অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-২৫

0
680

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

মিসেস সামিরা রাগে ফুঁসছেন।তিনি ভাবতেই পারেননি আকাশ এরকম কিছু করে বসবে।কিন্তু আকাশের মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই।সে রিলেক্স মুডে মোবাইল দেখছে।মিসেস সামিরা রাগী চোখে আকাশের দিকে তাকালেন।আকাশকে এরকম স্বাভাবিক দেখে তার রাগ আরো বেড়ে গেলো।তিনি একপ্রকার হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন,

” এটা তুমি কি করলে আকাশ?এটা তুমি করতে পারলে?আমার মানসম্মান তুমি সবার সামনে এভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারলে?আর এতো সব কিছু করে তুমি কি সুন্দর মোবাইল দেখছো।তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি করেছো?”

” আমি কি ভুল কিছু করেছি মা?আমার তো তা মনে হয় না।বরং আমি ভুলটা শুদ্ধ করে নিয়েছি।”

” এটাকে তুমি শুদ্ধ করা বলছো?এটাকে?তুমি জানো তুমি কি করেছো?তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গিয়েছে আকাশ?তুমি ইলার বদলে ওই দু’দিনের পরিচিত মেয়েকে আংটি পড়িয়েছো।যাকে তুমি ভালো মতো চেনেই না,এমনকি তার কোন ফ্যামিলি নেই।অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে এমন একটা মেয়েকে তুমি আংটি পড়িয়েছো আবার সবার সামনে বড় মুখ করে বলেছো তুমি তাকে বিয়ে করবে।তোমার মাথা কি ঠিক আছে আকাশ?তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো?কি দেখে তুমি কথাটা বললে?কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে?না আছে টাকা,না আছে রূপ আর না আছে পরিবার।কিন্তু অপর দিকে ইলার কাছে সব আছে।”

” না মা সব নেই।ইলার আছে টাকা,রূপ,গাড়ি-বাড়ি থাকলেও তার সাথে আছে অহংকার,দাম্ভিকতা,সেই সাথে তার কাছে যে জিনিসটা নেই সেটা হচ্ছে ভালো মন।সে খুবই স্বার্থবাদী,সে নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে।আমি তাও তাকে মেনে নিতাম কিন্তু তাকে মেনে না নেওয়া সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমার আহির।ইলা আহিরকে সহ্য করতে পারেনা,সেখানে ও কি করে সারাজীবন আহিরকে ভালোবাসবে।ইলা কোনদিনও আমার আহিরকে ভালো রাখতে পারবে না,উল্টো তার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে ইলা।কিন্তু অন্যদিকে আরোশী,সে এসেছে পর্যন্ত আমার আহিরটা হাসতে জেনেছে,নিজেকে আড়াল না করে নিজের ইচ্ছেকে প্রকাশ করেতে জেনেছে।আমি পর্যন্ত আহিরকে সময় দিতে পারতাম না,সবসময় নিজের অজান্তে তাকে ইগনোর করতাম কিন্তু আরোশী সবসময় তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে।আমাকে আমার না দেখা ভুলগুলো দেখিয়ে দিয়েছে।আরোশী যেভাবে আহিরের খেয়াল রাখে,ইলা কোনদিনও তা করতে পারবেনা।”

আকাশের কথা শুনে মিসেস সামিরা খুব রেগে যান।

” আহির,আহির,আহির।এই ছেলে আমার ছেলের মাথা খেয়েছে।তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে।আকাশ তোমার কেন এই পরের ছেলেটাকে নিয়ে এতো মাথাব্যথা?বলো কেন?আহির তো তোমার ছেলে নয় তাহলে কেন তুমি তার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো?কেন পরের ছেলের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করছো?তুমি কি বুঝতে পারছো না পরকে তুমি যতই আপন ভাবো সে কিন্তু পরই হয়।একদিন না একদিন সে তোমাকে ধোঁকা দেবেই।আকাশ,আকাশ নিজের চোখের কাপড় খুলে চারিপাশে দেখো,দেখো আকাশ।শোন যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে,এখনো সময় আছে সব ঠিক করার।আমি কালকেই আবারো সবার সামনে তোমার আর ইলার এনগেজমেন্ট করাবো,নিউজের লোকেদের কথা তুমি চিন্তা করোনা ওটা আমি সামলে নেবো।আর ওই আরোশী মেয়েটার কথাও তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা,ওকে কিছু টাকা দিলেই দেখবে ও মুখ বন্ধ করে সব মেনে নেবে।ঠিক আছে।”

আকাশ মিসেস সামিরা হাত নিজের হাত থেকে সরিয়ে দিলো।

” না মা এখন আর কিছু ঠিক হওয়ার নয় আর হলেও আমি চায়না ঠিক করতে।আমি যা করেছি সব ভেবেচিন্তেই করেছি,তাই আর কিছু ঠিক করতে হবে না।আশা করি তুমি আর কিছু বলবে না আমাকে।”

আকাশ দ্রুত পাশে তার মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মিসেস সামিরা শতবার ডেকেও আকাশকে ফেরাত পারলেন না।

অভ্র ছাদে এসে দেখলো ইলা কান্না করছে।ইলার কান্না দেখে অভ্রের একটু মায়া হলো হয়তো।সে ধীর পায়ে গিয়ে পেছন থেকে ইলার কাঁধে হাত রাখলো।হাত রাখতেই ইলা তাকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো।

” আকাশ তুমি এটা আমার সাথে কেন করলে?বলো কেন করলে?তুমি জানো না আমি তোমাকে পছন্দ করি,তাও কেন তুমি আমার সাথে এরকমটা করলে?তোমার কারণে আজ সবার সামনে আমাকে অপদস্ত হতে হলো।কিন্তু তাতে আমার কোন মাথাব্যথা নেই আর সব মাথাব্যথা তোমাকে নিয়ে।তুমি প্লিজ ফিরে এসো আমার কাছে।প্রমিজ আমি আজকের দিনের কোন কথা মনে রাখবোনা তুমি প্লিজ ফিরে এসো।আমরা আবারো নতুন করে সব শুরু করবো।”

” ইলা আমি আকাশ নয় অভ্র।”

অভ্রের কথা কানে আসতেই ইলা ছিটতে দূরে সরে গেলো।

” সরি আসলে আমি ভেবেছিলাম আকাশ।” অন্যদিকে তাকিয়ে মিহি স্বরে বললো ইলা।ইলার এই শান্ত কন্ঠ শুনে অভ্রের মন আরো খারাপ হয়ে গেলো।

” তুমি প্লিজ আকাশের কাজে কষ্ট পেও না ইলা।আমি জানি আকাশের কাজটা ঠিক হয়নি।তার উচিত হয়নি সবার সামনে বিষয়টাকে এভাবে প্রেজেন্ট করার কিন্তু তুমি একবার ভেবে দেখো এখানে আকাশেরই বা কি করার ছিলো।আন্টি হুট করে সবার সামনে….. তাই আকাশও না বুঝে কি করে ফেলেছে।”

” আসলে দোষ কারো না দোষ আমারই।আমিই একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিলাম।”

” ইলা তুমি প্লিজ শান্ত হও।দেখো এখন তোমার মাথায় অনেক ধরণের চিন্তা আসবে কিন্তু তুমি প্লিজ উল্টোপাল্টা কিছু করোনা।দেখো যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে,এখন তোমাদের উচিত বসে কথা বলে সব কিছু নরমাল করা।”

” চিন্তা করো না অভ্র,আমি নিজের কোন ক্ষতি করবো না।আমি এতোটাও বোকা নই আর আমি ভেঙেও পড়িনি শুধু একটু খারাপ লেগেছে।ধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।এই ঘটনার পর তুমিই প্রথম আমার কাছে এসে আমাকে বুঝিয়েছো।ধন্যবাদ অভ্র।”

অভ্র আর কিছু বলার আগেই তার ফোন বেজে উঠে।অভ্র ফোনটা দেখেই দ্রুত পাশে ছাদ থেকে নেমে গেলো।অভ্র যেতেই ইলার মুখে হাসি ফুঁটে উঠলো।সে হাসতে হাসতে নিজের চোখের পানি মুছে ফেললো।

” ইশ……বেচারা অভ্র।ভেবেছে আমি কষ্ট পেয়েছি,আমি এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে নিজের ক্ষতি করবো কিন্তু সে তো আর জানে না ইলা এতো সহজে হার মানে না।ইলা নিজেকে কষ্ট দেয় না বরং যারা তাকে কষ্ট দেয় তাদেরকে গোড়া থেকেই উপড়ে ফেলে।”

এরই মধ্যে ইলার ফোনও বেজে উঠে।

” ইলা এসব কি?তোমাকে একটা কাজ দিয়েছি সেটাও করতে পারলে না।”

” কুল বেবি কুল।চিন্তা করো না কাজ হয়ে যাবে।এই পথে হয়নি তো কি হয়েছে,আমার কাছে আরো অনেক পথ আছে।তুমি চিন্তা করো না,তুমি নিশ্চিন্তে শুধু খেলা ইনজয় করো।” বলেই ইলা ফোনটা কেটে দিলো।

” আকাশ তুমি কাজটা মোটেও ঠিক করলে না।আমাকে এতোগুলা মানুষের সামনে অপমান করে তুমি মোটেও ঠিক করলে না।এর ফল তো তোমাকে দিতেই হবে আর সাথে ওই আরোশী আর আহিরকেও।তোমরা জানেই না এরপর তোমাদের সাথে কি কি হতে চলেছে।”

অতিথি যারা এসেছিলো তারা চলে গিয়েছে ঘন্টা দুয়েক আগেই।ওই ঘটনার পর আরোশী কোন রিয়েক্ট করেনি,আসলে সে আহিরের সামনে কোন রিয়েক্ট করতে চায়নি।আহিরকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে আরোশী ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে।এখনো পর্যন্ত সে কারো সাথে কোন কথা বলেনি।

” আরোশী।”

আকাশের ডাক শুনেও আরোশী পেছন ফিরে তাকালো না।আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরোশীর পাশে এসে দাঁড়ালো।

” আমি জানি আরোশী হুট করে আমার এই কাজটা তুমি মেনে নিতে পারোনি আর এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমার কাছে তখন এটাই করা ঠিক মনে হয়েছিলো।আর আমি যা করেছি সব আহিরের জন্য করেছি।আমি দেখেছি তুমি আহিরকে খুব যত্ন করো।কিছুদিন আগে যখন সে হসপিটাল ভর্তি হয়েছিলো তখন আমি তোমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার কথায় কষ্ট পেলেও তুমি তার রাগ বা প্রভাব আহিরের উপর পড়তে দাওনি।ইলা কোনদিনও আহিরকে মেনে নেবে না।ওকে বিয়ে করলে আমার আহিরের জীবনটা কষ্টে ভরে যাবে আর আমি তা হতে দেবো না।আমার কাছে আহিরের জন্য তুমিই সেরা তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি তোমাকে কোন কষ্ট পেতে দেবো না আরোশী,বিশ্বাস করতে পারো।প্লিজ যা হয়েছে তা মেনে নাও,অন্তত আহিরের জন্য হলেও প্লিজ মেনে নাও।”

আরোশী আকাশের দিকে একপলক তাকিয়ে নিচে চলে গেলো।আরোশীর এভাবে চলে যাওয়াতে আকাশ আরো চিন্তায় পড়ে গেলো।

” আরোশী মানবে তো এসব কিছু?নাকি সে চলে যাবে আমাদের ছেড়ে?” মনে মনে চিন্তা করলো আকাশ।

চলবে…..