#অভিলাষী ৫ম পর্ব
#আরশিয়া_জান্নাত
প্রত্যাশা মানুষের মন ভাঙ্গে আর অপেক্ষা যাতনা বাড়ায়। এই দুটো নিয়ে আমি আমার মনের অস্থিরতা নিজেই বাড়িয়েছি বলা বাহুল্য। আমার জীবনে আমি কারো কাছেই প্রত্যাশা রাখিনি। বিয়ের পর তৈমুরের উপর ও রাখিনি। তবে তার কিছু কর্মকাণ্ড এমন ছিল; না চাইতেও তার প্রতি আমার আশা আকাঙ্ক্ষা বাড়ে। আমি বোকার মতো নিজের তৈরি করা অবয়ব ছেড়ে বেরিয়ে বুঝি ভুল ই করলাম! তৈমুর বাসায় ফিরেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই সকলের সঙ্গে বসে লাঞ্চ করেছেন। আঁখি ও তার হাজব্যান্ড এর সাথে কথাবার্তা বলে লাঞ্চ আওয়ার শেষ হবার আগেই ফিরে গেছেন। আমি অধীর আগ্রহে ছিলাম সে বুঝি একটা লাল গোলাপ হলেও সাথে করে আনবে! এই তার ডেট মুখস্থ রাখার ছিরি!
আমার মনমেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু বাসায় উপস্থিত মেহমানদের সামনে সেই রাগ প্রকাশিত না হওয়ার কঠিন প্রচেষ্টা চালাই। মনে হয় ডালি আপার হাজবেন্ড এর মতো হাজবেন্ড পাওয়া আসলেই সৌভাগ্য। আপাকে ক’দিন আগে কি সুন্দর হিরার নেকলেস গিফট করলো। এনিভার্সেরি উপলক্ষে দার্জিলিং গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। এদিকে আমি এই ৩বছরে বাবার বাড়ি টু শ্বশুরবাড়ি ছাড়া কোথাও আর যাই নি। এই দুই গন্ডির বাইরেও যে বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা আছে এ আমার চোখ জানেনা!
নিজের ভাগ্যকে কয়েকদফা বকাবকি করে বিকেলের চা নাস্তার আয়োজন করতে শুরু করি। সত্যি বলতে মনের কোথাও না কোথাও একটা আশা তবু জিইয়ে রয়েছিল। দিনতো ফুরোয় নি, এখনো সময় আছে। হতে পারে সবাই ছিল বলে কিছু বলেনি, তার ঠিকই মনে আছে। কিন্তু আমার আশার গুড়ে বালি দিয়ে যখন তিনি রাতে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লেন রাগে অভিমানে আমার দু’চোখ ভরে কান্না পেলো। মনকে বারবার বলছিলাম “এসব কেমন ন্যাকামি মৃত্তিকা? এসব ডেট এনিভার্সেরি পশ্চিমা কালচার। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বয়স তোর আছে? অযথাই কেন নাটক করছিস বল তো!”
নিসাকে ঘুম পাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে আছি, ঘুম আসি আসি করেও আসছেনা। মন খারাপের রাতগুলো কেন এত দীর্ঘ হয় কে জানে!
হঠাৎ তৈমুর আমার পেট জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো, কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, “আমার জীবনে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। হ্যাপি ম্যারেজ এনিভার্সেরি বৌ!”
“এখন ঢং করা হচ্ছে তাই না! সারাদিন গেল রাত গেল তখন মনে পড়েনি?”
“আমি দেখছিলাম তুমি কী করো… এই ৩বছরে তোমার মাঝে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, অধিকার ফলাতে শিখেছ কি না। কিন্তু তুমি আমাকে আশাহত করেছ। এখনো আমার উপর অধিকার ফলানো শিখলে না… খুবই ডিসাপয়েন্টিং!”
আমি উনার দিকে ফিরে বললাম, “সবকিছু চেয়ে নিতে হবে কেন? নিজ থেকে ভালোবেসে প্রকাশ করলে কী বেশি ক্ষতি হয়? তাছাড়া আমি তো ক্লু দিয়েছিলাম ই।”
“বরের জন্য গিফট কিনে ড্রয়ারে রাখতে পারো, অথচ নিজে ড্রয়ার খুলে দেখতে পারো না? নিজে সরাসরি কিছু বলবে না অপরজন থেকে ঠিকই সেটা আশা করবে এটা কী আনফেয়ার নয় হু?”
আমি তড়িৎ গতিতে উঠে ড্রয়ার চেক করতে গেলাম। তৈমুর আমার কর্মকাণ্ড দেখে হাসছে, ড্রয়ার খুলে দেখি কিছুই নেই। আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,”মাঝরাতে ফাজলামি করলেন! কিছু ই তো নেই এখানে।”
তৈমুর উঠে এসে বললেন, “আমি কী জানতাম তুমি উঠে চেক করবে? সারাদিন ধরোনি বলে আমি তুলে নিয়েছি।”
তারপর সে আমার গলায় একটা চেইন পড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,” পছন্দ হয়?”
পেন্ডেন্টের ডিজাইনটা দেখে আমি আনন্দিত গলায় বললাম, বাহ্ খুব সুন্দর তো! দারুণ হয়েছে।”
সে আমার গলার ডানপাশে চুমু দিয়ে বলল, “আমার বৌয়ের গলায় সবকিছু ই সুন্দর মানায়।”
“আপনি অনেক খারাপ। আমি আপনাকে অনেক অপছন্দ করি!”
“পছন্দ করো কখনো না বললেও অপছন্দ করার কথা এই পর্যন্ত অনেকবার বলেছ! এর শাস্তি কিন্তু কঠিন হবে।”
“শাস্তি দেওয়ার মতো অপরাধ তো না এটা!”
“মিথ্যে বারবার বলে সত্যের মতো শোনায়। তুমি কী চাও আমি বিশ্বাস করি তুমি আমায় অপছন্দ করো?”
“নাহ…”
“তাহলে কি বিশ্বাস করাতে চাও?”
“আপনি আমার খুব বিশেষ মানুষ।”
“শুধু ই এটা?”
“হুম। মৃত্তিকার বিশেষ মানুষের সংখ্যা খুব কম। তাই আপনার এটায় খুশি হওয়া উচিৎ.”
“এই মৃত্তিকা এটা তোমার চালাকি! ইচ্ছে করে অপজিট ওয়ার্ড ইউজ করলেনা!”
আমি উনার গলা জড়িয়ে বললাম,”একজন মহৎ ব্যক্তি বলেছেন, মনের কথা মুখে দিয়ে বের হলেই সেটা কর্পূরের মতো উবে যায়। তাই এটাকে মনের মাঝেই সংরক্ষণ করা শ্রেয়।”
“আমাকে যে এক মহীয়সী বলেছে, অনুভূতি প্রকাশ করতে মুখের ভাষা ব্যবহার করতে হয়। নয়তো অপরজন মনের কথা বুঝবে কীভাবে!”
“আমরা কী এখন যুদ্ধ ঘোষণা করবো?”
“করলে মন্দ হয় না!”
“হুহ!!”
“তা যুদ্ধ কী শুরু করবেন মহারানী?”
“আমি যুদ্ধে নয় শান্তি তে বিশ্বাসী! তাই শান্তিচুক্তি করে মামলা ডিসমিস করুন।”
উনি আমায় কোলে তুলে বললেন,”বেশ তবে তাই হোক! আমার শান্তি আমি খুঁজে নিলাম, আপনার টাও জানিয়ে দিবেন!”
“আমার বহুদিনের ইচ্ছে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার, নিবেন?”
“এই প্রথম কিছু চাইলে না নিয়ে পারি? অবশ্য ই নিবো ইনশাআল্লাহ।”
।
আমার মেয়ে এই বাসার মধ্যমণি। তাকে ছাড়া কারোই দিন ভালো কাটেনা। ওর প্রতি সবার অনেক মমতা। দাদীজান বলেন নিসা আমার মতো বলেই সবাই বেশি আদর করে। আমি এটা মানিনা যদিও। তবে ওর স্বভাব চরিত্র অনেকটাই আমার মতো এটা আমি নিজেও টের পাই। আমি আগে ভাবতাম আমার মতো কাউকে পছন্দ করা বা ভালোবাসা যায়না। কিন্তু একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েও আমার মেয়ে যখন এক্সট্রা আদর পাচ্ছে আমার মনে হয় ভালোবাসতে বা আদর করতে আসলে বাহানা লাগেনা। যারা করার তারা এমনিতেই করবে।
আমি যখন ক্লাস ফাইভে উঠি, ১ম ডায়েরি লেখার ঝোঁক উঠে। টিফিনের টাকা জমিয়ে স্কুলের পাশের স্টেশনারির দোকান থেকে সিনড্রেলার ছবি সংযুক্ত করা লক ডায়েরী কিনে আমার সে কি আনন্দ! আমি রোজকার ঘটনা নানারঙের কালি দিয়ে সেখানে লিখতাম, স্টিকার লাগাতাম। আমার মনের সব কথা সেখানে শোভা পেত বলা বাহুল্য। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে সব লিখতাম। কিন্তু সেই লেখাই যে আমার কাল হবে আমি কখনো ভাবিনি। একদিন আমার টেবিলে কী খুঁজতে এসে মেঝ ভাইয়া ডায়েরিটা খুঁজে পায়। তারপর সেটা মায়ের কাছে দিয়ে বলে,”দেখো তোমার মেয়ে আমাদের সবার নামে কিসব লিখে রেখেছে!”
আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না, না আমি বুঝতাম এসব লেখা ভুল হবে। উনারা আমার সাথে যা করতো তাই লিখেছি। আমার কোনো বান্ধবী নেই যাকে আমি আমার মনের কথা শেয়ার করতে পারি। ঐ ডায়েরিকে আমি আমার সঙ্গী ভেবেই সুখদুঃখ সব লিখেছি। এটার নাম গীবত হবে তা আমি বুঝিনি। সেই থেকে আমার পরিবারের সবার বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায় আমি তাদের নিয়ে বিরূপ চিন্তা ভাবনা রাখি। মানুষের কাছে তাদের নামে খারাপ কথা বলি। যে মেয়ে এইটুকু বসে ডায়েরিতে এসব লিখতে পারে, সে আর কী কী পারে তা বুঝতে কারো বাকি আছে?
আমার শখের ডায়েরিতে আগুন দিয়ে আম্মু আমাকে কী কঠিন মারটাই না দিয়েছিলেন! সাথে অকৃতজ্ঞ বেয়াদব, বেঈমান সহ নানাবিধ উপাধিও মাথায় জুটেছিল। এরপর আমি আর কখনো কিছু লিখিনি। কোথাও মনের কথা লেখা বা টাইপ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ। ঐটুকু বয়সে আমি জেনে গিয়েছিলাম লেখা সবচেয়ে বড় প্রমাণ, যা পরবর্তীতে নিজের বিপদ ডেকে আনে।
আমার মনের কথা প্রকাশ করার কোনো মাধ্যম ছিল না, না আমাকে কারো সঙ্গে বেশি খাতির করতে দেওয়া হয়েছে। যার সঙ্গে ই আমার একটু ভাব হতো তার সাথেই কথা বন্ধ করার জন্য বাধ্য করা হয়েছে। বন্ধু বান্ধব থাকলে আমি আরো নষ্ট হয়ে যাবো, এমন লাইন বলে কারো সঙ্গেই আমার সখ্যতা গড়ে তুলতে দেয়নি। স্কুলে সবাই আমাকে ইন্ট্রোভার্ট কাম অহংকারী মেয়ে বলেই ভাবে। বিদায় অনুষ্ঠানে আমার সাথে কেউ একটা ছবিও তোলেনি, না কমপ্লিমেন্ট লিখতে নোটবুক দিয়েছে। সবাই রেগডে তে হৈচৈ করে একে অপরের টিশার্টে সাইন করলেও আমার টিশার্ট একদম ধবধবে সাদাই ছিল। একটা সময় আমি সত্যিই আর কারো সঙ্গে মিশতে পারলাম না। সমবয়সী কারো সঙ্গে কুশল বিনিময়ের বাইরেও যে কত কথা বলা যায় তা ভুলে বসলাম। আত্মীয় স্বজনরা আমার এই নিরবতার নানাবিধ নামকরণ করা শুরু করলেন। আমি আরো গুটিয়ে গেলাম। এই গুটিয়ে যাওয়ার মূলে যারা দায়ী তারাঈ ফের আমাকে বকাঝকা করতে শুরু করলেন আমি কেন এতো অসামাজিক! মিনিমাম কার্টেসী আমার জানা নেই কেন? এরকম হলে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকবো কিভাবে?
আমি তাদের ফিরিয়ে জবাব দিতে পারিনা তোমরাই তো আমাকে এমনভাবে গড়ে তুলেছ। এখন আমাকে দোষারোপ করো কেন!
আমার অন্য ভাইবোনেরা তাদের বন্ধুদের নিয়ে বাসায় কত আড্ডা দিয়েছে, পিকনিকে দলবেঁধে গিয়েছে, ডালি আপা গার্লস নাইট বলে কত বান্ধবীদের বাসায় এনে আনন্দ করেছে। অথচ আমার বেলা সব নিষিদ্ধ ছিল। আমি মানুষকে ভয় পেতে শুরু করি, কোলাহলে আমার দমবন্ধ হয়। বাসায় বেশি গেস্ট এলে তাদের সামনে গিয়ে কথা বলতে হবে ভাবলেই আমার প্যানিক এটাক হয়। সেই আমিকেই তোমরা হুট করে বড় পরিবারে বিয়ে দিলে। একটাবার ভাবলেনা মেয়েটা এডজাস্ট করতে পারবে কি না। বরং ভাবলে ভরা ঘরে গেলেই ওর ভন্ডামি লোপ পাবে!
মানুষ অন্যায় করে। প্রতিনিয়ত অন্যায় করে। কিন্তু কেউ যদি তাদের অন্যায় কে অন্যায় বলে আখ্যায়িত করে, তবেই তাদের গায়ে ফোস্কা পড়ে। আর যদি প্রতিবাদকারী নিম্নস্তরের কেউ হয় তবে ক্ষমতার যাঁতাকলে পিষে মারতেও কুণ্ঠাবোধ করেনা। এটাই তো আমাদের সমাজে সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে হয়ে আসছে। আমরা বড়রা অন্যায় করি, আমাদের প্রত্যাশা অপূর্ণতা ছোটদের মাথায় চাপিয়ে দেই। ওদের ঠিকঠাক গ্রো করার সুযোগ বা অনুপ্রেরণা দেই না। যখন ওদের মেলে ধরার সময় তখন গুটিয়ে রেখে দিনশেষে ব্লেইম করি কেন অন্যদের মতো ডানা জাপটে শাইন করছেনা!
আমার মেয়ে কে আমি সেরকম হতে দিবো না। ওকে আমি সামাজিক হতে শিখাচ্ছি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে শেখাচ্ছি। ও যেন সবার মাঝে থেকে ভালোমন্দ বিচার করতে পারে, ওর সহজাত কোনো বৈশিষ্ট্যে আমি বাধা প্রদান করিনা। শাসনের মাত্রা বয়সের সাথে আনুষঙ্গিক রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করি। ওকে প্রপারলি গাইড করতে বিভিন্ন বই ও ডকুমেন্টারি পড়ি। আমি নিজেকে গ্রুমিং করি ওর জন্য! ওর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। অভিলাষী হয়ে স্বপ্ন সাজাই আমার মেয়ে আমার মতো হবেনা…..
।
তৈমুর আমার ইচ্ছা পূরণ করতে সত্যিই পাহাড়ে নিয়ে এসেছে। রাঙামাটির আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা যখন কটেজে পৌঁছাই তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। উনি খাবার অর্ডার দিয়ে বললেন,”তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি।”
এই প্রথম উনার সাথে বাড়ির বাইরে দূরে কোথাও বেড়াতে এসেছি বলে আমার খুব ভালো লাগছিল। নিসাকে নিয়ে যদিও পার্ক বা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে মাসে দু একবার বের হওয়া হয়। তবে এরকম রাতে থাকার মতো কোথাও যাওয়া হয়না। আমি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি তৈমুর খাবার সাজিয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে বললেন, “আমার খুব খিদে পেয়েছে তাই সরাসরি মেইন কোর্স নিয়ে ফেলেছি। তোমার অসুবিধে হবে না তো?”
“নাহ ঠিকাছে, আমি ও মনে মনে ভাবছিলাম নাস্তায় পেট ভরবেনা এখন।”
“যাক তাহলে হলোই।”
তৈমুর নিসাকে পাশে বসিয়ে এটা ওটা মুখে তুলে দিচ্ছেন আর মেয়েও বাবার সঙ্গে রাজ্যের গল্প করে যাচ্ছে। ওদের বাবা মেয়ের কথা কখনোই যেন ফুরোয় না। তৈমুর কথার তালেই হঠাৎ আমার গালে খাবার তুলে দিলেন। নিসা এটা দেখে খুশি তে হাত তালি দিতে লাগলো। আমি বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম তখন উনি পানির গ্লাস এগিয়ে বললেন,”এ তো কেলেঙ্কারি হয়ে গেল! আদর করে একটু খাইয়ে দিতেই নাকেমুখে উঠলো তোমার?”
আমি নিজেকে সামলে বললাম,”আমি প্রস্তুত ছিলাম না তাই এমন হয়েছে স্যরি!”
উনি চোখ সরু করে বললেন,”এখানে স্যরি বলার কী হলো?”
আমি কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। উনি আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলেন। আমি জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকতেই উনি বললেন,”এটা কি হলো মৃত্তিকা? তুমি আমাকে খাইয়ে দেবেনা? দেখেছো মামণি তোমার আম্মু আমাকে একটুও ভালোবাসেনা…”
“আম্মু বাবাইকে খাওয়াই দেও না। দেকোনা বাবাই কান্না করে।।”
অগত্যা তাকে খাইয়ে দিলাম। সে এতোটাই চালাক সুযোগে হাত ধুয়ে বসে পড়লো আমার পাশে। নিজের হাতে আর খেলো না। খাওয়া শেষে বললো, “মৃত্তিকা এখানে যে ক’দিন আছি আমি আর নিজ হাতে খাচ্ছি না। বাসায় তো সবাই থাকে তাই কখনো বুঝিনি তোমার হাতে খেতে এতো মজা লাগবে।”
“এসবই আমাকে খাটানোর ধান্দা! মেয়েকে খাইয়ে কূল পাইনা এখন আবার মেয়ের বাবাও লগ ধরেছে!”
“আমার কী ইচ্ছে করেনা একটু বউয়ের আদর খেতে? তুমি এতো নিষ্ঠুর!”
“আমি এখানে এসেছি হাত পা এলিয়ে বিশ্রাম নিতে। আমাকে ডিস্টার্ব করা যাবেনা। আপনারা বাবা-মেয়ে মিলে বরং কিভাবে আমার সেবা করে সন্তুষ্টি অর্জন করবেন তা ভাবুন।”
তৈমুর কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর নরম গলায় বলল, “মৃত্তিকা আমাদের মাঝেমধ্যেই এমন বেড়াতে যাওয়া উচিৎ। আমি এই ব্যাপারটা এভাবে আমলে নেইনি কেন ভেবেই বিরক্ত লাগছে। তুমি আমাকে কেন কখনো বলোনি এটা তোমার রেস্ট নেওয়ার সহজ মাধ্যম! আমি খুব কেয়ারলেস হাজবেন্ড তাই না…”
“আল্লাহ! না না না আপনি মাইন্ড করলেন নাকি আমার কথা ? আমি অভিযোগ করছি না।”
“অভিযোগ করা অন্যায় না। যেটা সাফোকেশন তৈরি করবে সেটার কথা তো বলতে হবে। আমার অধিকার আছে জানার কিসে সুবিধা হচ্ছে কিসে অসুবিধা হচ্ছে। আসলে তুমি যেমন এক্টিভ থাকো আমি আসলেই টের পাইনা তোমারো ক্লান্তি আসে,বিশ্রামের দরকার পড়ে। নিজের কাজের বাইরে অতদিকে খেয়ালো থাকেনা, আমি খুব স্যরি!”
আমি মানুষ টার দিকে চেয়ে হাসি। সে হয়তো সত্যি ই জানেনা কিভাবে যত্ন করতে হয়,করার আগ্রহ জন্মেছে এও কম কী? মানুষ টা কল্পজগতের নায়কদের মতো পারদর্শী নয়, তবে মনে মায়া আছে, আবেগ আছে আমার প্রতি। আমার কী এতে প্রফুল্ল হওয়া উচিৎ নয়?আমি কী আমার পুরনো অভিজ্ঞতার আলোকে তার সামনে নিজেকে পূর্ণ ভাবে মেলে ধরতে ভয় পাচ্ছি? আমার চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা তাকে যদি না বলি সে বুঝবে কীভাবে আমার কী চাই? আমার গুটিয়ে থাকার এই অভ্যাস কী দূর করা প্রয়োজন?
চলবে…