#অভিলাষী (৪র্থ পর্ব)
#আরশিয়া_জান্নাত
“আমাদের প্রায়োরিটি লিস্ট এমন হওয়া উচিত নয় মৃত্তিকা। যারা আমাদের হার্ট করে তাদেরকে আমরা এই লিস্টের শুরুতে কখনোই রাখবোনা। নেহাতই সম্পর্কের দায়ে লিস্টের বাইরে ফেলতে বলছি না। তবে এইটুকু সীমানা টানো যাতে তাদের দেয়া কষ্ট তোমাকে ছুঁতে না পারে। যারা হ্যাপি মোমেন্ট দিতে না পারে তাদের দেওয়া স্যাড মোমেন্ট ভোগ করার কোনো মানে হয় না…”
“মানুষের কথার আঘাত হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ করে, এখন সে যেই হোক। এটা এড়াবো কীভাবে বলতে পারেন?”
“এড়াতে কষ্ট হলে প্রতিবাদ করবে। অভিমান পুষে নিজের বুক ভার করার চেয়ে প্রতিবাদ করে সেটা বের করে দিয়ে হালকা থাকা শ্রেয়। আমাদের মন এতো ভার নিতে পারেনা, কেন ওকে অযথা এতো প্রেশার দাও বলোতো?”
আমি কিছু না বলে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। চাইলেই কী মানুষ সবকিছুর প্রতিবাদ করতে পারে? মানুষ কে কত কী সহ্য করে জীবন নামক এই কঠিন জার্নি টা শেষ করতে হয়। তৈমুর ছেলে মানুষ তাই মেয়েদের এসব সূক্ষ্ম হিসাবনিকাশ তার না বোঝার ই কথা।
সংসারে ছোট বাচ্চার মা হওয়া খুব কঠিন কাজ। দেখা যায় রান্না বসাতে গেছি দুটো মশলা দেওয়ার পরপরই বাবুনী কান্না শুরু করে, ওকে সামলাতে গিয়ে ভুলে যাই কি কি দিয়েছিলাম আর কী দেয়া বাকি! অনেক সময় এমন হয় সবকিছু বাড়তি দিয়ে ফেলছি বা দিচ্ছিই না। এ সময়টাতে আমার ইচ্ছে হয় বলি রান্নার দায়িত্ব টা কেউ অন্তত নিন, কিংবা বাবুনিকে রাখুন। এমনিতে সবাই ওকে খুব আদর করে। তবে পি পটি করলে কেউই পরিষ্কার করতে চায়না। আমি যত ব্যস্ত ই থাকি না কেন সব কাজ ফেলে এসে ওর এসব পরিষ্কার করতে হয়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ডায়াপার পড়ালেও সমস্যা, শাশুড়ি বলেন এসব অহেতুক খরচা, তাছাড়া ছোট মানুষ সারাক্ষণ এসব পড়িয়ে রাখলে রেশ হয়ে যায়। আমি আছি বলতে গেলে জলে কুমির ডাঙায় বাঘের মতো অবস্থায়। তারপরও শুনতে হয় মা আমি একাই হয়েছি নাকি! সবাই ই তো মা হয়ে সব সামলায়, আজকাল মেয়েরা বাইরেও জব করে ঘর ও সামলায়। কই তাদের তো এতো অসুবিধা হয়না, আমি ঘর সামলেই এমন হাঁপিয়ে উঠছি কেন!
বাবুনীর কাঁথা কয়েকটা জমলেও বকা শুনতে হয়, কেন এসব রোদ থাকতে থাকতে ধুয়ে শুকাচ্ছি না। আবার ঘনঘন ধোয়াপালা করলেও বলে এতো পানি ঘাটলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগবে…
আমি জানি না এতো নিয়ম-কানুন সামলে মানুষ কীভাবে মা হয়। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি আমার গভীর মমত্ববোধ ও সমবেদনা!
এতো কিছুর মাঝেও আমি যখন ওকে নিয়ে বসি, বুকের মাঝে রেখে আদর করি ও পিটপিট করে চায় হাত পা নাড়ে; আমার সব পরিশ্রম যেন স্বার্থক হয়ে উঠে। এই ছোট্ট জানটা আমার সন্তান ভাবতেই অন্যরকম আনন্দ হয়। আমি ওর ছোট হাতের মুঠোয় চুমু খাই, ওর নরম নরম গালে গাল লাগিয়ে ছড়া কাটি। কি যে শান্তি লাগে তখন….
তৈমুর যতক্ষণ বাসায় থাকে আমার অসুবিধা অনেক টা কম হয়। তিনি একাই ওকে খুব সুন্দর করে সামলান। মেয়েও তার বাবাকে পেলে তুলনামূলক কম জ্বালায়, বরং শান্ত হয়ে বাবার বুকে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে। যেন তার মতো ভদ্রলোক পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
আমার অসুবিধাগুলো দাদীজান ভালোমতোই বুঝতেন, কিন্তু বয়সের ভারে চাইলেও সহযোগিতা করতে পারতেন না। উনি ই প্রথম তুললেন আমাকে সহযোগিতা করার জন্য কাজের লোক রাখতে। আমার শাশুড়ি শুরুতে খালার কথা তুলে বললেন, একজন তো আছেই আর কয়টা কাজের মানুষ রাখবো!
দাদীজান গরম হয়ে বললেন, “ফাতেমা বিবি নিজের জান নি যে বাঁচি আছে এটাই তো অনেক, ও থাকা আর না থাকা যে এক তা তোমার চেয়ে ভালো কে জানবে বৌমা? একটা শক্তপোক্ত কাজের মানুষ দেখো, যে সত্যিই গায়ে গতরে খাটতে পারবে। পরের জন্য মায়া দেখাইতে যাই নিজের ছেলের বৌরে কষ্ট দিও না।”
মা আর কথা বাড়ানোর সাহস করলেন না। কিন্তু পরে ঘ্যানঘ্যানানি ঠিকই করলেন, জোয়ান মহিলারা চোর হয়, ঘরের খবর বাইরে প্রচার করে সহ কাজের বুয়া সম্পর্কিত নানারকম কথা বলে বলে বিলাপ করতে শুরু করলেন। তার মনে হয় ফাতেমা খালার মতো বিশ্বস্ত মানুষ আর পাবেননা। আমি নিরব দর্শক হয়ে তাদের বৌ শাশুড়ির দ্বন্দ্ব দেখছি। দাদীজান আগেই বলেছেন যত যাই হোক আমি যেন এসবে না ঢুকি।
সন্ধ্যায় বাবুনীকে খাওয়াতে বসে কখন যে চোখ লেগে এসেছে বলতে পারিনা। আজকাল সময়ে অসময়ে এতো ঘুম পায় কী বলবো! কতক্ষন ঘুমিয়েছি কে জানে, যখন ঘুম ভাঙ্গে চেয়ে দেখি সব কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রুমটাও পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। আমি উঠে ঘড়ির দিকে চেয়ে আৎকে উঠি, রাত প্রায় ১০টা বেজে গেছে আমি এখনো ভাত বসাই নি, আজ সবাই না খেয়ে থাকবে!! তড়িঘড়ি করে উঠতে যাচ্ছিলাম আঁখি এসে বলল, “ভাবী ঘুম ভেঙ্গেছে তোমার?”
“দেখেছো অবস্থা, কেউ ডাকেও নি একবার ,আমিও পড়ে পড়ে কেমন ঘুমালাম…”
“আরেহ অস্থির হচ্ছো কেন রিল্যাক্স, এরকম হয় ই এসময় ব্যাপার না। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো মা খেতে ডাকছেন।”
“রান্না কে করেছে?”
“মা করেছেন। তুমি ঘুমাচ্ছিলে দেখে উনার হয়তো আর ডাকেনি। আমি অফিস থেকে এসে দেখি উনি রান্না করছেন।”
আমি মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে আরম্ভ করলাম। আল্লাহ ই জানেন এখন কি রূপ ফেইস করা লাগে…
কিন্তু যে ভয় পেয়েছিলাম তার কিছুই ঘটলোনা। সবকিছু খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চললো। উনি আমাকে একটা কটু কথাও বলেননি। ইনফ্যাক্ট খাওয়া শেষে গরম দুধ দিয়ে বললেন, “মণি ক্ষুধা লাগলেই খেয়ে নিও লজ্জা শরম রেখোনা, এসময়ে মায়েদের পুষ্টির বেশি দরকার। তাই যখন যা খেতে ইচ্ছে করবে খাবা।”
আমার মনটা ভীষণ ভালো হয়ে যায়।
রুমে এসে দেখি তৈমুর চুপচাপ বসে আছেন। আমি বিছানা ঠিক করে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন তিনি বললেন, “আজ দুপুরে বাবা কল করেছিলেন, বললেন তোমাকে নিয়ে ওখানে যেতে..”
“ওহ!”
“আমার এ কদিন সময় হবেনা। তুমি কী অন্য কাউকে সাথে নিয়ে যাবে নাকি শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?”
“অন্য কারো সাথে গিয়ে কাজ নেই, বরং শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো। আমি ফোন করে বলে দিবো শুক্রবার যাওয়ার কথা।”
“বেশ..”
।
আব্বু হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে ১ম সিদ্ধান্ত নিলেন উনি উনার যাবতীয় সকল ঋণ পরিশোধ করে ছেলেমেয়েদের সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারা করে দিবেন। তার মতে জীবন তাকে সুযোগ দিয়েছে অপূর্ণ কাজগুলো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে সম্পন্ন করা। তাই তিনি সব ছেলেমেয়েদের একত্রিত হতে বলেছেন। সেখানে আমার উপস্থিত হওয়া ই বাকি ছিল। সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আমার বিশেষ কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার বাবা মাকে যতটুকু চিনি আমি ভালো করেই জানি আমার ভাগ তুলনামূলক কম ই হবে। তাই প্রত্যাশা রেখে অযথা মন খারাপের কারণ এনে লাভ নেই। আমি মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আরো একটা বৈষম্যের মুখোমুখি হতে। কিন্তু সত্যি বলতে আমি চাইছিলাম না তৈমুরের সামনে আরো একবার ছোট হতে। মেয়েদের স্বামী যতোই আপন হোক বা সাপোর্টিভ হোক কোনো মেয়ে ই চায়না তার পরিবারকে স্বামীর চোখে ছোট করতে। বা পরবর্তীতে কথা শোনানোর মতো স্কোপ রাখতে।
আব্বু ইসলামী আইন অনুসারে সবকিছুর উইল করলেন। শুধু বাড়িটা আম্মুর নামে করে বললেন যতদিন তোমাদের মা বেঁচে থাকবে এই বাড়ি তার নামে থাকবে। আমি চাই না আমার অবর্তমানে তোমরা কেউ তাকে অযত্ন করো। আর তোমাকে(আম্মুর দিকে চেয়ে) বলছি, যতো আদরের ছেলেমেয়ে হোক না কেন শেষ নিঃশ্বাস অবধি এখান থেকে কাউকে কিছু দিবেনা। এটা তোমার প্রতি আমার অনুরোধ ”
সবাই চলে যাওয়ার পর আব্বু আমাকে কাছে ডেকে বললেন, “মানুষ মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গেলে নিজের আত্মসমালোচনার স্বীকার হয়। তখন মনে হয় সে অনেক অন্যায় করেছে, যার প্রায়শ্চিত্ত না করে মরা ঠিক হবেনা। দুনিয়ার শাস্তির চেয়ে আখিরাতের শাস্তি আরো কঠিন হবে। ২মাস বেডে থেকে আমার এই উপলব্ধি টাই এসেছে আমি তোর সাথে অন্যায় করেছি। আমরা ভাবি বা মুখে বলি বাবা-মায়ের কাছে সব সন্তানেরা সমান। এটা আসলে মুখের কথা, যা আমরা বারবার বলে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষের গাফেল মন ঠিকই কারো না কারো প্রতি অন্যায় বৈষম্য করেই ফেলে। এখন সেটা জেনেবুঝে হোক কী না বুঝে। আমি তোমার জীবনের সেই সময়টা ফিরিয়ে আনতে পারবোনা, তবুও ক্ষমা চেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করতে চাই। আমাকে মাফ করে দিও…..”
এর কিছুদিন পরে সত্যি সত্যিই আব্বু আমাদের ছেড়ে চলে যান। আমার ছোট্ট পৃথিবীর মুখ্য মানুষ টা যার ছায়ায় আমরা সবাই আশ্রয় নিয়ে বড় হয়েছি, তিনি আমাদের এক বুক যন্ত্রণা দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আব্বুর সাথে আমার সুখের স্মৃতি নেই তা নয়, আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি একদিন স্কুলে পিটি করতে গিয়ে রোদে দাড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। বাসায় খবর দেয়ার পর আব্বু দৌড়ে স্কুলে আসেন। আমাকে অজ্ঞান দেখে তার সে কি কান্না। উনার অবস্থা দেখে টিচাররা পর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিল পাছে আমার আব্বুর ই কিছু হয়ে যায় কি না। আমার যখন হুঁশ ফিরে আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে কিসব বলে বলে কাঁদছিলেন। আমি সেসবের আগামাথা কিছুই বুঝিনি তার কান্নার শব্দে। সেদিন আর ক্লাস করতে হয়নি, আব্বু আমাকে সাথে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে মিমি চকলেট কিনে দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমার জীবনের একমাত্র দিন যখন আমি একটা বড় মিমি চকলেট একা খেয়েছি। আমি ঐ একদিনের স্মৃতি নিয়ে অনেক বছর বেঁচেছি এই ভেবে আব্বু আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আমি তার অনেক আদরের… আজ বহুবছর পর সেই ঘটনা মনে করে আমার আবারো মনে হচ্ছিল আমি উনার এতোটাও অপছন্দের ছিলাম না হয়তো।
আব্বু আমার হাতে নিসার জন্য কেনা চেইনটা দিয়ে করুণ গলায় বলেছিলেন,”আমার নাতনিকে আমি ঠিকঠাক আদর করতে পারিনি, ওকে এটা দিস আমার চিহ্ন হিসেবে। আমি এটা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি না, ওর অধিকার আছে আমার থেকে কিছু পাওয়ার। তুই এটা ফিরিয়ে দিস না।”
মানুষ মরে গেলে নাকি তার সব ভালো কথা মনে পড়ে। আমার ও তাই হচ্ছে। আমি আব্বুর সব ভালো স্মৃতি মনে করে করে উন্মাদের মতো কাঁদছি। আল্লাহ নাকি মৃতের পরিবারের বুকে পাথর ছুঁইয়ে দেন, যাতে কষ্ট প্রশমিত হয়ে যায়। আমার বুকে পাথর ছোঁয়াচ্ছেন না কেন? আমি কেন নিজেকে সামলাতে পারছি না?
নানারকম রীতি রেওয়াজ শেষ করে ৫দিন পর তৈমুর আমাকে নিয়ে আসলেন। আমি অবাক হয়ে ভাবতে থাকি মানুষের জীবন কি অদ্ভুত এক সিকোয়েন্সে তৈরি করা। বাবা-মা কে কেন্দ্র করে একটা বৃত্ত গড়ে উঠে, সেই বৃত্তে সব সন্তানেরা বড় হয়, ডানা মেলে উড়তে শেখে। বাবা-মায়ের ছায়াতলে থেকেই তারা অন্য একটা বৃত্তের কেন্দ্র হয়ে উঠে। তারপর হঠাৎ একটা সময় পিছু ফিরে দেখি বহু আগেই আমাদের কেন্দ্রচ্যুত ঘটেছে। তারা যতদিন থাকেন এই অঘটন আমরা টের পাই না…. নতুন বলয়ে নতুন আপন মানুষগুলোর মাঝে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চেইন রিয়াকশনের মতোই চলতে থাকে।
।
সময়ের সাথে সাথে জীবন ফের তার নিজস্ব গতিতে চলতে শুরু করে। আমি ও তার ব্যতিক্রম নই। আজ আমার বিয়ের ৩বছর পূর্ণ হলো। আমি তৈমুর কে আজকের দিনের কথা কিছু বলিনি। উনার ধারণা উনি অন্য পুরুষদের মতো ডেট ভুলে যান না। ইম্পর্ট্যান্ট ডেটগুলো নাকি তার ঠোঁটস্থ থাকে।
আজকে আঁখি আসবে তার হাজবেন্ড কে নিয়ে। তাই বাসায় রান্নার আয়োজন এমনিতেই বিশেষ এই ঢং নিয়ে আমি নানা পদের রান্না করলাম। সাথে তৈমুরের পছন্দের জর্দাভাত ও করলাম।
নিসা দোলনায় দোল খেতে খেতে ছড়া কাটছে,
“আতা গাছে তোতাপাখি
ডালিম গাছে মৌ
এতো ডাকি তবু কথা
কও না কেন বৌ?”
আমি ওকে কোলে তুলে বললাম, আমার মামণি এখন গোসু করবে.. একটু পর আপ্পি আসবেনা? আপ্পির প্রিন্সেস তাই গোসু করে রেডি হয়ে যাবে ”
“নাআআআ আমি গোসু কব্বোনা…””
“ছিঃ আপ্পি তাহলে তোমাকে কোলে নিবেনা তো, বলবে নিসার গায়ে গন্ধ।”
নিসা নিজের গা শুঁকে বললো, “গন্ধ নাই তো,দেখো ঘেনান(ঘ্রাণ)…”
আমি হেসে বললাম,”হুম অনেক ঘেনান…”
ওকে গোসল করিয়ে লোশন মেখে সুন্দর জামা পড়িয়ে চুল আঁচড়ে বললাম, “এখন লক্ষী মেয়ের মতো দাদুর কাছে গিয়ে বসবে। আম্মু গোসল করে এসে খাইয়ে দিবো কেমন?”
“হুম”
আমি ফোন হাতে নিয়ে তৈমুর কে টেক্সট করলাম, ফেরার পথে কোল্ড ড্রিঙ্কস আনতে।
আঁখি এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”হ্যাপি এনিভার্সেরি ভাবি। আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট উপহার টা গ্রহণ করো।”
আমি হেসে বললাম, “তুমি কখনোই ভুলোনা। সবসময় গিফট করতে হয় তোমার?”
“ওমা এই দিনটা আমি ভুলবো কিভাবে? এই দিনেই তো এতো মিষ্টি একটা ভাবি পেয়েছি, দিনটা ভোলা সম্ভব?”
“সো সুইট অফ ইউ! থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
“ইউ আর মোস্ট ওয়েল কাম। ভাইয়া কোথায় এখনো ফিরেনি?”
“আসতেছে রাস্তায় হয়তো।”
“ওর মনে আছে তো?”
“কি জানি, কিছু তো বলেনি। তুমি উনাকে মনে করাবেনা কিন্তু..”
“আমার ভাই ঠিকই মনে রেখেছে। দেখিও প্ল্যান ও করে রেখেছে।”
“তুমি তো বলবাই ভাইয়ের আদরের বোন না..”
“আমার প্রিন্সেস কই? ওকে দেখছি না যে?”
“মায়ের ঘরে আছে হয়তো। তুমি আসবে শোনার পর থেকে অস্থির হয়ে আছে কখন আপ্পি আসবে।”
“দেখতে হবেনা ভাইজিটা কার।”
আঁখি নিসাকে খুঁজতে চলে গেল। আমি প্যাকেটটা ড্রয়ারে রেখে অতিথি আপ্যায়নের জন্য কিচেনে চলে গেলাম।
“আচ্ছা তৈমুর কী সত্যিই আমার জন্য কোনো প্ল্যান করেছেন নাকি ভুলে বসে আছেন? ”
আমি অধীর আগ্রহে থাকি তার সারপ্রাইজের অপেক্ষায়।
চলবে…