অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-১০

0
726

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

আহিরকে পড়াচ্ছে আরোশী কিন্তু তার মন সেদিকে নেই।তার মাথায় এখনো সেইসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এরই মধ্যে ধম করে দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো আরোশী।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আকাশ এসেছে।তার মুখের হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে রেগে আছে কিন্তু কি কারণে রেগে আছে সেটা আরোশী জানেনা।আকাশ একবার তাদের দিকে তাকিয়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে আবারো ধম করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

প্রায় ১০/১৫ মিনিট পর আকাশ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

” মিস আরোশী,আপনি প্লিজ একটু বাইরে আসুন আপনার সাথে আমার কথা আছে।”

” আব….আহিররের পড়াটা শেষ করে যায়?”

আরোশীর কথা শুনে আকাশ বিরক্ত হলেও কোন কথা না বলে বাইরে চলে এলো।আধাঘন্টা পর আরোশী বাইরে এসে দেখলো আকাশ সোফায় বসে আছে।

” কিছু বলবেন স্যার?”

আরোশীর কথা শুনে আকাশ একবার আশেপাশে দেখে উঠে দাঁড়ালো।আরোশীর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” আপনি অভ্র থেকে কি জিজ্ঞেস করেছিলেন?”

আকাশের কথাশুনে আরোশী বুঝতে পেরে যায় আকাশ কিসের কথা বলছে।তাই সে আর ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলো,

” অভ্র ভাইয়াকে আমি আহিরের মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম।”

” আরোশী আমি আপনাকে আগেও বলেছি এখন আবারো বলছি এই ব্যপারে কোন প্রশ্ন কাউকে করবেন না।”

” কিন্তু কেন?আমি কি খুব কঠিন কোন প্রশ্ন করে ফেলেছি?”

” কারণ এটা আমাদের ফ্যামেলি মেটার।”

” ফ্যামেলি ম্যাটার ছিলো কিন্তু এখন আর নেই।আমি আহিরের দেখাশোনা করি,ওর সম্পর্কে সবকিছু আমার জানা দরকার।আমার মন বলছে নিশ্চয়ই আপনাদের পরিবারে কোন সমস্যা আছে।আপনি কি বুঝতে পারছেন না আপনাদের সমস্যার প্রভাব আহিরের উপর পড়ছে?পড়ছি কি অলরেডি পড়ে গিয়েছে।আপনি জানেন আমি যখন আজ ওকে স্কুল দিতে গিয়েছিলাম তখন আমাকে অন্য স্টুডেন্ট এর মায়েরা কি বলেছে?”

” আপনি ওর স্কুলে গিয়েছিলেন?”

” হুম গিয়েছিলাম।গিয়েছিলাম বলেই জানতে পেরেছি আহির বাইরে কেমন বিহেভ করে,ওর সম্পর্কে অন্যরা কি ভাবে।আপনি জানেন ওকে বাকি বাচ্চাদের মায়েরা কি বলে?জানেন না।জানবেন কেমন করে?আপনি তো কখনো এসব খোঁজই নেননি।ওকে সবাই অদ্ভুত বাচ্চা বলে।আপনার কাজ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি বাচ্চার স্কুলের কোন ফাংশনে যেতে পারেন না।ফাংশন না হয় বাদ দিলাম আপনি তো প্যারেন্ট’স মিটিংও যেতে পারেন না।এমনকি সকালে বাচ্চাটাকে স্কুলে পর্যন্ত দিতে আসতে পারবেন না।এছাড়াও ওর মাকে তো স্কুলের কেউ আজ পর্যন্ত দেখেনি।আপনার আর আপনার স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু আপনারা কি বুঝতে পারছেন না আপনাদের এই সমস্যার প্রভাব আহিরের উপর খুব বাজে প্রভাব ফেলছে?আধো আপনাদের কনমসেন্স আছে?আমি আজ পর্যন্ত অনেক বাচ্চাদের দেখাশোনা করেছি কিন্তু কারো সম্পর্কে এতো মাথা ঘামাইনি কিন্তু আহিরের ব্যপারের চিন্তা করছি কারণ ও লোনলি ফিল করে সবসময়।ক্ষমা করবেন আমাকে,আমারাই ভুল।আমি আমার কাজটাকে বেশিই মনোযোগ দিয়ে দিয়েছিলাম।আর এই ভুল হবেনা,ক্ষমা করবেন আমাকে।”

কথাগুলো বলো আরোশী গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।আরোশীর কথা শুনে আকাশের মুখে কোন কথা নিয়েই।সে বুঝতে পারছেনা তার কি বলা উচিত।

রাতে খাওয়ার সময় আরোশী চুপচাপ এসে আহিরকে খাইয়ে দিতে লাগলো।আহির খাচ্ছে আর কথন বলছে।আরোশী শুধু হু হা করে তার কথা উপর দিচ্ছে।আকাশ খাওয়ার মাঝেমাঝে আড়চোখে আরোশীকে দেখছে।আহিরের খাওয়া শেষ হলে আরোশী প্লেটটা পরিষ্কার করে চলে যেতে নেবো তখন আহির তার হাত ধরে তাকে আটকে নেয়।

” ফেরি আন্টি তুমি খাবেনা?”

” না বাবু আমি খাবোনা।আমার খিদে নেই এখন।যখন খিদে পাবে তখন খেয়ে নেবো।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো যাও।”

আরোশী আহিরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আবারো গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ দিলো।আকাশ আরোশীকে ডাকতে গিয়েও থেমে গেলো।

” বাবাই ফেরি আন্টির কি হয়েছে?আন্টির কি মন খারাপ?আন্টিকে কেউ কি বকেছে?”

” না বাবাই,আসলে আন্টির একটু মন খারাপ তো তাই তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গিয়েছে।চলো আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি।আজ আর আন্টিকে বিরক্ত করোনা।”

আকাশ আহিরকে এটা ওটা বুঝিয়ে ঘুম পারালো।আহিরের ঘুমিয়ে পড়ার পর আকাশ বারান্দায় চলে এলো।আরোশীর কথাগুলো ভাবছে সে।আরোশীর কথাগুলো যুক্তিহীন নয় কিন্তু তারও তো হাত পা বাঁধা।আর কিছু ভাবতে পারছেনা আকাশ,এতো চিন্তা সে আর নিতে পারছেনা।

আকাশ সব চিন্তা ঝেড়ে যখনই ঘুমাতে যাবে তখন তার ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে থাকা নম্বরটা দেখে আকাশের মুখ বিরক্ততে কুচকে গেলো।

” তুমি আবার কেন ফোন করেছো?”

” তোমাকে আমি আগেও বলেছি এখন আবারো বলছি আমি এই ব্যপারে আর কোন কথা বলতে চায়না।আমার সিদ্ধান্ত আমি আগেই তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি।তুমি হাজার বার বললেও আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবোনা।”

” তুমি আমাকে যতই ইমোশনাল কথা বলোনা কেনো কাজ হবেনা।আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরবোনা।তোমার যদি আহিরকে নিয়ে কোন সমস্যা থাকে ওকে ফাইন এসোনা তুমি এখানে।যেখানে আছো সেখানেই থাকো।আর দয়া করে আমাকে এসবের জন্য আর ফোন করবেনা।”

ফোনটা কেটে দিয়ে ধপ করে টেবিলে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে আকাশ।

পরেরদিন সকালে,

অন্যদিনের মতোই আরোশী নিদিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।শিলার সাথে সাথে ঘরের কাজে তাকে সাহায্য করছে আরোশী।আহিরে চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে,আজও সে বায়না করেছিলো আরোশীকে নিয়ে সে স্কুলে যাবে কিন্তু আরোশী তাকে বুঝিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আজ আকাশ এখনো বাড়িতেই আছে।এতো সময় হয়েছে তাও আকাশ যাইনি দেখে আরোশী কিছুটা অবাক হলো তবে কিছু বললোনা।

” মিস আরোশী।”

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে গাজর কাটছিলো আরোশী।শিলা ছাদে গিয়েছে কাপড় শুকাতে দিতে।হুট করে আকাশের কন্ঠ শুনে আরোশী কেঁপে উঠলো।

” জ্বি স্যার কি বলবেন?” মুখে হাসি বজায় রেখে বললো আরোশী।আকাশের আরোশীর সাথে কথা বলতে কেমন যেন সংকোচ হচ্ছে তাও সে নিজেকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক করলো।

” আসলে….”

” কোন সমস্যা স্যার?”

আরোশীর বিহেভিয়ার দেখে আকাশ অবাক কারণ কালকে আকাশের ব্যবহার এর পর যেকেউ অপমানবোধ করে কথা বলবে না নয়তো রেগে থাকবে।কিন্তু আরোশীকে দেখে একদম স্বাভাবিক লাগছে আকাশের কাছে।

” আসলে কালকে আমার ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত।আমার আপনার সাথে ওভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি।আসলে রাগের মাথায় কি বলে ফেলেছিলাম বুঝতেই পারিনি।”

” না স্যার ভুল আপনার নয় ভুলটা আমার।আমিই বেশি কথা বলে ফেলেছিলাম।আমার উচিত হয়নি আপনাদের পারিবারিক বিষয়ে কথা বলার।আমি আমার কাজটাকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়ে দিয়েছিলাম।”

” আপনি প্লিজ রেগে থাকবেন না।আমি আমার ব্যবহারের জন্য সত্যি মন থেকে ক্ষমা চাইছি।”

” সবঠিক আছে কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা এই সমান্য একটা সাধারণ কথায় এতো রেগে যাওয়ার কি আছে?সমস্যা তো সব স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে।তাই বলে কি আপনারা একে অপরের থেকে দূরে থাকবেন।আপনারা নিজেদের জন্য না হোক অন্তত বাচ্চাটার জন্য হলেও তো বসে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।দেখুন স্যার আহিরের কথা ভেবে হলেও আপনাদের মধ্যে থাকা সমস্যাটা মিটিয়ে নিন।আপনি হয়তো জেদ করে ওকে নিজের কাছে রেখেছেন বা হয়তো তার মা তাকে নিতে চাইছে না কিন্তু একবার ভেবে দেখুন যেটাই হোক ক্ষতি কিন্তু আহিরের হচ্ছে।”

আকাশ কিছু বলবে তার আগেই তার ফোন এলো।ফোনে কথা বলতে বলতে আকাশ তার ব্যাগটা নিয়ে চলে যায়।আরোশী বুঝতে পেরে যায় এভাবে সত্যিটা জানা যাবেনা।যা করতে হবে তাকেই করতে হবে।কিছুক্ষণ চুপচাপ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থেকে আরোশী দৌড়ে আকাশের রুমে চলে যায়।

আরোশী তাড়াতাড়ি কার্বাডটা খুলে খুঁজে শুরু করে কিছু পাই কিনা।কিন্তু না এখানে আকাশের জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুই সে দেখতে পেলোনা।

” আদৌ কি কোন মেয়ে এই বাড়িতে ছিলো?কিন্তু আমার কেন মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কোন মেয়ে কোনদিন ছিলোই না।”

চলবে……