অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-১৬

0
719

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” ও স্যারের ছেলে,তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো।হাহাহা…… তোমার কি তাই মনে হয়।আমাকে দেখে কি তোমার বোকা মনে হয়।এই শোন আমি মোটেও তোমার কথায় বিশ্বাস করছি না।চুপচাপ এখুনি বেরিয়ে যাও বলছি।তুমি তো জানোনা আমি আসলে কে।চাইলেই এখুনি তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি কিন্তু আমি তা করছি না।ভালোই ভালোই বলছি বেরিয়ে যাও।”

” নাইরা।”

আকাশের রাগী গলা শুনে তারা তিনজনেই কেঁপে উঠলো।

” স্যার আপনি চলে এসেছেন।দেখুন না মেয়েটা কি মিথ্যা কথা বলছে।বলছে নাকি আপনি নাকি তাদের চেনেন আর বাচ্চাটা নাকি আপনার।কিন্তু আমি তো জানি মেয়েটা মিথ্যা কথা বলছে।ওকে আমি কতোবার বলেছি চলে যেতে কিন্তু সে যাচ্ছে না।নিশ্চয়ই এখানে এরা চুরি করতে এসেছে।এই মেয়ে বের হও বলছি।”

আরোশীর হাত ধরে নাইরা তাকে বের করে দেবে কিন্তু আকাশ আরোশীর হাত ধরে ফেললো।

” ওর হাত ছাড়ো নাইরা।” শান্ত স্বরে বললো আকাশ।

” কিন্তু স্যার ওরা…..”

” আমি তোমাকে ছাড়তে বলেছি।” এবারো শান্ত তবে গম্ভীর গলায় বললো আকাশ।নাইরা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি আরোশীর হাত ছেড়ে দিলো।

” তুমি ঠিক আছো আরোশী।” নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো আকাশ।আরোশী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো যে সে ঠিক আছে।

” এখানে কেন এসেছো তোমরা?আর আসবে সেটা আমাকে আগে বলোনি কেন?”

” আসলে আহির আবদার করেছিলো তাই….”

” আহির।ওখানে কি করছো?এসো বাবাই এর কাছে এসো।”

আহির এই সময় ঝামেলায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলো।এতোক্ষণ সে সোফায় গুটিসুটি মেরে বসে ছিলো।আকাশ ডাকতেই সে দৌড়ে আকাশের পা জরিয়ে ধরলো।

” বাবাই এর মনে পড়ছিলো বুঝি?”

” হুম।”

” ওলে আমার সোনা বাচ্চা।” আহিরকে কোলে নিয়ে বললো আকাশ।

” স্যার এই বাচ্চাটা আপনার কে?”

” আমার ছেলে,আহির।”

” কি!এটা আপনার ছেলে?আপনি মজা করছেন তাই না?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নাইরা।

” আমি এই ধরনের বিষয়ে নিয়ে মজা কেন করবো?আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কি কখনো মজা করেছি?যাও তুমি এখন নিজের কাজে।কিছুক্ষণ আগে যে মিটিং শেষ হয়েছে তার ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখো।”

নাইরা আকাশের কথায় অপমানিত হয়ে চলে যেতে পা বাড়ালো কিন্তু যেতে যেতে সে আরোশীর দিকে চোখ বড় বড় তাকালো।

” স্যার এই নিন আপনার জন্য বাসায় থেকে খাবার নিয়ে এসেছি।”

” বাসা থেকে কেন আনতে গেলে?আমি তো অফিসের ক্যান্টিন থেকেই খেয়েনি।”

আরোশী খাবারের বক্স বের করতে করতে বললো,

” আসলে আহির আপনার সাথে খাবে বলেছে তাই আমি বাসা থেকেই আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।”

” তাই নাকি।তাহলে তো খুব ভালো করেছো।তাহলে আমি আজ আমার বাবাই এর সাথে খাবার খাবো।”

আরোশী একটা প্লেটে আহির আরো আকাশের জন্য খাবার দিলো।আকাশ হাত ধুয়ে এসে আহিরকে খাইয়ে দিতে লাগলো আর নিজেও খেতে লাগলো।খাবার মাঝে আকাশ আরোশীকে বললো,

” আরোশী তুমিও খেয়ে নাও।”

” না আমি বাসায় গিয়ে শিলা আপুর সাথে খাবো।আপু আমার জন্য অপেক্ষা করবে।”

আকাশ আর আহিরের খাবার শেষ হওয়ার পর্যন্ত আরোশী বসলো।

” স্যার আপনার কি কোন কাজ আছে এখন?”

” কেন?”

” আসলে আমার কিছু জিনিস কেনার প্রয়োজন ছিলো।বাইরে তো খুব রোদ তাই আমি আহিরকে নিয়ে যেতে চাইছিনা।আপনার যদি কোন কাজ না থাকে তাহলে আহির…..”

” সমস্যা নেই।তুমি যাও আমি আছি আহিরের কাছে।”

আরোশী নিজের ব্যাগটা নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।কেবিন থেকে বেরিয়ে কয়েক পা সামনে এগোতেই আরোশী নাইরার দেখা পেলো।নাইরা আরোশীকে দেখে মুখ বাঁকা করে চলে গেলো।নাইরার এই ধরনের ব্যবহারে আরোশী অদ্ভুত একটা রিয়েকশন দিলো।

শিলার সাথে কথা বলতে বলতে নিচে নামছিলো আরোশী।খেয়াল না-করার কারণে আবারো কারো সাথে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ধাক্কা খেলো সে।রেলিং ধরার ফলে নিচে পড়ে যাওয়া থেকে এই যাত্রায় রক্ষা পেলো আরোশী।এবার আরোশী বেশ বিরক্ত হলো।

” হাঁটার সময় দেখে শুনে হাঁটবেন।” বিরক্ত নিয়ে বললো আরোশী।কিন্তু লোকটা মুখে হাসি রেখেই জবাব দিলো, ” সেটা তো আমিও আপনাকে বলতে পারি।হাঁটার সময় চোখ খোলা রেখে হাঁটবেন।”

লোকটার এরকম ত্যাড়া কথা শুনে আরোশীর মাথা এবার গরম হয়ে যায়,তবুও সে যথাসাধ্য নিজেকে শান্তি রেখে বললো, ” আমি ফোনে কথা বলছিলাম তাই খেয়াল করিনি।”

” আমি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম তাই খেয়াল করিনি।”

” আচ্ছা ঘাড় ত্যাড়া লোক তো আপনি।”

” কোথায়?আমার ঘাড় তো সোজাই আছে।

” দূর যত্তসব ফালতু লোক।” কথাটা বলেই আরোশী ধুপধাপ পা ফেলে নিচে চলে এলো।

নিচে নেমেই আরোশী অভ্রের দেখা পেলো।অভ্রকে দেখে আরোশী তাড়াতাড়ি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

” আরে আপু আপনি এখানে?”

” আহিরকে নিয়ে এসেছিলাম।”

” ও কোথায়?”

” উপরে,স্যারের কাছে।”

” তাহলে আমি ওর সাথে দেখা করে আসছি।”

” না না দাঁড়ান।”

” কি হয়েছে আপু?”

” আগে আমার প্রশ্নের উপর দিন,তারপর যান।”

” কি প্রশ্ন?”

” সেইদিন আপনার সাথে স্যারের কি কথা হয়েছিলো?আপনি তো নিশ্চয়ই স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ফোন কলের ব্যপারে।স্যার কি বলেছেন?মেয়েটা কে?আচ্ছা উনিই আহিরের মা নন তো?কিন্তু কথা শুনে তো আমার সেরকম কিছু মনে হয়নি।”

” আমার কিছু কাগজ এখুনি জমা দিতে হবে।আমি আসছি,পরে কথা হবে আপু।”

অভ্র তাড়াতাড়ি লিফটে করে উপরে চলে গেলো।আরোশী অভ্রকে থামানোর আগেই লিফট বন্ধ হয়ে গেলো।
____________________________________________

রাস্তার ধারে হেঁটে কোথাও যাচ্ছিলো আরোশী।কিন্তু হুট করে একটা রিকশা এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।নিচে পড়ে গিয়ে আরোশী ব্যথায় চোখ মুখ কুচকে ফেললো।তার হাত-পা দুটোই জ্বালা করছে।চোখ খুলে আরোশী দেখলে তার হাতের তালু এবং পায়ের গোড়ালির কাছে ছিঁড়ে গিয়েছে এবং রক্ত পড়ছে।কয়েকজন মানুষ এসে আরোশীকে ঘিড়ে ধরলো এবং জিজ্ঞেস করতে লাগলো সে ঠিক আছে কিনা।আরোশী মুখে ঠিক আছে বললেও সে বেশ ভালোই ব্যথা পেয়েছে।এরই মধ্যে একটা লোক তার সামনে বসে তাকে জিজ্ঞেস করলো,

” আপনি ঠিক আছেন?”

আরোশী মাথা তুলে দেখলো এটা সেই ধাক্কা খাওয়া লোকটা।

” বেশি ব্যথা করছে?”

আরোশী মাথা নাড়িয়ে না বোধক উওর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।এদিকে দাঁড়ানোর পর আরোশীর পা আরো বেশি জ্বালা করছে।

” আপনারা যান,আমি আছি ওনার সাথে।”

আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো।আরোশী বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে সব জ্বালা হজম করার চেষ্টা করছে।

” এক্সকিউজ মি।আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে আপনি আমার গাড়িতে বসতে পারেন।আমার গাড়িতে ফার্স্ট এড বক্স আছে।মলম লাগিয়ে দিলে জ্বালা কমে যাবে।”

যদিও বা আরোশীর খুব জ্বালা করছে তবুও সে বললো, ” না থাক ঠিক আছি আমি।”

” আপনার পা থেকে রক্ত পড়ছে আর আপনি বলছেন ঠিক আছেন।আপনি এখানেই দাঁড়ান আমি এখুনি আসছি।কোথাও যাবেন না কিন্তু।”

লোকটা দৌড়ে রাস্তার ওপারে গিয়ে গাড়িটাকে এপারে আরোশীর সামনে এনে দাঁড় করালো।তারপর পেছনের সিটের দরজা খুলে দিয়ে তাকে বসতে বললো।আরোশীর একটু অস্তিত্ব বোধ হলেও সে পা দুটো বাইরে রেখে বসলো।

” এই নিন ফার্স্ট এড বক্স।এখানে সবকিছু আছে।আপনি আপনার সুবিধামতো লাগিয়ে নিন।আমি এখানেই আছি।”

লোকটা আরোশীর হাতে বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।আরোশী দেরি না করে তাড়াতাড়ি রক্তগুলো মুছে ব্যান্ডেজ করে নিলো।

” এই যে শুনুন।”

” ব্যান্ডেজ করে নিয়েছেন?”

” হুম।ধন্যবাদ সাহায্য করার জন্য।এখন আমি আসছি।”

” আমি আপনাকে ড্রপ করে দি।”

” না তার দরকার নেই।এটা সামান্য চোট,ঠিক হয়ে যাবে।সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।”

আরোশী গাড়ি থেকে নেমে এদিক-ওদিক তাকাতেই একটা রিকশার দেখতে পেলো।আরোশী দ্রুত সেই রিকশায় চড়ে বসলো।

চলবে……