#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আরোশী যে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে কাজ করে তাকে সেখান থেকে ফোন করে দেখা করতে বলা হয়েছে।তাই আরোশী দুপুরে আহির ঘুমানোর পর শিলাকে তার ধ্যান রাখতে বলে দেখা করতে চলে এসেছে।আরোশী ভেবেছিলো সুপারভাইজার এর সাথে কথা বলেই চলে আসবে কিন্তু সেখানে থাকা কিছু বাচ্চা যাদের আরোশী আগে থেকেই চিনতো তারা আরোশীকে দেখে তাকে ঘিরে ফেললো।এতোদিন পর আরোশীকে দেখে তারা তার সাথে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসলো।
বাচ্চাদের সাথে মজা করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যায় আরোশী তা খেয়াল করেনি।যখন কয়েকজন বাচ্চাকে তাদের বাবা-মা নিতে এলো তখন আরোশীর বিষয়টা নজরে এলো।আরোশী তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো সেন্টার থেকে।মনে মনে সে নিজেকে বকতে লাগলো।অন্যসময় হলে ঠিক ছিলো তাও কিন্তু অসুস্থ আহিরকে রেখে এতোসময় তার বাইরে থাকা ঠিক হয়নি।
রিকশার খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে আরোশী সেন্টার থেকে কিছুটা সামনে চলে এসেছে কিন্তু এখনো একটা ঠিকঠাক রিকশার দেখা সে পেলোনা।হাঁটতে হাঁটতে আরোশীর প্রচুর পিপাসা পেলো।রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আরোশী তার ব্যাগ চেক করে দেখলো পানি আগে কিনা।ভাগ্যক্রমে আরোশীর কাছে পানি ছিলো।
” আরোশী।”
আরোশী মাত্রই বোতলটা বের করে মুখে পানি নিয়েছিলো কিন্তু সেটা পেটে যাওয়ার আগেই কেউ তার নাম ডেকে উঠলো।হুট করে এরকম হওয়াতে আরোশীর নাকে মুখে পানি উঠে গেলো।
” আরোশী তুমি ঠিক আছো?”
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আরোশী মাথা নাড়িয়ে উওর দিলো যে সে ঠিক আছে।এবার আরোশী পাশে ফিরে দেখলো রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রকে একবার উপর থেকে নিচে দেখে নিলো আরোশী।পার্পেল কালার শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট,আরোশীর নজরে মোটামুটি ঠিকই লাগছে তাকে দেখতে।জামা থেকে চোখ সরিয়ে আরোশী এবার রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
” আপনি এখানে?”
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য রুদ্র একটু হকচকিয়ে গেলেও পরক্ষণে মুচকি হেসে জবাব দিলো,
” আসলে আমি এখানে একজনের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় গাড়িটা বন্ধ হয়ে যায়।তাই হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোচ্ছিলাম যদি কোন মেকানিক শপ পাওয়া যায়।”
” আপনার গাড়ি কোথায়?” সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো আরোশী।
” এই যে সামনেই আছে।দেখবে নাকি গাড়ি?”
” না থাক।তো এখন বাড়ি যাবেন কি করে?”
” দেখি কোন দোকান পাই কিনা।পেলে তো গুড লাক,গাড়ি ঠিক করিয়ে গাড়ি করেই চলে যাবো আর না পেলে রিকশা করেই যেতে হবে।তুমি এখানে কি করছো?তোমাকে তো এইখানে আগে কখনো দেখিনি।”
” একটা কাজে এসেছিলাম।”
” ও আচ্ছা।ওকে তাহলে তুমি থাকো আমি সামনে গিয়ে দেখি মেকানিক শপ পাই কিনা।”
রুদ্র আরোশীর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবারো সামনে এগোতে লাগলো।আরোশী দাঁড়িয়ে রিকশার খুঁজে চলেছে এখনো।
” আজকে কি রিকশাওয়ালারা হর*তাল করতে গিয়ে নাকি?একটা রিকশার দেখা নেই আর যাও দুই-তিনটা আসতে ভাড়া এতো বেশি।”
আরো ৫/৬ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরও যখন আরোশী মন মতো রিকশা পেলো না তখন সে বিরক্ত নিয়ে আবারো হাঁটতে শুরু করলো।
” আরোশী।”
আবারো নিজের নাম শুনে হাঁটতে হাঁটতে থেমে যায় আরোশী।ডানপাশে তাকিয়ে দেখলো রিকশায় বসে রুদ্র তাকে ডাকছে।
” তোমার যদি কোন সমস্যা না থাকে তুমি আমার সাথে বসতে পারো।এতোক্ষণ যখন কোন রিকশা পাওনি মনে হচ্ছে আর পাবে না।”
” না থাক আমি হেঁটেই চলে যাবো।”
” হেঁটে যেতে হলে আরো আগেই চলে যেতে।এখন অন্ধকারও হয়ে গিয়েছে আর এটা আবাসিক এলাকা।এখন থেকেই নির্জন হতে শুরু করেছে নিশ্চয়ই দেখেছো।তাই বলছি আমার সাথে চাইলে রিকশা শেয়ার করতে পারো।আর যেহেতু রিকশা তুমি যদি মনে করো আমি খারাপ কিছু করতে পারি কিন্তু সেরকম কিছুই হবেনা।বিশ্বাস করতে পারো।”
রুদ্রের কথায় আরোশী কিছুটা ভেবে রিকশায় উঠে পড়লো।দু’জনে তাদের মাঝে কিছুটা ব্যবধান রেখে বসলো।রুদ্র চুপচাপ বাইরের দৃশ্য দেখছে।হুট করে আরোশী বলে উঠলো,
” আপনি পেছন ফিরে এলেন কেন?”
আরোশীর কথায় রুদ্র হেসে জবাব দিলো,
” সত্যি বলতে আমি তোমার জন্য পেছনে এসেছিলাম।”
রুদ্রের কথা শুনে আরোশী হকচকিয়ে গেলো।
” আমার জন্য মানে?আপনি কি করে জানলেন আমি এখনো ওখানে আছি?এমনটাও তো হতে পারতো আমি বাড়ি চলে গিয়েছি।”
” আমি সামনেই ছিলাম।কিন্তু তোমাকে যেতে দেখি তাই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম তুমি এখনো রিকশার জন্য অপেক্ষা করছো।”
রুদ্রের কথা শুনে আরোশী আর কিছু বললো না।চুপচাপ রাস্তা দেখতে লাগলো।
আকাশের বাড়ির সামনে এসে রিকশা থামাতে বললো আরোশী।এখানে রিকশা থাকতে দেখে রুদ্রের ভ্রু-কুচকে গেলো।তাও সে মুখে হাসি বজায় রেখে প্রশ্ন করলো,
” এটা মিস্টার আকাশের বাড়ি,রাইট?”
” হুম এটা স্যারের বাড়ি।”
” তুমি এখানে থাকো নাকি?কিন্তু কেন?”
” হুম আমি এখানেই থাকি।আচ্ছা তাহলে আজ আমি আসছি।আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম আমি,দুঃখিত।”
” না ঠিক আছে।তোমাকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি হয়েছি।”
” আচ্ছা তাহলে আজ আসি।সাবধানে যাবেন।”
” হুম।তুমিও সাবধানে থেকো কিন্তু।”
আরোশী প্রতিউওরে একটা হাসি দিলো।রুদ্র রিকশাওয়ালা রিকশা চালতে বললো।রিকশা কিছুদূর গেলে রুদ্র পেছন ফিরে দেখলো আরোশী দাঁড়িয়ে আছে।সে হাতের ইশারায় আরোশী বিদায় জানালো,আরোশী তাকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
” কোথায় গিয়েছিলে?”
হুট করে আকাশে কন্ঠ শুনে ঘাবড়ে যায় আরোশী।
” কি হলো উওর দিচ্ছো না কেন?এই সময় কোথায় গিয়েছিলে?”
” ওই আসলে স্যার,সেন্টার থেকে ফোন করে দেখা করতে বলেছিলো।তো সেখানেই গিয়েছিলাম।”
” এতো দেরি হলো কেন?”
” ওই আপনি তো জানেন ওটা আবাসিক এলাকা তাই রিকশা…..”
আরোশীকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে নিজে বলা শুরু, ” ঠিক আছে,যাও।আর শোন তুমি বাইরে থেকে এসেছো তাই আগে ফ্রেশ হবে তারপর আহিরের কাছে যাবে।বাইরে থেকে এসেই আহিরের কাছে যাওয়া ঠিক হবেনা।”
আরোশী কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।আকাশ বিরক্ত নিয়ে আরোশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর বিরক্তির কারণটা হয়তো আরোশীকে রুদ্রের সাথে দেখা।হ্যাঁ আকাশ বারান্দা থেকেই আরোশী আর রুদ্রকে খেয়াল করেছে।সে প্রথমে ভেবেছিলো আরোশীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করবে পরে নিজেই নিজেকে বলেছে, ” এটা ওর ব্যপার।আমার এতো টেনশন না করলেও চলবে।” তবে এটা বললেও তার মধ্যে কিন্তু বিরক্তভাবটা বিরাজমান।
আজ শুক্রবার ছিলো বিদায় আকাশ,আহির দু’জনে ঘরে আছে।বিকেল বেলা অভ্রও চলে এসেছে এই বাড়িতে।অভ্র আর আকাশ ড্রইংরুমে বসে ডিজাইন নিয়ে কথা বলছিলো,আহির রুমে টিভি দেখছে আর আরোশী শিলাকে কাজে সাহায্য করছে।
এরই মধ্যে বাড়ি বেলটা বেজে উঠলো।আরোশী শিলা থামিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো দরজা খুলতে।কিন্তু এরই আগে অভ্র উঠে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু দরজা খুলে যে এরকম কিছু হবে তা কেউ বুঝতে পারেনি।দরজা খোলা মাত্র হুট করে কেউ অভ্রকে জরিয়ে ধরলো।হঠাৎ এরকম হওয়াতে অভ্র,আরোশী দু’জনেই হকচকিয়ে গেলো।
” বেপি…..।কেমন আছো তুমি?জানো তোমাকে আমি কত মিস করেছি।তোমার কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই আমি তোমার কাছে চলে এসেছি।”
” ও আচ্ছা তাই নাকি বেপি।তুমি আমাকে এতো মিস করছিলে বুঝি।”
” হুম খুব মিস করছিলাম কিন্তু তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন?”
” কিরকম বেপি?”
” কেমন যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে।”
” কি সব বলছো বেপি।আমার গলা তো এরকমই কিন্তু কথা হচ্ছে তুমি কে বেপি?তোমাকে তো আমি চিনি না।”
” আরে আমি ই…. আ…..” হুট করেই মেয়েটা চিৎকার দিয়ে অভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
” এই কে তুমি হ্যাঁ?তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে জরিয়ে ধরেছো।”
” আমি কোথায় জরিয়ে ধরেছি?তুমিই তো আমাকে জরিয়ে ধরেছো বেপি….।”
” এই চুপ।ছিঃ…এই একে জড়িয়ে ধরেছিলাম।”
” বেপি….ছিঃ করছো কেন?আমি প্রতিদিন লাক্স সাবান দিয়ে গোসল করি,যাতে রয়েছে হাজারো গোলাপের সুবাস বুঝতে পেরেছো।কিন্তু তুমি কে বেপি….?এই এক মিনিট,এক মিনিট তুমি ইলা না?” শেষের কথাটা বলার সময় অভ্রের চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো।
এদের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছেনা আরোশী।সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কাজ দেখছে শুধু।
চলবে…..