেছি…এক মিনিট তোর হাতে এইটা কিসের ফাইল?”

নিহারের হাত ফাইল দেখতেই নিহানকে প্রশ্ন করলো আয়ান কিন্তু আয়ানের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে সে থানা থেকে বের হয়ে গেলো। যেনো সে আয়ানের কথা গুলো শুনতে পারেনি। নিহানের সবসময় এমন ব্যবহার সহ্য করতে পারে না আয়ান। যার জন্য দুইজনের মাঝে সবসময় একটা কোল্ড ওয়ার হবে।

🍁🍁🍁🍁

ঝলমলে রোদের মধ্যে হঠাৎ করে আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা পড়ে গেলো। রোদের পরিবর্তে মেঘ করেছে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে এসেছে। দিনকেও মনে হচ্ছে রাত হয়ে এসেছে, হয়তো বৃষ্টির আগাম বার্তা দিচ্ছে। নিচে সেই বিদেশীনি আর তার পরিবার এসেছে। মেয়েটা দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দরী। কিন্তু সোহেল ভাইয়ার যেই চরিত্র এখন মেয়েটা মানিয়ে নিতে পারলেই হয়। কিন্তু মেয়েটা তো তারা একসাথেই ছিল এতো গুলো বছর। বাহিরের পরিবেশ খারাপ মামা বলেছে তাদের আজকে এ বাড়ি থেকে যেতে। আমি আর তাদের কথায় পাত্তা না দিয়ে নিরাত্রিকে শাশুড়ি আম্মা আর মামীর কাছে দিয়ে রুমে চলে আসি। বাহিরে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে।
মেঘের গর্জন যতটা না ভয়ংকর লাগে তার থেকে বেশি ভয়ংকর লাগে যখন আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি একদুই ফোঁটা করে বৃষ্টির জলরেখা পড়তে শুরু করেছে। কালবিলম্ব না করে ছাদের দিকে চলে গেলাম বৃষ্টি বিলাস করবো।

“এভাবে কোথায় যাচ্ছো? বাড়িতে মেহমান দেখো না তুমি? আর তাদের সামনে এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছো? দিন দিন বড় হচ্ছো না কি ছোট? বাহিরে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে আর উনি ছুটাছুটি করছে।”

ছাদে আসার আগেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো কিন্তু কিন্তু ছাদে উঠার আগেই ভদ্রলোক চলে এলেন আর এসেই নিজের ভাষণ দিতে লাগলেন। তবে এবারো তার কথায় পাত্তা না দিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলাম।

“যদি আনন্দ পেতে চান তাহলে চলে আসুন আমার সাথে। এক সাথে বৃষ্টি বিলাস করবো।”

পিছন ফিরে না তাকিয়ে সোজা ছাদের দরজা খুলে ছাদের মাঝবরাবর চলে গেলাম। বৃষ্টির প্রতিটি জলকণা এসে টিপ টিপ করে শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। সম্পূর্ণ ছাদ জুড়ে পানিতে ডুবে আছে। দেখে দেখে পানিতে গিয়ে লাফ দিতেই সেখানে থাকা পানি গুলো ছলাৎ করে চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সেই ছোট বেলায় বৃষ্টি হলে এমন করে পানিতে লাফ দিতাম।

“বৃষ্টি বিলাস করে এভাবে পাগল করে তোলো না মেয়ে। তোমার মেদহীন শরীরের প্রতিটা ভাঁজ আমাকে বেসামাল করে তুলছে। একবার বেসামাল হয়ে পড়লে আমাকে আটকাতে পারবে না।”

লোকটা পিছনে থেকে শাড়ি ভেদ করে কোমড়ে এক হাত রেখে মুখ কানের কাছে নিয়ে কথা গুলো বলতেই গা শিউরে উঠলে। এই প্রথম লোকটার স্পর্শ সাথে এমন কথাই গা শিউরে উঠলো। বিয়ের এতো গুলো দিন পর লোকটার প্রথম স্পর্শ আমার গা শিউরে উঠার জন্য যথেষ্ঠ। এতো সময় বৃষ্টিতে ভিজেও শীত অনুভব করিনি যতটা লোকটার কাছে আসায় অনুভব করছি। লোকটাকে ভেবেছিলাম রসকসহীন কিন্তু এখন থেকে লোকটার কথাতে নিজেই ভুক্তভোগী হয়ে গেলাম।

“তরী!”

লোকটাকে এতোটা কাছে পেয়ে এমনিতেই বুকের ভেতর উঠানামা শুরু হয়ে গিয়েছে তার মাঝে আবার নেশালো কন্ঠে ডেকে উঠায় এবার ভেতর থেকে হার্ট বেরিয়ে আসবে।

“হুম!”

কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে উত্তর দিতেই ভদ্রলোক ঘাড়ে মুখ গুজে দিলো। তার এহেন কাজে বরফের ন্যায় জমে গেলাম। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আর কোনো। হাত পা অসার হয়ে আসছে।

“তরী আই নিড ইউ।”

কথাটা বলার পর পর ঘাড় উষ্ণতা অনুভব করলাম। ছোঁয়া গভীর হতেই শাড়ি রে আসা তাঁর হাতের উপর হাত আটকে গেলো। লোকটা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে বৃষ্টির মাঝেই কোলে তুলে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করো। এভাবে কোলে তুলে নেয়া আর বৃষ্টির পানি চোখে মুখে এসে পড়তে ঠিক ভাবে তাকানো দায় হয়ে পড়েছে। ভদ্রলোকের গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে তার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে রাখলাম।

#চলবে