অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-০৮

0
792

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কি হলো কিছু বলছো না যে?এই বাচ্চাটা কার?তোমার নাকি?” পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মহিলাটা জিজ্ঞেস করলো আরোশীকে।

” আরে না না আন্টি।ও আমার ছেলে হতে যাবে কেন।ও হচ্ছে আহির,আমি যে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে কাজ করি ওখান থেকে আমাকে আহিরের দেখাশোনা করার জন্য পাঠানো হয়েছে।আসলে আমি ফ্ল্যাট ছেড়ে দেবো তো তাই এসেছিলাম।আহির বায়না করেছিলো যে সেও আসবে তাই তাকেও নিয়ে এসেছি।”

” ও তাই বলো।আমি তো আরো কি না কি ভেবেছি।আচ্ছা যাও,আমিও যায়।পরে আবার দেখা হবে।”

আরোশীও মাথা নাড়িয়ে আর কিছু না বলে আহিরকে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে এলো।

” ফেরি আন্টি ওই আন্টিটা কে?”

” উনি হচ্ছেন আরেকটা আন্টি।যিনি আমার সামনের ফ্ল্যাটে থাকেন।তুমি এখানে বসো আমি এখুনি আসছি,কোথাও যাবেনা কিন্তু।”

আহিরকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় আরোশী।আহির সোফায় বসে এদিক-ওদিক দেখছে।

” আহির বাবু।”

” হুম ফেরি আন্টি।”

” কিছু খাবে?”

” না এখন আর কিছু খাবোনা।”

” আচ্ছা তাহলে তুমি বসো কেমন।আমি জিনিসপত্রগুলো গুছিয়েনি।”

আরোশী আস্তে আস্তে সব জিনিসপত্র প্যাক করতে থাকে আর আহির আরোশী যেদিকে যাচ্ছে তার পেছন পেছন সেও সেদিকে যাচ্ছে।তবে আহির কোন রকমের বিরক্ত করছেনা,সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু আরোশী কি করছে তা দেখছে।

ঘরের জিনিস প্রায় অর্ধেক গোছানো হয়ে গিয়েছে।একা এতো কাজ করে আরোশী ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে,সে আর পারছেনা।ধপ করে সোফায় বসে পড়লো আরোশী,অনেকটা হাঁপাচ্ছে সে।পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো আহির।সে কিছুক্ষণ আরোশীর দিকে তাকিয়ে পাশে থাকা জগ থেকে গ্লাসে করে তাকে পানি দিলো।

” ফেরি আন্টি নাও পানিটা খেয়ে নাও,দেখবে তোমার ভালো লাগবে।”

আরোশী চোখ খুলে দিকে তাকালো।মুচকি হেসে আহিরের হাত থেকে পানি গ্লাসটা নিয়ে পানি পান করলো।

” তুমি কেন কষ্ট করতে গেলো?আমিই নিয়ে নিতাম।”

” তোমার কষ্ট হচ্ছিলো,সেটা আমার ভালো লাগছিলোনা।”

আহিরের কথা শুনে আরোশী হালকা হেসে আহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবারো কাজে লেগে পড়ে।

কাজ করতে করতে কখন যে দু’টো বেজে গিয়েছে আরোশী খেয়ালই করেছে।আপাতত সব কাজ রেখে আরোশী রান্নাঘরে গিয়ে দেখে কি আছে।সব ঘেঁটে আরোশী কালকে যাওয়ার আগে রান্না করে রেখে যাওয়া ভাত আর কয়েকটা কাঁচা ডিম আর আলু দেখতে পেলো।আরোশী তাড়াতাড়ি আলু গুলোকে সিদ্ধ করতে দিয়ে ডিম ভাজতে শুরু করলো।১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আরোশী রান্না শেষ হয়ে যায়।দুটো প্লেটে করে খাবার নিয়ে আরোশী সোফায় এসে বসলো।

” আহির বাবু ঘরে এগুলোই ছিলো।তুমি কি এগুলো দিয়ে খেতে পারবে নাকি তোমার জন্য অন্য কিছু নিয়ে আসবো?”

” আমি খেতে পারবো ফেরি আন্টি,শুধু তুমি খাইয়ে দিলে হবে।”

” বাহ্ আহির বাবু তো দেখছি খুব ভালো ছেলে।” এক লোকমা খাবার আহিরের মুখে তুলে দিয়ে বললো আরোশী।

সন্ধ্যা হতে হতে আরোশীর সব গোছগাছ করা শেষ হয়ে যায়।বিছানায় আহির ঘুমিয়ে আছে।আরোশী একবার আহিরের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় গোসল করতে।কারণ সারাদিন কাজ করে সে ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে এখর গোসল না করলে অস্বস্তি হবে।

গোসল করে বের হয়ে আরোশী সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।আহির আর নিজের জন্য কিছু নুডুলস আর চা বানিয়ে আবারো নিজের রুমে ফিরে এলো।

” আহির বাবু,উঠে পড়ো।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে,আমাদের এবার যেতে হবে।”

২/৩ বার ডাকার পর আহির উঠে বসলো আর ঘুম ঘুম চোখের আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে কোথায় আছে।আরোশী আহিরকে মুখ-হাত ধুয়ে ফ্রেশ করিয়ে তাকে নুডুলস খেতে দিলো আর নিজেও খেতে লাগলো।

প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে করে আরোশী আহিরকে নিয়ে আহিরের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো।প্রায় আধাঘন্টা পর তারা দুজন বাড়িতে এসে পৌঁছেছে।আরোশী নিজের ব্যাগটা সোফা করে প্রথমে আহিরের ড্রেস চেঞ্জ করতে তাকে তার রুমে নিয়ে যায়।কার্বাড থেকে তার জামাকাপড় নিয়ে চেঞ্জ করে দিলো।আহিরের ড্রেস চেঞ্জ করা হলে যখন আরোশী রুম থেকে বের হবে তখনই কট করে দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো সে।শব্দ শুনে তার ভ্রু-কুচকে গেলো।ওয়াশরুমের দিকে তাকাতেই ভেতর থেকে আকাশ চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসো।হুট করে আকাশকে দেখে আরোশী কিছুটা ঘাবড়ে গেলো,শুধু আরোশী নয় আকাশও কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে।

” আব….সরি আসলে আমি জানতাম না আপনি রুমে আছেন,সরি।” বলেই আরোশী তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।

আহির নিজের রুমে পড়ছে আর আকাশ তার পামে বসে নিজের অফিসের কাজ করছে।এদিকে আরোশী শিলার সাথে মিলে রাতের জন্য রান্না করছে।এইসময় বেল বেজে উঠে।আরোশী যেতে চাইলেও শিলা তাকে বাঁধা দিয়ে নিজে যায় দরজা খুলে দিলে।রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়ে আরোশী দেখলো অভ্র এসেছে।আরোশী চুলার আঁচ ছোট করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।

” আরে ভাইয়া আপনি এই সময়ে?”

” আর কি বলবো আপু।আপনার স্যার কি আমাকে শান্তি দেয় বলুন।সেই মহাশয় আমাকে ফোন করে বলেছে এখুনি যেন এখানে চলে আসি।তা আপনার স্যার মহাশয় কোথায়?”

” উপরে আহিরের সাথে আছে।”

” আচ্ছা আমি তাহলে দেখা করে তারপর আসছি।”

অভ্র উপরে চলে গেলে আরোশী আবারো নিজের কাজে মন দিলো।আকাশ আর অভ্রের কাজ শেষ হতে হতে রাতে খাবার সময় হয়ে যায় তাই আকাশ অভ্রকে খেয়ে তারপর যেতে বলেছে।

খাবার টেবিলে অভ্র,আহির আর আকাশ বসে আছে।শিলা আর আরোশী পরে খেয়ে নেবে।খাওয়ার মাঝে হুট করেই আরোশী প্রশ্ন করে বসে,

” আচ্ছা ভাইয়া ওই রাইমার খবর কি?”

প্রশ্ন করার পর আরোশী বুঝতে পারে সে ভুল সময়ে ভুল কথা বলে ফেলেছে কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

” আর বলবেন না আপু ওই রাইমা আমার জীবনটাকে রসমালাই থেকে মরিচের সেমাই করে দিয়েছে।আমার আম আর লিচু গুলো না খেতে খেতে একদম শুকিয়ে দিয়ে।এতোই শুকিয়ে গিয়েছে যে তাদেরকে এখন ছোট ছোট দেখা যাচ্ছে।তারা এখনো প্রতিদিন স্বপ্নে এসে তাদের মায়ের জন্য কান্না করে।আহারে আমার বাচ্চারা।জানেন আপু আমি আমার বাচ্চাদের না পেরে সত্যিটা বলে দিয়েছি যে ওদের মা আমাদের ডির্ভোস দিয়েছে।এটা শোনার পর ওরা খুব কান্না করেছে।কিন্তু আমার বাচ্চারা হচ্ছে সাহসী বাচ্চা,দেখতে হবেনা ওদের বাবা কে।আমার বাচ্চারাও আমার সাথে মিলে প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তারা এখন কি করে শাঁক*চুন্নি মেকাপ করা যায় সেটা শিখছে,সেই সাথে কি করে শাঁক*চুন্নি স্টাইল চুল কাটা যায় সেটাও শিখছে।এছাড়াও মুলার জুস, মশলাদার তেলাপোকা সুপ,ল্যামন ফ্লেবার ঘাসফড়িং এর বিরিয়ানি,ব্যা……”

” চুপ কর অভ্র।আমি আর পারছিনা।” চোখমুচ কুঁচকে চিৎকার করে বললো আকাশ।আকাশের চিৎকার শুনে আরোশী আর আহির ভয় পেয়ে গেলেও অভ্র একদমই পাইনি বরং সে বিরক্তি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

” তুই এসব কি বলছিস হ্যাঁ?কি সব আজগুবি খাবারের…..আমার তো শুনেই গা গুলিয়ে উঠছে।”

” এই তোর গা গুলিয়ে উঠবে কেন?এটা তো হ্যাঁ মেয়েদের যখন তারা……।এই তুই আবার…..?” উৎসুক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো অভ্র।

” চুপ কর পা*গল।মাথায় সারাদিন যত আজগুবি চিন্তা তার।খাওয়ার টেবিলে ওইসব নাম দিলে গা গুলিয়ে উঠবে না তো কি সুভাস আসবে?” কথাটা বলেই আকাশ উঠে চলে গেলো।অভ্র অবাক হয়ে আকাশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তবে আরোশীর খারাপ লাগলে।তার এটা মনে হচ্ছে তার কারণেই আকাশকে না খেয়ে উঠে যেতে হয়েছে।

খাবারের প্লেটগুলো শিলার সাথে ধুয়ে আরোশী আহিরকে দেখার জন্য তার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো।অভ্র অনেক আগেই চলে গিয়েছে।আরোশী যখন দরজায় নক করবে তখন সে আকাশের কিছু কথা শুনতে পেলো।

” দেখো আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখন আবারো বলছি।আহির আমার ছেলে,ও আমার সাথে ছিলো,আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে।তাই ভুলেও ওকে আমার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করোনা।”

এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা।

” তোমার এতো কিছু ভাবতে হবেনা।ওকে এতোটা বছর যখন আমি রাখতে পেরেছি আগামী দিনগুলোতেও রাখতে পারবো।এই ব্যপারে তুমি প্লিজ আর মাথা দিওনা।রাখছি আমি।”

আকাশের কথা শুনে আরোশী চিন্তা করতে লাগলো আহির কার সাথে ফোনে কথা বলছিলো?আর এসব কথার মানেই বা কি?

চলবে……